যেমনটা_তুমি Ayusha Akter Usha “”9 + 10″”

0
4237

যেমনটা_তুমি
Ayusha Akter Usha
“”9 + 10″”
পার্টিতে পৌছেই আমি পার্টির এরেন্জমেন্টে মনোযোগী হলাম।আর উনি সব গেস্টদের ওয়েলকাম করতে লাগলেন।কিছুক্ষণ পর আমি এদিক ওদিক সব দেখছি সব ঠিক ঠাক আছে কিনা সবাই পার্টিতে খুব ইনজয় করছে।হঠাৎই আমি শুনতে পেলাম একটা মেয়ের কন্ঠ।
-হেই এস কে ইউ আর লুকিং সো হট এন্ড হ্যান্ডসাম।
কথাটা শুনেই আমি পেছনে তাকালাম।সার ডেস্কের সামনে চেয়ারে বসে ড্রিঙ্কস করছেন আর একটা মেয়ে সারের সামনে গিয়ে ড্রিঙ্কস এর গ্লাস হাতে নিয়ে কথাটা বলল।
-I like also…
সার বাকা হেসে বললেন।
-তোমার এই এটিটিউডেই তো সব মেয়ে ফিদা হয় যার মধ্যে আমিও একজন।
উনাদের এই কথা শুনে আমার বুকের ভেতর টা মোচর দিয়ে উঠল।আমি আবার ঘুরে দাড়ালাম।ওদের প্রত্যেকটা কথাই আমি শুনতে পাচ্ছি।কথা গুলো শুনে আমার মনে হচ্ছিল আমি যাই আর সারের প্রত্যেক চুল হাতে তুলে নিয়ে আসি।তখনি আমার কানে এলো মেয়েটা বলছে।
-SK আমি কতবার তোমার সাথে রুমডেট এ যেতে চেয়েছি কিন্তু তুমি রাজীই হচ্ছো না তুমি চাইলে আমরা আজই রুমডেটে যেতে পারি।
এই কথা শোনার সাথে সাথেই আমি উনাদের দিকে তাকালাম।মেয়ে টা সারের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে উনার বুকে এক হাতে স্লাইড করতে করতে বলছে কথা গুলো বলছে।আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে একি রকম ভাবে হেসে যাচ্ছেন।আমার চোখ থেকে অজান্তেই টপ করে একফোঁটা জল বেরিয়ে এলো।নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল।যার পেছনে এত সুন্দর সুন্দর স্মার্ট আধুনিক মেয়েরা পাগল তার জন্য আমি তো কিছুই না।সত্যিই কি আমার কোনো যোগ্যতা আছে উনার বউ হবার।আমি চোখের পানি মুছতে মুছতে ওখান থেকে চলে আসছিলাম তখনি মাইকে কারো এনাউন্সমেন্ট শুনে থমকে গেলাম।পেছনে ফিরে তাকালাম।
-hello guys…welcome to my party…আশা করি আপনারা পার্টি খুব ভালোই ইনজয় করছেন।
সবাই উনার কথায় সায় দিলেন।
-good. সো যেইজন্য এই এনাউন্সমেন্ট।আপনারা সবাই জানেন আমি the greatest সম্রাট খান বিবাহিত।কিন্তু আমার স্ত্রী কে আজ পর্যন্ত অনেকেই দেখেননি।তাই আমি আজ সবার সামনে আমার স্ত্রী কে প্রোপজ করতে চাই।
উনার কথায় সবাই wooooo বলে চেঁচিয়ে উঠল।সবাই উনাকে চিয়ার আপ করতে লাগল।আর উনি ধীরে ধীরে আমার সামনে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন।
-নূর আর ইউ লাইক টু ডান্স উইথ মি??
আমি উনার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম।আর শুধু আমি না পার্টিতে থাকা প্রত্যেকেই আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন।হয়তো কেউ সারের সাথে আমাকে এক্সপেক্ট করেননি।আমি অবাক হয়ে ওনার দিকেই তাকিয়ে আছি।কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।উনি যে এমন কিছু বলবেন আমার ধারনার ও বাইরে ছিল।আমাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি মাইক একজনকে ছুড়ে দিয়ে এক হাতে আমার একহাত ধরে টান দিতেই আমি গিয়ে ঊনার বুকের ওপর পরি।সাথে সাথেই গান বেজে উঠল।
mere hat me tere hat ho..
sari jannate mere sath ho…
to jo pas rahe..
fir keya ye jaha…
tere sang me ho jayu fana….
আমি মোটা হলেও নাচটা আমি খুব ভালোই পারি।গ্রামের যে কোনো অনুষ্ঠানে সবাই আমার কাছেই নাচ শিখতে আসতো।কিন্তু এখানে আমি পুরাই কাঠ পুতুল হয়ে গেছি।উনি আমাকে নিয়ে যা যা মুভস করছেন আমি কাঠ পুতুলের মতো উনার দিকে তাকিয়ে তাই করে যাচ্ছি।নাচ করার সময় উনি আমার এতটা কাছে আসেন যে ওনার গরম নিশ্বাস আমার ওপর পরছে।একসময় উনি আমার গলার চুল সরিয়ে কামোর দেওয়ার জায়গায় আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন।উনার ঠোঁটের স্পর্শে আমি কে পে উঠি।এইভাবে সবার সামনে ওনার এতটা কাছে আসাতে আমি কিছুটা আনইজি ফিল করছিলাম।তারপরও মনের মাঝে একটা ভালো লাগা কাজ করছিল।গান শেষ হলে উনি টেনে আমাকে নিজের বুকে শক্ত করে চেপে ধরেন।সবার করতালিতে স্তব্ধতা ভেঙে গেল।উনি আমায় এখনও ছাড়ছেন না।মনে হয় ছেড়ে দিলেই আমি কোথাও চলে যাবো।সবার সামনে এইভাবে জড়িয়ে ধরায় আমার অসস্থি হচ্ছিল তাই অনেক কষ্টে উনাকে বললাম।
-সার প্লিজ ছাড়ুন সবাই দেখছে।
-তাতে আমি কি করব?আমি আমার বউ কে জড়িয়ে ধরেছি তাতে কার কি?
-সার প্লিজ ছাড়ুন আমার আনইজি লাগছে।এবার উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।সবাইকে পার্টি ইনজয় করতে বলে চলে গেলেন।সবাই কাঁপল ডান্স করতে লাগল।আমি একপাশে দাঁড়িয়ে তা দেখতে লাগলাম।তখনই আমার পাশে নিলয় এসে দাঁড়ালো
-নূর আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
-আর তোমাকেও
ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম।
-হুম তো সারের সাথে রোমান্স তো ভালোই চলছে।
নিলয়ের কথা শুনে আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলাম।কিছুক্ষণ পর বললাম।
-আচ্ছা নিলয় আমার কি সত্যিই কোনো যোগ্যতা আছে ওনার এতো ভালোবাসে পাওয়ার।
-যোগ্যতার কথা তো আমি জানিনা নূর তবে এটা জানি যে তোমার মতো আর কেউ হয় না।তূমি অন্যরকম।
কথাটা শুনে আমি নিলয়ের দিকে তাকালাম।ও এক অন্য চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এই চাহনি আমি আগে কখনও দেখিনি।এই চাহনির কোনো মানে আমি খুজে পেলাম না।নিলয় খনিকেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
-তবে হ্যা যদি সার কখনও তোমাকে ছেড়ে দেয় তখন তুমি আমার কাছে আসতেই পারো।তুমি তো জানোই তোমার জন্য আমার মনের দরজা চব্বিশ ঘন্টা খোলা।
বলেই হাসতে লাগল।
-নিলয় তুমি মজা বন্ধ করবে।মুচকি হেসে বললাম।
-যাক বাবা সিরিয়াস কিছু বললেও তোমার কাছে মজাই কেন মনে হয় বলবে?
আমি এবার নিলয়ের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি সার পেছনে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছেন।চোখ মুখ শক্ত করে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছেন।দেখেই মনে হচ্ছে রেগে আছেন।উনাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমাকে এইভাবে দেখতে দেখে নিলয়ও পেছনে তাকালো।সার আমাদের এইভাবে দেখতে দেখে ওখান থেকে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন।
-কি হলো সার কি আমার কথা শুনে অন্য কিছু মাইন্ড করলেন।আমার জন্য কি তোমাদের কোনো ক্ষতি হলো।
নিলয় আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি ওর দিকে একবার তাকিয়েই সারের পিছু পিছু যেতে লাগলাম।সার একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে একহাতে সিগিরেট নিয়ে অন্য হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি ওনার পেছনে গিয়ে দাড়ালাম।
-সার আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।আপনি যেটা ভাবছেন নিলয় মোটেও সেইভাবে বলতে চায়নি।ও তো মজ….
আর বলতে পারলাম না উনি আমার এক হাতে টান দিয়ে সামনে এনে দেওয়ালে মিশিয়ে ধরলেন।উনার সিগারেট থাকা হাত দিয়ে আমার পাশের দেওয়ালে জোরে পান্চ মেরে বললেন।
-আমার থেকে মুক্তি চাও।আমার থেকে মুক্ত হয়ে ওই নিলয়ের কাছে যেতে চাও।তো যাও না আটকে কে রেখেছে।তুমিই ঠিক আছো তুমি তোমার মতো জীবন কাটাচ্ছো।আমিই খামোখা আমার লাইফ আটকে রেখেছি।অনেক হয়েছে।এতদিন তুমি তোমার মতো চলেছো এখন আমি আমার মতো চলবো।আর মুক্তি চাও তো সেটাও পেয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবে।
-সার আমার কথা টা তো….
-shut up তোমার কথা শোনার কোনো interest আমার নেই।just go to hell….বলেই উনি চলে গেলেন।আমিও উনার পিছু পিছু যেতে লাগলাম।
-সার সার আমার কথাটা শুনুন।
উনি আমার কোনো কথা না শুনেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি তাড়াতাড়ি পার্টির গেস্টদের অনু রিয়াদের সামলাতে বলে ওখান থেকে চলে এলাম।উনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছেন।আমি টেক্সি ভাড়া করে নিলাম।উনি বাড়ি পৌছেই নিজের রুমে গিয়ে নিজের দরজা লাগিয়ে দিলেন।ঘরের মধ্যে ভাঙচুর করছেন।আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ডাকতে সাহস পাচ্ছি না।ভাবলাম রাগ ঠান্ডা হলে কথা বলব।তাই আমি অন্য রূমে চলে গেলাম।কিন্তু আমি কিভাবে জানবো যে এই একটা ভুলই আমাদের সম্পর্কে আবার দুরক্ত বাড়িয়ে দেবে।আবারও আগের মতো হয়ে যাবে আমাদের সম্পর্ক।পরেরদিন থেকেই উনি আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেন আমি কথা বলতে গেলে সোজা অপমান করে তাড়িয়ে দেন।লেট নাইট পার্টি মেয়েদের সাথে মেলামেশা করা আর কাজের মাঝেই এতটা ডুবে থাকতেন যে আমার দিকে তাকানোর কোনো সময় ই ছিলনা উনার।এইভাবেই কতগুলো দিন কেটে গেল।এইভাবে আর কতদিন।কতদিন ই বা চলবে এইভাবে আমাদের সম্পর্ক টা।উনি আমার কোনো কথা শুনতে রাজী নন।আর উনার এইভাবে মেয়েদের সাথে মেশা টাও আমি সহ্য করতে পারছি না।কি করব আমি।
এইসবই নিজের কেবিনে বসে ভাবছিলাম তখনই রাইসা আমার কেবিনে ঢুকেই চেয়ারে বসে পরল।ওকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলেও শান্ত ভাবে বললাম
-রাইসা আপনি এখানে?কোনো প্রয়োজন ছিল কি?
-হ্যা প্রয়োজন আছে বলেই তো এসেছি।না হলে তোমার মতো মেয়ের সাথে কে দেখা করতঃ আসবে।
-তা বলুন কি প্রয়োজন।
-তুমি সোমকে মুক্তি দিচ্ছো না কেন।
-মানে??
-আর কতদিন পরে থাকবে ওর পায়ের নিচে।তোমার মধ্যে কোনো সেমনেস বলতে কিছু আছে কি নেই।তুমি এতদিনেও বুঝতে পারোনি যে তুমি এস কের যোগ্য নও।তুমি সম্রাট খানের স শব্দটার উচ্চারনের ও কোনো যোগ্যতা রাখোনা।তুমি এটা বুঝনা।বুঝেও শুধু টাকার লোভে ওর ঘাড়ে ঝুলে আছো।শোনো এস কের লাইফ থেকে চলে যাও।ওর এখন মেয়ের নেশা ধরেছে বুঝেছো সে জন্যই তো এখন আমার সাথে টাইম স্পেন করোতেই ও বেশি পছন্দ করে।আমি সোমকে অনেক সুখেই রাখবো অন্তত তোমার থেকে তো বেটারই।সো ব্যাগ গুছাও আর এস কের লাইফ থেকে গেট লস্ট হও।
বলেই চলে যাচ্ছিল।কিন্তু যেতে আবার ফিরে এসে বলতে বলতে লাগল।
-আর হ্যা এখন আমি কোথায় যাচ্ছি জানো তোমার ফিউচার এক্স হাসবেন্ডের সাথে লং ড্রাইভে।অনেক ফান হবে।কি বলো? ?
বলেই হাসতে হাসতে ও চলে গেল।
আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।এ হলো এটা।কি বলে গেল ও।না না এটা কিছুতেই হতে পারে না।অনেক হয়েছে অনেক থেকেছি চুপ।আর না।এইবার তো এর একটা শেষ করেই ছাড়বো।আজ আমি আমার অধিকার নিয়েই ছাড়বো।আর উনাকে একটু টাইট ও দিয়ে দেব।এসব ভেবেই রেগে মেগে নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা ওনার কেবিনের দিকে ছুটলাম।নক না করেই ভেতরে ঢুকে পরলাম দেখি উনি কেবিনের পেছনের দিকে থাই গ্লাস ভেদ করে চলন্ত শহর দেখতে ব্যস্ত আর রাইসা উনার গলায় ঝুলে আছে বাদরের মতো।আমাকে এভাবে কেবিনে ঢুকতে দেখে রাইসা বলে উঠল।
-হেই স্টুপিট গার্ল।কমনসেন্স বলতে কি কিছু নেই তোমার।কারো কেবিনে আসতে হলে যে নক করে আসতে হয় জানোনা তুমি।
আমি রাইসার কথা সম্পূর্ণ না শোনার ভান করে সোজা ওনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
-নিজেকে কি মনে করেন কি আপনি হ্যা।এত কিসের রাগ এত কিসের জেদ আপনার।সেদিন কি না কি শুনে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছেন।তো আজ পর্যন্ত অপমান ছাড়া আর কোনো কথাই বলেননি।কি ভাবেন আপনি নিজেকে।হতে পারেন আপনি the greatest সম্রাট খান তবে সেটা দুনিয়ার জন্য আমার আপনি আমার স্বামী আর আর আমি আপনার স্ত্রী।আপনার ঘরে বউ থাকতে আপনি এসব মেয়ের সাথে কি করে ঢলাঢলি করতে পারেন আমার বুজি কষ্ট হয়না।নাকি আমি মানুষ না আমার কষ্ট হতে নেই।
এক নাগাড়ে সব কথা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলাম।
উনি আমার দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে আছেন।আমার দিকে তাকিয়েই উনি বললেন।
-রাইসা তুমি বাইরে গিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করো।
-what…but why baby…
-সেই কৈফিয়ত তোমাকে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনা।
এবার রাইসা চোখ মুখ খিচিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তরতর করতে করতে চলে গেল।এবার উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল।
-হ্যা তো তুমি কিছু বলছিলে।
উনাকে এইভাবে এগোতে দেখে আমার রাগ ফুস হয়ে গেল।ভয়ে আমি পিছোতে লাগলাম।
-কি হলো বলো।
আমার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বেরোচ্ছে না।আমি পিছোতে পিছোতে কাচের গ্লাসের সাথে লেগে গেলাম।আর উনি আমার কাছে এসে আমার একপাশে কাচের ওপর হাত রেখে বলল…
to be continue……
দয়া করে নেক্সট নেক্সট না বলে গঠন মূলক কিছু কমেন্ট করে লেখিকাকে গল্প লিখতে উৎসাহিত করুন।

যেমনটা_তুমি
Ayusha Akter Usha
“”10″”
-কি হলো বলো।
আমি আমতা আমতা করে বললাম।
-সার আপনার ওই রাইসার সাথে মেলামেশা আমার একদমই সহ্য হয় না।
উনি আমার কথা শুনে আমার আরো কাছে এসে বললেন
-কেন সহ্য হয় না।আমি রাইসার সাথে মেলামেশা করলে তোমার প্রোবলেম কি তুমি তো কখনও আমাদের সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করনি তাহলে কেন সহ্য হচ্ছে না তোমার।
উনি আমার আরো কাছে আসাতে আমি চোখ বন্ধ করে নেই।উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন
-ভালোবাসো আমায়?
আমি ওনার কথা শুনে চট করে ওনার দিকে তাকাই।উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আবার বললেন
-কি হলো বলো ভালোবাসো আমায়?
আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম।ওই চোখে না বলা অনেক কথাই ভাসছিল।ওই চোখে আমি মাতাল হয়ে সব কিছু ভুলে কিছু বলতে যাবো তখনই রাইসা কেবিনের ভেতর ঢুকে পরে
-এস কে আর কতক্ষণ এই মেয়ের সাথে কথা বলবে।আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে তো।
বলেই আমাদের এইভাবে দেখে থ মেরে গেল।আমার রাইসাকে দেখে যতটা না রাগ তার থেকে বেশি লজ্জা হলো উনি আমার এতটা কাছে থাকায়।কিন্তু উনি এখনও যেভাবে আছেন সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন।একটু নড়লেন ও না।ওইভাবে থেকেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।
-রাইসা কারো কেবিনে আসতে হলে যে নক করে আসতে হয় এই মেনার টা কি তোমার নেই?
-Sk….??
-get lost….
-what….Sk i….
-I said get lost……
এবার রাইসা রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল।সার আবার আমাকে শান্ত কন্ঠে বললেন।
-কিছু বলছিলে তুমি।
রাইসাকে দেখে আমার মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেল।তাই রাগচটা হয়ে বলে ফেললাম।
-আমার কাছে জানতে এসেছেন কেন??আগে নিজের মনের কথাটা প্রকাশ করুন তারপর নাহয় আমার কাছে জানতে আসবেন।
বলেই উনাকে সরিয়ে দিয়ে ওখান থেকে চলে এলাম।একবারের জন্য ও ফিরে তাকালাম না।নিজের কেবিনে এসে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেলাম।আমার কত সাহস আজ আমি উনার মুখের ওপর কথা বলেছি।বাবা প্রান উড়ে কোথায় পালিয়ে ছিল কে জানে।আমি এইসব ভাবনা বাদ দিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম।আজ কাজের চাপ থাকায় রাত আটটায় অফিস থেকে বেরিয়েছি।সার অনেক আগেই চলে গেছেন আর যাওয়ার আগে এত্তগুলো কাজ হাতে ধরিয়ে গেছেন।এগুলো শেষ করতেই রাত হয়ে গেল।বাড়ি ফিরে দেখি পুরো বাড়ি অন্ধকার।এ কি পুরো বাড়ি অন্ধকার কেন?সার বাড়িতে নেই?আর সার যদিও বাড়িতে না থেকে তবুও তো সার্ভেন্ট রা আছে তাহলে বাড়ি অন্ধকার কেন।আমি সার্ভেন্ট দের ডাকলাম।কিন্তু কোনো সাড়া নেই।গেলো কই সবাই।আমি ধীরে ধীরে উপরে উঠে এলাম।নিজের রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখি রুম লক করা।কিন্তু আমি তো রুম লক করে কোথাও যাই না।আমার কাছে তো চাবি ও নেই যে খুলব।আমি ধীরে ধীরে সালের রুমের দিকে গেলাম।সারের রুম থেকে হালকা আলো আসছে।আমি আস্তে আস্তে দরজা খুলে যা দেখলাম তাতে আমার মুখ পুরো হা হয়ে গেল।রুম এত সুন্দর করে ডেকোরেট করা যে শুধু দেখে যেতেই ইচ্ছে করছে।আমি রুমের ভেতর ঢুকে এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম।পুরো রুম গোলাপ ফুল আর রেড কালারে লাইটিং দিয়ে ডেকোরেট করা।রুমের চারিদিকে ক্যন্ডেল জ্বালানো।বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে হার্ডশিপ আঁকা।সব কিছু দেখে আমি শুধু অবাক ই হচ্ছি।আমি বেড এর দিকে এগিয়ে গেলে একটা প্যাকেট দেখতে পাই।প্যাকেট এর ওপর লেখা “just for you”।ওটা দেখেই আমার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল।আমি প্যাকেট টা খুলে দেখি রেড কালার শাড়ি আর মেচিং ব্লাউজ তার সাথে কসমেটিক্স ও রয়েছে।আর একটা চিরকুট।যেটা তে লেখা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।আমি প্যাকেট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।কি হচ্ছে।সার কি করতে চাচ্ছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না তবে মনের মধ্যে একটা অন্যরকম ফিলিং কাজ করছে।আমি শাড়িটা পরে নিলাম।মুখে হালকা মেকাপ।মিষ্টি কালার লিপস্টিক।চোখে কাজল।কানের ঝুমকো গলায় সিম্পল নেকলেস আর হাতে লাল চুড়ি।চুল গুলো বাঁধতে গিয়েও বাধলাম না।কারন সার আমার খোলা চুল ই পছন্দ করেন।আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার আরো অবাক হওয়ার পালা।পুরো রুমে হাজারো লাল হার্টশিপ বেলুন ছড়ানো।বেলুনে মেঝে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।আমি একটা বেলুন হাতে নিয়ে দেখি বেলুনের গায়ে লেখা “I love you noor”
এটা দেখতেই মনের ভেতর ঢিপ করে উঠল।কিন্তু সার কোথায়।সার কে দেখতে পাচ্ছি না কেন।আমি এগিয়ে এসে সার কে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম।পেছনে তাকাতেই আমি হা হয়ে গেলাম।সার দাঁড়িয়ে আছেন।ব্লাক কালার শার্ট আর প্যান্ট পরে।ব্লাক কালার যে আমার প্রিয় রঙ।তার ওপর ওনাকে দেখতে কি সুন্দর লাগছে তা বলে বোঝানোর মতো না।ওনাকে দেখে চোখ সরাতে পারছি না।বার বার ওনার দিকেই চোখ চলে যাচ্ছে।উনি আমাকে এইভাবে তাকাতে দেখে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।ওনাকে এগিয়ে আসতে দেখে আমার হুস এল।ভয়ে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল।উনি এগিয়ে আমার কাছে এসে যাওয়াতে আমি পিছোতে লাগলাম।পিছোতে পিছোতে কাবার্ডের সাথে লেগে গেলাম।এখন কি করি কই যাই।উনি আমার কাছে এসে আমার একপাশে কাবার্ডে হাত রেখে বললেন।
-তুমি আমার মনের ইচ্ছে জানতে চেয়েছিলে না?আমার মনের ইচ্ছে কি শুনবে?
আমি মাথা নিচু করে চুপ করে আছি।ওনার প্রত্যেকটা কথায় আমার হার্টবিট বেড়ে চলেছে।উনি আমার আরো কাছে এসে বললেন।
-বাবা হতে চাই আমি।
ওনার কথা শুনে আমি চট করে ওনার দিকে তাকালাম।উনি আবার বললেন।
-আমি আমার একটা ফ্যামিলি চাই।যেখানে আমি তুমি আর তোমার মতো একটা গলুমলু বেবি থাকবে।আমাদের বেবি।যে তার ছোট্ট ছোট্ট পায়ে পুরো বাড়ি দৌড়ে বেরাবে আর আমি তার পিছু পিছু।করবে আমার এই ইচ্ছে পূরণ।
আমি ওনার কথা অবাক হয়ে শুনছি।উনার চোখে এক মায়া লুকিয়ে আছে।যেটা আমাকে বারবার মোহিত করছে।হালকা বাদামি এই চোখ গুলো যেন বার বার আমাকে বলছে “তুই শুধু আমার”।আমার যে এই চোখকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য নেই।উনার কথায় আমি কথা বলাই ভুলে গেছি।শুধু ওনাকে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে।মন ভরে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে।উনি আমার ঠোঁটের একদম কাছে ঠোট এনে বললেন।
-কি হলো কিছু বলছো না যে করবে না আমার এই ইচ্ছে পূরন।
আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।নিজের অজান্তেই একটু উঁচু হয়ে আলতো ভাবে ওনার ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম।আমার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে উনি এক হাতে আমার কোমর জরিয়ে ধরে অন্য হাতে আমার মাথার পেছনে চুল আঁকড়ে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।পাগলের মতো আমার ঠোঁটে গলায় ঘাড়ে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগল। ওনার উষ্ণ স্পর্শে আমার সব এলোমেলো হয়ে গেল।উনার প্রত্যেকটা স্পর্শ আমাকে শিহরিত করছিল।এমন সময় উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি ভয়ে উনার কলার খামচে ধরে বলতে লাগলাম।
-আরে আরে কি করছেন পরে যাবো তো।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললেন।
-তোমার হাজবেন্ড ওতো দূর্বল নয়।নিজের স্ত্রীর ভার ওঠানোর ক্ষমতা আমার আছে।আর তুমি তো ভারি ই নও।শুধু শুধুই গলুমলু হয়েছো।আমি উনার কথা শুনে লজ্জায় উনার বুকেই মুখ লুকালাম।
উনি আমাকে বেলকনিতে নিয়ে গিয়ে বেতনের সোফায় বসালো।দেখলাম ওখানে টেবিলে খাবার সার্ভ করা।সার আমার পাশে বসে নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দিল আর নিজেও খেয়ে নিল।খাওয়া শেষে উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথাটা নিজের বুকে ঠেকিয়ে নিল।
-তুমি খুব চাঁদ দেখতে পছন্দ করো তাই না।আজ দুজনে একসাথে বসে চাঁদ দেখব।
উনার এই কথায় আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম।উনি কি করে জানলেন আমি চাঁদ দেখতে পছন্দ করি।উনি আমার দিকে না তাকিয়েই চাঁদ দেখতে দেখতে বলল।
-জানো নূর প্রথম যখন আমি তোমায় গ্রামের বাড়ি দেখেছিলামতখন আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম।পরে যখন জানলাম তোমার সাথেই আমাকে সারাজীবন কাটাতে হবে তখন আমার খুব রাগ হয়েছিল।কিন্তু আমি কখনওই বাবার বিরুদ্ধে যেতে চাইনি।তাই সেদিন তোমাকে নিজের থেকে ফোন করে ডাকলাম।আর ক্যাফেতে নিয়ে গিয়ে তোমাকে সব বললাম।ভাবেছিলাম গরিব গ্রামের মেয়ে তোমাদের জন্য টাকাই সবকিছু।আর আমার সাথে বিয়ে হলে যে এসবের কিছুর অভাব তোমার থাকবে না তা তুমি খুব ভালো করেই জানো আর আমার সম্রাট খান কে কেউ রাজেক্ট করবে এমন কেউ এখনো জন্মায়নি।কিন্তু তুমি আমার সব ভাবনাকে মেরে ফেলে তোমার বাবাকে ফোন করে বিয়ে ভাঙার কথা বললে।যেটা আমি তোমার ব্যাগ দিতে এসে শুনতে পাই।তখন আমি অনেক আশ্চর্য হই যে আমাকেও কেউ রিজেক্ট করতে পারে।তখনি তোমার উপর একটা ভালো লাগা কাজ করেছিল।সেই ভালোলাগা নিয়ে আমাদের বিয়েও হয়ে গেল।আমার আলাদা থাকতাম ঠিক ই কিন্তু অফিসে যখন তোমাকে দেখতাম তুমি পার্সোনাল লাইফের কথা ভুলে আমার সামনেই অফিসের সব কাজ করছিলে কিন্তু তাতে তোমার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না।তোমার এই স্বভাবেই আমি আরো মুগ্ধ হই।পরে বাবার কথাতে তোমাকে নিজের পি এ বানালাম।যদিও এর জন্য তোমাকে অনেক টেস্ট দিতে হয়েছে তবুও আমি কে যেন মন প্রান দিয়ে চেয়েছিলাম তুমিই আমার পি এ হও।তাই হলো।তুমি আমার পি এ হলে।সব সময় আমার আশে পাশে থাকতে।এভাবে কখন যেন তূমি আমার অভ্যাসে পরিণত হলে।তোমার হাতের কফি না খেলে আমার দিন ভালো যেত না।তুমি আমার কেবিন না গোছাতে আমার সবকিছু অগোছালো লাগতো।তোমার ওপর রাগ না করলে মনে হতো দিন টাই বৃথা।তোমার ভয়ার্ত মুখটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগতো।আমি সবসময় তোমাকে আমার আশেপাশে দেখতে চাইতাম।কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয় তাই সিসি ফুটেজে সবসময় তোমাকে দেখতাম আর তোমার কেবিনে ভয়েস রেকোর্ডার লাগিয়ে রেখেছিলাম।যেন তোমার বলা প্রত্যেকটা কথা আমি শুনতে পাই।যখন তোমাকে ঔই নিলয়ের সাথে দেখতাম।প্রচণ্ড রাগ হতো আমার।ইচ্ছে হতো ওর সামনের থেকে তোমার হাত ধরে নিয়ে চলে আসি।কিন্তু সেটা তো পারতাম না তাই কাজের বাহানায় তোমাদের আলাদি রাখতে চেয়েছি।নিলয় কে তোমার সাথে দেখলে আমার কেন রাগ হতো আমি তখনও জানতাম না।কিন্তু যেদিন আমি তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি পাগল প্রায় হয়েছে গেছিলাম।মনে হচ্ছিল আমার আমার সবথেকে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে গেছে যাকে ছাড়া আমার এক মূহূর্ত ও চলে না।পরে যখন তোমাকে অফিসের ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছিলাম আমার মনে হলো আমার দেহে প্রান ফিরে এসেছে।তখন আমি রিয়ালাইজ করি যে আমি তোমায় ভালোবাসি।যখন তোমার রুমে খাবার দিতে এলাম তখন তুমি কারো সাথে কথা বলছিলে।আমি নিশ্চিত ছিলাম ঔটা নিলয় ছিল আমি রেগে যাই আর তোমার সাথে মিসবিহেভ করি।তবে আমি তখনই পণ করেছিলাম যে আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা আমি তোমাকে বোঝাবো।সেদিন পার্টিতেও আমি জানি নিলয়ের বলার মানে অন্য হলেও তুমি কথাটাকে অন্য ভাবেই নিয়েছো তাই তোমার ওপর রাগ করার কোনো মানেই হয়না।তবুও তোমার ওপর রাগ দেখিয়েছিলাম আমি।আজকের এই দিন টার জন্য।আজ জানতে পারলাম।তুমিও আমায় ভালোবাসো।
উনি আমার আরো শক্ত করে ধরে বললেন।
-কখনও নিজের থেকে আলাদা করব না তোমায়।এই বুকে তুমি ছাড়া অন্য কারো জায়গা হবেনা।
আমি অবাক হয় উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কতটা ভালোবাসে আমায় এই মানুষটা।আমায় এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আমার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন।আমি উনার স্পর্শ অনুভব করছি আর ভাবছি আপনি ঠিকই বলেছিলেন।আমি এই সম্পর্কের জন্য কিছুই করিনি।তবে কিছু না করেও অনেক কিছুই করেছি।যেমন বাবাকে বলে আপনার পি এর পজিশনটা আমি নিয়েছি।আপনার আগে পিছে ঘুরে নিজেকে আপনার অভ্যাসে পরিনত করেছি।আমি জানি আপনি নিলয়ের সাথে আমাকে সহ্য করতে পারেননা।তাই তো বেশি করে নিলয়ের সাথে মিশতাম।কি করবো বলুন বাঙলার গ্রামের মেয়েরা যে স্বামীর অধিকার ছাড়তে নারাজ।তবে আমি কিভাবে আমার অধিকার ছাড়তাম।
☆☆
আজ অনেকদিন পর ডাইরি লিখতে বসলাম।এতদিন উনার ভালোবাসার মাঝেই এতটা ডুবে ছিলাম যে ডাইরি লিখার কথা মনেই আসেনি।তবে আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে ডাইরি লিখতে।এত দিনে আমাদের সম্পর্কটা আরো গভীর হয়ে গেছে।আমাদের মাঝে যে ঝগড়া হয়না তা না ঝগড়া ও হয় তবে কিছুক্ষণ পরই দুজন দুজনকে সরি বলে কাছে টেনে নিই।আমি অসুস্থ হলে উনি সারারাত জেগে আমার সেবা করেন।এর থেকে বেশি একটা মেয়ে কি বা চাইবে।আমি অনেকদিন হলো আর অফিসে যাই না।উনি সোজা কথায় আমাকে বলে দিয়েছেন প্রেগনেন্সির সময় আমি যেন কোনো চাপ না নেই।হুম আমি প্রেগনেন্ট।আট মাসের।যখন প্রথম উনাকে এই কথা জানাই সেদিন উনি খুশিতে পুরো ঘরে আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরেছিলেন।অফিসে গিয়ে নিজের হাতে সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছেন।আর সেদিন এ আমাকে অফিস থেকে নিয়ে এসেছেন আর যেতে দেননি।উনার এই খুশি দেখে আমি উনার আমার না বলা কথা টা আর বলতে পারিনি।আর কখনো বলব ও না।যখন সময় হবে তখন নিজ থেকেই জেনে যাবেন।।।।
ডাইরির শেষ দুই লাইন সোমের হাতের লেখা….
তুমি আমায় বুঝলেনা নূর।স্বার্থপরের মতো আমাকে একা ফেলে চলে গেলে না ফেরার দেশে।আমি তোমাকে কখনওই ক্ষমা করব না কখনও না।
♡♡
ডাইরির ওপর টপ করে এক ফোটা জল পরল।একটা বড় ধরনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাইরিটা বন্ধ করল নূর।সোমের ঘরে কপড় খুজতে এসে কাবার্ডে লুকিয়ে রাখা ডাইরিটার দিকে চোখ গেলে সেটা বের করে পরে নূর।আর পরতে পরতেই তার বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে।।সাথে স াথেই সোম বাইরে থেকে নিজের রুমে আসতে আসতে চেঁচিয়ে বলতে লাগল।
-নূর হলো তোর দেরী হয়ে যাবে তো।
বলেই রুমে ঢুকে নুরকে দেখে অবাক হলো।নূর তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ডাইরি পেছনে লুকিয়ে নিয়ে সোমের দিকে তাকালো।
-কি রে তুই এখানে কি করছিস?
-আসলে বাবা আমি তোমার ড্রেস খুঁজতে এসেছিলাম।তুমি রেডী হবেনা।
বলেই কাবার্ডের দিকে ঘুরে কাপড় খোঁজার বাহানায় ডাইরিটা যথাস্থানে রেখে দিল।
-আরে তার কোনো প্রয়োজন হবে না।আমি এইভাবেই যাবো।
নূর এবার কাবার্ড লাগিয়ে সোমের কাছে এসে হাসি মুখে বলল।
-ওয়াও বাবা তোমাকে তো প্রতিদিনের মতোই হট এন্ড হ্যান্ডসাম লাগছে।না জানি এখনও তোমার উপর কতো মেয়ে ফিদা হয়।
সোম এক হাতে নূরকে জড়িয়ে ধরে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে বলল
-দেখতে হবে না বাবা টা কার।তবে আমার বেবিডল টাকেও তো কম সুন্দর লাগছেনা।
-i like also….
বলেই দুজনে হাসতে হাসতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।সার্ভেন্ট একটা লাগেজ এনে গাড়ির ডিকিতে রেখে দিল।নূর আর সোম গাড়িতে বসল।
-নূর সব ঠিক ঠাক ভাবে দেখে নিয়েছিস তো।
-হ্যাঁ বাঁবা সব ঠিক দেখে নিয়েছি।
-good.
বলেই সোম ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলল।
গাড়ি তার আপন মনে চলছে।নূর জানালায় নিজের চিবুক ঠেকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে। হাজারো ভাবনা ডুবে আছে।এমন সময় জানালা থেকে মুখ উঠিয়ে সোমের দিকে তাকিয়ে বলল।
-বাবা তুমি তো মা কে দাদুর কথা রাখতে বিয়ে করেছিলে।আজ আমার মা মারা যাওয়ার 16 টা বছর হয়ে গেছে।এরপর তো দাদু তোমাকে অনেকবার বিয়ের জন্য বলেছিল তাহলে তুমি আর বিয়ে করনি কেন।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়েই সোম তার দিকে তাকালো।কিন্তু পরক্ষণেই স্বাভাবিক হয়ে বলল।
-তোর মাকে কথা দিয়েছিলাম এই বুকে ও ছাড়া অন্য কারোর জায়গা হবে না।হয়তো তাই আর অন্য কাউকে বিয়ে করা হয়নি।
বাবার এমন উত্তর পেয়ে নূর আবার জানালায় নিজের চিবুক ঠেকিয়ে বসল।মনের মধ্যে হাজারো ভাবনা জমে রয়েছে তার।সোমের ডাকে ঘোর ভাঙল নূরের।
-কি রে এখনো বসে আছিস।এয়ারপোর্টে পৌছে গেছি বেরোবি না।দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
বলেই দরজা খুলে বেরোতে যাবে তখনি নূর সোমের হাত চেপে ধরে।
-বাবা আমি যদি পড়ালেখা শেষ করতে লন্ডনে না যাই তবে কি তুমি খুব বকবে।
মেয়ের মুখে এই কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকায় সোম।
-আসলে মা খুব স্বার্থপর ছিল তাই আমাদের একা করে চলে গেছে।কিন্তু আমি তো আর মায়ের মতো স্বার্থপর নই যে তোমাকে এক রেখেই চলে যাবো।আমি তোমার স াথেই থাকতে চাই।কোথাও যেতে চাইনা।
মেয়ের এমন কথা শুনে সোম কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে নূরকে একহাতে জরিয়ে নিজের বুকে নিয়ে ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলল।
-ড্রাইভার গাড়ি ঘোরাও।
এই কথা শুনে নূর বাবার বুকে মাথা রেখে এক বিশ্বজয়ী হাসি দিল।আর ভাবল।
“সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসা হয় না।ভালোবাসার মাঝেই সৌন্দর্য কে খুঁজে নিতে হয়।আর যে সেটা পারে সেই হলো প্রকৃত প্রেমিক”নূর বাবার মুখের দিকে তাকালো।সোম অন্য দিকে মুখ করে ভাবছে।
-তুমি চলে গেছ ঠিকি কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে বেঁচে থাকার মানে দিয়ে গেছ।
THE END.
ভালোবাসি গল্পের পর এটা আমার দ্বিতীয় গল্প।সময়ের সল্পতার জন্য গল্পটা শর্টকাটে দিতে গিয়ে পুরো গল্পই আমি এলোমেলো করে ফেলেছি।তারপরো গল্পের আসল থিমটা আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।আপনারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন যার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।।আর গল্পটা কেমন হলো তা বলতে ভুলবেননা যেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here