যেমনটা_তুমি Part 5+6

0
3143

যেমনটা_তুমি Part 5+6
Ayusha Akter Usha

আমি ফাইলের কাজ শেষ করে হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচটা বাজে।ছয় টায় স্যারের সাথে মিটিং যেতে হবে ভাবতেই সামনে স্যারের টেবিলের দিকে তাকালাম।এ কি স্যার কোথায়।স্যার কি তবে মিটিংয়ের উদ্যেশ্যে বেরিয়ে পরেছে।ইসস ফাইলের দিকে মন দিতে গিয়ে মিটিংয়ের কথা মন থেকে বেরিয়েই গেছিল।দেরী হলে স্যার আমার বারোটা বাজাবে।আমি তাড়াতাড়ি ফাইল স্যারের টেবিলে রেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে গেলাম।ওখান থেকে আমার ব্যগ নিয়েই অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম।বাইরে বেরিয়েই দেখি স্যার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।আমাকে দেখেই গিয়ে গাড়িতে বসলেন।আমিও চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম।স্যার একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে গাড়ি থামালেন।আমি ওখানেই নেমে পরি।স্যার গাড়ি পার্ক করে এলে উনার সাথেই ভেতরে যাই।দেখি ক্লাইন্ডসরা এসে গেছেন।স্যার ওদের সাথে হাত মিলিয়ে সৌজন্য মূলক কথা বলে মিটিং শুরু করলেন।কখনও কখনও আমিও স্যারের সাথে তাল মিলিয়ে প্রোজেক্ট বিষয়ে উনাদের কিছু বুঝিয়ে দিলাম।মিটিং শেষ করতে প্রায় আটটা বেজে গেল।আমরা ওখান থেকেই ডিনার করে বেরোলাম।আমি রেস্টুরেন্টের বাইরে এসে দাড়ালাম।স্যার গাড়ি আনতে গেলেন।এরই মাঝে হঠাৎ করেই কোথা নিলয় এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।
-মেডাম এখানে কি করছেন?
-স্যারের সাথে মিটিংয়ে এসেছি তুমি…
-এটা কি তুমি ঠিক করলে নূর।
-কেন আমি আবার কি করলাম?
-আমি তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে ওয়েট করে ছিলাম তোমার কেবিনে কিন্তু তোমার আসার কোনো নাম গন্ধই ছিলনা।
-I am so sorry niloy..সত্যি বলছি কাজে আটকে গেছিলাম।
-হুম সেটাই কাজে আটকে গেছিলে তুমি জানো আমি তোমার জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম।পরে যদি রিনা ফোন করে দেখা করার জন্য জোর না করত তো আমি ওখানেই বসে থাকতাম।
-বসে তো আর থাকোনি তাহলে এত পেচালের কি মানে।
-কি বলছ তুমি নূর প্রায় একঘন্টা ধরে বসে ছিলাম আমি।
-যখন দেখছই আমি আসছিনা তো এতক্ষণ অপেক্ষা করার তো কোনো মানে হয় না।বাই দ্যা ওয়ে তুমি এখানে কি করছ।
-ডিনার করতে এসেছি।
-একা একাই??
-এই নিলয় কখনও কোথাও একা একা গেছে?
-হুমম তো আজ কে এসেছে?রিনা মিনা টিনা….???
-শিলা….
-শিলা আবার কে?
-নিউ পটাচ্ছি।আজ যদি পটে যায় তো কাল তোমার লান্চ আমার পক্ষ থেকে।
–ওয়াও গ্রেড।তো তোমার শিলা কোথায়?
-এদিকেই কোথাও একটা ফোনে কথা বলছে।
-ওহ।
আমি দেখলাম স্যার গাড়ি নিয়ে আসছে।তাই নিলয়কে বললাম।
-ওকে নিলয় বাই নাউ।অল দ্যা বেস্ট ফর ডিনার।
-থ্যাংকস বায়।
নিলয়ের থেকে বিদায় নিয়ে আমি রাস্তার ধারে এসে দাড়ালাম।কিন্তু একি স্যারের গাড়ি আমাকে ক্রস করে চলে গেল।এটা কি হলো আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন।উনি আমাকে এই রাতে একা কি করে ছাড়লেন।এখন আমায় একা একা বাড়ি ফিরতে হবে।আমি একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলাম।সত্যি আমার খুব রাগ হচ্ছে।যখন নিয়ে যাবেন না তখন নিয়ে এলেন কেন?একা একাই তো আসতে পারতাম।আর এমনিতেও উনার গাড়িতে চড়ার আমার কোনো শখ নেই।এই মিটিংয়ে আসতে যাতে সেজন্য তো উনি নিজেই আমাকে উনার সাথে যেতে বলেন আবার নিয়েও আসেন।তবে আজ কি হলো যে আমাকে ছেড়েই চলে এলেন।গেছে যাক তাতে আমার কি?এমনিতেও উনার আমার কোনো এসপেকটেসন নেই।উনি কি করে না করে সেটা উনার ব্যাপার।আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই উনার বিষয়ে মাথা ঘামানোর হুহ।বাড়ি পৌছে আমি গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এলাম।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে টিভি দেখতে বসলাম।আর আমার টিভি দেখা মানে হানি বানি।হানি বানি দেখতে দেখতেই মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল।এমন সময় মনে হলো কেউ আমায় দেখছে।আমি সিড়ির উপরে তাকালাম।কই কেউই তো নেই।আমি আর দেরি না করে টিভি অফ করে দিয়ে উপরে চলে এলাম।
সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছি তখন দেখি উনি জোগিং করে ফিরলেন আমি উনার রুমে গিয়ে গ্রিন টি দিয়ে এলাম।উনি ওয়াশরুমে।আমি নিচে নেমে ব্রেকফাস্ট করে উনার জন্য ডাইনিং টেবিলএ খাবার সাজিয়ে রেখে রেডী হয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরলাম।আমি উনার পি এ হওয়ার কারনে উনার আগেই আমায় অফিস পৌছতে হয়।আমি অফিসে এসে উনার কেবিনের সবকিছু ঠিক করে গিয়ে নিজের কেবিনে বসে কাজ করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর স্যার এলে আমি উনার কেবিনে গিয়ে উনার সাথে কাজ করতে লাগলাম।স্যারের কাজ শেষ হলে আমি আমার কেবিনে চলে আসি।কিছুক্ষণ পর নিলয় আমার কেবিনে আসে।
-নূর আজ আমার পক্ষ থেকে লাঞ্চের ট্রিট রইল ওকে।
-কেন শিলা পটে গেছে নাকি।
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বললাম।
-হুম কাল ডিনারেই কাজ হয়ে গেছে।সেটার জন্যই ট্রিট।আজ কিন্তু একসাথে লান্ঞ্চ করব ওকে।
-ওকে ডান।
নিলয় চলে গেল।আমি আমার কাজে মন দিলাম।দুপুরে লান্ঞ্চ টাইমে কাজ বন্ধ করে উঠে কেবিন থেকে বেরোবো তখনি আমার টেবিলের টেলিফোন বেজে উঠল।আমি ধরার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে বলল
-এক্ষুণি আমার কেবিনে আসুন।
বলেই ফোন কেটে দিলেন স্যার।এখন আবার কেন ডাকছে ভাবতে ভাবতেই ঊনার কেবিনে নক করলাম।উনি উনার টেবিলে এক গাদা ফাইল দেখিয়ে বললেন
-এই ফাইল গুলো নিন আর সব ফাইল আজকের মধ্যেই কমপ্লিট করূন।
ফাইল গুলো দেখে আমি টাস্কি খেলাম।
-সার এত গুলো ফাইল আজকের মধ্যে কি করে??
-আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না।সব গুলো আজকে কমপ্লিট চাই মানে আজকেই got it…now get lost…
উনার কথা শুনে আমার এতো রাগ হলো এতো রাগ হলো যে বলার মতো না।আমি কোনো কথা না বলে ফাইল নিয়ে নিজের কেবিনে চলে এলাম।এখন এই খটাসটার জন্য দুপুরে খেতেও পারব না খেতে গেলেই দেরী হয়ে যাবে।তারপর আবার কি কি না কথা শোনায়।তারথেকে বরং চুপচাপ কাজ করাই বেটার।ব্যাগ থেকে একটা চিপসের প্যাকেট বের করে খেতে খেতে নিজের কাজে মন দিলাম।কিছুক্ষণ পর নিলয় এল।
-what is this noor?তোমাকে আমি বললাম আজ একসাথে লাঞ্চ করব।আর তুমি এখনো কাজ নিয়েই পরে আছো।
-নিলয় I am sorry…আজ লাঞ্চ এ যেতে পারব না অনেক গুলো কাজ আছে।
-বাট নূর…
-নিলয় প্লিজ জোর করনা।
নিলয় রেগে চলে গেল।কিন্তু আমার কিছুই করাল নেই।এতগুলো ফাইল পরে থাকতে দেখলে খিদে এমনিই হারাম হয়ে যায়।আমি আমার কাজে মন দেই।কাজ করতে করতে আমার সময়র খেয়ালই নেই।আমার চোখ লেগে আসছে।কিছুতেই খোলা রাখতে পারছি না।কাজ করতে করতে টেবিলের ওপর ঢোলে পরলাম।আর কোনো হুস নেই।কারোর ডাকে আমার ঘুম ভাঙল।
-মিসেস নূর মিসেস নূর।
আমি ডাক শুনে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখি স্যার দাঁড়িয়ে আছে।স্যারকে কেমন জানি দেখাচ্ছে।এলোমেলো চুল বুক শার্টের বোতাম খোলা চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।আমি স্যারকে এইভাবে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম।
-স্যার আপনি এখানে এইভাবে কি হয়েছে স্যার।
স্যার উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন
-আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন।
-এত রাতে মানে কটা বাজে?
স্যার আমার কথা শুনে যে রেগে গেল তা উনার মুখ দেখেই বোঝা গেল।আমি আমার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়েই চমকে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম।রাত সাড়ে এগাড়োটা।আমি এতক্ষণ অফিসে কি করছিলাম।বাইরে তাকিয়ে দেখলাম পুরো অফিস অন্ধকার শুধু আমার কেবিন ছাড়া।
আমি স্যারের কাছে গিয়ে বললাম।
-sorry sir আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি যে এতটা রাত হয়ে গেছে।কাজ করতে করতে কখন যে চোখ লেগে গেছে বু….
আর বলতে পারলাম না।উনি আমার দুই বাহু ধরে নিয়ে গিয়ে দেওয়ালে ঠেকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল
-তোমার কি মিনিমাম কমনসেন্সটুকু বলতে কিছু নেই।এতটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারো তুমি।জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।কোথায় কোথায় না খুঁজেছি তোমাকে আর তুমি?তুমি এখানে আরামে ঘুমোচ্ছিলে।wow great…
আমার উনার মুখে তুমি কথাটা শুনে পেটের মাঝে গুদগুদি হওয়ার মতো কিছু একটা হয়ে গেল।উনি আমায় তুমি বলছেন আমার যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।আমি উনার কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।তবু কোনোমতে নিজেকে সামলে বললাম।
-sorry sir আর এরকমটা হবে না।
-হয়েছে?হয়েছে তোমার সরি বলা।এখন বাড়ি যাবে নাকি এখানেই বাকি রাতটা কাটাবে।
-নো স্যার চলুন।
মাথা নিচু করে বললাম আমি।
উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন।আমিও ঊনার পিছু পিছু গেলাম।আমার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিলেন উনি।আমি চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলাম।উনিও গাড়িতে বসে ড্রাইভ শুরু করলেন।বাড়িতে এসে গাড়ি থামালে আমি গাড়ি থেকে নেমে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম।উনার প্রত্যেকটা কথা এখনো আমার কানে বাজছে।উনি আমাকে খুজেছেন।আমাকে হারানোর ভয় পেয়েছেন।আবার তুমি করেও বলেছেন।আমার যেন মনে হচ্ছে আমি এখনো ঘুমিয়ে আছি।আমি স্বপ্ন দেখছি।আমার কেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।এমন সময় রিয়া ফোন করল।আমি ফোন রিসিভ করলাম।
-হ্যালো।
-হ্যালো নূর।তুমি ঠিক আছো তো।
-হ্যাঁ আমার আবার কি হবে।
-কোথায় ছিলে তুমি?ফোন ধলছিলেনা কেন।
-ফোন সাইলেন্ট ছিল কেন বলো তো?
-আরে স্যার তো তোমাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছেন।আমাকে ফোন করেছিলেন।আমি বুঝতে পারলামনা এতো রাতে উনি তোমায় কেনো খুঁজে বেরাচ্ছেন।
আমি রিয়ার কথা শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।
-আব আসলে স্যারের একটা ইম্পর্টেন্ট ফাইল আমার কাছে ছিল।আমি ফোন ধরছিলাম না।আর স্যারে ফাইলটা প্রোয়োজন ছিল তাই হয়তো।
-ওহ হতে পারে।
-ওকে বায়।
-ওকে।
আমি ফোন রেখে দেওয়ার সাথে সাথেই স্যার এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।উনাকে এইভাবে দাঁড়াতে দেখে আমি ভুত দেখার মতো চমকে গেলাম।কারন এই ছয় মাসে এই প্রথম উনি আমার রুমে এলেন।আমি দেখলাম।উনার একবার সিগারেট ধরানো।উনি সিগারেট ও খান।এটা তো জানতাম না।আর জানবোই বা কিভাবে।কখনো জানার প্রয়োজনই বোধ করিনি।
-স্যার আপনি এখানে।কিছু বলবেন।
-কেন এমনি আসতে পারিনা।
সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলেন উনি।
-না তা কেন হবে।
বলে আমি রেলিং ধরে দাড়ালাম।কিন্তু উনার সিগারেটের গন্ধ আমার সহ্য হচ্ছে না তাই ওখান থেকে চলে আসতে চাইলাম তখনি উনি আমার হাত ধরে ফেললেন।
-আমি চমকে উনার দিকে তাকালাম।
-আমার সাথে কিছু মূহুর্ত থাকতেও তোমার অসহ্য লাগছে নূর।
আমি উনার কথা শুনে থমকে যাই।মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না ।উনি উনার হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই।উনি এক অন্য রকম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার থেকে হাত ছাড়ানোর চঃচেষ্টা করতে লাগলাম।
-আ আ আমার হহাত ছাড়ুন সার।
-কেন আমার স্পর্শ তোমার খারাপ লাগছে।আর অন্যদের সাথে তো ঠিকি গায়ে পরে কথা বলো তখন খারাপ লাগেনা?
উনার কথায় আমার মাথা গরম হয়ে গেল।
-স্যার আপনি আমার হাত ছাড়ুন আমার ঘুম পাচ্ছে।ছাড়ুন আমার হাত অসহ্য লাগছে আম…
আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না উনি আমার দু হাত ধরে নিয়ে গিয়ে থাই গ্লাসের সাথে চেপে ধরে আমার ঠোটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।আমি আজ ঝটকার পর ঝটকা খাচ্ছি।স্যার এরকম কিছু করবেন আমি বুঝতেও পারিনি।রাগের মাথায় উনি আমার ঠোটের ওপর নানা ভাবে নির্যাতন করতে লাগলেন।ব্যাথায় আমি শেষ।উনাকে সরিয়ে দেওয়ার ও কোনো চান্স নেই।আমার দুইহাতই উনি চেপে ধরে আছেন।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় বারবার বিফল হচ্ছি।কিছুক্ষণ পর উনি নিজের থেকে আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমায় মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওখান থেকে চলে গেলেন।আমি পাথর বনে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।এটা কি হলো।স্যার এমনটা কেন করলেন।ঠোঁটের ব্যাথায় কাঁদতে ইচ্ছে করছে।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রুমে এসে দেখি টেবিলের ওপর খাবার রাখা।তার মানে উনি খাবার দিতে এসেছিলেন।কিন্তু এখন উনি যা করলেন তার পর খাবার আর গলা দিয়ে নামবে না।তাই কিছু না খেয়েই চুপচাপ শুয়ে পরলাম।
to be continue…..

যেমনটা_তুমি
Ayusha Akter Usha
“”6″”
পরেরদিন হিজাব পরে মুখ ঢেকে অফিসে গেলাম।কাল উনি আমার ঠোঁটের যা অবস্থা করেছেন আমি তো আর কাউকে মুখ দেখানোর অবস্থাতেই নেই।আমি অফিসে এসে আগে উনার কেবিনের সবকিছু গুছিয়ে রেখে নিজের কেবিনে এসে কাজে মন দিলাম।উনি অফিসে আসলেও আমি আর উনার কেবিনে গেলাম না।পিওনের দ্বারা উনার কফি পাঠিয়ে দিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলাম।কিছুক্ষণ পর আমার টেবিলের টেলিফোন বেজে উঠল।আমি নিশ্চিত স্যার ফোন করেছেন।নিশ্চয়ই উনার কেবিনে যেতে বলবেন।আমি উনার জন্য কফি না নিয়ে গিয়ে পিওনকে পাঠিয়ে দিয়েছি।এতে নিশ্চয়ই উনি রাগ করেছেন।না জানি এখন আবার কি করে।অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাকে ফোনটা ধরতে হলো।আমি কিছু বলার আগেই উনি ঝাঝিয়ে বলে উঠল।
-এক্ষুনি আমার কেবিনে তোমায় দেখতে চাই।
উনি ফোন রাখার আগেই আমি ফোন রেখে দিলাম।কথাতেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা রেগে আছে।কি করব?যাবো কি যাব না?ধুর না গেলে আরেক ঝামেলা।তাই আর কিছু না ভেবে উনার কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম।উনার কেবিনের দরজায় নক করতেই দেখি কেবিনে কেউ নেই।গেলেন কোথায়।আমাকে ডেকে নিজেই ফুরর হয়ে গেলেন।আমি ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে পা বাড়ালাম।এদিক ওদিক উনাকে দেখার চেষ্টা করলাম।তখনি দরজা লাগার শব্দে চমকে পেছনে তাকালাম।একি স্যারর।উনি দরজা লাগালেন কেন।এবার ভয়ে আমার আত্মা উড়ে কোন দিকে পালাবে সেই রাস্তাই খুঁজছে।উনি আমার দিকে এগোতে এগোতে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন।
কফি নিজে না নিয়ে এসে রহিমকে দিয়ে কেন পাঠিয়েছিলে?
আমি ভয়ে পিছোতে লাগলাম।
-ইয়ে মানে ইয়ে…
-what nonsense. ..ইয়ে ইয়ে করছ কেন যেটা প্রশ্ন করলাম সেটার উত্তর দাও।
-মানে স্যার আমার কাজ ছিল তাই রহিম চাচাকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম।
-আমাকে কাজ দেখাতে এসোনা আমি খুব ভালো করেই জানে তুমি কাজের জন্য নয় অন্য কারনে আসনি।সেই অন্য কারন টা কি।আমাকে ইগনোর করা?
আমি উনার কথা শুনে থ মেরে যাই।আমার বুঝতে বাকি রইল না এখানে আর বেশিক্ষণ থাকলে আমার মরন নিশ্চিত।তাই আমি পিছানো বাদ দিয়ে স্যারের পাশ কাটিয়ে দরজার কাছে যেতে যেতে বললাম।
-দরজা কেন লাগিয়ে দিয়েছেন?আমি আমার কেবিনে যাবো আমার অনেক কাজ আছে।
বলে যেই দরজা খুলতে যাব অমনি উনি আমার হাত ধরে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল।আমি আহহ বলে কুঁকড়ে উঠলাম।
-আমি বললাম না আমাকে কাজ দেখাতে এসোনা।হিজাব কেন পরে এসেছো আজ।
-এ এমনি আমার ইইচ্ছে হয়েছে তাই পরেছি।আপনি ছাড়ুন আমাকে।আমার হাতে লাগছে।আর এইভাবে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন কেউ দেখলে কি ভাববে আপনি ছাড়ূ..
-হুসসস…
উনার কথায় আমি চুপ মেরে গেলাম।উনি আমার হাত ছেড়ে আমার মুখ থেকে টেনে হিজাব খুলে ফেললো।আমি অবাক হয়ে উনার কাজ দেখছি।উনি এক হাত দিয়ে আমার ঠোঁটের কাটা অংশে হাত দিতেই আমি চোখ বন্ধ করে আউচ বলে উঠলাম।উনি সাথে সাথে আমার ঠোট থেকে হাত সরিয়ে নিলেন।আমার গালে হাত দিয়ে বুরো আঙুল দিয়ে আমার ঠোটের নিচে স্লাইড করতে লাগলেন।
-I am sorry noor.কাল তোমাকে ওইভাবে কষ্ট দেওয়াটা আমার ঠিক হয় নি।
উনার এই নেশা ভরা কণ্ঠে আমার বুকে ধুকপুকানি হাজার গুনে বেড়ে গেল।মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোলো না।উনি ধীরে ধীরে আমার কাছে আসতে লাগল।আমার অজান্তেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো।উনি আমার এতো কাছে যে উনার উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখের ওপর পরছে।আমার ঠোঁট ছুঁই ছুঁই তখনি উনার ফোন বেজে উঠল।আর আমি এইফাকে উনাকে সরিয়ে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।একবারের জন্যও উনার দিকে তাকালাম না।হয়তো উনি হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকতে ঢাকতে দ্রুত গতিতে নিজের কেবিনের দিকে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই প্লাজু পায়ের মধ্যে আটকেই আমি……………
অফিসে সবার সামনে হুমড়ি খেয়ে পরলাম।হাতে পায়ে যতটুকু লেগেছিল তার থেকে বেশি লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।রিয়া আর অপু দৌড়ে এসে আমাকে ধরল।আমি হাতে প্রচণ্ড রকমের ব্যথা পেয়েছি।ব্যথায় লজ্জায় কেদে ফেলার ইচ্ছে হচ্ছিল।তখনই কানে এলো চাপা হাসির শব্দ।কেউ কেউ আমার পরে যাওয়া নিয়ে তামাশা করছে।তখনি নিলয় দৌড়ে আমার কাছে এলো।
-নূর তুমি ঠিক আছতো।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে হুম বললাম।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে।কিন্তু আমার চোখের পানি হয়তো ওদের কারোর চোখে গেল না তাই মায়া নিজের কেবিন থেকেই বলে উঠল।
-নূর দেখে চলশে তো আরেকটু হলে তো ফ্লোর টাই ভেঙে যেত।
বলেই তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে উঠল।মায়ার কথায় তাল মিলিয়ে দিশা বলল
-নূর আমার মনে হয় তোমার ডাইটিং করা উচিৎ নাহলে তুমি যেই হিসেবে ফুলছো এবার তো মনে হয় অফিসে দরজা কাটার দরকার পরবে তোমাকে ভেতরে ঢোকানোর জন্য।
বলেই ওরা উচ্চস্বরে হেসে উঠল।
-কি বলছ এসব দিশা।কখন কিভাবে কার সাথে কথা বলে সেটুকু সেন্স ও কি তোমাদের নেই।
নিলয় ওদের উদ্দেশ্য করে বলল।
-ওহ নিলয় কথা বলা শেখাতে এসো।যাকে যা বলার তাকে তাই বলেছি।ভূল কি বলেছি।
মুখ বাঁকিয়ে বলল মায়া।এসব কথা আমার আর সহ্য হচ্ছে না আমি চুপচাপ চলে যেতে চাইলেই পেছন থেকে কারো ডাক শূনতে পেলাম।
-মিসেস নূর।
ডাক শুনেই আমি পেছনে ঘুরে তাকালাম।স্যার চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।উনাকে দেখে কেন জানি না আমার হাউ মাঁউ করে কাদার ইচ্ছে হচ্ছিল।স্যার আমার কাছে এসে একবার আমাকে দেখে মায়া আর দিশার দিকে তাকিয়ে বললেন।
-sorry বলুন নূরকে।
-sorry বাট কেন স্যার??
হতবিম্ব হয়ে বলল দিশা।
-I said say sorry…
উনার হুংকারে পুরো অফিস থমকে গেল।সবাই ভয়ে কুকরে গেল।মায়া আর দিশা ভয়ে পেয়ে মাথা নিচু করে আমাকে বলল
-I am sorry noor.
-নাও গেট লোস্ট ফোর মাই অফিস।
দাতে দাত চেপে বললেন স্যার।
এবার দিশা অবাকের চরম সীমায় পৌছে বলল।
-অফিস থেকে বেরিয়ে যাবো মানে স্যার কী বলছেন।এসব।
-যাঁরা কাউকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে জানে না আমি তাঁদের তাঁদের আমার অফিসে দেখতে চাই না।ভালো কথায় চলে যাও নয়তো সিকিউরিটি ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।
-স্যার কি বলছেন সার সামান্য একটা ব্যাপারে অফিস থেকে বের করে দেবেন?স্যার সরি তো বললাম।প্লিজ স্যার এরকমটা করবেন না।
দিশা কে থামিয়ে দিয়ে মায়া ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল।
-সার সামান্য একটা মেয়ের জন্য আপনি আমাদ…
-she is my wife..don’t call her সামান্য মেয়ে।
উনার কথায় পুরো অফিস থমকে গিয়ে আমাদের দিকে তাকালো।পুরো অফিস স্তব্ধ হয়ে আছে।হয়তো স্যারের কথা সবার কানে এখনো বাজছে।আর আমি?আমি তো অবাঁকের সপ্তম আসমানে গিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনার মুখে ওয়াইফ কথাটা শুনে বুকের মাঝে একটা ঝড় বয়ে গেল।মূহুর্তেই উনার জন্য একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগল।
-What……
অবাক হয়ে বলল মায়া।
-দ্বিতীয় বার আমার ওয়াইফের স্ট্যাটাস নিয়ে কথা বলার আগে দশ বার ভেবে নিন।কারন এই একটা ভুল আপনার জীবনের শেষ ভুল হতে পারে।ভালোয় ভালোয় বলছি বেরিয়ে যান আমার অফিস থেকে।
স্যারের হুমকির সম্ভুখীন হয়ে মায়া আর দিশা অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হলো।স্যার এবার সবার দিকে তাকিয়ে বলল।
-আপনারা কি সার্কাস দেখছেন এখানে?চুপচাপ নিজেদের কাজে মন দিন।
বলেই রিয়ার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উনার কেবিনের দিকে নিয়ে যেতে লাগল আমায়।আর আমি অবাক হয়ে শুধু উনাকেই দেখছি।
to be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here