রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ,০৮,০৯

0
261

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ,০৮,০৯
[০৮]

শিমলার বিয়ের দিন আরাভ ও দিগন্ত দুজনেই যায় ময়মনসিংহ। ইউনুস হোসাইন আরাভের সাথে দিগন্তের পরিচয় করিয়ে দেন। দিগন্ত একমনে আরাভের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আরাভকে তার মনে ধরে বেশ। মনে মনে বলে, ” সত্যিই ভূমি আরাভের মতো ছেলেঠ ডিজার্ব করে।” দুজনের মাঝে কথা হয় বেশ। তবে সবটাই হয় ভূমিকে ঘিরে। ভূমির ছোটবেলা নিয়ে। দিগন্তের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে আরাভ। আর মনে মনে ভাবছে, ভূমির সাথে যদি তার ছোটবেলায় দেখা হতো ” দিগন্তকে বেশ ভালো লেগেছে আরাভের। কিছুসময়ের মাঝে দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। তন্ময় দুজনের মাঝে বসে কথা শুনছে। ওর দৃষ্টি একবার আরাভের দিকে তো একবার দিগন্তের দিকে। এদের দুজনের-ই ভূমিকে নিয়ে বেশ আগ্রহ।

বেশ অনেকটা পর ভূমি আসলো ওদের কাছে। ভূমিকে দেখে স্তব্ধ আরাভ। স্থান কাল পাত্র ভুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ভূমির দিকে। ভূমি আজ নীল শাড়ি পরেছে তার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। মুখে হালকা মেকাপ। খোলা চুল ছড়িয়ে আছে পিঠময়। কিছু কাধের একপাশ দিয়ে রেখেছে। আরাভ ভূমিকে পা থেকে মাথা অব্ধি অবলোকন করে নিলো। ভূমির গলায় থাকা তিলটার দিকে চোখ পরতেই কেপে উঠলো আরাভের শরীর। শুকনো ডুক গিলে নিজেকে সংযোত করে তাকালো ভূমির মুখের দিকে। ভূমির মধ্যে কিছু একটা কম আছে। ওর সাজ সম্পূর্ণ লাগছে না। কিছু একটা ভেবে মৃদু হাসলো আরাভ। চোখের ইশারা নিজের পাশটা দেখিয়ে বসতে বলল ভূমিকে। ভূমি মৃদু হেসে আরাভের পাশে গিয়ে বসলো। দিগন্ত এতক্ষণ ধরে ওদের লক্ষ করছিল। ভূমি দেখে দিগন্তের দৃষ্টি থেমে গেলেও সে নিজেকে সামলে নেয়।একবারের জন্যেও তাকায় না ভূমির দিকে। যে মানুষটা ওর নয় তার জন্যে মায়া সে বাড়াতে চায়না। “যেখানে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই সেখানে মায়া কাটাতে শিখতে হয়।” ওদের দুজনকে এমনভাবে দেখে অধোর প্রসারিত হয় দিগন্তের।

ভূমির পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে আরাভকে আর সবার সাথে পারিচয় করিয়ে দিচ্ছে। আরাভ ভূমির সাথে পা মিলিয়ে হাটছে আর ভূমির কথা শুনছে। বর আসার হট্টগোল শুনা গেল। বাড়ির সকলে বাগানে চলে যায়। ভূমি যেতে চাইলে আরাভ ওকে আটকে দিয়ে একটা রুমে নিয়ে আসে। তারপর ভূমিকে সামনে দাঁড় করিয়ে ওর দিকে একপলকে তাকিয়ে থাকে। উড়না দিয়ে মাথায় ঘুমটা তুলে নেশালো কন্ঠে বলে,

“তুমি শিল্পীর তুলিতে আঁকা দূর নীলাচলের নীল ঘাস ফুল।না না তুমি নিবিড় নীলের নীল অভিলাষী
নীল জলের নীলোৎপল।
তোমার দিকে অনিমেষ দৃষ্টিতে
আকাশ হয়ে পড়ে নীলশূন্য।
মৌণ দেহের ভাঁজে নীলাম্বরী শাড়ির ছাড়া আঁচলে
তুমি তখন শরতের নীলিমায় নীল প্রজাপতি।
তোমার নীল শাড়ির সুখে আকাশ খুঁজে পায় নীলিমা,
বিশুদ্ধ আত্মার ঘ্রাণে, ময়ূর ফিরে পায় সৌন্দর্যের নীল দেহ।
নীলাদ্রিতা,
মাছরাঙার নীল ছুঁয়ে নীল শাড়িতে তুমি,
তোমার চপল চোখের রক্তিম ঠোঁটের হাসিতে
ঝরে পরে দুস্পাপ্য নীল জোছনা।
নীল বসনে তুমি, নীলে ভরা সুন্দর।
তুমি মরক্কোর নীল শহরে, নীলের রাজত্বে পূর্নিমার নীল চাঁদ।
তুমি বসন্তের নীলমনি লতা, তুমি গ্রীষ্মকালের নীলচে ‘লোবেলিয়া’।
তুমি নীল তাপসী, নীল মনিহার, নীল আকাশের নীলাঞ্জনা।
তোমার নীলিম শাড়ির আঁচলের ভাঁজে
লুকানো কবির নীল কবিতা।”

আরাভের হাত ভূমির আঁচল ভেদ করে কখন ভূমির গাল স্পর্শ করেছে জানা নেই। আরাভের এক হাত ভূমির গালে অন্যহাত কোমড়ে। মোহনীয় দৃষ্টিতে ভূমির মুখপানে তাকিয়ে আছে আরাভ। ভূমির দৃষ্টি আরাভের চোখের দিকে। আরাভের আফিম মেশানো কন্ঠের নেশায় বুদ হয়ে গেছে। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আরাভের দিকে। আরাভ ক্রমশ ভূমির কাছে আসতে থাকে। দুজনে মাঝে দূরত্ব খুব কম। আরাভের ওষ্ট ভূমির ওষ্টের বরাবর আসতেই আরাভের সেলফোন বেজে উঠে। কেপে উঠে দুজনেই। বাস্তবে ফিরতেই লজ্জা রাঙা হয়ে যায় ভূমি। কি করতে যাচ্ছিল সে? দুজনে এত কাছাকাছি ভাবতেই ব্লাশ করতে থাকে।আর আরাভ অধোর কামড়ে ধরে লম্বা শ্বাস টেলে কল রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায়। কথা বলা শেষ করে অপরাধীর মতো মাথা নুইয়ে ভূমির সামনে দাঁড়ায়। তারপর বলে,

” স,, স, সরি। আমি বুঝতে পারিনি কি করে তোমার এতটা কাছে,,,, সরি।”

আরাভের অবস্থা দেখে ভূমির হাসি পাচ্ছে। সে নিজের হাসি চেপে বলল,
” সরি বলতে হবে না স্যার। ভুল আমারও ছিলো।” ভূমিও মাথা নিচু করে রইলো।

ভূমির কথায় আরাভ মনে হয় স্বস্তি পেল। সে ভূমির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে বলল,
” তাহলে বলতে চাইছো তুমিও এডেক্টেড।”
” জ্বি স্যার। না মানে স্যার,,,
” আচ্ছা আমি বুঝতে পেরেছি।”
” কি বুঝতে পেরেছেন।”
ভূমির কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আরাভ ভূমির হাত দুটো মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয়। তারপর ভূমির চোখে চোখ রেখে বলে,

” এখানে কিন্তু তুমি আমার ছাত্রী নও আর আমিও তোমার স্যার নই। তাই কথা শুরু করার আগে পরে স্যার ডাকবে না।”

” তাহলে কি বলে সম্বোধন করবো?”

” নাম ধরে ডাকবে আমার।

” আপনার নাম ধরে ডাকবো!”

” হুম। কারন সেই অধীকার তোমার আছে।”

ভূমি হাস্যউজ্জল মুখে তাকিয়ে রইলো আরাভের দিকে। আরাভের অধোরেও হাসি। ভূমি নিজের হাত ছাড়িয়ে আরাভের আরো কাছে এলো। পায়ের উপর পা রেখে আরাভের গালে নিজের ওষ্ঠের স্পর্শ দিয়ে অধোর প্রসারিত করে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। আরাভ অবাক, নির্বাক, স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ভূমির চলে যাওয়ার দিকে। ভূমি চোখের আড়াল হতেই আরাভ নিজের হাত রাখলো গালে, তারপর বলল,
” ও এটা কি করলো। কিছ, কিছ করলো আমায়।”

শব্দকরে হাসলো আরাভ। হাসিমুখে সেও বেড়িয়ে গেল।

____________________________
ভূমির ওর নানার বাড়ি থেকে ফিরেছে এক সপ্তাহ কেটে গেছে। এই সপ্তাহে আরাভ আর ভূমির সম্পর্ক এগিয়ে গেছে অনেকটা।কলেজ শেষ কফিশপে বসে কফি খাওয়া তারপর আরাভ নিজে ড্রাইভ করে ভূমিকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। রোজরাতে ওদের নিয়ম করে কথা। আরাভ নিজের কাজ শেষে অপেক্ষায় থাকে কখন ভূমি কল করবে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাড়াতাড়ি নিজের কাজ শেষ করে বেলকনিতে বসে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে আরাভ আর একটু পর পর মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকাচ্ছে। প্রায় অনেক্ষন হয়েগেছে ভূমি কল করছে না। আরাভ একটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা হাতে নিলো। অস্বস্তি হচ্ছে খুব। মাথাটাও ভিষন ব্যাথা করছে। আজ কাজের প্রেশারটা তুলনামূলক ভাবে বেশী ছিলো। তুহিন নেই ওর দিকটাও আরাভকে সামলাতে হয়েছে। প্রায় কুড়ি মিনিট পর ভূমির নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসলো,

” কাল এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। আজ কল দিতে পারবো না আপনি ঘুমিয়ে পরুন।”

ভূৃমির মেসেজ দেখে ব্যাথিত হলো আরাভ। চোখ বন্ধকরে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেলকনি ছেড়ে বিছানায় আসলো। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে আরাভ। ঘুমানোর চেষ্টা করেও পারছে না। এদিকে মাথা ব্যাথাটাও বেড়ে চলেছে। বেশ অনেকক্ষণ পর যখন ঘুমাতে ব্যর্থ আরাভ তখন উঠে বসে ভূমির নাম্বারে কল করলো। রিং হতেই কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে ভূমি বলল,
” আরাভ, আপনি কল করেছেন কেন? ওপাশে সব ঠিক আছে তো। সবাই ঠিক আছে।”

” না ঠিক নেই। আমি ঠিক নেই। প্রিজ নীলাদ্রিতা, কথা বলো আমার সাথে। দশ মিনিট।”

” আপনার শরীর ঠিক আছে তো আরাভ? কন্ঠটা এমন লাগছে কেন?”

“কথা বলো দশ মিনিট সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আরাভ এমন ভাবে বলল ভূমি আর কিছু বলতে পারলো না। দুজনের কথা চলল। দশ মিনিট বলে মিনিটের পর মিনিট কথা চলল।

রাতে আরাভের সাথে কথা বলায় নিজের এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করতে পারেনি ভূমি। ভোর চারটার এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছিল ভূমি। সেই ভোরে উঠে এসাইনমেন্ট শেষ করে মাত্র টেবিল ছেড়েছে। ঘরিতে তখন বাজে নয়টা। এবার ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কলেজের জন্যে তৈরী হবে। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই ভূমির সেলফোন বেজে উঠলো। বিছানা থেকে মোবাইল হাতে নিতেই দেখলো স্কিনে আরাভের নামটা জ্বলজ্বল করছে। ভূমি কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরাভ অস্থির, ভয় আর ভীতি কন্ঠে বলে উঠলো,

” এখুনি কলেজে যাবে তুমি আর দিয়ার সাথে থাকবে। দিয়া কোথায় যায় আর কার সাথে দেখা করে সবটা খেয়াল করবে। মনে থাকবে।”

” কি হয়েছে দিয়ার?”

” তুমি যদি দিয়ার সাথে থাকো তাহলে কিছু হবে না অন্যথায় অনেক বড় বিপদ ঘটতে চলেছে। তুমি ওর খেয়াল রাখবে কেমন।”

” আচ্ছা।”

আরাভ কল কাটতেই ভূমির গভীর চিন্তায় পরে যায়। দিয়াকে কল করে ওর সাথে কথা বলে নেয়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে দিয়ার কোন ক্ষতি সে হতে দিবে না। কিন্ত কে জানতো তার চোখের সামনে এমন একটা ঘটনা ঘটবে।

চলবে,,,,,,

Mahfuza Afrin Shikha.

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[০৯]

দিয়াকে সাথে নিয়ে লাইব্রেরিতে বসে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট বই পড়ছে ভূমি। যদিও পড়ার থেকে বেশী প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে তাকে। দিয়া একা একা বকবক করছে তো আবার ভূমিকে প্রশ্ন করে করে প্রশ্নের ভাণ্ডার তৈরী করে ফেলেছে। ভূমির দিয়াকে এক ধমক দিয়ে কিছুক্ষণের জন্যে চুপ করে বসিয়ে দেয়। ভূমি মন দেয় বই পড়ায়। রোমিং জুলিয়েটের রোমান্টিক ডায়ালগ তার বেশ লাগে। পড়ার সময় যেন ভূমি ওদের চোখের সামনে দেখতে পায়। বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে ভূমি তখন দিয়া প্রশ্ন করলো,

” আমিকি এখন যেতে পারি। তুই পড়ছিস তোর সাথে থেকে আমি করবোটা কি?”

” আজ সারাদিন তুই আমার সাথেই থাকবি। কোন কথা নয় চুপচাপ বস এখানে।”

” ইম্পসিবল। সারাদিন তোর সাথে থাকবো মানে কি? কিছুক্ষণ পর ইমাদ আসবে। আমি ওর সাথে যাব।”

” এই সারাক্ষণ ইমাদ ইমাদ করিস কেন বলতো। একদিন দেখা না করলে মরে যাবি না।”

“মরে যাব দোস্ত। বিশ্বাস কর একদিন দেখা না হলে আমি মরে যাব। ও যে আমার অক্সিজেন। আমার প্রান, আমার কলিজা।”

” তাহলে ওর সাথে থেকেই বাচতে পারিস, শ্বাস নেস কেন?”

দিয়া কিছু বলবে তখন ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে আশা নামটা জ্বলজ্বল করছে। দিয়ার ঠোটে হাসি ফুটলো। আশা দিয়ার কাজিন। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। দিয়া কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কিছু বলল। দিয়া ” ঠিক আছে” বলে কল কেটে দিয়ে ভূমিকে বলল,

” আমি মনিরুল স্যারের সাথে দেখা করে আসছি। জাস্ট যাব আর আসবো।”

” মনিরুল স্যারের সাথে তোর দরকারটা কি?”

” আমার নয় আশার দরকার। ওর এসাইনমেন্ট স্যারের কাছে রয়েছে। আশা আজ কলেজে আসেনি তাই আমাকে নিতে বলেছে।”

” আমিও যাব তোর সাথে।”

” উহ্ ভূমি, মাই ডিয়ার আমি বাচ্চা নই তোকে পাহারা দিতে হবে। আমি জাস্ট যাব আর আসবো। তোর এই বই শেষ করার আগেই চলে আসবো।”

” কথা দিচ্ছিস।”

” প্রমিস।”
ভূমিকে বলে দিয়া মনিরুল স্যারের সাথে দেখা করতে যায়। মনিরুল স্যারের থেকে বিদায় নেওয়ার সময় স্যার ওকে একটা চকলেট দেয়। স্যারের এই অভ্যাসটা খুব প্রিয় সবার। স্যারও চকলেট খায় আর সবাইকে চকলেট দেয়। দিয়া খুশিমনে চকলেট খেতে খেতে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিল তখনি ইমাদের কল আসে। ইমাদ আর্জেন্ট ওকে ছাদে ডাকে। ইমাদের ডাক উপেক্ষা করার শক্তি ক্ষমতা সাহস কিংবা মনোবল কোনটাই নেই দিয়ার। তাই ইমাদ ডাকার সাথে সাথে সে উল্টোদিকে হাটতে শুরু করে। ভূমির কথা ভূলে গেল সে। ভূমিকে দেওয়া কথা, ভূমির অপেক্ষা কথা সব ভূলে গেলো।

_______________________
দিয়া ছাদে আসতেই দেখলো ইমাদ ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়া মৃদু হেসে ব্যাগ থেকে একটা চুইনগাম বের করে মুখে পুরে নিলো। যেটা কাল ইমাদ তাকে দিয়েছিলো। চুইনগাম চিবুতে চিবুতে ইমাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ইমাদ দিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। দিয়া হতবম্ব। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এর আগে ইমাদ কখনো এমন হুটকরে দিয়াকে জড়িয়ে ধরেনি।দিয়ার হাত ধরার আগেও অনুৃমতি নিয়ে ধরেছে। আজ হঠাৎ হলোটা কি ছেলেটার। ভাবতেই দিয়া ওর ঘাড়ে গরম কিছু অনুভব করলো। ইমাদ কাঁদছে, ইমাদের চোখের জল পড়ছে দিয়ার ঘাড়ে। দিয়া দ্রুত ইমাদকে ছাড়িয়ে ওর চোখের জল মুখে গালে হাত রেখে বলল,

” তোমার কি হয়েছে ইমাদ। কাঁদছো কেন তুমি?”

ইমাদ দিয়ার হাতদুটো উপর নিজের হাত রেখে গভীরভাবে চুমু খেয়ে বলল,
” আমি অনেক বড় ভুল করেছি দিয়া। ভূল নয় পাপ করেছি, পাপ। তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তো।

” তুমি কোন পাপ করোনি ইমাদ। আমি জানি তো। তুমি কোন ভুল করতেই পারোনা।”

ইমাদ আবেগপ্রবণ হয়ে দিয়া শক্তকরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। দিয়াও শক্তকরে ইমাদকে জড়িয়ে ধরেছে। আর যাই হোক প্রিয় মানুষটার চোখের জল সহ্য করা অনেক কষ্টের। ইমাদ দিয়া মাথায় নিজের ঠোট ছুয়াচ্চে।কিছুক্ষণ পর ইমাদ খেয়াল করলো দিয়ার হাত আলগা হয়ে আসছে। দিয়া ক্রমশ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন এক যান্ত্রিক চালিত মানব। ইমাদ দিয়াকে ডাকলো। দিয়া উহ উহ্ শব্দকরে উত্তর দিলো। ইমাদ দিয়াকে ছেড়ে দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। দিয়ার আচরণ কথাবার্তা এমনি মুখভঙ্গি বদলে যাচ্ছে আর ইমাদ সেটা দেখছে। কিছু বলার ভাষা হাড়িয়ে ফেলছে সে। দিয়ার এমন আচরণ সম্পর্কে অবগত নয় সে তাই চেয়ে চেয়ে শুধু দেখছে দিয়াকে।

প্রায় আধঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও যখন দিয়া এলো না তখন ভূমি চিন্তায় পরে যায়। দিয়া কোথায় গেলো। মনে পড়লো আরাভের কথা তাহলে কি সত্যি দিয়ার কোন বিপদ হলো নাকি। বই রেখে দৌড়ে মনিরুল স্যারের অফিসে গেলো। না সেখানেও নেই দিয়া। অস্থির হয়ে পরে ভূমি। কোন উপায় না পেয়ে কল করে আরাভ করে।

” স্যার, স্যার কোথায় আপনি?”

” তোমার কন্ঠটা অস্থির লাগছে কেন?তুমি ঠিক আছো?”

” দিয়া, আমি দিয়াকে হাড়িয়ে ফেলছি স্যার।”

” ওয়াট, তোমাকে বলেছিলাম ওর সাথে থাকতে। দিয়াকে খোঁজে বের করে ফার্স্ট।”

” আপনি কোথায়?”

” আসছি আমি।”

ভূমি হন্নহয়ে দিয়াকে খুঁজতে থাকে। একটা মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারলো দিয়া ছাদে গেছে। ভূমি দেরী না করে দৌড় দিলো ছাদের উদ্দেশ্যে।

এদিকে দিয়া একদম রোবটের মতো দেখতে হয়েগেছে। কিছু বললে রোবটের মতো তার জবাব দিচ্ছে। দিয়াকে কাছে টেনে নিতে চেয়েও পারছে না ইমাদ। ছলছল দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাটুগেরে বসে পরলো ইমাদ। কিছুক্ষণ পর দিয়ার সেলফোন বেজে উঠলো।দিয়া কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠল,

” তোমার ব্যাগে একটা গান রাখা আছে সেটা দিয়ে সামনের লোকটাকে শেষ করে দাও।”

দিয়া যন্ত্রে চালিত মানবের ন্যায় জবাব দিলো,
“ঠিক আছে।”

তারপর ব্যাগ থেকে বন্দুক বের করে সেটা তাক করলো ইমাদের দিকে। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে ইমাদ তাকালো দিয়ার পানে। এটা কি করছে দিয়া? যে দিয়ার প্রান ছিলো সে আজ সেই দিয়া তার দিকে বন্দুক তাক করছে। আশ্চর্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো ইমাদ। কথা বলার ভাষা হাড়িয়ে ফেলছে। দিয়া ট্রিগারে হাত রাখলো, ইমাদ বলল,
” এটা তুমি কি করছো দিয়া। বন্দুকটা নিচে নামাও। নামাও বলছি। পাগল হয়ে গেছো তুমি।”

দিয়া যন্ত্রের মতো তাকিয়ে রইলো। ইমাদকে সে কখনোই মারতে পারবেনা। তবে আজ এই নিষিদ্ধ কাজ করতে ভালো লাগছে দিয়ার। আনন্দ হচ্চে, মনে হচ্ছে এটাই তার একমাত্র কাজ। দিয়া ট্রিগারে চাপ দিবে এমন সময় ছাদের শিড়ির কাছে দাঁড়ালো ভূমি। ভূমি হাতে বন্দুক দেখে ভূমি অবাক হয়ে যায়। নিজের উত্তেজনা কন্ট্রোল করে ভূমি চিৎকার কর,

” দিয়া, কি করছিস দিয়া। ইমাদকে মারছিস কেন?”

ভূমির কোন কথা পৌঁছালো না দিয়ার কানে। দিয়ার হাতে থাকা মোবাইল থেকে আবারও পুরুষালি কন্ঠশ্বর পাওয়া গেলো।
” ইমাদকে স্যুট করো দিয়া। দিয়া ফার্স্ট। স্যুট হিম।”

” ওকে স্যার।” বলেই দিয়া ইমাদের বুক বরাবর গুলি করে। ইমাদ বুকে হাত দিয়ে দিয়ার দিতে তাকিয়ে পরে ফ্লোরে। আর ভূমি শিড়ির কাছেই হাটুগেরে বসে পরে। দিয়ার মোবাইল থেকে আবারও আওয়াজ আসে,

” এবার তোমার কাজ শেষ দিয়া। তুমি সাকসেস। দিয়া তোমার তো কাজ শেষ এবার তুমি বেচে থেকে কি করবে। তুমি ছাদ থেকে লাফ দাও।শেষ করে দাও নিজেকে”

” ঠিক আছে।”
যন্ত্রের মতো বলে দিয়া। তারপর বন্দুক মোবাইল ফেলে দিয়ে সামনে এগোতে থাকে। ভূমি খেয়াল করতেই উঠে দাঁড়ায়। দিয়াকে পিছু ডাকে কয়েকবার। দিয়া রিসপন্স না পেলে ভূমি দৌড়ে দিয়ার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্ত তার আগেই দিয়া ছাদ থেকে জাম্প দেয়। আর ভূমি দিয়া বলে চিৎকার করে সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে।

_____________________
মাঠের মাঝখানটায় স্টুডেন্টদের ভীড়। তার ভিতরে ইমাদ আর দিয়ার মৃতদেহ।ওদের ঘিরে কাঁদছে ওদের বাবা মা। দিয়ার পাশে বসে কাঁদছে ভূমি। আরাভ ভূমিকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে কিন্ত কোন লাভ হয়নি। ভূমি নিজেকে দোষ দিচ্ছে। দিয়ার,মৃত্যুর জন্যে নিজেকে দায়ী করেছে। আরাভ ভূমির মুখের দিকে নিঃপলক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ইচ্ছে করছে ভূমিকে নিজের বুকে চেপে ধরতে। সব সত্যি জানিয়ে দিতে। দিয়ার মৃত্যুর জন্যে যে দায়ী তার নাম বলতে। কিন্ত আরাভ পারছে না। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার।কিছুক্ষণ পর দিয়া আর ইমাদের মৃতদেহ থানায় নেওয়া হলো। সেখান থেকে আবার ফরেন্সিক লেবে নেওয়া হবে। ধীরে ধীরে সবাই চলে যেতে আরাভ ভুমির পাশে বসে।তারপর ওকে উঠিয়ে নিজের গাড়িকরে বাড়ি নিয়ে আসে। আরাভের বাড়িতেই থাকবে সে।চোখের সামনে এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনা দেখেছে। মেন্টাল সাপোর্ট দরকার তার।

চলবে,,,,,,[ইনশাআল্লাহ]

Mahfuza Afrin Shikha.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here