#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_২১,২২
#নবনী_নীলা
২১
আদিল মাথা নুইয়ে ফেললো তারপর চোখ বন্ধ করে ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললো,” সে আমার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ যাকে আগলে রাখতে আমি ব্যার্থ হয়েছি।”
স্নিগ্ধা অপলকে তাকিয়ে আছে।আদিলের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ! মানে তার চেয়েও উর্ধ্বে কেউ। এই একটি মাত্র কথায় হটাৎ যেনো সবটা থমকে গেলো তার।হটাৎ এতো খারাপ লাগছে কেনো তার?মনের ভিতরটায় তোলপাড় চলছে। স্নিগ্ধা কোনো কথা বললো না। আনমনে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো সে।
আদিলের আরো কিছু বলার ছিলো। তার ইচ্ছে করছে সবটা স্নিগ্ধাকে বলে দেয়। এই ভুল বোঝাবুঝি আর নিতে পারছে না সে। আদিল সবটা বলতে গিয়েও নিজেকে থামিয়ে দিলো। বিছানার পাশের ফোনটা বেজে উঠতেই নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাড়ালো সে। এই সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে হবে। নয়তো স্নিগ্ধা তাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে।
আদিল ফোন হাতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। নাম্বারটা সম্পূর্ন অপরিচিত। আদিল ফোনটা রিসিভ করে একটু অবাক হয়ে গেলো। সুনেয়রা কল করেছে। কিন্তু আদিলের পার্সোনাল নাম্বার তো এই মেয়ের পাওয়ার কথা না। আদিল ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে একটু টেনে টেনে বললো,” কেমন আছো? তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো তাই নিজেই তোমার নাম্বার খুঁজে বের করেছি। অবশ্য তার জন্যে কম খাটতে হয় নি আমায়। যতই হোক আবরার ফাইয়াজ বলে কথা।”
আদিল কোনো কথা বললো না। কে এই মেয়ে? প্রথমে বুঝতে না পেরে বললো,” এক্সকিউজ মী। হুুঁ আর ইউ?”
ওপাশ থেকে মৃদু হাসির আওয়াজ কানে এলো আদিলের। হাসি থামিয়ে মেয়েটি বললো,” আমি সুনেয়রা। আমাকে ভুলে গেলে নাকি?”
আদিল ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,” হঠাৎ এই সময়ে ফোন দেওয়ার প্রয়োজন? আমি তো বলেছি যে তোমার সাথে আমি নিজে গিয়ে মিট করব।
সুনেয়ারা একটু অবাক হয়ে বলল,” তোমাকে কি বিরক্ত করলাম?”
আদিল তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” অ্যাকচুয়ালি আমি এখন বিজি আছি। আই উইল কল ইউ লেটার।” বলে আদিল ফোনটা কেটে দিলো। এখন রাগটা তার আরো বেড়ে গেছে।
আদিল জিমের রুমে এলো, এসে দেখে জিম ল্যাপটপে কাজ করছিল। হঠাৎ আদিলকে নিজের রুমে দেখে একটু হতবাক হয়ে তাকালো। জিম অবাক হয়ে বলল,” কোনো সমস্যা?”
আদিল ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। চারিপাশে সবকিছুই তাঁর কাছে এখন বিষাদময় লাগছে, দু আঙ্গুলে কপাল ঘষে বলল,” সুনেয়রা আমার নাম্বার পেলে কি করে? ওর সাহসই বা হলো কি করে আমাকে ফোন করার? মানছি আমি ওকে ইনভাইট করেছি মিট করার জন্য, ডেট ডাজেন্ট মিন সে আমার পার্সোনাল লাইফে এন্টার করবে।”
জিং একটু বিরক্ত নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” ফাহাদ এন্ড ফাহাদের ওয়াইফ দু’জনকেই আমার সুবিধার মনে হয় না। আমার তো মনে হয় ফাহাদকে পর্যন্ত এ মেয়ে ইউজ করছে। সেখানে আমাদের কি ওর কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত?
আদিল হেসে উঠে বলল,” আর ইউ কিডিং উইথ মি জিম? আমরা তো ওর হেল্প চাইছি না। যে মেয়ে ফাহাদ রেজওয়ানকে ইউজ করতে পারে সেই চাইলে তাকে ছুড়ে ডাস্টবিনে ফেলেও দিতে পারে।
জিম একটু ভেবে বলল,” ওরা কি নিজেদের এত বড় একটা শক্তির বিপক্ষে কথা বলবে? নিজেকে এতো বড় ক্ষতি ওরা কি করবে? এত বোকা হবে বলে তো মনে হচ্ছে না।”
আদিল বাঁকা হাসি দিল তারপর জিমের কাঁধে হাত রেখে বলল,” ফাহাদকে ওদের প্রয়োজন ক্ষমতা ধরে রাখতে কিন্তু সেই ফাহাদ যদি ওদের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে চায় তাহলে তোমার কি মনে হয় ওরা ফাহাদকে ছেড়ে দেবে? সুনেয়রা একটা ওয়ে মাত্র আমার টার্গেট তো ওর বাবা পর্যন্ত পৌঁছানো তারপর ফাহাদকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না গল্পটা ওখানেই শেষ।”
জিম চিন্তিত মুখে বলল,” আপনি এত নিশ্চিত হচ্ছেন কি করে?
আদিল ঠোঁটের হাসি আরো প্রচুর প্রশস্ত করে বলল,” চার বছর অনেকটা সময়। তোমার কি মনে হয় চার বছর ধরে ওকে আমি কেনো বাঁচিয়ে রেখেছি? অফকোর্স এমনিই করিনি। ওর থেকে প্রথমে ওর ক্ষমতা নিবো তারপর আমার প্রতিশোধ। এত সহজে তাকে আমি ছাড়বো না।”
___________________
স্পৃহা অনেকক্ষণ ধরে ভাবল কিন্তু তার মাথা কাজ করছে না। কি হচ্ছে এগুলো? আরোহী মেয়েটাকে জিজু কি এখনো ভালোবাসে? নাহ! এসবের মধ্যে তার বোন কিভাবে সংসার করবে?
যদি আরোহীকে এতটাই ভালোবাসে তাহলে তার বোনকে কেনো বিয়ে করল? তার বোনের জীবনটা কেন নষ্ট করতে চাচ্ছে? তাকে যদি ভালোবাসে তবে এইসবের মানে কি?
তার বোনের প্রতি আদিলের ভালবাসাগুলো কি শুধু লোক দেখানো?
স্পৃহা যত ভাবছে ততই অবাক হয়ে যাচ্ছে। বিষ্ময়ের চরম মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে। সে অন্যরকম ভেবেছিল কিন্তু গল্পটা এমন হবে কল্পনায় করেনি।
অভ্র বলছে স্নিগ্ধা তার আম্মু না, কথাটা শুনে তার বোন কতটা কষ্ট পেয়েছে সেটা দেখে সে বুঝেছে। আর এই দিকে সারা বাড়িতে আরোহী! আরোহী! আরোহী! এটা কি অত্যাচার না?
এইসবের মাঝে একটা মানুষ সুখে থাকবে কি করে? সে তার বোনের মত না। তার বোন সবকিছুই অনেক সহজ ভাবে নিতে পারে, মেনে নিতে পারে কিন্তু সে পারে না তার বোন হয়তো চুপ করেই বাকিটা জীবন এখানে কাটিয়ে দেবে, যেখানে হয়তো তার কোন মূল্য নেই।
অন্য কাউকেই যদি ভালোবাসে তাহলে কেনো এত কিছু করে বিয়ে করতে গেল?
ভাবতেই এখন রাগ লাগছে। আদিলকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়? সে পারবে জিজ্ঞেস করতে কিন্তু আপু যদি রাগ করে এটা ওদের মধ্যকার ব্যাপার সে তো ছোট মানুষ। তাই নাক নাক গলানো কি ঠিক হবে? আচ্ছা ওদের মধ্যে না হয় নাক নাই গলালো এই জিম কে তো জিজ্ঞেস করতেই পারে।
এই ছেলের মুখ থেকে কথা তো তাকে বের করতেই হবে। এত সহজে স্পৃহা তাসনিম কাউকে ছেড়ে দেয় না। আরোহী কে তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
স্পৃহা রুম থেকে বেরিয়ে পরলো বের হতে না হতেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। পেইন্টিং গুলো দেখে তার আগে অনেক ভালো লাগতো কিন্তু এখন বড্ড বিরক্তি লাগছে। তার বোনের সুখ নষ্ট করতে সে দিবে না।
স্পৃহা দরজায় নক না করে জিমের রুমে ঢুকে পরলো। জিম সবেমাত্র নিজের গায়ের টি-শার্টটি খুলেছে খুলে সামনে তাকাতেই স্পৃহা কে দেখে চমকে উঠলো। এই মেয়ে তার ঘরে কি করছে? বড় বড় চোখ করে দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলল তুমি আমার ঘরে এসেছ কেন?
স্পৃহা ভ্রুকুটি করল তারপর বলল,” এমন করছে কেনো? আমি আপনার রুমে এসেছি। আপনার ওয়াশরুমে আসিনি। আশ্চর্য!”
জিম বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল,” শাট আপ। আমার রুমে এসেছো কেন? আর এসেছো যখন একবার নক করার প্রয়োজন বোধ করলে না?”
” কি আশ্চর্য নক করতে যাবো কেনো! এতই যখন আপনি প্রাইভেট কাজ করছিলেন তো দরজাটা আটকান নি কেন? ভুলটা তো আমার না, আপনার ভুল। দরজা লাগিয়ে করা উচিত ছিল। শুধু শুধু আমার উপর চিৎকার করবেন না।” বলেই আড় চোখে তাকালো সে।
জিম টি-শার্টটি পুনরায় পরিধান করে বলল,” সব কথার উত্তর থাকে তোমার কাছে, তাই না?”
স্পৃহা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,” হ্যাঁ থাকে। আপনার মতন বোকারাম নাকি আমি।”
জিম তীব্র বিরক্তি নিয়ে তাকালো তারপর বললো,” কি জন্যে এসেছো?”
স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বললো,” আমার একটা প্রশ্নের উত্তর লাগবে।”
জিম আড় চোখে তাকালো। এই মেয়ের আবার কি প্রশ্নের উত্তর লাগবে। জিম গম্ভির গলায় বললো,” মানে?”
স্পৃহা সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে এলো। এগিয়ে এসে নিজের কোমড়ে দুই হাত দিয়ে বললো,” আরোহী কে বলুন তো? আবরার ফাইয়াজের প্রথম ওয়াইফ?”
জিম চমকে তাকালো। কি বলছে এই মেয়ে। জিম দৃষ্টি আরো গম্ভির করে বললো,” এই নাম তুমি কি করে জানো?”
স্পৃহা রেগে গিয়ে বললো,” নাম না জানার কি আছে? সারা বাড়িতে যার আঁকা ছবি দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে তার নাম জানা কি খুব কঠিন কোনো কাজ?”
জিমের কপালে ভাজ পড়লো। সবকিছু কি তাহলে জেনে গেছে স্পৃহা।নাকি অল্পতেই এমন রিয়েক্ট করছে। স্পৃহা জিমকে চুপ করে থাকতে দেখে রেগে গেল তারপর বলল,” কি হয়েছে চুপ করে আছেন কেনো? আমার বোনকে ভালো না বাসলে বিয়ে করেছে কেনো এই লোকটা? আপনি তো সব জানেন। বলুন আমার আপুকে কেনো বিয়ে করেছে এই লোকটা?”
স্পৃহার ব্যাবহারে জিম অবাক হয়ে তাকালো। কিসব ভেবে বসে আছে এ মেয়ে। জিম একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” আমাকে প্রশ্ন করছো কেনো? অভিযোগ যার নামে তাকে গিয়েই করো।”
স্পৃহা আরো এগিয়ে এসে বলল,” তার মানে আপনি কিছু বলবেন না। তাই তো?”
জিম হা সূচক মাথা নাড়লো। স্পৃহা রাগে গজগজ করতে করতে বললো,” ঠিক আছে বলতে হবে না আপনাকে। আমি নিজেই খুঁজে বের করবো। আমি কি কম নাকি?” বলেই সামনের পানি ভর্তি জগটা হাতে নিয়ে সামনে ছুড়ে মারতেই জিম সরে দাঁড়ালো আর তার ফল স্বরূপ সব পানি গিয়ে জিমের বিছানায় পড়ল। ভিজে একাকার হয়ে গেলো সব।
জিম হতবাক হয়ে স্পৃহার দিকে তাকালো। কোনো মানে হয় এইসবের? স্পৃহা জগটা টেবিলে রেখে বললো,” যতদিন না আমি সবটা জানছি। আমি এই বাড়িতেই থাকবো, আর আপনার জীবনে এই ভাবেই কালবৈশাখী ঝড় আনবো বলে রাখলাম।” বলেই চলে যেতে নিলো।
জিম পরক্ষনেই শক্ত করে স্পৃহার হাতের কব্জি ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। তারপর কঠিন চোখে তাকিয়ে বললো,” কোথায় যাচ্ছো? যা ড্যামেজ করেছো সেটা তো তোমাকেই ঠিক করতে হবে।”
স্পৃহা অগ্নি কণ্ঠে বললো,” কিচ্ছু ঠিক করবো না। এই ভিজে বিছানায় আপনি ঘুমাবেন।” জিম স্পৃহার হাত শক্ত করে চেপে বললো,” তুমি কি ভেবেছো? এইসব করে তুমি আরামে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাবে? আমিও দেখি এইগুলো না গুছিয়ে তুমি কি করে এই রুমের বাইরে যাও?”
[ #চলবে ]
#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_২২
#নবনী_নীলা
জিম স্পৃহার হাত শক্ত করে চেপে বললো,” তুমি কি ভেবেছো? এইসব করে তুমি আরামে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাবে? আমিও দেখি এইগুলো না গুছিয়ে তুমি কি করে এই রুমের বাইরে যাও?”
স্পৃহা রেগে গিয়ে কটমট করে তাকালো তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,” একদম অসভ্যতামি করবেন না হাতটা ছাড়ুন বলছি। নয়তো চিৎকার করে আপনার মান-সম্মান উড়িয়ে দিবো।”
জিম আরো শক্ত করে স্পৃহার হাতটা চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। স্পৃহা হতবাক হয়ে তাকালো। কি আশ্চর্য! আজকে হঠাৎ লোকটা এমন করছে কেনো? স্পৃহা একটা ঢোক গিলল তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” বলেছি তো, আপনি আমাকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যদি উত্তর দেন তাহলে আমি যা বলবেন তাই করবো আর যদি সেটা না পারেন তবে এই যে বিছানায় ভিজিয়ে দিয়েছি। এর পর আপনার ল্যাপটপ ভাঙবো।”
জিম চুপ করে তাকিয়ে আছে স্পৃহার সাহস দেখে প্রতিবারের মতো এবারও অবাক সে। এই মেয়ের পক্ষে কোন কিছুই অসাধ্য নয়। সত্যি সত্যি না তার ল্যাপটপ ভেঙে দেয়।
জিম ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলল তারপর গম্ভীর গলায় বলল,” তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর পারবে না তুমি। আমার রুম টা ঠিক করে দিয়ে যাও নয়তো তোমাকে এই রুমেই থাকতে হবে আজকে।
স্পৃহা ভ্রু কুচকে তাকালো লোকটা কি পাগল? তার সাথে এখানে থাকতে হবে মানে? স্পৃহা আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” পাগল টাগল হয়ে গেছেন? আমি কেন আপনার সাথে এখানে থাকতে যাবো? ভালো করেই তো জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি ভালোয় ভালোয় বলে দিলে তো আর আপনাকে এইরকম ভিজা বিছানায় ঘুমাতে হতো না। এখন আমার হাতটা ছাড়ুন।”
জিমের দৃষ্টি আগের মতোই রয়েছে। স্পৃহাকে আজ কিছুতেই ছাড়বে না সে। জিম কড়া গলায় বলল,” আমি কখন বললাম যে আমি তোমার সাথে থাকব? তুমি একা থাকবে এই রুমে। এন্ড আই উইল মেক সিওর দ্যাট তুমি এই ভিজা বিছানায় ঘুমাবে।”
স্পৃহা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো তারপর নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল। পাগল নাকি লোকটা?একাই রুমে থাকতে হবে মানে?
স্পৃহা জিমের সাথে পেরে উঠছেনা। জিম হাতের বাঁধন ছিল আরো দৃঢ় করতেই স্পৃহা দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে তাকালো। তারপর অগ্নি কন্ঠে বলল,” আপনি হাতটা ছাড়বে না তাই তো? আমি কিন্তু শেষবারের মতো প্রশ্ন করছি।”
জিন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলো তারপর বলল,” তুমি আমাকে ঠিক চিনো না। আমি যেটা বলেছি সেটা করেই ছাড়বো ইউ হ্যাভ টু স্টে।”
স্পৃহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো তারপর বলল,” আপনিও না আমাকে চেনেন না বুঝেছেন? এত সহজ না…..” বলেই জিমের হাতে মুহূর্তে সজোরে কামড় বসালো স্পৃহা। জিম দাঁতে দাঁত চিপে নিজের হাতের দিকে তাকালো। তারপর হাতটা সরিয়ে আনতেই সে সুযোগে স্পৃহা দৌড়ে পালিয়ে গেল।
জিম রাগে কটমট করে তাকিয়ে রইল কেনো যে মেয়েটা তার পিছনে পড়ে আছে সে বুঝতে পারে না। মানে তার রুমে এসে তার বিছানা পানি দিয়ে ভিজিয়ে তো দিয়েছে এখন আবার কামড় দিয়ে চলে গেল। কি অবস্থা একটা মেয়ে জিম জুবায়েদকে এমন নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে কল্পনাও করেনি সে।
______________
“আচ্ছা অভ্র “, স্নিগ্ধার ডাকে অভ্র একবার তাকালো তার দিকে। পরক্ষনেই তার মনে হলো আজ তো তার নাম জিয়ান। মামনি তাকে অভ্র ডেকেছে, এই ডাকে তার সাড়া দেওয়া ঠিক হয় নি। অভ্র নিজের আঁকিবুকি করাতে মন দিলো। স্নিগ্ধা অভ্রকে আবারো ডাকলো। অভ্র আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার আঁকিবুকি করতে লাগলো। তাকে জিয়ান নামেই ডাকতে হবে।
স্নিগ্ধা জানে না আজ অভ্রর কি নাম। কিভাবেই বা জানবে? অভ্র তো আর গলায় সেই নাম লিখে ঝুলিয়ে রাখে না।নিজের মনে যখন যা আসে তাই করে।
স্নিগ্ধা একটু হাসলো তারপর অভ্রর কোমড়ের পাশে গুতো দিতেই সে আড় চোখে তাকিয়ে বড়দের মতন স্নিগ্ধার হাত সরিয়ে দিলো। স্নিগ্ধা আরো কয়েকবার এমন করতেই অভ্র হেসে লুটোপুটি খেতে লাগলো আর বললো,” তুমি আমার সাথে দুষ্টুমি করছো কেনো?” স্নিগ্ধার থেকে বাঁচা এখন তার একমাত্র লক্ষ্য।
অভ্র দুটো বালিশ জড়িয়ে ধরলো দুপাশে যাতে স্নিগ্ধা তাকে সুড়সুড়ি দিতে না পারে।
হাসতে হাসতে অভ্রর ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। স্নিগ্ধা ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” তুমি কি ভেবেছো? আমার হাত থেকে তুমি এত সহজে ছাড় পাবে?”
অভ্র খিলখিল করে হেসে উঠে বললো,” নাহ্। আমার অনেক হাসি পায়। এমন করো না।”
স্নিগ্ধা হা সূচক মাথা নাড়লো তারপর বললো,” আচ্ছা করবো না। তাহলে আমার কাছে আসো।”
অভ্র না সূচক মাথা নাড়লো তারপর বলল,” না তুমি আবার আমাকে হাসাবে।” সুড়সুড়ি শব্দটার সাথে অভ্রর পরিচয় নেই তাই এইভাবেই সে ভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করছে।
স্নিগ্ধার হেসে উঠে বলল,” না আই প্রমিস আমি করব না। তোমাকে আর হাসাবো না এদিকে আসো।”
অভ্র ছোট ছোট পা ফেলে স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে এলো। এগিয়ে আসতেই স্নিগ্ধা অভ্রের হাত খপ করে ধরে একদম নিজের কোলে টেনে নিয়ে এলো তারপর নিজের কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা অভ্র তোমার আমাকে কেমন লাগে?” অভ্র আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” আগে আমাকে জিয়ান বলো তাহলে বলবো।”
স্নিগ্ধা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,” আচ্ছা ঠিক আছে জিয়ান। এবার হয়েছে? এখন বলো, আমাকে তোমার কেমন লাগে?”
অভ্র ছোট্ট দুটি হাতে স্নিগ্ধার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,” অনেক ভালো লাগে তুমি যখন ছিলে না তখন আমি একা একা থাকতাম আমার ভালো লাগত কিন্তু এখন আমার অনেক ভালো লাগে।”
স্নিগ্ধা অভ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল তারপর বলল,” আচ্ছা! আমাকে তোমার ভালো লাগে তাইনা? কতটা ভালো লাগে?”
অভ্র নিজের দুই হাত মেলে দেখালো এতটা। স্নিগ্ধা একটু থমকে গেল মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগছে। সে ঘাড়টা একটু কাত করে অভ্রর দিকে তাকালো। তারপর বলল,” তোমার আম্মুর থেকেও বেশি ভালো লাগে?”
প্রশ্নটা করে যেনো নিজেই থমকে গেল সে।
যদি উত্তরে অভ্র বলল না। এটাই তো স্বাভাবিক, তাই নয়? নিজেকে নিজে কেন এত কষ্ট দিতে চাইছে সে? আদিলের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষকে অভ্র সব চাইতে বেশি ভালবাসবে এটাই তো সত্য।
কিন্তু স্নিগ্ধাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে অভ্র বলল,” হ্যাঁ!” স্নিগ্ধার ঘোর কাটলো চোখের পাতা ফেলে তাকালো তারপর বললো,” মানে আমাকে তোমার আম্মুর থেকেও বেশি ভালো লাগে?”
অভ্র মন খারাপ করে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। স্নিগ্ধা দুইহাতে অভ্রর গাল দুটি আদর করে ধরে বলল,” কেন?”
একটু মায়া হচ্ছে তার। আচ্ছা এই আরোহী সে কি বেঁচে নেই? বেচে থাকলে কি করে পারলে এমন ফুটফুটে একটি বাচ্চাকে ফেলে যেতে মায়া হয়নি তার? অভ্র গাল ফুলিয়ে বলল,” আম্মুর তো শুধু ছবি দেখেছি। আম্মু তো কখনো আমার কাছে আসেনি। আদর ও করেনি। কিন্তু দাদু বলেছে আম্মু নাকি এঞ্জেল। তাই আমি দেখতে পাই না।”
স্নিগ্ধা নিজের কোলে অভ্র কে জড়িয়ে ধরলো। কথাগুলো শুনে তার ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠলো।
আদিলের উপর গতকাল রাতে তার অনেক অভিমান হয়েছিল শুধু অভিমান হয় রাগ হয়েছিলো। রাগ অভিমান হলে সে সেটা প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু এখন অভিমানের রেশটা যেনো একটু কেটে গেছে।
__________
আদিল প্রায় আধ ঘণ্টা আগে এসে বসে আছে। জিমকে পাশের টেবিলে বসতে বলেছে সে যাতে দূর থেকে পুরো বিষয়টা জিম তদারকি করতে পারে। মূলত ফাইভ স্টার হোটেলের এই পুরো ফ্লোরটা বুক করা হয়েছে প্রাইভেসির জন্য।
তবুও আদিল এদেরকে বলে রেখেছে পাঁচ থেকে ছয় জন মানুষকে ভিতরে আসার পারমিশন দিতে কারন জিমকে একা বসে থাকতে দেখলে সুনেয়রা সন্দেহ করতে পারে। রাত আটটায় ডিনারের জন্য ইনভাইট করা হয়েছে সুনেয়রাকে। আটটা বেজে সাত মিনিটে তার গাড়ি হোটেলের সামনে এসে থামলো।
ব্যাকলেস রেড রঙের একটি শর্ট গাউন পড়ে বেরিয়ে এলো সে। সঙ্গে সিলভার রঙের হাই হিল আর চুলগুলো পনি টেইল করে বাঁধা। কম সুন্দরী সে নয় তার মা ছিলেন আমেরিকান একজন নারী তাই বলাই বাহুল্য সৌন্দর্যের দিক থেকে তার কোনো কমতি নেই।
সুনেয়রা আদিলকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো তারপর পাশের চেয়ারে বসতে বসতে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,” সরি!বেশি দেরী করে ফেললাম নাকি মিস্টার আবরার ফাইয়াজ?”
আদিল না সূচক মাথা নাড়ল তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,” আমি আগেই চলে এসেছি তাই সরি বলার কোন প্রয়োজন নেই আই গেস আপনার এখানে আসতে কোন অসুবিধা হয়নি।”
সুনেয়রা আবরারকে দেখে এত অভিভূত হয়েছে যে চোখ সরাতে পারছে না। এতদিন পেপারে নিউজ আবরারকে দেখেছে সে কিন্তু কখনো সামনাসামনি দেখা হয়নি।
সুনেয়রা হেসে বলল,” দেশের বাইরে ছিলাম তার মানে এই না যে কিছুই চিনি না। যদিও আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এই রেস্টুরেন্টটা অনেক দূরে কিন্তু আপনার সাথে দেখা করতে এতদুর আসাটাও তেমন বড় কিছু না।”
সুনেয়রা নিজের পার্সটা টেবিলের পাশে রেখে বলল,” ফাহাদ রেজওয়ান আই মিন আমার হাজব্যান্ড সেই ব্যাপারেই তো আপনি আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন যদি আমি ভুল না করি।”
আদিল সহজ ভাবে তাকিয়ে থাকলেও সুনেয়রার এসেই প্রথমে এই প্রশ্নটা করায়, তাকে একটু ভাবিয়ে তুলছে। সহজেই বিশ্বাস করা যাবে না। ফাহানের ব্যাপারে কোন কিছুই এখন বলা যাবেনা। আগে তো দেখতে হবে মেয়েটা কতটা বিশ্বস্ত।কারণ আদিল নিশ্চিত ফাহাদ যদি কোনো ভাবে জানতে পারে অভ্র তার সন্তান তাহলে। তাহলে অভ্রর মারাত্বক ক্ষতি করতেও পিছ পা হবে না। তাই আরোহীর মৃত্যুর কথাটা সবকিছুই তাকে লুকিয়ে রাখতে হবে।
আদিল একটু হাসলো তারপর বলল,”সবে তো পরিচয় হয়েছে এইসব টক্সিক কথাবার্তায় আমারা না হয় একটু পরেই গেলাম।
আদিলের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে আজকে সে সুনায়রার সব প্রশ্নই এড়িয়ে গেছে। কারণ এতো সহজে মেয়েটাকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিশ্বাস করতে পারলে গেমটা একভাবে খেলতে হবে, আর অবিশ্বাস করলে গেমটা খেলতে হবে আরেক উপায়ে। তাই অবিশ্বাস করে এগিয়ে যাওয়াটাই শ্রেও।
কথা শেষ হতে হতে প্রায় রাত অনেক হলো। আজকের প্রাথমিক কথাবার্তা শেষে সুনেয়রা বেরিয়ে গেল। যদিও সে আরো কিছুক্ষণ থাকতে চেয়েছিল কিন্তু আদিলের ছোট্ট একটা মিথ্যা কথা যার কারণে আদিলের প্রতি নিজের কন্সার্ন দেখিয়ে সে চলে গেলো।
সুনেয়রা চলে যেতেই আদিল টেবিলের দুই হাত একত্রে মুষ্টিবদ্ধ করলো । জিম বেশ চিন্তিত মুখে উঠে দাড়াল তারপর আদিলের পাশের চেয়ারে বসলো। ক্ষীনস্বরে বলল,” তেমন কিছুই তো হলো না যেমনটা আপনি চেয়েছেন। কিছু জিজ্ঞেস করলে না কেনো?”
আদিল কঠিন স্বরে বললো,” ফাহাদ আর সুনেয়রার এই সম্পর্কটা একটা চুক্তি। নিজেদের স্বার্থেই এই নাটককে মেতে আছে ওরা। আমি তো ভেবেছিলাম আমার বোনকে ও ঠকিয়েছে অন্য কাউকে ভালোবেসে কিন্তু না ক্ষমতার লোভে সে আমার বোনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।” বলেই সজোরে টেবিলে আঘাত করতেই কাচের গ্লাস গুলো পরে গিয়ে চুর্ন বিচূর্ণ হয়ে গেছে। রক্ত বর্ন চোখে তীব্র রাগ সে বললো,” ফাহাদ রেজওয়ানের এমন অবস্থা করবো আমি। ও নিজেই নিজেকে শেষ করে ফেলবে।”
[ #চলবে ]