#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ,১০,১১
[১০]
দিয়া ইমাদের ফরেন্সিক রিপোর্ট এসেগেছে। দুজনেই ড্রা*গ নিতো। নিয়মিত ড্রা*গ নিতো তারা। তবে মৃত্যুর দিন ইমাদ কোন প্রকার ড্রা*গ নেয়নি। দিয়ার শরীরেরও সামন্য পরিমান পেয়েছে। তবে এইটুকু ড্রা*গস কারো মৃত্যর কারন হতে পারেনা। যেহেতু তারা দুজনের ড্রা*গ এডিক্টেট তাই তাদের মৃত্যুটা চাপা পরে গেলো কলেজে।তবে ভূমি সে এখনো ভূলতে পারেনি সেদিনের ঘটনা। চোখ বন্ধকরলে এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে দিয়া ইমাদের মর্মান্তিক ঘটনা। ছয়দিন পর আজ কলেজে যাচ্ছে ভূমি। আসলে ভূমির কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না, দিয়া নেই একা একা কলেজে কার ভালোলাগে। তবে আরাভের সাথে তার কথা বলতে হবে। সামনা সামনি কথা বলবে ভূমি।
________________
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রফিক মির্জা সকাল সকাল দিগন্তকে ডেকে পাঠিয়েছে। জরুলি তলফ না হলে তিনি এত ইমারজেন্সি ডেকে পাঠান না তাই দিগন্ত ডাকার সাথে সাথে এসে হাজির। রফিক মির্জার সামনে বসে একটা ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে দিগন্ত। রফিক মির্জার দৃষ্টি উপরে ঘুর্নায়মান পাখার দিকে। রুমে এসি থাকতে পাখার কি খুব দরকার। এই অপচয় টুকু কি না করলেই নয়। পাখার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে কিছু ভেবে চলেছেন তিনি। দিগন্তের ডাকে হুস ফিরে তার।
” স্যার, কেইসটা খুব জটিল। কোন প্রমান ছাড়া শুধুমাত্র সন্দেহের বসে এমন একটা পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে।”
” প্রমান-ই বের করতে হবে। যে এই কাজগুলো করছে সে ধরা ছুয়ার বাইরে।”
” কিন্তু, পরে যদি আমাদের সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হয়।”
” হবে না। ভুল প্রমাণিত হবে না।” পুলিশ ফিফটি পারসেন্ট স্টুডেন্টদের ব্লাড টেষ্ট করিয়েছে তাদের মধ্যে থার্টি পারসেন্ট ডা*গএডেক্ট।বিশেষ করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ার, বায়োলজি ক্যামেস্ট্রি এন্ড ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ছেলেগুলো। তুমি বুঝতে পারছো দিগন্ত, ওই কলেজে ড্রা*গ ডিলার না থাকলে এমনটা হতো না।তাছাড়া ওই কলেজের একটা শিক্ষককে দেড় বছর আগে ড্রা*গ এডিক্টেটের কারনে বহিষ্কার করা হয়েছিল।শুনেছি সে আবার ওই কলেজে জয়েন করেছে। আমাদের মেইন টার্গেট হবে ওই শিক্ষকটা, জুহায়িন আহমেদ আরাভ।”
“স্যার কি নাম বললেন!”
“জুহানিয় আহমেদ আরাভ। তারপর ড্রয়ার থেকে একটা ছবি বের করে দিগন্তের হাতে দেয়। ছবি দেখে দিগন্ত হতবাগ। আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকে ছবির দিকে। মনে মনে বলে উঠে,
” আরাভ। এমন সুন্দর মনের অধীকারি কখনো এটা করতে পারে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি আরাভ। আমার কাকিমনি মানুষ চিনতে ভুল করতে পারে না। আর ভূমি ভুল মানুষকে ভালোবাসতে পারেনা। আমার বিশ্বাসটা যেন জিতে যার আর স্যারের সন্দেহ হেরে যাক।”
দিগন্তকে চুপকরে থাকতে দেখে রফিক মির্জা আবার বললেন,
” পুলিশ এই কেইসের তদন্ত করবে না। আড়ালে থেকে তদন্ত করতে হবে। পুলিশ পিছিয়ে গেছে। তাই আমাদের করতে হবে।”
” ফিল্ড ওয়ার্ক করতে হবে?”
” হ্যাঁ, আমি জানি তুমি পারবে। যাদি না পরো তাহলে অন্য কাউকে,,,,
” নো স্যার, আমি এই কাজটা করতে চাই। কখন যেতে হবে।”
” আজই যাও। আমি আর সময় নষ্ট করতে চাইনা।”
দিগন্ত রফিক মির্জাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। মনটা অস্থির করছে। এই অস্থিরতার কারন খুঁজে পেল না সে। বাকি সব কেইসের মতো এটাও সে তদন্ত করবে তাহলে এত অস্থিরতা কেন? নাকি আবার ভূমির মুখোমুখি হওয়ার ভয়। গাড়ির স্টিয়ারিং চেপে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো দিগন্ত। ভূমিকে নিয়ে আর ভাববে না। ওকে নিয়ে ভাবার কোন অধীকার নেই তার। চোখ বন্ধকরে সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর কল করলো মায়ের নাম্বারে,,,
” হ্যালো মা,,,,
” হ্যারে খোকা, কেমন আছিস? মনে পরলো মায়ের কথা?”
” আমি ভালোআছি মা। তুমি ভালো আছতো?”
” হ্যা।”
” আচ্ছা মা শুননা, তোমায় কিছু বলার ছিলো।”
” হ্যা বল কি বলবি?”
” আসলে বলছি যে, মা,, মা তুমি না মেয়ে দেখতে চেয়েছো আমার বিয়ের জন্যে। এবার দেখতে শুরু করো। বিয়ে করবো।”
” এই খোকা তোর মাথা ঠিক আছে।”
” হ্যা, মা আমি ঠিক আছি। তুমি মেয়ে দেখতে থাকো। আমার হাতে একটা কাজ আছে এটা শেষ করেই বাড়ি আসবো বুঝলে। এবার রাখি কেমন, ভালো থাকো।”
ওপাশ থেকে কিছু বলছিলো তার আগেই দিগন্ত কল কেটে দিলো। দিগন্ত জানে এখন কি নিয়ে কথা বলবে।তাই হয়তো মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো। যে মানুষটা তার জিবন থেকে হাড়িয়ে গেছে তাকে নিয়ে আর কোন কথা নয়। নতুন করে জিবন শুরু করবে সে। চোখ বন্ধকরে পরপর কয়েকবার শ্বাস নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় দিগন্ত।
দুপুর বারোটার দিকে ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হয় দিগন্ত। প্রথমে প্রিন্সিপ্যাল স্যারে থেকে অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন ক্লাস পর্যবেক্ষণ করে সে। তারপর যায় মনিরুল ইসলাম স্যারের সাথে দেখা করতে। ডিপার্টমেন্টের হেড হিসাবে তার থেকেও অনুৃমতি নেওয়া প্রয়োজন। মনিরুল স্যারের কেবিনে গিয়ে অবাক দিগন্ত। মনিরুল স্যার তখন লেপটপে কিছু করছিলেন। দিগন্তকে বসতে বলে সে তার কাজে মন দিলো। দিগন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মনিরুল স্যারের দিকে। মনিরুল ইসলাম স্যার নিজের কাজ শেষ করে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” বলুন আমি আপনার কি সাহায্য করতে পারি।”
” স্যার, আপনি আমায় চিনতে পারছেন?” উৎফুল্ল হয়ে প্রশ্ন করে দিগন্ত।
মনিরুল স্যার দিগন্তের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ায়। না সে চিনতে পারেনি।দিগন্ত বলে,
” ২০১৬ সালে আমাদের কলেজে একটা সেমিনারে আপনি গিয়েছিলেন। আপনার নতুন ওয়েবসাইট, “বুক অফ বেঙ্গলী “নিয়ে আলোচলা করছিলেন। যেখানে সকল ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে তাদের পাঠ্যবই পড়তে পারবে। স্যার আপনার মনে আছে সেখানে আমিও আপনার সাথে কাজ করছিলাম। তারপর যখন আপনার অটোগ্রাফ চাইলাম তখন আপনি অটোগ্রাফের পরিবর্তে আপনি কয়েকটা ডিজিট লিখে দিয়েছিলেন।”
মনিরুল কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
” ও হ্যাঁ মনে পড়ছ। সিপি মার্কেটিং সম্পর্কে আপনার ধারনা ভালো ছিলো।এখন কি করছেন আপনি?”
দিগন্ত একটা ফাইল বাড়িয়ে দেয় মনিরুল স্যারের দিকে। স্যার ফাইলটা দেখে বলে,
” ঠিক আছে, আপনি যখন খুশি আমার ক্লাস করতে পারেন। আর আমার কোন সাহায্য লাগলে অবশ্যই বলবেন। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে ধন্য হবো।
” ধন্যবাদ স্যার এবার তাহলে আসি।
মনিরুল স্যারের সাথে হাত মিলিয়ে দিগন্ত প্রস্থান করে। এবার গন্তব্য তার জুহায়িন আহমেদ আরাভ স্যার।”
___________________
একটা ফাকা রুমে ব্রেঞ্চের উপর বসে আসে আরাভ। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ভূমি। ভূমি চোখ ছলছল করছে। নাক লাল। মনে হচ্ছে কেঁদেছে। আরাভের চোখে অসহায়ত্ব, করুন চোখে তাকিয়ে দেখছে ভূমিকে। ভূমির এই অবস্থা দেখে তারও কষ্ট হচ্ছে তবে সে পারছে না ভূমিকে সত্যটা বলতে। যেটা ভূমির মনে আরো সন্দেহ জাগিয়ে তুলছে। সন্দেহের বীজ প্রথম অঙ্কুরিত হয়েছিল দিয়ার মৃত্যুর দিন। ভূমি প্রশ্ন করলো,
” তাহলে আপনি বলবেন না সত্যিটা?”
” এখন বলতে পারবো না। একটু সময় দাও তোমাকে সবটা বলবো।”
” আপনি কখন জেনেছিলেন, দিয়ার মৃত্যু কথাটা?”
” রাতেই।”
” ওহ।তাহলে এটা প্ল্যান ছিলো।”
” বলতে পারো।”
” আপনি কি করে জানলেন আরাভ।”
” তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো?”
কোন জবাব এলো না ভূমির দিক থেকে। আরাভ তার জবাব পেয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ভূমির দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। ভূমির মুখোমুখি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভূমির গালে হাত রেখে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলে,
” সারা দুনিয়া আমায় অবিশ্বাস করলেও আমার কিছু যায় আসে না। তবে তোমার চোখে এই অবিশ্বাস আমি দেখতে পারছি না ভূমি। আজ সন্ধ্যায় তুমি তোমার সব উত্তর পাবে। তবুও তুমি আমায় অবিশ্বাস করো না। তহলে আমি বিষাদের অনলে পুড়ে পুড়ে খয় হবো। তোমার চোখে প্রেম দেখতে চাই, ভালোবাসা দেখতে চায়। অবিশ্বাস, ঘৃনা এসব সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।”
ভূমির কপালে কপাল ঠেকিয়ে রইলো আরাভ। ভূমি আরাভের বাহু চেপে ধরে বলে,
” আপনাকে অবিশ্বাস করার ক্ষমতা আমার নেই, আর ঘৃনা! সেটা কখনো ভাবতে পারিনা। তবে ভয় হয়। আপনাকে হাড়িয়ে ফেলার ভয় প্রতিনিয়ত তাড়া করে। আপনাকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না আরাভ।”
আরাভ ভূমিকে ছেড়ে একটু দুরত্ব নিয়ে দাঁড়ায়। অধোর প্রসারিত করে ভূমির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বুকের বা পাশটায় আঙ্গুল দেখিয়ে বলে,
” এইখানটায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। একটু জড়িয়ে ধরবে।
ভূমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। এর আগে কখনো মাথা রাখা হয়নি আরাভের বুকে। কখনো আবদ্ধ হয়নি আরাভের বাহুবন্ধনে। লজ্জার গাল রক্তিম বর্ণ ধারন করতে থাকে। আরাভ বলে,
” তুমি লজ্জা পাচ্ছো। ঠিক আছে আমি তোমায় হেল্প করছি।”
বলেই ভূমিকে জড়িয়ে ধরে আরাভ। ভূমির হাত ও খেলা করে আরাভের পিষ্ঠদেশে।
আরাভের ক্লাস শুরু হবে আর দশ মিনিট পর। ভূমিকে ছেরে একটু দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ায়। হাতে থাকা গোল্ডেন ওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলে,
” সেকেন্ড ইয়ারে একটা ক্লাস আছে। যেতে হবে।”
” হুম আমারও ক্লাসে যেতে হবে।”
” আচ্ছা শুনো, এই ক্লাস শেষ করে আমার গাড়ির কাছে যাবে। বের হবো।”
” আপনার ক্লাস নেই।”
” না আজ আর নেই।”
চল দেরী হচ্ছে। ভূমিকে সামনের দিকে ইশারা করতেই ভূমি মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। আরাভ ভূমির পিছু যায় তবে দূরত্ব রেখে। ভূমি ওর ক্লাসে যেতেই আরাভ অফিস রুমের দিকে যায়। অফিসরুমের সামনেই দেখা দিগন্তের সাথে। দিগন্তকে দেখে আরাভ একগাল হেসে বলে,
“হ্যালো ডিটেকটিভ।”
দিগন্ত হেসে আরাভের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
” হ্যালো।
আরাভ হাত মিলিয়ে বলে,
” এখানে কি মনে করে?”
” কাজের তাড়নায় আসতেই হয়।
” চলুন ভিতরে বসে কথা বলি।”
আরাভ আর দিগন্ত মুখোমুখি বসে আছে। দিগন্তের মুখ উৎফুল্ল প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্যে আর আরাভের মুখ গম্ভীর। দু-হাত চিবুকে রেখে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকে দিগন্তের দিকে। দিগন্ত বলে,
” আমার প্রশ্নের জবাব পাইনি।”
আরাভ পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিগন্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
” সন্ধা সাতটায় এই ঠিকানায় আসবেন। আপনার সব জবাব পেয়ে যাবেন।” আরাভ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ” আসছি আমার ক্লাস আছে।” আরাভ চলেই যাচ্ছিলো তখন দিগন্ত দাঁড়িয়ে বলে,
” সব প্রমান আপনার এগিয়েন্সটে। সবার সন্দেহ আপনার দিকে। এবার কি বলার আছে আপনার।”
আরাভ দাঁড়িয়ে যায়। মৃদু হেসে বলে,
” কারো মনের সন্দেহ দূর করার দায় আমার নয়। আমি যদি ভুল না করি তাহলে কে সন্দেহ করলো আর কে না করলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার রাস্তায় আমি ঠিক। সময়মতো চলে আসবেন।” বলেই আরাভ বেড়িয়ে যায়। দিগন্ত আরাভের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,” কি এটিটিউড।”
চলবে,,,,,,
Mahfuza Afrin Shikha
#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১১]
ক্লাস শেষ করে ভূমি এসে দাঁড়ায় পার্কিং লটে। আরাভ এখনো আসেনি। হয়তো ক্লাস থেকে বের হয়নি। আসার সময় অফিসে একবার উকি দিয়েছিলো ভূমি, দেখা মিলেনি আরাভের। পার্কিং লটে এসে আরাভের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পার্কিং এড়িয়ায় কয়েকজন ছেলেমেয়েরা যে যার গাড়ি বের করছে। দুটো মেয়ে দুজনেই বাইক নিয়ে বের হলো। আর তিনটা ছেলে যার একজন গাড়ি আর দুজন একটা বাইক নিয়ে গল্প করতে করতে চলে গেলো। ওদের দিকে তাকিয়ে ভূমির চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো। মনে পরে দিয়ার কথা। এই রাস্তায় দিয়ার সাথে কতটা সময় দাড়িয়ে থেকেছে সে। দিয়ার অস্বাভাবিক ব্যাবহার বাচালের মতো কথা বলা সবটা মনে পরতেই চোখ দিয়ে জল পরতে লাগলো ভূমির। দু-হাতে মুখ চেপে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ভূমি। কিছুক্ষণ পর আরাভ আসলো। ভূমির চোখেী জল দেখে ব্যস্থ হয়ে পরে আরাভ। দু-হাতে ভূমির কাধ করে প্রশ্ন করে,
” কাঁদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?”
ভূমি কোন উত্তর দেয়না। আরাভ আবার প্রশ্ন করে,
” কে কি বলেছে। বলো আমায়।”
ভূমি তার চোখের জল মুছে নেয়। আরাভের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,
” আমাকে কেউ কিছু বলেনি। দিয়ার কথা মনে পরছে। ওকে খুব মিছ করছি। আচ্ছা ওর সাথে তো এমনটা না হলেও পারতো।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরাভ। ভূমির গালে হাত রেখে বলে,
” গাড়িতে বসো। আজ তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।”
ভূমি দ্বিরুক্তি না করে গাড়িতে বসে। আরাভ ও ড্রাইভিং সিটে বসে ভূমির সিটবেল্ট লাগিয়ে দেয়। তারপর নিজের সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্চ দেয়।
একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়িয়ে ব্রেক করে আরাভ। পুরো রাস্তা কেউ কোন কথা বলেনি। দুজনে গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করে। তবে ভিতরে জনমানবশূন্য। ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ-ই নেই সেখানে। ভূমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
” রেস্টুরেন্ট আজ বন্ধ নাকি। তেমন কাউকেই তো দেখছি না।”
আরাভ সামনের দিকে হাটতে হাটতে জবাব দেয়,
” দু ঘন্টার জন্যে বুক করেছি। বাহিরের কেউ আসতে পারবে না।”
” পুরোটাই।”
” হুম। আমার সাথে একা আসতে ভয় লাগছে? ”
ভূমি আর কিছু বলল না। আরাভের সাথে ভিতরে গেলো
সে। এই দুমাসে আরাভের প্রতি তার এতটাই বিশ্বাস জন্মেছে যে, সে চোখ বন্ধকরে আরাভের হাতে হাত রেখে চলতে পারবে। বরং আরাভ পাশে থাকলে তার নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। ভিতরে একটা সাদা লাল আর কালো গোলাপের কম্বিনেশনে সাজানো একটা টেবিলে বসলো দুজনে। ভূমি চুপচাপ। আাশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে। আরাভ প্রশ্ন করলো,
” ভয় লাগছে?”
” ভয় কেন লাগবে?”
” প্রশ্নটা আমি করেছি।”
” নাহ, নিরাপদ মনে হচ্ছে।”
প্রসন্ন হাসলো আরাভ। হয়তো এটা তার প্রাপ্তি। ভূমি এতটা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে সে। মনে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো ভূমির মুখ পানে। কিছুক্ষণ পর একটা ওয়েটার আসতে খাবার অর্ডার করলো আরাভ। তারপর ওয়েটার খাবার সার্ভ করতেই দুজনে খেয়ে নিলো। খাওয়ার সময় আরাভ খাচ্ছিল কম ভূমিকে দেখছিলো বেশী। খাওয়া শেষ করে দুজনে বসে রইলো কিছুক্ষণ। দুজনের মনেই চলছিলো কিছু সাজানো স্বপ্নের মেলা। আরাভ তার হাতের গোল্ডেন ওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমাকে কিছু বলার ছিলো।”
চমকে উঠে ভূমি। ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটলে যা হয় আর কি। পাশ ফিরে দেখে আরাভ একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে নিয়ে তার সামনে হাটুগেরে বসে আছে। ভূমি তো অবাক। এটা কি করছে আরাভ বুঝতে পারলো না। সে এটাও বুঝতে পারলো না সে বসে থাকবে নাকি দাঁড়াবে। তাই সে হা করে তাকিয়ে বসে রইলো। আরাভ লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
” সেদিন বসন্ত এসেছিলো হৃদয় মাঝে, যেদিন তোমার মতো সুন্দর, নিষ্পাপ গোলাপের দেখা পেয়েছিলাম। সেদিন কোকিলের কন্ঠ কানে শুনেছিলাম অসময়ে ,যেদিন ঝর্নার কলকল ধ্বনির মতো তোমার কন্ঠ কানে এসেছিলো। সেদিন বলতে পারিনি তোমায়, তুমি খুব সুন্দর। তোমার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়িবো সখি বারেবারে।তোমার ওই মায়াবী মুখখানি আমার সর্বনাশ করেছে, ঠিকমতো ঘুমাতে দেয় না। কোনো কিছুতেই আর মন বসে না, শুধু বারবার তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে।জেগে থাকলে তোমার কল্পনাতে ডুবে থাকি, ঘুমন্ত আমি তোমায় স্বপ্নে দেখি। তোমাকে বারেবারে দেখতে চায় এমন, যদি অনুমতি দাও ঐ দুহাত ধরার সারাজীবন, ভালোবাসায় বেঁধে রাখবো কথা দিলাম।ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার জানা নেই। যদি কাউকে দেখার জন্য বারবার মন আনচান করার নাম ভালোবাসা হয়, তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি। যদি শয়নে স্বপনে তাঁকে নিয়েই হৃদয় মাঝে ছবি আঁকানোর নাম ভালোবাসা হয় তবে আমি তোমায় ভালোবাসি। যদি অনুমতি দাও, সারাজীবন ভালবাসতে চাই। ভালোবেসে সারাজীবন ভালোবাসায় বেঁধে রাখবো,যদি একটি বার সাড়া দাও। জীবনে মরণে বেঁধে রাখিবো প্রিয়তমা জনম জনম ধরে, সখি যদি হাত দুটি বাড়াও।”
বাম হাতটা বাড়িয়ে দিলো ভূমির দিকে। ভূমির চোখের জল কোটর গড়িয়ে গাল বেয়ে পরছে। দু-হাতে মুখ চেপে সে তাকিয়ে আছে আরাভের দিকে। এখন তার কি প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিৎ বুঝতে পারছে না। সে কি দাঁড়াবে। বুঝতে পারলো না। কান্নায় চোটে কোথাও বলতে পারছে না। গলায় আটকে আছে। ভূমি বসে পরলো আরাভের বরাবর। তারপর আরাভের থেকে গোলাপ গুচ্ছ নিয়ে ওর বাম হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। সেই হাত মুখের কাছে নিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আরাভ ভূমিকে উঠিয়ে বলল,
” এখানে কাদার মতো কি বললাম আমি। আচ্ছা তুমি কি আমার ভালোবাসা এক্সসেপ্ট করতে পারছো না।”
” আমি আসলে ভাবতে পারিনি আপনি এমন করে সারপ্রাইজ দিবেন।”
আরাভ ভূমির হাতে নিজের অধোর ছুইয়ে বলল,
” আমার কিছু চাই দিবে?”
” বলুন কি চাই আপনার।”
” আপনি নশ তুমি করে সম্বোধন করবে। এটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সবাইকে তুমি করে সম্বোধন করো শুধু আমি ছাড়া। আমি কি তোমার প্রিয় নই।”
” আসলে,,,
” কোন আসলে টাসলে শুনতে নারাজ। তুমি করে সম্বোধন করে। নাও এখনি শুরু করো।”
” এখনি।”
” হুম।
” হবে না।”
” হবে। আর না হলে আজ এখান থেকে তোমার ছুটি নেই। আপনি ডাকার অপরাধে এখানে তোমার সাথে রোমান্টিক সিন ও ক্রিয়েট করতে পারি।”
লজ্জা পেল ভূমি। লজ্জায় ভূমি মাথা নিচু করে নিলো।আরাভ ভূমির চিবুক ধরে মাথা উঁচু করিয়ে বলল,
” সবসময় মাথা উঁচু করে বাচবে। আমার সামনে একদম-ই মাথা নিচু করবে না। বরং তোমার সামনে আমি মাথা নুইয়ে রাখবো। উহঃ নিলাদ্রিতা, আমি ধৈর্য হারা হয়ে পরছি।”
” আরাভ আপনি,,, জিহ্বায় কামড় দিলো ভূমি। তারপর আমতা আমতা করে বলল, তু্ তু তুমি এবার বেশী বকছো।”
ব্যাস কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ভূমিকে বুকে জড়িয়ে নিলো আরাভ। ভূমিও দুহাতে আরাভকে জড়িয়ে ধরলো।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে ভূমিকে নিয়ে লং ড্রাইভে বের হয় আরাভ। তারপর সন্ধার দিকে ফিরে আসে নিজ শহরে। চারিদিকে যখন ঘনকালো অন্ধকার নেমে আসছে। শহরের রাস্তায় সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত ঠিক তখন আরাভ ভূমিকে নিয়ে একটা ফ্লাটে যায়। একটা নতুন জায়গা, নতুন ঘর দেখে অবাক হয় ভূমি। ভ্রু কুঁচকে আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ ভূমিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
” ভয় নেই। আমি আছি তো নাকি।”
কলিং বেল বাজালে রেদওয়ান এসে দরজা খুলে। আরাভের সাথে ভূমিকে দেখে রেদওয়ান বাকরুদ্ধ হয়ে প্রশ্ন করে,
” ভাবি আপনি?”
রেদওয়ানকে চিনতে অসুবিধা হলো না ভূমির। এইনগেজমেন্টের দিন রেদওয়ানকে দেখেছিল সে। ভূমি আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ বলে,
” ভিতরে আসবো তো নাকি। এখানে দাঁড়িয়ে তোর প্রশ্নের জবাব দিবো।
” হুম আয়। রেদওয়ান দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়। আরাভ ভূমির হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে,
” সবাই আছে।”
” সোহান নেই। ওর মা অসুস্থ।”
” তাহমিদকে বল ভালোকিছু রান্না করতে। একজন গেস্ট আসবে।”
আরাভ ভূমিকে নিয়ে একটা রুমে আসে। তারপর বলে,
” কাবার্ডের ভিতরে তোমার জন্যে ড্রেস রাখা আছে। ফ্রেস হয়ে নাও।”
” এখানে আমার ড্রেস!”
” হ্যাঁ, সেদিন শপিং করতে বেড়িয়েছিলাম। পছন্দ হলো তাই নিয়ে নিলাম। আর হ্যাঁ আমি না ডাকলে বের হবে না।”
আরাভ চলে যায়। আর ভূমি মনে হাজরো প্রশ্ন নিয়ে কাবার্ড থেকে একটা ব্লু ডেনিম জিন্স আর একটা গোলাপি কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।
চলবে,,,,,,
Mahfuza Afrin Shikha.