রংধনুর_স্নিগ্ধতা #পর্ব_১৩,১৪

0
812

#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_১৩,১৪
#নবনী_নীলা
১৩

অভ্র ঘুমিয়ে পড়তেই আদিল অভ্রকে কোলে করে বেরিয়ে এলো। রুমটায় ঘণ্টা খানেক ছিলো তারা। আদিল অভ্রর রুমে এসে অভ্রকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই খেয়াল করলো স্নিগ্ধা একপাশে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধার চোখে মুখে বিষণ্ণতা স্পষ্ট। তবুও স্নিগ্ধা বিছানায় অভ্রর একপাশে বসলো। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললো,” ঘুমিয়ে পড়েছে?”

আদিল পকেটে এক হাত ভরে বললো,” হুম্।” আদিলের মনে হচ্ছে স্নিগ্ধা তাকে হয়তো আজ সত্যিটা বলার জন্যে জোর করবে। জোর করলে সে বলবে স্নিগ্ধাকে। সেই মানসিকতা নিজেই ওই রুম থেকে বেরিয়েছে আদিল। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে স্নিগ্ধা কোনো প্রশ্ন করলো না। অভ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি আছি অভ্রর কাছে।”

আদিল থমকালে স্নিগ্ধার এমন স্বাভাবিক আচরণে। আদিল নির্বিকার দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে রইলো। স্নিগ্ধা অদ্ভূত এক আচরণ করছে। তার দিকে তাকাচ্ছে না। আদিল তপ্ত এক নিশ্বাস ফেলে রূম থেকে বেরিয়ে এলো।

স্নিগ্ধা নিশ্চুপে কিছুক্ষণ আনমনে বসে রইলো। কত প্রশ্ন আছে তার মনে। কিন্তু প্রশ্নগুলো সে করতে পারলো না কেনো? আচ্ছা প্রশ্ন করতে হবে কেনো তাকে?

প্রশ্ন না করলে আদিল কি কখনই তাকে কিছু জানবে না? তাহলে কি তার জানবার কোনো অধিকার নেই। স্নিগ্ধা নিরবে নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর অভ্রর পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।

আদিল ফ্রেশ হয়ে স্নিগ্ধাকে নিজের রুমে না দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আদিল বের হয়ে এলো। অভ্রর রুমে এসে সে থমকে দাড়ালো। স্নিগ্ধা অভ্রকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আদিল মৃদু হাসলো তারপর তোয়ালে কাধের দুপাশে রেখে এগিয়ে এলো। চাদরটা দুজনের গায়ে তুলে দিয়ে সে ড্রীম লাইট অন করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

______

স্নিগ্ধার ঘুম ভাঙলো দেরিতে। সে ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো। অভ্র এখনো ঘুমিয়ে আছে। অভ্র বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে। কিন্তু স্নিগ্ধার সকাল বেলায় উঠার অভ্যাস। আজ এতো বেলা হলো কেনো সে জানে না। জানালা দিয়ে সকালের রোদের আলো অভ্রর মুখে এসে পড়ছে। স্নিগ্ধা উঠে গিয়ে জানালায় পর্দা টেনে দিলো। তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।
আজ উঠতে দেরী হওয়ায় সে সকাল সকাল গোসল সেরে নিলো।

স্নিগ্ধা ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। চুলের পানি মুছে তোয়ালে একপাশে রাখতে গিয়ে স্নিগ্ধার চোখ পড়ল একটি সাদা খাম যার ঠিক উপরে একটি লাল গোলাপ। স্নিগ্ধা আশেপাশে তাকালো এই ঘরে আদিল আছে কিনা? আদিলের থাকবার কথা নয় কারণ বেশ বেলা গড়িয়েছে। স্নিগ্ধা নিশ্চিত হয়ে গোলাপসহ খামটি হাতে নিলো। আগে সাদা খামটি খুললো। খামের ভিতরে লাল কাগজে সাদা রঙের বলপেন দিয়ে লেখা,

তোমার বইয়ের পাতার ভাজে,
আমার দেওয়া গোলাপটির জন্যে
একটু জায়গা হবে কি?

স্নিগ্ধা চোখ পিট পিট করে তাকালো। এইটা কে রেখেছে? তার জন্যেই কি রেখেছে? এই বাড়িতে তো সে বাদে কোনো মেয়ে নেই। তাহলে এইটা আদিল লিখেছে তার জন্যে? আদিল তাকে এতো ভালো করে জানে কিভাবে? সে যে বইয়ের পাতায় ফুল রাখতে পছন্দ করে সেটা তো আদিলের জানার কথা না।

হটাৎ লোকটা তাকে ফুল দিতে গেলো কেনো? এমন লাল গোলাপ তাও আবার। ভালোই নাটকীয়তা করতে পারে এই ছেলে। কাল রাতে একবারো ভালো করে কথা বলেনি। আর এখন সকাল সকাল ফুল দিয়ে মন গলানোর চেষ্টা। চেষ্টায় যে ব্যার্থ হয়েছে এমনটাও নয়।

স্নিগ্ধা লাল গোলাপটা হুমায়ূন আহমেদের লেখা তার প্রিয় বই ” অপেক্ষা “। সেই বইয়ের পাতার ভাজে গোলাপটি রেখে দিলো। সাদা খামটি তার ফেলতে ইচ্ছে করলো না। সেটাও সে সযত্নে বইয়ের একটা পাতার ভাঁজে রেখে দিলো।

কিন্তু স্নিগ্ধা এতো বোকা নয়। সে ঠিক সেই রকম আরেকটা খাম বানালো। বানিয়ে সেটা হাতে মুড়িয়ে পাশের ঝুড়িতে ফেলে দিলো। আর বাগান থেকে একটা গোলাপ এনে তার পাঁপড়ি ছিঁড়ে সেই ঝুড়িতে ফেলে দিলো। স্নিগ্ধাকে হাতে পাওয়া এতো সহজ না আবরার ফাইয়াজ।

স্নিগ্ধার মনটা এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। এই ফুলগুলো দেখে আদিলের কি চেহারা হয় সেটাই দেখবার পালা।

বেলা বারোটার দিকে স্নিগ্ধার ফোন বেজে উঠলো। স্নিগ্ধা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা নাম্বার। স্নিগ্ধা কল রিসিভ করে ফোনটা কানে ধরতেই এক পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এলো। ওপাশ থেকে বললো,” কেমন আছো, স্নিগ্ধতা?”

স্নিগ্ধা একটু অবাক হলো। নাম্বারটা তার চেনা নয় আর এই কণ্ঠ সে এর আগে কখনো শুনেনি। পরিচিত কারোর সাথে এই কণ্ঠের মিলও নেই। অথচ লোকটা তার নাম জানে আর এমনভাবে কথা বলছে যেনো তাকে চিনে। স্নিগ্ধা ভ্রূ কুচকে বললো,” কে আপনি?”

ওপাশ থেকে ভারী গলায় বললো,” তুমি আমাকে চিনবে না।”

স্নিগ্ধা বেশ বিরক্ত হলো তারপর বললো,” কি জন্যে ফোন করেছেন আপনি ?”

ওপাশ থেকে হালকা হাসির শব্দ পেলো স্নিগ্ধা। হাসি থামিয়ে ওপাশ থেকে বললো,” নতুন জীবন শুরু করেছে তাই শুভেচ্ছা জানতে ফোন করেছি। যদিও বেশি দেরি করে ফেলেছি। আফটার অল তুমি আবরার ফাইয়াজের ওয়াইফ শুভেচ্ছা তো তোমাকে দিতেই হতো।”

স্নিগ্ধা লোকটার কথা বুঝতে না পেরে বললো,” মানে?”

ওপাশ থেকে বললো,” মানে বুঝতে পারা কি আর এতো সহজ? তোমাদের ছেলেটা কেমন আছে? আমার জানা মতে বাচ্চাটা তো তোমার না। ঠিক বলেছি না?”

স্নিগ্ধা বেশ রেগে গিয়ে বললো,” আপনার মনে হচ্ছে না, আপনি বেশি বলছেন?”

” নাহ্, একদমই না। আমি মোটেও বেশি বলছি না।ঠিক কোন সত্য চাপা দেওয়ার জন্যে আবরার ফাইয়াজ তোমাকে ব্যাবহার করছে সেটা জানার আগ্রহে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি নিজেই দিশেহারা।”

স্নিগ্ধার বেশ রাগ হলো ফোনটা কেটে দিতে নিলো তখনই ওপাশ থেকে লোকটা হেসে বলল,” আরে আরে, রেগে গিয়ে ফোন কাটার আগে আমার নামটা তো জেনে নিবে। আমার নাম ফাহাদ রেজওয়ান আর আমি কে সেটা না হও তুমি নিজেই খুঁজে বের করো।” বলেই ওপাশ থেকে কল কেটে দিলো।

স্নিগ্ধার প্রাথমিক অবস্থায় ভীষন রাগ হলো। কিন্তু এই লোকটার কথা গুলো তার মাথায় বাসা করে নিয়েছে। সত্য চাপা দিতে তাকে ব্যাবহার করছে মানে? আদিল তাকে ব্যাবহার করছে এই কথাটাই যেনো তার মাথায় গেঁথে গেলো। কি আড়াল করতে চাইছে আদিল?

______

জিম বিরক্তি মুখে স্পৃহার কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জীবনেও সে এমন কাজ করে নি। কিন্তু এই মেয়ের জন্যে তাকে এই কাজ করতে হচ্ছে। একে একে সব মেয়ে বের হয়েছে স্পৃহার কোনো হদিস নেই।

কলেজ ছুটির প্রায় বিশ মিনিট পর স্পৃহা ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে বের হলো। তার প্ল্যান সফল, এই রবোমানবকে উচিৎ শিক্ষা আজ দেওয়াবে সে। স্পৃহা এসে দাড়াতেই জিম তাড়া দিয়ে বললো,” এতো লেট কেনো? তোমার ক্লাস কি বিশ মিনিট দেরিতে শেষ হয়?”

স্পৃহা মুখ বাঁকিয়ে বললো,” হয়, আমার ক্লাস হয়। আপনার কোনো সমস্যা?”

জিম কথা বাড়াতে চায় না চটজলদি গাড়ীর দড়জা খুলে বললো,” উঠো।”

স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে বললো,” আজব গাড়ি সঙ্গে এনেছেন কেনো? আপনার কি পা নেই? হাঁটতে পারেন না। নাকি ব্যাটারি শেষ হয়ে যায় হাঁটলে।”

জিম তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। স্পৃহা দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,”আমি এমন ঢং করে বাড়ি ফিরতে পারবো না। আমি রোজ যেমন হেঁটে বাড়ি ফিরি আজও সেভাবে ফিরবো।”

জিম ভ্রূ কুচকে বললো,” তুমি হেঁটে বাড়ি ফিরবে? তাহলে আমাকে শুধু শুধু ডেকে আনার মানে কি?”

স্পৃহা রেগে গিয়ে বললো,” আপনাকে ডেকেছি। কিন্তু আপনাকে কোলে করে গাড়ী নিয়ে আসতে বলেছি? আশ্চর্য। আর আপনি না দেখবেন? আমাকে কারা ডিস্টার্ব করে? গাড়িতে করে গেলে আমাকে তারা ডিস্টার্ব করবে কি করে।”

জিম গাড়ীর দরজা সজোরে ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে বললো,” চলো।” অনেক কষ্টে নিজের রাগ সামলে স্পৃহার সঙ্গে হাঁটা দিলো। এই মেয়ে এতো অদ্ভূত কেনো? জিম স্পৃহার পিছে পিছে হাঁটছে। আর আশেপাশে তাকাচ্ছে। কোথায় কেউ তো নেই। শুধু শুধু এই মেয়ে তাকে ঘুরাচ্ছে।

হটাৎ স্পৃহা গোলাপের দোকান দেখে হুট করে এক দৌড় দিলো। জিম তীব্র বিরক্তি নিয়ে পিছু পিছু এলো।এই মেয়ে নিশ্চই এখন বলবে না, যে এই দোকানদার তাকে ডিস্টার্ব করে।

স্পৃহা দোকানদারের সাথে প্রায় দশমিনিট দাম নিয়ে বার্গেনিং করলো তারপর। তিনটা গোলাপ কিনলো। মাঝে জিম বলেছিলো কথা না বাড়াতে, স্পৃহা মুখ বাঁকিয়ে বললো,” এই থামুন তো আপনি। আমি টাকার গাছ লাগিয়েছি তো, যে টানবো আর টপ টপ করে পড়বে।”

জিম এই মুহুর্তে তীব্র বিরক্তি নিয়ে স্পৃহার দিকে তাকিয়ে আছে। স্পৃহা ফুলগুলো থেকে একটা ফুল জিমের দিকে এগিয়ে দিতেই জিম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো,” আমার লাগবে না।”

[ #চলবে ]

#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_১৪
#নবনী_নীলা

স্পৃহা ফুলগুলো থেকে একটা ফুল জিমের দিকে এগিয়ে দিতেই জিম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো,” আমার লাগবে না।”
স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বিরক্তি নিয়ে বললো,” কি আশ্চর্য! আপনাকে ফুল দিয়েছে কে? আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে। ভাবলেন কি করে যে, আমি স্পৃহা তাসনিম আপনাকে ফুল দিবো।” বলেই ফুলটা জিমের হাতে ধরিয়ে দিলো। জিম হতবাক হয়ে তাকালো। এই মেয়ের মুখের কথা আর কাজের সাথে কোনো মিল নেই।

স্পৃহা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” ওটা আপনাকে দেই নি। ওটা আপুর জন্যে, আপুকে দিবেন। বুঝেছেন?”

জিম চোয়াল শক্ত করে তাকালো। এই মেয়ের সাথে কথা বাড়ানোর কোনো মানে হয় না। জিম তপ্ত নিশ্বাস ফেলে স্পৃহাকে রেলে ওদের বাড়ির দিকে হাটা দিলো। স্পৃহা দৌড়ে দৌড়ে জিমের পিছে পিছে ছুটতে লাগলো। স্পৃহার ইচ্ছে করছে জিমের পিছনে জঙ্গলী কুকুর ছেড়ে দেয়। কুকুর গুলো জিমকে তাড়া দিবে আর স্পৃহা বসে বসে বসে সেই দৃশ্য দেখবে। তাহলে মনে শান্তি পাওয়া যাবে।

জিম স্পৃহাদের বাড়ির গেটে এসে থামলো। স্পৃহা হাপাতে হাপাতে পিছু পিছু এলো। জিম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো স্পৃহার দিকে তারপর বললো,” কোথায় কাউকে তো দেখলাম না। কোন ছেলে নাকি তোমায় ডিস্টার্ব করে?”

স্পৃহা ভ্রূ কুচকে বললো,” সারাদিন চোখে এমন সানগ্লাস পরে থাকলে দেখবেন কি করে? ঐ ছেলেগুলো সূযোগ বুঝে আসে, এমন রোবোটিক মানব সঙ্গে থাকলে ছেলে তো দূরে থাক কোনো মেয়েও আসবে না আমার আশেপাশে।”

জিম বিরক্ত হয়ে বলল,” স্পৃহা! তুমি শুধু শুধু আমার কতটা সময় নষ্ট করলে তোমার কোনো ধারণা আছে?”

স্পৃহা কাঠ কাঠ গলায় বললো,” নাহ্, নেই। সময় নষ্ট হয়েছে, ভালো হয়েছে। আপনি কালকে আবার আসবেন। ছেলেগুলোকে না দেখিয়ে আমি আপনাকে ছাড়বো না।”

জিম দাতে দাঁত চিপে বললো,” তুমি..”বলেই থেমে গেলো। এর মাঝেই ফরিদা আপা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন এক গাল হাসি নিয়ে তারপর স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বললেন,” ছোটো আফা চলে আইসেন?” তারপর জিমকে দেখে হতবাক হয়ে এক গালে হাত রেখে বললেন,” ওমা আফনে আসলেন কুন বেলা?”

জিম বিরক্তির চরম পর্যায়ে গেলো তারপর এক মুহুর্ত সেখানে না দাড়িয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলো। ফরিদা আপা অবাক হয়ে স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বললো,” চইল্যা গেলো কেনো?”
স্পৃহা তীক্ষ্ণ গলায় বললো,” তুমি যাও পিছু পিছু গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসো, চইল্যা গেছে কেনো?” বলেই বাড়িতে ঢুকলো।

আয়েশা খাতুন আজ দেরী করে স্কুলে যাচ্ছেন। স্পৃহা এগিয়ে গিয়ে নিজের মাকে একটা গোলাপ দিয়ে বললো,” ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা আম্মু।” আয়েশা খাতুন হেসে উঠে বললেন,”এই ফুল হাতে বুঝি আমি এখন স্কুলে যাবো?”

স্পৃহা বাকা হাসি দিয়ে বলল,” হুম, যাও। কেউ জিজ্ঞেস করলে বইলো বাবা দিয়েছে।”

আয়েশা খাতুন আড় চোখে তাকিয়ে বললেন,” তোমার বাবা দিবে ফুল। তাহলেই হয়েছে। ওনার দ্বারা এইগুলো হবে না। আচ্ছা আমি যাই আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। তুমি খেয়ে নিও।”বলেই তিনি বেড়িয়ে পড়লেন। স্নিগ্ধা নিজের রুমে চলে এলো। জিম তাকে রাগ দেখালো কেনো এই নিয়ে তার মেজাজ ভীষন খারাপ। এই জিম নামের ডিম এতো বেদ্যোপ তার জানা ছিল না।

__________

স্নিগ্ধা ভেবে পাচ্ছে না এই ফাহাদ রেজওয়ান লোকটা ঠিক কি চাইছে। তাকে ফোন করে হটাৎ এতোগুলো কথা বলার মানে কি? তার নিজেকেই এইসব প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে। কারণ আদিল বা জিম এরা এতো ধুর্ত যে এদের থেকে কথা আদায় করা সম্ভব না। তাকেই কিছু একটা করতে হবে। অভ্রকে সে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু অভ্রর তো বাচ্চা সে কি করে জানবে।

স্নিগ্ধা আবারো সেই লক করা রুমটার সামনে গেলো। এই রুমটায় হয়তো তার অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। কিন্তু ভীতরে গিয়ে যে দেখবে তার উপায় নেই। স্নিগ্ধা যার অস্পষ্ট ছবি দেখেছিলো সে যে অভ্রর মা এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অভ্রর মায়ের পরিচয় আড়াল করবার কারণ কি? স্নিগ্ধা অনেক্ষন ধরে রুমটার সামনে দাড়িয়ে আছে।

পাসওয়ার্ড কি হতে পারে সেই নিয়ে তার কোনো আইডিয়া নেই। নিশ্চয়ই মারাত্মক কঠিন কিছু হবে। স্নিগ্ধা একবার ট্রাই করবে ভেবে হাত বাড়াতে না বাড়াতেই জিম এসে হাজির। জিমকে দেখে স্নিগ্ধা সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাত গুটিয়ে পিছনে নিয়ে গেলো।

জিম স্নিগ্ধাকে হটাৎ এই রূমের সামনে দেখে বললো,” এইখানে কি করছেন?”

স্নিগ্ধা অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,” কিছু না।”

স্নিগ্ধা ধরা পড়ে যাওয়ায় জিম একটু হেসে বললো,” নিচে চলুন। আমাদের বের হতে হবে।”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বললো,” কোথায় যাবো?”

” অভ্রকে আজ বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ভুলে গেলেন?”, জিমের কথা শুনে স্নিগ্ধার মনে পড়লো। তারপর ঠোঁট কামড়ে নিচে নেমে এলো। নিচে অভ্র লাফালাফি করছে। বাইরে যাবে শুনে সে বেশ খুশি। আদিলকে দেখে স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে পড়লো। পিছনে জিমকেও দাড়াতে হলো। জিম ব্যাস্ত হয়ে বললো,” কি ব্যাপার দাড়িয়ে পড়লেন কেনো?”

স্নিগ্ধা ক্ষোভ ভরা কণ্ঠে বললো,” এই লোকটা এইখানে কি করছে? অভ্রকে নিয়ে যেতে এতো মানুষ লাগবে? আমি এই লোকটার সাথে যাবো না।”

জিম অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” সেটা আপনাদের মধ্যকার ব্যাপার। আমাকে বলছেন কেনো?”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো জিমের দিকে তারপর হনহনিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। আদিল গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে ছিল। স্নিগ্ধা সামনে এসে দাড়াতেই আদিল ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। স্নিগ্ধা এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে বললো,” আমি আপনার সাথে যাবো না। হয়, আপনি যাবেন নয়তো আমি।”

আদিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো। হটাৎ কি হলো এই মেয়ের? আদিল ফোনটা ডান পকেটে ভরতে ভরতে বললো,” সেটা হচ্ছে না। কারণ তুমি আমি দুজনেই যাচ্ছি।”

স্নিগ্ধা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,” তাহলে আপনি যান আমি যাবো না।” বলেই চলে যেতে নিলো। আদিল ফট করে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। সবার সামনে আদিল এভাবে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে ভাবতে পারেনি স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা কটমট করে তাকালো।

আদিল জিমকে কি ঈশারা করতেই, জিম অভ্র কিছু দেখার আগেই তাকে কোলে করে অন্য একটা গাড়িতে উঠে বসলো।

জিম চলে যেতেই স্নিগ্ধা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু ছাড়াতে না পেরে রেগে গিয়ে বললো,” কি করছেন কি? লজ্জা করছে না আপনার?”

আদিলের ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে। আদিল স্নিগ্ধার দুইহাত পিছনে নিয়ে গিয়ে লক করে দিতেই স্নিগ্ধা ভরকে গিয়ে তাকালো। আদিল দূরত্ব কমিয়ে এনে স্নিগ্ধার চোখের দিকে তাকালো। স্নিগ্ধা একটা ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে এলো। আদিলের এমন স্থির দৃষ্টি তাকে অস্থির করে তুলতে যথেষ্ঠ।

আদিল স্নিগ্ধার অস্থিরতা টের পেয়ে মনে মনে হাসলো। তারপর ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,” ভাবছি দুজনেই থেকে যাই। আফটার অল আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে।” বলেই এক হাত স্নিগ্ধার কোমড়ে ডুবিয়ে দিতেই শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা। ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। বুকের ভিতরে ধুক ধুক শুরু হয়েছে তার।

আদিল মুখটা স্নিগ্ধার কানের কাছে আনতেই তার নিশ্বাস আছড়ে পড়লো স্নিগ্ধার গলায়। আদিল ফিসফিসিয়ে বললো,” আমার একটু উষ্ণতা লাগবে তোমার থেকে।”

স্নিগ্ধা নিজেকে শান্ত করে খুব ধীরে চোখ খুলে তাকালো। কিন্তু তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে। উষ্ণতা লাগবে মানে? কি বলতে চাইছে আদিল! স্নিগ্ধা অস্পষ্ট স্বরে বলল,” মানে?”, বলেই দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো সে।

আদিল মৃদু হেসে স্নিগ্ধাকে নিজের দুই বাহুতে আবদ্ধ করে নিজের সাথে মিলিয়ে নিয়ে স্নিগ্ধার চুলের ভাজে মুখ গুজে দিলো, শিউরে উঠে আবারো চোখ বুজে ফেললো স্নিগ্ধা। হুট করে আদিলের এতো কাছে চলে আসায় স্নিগ্ধার অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু হটাৎ কেনো জানি তার ভালোলাগছে এই বাঁধনটা, এভাবে জড়িয়ে থাকাটা।

কিন্ত কয়েক মুহুর্তেই ফাহাদের বলা সেই কথা মনে পড়ে গেলো তার। অজানা এক ভয় গ্রাস করলো তাকে। আদিল কি সত্যি তাকে ব্যাবহার করছে নিজের প্রয়োজনে? ভেবেই বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো তার। পরক্ষনেই স্নিগ্ধা কঠিন ভঙ্গিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর সরে দাঁড়ালো, আদিল স্নিগ্ধার এমন আচরণে বেশ অবাক হলো। স্নিগ্ধার চেহারায় লাল আভার মাঝে কোথাও যেনো এক অভিমানী মেঘ বাসা করেছে।

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here