#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_২৩,২৪
#নবনী_নীলা
২৩
ঘুমে আচ্ছন্ন চোখ খুলে তাকাতেই স্নিগ্ধা কারোর আবছা চেহারা দেখতে পেলো। চোখের পাতা কয়েকবার ফেলে পুনরায় তাকাতেই দেখলো আদিলকে। আদিল খুব মনোযোগ দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বিষয়টা বুঝতে তার একটু বেগ পেতে হলো। আদিলকে এভাবে নিজের উপর দেখে হতভম্ব হয়ে তাকালো সে।
চোখ বড় বড় করে উঠে বসতে যাবে তখনই আদিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর স্নিগ্ধার দুই বাহু ধরে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
স্নিগ্ধা ভরকে গিয়ে তাকালো, বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল,” আপনি! আপনি কি করছেন …….? বাকিটা বলার আগেই আদিল তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো তারপর বলল,” একদম নড়বে না যেভাবে আছো ওইভাবে থাকো।”
স্নিগ্ধা ভ্রূ কুচকে বলল,” না! না আমি এভাবে থাকতে পারবোনা। আপনি সরুন আমার উপর থেকে।”
আদিল স্নিগ্ধার কথায় একচুলও নড়লো না। উল্টে স্নিগ্ধার গালের কাছে হাত বাড়ালো। স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে তাকালো, আদিলের কাজ কারবার সে ঠিক ধরতে পারছে না। কি করতে চাইছে আদিল? স্নিগ্ধার বুকের ভিতরে ধুক পুক শুরু হলো। সকাল সকাল এ কেমন বিপদে পড়লো সে?
আদিল খুব মনোযোগ দিয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে যার কারণে স্নিগ্ধার ভয়টা আরো বাড়ছে। স্নিগ্ধাকে হঠাৎ এত ভয় পেতে দেখে আদিলের মনে একটা দুষ্ট বুদ্ধি জাগলো। আদিল নিচের ঠোঁট কামড়ে তার দিকে আরেকটু ঝুকে আসতেই স্নিগ্ধা মুখ ফিরিয়ে চোখ মুখ কুচকে বন্ধ করে ফেললো।
ডান গালে আদিলের হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো স্নিগ্ধা। সাড়া শরীর শিউরে উঠছে এই সামান্য স্পর্শে।
আদিল স্নিগ্ধার চোখের নিচে পড়ন্ত পাপড়িটি হাতে নিলো, উদ্দেশ্য তার এটাই ছিল বটে কিন্তু এখন মনে অন্য ইচ্ছা জাগছে তার। আদিল স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো তারপর আরেকটু ঝুকে আসতেই স্নিগ্ধা ফট করে চোখ খুলে তাকালো। তাকাতেই সে বুঝতে পারলো আদিল তার একদম কাছে চলে এসেছে। স্নিগ্ধা বিভ্রান্ত হয়ে বললো,” কি করছে আপনি?”
স্নিগ্ধার এই বিভ্রান্ত মুখ আদিলের ভালো লাগছে। সে মৃদু হেসে বললো,” কিছু করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না বাট আই চেঞ্জ মাই মাইন্ড।” বলেই স্নিগ্ধার গালে হাত ডুবিয়ে দিলো তারপর শীতল কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,” কিছু করলে কেমন হয়?”
স্নিগ্ধা কড়া চোখে তাকালো যেন এক্ষুনি আদিল কে সে গিলে খেয়ে ফেলবে। স্নিগ্ধা সামান্য ভয় ও পেলো তারপর নিচু গলায় বলল,” একদম ভালো হয় না। আপনি কিছু করবেন না। সরুন বলছি, আমাকে যেতে দিন।”
বলেই আদিলকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হল না আদিল স্নিগ্ধার দুই হাত চেপে ধরল তারপর ফিচেল গলায় বলল,” যখনই আমি তোমার কাছাকাছি থাকি তুমি সবসময় একটাই প্রশ্নই করো আপনি কি করতে চাচ্ছেন? আপনি কি করছেন? তাই ভাবছি আজ না হয় সেটা করেই দেখাই।”
স্নিগ্ধা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,” আজই করে দেখাই মানে?” আদিল উত্তরে কিছু বলল না গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল। স্নিগ্ধা একটা ঢোক গিলে বিছানার চাদর মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। আদিল তার একদম কাছে চলে আসতেই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো তার কিন্তু স্নিগ্ধাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে আদিল তার কপালে অধর ছুঁয়ে দিলো।
স্নিগ্ধা বিস্ময় নিয়ে তাকালো। আদিলের ঠোঁটের মৃদু হাসি তাকে বেশ অপ্রস্তুত করল এলোমেলো দৃষ্টিতে সে এদিক ওদিক তাকালো। আচ্ছা তাহলে কি সে এমন উল্টা পাল্টা জিনিস চিন্তা করে? নাকি আদিল ইচ্ছে করে তাকে জ্বালানোর জন্যে সবসময় তাকে এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হলো স্নিগ্ধার।তার বিস্মিত চেহারা রাগান্বিত হয়ে গেলো। আদিলের চোখে মুখে বিজয়ের হাসি। স্নিগ্ধার প্রচন্ড রাগ লাগছে। আদিল নিচের ঠোঁট কামড়ে বললো,” মনে হচ্ছে তুমি রেগে গেলে।” স্নিগ্ধা দাতে দাঁত চিপে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো।আদিল স্নিগ্ধার মুখের কাছে মুখ এনে বললো,” তুমি কি অন্যকিছু এক্সপেক্ট করছিলে নাকি?” আদিলের ঠোঁটের কোণায় দুষ্ট হাসি দেখে স্নিগ্ধার রাগ আকাশ ছুঁয়েছে।
স্নিগ্ধা মাথা উচুঁ করে আদিলের মাথার সাথে জোরে একটা বাড়ি দিতেই আদিল অবাক হয়ে তাকালো। আর এই সুযোগে স্নিগ্ধা আদিলকে সরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। আদিল বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে হেসে উঠতেই স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস ফেললো। নিজেকে নিজে একটা চর মারতে ইচ্ছে করছে। স্নিগ্ধা আদিলের দিকে তাকিয়ে বির বির করে বললো,” অসভ্য।” বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
স্নিগ্ধা বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নামার সময় একজন স্টাফকে ব্যাস্ত হয়ে নিচে নেমে যেতে দেখলো।নতুন এসেছে মনে হয় কারণ এর আগে তো একে সে দেখেনি মনে হচ্ছে। কিন্তু এমন ব্যাস্ত হয়ে পালিয়ে গেলো কেনো লোকটা?
__________________
জিম নিজের রুমেই থাকে বেশির ভাগ সময়ে। হটাৎ রুম থেকে বেরিয়ে এসে সে একটু অবাক হয়ে গেলো। কারণ এই বাড়িতে সাধারণত এতো মানুষ দেখার অভ্যাস নেই তার। স্নিগ্ধার মা বাবা , আনোয়ার সাহেব সবাই মিলে গল্প করছে। একপাশে স্পৃহা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আদিল বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছে। স্নিগ্ধা আর অভ্র কিচেনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে রান্না দেখছে।
জিমের দরকারি কথা আছে। এই অবস্থায় সে কি করে কথাটা বলবে। জিম চুপচাপ গিয়ে আদিলের পিছনে দাড়ালো। আদিল জিমকে খেয়াল না করলেও স্পৃহা ঠিকই করেছে। জিমকে দেখেই সে চোখ মেরেছে। যদিও জিম চোখ মুখ শক্ত করে এমনভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো সে কিছুই দেখেনি। জিমকে জ্বালাতন করে স্পৃহা ভালোই বিনোদন পাচ্ছে নয়তো এদের কথা বার্তা শুনে তার বিরক্তির সীমা ছিলো না। স্পৃহার ঠোঁট চেপে ধরে হাসি আটকানোটা আদিলের চোখে পড়তেই আদিল ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ঘাড় ঘুরিয়ে জিমকে দেখলো। জিমকে দেখে স্পৃহা এইভাবে হাসছিল তাহলে?
আদিলকে জিম চোখে ইশারা করে এক পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।আদিল ভ্রু কুঁচকে উঠে দাড়ালো তারপর একটা পকেটে হাত ভরে এগিয়ে এলো। তারপর আসে পাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কি হয়েছে?”
” সুনেয়রা আপনাকে তার ফার্ম হাউজে ইনভাইট করেছে।”,জিমের কথা শুনে আদিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপর একটু চিন্তা করে বললো,” আজ!” উত্তরে জিম হা সূচক মাথা নাড়লো। আদিল বিরক্তি নিয়ে বললো,” হটাৎ নিজের ফার্ম হাউজে কেনো? আর আজ আমার পক্ষে যাওয়া পসিবল না।”
আদিলের এমন কথায় জিম একটু হাসলো তারপর বললো,” মেবি মিস সুনেয়রা আপনার প্রতি দূর্বল।” কথাটা শুনে আদিল বিরক্তি নিয়ে ঠোঁট বাকালো।
কিন্তু হটাৎ স্নিগ্ধার কন্ঠে আদিল পাশে তাকালো। স্নিগ্ধা বেশ রেগে আছে মনে হলো। জিম আর আদিলের মুখের হাসি উড়ে গেলো। স্নিগ্ধা ওদের কথাবার্তার আংশিক কিছু শুনেছে আর সুনেয়রা আদিলের প্রতি দূর্বল এইটুকু শুনে সে আনমনেই রেগে গিয়ে বলে উঠলো,” সুনেয়রা কে?”
কিন্তু এইভাবে হটাৎ বলে উঠায় সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। আদিল স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,” তুমি আমাদের কথা শুনছিলে?”
স্নিগ্ধা তীক্ষ্ণ গলায় বললো,” জ্বি না।মোটেও আমি কথা শুনছিলাম। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন শুনেছি একটু। কেনো? খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে আপনার?” আদিলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে স্নিগ্ধা দাতে দাত চেপে আরো বললো,” খুব জরুরি কথা বলছিলেন তাই না? হুম। সেসব শুনে ফেলে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছি। দুঃখীত আমি।” বলেই রেগে ফুলতে ফুলতে চলে গেলো। আদিল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কি হলো ঘটনাটা? হটাৎ এমন অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো কেনো স্নিগ্ধা?
জিম আর আদিল একে ওপরের মুখ চাও়াচাওয়ি করলো। জিম কোমল গলায় বললো,” মনে হয় ওনার হিংসে হচ্ছে।” কথাটা শুনে আদিল একটা ভ্রু তুলে তাকালো। তারপর ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি থামিয়ে জিমের সাথে হ্যান্ডশেক করে বললো,” তাহলে আজকে আমি অবশ্যই যাবো।”
__________________
স্নিগ্ধা রুমে ঢুকতেই তার মেজাজ গরম হয়ে গেলো। আদিল যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছিলো। আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত দিয়ে সামনের চুলগুলো পিছনে সরিয়ে নিতে ব্যাস্ত সে। স্নিগ্ধা দাতে দাঁত চিপে মনে মনে বির বির করে বললো,” ইচ্ছে করছে চুলগুলো একদম কাচি দিয়ে কেটে দেই। এনার চারপাশে খালি সারাক্ষণ সব মেয়ে ঘুর ঘুর করে। আর উনিও দাত কেলিয়ে কেলিয়ে যায়। ঐ রাক্ষসীকে হাতের কাছে পেলে মজা বুঝিয়ে দিতাম।”বলেই মুখ বাঁকিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। স্নিগ্ধা চলে যেতেই আদিল ফোঁস করে হেসে উঠলো। যাক মহারানিকে আজ একটু জব্দ করা যাবে। আদিল বেশ ভালো একটা বুদ্ধিও ভেবে রেখেছে।
স্নিগ্ধা অভ্রের রূমের দিকে যাচ্ছিল তখন জিমকে দেখে সে তীক্ষ্ণ চোখে জিমের দিকে তাকালো। জিম একটু হতবাক হয়ে তাকালো।সে কি করেছে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো স্নিগ্ধা?
স্নিগ্ধা অভ্রর রুমে এসে দেখলো সেই নতুন লোকটি অভ্রর রুমে কি যেনো খুঁজছে। অভ্র রুমে নেই। স্নিগ্ধার অদ্ভূত লাগলো বিষয়টা। সে এগিয়ে এসে বলল,” কি করছেন আপনি এই রুমে?”
লোকটা একটু ঘাবড়ে গেল। আবার বললো,” রুমটা গুছিয়ে দিতে এলাম।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বললো,” মিথ্যে বলছেন কেনো? এই রুমে তো কোনো স্টাফের আসার অনুমতি নেই। আপনি কার অনুমতিতে এসেছেন?”
লোকটা আরো ঘাবড়ে গিয়ে বললো,” আমি তো নতুন, তাই বুঝতে পারিনি। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।”বলেই স্নিগ্ধাকে পাশ কাটিয়ে সে চলে গেলো। স্নিগ্ধার কেনো জানি লোকটাকে সুবিধার মনে হলো না।
নতুন লোক রাখার হটাৎ কি প্রয়োজন পড়লো এদের? লোকটার চোখে মুখেই কেমন একটা ভয় কাজ করছে? নাকি সবটাই স্বাভাবিক, সে বেশি বেশি ভাবছে।
( #চলবে )
#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_২৪
#নবনী_নীলা
” ফাহাদের অতীতের সবটা জানবো বলেই আমি দেশে ফিরে এসেছি। নয়তো এইখানে ফিরে আসার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না।”, খুব কঠিন গলায় বললো সুনেয়রা।
” বাট আই চেঞ্জ মাই প্ল্যান।তোমাকে আমি কিছু বলছি না। যা বলার আমি তোমার বাবা মানে আফজাল সাহেবের সাথে শেয়ার করতে চাই।” আদিল শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
সুনেয়রা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। হাতে থাকা রেড ওয়াইনের গ্লাসটা টেবিলের একপাশে রেখে বললো,” কিন্তু তুমি আমাকে সবটা বলবে বলেছিলে। তার মানে কি তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না?”
” তোমার কি মনে হয়? তুমি কি সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছো? যেখানে ফাহাদ আর তোমার সম্পর্কটাই আমার কাছে ক্লিয়ার হয় নি। সেখানে তোমাকে বিশ্বাস করাটা কি বোকামি না?” তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো আদিল।
সুনেয়রা একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বললো,” ঠিক আছে কি জানতে চাও বলো। আমি তোমাকে সব বলছি।”
আদিল তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,” ফাহাদের সাথে তোমার কি করে বিয়ে হলো? আমার জানা মতে অবৈধ কাজে জড়িত থাকায় ওর শাস্তি হয়েছিলো। ”
” হ্যা, হয়েছিল কিন্তু বাবা ওকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর থেকেই ও বাবার সাথে কাজ করছে। আমাদের বিয়েটা হয়েছে ঠিক কিন্তু সবসময় ফাহাদ আর আমার মধ্যকার দূরত্ব দিন দিন
বেড়েছে। প্রথমে না বুঝলেও ধীরে ধীরে আমি সে সবই বুঝতে পারি। আমি ওকে ভালোবাসলেও ফাহাদ আমাকে ভালোবাসেনি।” নিচু স্বরে বললো সুনেয়রা।
” আমি তো ভেবেছিলাম আমার বোনকে ঠকিয়েছে তোমাকে ভালোবাসে বলে।”চোয়াল শক্ত করে বললো আদিল।
” তোমার বোনকে ঠকিয়েছে মানে?”, চমকে উঠে বললো সুনেয়রা।
” আমার বড় বোন আরোহী ভালোবেসে ওকে বিয়ে করেছিলো। বিয়ের পর হটাৎ সে উধাও তারপর খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে জেলখানায় বন্ধি। অবৈধ কারবারের জন্যে তাকে অ্যারেস্ট করা হয়। শুধু তাই নয় ফাহাদ আমার বোনকে ঠকিয়ে তোমায় বিয়ে করেছে শুধু ক্ষমতার লোভে। আর এই সব আঘাতের কারণেই আমি আমার বোনকে হারিয়েছি। বাকি সব আমি নাই বা বললাম। তাই যেকোনো মূল্যে আমি ফাহাদের শেষ দেখতে চাই।” বলতে বলতে হাত মুষ্টি বন্ধ করলো সে।
” ফাহাদ আর আমার মাঝে অনেক দুরত্ব ঠিকই কিন্তু ওর কোনো ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না।”, কাঠ গলায় বলল সুনেয়রা।
” তোমার চাওয়া না চাওয়াতে তো কিছু হচ্ছে না। তুমি যতই ফাহাদের প্রতি নিজের কেয়ার ভালোবাসা দেখানোর চেষ্টা করো।কিন্তু তুমি নিজে ওকে ব্যাবহার করেছো। সো ডোন্ট অ্যাক্ট লাইক ইউ কেয়ার এবাউট হিম।”,তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো আদিল।
“দেখো আবরার এই বিষয়ে আমি তোমাকে কোনো হেল্প করতে পারবো না। অ্যাম রিয়েলি সরি।”,করুন দৃষ্টিতে বললো সুনেয়রা।
” আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে। সেইজন্যে তো আফজাল সাহেবের সঙ্গে দেখা করা চাই। ওনার বিরুদ্ধে ফাহাদ যেই ষড়যন্ত্র করছে সেটা ওনাকে জানাবার সময় হয়ে এসেছে।” বলতে বলতে আদিল উঠে দাড়ালো তারপর টেবিলে এক হাত রেখে ঝুকে দাড়িয়ে বলল,” ফাহাদকে পুলিশের হাত তুলে দিতে চাইলে সেটা আমি অনেক আগেই করতে পারতাম কিন্তু আবারো কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের লোক ওকে ঠিক বের করিয়ে আনতো।শাস্তিটাই তো ওর পাওয়া হতো না। তাই ওর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা এইবার আমি নিজে করবো। তুমিও ওকে বাঁচাতে পারবে না।”
____________
বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও স্নিগ্ধা এখনো জেগে আছে। আজ কেনো জানি তার চোখে ঘুম নেই। তখন থেকে একটা বই মুখের সামনে নিয়ে বসে আছে কিন্তু আজ বই পড়ায় তার মন বসছে না। স্নিগ্ধা রেগে বইটা বন্ধ করে ফেললো। তারপর ঘড়ির দিকে তাকালো। বেশ রাত হয়েছে।
মানে ওই শাকচুন্নির সাথে দেখা করতে গিয়েছে তো উনার ফেরার নাম নেই। সারাদিন তার পিছু পিছু আর যখন তাকে প্রয়োজন তখনই সে উধাও। কি এমন কথা সেই মেয়ের সাথে যে এতো রাতে বাড়ির বাইরে থাকতে হবে।
কিছু বলাও যায় না বললেই জিলাপির মতন কথা পেচাতে থাকে। নাহ্ বউ থাকতে এতো রাতে বাইরে থাকবে কেনো সে?
আজকে আসুক একবার এই রুমেই জায়গা দিবে না সে। একদম রাত করে বাইরে থাকা ছুটিয়ে দিবে। আজ লোকটা স্নিগ্ধা তাসনিমের আসল রূপ দেখবে। অসভ্য একটা ছেলে। যতই হোক তারই তো বর। তার রাগ হবে না? অবশ্যই হবে। মেয়েরা নিজেদের বরের ব্যাপারে একটু বেশি পসেসিভ হয়। যতই বর তাদের পছন্দের হোক কিংবা অপছন্দের।
স্নিগ্ধা আবারো ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত একটা বাজে কিন্তু দেখো কোনো হদিস নেই লোকটার। স্নিগ্ধা উঠে দাড়ালো। তারপর ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় পা তুলে বসে রইলো। আজ এই রুমে আদিলের জায়গা হবে না। যেখানে ছিল সেখানেই থাকুক সে।
______________
আদিল নিজের রুমের সামনে এসে বেশ অবাক হলো। দরজা বন্ধ কেনো? ভিতরে কি কেউ আছে নাকি দরজা লক হয়ে গেছে? লক হয়ে গেলে তো মুশকিল কারণ লকের চাবি তো তার কাছে নেই। আদিল অভ্রর রুমে এসে একবার দেখলো। স্পৃহা আর অভ্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। স্পৃহা আর অভ্র এইখানে তাহলে স্নিগ্ধা কোথায়? রূমের ভিতরে নাকি! আদিল একটু অবাক হলো ব্যাপারটা ভেবে। স্নিগ্ধা দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি? কখনো তো এমন করে না।
আদিল সারা বাড়িতে খুঁজে দেখলো স্নিগ্ধা কোথাও নেই। তাহলে কি তার ধারণাই সঠিক? আদিল রূমের সামনে দাড়িয়ে আছে। নক করবে কিনা বুঝতে পারছে না। স্নিগ্ধা যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে ঘুম ভাঙ্গানো ঠিক হবে না।
জিম নিজের রুমে যাওয়ার সময় আদিলকে এইভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বললো,” দরজা কি লক হয়ে গেছে?”
আদিল না সূচক মাথা নাড়লো তারপর বললো,” দাড়াও দেখছি।” বলেই দরজায় দুবার নক করলো। কোনো সাড়া শব্দ নেই। কিন্তু তৃতীয় বার নক করতেই স্নিগ্ধা বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলে উঠলো,” কি সমস্যা? বার বার নক করছেন কেনো? সবাই কি আপনার মত রাত জাগা পেঁচা নাকি! যে রাত জেগে বেড়াবে? আজকে আমি দরজা খুলবো না। যান যেখানে ছিলেন ঐখানেই যান। এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি এলেন কেনো?”
স্নিগ্ধার এমন কথা জিম আদিল একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। আদিল ভ্রূ কুচকে দরজার দিকে তাকালো। স্নিগ্ধার রাগের কারণ বুঝতে পেরে মুহূর্তেই ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি থামিয়ে জিমের দিকে তাকালো। জিম সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকালো।
স্নিগ্ধা রাগে ফুলতে লাগলো। সে যে এতো কথা বললো লোকটার কোনো সাড়া শব্দ আছে? তাহলে কি সত্যি সত্যি চলে গেছে নাকি? এরপর তো আর নক করলো না। স্নিগ্ধার ভাবনার মাঝেই আবারো দরজায় টোকা পড়লো। স্নিগ্ধা উঠে দাড়ালো তারপর ভ্রু কুঁচকে আওয়াজ দিয়ে বললো,” কে? ”
দরজার ওপাশ থেকে জিমের আওয়াজ কানে ভেসে আসলো। জিম উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলছে,” দরজাটা খুলুন।”
স্নিগ্ধা কড়া গলায় বললো,” আপনি কি সুপারিশ করতে এসেছেন নাকি? শুনুন এইসবে লাভ হবে না। আমি আজকে দরজা খুলবো না।থাকুক উনি বাইরে।”
জিম ক্লান্ত গলায় বললো,” স্যারের অবস্থা ভালো না। প্লীজ দরজাটা খুলুন।”
স্নিগ্ধার বুকের ভিতরে ধুক করে উঠলো জিমের কোথায়। অবস্থা ভালো না মানে? এইজন্যেই কি আদিল তার কথার জবাব দেয় নি। স্নিগ্ধা ব্যাস্ত হয়ে দরজা খুললো। দরজা খুলতেই স্নিগ্ধা দেখলো জিম আদিলকে ধরে রুমে ভিতর নিয়ে এলো। বেশামাল হয়ে পড়েছে আদিল। স্নিগ্ধা ব্যাস্ত হয়ে আদিলকে ধরলো তারপর বিছানায় শুইয়ে দিলো কোনোভাবে।
স্নিগ্ধা ভয়ার্ত গলায় বললো,” কি হয়েছে ওনার?” জিম শান্ত গলায় বললো,” ভুলে মাশরুম সুপ খেয়ে নিয়েছেন। মাশরুমে আবার ওনার সমস্যা আছে। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই আমি মেডিসিন পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
স্নিগ্ধার চোখ মুখে চিন্তা স্পষ্ট। জিম রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই সে ব্যাস্ত হয়ে আদিলের পাশে এসে বসলো। জিম যাবার সময় দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দিল।
স্নিগ্ধা ব্যাস্ত হয়ে আদিলের কপাল আর গলায় হাত দিয়ে দেখতে লাগলো আসলেই কিছু হয়েছে নাকি। আদিল খুব ধীরে নিজের চোখ খুললো তারপর অস্পষ্ট সুরে বলল,” পানি।”
স্নিগ্ধা ব্যাস্ত হয়ে বললো,” আচ্ছা আমি আনছি।” বলেই সে উঠে পড়ল তারপর টেবিল থেকে গ্লাসে করে পানি নিয়ে এসে আদিলের মাথার কাছে বসলো। আদিলকে খুব যত্নে নিজের বাহুতে জড়িয়ে ধরে বসালো তারপর পানি খাইয়ে দিলো। হটাৎ এমন অসুস্থ হয়ে পড়লো কেনো আদিল।
আদিল ভিতরে আসার উপায় পেয়েছে ঠিকই কিন্তু সে স্নিগ্ধার হাত স্পষ্ট কাপতে দেখছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন স্নিগ্ধা ঘাবড়ে যায়। কি করবে সে বুঝতে পারে না। নিজেকে তখন অসহায় মনে হয়। স্নিগ্ধা অস্থির হয়ে বললো,” আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে? এসি বাড়িয়ে দিবো? গরম লাগছে?” বলতে বলতে আদিলের কপালের সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিলো। অস্থিরতায় ভরে গেছে স্নিগ্ধার চেহারায়। ঐ শাকচুন্নি আবার উল্টা পাল্টা কিছু খাইয়ে দেয় নি তো। স্নিগ্ধা এসি বাড়াতে যেই উঠতে যাবে আদিল খপ করে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
হটাৎ আদিলের এমন ব্যাবহারে স্নিগ্ধা বিষ্ময় নিয়ে তাকালো।বিষ্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো যখন আদিল মৃদু হেসে তাকালো। সেই হাসির আড়ালে দুষ্টু হাসিটা চোখে পড়তেই রাগে দাতে দাত চেপে তাকালো স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললো,” এতক্ষণ আপনি নাটক করছিলেন আমার সাথে?” বলেই নিজের হাত ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো সে। রাগটা এবার তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
[ #চলবে ]