যেমনটা_তুমি Part 7+8

0
2972

যেমনটা_তুমি Part 7+8
Ayusha Akter Usha

উনি আমার হাত ধরে নিজের কেবিনে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের ওপর বসালো।তারপর ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল।আমার হাত একহাতে টেনে নিয়ে হাতে গোড়াতে বাম লাগিয়ে দিতে লাগল।আমি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।উনি তখন থেকে চুপ আছেন দেখে আমিই প্রথম কথা বললাম।
-ওরা তো সামান্য আমাকে কটা কথাই বলেছে তাই বলে ওদের অফিস থেকে বের করে দিলেন আপনি?এরকম তো অনেকেই আমায় এসব কথা বলে।আমি এসব শুনতে শুনতে অভ্যস্ত।
উনি হাতে মাসাজ করতে করতেই বললেন
-ওরা তোমার সাথে যা করেছে এটা তোমার কাছে সামান্য হলেও আমার কাছে নয়।তোমার কোনো কোন কষ্টই আমার কাছে সামান্য নয়।ওরা এই অফিসে থাকলে বারবার আমার সামনে ঘুরঘুর করত আর আমার তোমার কান্নাজড়িত মুখটা মনে পরত যেটা আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয় তাই ওদের বের করতে হয়েছে আমায়।আর কেউ তোমাকে কথা শোনালে তার পাল্টা জবাব দিতে শেখো।নিজের হয়ে লড়তে শেখো।তুমি ঠিকএ ভাবো আর পাঁচটা মেয়ের মতো তুমি নও কারন #যেমনটা_তুমি তেমনটা অন্য কেউ নয়।তুমি সবার থেকে আলাদা নূর তুমি অসাধারণ।
বলেই আমার মুখের দিকে তাকালো।উনি বসা থেকে উঠে আমার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলল
-যা হয়েছে ভুলে যাও।এসব কথা মনে রেখে কষ্ট পাওয়া ঠিক না।
উনার কথায় আমার চোখ ছলছল করে এলো আজ মনে হচ্ছে আমার জীবনের লড়াইয়ে আজ আমি একা নই আমার সাথে আমার স্বামী রয়েছে।আজ সত্যিই নিজেকে অসাধারণ কেউ বলে মনে হচ্ছে।এখন আর আমি অন্যের কথা শুনে কষ্ট পাবো না কারন আমি জেনে গেছি আমার মাঝেও অসাধারনতা আছে।আমারও বাকি পাঁচটা মেয়ের মতো বাচার অধিকার আছে।কাউকে ভালোবাসার অধিকার আছে।এসব ভাবতে ভাবতেই আমি নিজের কেবিনে এলাম।এসেই দেখি রিয়া অপু আর নিলয় আমার কেবিনে বসে আছে।আমাকে দেখেই রিয়া বলে উঠল।
-নূর যা শুনলাম তা কি সত্যি?স্যার আর তুমি.. oh my god আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না।কবে কখন কিভাবে হলো এসব।
রিয়াকে চুপ করিয়ে নিলয় বলে উঠল।
-এখন আমি বুঝতে পারছি আসলেই আমার সাথে এস কে স্যারের শত্রুতা টা কি।তাই তো বলি স্যারের আমার ওপর এতো জেলাসি কিসের??আজ ক্লিয়ার হলাম জেলাসিটা আসলে তোমাকে নিয়ে।স্যার আমাকে নিজের সতীন মনে করে তাই আমার ওপর এতো অত্যাচার।আহারে বেচারা আমি একে তো তোকে ফ্লার্ট করাও হলো না অন্যদিকে স্যারের টর্চার ও সইতে হলো।একেই বলে ভাগ্য।
এবার নিলয় কে চুপ করিয়ে অপু বসা থেকে উঠে আমার কাছে এলো।ওর মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।আমি খুব ভালো করেই জানি ওর ভয়ের কারন।কারন হলো স্যার ওর একমাত্র ক্রাশ।ও আমার কাছে এসেই বলতে লাগল।
-নূর তুমি কিছু মনে করনি তো।তুমি আমার ওপর রেগে নেই তো।বিশ্বাস কর নুর আমি সত্যিই বলছি আমি তো সব গালি স্যারের বউকে দিয়েছিলাম।আমি তো আর জানতাম না যে স্যারের বউ আর কেউ না আমার সামনে বসে থাকা তুমি নিজেই ছিলে।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ওইভাবে কথা শোনাতে চাইনি সত্যিই বলছি।
ওদের কথা শুনে আমি হাসবো না কাদবো সেটাই বুঝতে পারছিনা।পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য আমি আমার চেয়ারে বসতে বসতে বললাম।
-ওহো তোমরা এসব কি লাগিয়ে রেখেছো বলতো।বাদ দাও না এসব কিছু।
-ওকে বাদ দিলাম।এখন এটা বলো তুমি আমাদের সত্যিই নিজের বন্ধু ভাবোতো?
নিলয়ের কথায় আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম।
-কেন বলোতো?
-কারন আমরা কতদিন ধরে শুনছি তুমি বিবাহিতা আর এটাও জানি যে স্যার ও বিবাহিত কিন্তু তোমরা দুজনেই যে স্বামী স্ত্রী এই কথা তুমি আমাদের থেকে লুকিয়ে গেছ কেন?
-হ্যা সেটাই তো।এতদিনে তুমি আমাদের এই বিষয়ে কিছু বলনি কেন?
নিলয় এর কথায় রিয়াও সায় দিল।ওদের কথায় এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম কি বলব ওদের।ওদের তো আর আমি এসব কিছু বলতে পারবো না তাই ঘটনা সামলেনোর জন্য বললাম
-আসলে তোমরা তো জানোই স্যার কখনোই পারসোনাল লাইফ আর প্রোফেসনাল লাইফ এক চোখে দেখেননি।তাই আমাদের বিয়ের কথাটাও প্রোফেসনালই কেউ জানে না।
এই কথাটা করা কেমন হজম হলো বুঝলামনা।তবে যেমনি হোক আপাতত ব্যাপারটা সামাল দিতে পারলেই বাচি।
-ওহহ এই কথা।আচ্ছা ঠিক আছে আমি গেলাম।আমার কাজ আছে।
বলেই নিলয় চলে গেল।নিলয় যাওয়ার সাথে সাথে অপু আমার কাছে এসে বলল।
-এই নূর তোমার ঠোঁটে এটা কি?
অপুর কথা শুনে আমি থ হয়ে যাই।এত কিছুর মাঝে তো মুখ ঢাকতেই ভুলেগেছিলাম আমি।এখন এদের কি বলি আমি।
-আব আ আসলে দরজা লেগে কেটে গেছে।
-কিন্তু আমার তো তেমন কিছু মনে হচ্ছে না।আমার তো অন্য রকম কিছু মনে হচ্ছে।
বলেই অপু রিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল।
-অঅন্যরকম মানে।কি বলছ এসব।
-তুমি হিজাব দিয়ে এই কাটা দাগটা লুকোতে চাইছো তার মানে এটা দরজা লেগে কাটা নয় এটা লাভ বাইট।স্যারের দেওয়া লাভ বাইট?
রিয়ার কথা শুনে আমার হার্ট এটাক করার মতো অবস্থা।লজ্জায় আমি শেষ।
-ধুর কি সব বলছ তোমরা এমন কিছূইনা।
-আচ্ছা তাহলে কেমন কিছু।
বলেই অপু আমার বাহুতে নিজের বাহু দিয়ে ঝাকা দিল।
আমি পুরাই শেষ।
-আহহা অপু কি করছিস দেখছিস না আমাদের নূর রানী কেমন রক্তে লাল গেছে।চুপ কর এবার।
-এই তোমরা এখান থেকে যাওতো আমার কাজ আছে।তোমাদের এসব কথা শোনার সময় আমার নেই যাওতো।
-যাক বাবা আমরা আমার কি বললাম।
অবাক হয়ে বলল রিয়া।
-তোমরা যাবে এখান থেকে।
-ওকে ওকে যাচ্ছি।
বলেই ওরা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।আর আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।অনেক ধরনের মিশ্র অনুভুতি নিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলাম।সবার মুখে স্যারের বউ স্যারের বউ কথাটা শুনতে ভালোই লাগছে আমার।এ এক অন্যরকম অজানা অনুভুতি।অফিস আওয়ার শেষে আমি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পরলাম।বেরিয়েই দেখি স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।আমি বুঝতে পারলামনা কেন উনি এইভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।হয়তো কোন কাজ আছে।তাই আমি অন্য দিকে ঘুরে চলে আসব তখনই স্যার পাশ থেকে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসালো।নিজেও গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে লাগল।এই প্রথম আমি কোনো কাজ ছাড়াই স্যারের গাড়িতে উঠলাম।উনি ড্রাইভ করতে করতেই বললেন।
-আমি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম আর তুমি অন্যদিকে কোথায় যাচ্ছিলে।
-আমি তো আর জানতাম না যে আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।আমি তো কখনও কোনো প্রয়োজন ছাড়া আপনার গাড়িতে উঠিনা।
-এখন থেকে উঠবে।আর প্রতিদিন উঠবে।কারন এখন থেকে প্রতিদিন তুমি আমার সাথেই অফিসে যাওয়া আসা করবে।
আমি ওনার কথা শুনে আর কিছু বললাম না।মাথা নিচু করে বসে রইলাম।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে আমার ভেতর।এ আমার কি হচ্ছে?বাড়ি ফিরতেই আমি নিজের রুমে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম।আজ অফিসে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছে।ওদের বলা কথা গুলো মনে পরতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল।ওরা কি বোঝেনা।ওদের বলা কথা আমাদের মতো মেয়েদের কতটা কষ্ট দিতে পারে।তারপরও কেন তারা এইভাবে বলে।কি লাভ তাঁদের আমাদের এইভাবে কথা শুনিয়ে।তখনি মনে পরল স্যারের কথা গুলো।সাথে সাথেই নিজের চোখের জল মুছে ফেললাম।কেন কাদছি আমি।কাদবো।ওদের কাজ কথা বলা ।বলে যাক তাতে আমার কি।আমিও যে একজনের কাছে অসাধারণ তা তো আজ জানতে পারলাম।অজান্তেই ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল আমার।রাতে রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করতে লাগলাম।রাত দশটা বাজে।এইসময়ই উনি ডিনার করতে নিচে আসেন।প্রতিদিন।সার্ভেন্ট খেতে দেয়।তবে আজ আমি দেব।ভাবতে ভাবতেই ডাইনিং টেবিল রেডী করছি তখনই একটা সার্ভেন্ট এসে বলল স্যার নাকি ওপরে খাবার নিয়ে যেতে বলেছে।ওপরে কেন?উনি তো নিচে নেমেই খান।উনার শরীর খারাপ করল না তো।আমি ট্রে তে করে খাবার সাজিয়ে নিয়ে উপরে উনার রুমে গেলাম।
ঘরে ঢুকতেই দেখি কেউ নেই।গেল কোথায় লোকটা?আমি এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম তখনি আমার সকালে অফিসের কথা মনে পরে গেল।আমি সাথে সাথে খাবার টেবিলে রেখে চলে আসব ঠিক তখনি উনি দরজা লাগিয়ে দিয়ে দরজা সামনে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসতে লাগলেন।আমি ভয়ে থ হয়ে গেছি।এটা কি হলো।উনি দরজা লাগালেন কেন?
-খাবার রেখে কোথায় যাচ্ছো?এখানে বসো আর আমাকে খাইয়ে দাও।
উনার কথা শুনে আমি টাস্কি খেলাম।
-আআমি খাইয়ে দেব?
-তা নয়তো এখানে আর কে আছে খাইয়ে দেওয়ার মতো।
-কিন্তু স্যার আমি কি….
-খাইয়ে দিতে বলেছি চুপচাপ এখানে বসে খাইয়ে দাও।
উনি আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে নিজেও আমার পাশে বসলেন।আমি অনেক ইতস্তত বোধ করে প্লেটে ভাত নিয়ে মেখে ওনার মুখে তুলে দিলাম।
-আমাকেই শুধু খাওয়াচ্ছো তুমি খাবে না।
ওনার কথায় আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।
-না স্যার তার কোনো প্রয়োজন নেই আমি পরে খেয়ে নেব।
-তুমি নিজে খাবে নাকি আমি খাইয়ে দেব?
-না না স্যার আমি খাচ্ছি।
বলেই আমি খাবার মুখে পুরে নিলাম।ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা খাবার হাত দিয়ে মুছতে যাবো তখনই স্যার আমার হাত আটকে উনার ঠোঁটে আমার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন।উনি ঠোঁট দিয়ে লেগে থাকে খাবার মুছে নিয়ে আবার সোজা হয়ে বসলেন।আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।এরকম কিছুর জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।লজ্জায় আমি মাথা উঠাতে পারছি না।উনি ঠোঁট মুছতে মুছতে বাঁকা হেসে
-ওয়াও আজকের খাবারটা যে এতটা টেস্টি ছিল তাতো আগে জানতাম না।জানতে কতো আগেই খেয়ে নিতাম।
উনার কথা শুনে বিষম খেলাম।সাথে উনি আমায় পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন।উনার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে আমি পানি শেষ করে দিলাম।
-কি হলো খাইয়ে দেবে নাকি আবার টেস্টি খাবার খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে।
ওনার কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি উনাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।আর ওনার জোড়াজোড়িতে আমাকেও খেতে হলো।খাওয়া শেষে আমি হাত ধুয়ে প্লেট টেবিলে রেখে যেই উঠতে যাব ওমনি উনি আমার হাতে হেচকা টান মেরেই শুয়ে পরলেন।আর আমি সোজা উনার বুকের ওপর গিয়ে পরলাম।আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন।
-কোথায় যাচ্ছো।সবসময় তোমার যাওয়ার এত তাড়া থাকে কেন?
-না মানে সার আসলে
এসব বলে উঠতে গিয়েও পারলাম না।উনি আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছেন।
-চুপচাপ এখানে শুয়ে থাকো।এখন থেকে আমার বুকের মাঝে মাথা রেখেই ঘুমোবে।কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পরো।
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না।মুখ থেকে কোনো কথা বেরোলোই না।কারো বুকে যে এতটা শান্তি এটা আমি আগে জানতাম না।মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ এই বুকে রয়েছে। আমি সেই বূকে পরম সুখে ঘুমিয়ে পরলাম।
to be continue….
(আমি জানি না আমার গল্পটা কেমন হচ্ছে।তবে আমি এই গল্পের মাঝে নূরের মতো মেয়েদের তুলে ধরতে চাই যাঁরা সবসময়ই অবহেলিত হয়।আমরা কখনও তাঁদের নিয়ে মজা করার সুযোগ ছাড়ি না।কিন্তু এতো কথা শোনানোর মাঝে আমরা এটা ভুলে যাই যে তাঁরাও মানুষ।তাদেরও মন আছে।আমাদের এই কটু কথায় তারাও কষ্ট পায়।তাঁরাও তো আমাদের মতোই নিজেদের লাইফ স্ট্রাগল করেই বেঁচে আছে।আমাদের কোনো রাইট নেই ওদের এইভাবে কথা শুনিয়ে কষ্ট দেওয়ার।তাঁরাও নিজেদের জন্য লড়াই করতে জানে।শুধু তাঁদের পাশে সোমের মতো কারোর দরকার পরে।ধন্যবাদ )

যেমনটা_তুমি
Ayusha Akter Usha
“”8″”
আজ সকালে দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে একসাথে অফিসের জন্য বেরোলাম।অফিসে কানাডার ডিলটা সাকসেস হওয়ার করনে কালকে জন্য পার্টি থ্রো করেছেন স্যার।সেই পার্টির ই এরেন্জমেন্ট করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল।সার আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন একসাথে বাড়ি ফিরবো বলে।আমরা সব কাজ গুছিয়ে প্রায় সাড়ে দশটার দিক অফিস থেকে বেরিয়ে পরলাম।আমি গাড়িতে বসে আছি সার ড্রাইভ করছেন।কিন্তু একি এ রাস্তা তো বাড়ির দিকে যায়না।তবে সার এদিকে গাড়ি ঘোরালো কেন?
-আরে সার কি করছেন।এদিকে তো বাড়ির রাস্তা নয় আপনি এদিকে কোথায় যাচ্ছেন।আপনি রাতকানা হয়ে গেলেন না তো ভুল রাস্তায় যাচ্ছেন কেন?
-আমি রাতকানা হয়নি ওকে।তমি চুপচাপ বসে থাকো।গেলেই দেখতে পাবে আমরা কোথায় যাচ্ছি।
উনার কথা শুনে আমি চুপ মেরে গেলাম।কিছুক্ষন পর উনি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালেন।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার জন্য দরজা খুলে দিলেন।আমি নামতেই উনি আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকলেন।অনেক বড় আলিসান রেস্টুরেনট।দেখেই আমার মুখ হা হয়ে গেল।উনি চেয়ার টেনে দিতে দিতে বললেন।
-আজ আমরা এখানেই ডিনার করব।বসো এখানে।
আমি মুচকি হেসে বসে পরলাম।উনিও আমার সামনেই বসেলেন।ওয়েটার এলে উনি খাবার ওর্ডার করেন।আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি কারন উনি যা যা ওর্ডার করলেন সবটাই আমার পছন্দের খাবার।উনি কি করে জানলেন যে আমি এসব খেতে পছন্দ করি।খাবার এলে আপাতত এসব ভাবনা বন্ধ করে খেতে মনোযোগী হলাম।খাওয়া শেষে বিল পে করে আমরা বেরিয়েই আসছিলাম কি তখনি হঠাৎ করে এক মেয়ে কোথা থেকে এসে উনার গলা জরিয়ে ধরল।
-what a present surprise SK.তুমি এখানে কি করছ?
উত্তেজিত হয়ে বলল মেয়েটি।
-ডিনার করতে এসেছি এখানে।
-ওয়াও তো চলো একসাথেই ডিনার করি আমি ও ডিনারের জন্যই এসেছি।
-নো থ্যাংকস রাইসা।আমার ডিনার হয়ে গেছে।
-ওও…
মুখে ঘন কালো মেঘ জমে গেল মেয়েটার।আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথাই শুনছিলাম।তখনি মেয়ে টা আমাকে দেখিয়ে বলে উঠল
-who is she SK?
-she is my….
বলতে গিয়েই থেমে গেলেন উনি।তারপর কিছু একটা ভেবে আবার বললেন
-she is my pa.meet her..she is mst.noor..
উনার কথা শুনে আমি চট করেই উনার দিকে তাকালাম।এটা কি বললেন উনি।কালই তো সবার সামনে আমাকে নিজের বউ বললেন।আজ আবার পাল্টি খেয়ে গেলেন।বুঝেছি সুন্দরী মেয়ে দেখেই মন গলে গেছে।তাই এখন আমাকে বউ থেকে পি এ বানাতেও সময় নিলেননা।তবে আমিও কম না।উনি কাল নিজেই বলেছেন আমি যাতে নিজের জন্য লড়ি।ওনার কথাই হবে আজ আমি নিজের অধিকারের জন্য লড়ব।উনার প্লেনের আমি বারোটা বাজাবো।
-oww SK.তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি যার তার সাথে পরিচিত হয়না।
তখনি আমি এগিয়ে গিয়ে রাইসার গলা জরিয়ে ধরে বললাম।
– বাট আমি যার তার সাথে পরিচিত হই মিস রাইসা। আমি মিসেস খান।মিসেস সম্রাট খান।
বলেই ওকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে উনার দিকে তাকালাম।কিন্তু এ কি আমি তো ভেবেছিলাম আমি উনার প্লেন ভেস্তে দিয়েছি।কিন্তু উনি তো আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে যাচ্ছেন।রাইসা এবার অবাক হয়ে বলল।
-what??like seriously SK..ও তোমার বউ।আমি শুনেছি তোমার বিয়ে হয়েছে।কিন্তু এইরকম একটা মেয়ের সাথে।কি যোগ্যতা আছে এর তোমার বউ হওয়ার।না আছে রুপ না আছে গুন।আমি মুখে এক ঝলক হাসি রেখেই বললাম।
-আপনি ঠিক ই বলেছেন আমার না আছে রূপ না আছে গুন।কিন্তু আমার যেটা আছে সেটা আপনাদের মতো সুন্দরীদের কাছেও নেই।ভাগ্য…ভাগ্য আছে আমার তাই তো উনার মতো একজনকে নিজের স্বামি হিসেবে পেয়েছি আমি।যেটা আপনার মতো সুন্দরী মেয়েদের নেই।
রাইসা আমার কথায় রেগে যায়
-হেই স্টুপিট গার্ল।তোমার সাহস কি করে হয় তুমি আমাকে কথা শোনাচ্ছো।
-যে নিজের থেকে যেচে কথা শুনতে আসে তাঁকে এক আধটু কথা শোনাতেই হয়।
-এসকে তুমি ওকে কিছু বলছ না কেন?
এবার উনি আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বললেন।
-because she is my wife.ওর যোগ্যতা দেখার যোগ্যতা তোমার নেই।আর যদি রূপের কথা বলো তবে একটা কথা জানিয়ে দিচ্ছি আমার বউ আমার চোখে পৃথিবীর সেরা সুন্দরী।আর এই বিষয়ে দ্বিতীয় বার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।বলেই আমার হাত ধরে উনি বেরিয়ে এলেন উনার শেষের কথাটা প্রত্যেকটা মেয়ের কাছে একটা বড় পাওয়া।আমার কাছেও সেটা অমূল্যবান।কিন্তু আমি এই মূহুর্তে উনার ওপর রেগে আছি।উনি প্রথমে কেন আমাকে নিজের স্ত্রীর পরিচয় দিলেন না ওই মেয়ের সামনে।আজ তো উনার সাথে কোনো কথাই বলব না আমি হুহ।গাড়িতে দুজনেই চুপচাপ ছিলাম।উনি আমার দিকে দু একবার তাকালেও আমি উনার দিকে একবারও তাকাইনি।তাকাবোওনা।গাউগাড়ি বাড়িতে এসে থামতেই আমি গাড়ি থেকে নেমে সোজা রুমে এসে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে বেরোলে উনিও ওয়াশরুমে ঢুকেন।আমি চুপচাপ বিছানার ওপর গিয়ে একপাশে ঘুরে শুয়ে পরলাম।ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো।উনি হয়তো বেরিয়ে এসেছেন।আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।উনি এসে আমার পাশে শুয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে বললেন।
-নিজেকে আমার বউ বলার অনুভুতিটা কেমন মিসেস খান।
ওনার মুখে মিসেস খান কথাটা শুনে মনের মাঝে কি যেন হলো।তবুও নিজেকে শক্ত করে চুপ করে রইলাম।
-কি হলো কথা বলছনা যে।আমার ওপর রাগ করেছো বুজি।
আমি চুপ।
-কি হলো মিসেস খান কিছু বলছ না কেন?
এবার আমি লাফিয়ে উঠলাম।রেগে গিয়ে বলতে লাগলাম।
-কি বলব হ্যা কি বলব।সুন্দরী মেয়ে দেখলেন কি না দেখলেন নিজের বউ কে পি এ বানিয়ে ফেললেন।কাল তো খুব বড় মুখ করে বলছিলেন।she is my wife she is my wife।আজ কি সুন্দরী মেয়ে দেখেই হাওয়া ফুস হয়ে গেল।লুচ্চা কোথাকার।এক নাম্বারের লুচ্চা আপনি।আপনার মতো মতো লুচু টাইপ লোক আমি দুটো দেখিনি।বলেই হাতের কাছে বালিশ পেয়ে উনার দিকে ছুড়ে মারলাম।অন্যদিকে ঘুরে কাঁদতে লাগলাম।সব ছেলে একি রকম।উনিও একই হালের গরু আমিই খামোখা আনাচে নিয়ে একটু বেশিই ভেবেছিলাম।এসবি ভাবছিলাম ঠিক তখনি উনি আমার হাতে হেচকা টান দিলে আমি বিছানায় শুয়ে পরি।আর সাথে সাথে উনি আমার দুপাশে হাত রেখে আমার ওপর আধশোয়া হয়ে উঠলেন।আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।উনি এক হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন।
-আমি চাইলেই তোমাকে নিজের বউ এর পরিচয় দিতে পারতাম।কিন্তু আমি যদি তখন তোমাকে নিজের বউ বলতাম তাহলে কি আর তুমি নিজের থেকে নিজের অধিকার আদায়ে লড়তে?লড়তে না তো।তা এখন বলো আমার ভুল টা কি?
আমি ওনার কথা শুনে ভাবলাম সত্যিই তো উনি আমাকে বউ বলেননি বলেই তো আজ আমি নিজের অধিকারের জন্য লড়েছি।এর আগে তো কখনো কারো মুখের ওপর কথাই বলতাম না।এবার আমি নিজের বোকামির জন্যই মাথা নিচু করে ফেললাম।উনি এক হাতে আমার চিবুকে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করিয়ে বললেন
-এতক্ষণ যে আমাকে লুচু বলা হচ্ছিল।আমার লুচু গিরি তুমি দেখেছো?তাহলে এখন এর শাস্তি তোমাকে কি দেওয়া যায় বলোতো।আমার লুচুগিরি দেখাই তোমাকে।
বলেই বাঁকা হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।আমি উনাকে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে লজ্জায় পুরাই শেষ।উনাকে সরিয়ে দিয়ে উঠতে যাবো তখনি উনি আমার হাত বিছানায় চেপে ধরে আমার ঠোঁট নিজের যূগলে নিয়ে নিলেন।উনি আমার ঠোঁট ছেড়ে গলায় ঘাড়ে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগল।উনার স্পর্শে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।আমার সবকিছু এলোমেলো হলে গেলো।এক মাতাল করা অনুভুতি।বুকের হার্টবিট বেড়ে গেল।উনি যেনো এক ঘোরের মধ্যেই উনার হাত আমার কাপড়ের মাঝে ঢুকাবেন তখনি আমি ওনার হাত চেপে ধরলাম।উনি আমার হাত চেপে ধরা দেখে থমকে গেলেন।আমার দিকে এক নেশাভরা চাহনিতে দেখে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলেন।উনার এই অবস্থা দেখে আমার খুব কান্না পাচ্ছিল।আমি কি করব আমি এখন একদমই এসবের জন্য প্রস্তুত নই।মনের মাঝে এক ধরনে অস্বস্তি কাজ করে।আমি ঊনাকে জরিয়ে ধরে বললাম।
-I am sorry..
-উনি আমাকে আরো শক্ত করে ধরে বললেন
– its ok..আমি জানি তুমি এখন প্রস্তুত নও।তোমার যতো সময় লাগে তুমি নাও।আমি উনার কথা শুনে আর কিছু বললাম না।উনার বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেলাম।
পরের দিন সন্ধে বেলা পার্টির জন্য রেডি হবো কিন্তু আমি পরবো কি এটা ভেবেই কাবার্ডের কাপড় এদিক ওদিক করছি।তখনি উনি পেছন থেকে আমায় ডাকলেন।আমি ওনার দিকে ঘুরে দেখি ওনার হাতে একটা প্যাকেট।উনি আমায় প্যাকেট টা হাতে দিয়ে বললেন।
-এখানে তোমার যা যা লাগে সবকিছু আছে।এগুলো পরেই আজ পার্টিতে যাবে।যাও রেডি হয়ে এসো।আমি ওনার কথা শুনে মুচকি হেসে প্যাকেট টা নিয়ে চেঞ্জিং রুমে চলে গেলাম।আমি প্যাকেট খুলে দেখি ওটা তে একটা black colour শাড়ি।তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ ও রয়েছে।ওটা দেখেই আমার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল কারন এটাই ওনার দেওয়া আমাকে প্রথম গিফ্ট।আমি শাড়ি টা পরলাম।শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিয়েছি।মুখে হাল্কা মেকাপ।ঠোঁটে মিষ্টি কালার লিপস্টিক।কানে স্টোনে ঝুমকো।গলায় সিম্পল নেকলেস।আর চোখে কাজল।আমার চোখে কাজল দিতে অনেক ভালো লাগে।কখনও কখনও তো আমি আমার এই চোখেরি ক্রাশ খেয়ে যাই।চুল গুলো খোঁপা করে নিলাম।হাতে কালো রঙের কাচের চুরি।এসব কিছু এই প্যাকেটেই ছিল।আমি রেডি হয়ে বের হয়ে দেখি উনি ব্লাক কালার শার্ট আর প্যান্ট পরেছেন।শার্ট ওনার গায়ের সাথে ফিট হওয়ার কারনে।উনার বডি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।একদম আমার ফেভারিট রোবেন রেস এর মতো।চুল গুলো সুন্দর করে ব্রাশ করেছেন।আজ তো উনাকে নজরে নজরে রাখতে হবে যাতে কেউ চুরি করে না নিয়ে যায়।আমাকে বেরোতে দেখে উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।উনার তাকিয়ে থাকার কোনো কারন খুঁজে পেলাম না।কিন্তু ওনার এইভাবে তাকিয়ে থাকাতে আমার খুব লজ্জা লাগছে।লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।উনি আমাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।ধীরে ধীরে আমার কাছে এসে যাওয়াতে আমি পিছতে লাগলাম।তখনি উনি আমার কোমর জরিয়ে ধরে ওনার সাথে মিশিয়ে নিলেন।এইভাবে ওনার কাছে এসে উনার ঘোর লাগা চোখ দেখে আমার হার্টবিট আমি কিছুক্ষণের জন্য মিস করলাম।উনি আমার কাছে এসে আমার এক গালে চুমু দিয়ে ওনার দাড়ি গুলো দিয়ে আমার গাল ঘষে দিলেন।উনার দাড়ির খোঁচায় আমি আমি একটু নড়ে উঠলাম।উনি আমার কোমর আরো শক্ত করে ধরে আমার গলার কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে গলায় একটা কামোড় বসালো।ব্যাথায় আহহ বলে উঠলাম।উনি উনার একহাত আমার পেছনে নিয়ে আমার খোপার ক্লিপ খুলে দিলেন।আমার চুল সব এলোমেলো হয়ে পুরো পিঠে ছড়িয়ে পরল।এই যাহ এটা করলেন উনি কতো কষ্ট করে খোপাটা বেধেছিলাম।এখন কিভাবে কি করব।উনি কোনো কথা ছাড়াই আমার চুলের কিছু অংশ সামনে এনে কামরের দাগ ঢেকে দিয়ে বললেন।
-এবার লাগছে তোমাকে perfect Mst.Shamrat Khan.
আমি উনার কথা লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল।
-এবার তাহলে যাওয়া যাক মিসেস খান।
বলে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।আমি উনার হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পরলাম।যাচ্ছিতো পার্টির জন্য কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি ওনার হাত ধরে কোনো এক স্বর্গপুরিতে যাচ্ছি।
to be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here