যে_শহরে_এখনো_ফুল_ফোটে #পর্ব৫

0
257

#যে_শহরে_এখনো_ফুল_ফোটে
#পর্ব৫

“তাহলে তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না তাই তো?”

“জ্বি আপা, কিন্তু আমার বাড়তি বেতন দরকার, তাছাড়া কনজার্ভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি আমার নিজের পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর সাবজেক্ট। এসডিএম পড়ানোর চেয়ে এই বিষয়ে পড়াতে আমি অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবো।”

“তাহলে সিদ্ধান্ত কী নেওয়া উচিত তুমিই বলো?”

“সুইচ করা উচিত।”

“অবশ্যই সুইচ করা উচিত। এফসিপিএস পার্ট টু কবে পাশ করবে তার কোন ঠিক নেই। নিজে চেম্বার করতে পারছ না। সামনে মেয়েকে স্কুলে দিলে বাড়তি বেতন অবশ্যই লাগবে। তাহলে তুমি কী শুধু কয়েকজন মানুষের গসিপের ভয়ে পিছিয়ে যাবে রুমি? এত দুর্বল তো তুমি না।”

সিদ্ধান্ত কী নেওয়া উচিত তা রুমিও জানে, তারপরও আপার সাথে ছাদের এককোণে একান্তে কথা বলতে এসেছে, কেননা ওর একটা মানসিক শক্তি দরকার ছিল, একটু মোটিভেশান দরকার ছিল যা মরিয়ম আপা ছাড়া কেউ দিতে পারবে না এই মুহূর্তে। নিজের দুই ছোটো ভাইবোন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, আম্মা আব্বা কথা শোনার আগেই হইচই শুরু করেন, আর অফিসের কাউকে জড়িয়ে কোন কলিগ নোংরা কথা বলেছে শুনলে রুমির আব্বা রেগে দেখা যাবে অফিসেই অভিযোগ করতে চলে আসবেন, শেষে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। কোন বান্ধবীকে বলেও শান্তি নেই, বন্ধু মহলে গসিপ শুরু হবে। এমনিতেই ডিভোর্সের পর অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড ওকে এড়িয়ে চলে, এদের মনে হয় স্বামীহীনা রুমি ওদের স্বামীকে না চুরি করে নেয়! হাসি পায় রুমির, যে চুরি হওয়ার সে সিন্ধুকের ভেতর থেকেও চুরি হবে, যে হওয়ার না, তাকে ছেড়ে দিলেও নিজেরই থাকবে।

“আপা কী করা দরকার জানি। শুধু করার শক্তিটা পাচ্ছিলাম না। আপনার সাথে কথা বলে সেই শক্তিটা নিলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপা।”

“যাও বোকা মেয়ে। এই সামান্য জিনিসের জন্য ধন্যবাদ লাগবে না। রুমি, হিমেল কী তিতলির ভরণপোষণের টাকা দেয় না?”

“দেয় আপু। আদালত থেকে ঠিক করে দিয়েছিল, মাসে পাঁচ হাজার করে দেওয়ার কথা, তাই দেয়। আমার নিতে ইচ্ছে করে না সামান্য দুইপয়সা, ঘিন্না লাগে। কিন্তু সবাই বলে তিতলির অধিকার, তাই ওর নামে পাঁচ হাজার ডিপিএস করে রেখেছি। মাসে মাসে সেই একাউন্টে জমা হয়। হয়তো কখনো কাজে আসবে। আমার নিজের জন্য এক টাকাও আমি নেই না। কাবিন ছিল আট লাখের, তার অর্ধেক উসুল ধরেছিল। বাকি চার লাখ ডিভোর্সের সময় দিয়ে দিয়েছে। উকিল চেয়েছিল, পুরো আট লাখ আদায় করে দিতে, কিন্তু আমি আর আইনি ঝামেলায় যেতে চাইনি। যত দ্রুত সম্ভব সরে যেতে চেয়েছিলাম।”

“তুমি ঐ টাকাটা দিয়ে তো চেম্বার দিতে পার রুমি।”

“টাকাটা পুরো নেই আপু, চাকরি পেলাম সবে সাত মাস। এর আগের চার মাসের নানা খরচ ওখান থেকে করলাম, একটা কোর্সে বেশকিছু টাকা গেল। বাকি টাকাটা ব্যাংকে রেখেছি, বিপদ আপদে কাজে আসবে। আব্বা অবসরে গিয়েছেন, বোনটার বিয়ে বাকি। টাকা হাতে রাখা দরকার। আমার আর তিতলির খরচের চাপ আম্মা আব্বার উপর দিতে চাই না।”

“মাশাল্লাহ রুমি, তুমি অনেক ম্যাচুয়র একটা মেয়ে।।কারও কোন কথায় মন খারাপ করো না। তুমি জানো তুমি কী, আর এটাই যথেষ্ট।”

মরিয়ম আপার সাথে কথা বলা শেষে প্রিন্সিপাল ম্যামের রুমে যায় রুমি। নিজের সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দেয়। কে কী বললো, তা ভেবে নিজের ক্ষতি করা যাবে না। আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী লাগে রুমির।হিমেলের ধারণা ছিল রুমি মেয়ে নিয়ে একা অসহায় হয়ে যাবে, সব ভুলে আবার তার কাছেই ফিরে আসতে হবে। মেয়েকে নিয়ে যখন বেরিয়ে আসে রুমি, পাশে কাউকে পায়নি, এমনকি নিজের পরিবারকেও না। হিমেলের প্রতারণা মাফ করে আবার নতুন শুরু করাই সবার পরামর্শ ছিল। কিন্তু যেখানে বিশ্বাস শেষ হয়ে যায়, সেখানে নতুন শুরু কী করা যায়! এই সহজ সত্যটাই কেউ বুঝতে রাজি ছিল না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here