যে_শহরে_এখনো_ফুল_ফোটে #পর্ব২৮ + পর্ব ২৯

0
233

#যে_শহরে_এখনো_ফুল_ফোটে
#পর্ব২৮ + পর্ব ২৯

হাসপাতালের বারান্দায় বসে একমনে তসবি গুনছেন মরিয়মের শাশুড়ি মা। শিহাব কখনোই মাকে কড়া কিছু বলতে পারে না। তাছাড়া কখনো বলার প্রয়োজনও হয়নি, সবসময়ই মাকে ভীষণ বুঝদার একজন মানুষ মনে হয়েছে। অথচ মরিয়মের দ্বিতীয় প্রেগন্যান্সির কথা জানার পর থেকেই মা কেমন অবুঝের মতো আচরণ করছেন। রুমনকে নিয়ে যে ওনার মনে এত কষ্ট ছিল তা শিহাব কখনো বুঝতেই পারেনি। সবসময় এত আদর দিয়েছেন নাতিকে, রুমনের অটিজম ওনার আদরের অন্তরায় ছিল না কখনো। অথচ এই আট মাসে রুমন আর তার দাদির মাঝে স্পষ্ট একটা দূরত্ব চলে এসেছে। রুমন বোকা নয়, ও সব কিছু বোঝে, বরং বেশ ভালোভাবেই বোঝে, তাই দাদির কাছ থেকে ধীরে ধীরে পাওয়া অবহেলাটা অনুভব করে নিজেই সরে গিয়েছে। হাসপাতালেও রুমন তাই শিহাবের গা ঘেঁষে আছে। শিহাবের বোন দুলাভাইও চলে এসেছেন। মরিয়মের মা বাবা ঝগড়ার ঘটনা কিছুই জানে না, ওনারা ভেবেছেন হঠাৎ সময়ের আগে মরিয়মের পানি ভেঙে গিয়েছে, এমনিতেও মরিয়মের প্রেগন্যান্সি, রিস্ক প্রেগন্যান্সি ছিল। শিহাব এই মুহূর্তে হাসপাতালে আর কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি চায় না, তাই ওনাদের কিছু বলেনি। মরিয়মকে ওটিতে নেওয়া হয়েছে, ইমার্জেন্সি সি সেকশন করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালে উপস্থিত সবার মনে শুধু মরিয়মের সুস্থতার দোয়া। মা সুস্থ থাকুক, আর সুস্থ একটা বাবু এই দুনিয়ায় আসুক, এই কামনায় আল্লাহকে ডেকে চলছে সবাই।

****
ভোর ছয়টা না বাজতে রুমির ঘুম ভেঙে যায়। একমুহূর্তের জন্য মনে পড়ে না ও কোথায় আছে, দু মিনিট পর মাথাটা পরিষ্কার হয়। পাশে তাকিয়ে তিতলি আর রাকিনের ঘুমন্ত মুখটা চোখে পড়ে। কী সুন্দর নিষ্পাপ দুটো মুখ যেন, আটপৌরে সাংসারিক জীবনের খুব সাধারণ মায়াময় দৃশ্য। স্বামী, সন্তান নিয়ে সহজ সরল জীবন, যেমনটা সব মেয়ে চায়। কিন্তু সবসময় সহজ কিছু আর সহজ হয়ে ধরা দেয় না। একটা সময় এই দৃশ্যে শুধু হিমেল ছিল, তারপর সে প্রাক্তন হলো। বিচ্ছেদের বহুদিন পরও হঠাৎ হঠাৎ সকালে ঘুম ভাঙলে পাশের বালিশটায় রুমি হিমেলের মুখটা মিস করতো। হিমেলের সাথে তো সে সারাটা জীবন কাটাতে চেয়েছিল, হিমেল যদি পরকীয়ায় না জড়াতো, খুব সহজ একটা জীবনই রুমি আর তিতলি পেতে পারতো। এই যে আবার নতুন করে সবকিছুতে অভ্যস্ত হওয়ার পরীক্ষায় রুমিকে নামতে হতো না। হাসান বা রাকিন কারও নামই জড়াতো না তার জীবনে।

ভাবতে ভাবতে রুমির মনে পড়ে ছুটি নেওয়া দরকার, অন্তত দুইদিন ছুটি নেবে সে। রাকিন ছুটি না নিলে না নিবে, কিন্তু আপাতত রুমি কয়েকদিন হাসানের মুখোমুখি হতে চায় না। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ফোন অফ, আর অন করা হয়নি। চার্জ শেষ হয়ে ফোনটা বন্ধ হয়ে ছিল। চার্জারটা ব্যাগেই আছে। চার্জার লাগিয়ে ফোনটা অন করতেই একের পর এক নোটিফিকেশন আসতে থাকে রুমির। সাতটা ম্যাসেজ হাসানের নাম্বার থেকেই এসেছে। রুমি না পড়েই ম্যাসেজগুলো ডিলিট করে, তারপর ফোন, ম্যাসেনজার, ফেসবুক সবখানেই ব্লক করে দেয় হাসানকে। যার জীবন থেকে সরে গিয়েছে, তাকে একবারেই ধুয়েমুছে ফেলা দরকার। তুষের আগুনের মতো না হয় তা যেকোনো সময় জ্বলে উঠতে পারে।
প্রতারণা করাটা রুমির রক্তে কখনোই ছিল না, এখনো নেই। রাকিনকে ভালোবাসতে পারুক না পারুক, তাকে ধোঁকা কোনদিন দিবে না। এমন কী রাকিন যদি স্বাভাবিক ভাবে স্বামীর অধিকার চায় তাতেও সে না করবে না, অবশ্যই তার সাথে জোরজবরদস্তি করার অধিকার কারও নেই, কিন্তু রাকিন তার প্রাপ্যটুকু চাইলে সে ফিরিয়ে দিবে না।

নাস্তার টেবিলে রাকিনের কাছে ফোন আসে শিহাবের। তিতলিকে সাথে নিয়েই রাকিন আর রুমি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।

“ভাইয়া কাল রাতের ঘটনা, আর আপনি এখন ফোন দিলেন। আমাদের রাতেই জানালেন না কেন?”

“তোমরা নিজেরাও কত ঝামেলার মাঝে ছিলে। তাই ফোন দিয়ে বিরক্ত করিনি।”

“এটা কোন কথা ভাইয়া, আমাদের জন্য কাল আপনাদের এত ঝামেলা গেল। আর আমরা এত স্বার্থপর যে ফোন দিলে বিরক্ত হবো। আপু কেমন আছে ভাইয়া? বাবুকে NICU তে রেখেছে? ”

রুমিকে দেখে বিরক্ত হচ্ছিলেন শিহাবের আম্মা। কেন জানি মরিয়মের সাথে রুমির বন্ধুত্ব ওনার পছন্দ না। এখন হাসপাতালে রুমিকে দেখে বিরক্ত চাপা দিতে পারেন না।

“রুমি না তুমি? দুই দিন পরপর এক কাহিনি করো, আর মরিয়মকে এসবের মাঝে জড়াও। এই তোমার কাহিনির জন্য কাল সারাদিন মরিয়ম বাইরে ছিল। নিজের ছেলের কথা আর কী বলবো, কোনদিন বৌকে ভালোমন্দ বুঝ দেওয়ার সাহস তার হয়নি। কিন্তু বৌমার নিজেরও কোন দায়দায়িত্ব নেই। এই শরীরে না হলে সারাদিন বাইরে থাকে! আমার কোন কথাই শোনে না। এখন নাতিটাকে না হারিয়ে ফেলি।”

শিহাব কাল থেকে চুপ থাকলেও এখন আম্মার কথায় নিজেকে আর আটকাতে পারে না,”আম্মা, ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিচ্ছিলো মরিয়ম, ওর প্রেশার এত হাই ছিল। আর কে দিয়েছে ওকে এত চাপ? তুমি দিয়েছ। যখন থেকে ও প্রেগন্যান্ট হয়েছে, তখন থেকে ওকে বাচ্চা নিয়ে মানসিক চাপের ভেতর রেখেছ। কাল রাতেও আমরা সুস্থ ভাবেই বাসায় ফিরে এসেছিলাম। তুমিই রাগ দেখনো শুরু করলে, রুমনকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলা শুরু করলে, তোমার কথার আঘাতেই মরিয়মের শরীর খারাপ করেছে সাথেসাথে। বাবু বাঁচবে কিনা তা আল্লাহর হাতে, কিন্তু আল্লাহ যদি ওকে আমাদের কোলে নাও দেন, আমি মরিয়ম একটু সুস্থ হলে আমি রুমন আর মরিয়মকে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠে যাব।”

#যে_শহরে_এখনো_ফুল_ফোটে
#পর্ব২৯

সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে, আবহাওয়া তাই হঠাৎ খারাপ হয়ে গিয়েছে। এরই মাঝে একুশ দিন পার হয়েছে। রুমি আর রাকিনের সম্পর্কটা একই জায়গায় থেমে আছে বললে ভুল। শরীরে সম্পর্কটা হয়তো হয়নি, কিন্তু রোজই একটু একটু করে মনের দূরত্ব ঘুচে চলছে। এই তো সেদিন টিচার্স রুমে রৌশন আপার সাথে তাল মিলিয়ে হাসান আর মিতু যখন রুমিকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল, যেভাবে ওকে আড়াল করে সামনে দাঁড়াল রাকিন, তাতে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।

রুমি আর রাকিনের বিয়ের কথা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। মরিয়মের প্রিম্যাচ্যুর ডেলিভারির কথা জানতে পেরে সহকর্মীরা হসপিটালে ভীর করেছিল, সেখানে সদ্য বিবাহিত রুমি রাকিন জুটিকে আবিষ্কার করে সবাই। রৌশন আপা মাঝেমাঝে রুমির সাথে কখনো হাসান, কখনো রাকিনের নাম জড়িয়ে মুখরোচক আলোচনা করলেও এভাবে বিয়ের খবর সবাইকে অবাক করেছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই খুশি হয়েছেন, রুমি আর রাকিনকে ব্যক্তিগত ভাবে অনেকেই পছন্দ করেন। রৌশন আপা আর মিতু মজা পাবে না হিংসা করবে বুঝতে পারছে না, একদিকে তাদের করা গসিপ সত্য হয়ে গেল, অন্য দিকে অজানা কারণে কেমন একটা জ্বালা ধরে মনে। তাই রৌশন আপা আড়ালে আবডালেই না সবার সামনেই বড় গলায় বলতে লাগলেন, “দেখেছ, খুব তো জ্ঞান দিতে তোমরা, এই বলা উচিত না, ঐ বলা উচিত না। মাথার চুল তো আর এমনি পাকেনি। সেই তো ঠিকই কলেজের সেরা এলিজেবল ব্যাচেলরের গলায় মালা দিয়েছে রুমি। হাসানও টার্গেটে ছিল, তার মাঝে যে আগে পটেছে, তার সাথে আর দেরি করেনি।”
মিতুর হিংসেটাও কম নয়, রাকিনের পেছনে কম চেষ্টা তো করেনি, অথচ তার মতো অবিবাহিত মেয়ে বাদ দিয়ে কিনা রাকিন রুমিকে পছন্দ করলো!

এই প্রথম রৌশন আপা আর মিতুর কথার ফোড়নে সায় দেওয়া শুরু করেছে হাসান। ভেতরে ভেতরে অন্তরটা যে তারও জ্বলে যাচ্ছে। যদিও রুমিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনোই নিশ্চিত ছিল না হাসান, কিন্তু ভাবেনি এভাবে তার হাতের উপরের জিনিস অন্য কেউ নিয়ে যাবে। খেলায় হেরে যাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে হাসানের। আর তাই রুমি রাকিন জুটিকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। রুমির সাথে তার সম্পর্ককে কখনো প্রকাশ্যে কেন আনেনি তাই নিয়ে এখন তার আফসোস হচ্ছে। মরিয়ম আর রাকিন ছাড়া অন্য কেউ জানতো না হাসানের সাথে রুমির ঘনিষ্ঠতার কথা, এই দু’জনের একজন রুমির কাছের মানুষ, আরেকজন তো স্বামীই হয়ে গেল। এখন আফসোস হচ্ছে কলেজের আর এক দু’জন মানুষকে জানালে কী হতো যে সেদিন তার আর রুমির কোর্ট ম্যারেজ করার কথা ছিল, সে ছেড়ে দিয়েছিল বলেই তো রাকিনের গলায় মালা দিলো রুমি। রুমির এভাবে হাসানকে সহজেই ঝেড়ে ফেলাটা হাসানকে তাই পুড়িয়ে দিচ্ছে। রুমিকে ছোট করার প্রবৃত্তিটা সে সামাল দিতে পারছে না। তাই তো সেদিন টিচার্স মিটিং শেষে সবাই যখন রুমি আর রাকিনের কাছে ট্রিট দাবি করে, তখন রৌশন আপা আর মিতু টিপ্পনী কাটতে শুরু করলে সুযোগ বুঝে তাদের সাথে হাসানও তাল মিলাতে থাকে।

রৌশন আপা- “রুমি, একটু কিছু টিপস মিতু আর হাসানকেও দাও। তুমি দুইটা করে ফেললে, বেচারাদের একটাও হলো না।”

মিতু- “রৌশন আপা ঠিকই বলেছেন। রুমি আপুর ক্লাস লাগবে আমার। এখনো ছেলে ভুলানো মন্ত্র জানি না বলে বিয়েটা আটকে আছে। আমার অবশ্য একটা হলেই চলবে, তিনটা চারটা করার শখ নাই।”

রৌশন আপা আর মিতুর কথার মাঝেই তাল মিলায় হাসান, “মিতু আপা, তিনটা চারটা সবাই পারে না। তারজন্য স্পেশাল হতে হয়। আমাদের তো মানুষের এঁটো খাবার খাওয়ার অভ্যেস নেই। তাই এখনো হয়নি। রাকিন ভাই বিদেশ থেকে এসেছেন, ওপেন মাইন্ডের মানুষ, রুমি আপাও এক্সপেরিয়েন্সড। ওনাদের টিউনিং হওয়ারই কথা।”

রৌশন আপা আর মিতুর উপর সবাই কমবেশি এমনিতেও বিরক্ত, এখন হাসানও ওদের সাথে তাল মেলানোয় উপস্থিত অন্যান্যরা বিরক্ত হলেও কলিগ বলে কিছু বলে না। রুমিও ভাবে পাশ কাটিয়ে যাবে, কিন্তু বাদ সাধে রাকিন “হাসান ভাই, দেশের প্রথম শ্রেণীর পেশাজীবি একজন মানুষের মুখের ভাষা এমন হওয়াটা সত্যি দুঃখজনক। আপনার মনোভাবের সাথে একজন অশিক্ষিত বর্বর মানুষের কী পার্থক্য আছে? আপনি ডাক্তার আর সে অশিক্ষিত, এই টুকুই তফাৎ। রুমির দ্বিতীয় বিয়ের কথা আপনারা জানেন, আমারটা জানেন না। অবশ্য জানলেও আপনাদের কথা পরিবর্তন হতো না। মহিলদের নিয়ে স্থুল রসিকতা করা খুব সহজ কিনা।”

একটু অপ্রস্তুত হলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় হাসান,”আরে রাকিন ভাই দেখি রাগ করলেন। আরে আমি তো দুষ্টুমি করেছি। আপনি ভাই মানুষ, রুমি আপা তো আমার কত ভালো বন্ধু সেটা জানেন না? এখন যদিও আমার ভাবি হয়ে গিয়েছেন, কিন্তু বন্ধুত্ব তো ছিল। বন্ধুর সাথে বন্ধু দুষ্টুমি করতে পারবে না?”

রাকিন হাসানের কথার উওর না দিয়েই রৌশন আপা আর মিতুর দিকে ফিরে, “রৌশন আপা, আপনি গুরুজন। কত সিনিয়র ম্যাম, এসব সস্তা রসিকতা কী আপনার সাথে যায়? যতটুকু জানি স্যার নির্ভেজাল মানুষ, এসব জিনিস পছন্দ করেন না।
আর মিতু তোমার আগে ব্যবহার শিখতে হবে, তাহলে তিনটা চারটা না হোক, একটা বিয়ে অন্তত হবে। সবশেষে তোমাকে বলি রুমি, তুমি এসব কথা পাশ কাটিয়ে যাও দেখে সবাই বলার সাহস পায়। এক্ষুনি তুমি আমার সাথে পরিচালক স্যারের রুমে যাবে। কলেজে সবাই পড়াতে আসে না অন্যের জীবনে নাক গলাতে আসে, তা স্যারকে জিজ্ঞেস করা দরকার।”

পরিচালকের কাছে যাবে শুনে উপস্থিত সবাই রাকিনকে শান্ত করতে লেগে যায়। সিনিয়ররা হাসান আর রৌশন আপাকে দুটো কথাও শুনিয়ে দেন এবার। রাকিন সে সময়ের মতো ঠান্ডা হলেও কথা ঠিকই পরিচালকের কানে যায়। ডিপার্টমেন্টে ডিপার্টমেন্টে নোটিশ চলে যায়, অফিস চলাকালীন অফিসিয়ালি কথাবার্তা ছাড়া কোন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যেন কোন রকম অশালীন মন্তব্য করা না হয়, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রৌশন আপা আর হাসান কারন দর্শানোর নোটিশও পেয়েছে। আপাতত কলেজে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

রাকিন আর রুমির মাঝে এখনো তিতলি ঘুমায়। তবে রোজ একসাথে অফিসে আসা যাওয়া করা আর ছুটির দিনে একসাথে বসে চা খাওয়ার অলস বিকেলগুলোয় দু’জনের মাঝের বরফ গলতে শুরু করেছে। প্রথম পদক্ষেপটা যদিও কেউই নিতে পারছে না। রুমি আড়ষ্টতা কাটাতে পারছে না, আর না রাকিন সহজ হতে পারছে। তাদের দৈনন্দিন আর সব কাজের ফাঁকে নিয়ম করে তারা রোজ রামিসাকে দেখতে যায়।

রামিসা মরিয়ম আপার মেয়ে, মাত্র ঊনিশশো গ্রাম ওজন নিয়ে জন্ম নিয়েছে রামিসা। টানা বিশ দিন NICU তে রাখতে হয়েছে। রাকিন আর রুমি রোজ যেত। মরিয়ম আপা রুমিকে ধরে অনেক কান্না করতো, মরিয়মের মনে হতো হয়তো গর্ভধারণের পর থেকে দ্বিতীয় প্রেগন্যান্সি কখনো সহজ ভাবে গ্রহণ না করায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়েছেন, তাই তো বাচ্চাটাকে নিয়ে যেতে চাইছেন। অপরাধবোধে ভুগতো রুমি আর মরিয়মের শাশুড়ি মাও। রুমির মনে হতে মরিয়ম আপার এই অবস্থার জন্য সে দায়ী, আর শাশুড়ি মা অপরাধবোধে ভুগতেন, কারণ ওনার মনে হতো সেদিন রাতে মরিয়মকে এভাবে মনের উপর চাপ দিয়ে কথাগুলো না বললেই পারতেন। শিহাব একবার NICU আরেকবার মরিয়মের কাছে ছুটোছুটি করতো, তার ব্যবসা বাণিজ্য সব মাথায় উঠেছিল, সাথে ছিল রুমনকে সামলানের চাপ। তবে শেষ পর্যন্ত সবার ভালোবাসার জয় হয়েছে। আজ রামিসাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। রুমি আর রাকিন তাই এই ঝড় বৃষ্টির ভেতরও বের হচ্ছে, শিহাব আর মরিয়মের পাশে থাকতে চায় এই খুশির সময়। তিতলিকে তার নানা নানুর কাছে নামিয়ে দিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা দেয় তারা।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here