#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ,১৬,১৭
[১৬]
ভূমির সামনে হাটুগেরে বসে আছে আরাভ। ভূমির হাত আরাভের হতের মধ্যে মুষ্ঠিবদ্ধ। আরাভের দৃষ্টি স্থির তার নিলাদ্রিতার ভয়ার্ত মুখের দিকে। ভূমি অনেক্ষন যাবৎ কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই বলে উঠতে পারছে না। আরাভ লম্বা শ্বাস নিলো। এক হাতে ভূমির হাত ধরে অন্যহাত রাখলো মুখের গালে। কেপে উঠলো ভূমি। আরাভ বলল,
” ভয় নেই নিলাদ্রিতা। আমি আছি তো।”
আরাভের কথায় ভূমি শান্ত হতে পারলো না। ভূমি জানে আরাভ তার কোন ক্ষতিই হতে দিবে না। তবে আরাভ! তার দায়িত্ব কে নিবে। এই ডেথ যে ভয়ংকর তাতে তো আরাভের জিবন সংকটময়। ডেথ যদি একবার আরাভের সন্ধান পায় তাহলে যে আরাভের আর কোন অত্বিত্বই থাকবে না। আরাভকে হাড়ানোর কথা মনে হতেই শরীর যেন রক্তশূন্য হয়ে গেল। ছলছল করে উঠলো ভূমির চক্ষুদ্বয়। আরাভের গালে নিজের হাত রেখে বলল,
” যে তুমি এত মানুষের দায়িত্ব নিলে, সেই তোমার দায়িত্ব দায়িত্ব কে নিবে শুনি?”
আরাভ হাসলো। ভূমির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” যে আমায় সৃষ্টি করেছে, যার দয়ায় এতগুলো মানুষের দায়িত্ব নিতে পারছি সেই আমার দায়িত্ব নিবে। আর তোমার ভালোবাসা। ভালোবাসার নাকি অনেক শক্তি, এত ভালোবাসো তুমি আমায়। এই ভালোবাসা রেখে কোথায় যাই বলতো। আমাদের যে আরো অনেকটা পথ চলার বাকি।”
ভূমি আরাভের সামনে বসলো। আরাভের দুগালে হাত রেখে বলল,
” তোমার কিছু হবে না তো। আমার খুব ভয় হচ্ছে। তোমার হাড়ানোর ভয় আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়।”
আরাভ ভূমির হাতের হাতের উপর হাত রেখে নিজে অধোর স্পর্শ করে নিলো। ভূমিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
” কিচ্ছু হবে না আমার। দেখে নিও।”
আরাভ মুখে যতই বলুক ওর কিছু হবে না। তবে আজ এই মুহূর্তে অনেক ভয় লাগছে। সত্যিই যদি ওর কিছু হয়ে যায়। তাহলে কি হবে ওর নিলাদ্রিতার। জানে, মৃত্যুর স্বাদ একদিন সবাইকে গ্রহন করতেই হবে। তবে এখন ভূমিকে একা রেখে সে যে মৃত্যুকে গ্রহন করতে পারবে না। কি হবে আরাভ না থাকলে, ভূমি ওকে ভূলে যাবে। অন্যকাউকে নিয়ে নিজের জীবন শুরু করবে। আরাভের নিলাদ্রিতাকে অন্যকেউ ভালোবাসবে, আদর কারবে। না এটা সে সহ্য করতে পারবে না। এদিক থেকে আরাভ বড্ড স্বার্থপর। কথাগুলো ভাবতেই দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসে আরাভের।
শুধু আরাভ না। যে কোন মানুষ তার অতি পছন্দের জিনিস বা প্রিয় জিনিসটা কাউকে স্পর্শ করতে দেয় না। সে তাকে সবার থেকে আগলে রাখে, নিজের কাছে রাখে। গভীর যত্নে পরম ভালোবাসায় আগলে রাখে। খুব প্রিয় জিনিসের অংশীদার মানুষ কোনদিন মেনে নিতে পারে না। এটাই বাস্তব, এটাই সত্য।সে একটু চোখের আড়াল হলেই মানুষটা যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে।
আরাভের বাহুবন্ধনে থেকে ভূমির অনেকটা হলেও স্বত্বি মিলেছে। ভূমি আরাভের বুকে মুখ গুজেই বলল,
” দিয়ার মৃত্যুটা কি এই “ডেথ এলিমেন্ট” এর কারনেই হয়েছে।”
আরাভ ভূমিকে ছেড়ে ওকে বিছানার উপর বসিয়ে নিজেও ভূমির পাশে বসে। তারপর বলে,
” হ্যা। দিয়ার মৃত্যুর জন্যে পুরোপুরিভাবে “ডেথ এলিমেন্ট কে দায়ি করে যায় না। তবে দিয়া আরো অনেক আগে থেকে ড্রা*গ এডিক্টেট। বছর খানেক হবে। দিয়ার কাজিন মিমি মানে তাহমিদের বোন ওরা সেও ডেথ এর শিকার। মিমির সাথে দিয়াও ড্রা*গ নিতো নিজেদের অজান্তে। তবে দিয়ার বয়ফেন্ড, সে ড্রা*গ সাপ্লাই করতো। “দ্যা কিং” এর হয়ে কাজ করতো ইমাদ। সেও ড্রা*গ নিতো তবে খুবই কম। ইমাদ কখনো দিয়াকে ড্রা*গ দিতো না। দিয়াকে ড্রা*গ দিতো অন্যজন। “কিং” এর হয়ে কলেজে অনেক স্টুডেন্ট-ই কাজ করে। তাদের মধ্যে একজন দিয়াকে ড্রা*গ দিতো। এই কথা ইমাদ জানার পর “কিং” এর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। ইমাদ জানায় সে আর তার হয়ে কাজ করবে না এবং পুলিশের কাছে “কিং” এর নামে কমপ্লেইন করবে। কিং মুখে কিছু না বললেও ডেথ এর কাছে ইমাদের কথা জানায়। এবং ডেথ এর প্ল্যান অনুযায়ী দিয়া প্রথমে ইমাদকে মারে ও পরে নিজে ছাদ থেকে ঝাপ দেয়। আর এই “কিং” টা কে জানো?”
” কে?”
” কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট, অভি।”
ভূমির চোখমুখ উৎফুল্ল হয়ে যায় মুহূর্তেই। উত্তেজিত হয়ে জিগ্যেস করে,
” ওই যে লম্বা সুন্দর কানে ইয়ার রিং পরা ছেলেটা।” আরাভ মাথা নাড়ালে ভূমি বলে, ” আরে সে তো আমাদের ক্লাসের ইশার বয়ফ্রেন্ড।”
আরাভ মৃদু হাসে। দুহাতের তালু ঘসে একটু নড়েচড়ে বসে।তারপর বলে,
” অভির আবার গার্লফ্রেন্ড। পর কতগুলা গার্লফ্রেন্ড আছে সে ও নিজেও হয়তো জানেনা। মেয়েদের সাথে কিছুদিন প্রেম প্রেম খেলা খেলে তারপর তাকে ড্রা*গ এডিক্ট বানিয়ে দেয়।” আরাভ এবার ভূমির মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, ” বাহিরের কোন খাবার খাবে না এমনকি কেউ কিছু দিলেও নিবে না সে তোমার যত পরিচিত হোক না কেন। আমি কোন রিক্স নিতে চাই না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কারো থেকে কিছু নিবে না। তোমার সব কথা মেনে চলবো। তুমি যা বলবে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো। তবে তোমাকেও একটা কথা দিবে হবে।”
” আমাকে?”
” হুম।”
” কি কথা শুনি।”
” তুমি নিজের খেয়াল রাখবে। সবার কথা ভাবতে গিয়ে নিজেকে ভুলে গেলে চলবে না।”
আরাভ হাসলো। তৃপ্তির হাসি। ভূমির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। তারপর বলল,
” মাথাটা একটু টিপে দাওতো। খুব ক্লান্ত লাগছে।”
” তুমি কিন্তু কথা দিলেনা।”
” আচ্ছা বাবা নিজের খেয়াল রাখবো।”
আরাভ ভূমির কোমড় জড়িয়ে শুয়ে রইলো। আর ভূমির হাত খেলা করছে আরাভের চুলের মাঝে।
________________________
সকাল সকাল ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হয়েছে দিগন্ত। গন্তব্য এখন মনিরুল ইসলাম।কম্পিউটার, ইন্টারনেট এসব সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম সবচেয়ে পারদর্শী। তাইতো নিজের সমস্যার সমাধান করতে মনিরুল ইসলামের স্বরনাপ্ন হয়েছে সে। গতকাল যখন আরাভের বলা কথাগুলো দিগন্ত ডিপার্টমেন্টে সব খুলে বলে তখন রফিক মির্জা দিগন্তকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেইস সলভ করতে বলে। না হলে এই কেইসে তিনি অন্যকাউকে ইনভলব করবেন। দিগন্ত ডিপার্টমেন্ট থেকে তিন দিনের সময় চেয়েছে এর মধ্যে সে ডেথ এর সাথে যোগাযোগ করার কোন না ক্লু নিশ্চয় পাবে। রফিক মির্জা দিগন্তকে তিনদিনের সময় দিয়েছে ডেথ সম্পর্কে আরে তথ্য নেওয়ার। দিগন্ত যেহেতু এই কাজ নিজের ইচ্চেতে নিয়েছে তাই সে এটা থেকে নড়বে না। এই ডেথ এর শেষ সেও দেখতে চায়। তাইতো সকাল সকাল মনিরুল ইসলামের শরণাপন্ন হলো সে। মনিরুল ইসলাম তাকে যদি সাহায্য করে।
বেশ উৎসুক নিয়ে তাকিয়ে আছে মনিরুল ইসলাম। দিগন্ত হাত মুচড়াহচ্ছে। কিভাবে তাকে কথাটা বলবে সেটা বুঝতে পারছে না। মনিরুল ইসলাম জিগ্যেস করলো,
” কিছু বলবেন ডিটেকটিভ দিগন্ত।”
” হ্যাঁ, আসলে আমি ডেথকে নিয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি। আমি চাই আপনি ডেথ সম্পর্কে জানতে আমাকে সাহায্য করুন।”
মনিরুল ইসলামের মুখটা গম্ভীর হলো। তবে মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই। সে জিগ্যেস করলো,
” কি তথ্য পেয়েছেন আপনি?”
দিগন্ত একটু নড়ে বসলো। বুক টানটান করে মাথা উচু করে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ডেথ বর্তমানে এক ধরনের ড্রা*গ পাচার করছে। যেটা সারাবিশ্বে নিষিদ্ধ। এমনকি এটা কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অজানা। সেই ড্রা*গ ডেথ পাচার কারছে। যার নাম দিয়ে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট। আমি চাই আপনি ইন্টারনেট থেলে এই ডেথ এলিমেন্ট সম্পর্কে আমাকে কিছু তথ্য বের করে দিন। আর ডেথ এর উপর একটু নজর রাখুন।”
মনিরুল ইসলাম মৃদু হেসে বলল,
” হ্যা সিউর। আমি অবশ্যই করবো। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে আমার ভালো লাগবে।”
দিগন্ত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” এবার তাহলে আমি আসি।”
মনিরুল ইসলাম ও দাঁড়িয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্যে। দিগন্ত হাত মিলিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যেতেই মনিরুল ইসলামের চোখমুখ রাগে লাল হয়ে গেলো। ধপ করে চেয়ারে বসে পেপার ওয়েটটা চেপে ধরলো। চোখমুখ শক্তকরে বলতে লাগলো,
” ডেথ এলিমেন্ট” পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এই অল্প সময়ে এতদূর পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব। তাহলে নিশ্চয় এর পিছনে অন্যকেউ কাজ কারছে। কে হতে পারে। কার এত বড় দুঃসাহস যে, ডেথ এর উপর নজর রাখে। কিছুক্ষণ ভাবার পর ওর মাথায় একটা নামই এলো, ” স্টার গ্রুপ।” অনেকদিন হলো এই গ্রুপের সাথে কথা হয়না। দেখতে হচ্ছে এবার।”
চলবে,,,,,,
#Mahfuza Afrin Shikha
#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৭]
কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনে সব শিক্ষক-ই ক্লাস ছেড়ে বাহিরে বেড়িয়ে আসে। কোথা থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে খুঁজতে সবাই এদিক ওদিক দেখতে থাকে। কলেজের পূর্বপাশে নতুন তৈরী হওয়া বিল্ডিং এর থেকে কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনা গেলে সবাই সেইদিকে ছুটতে থাকে। নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে সব জায়গায় রড সিমেন্ট কাঠ ফেলে রাখা, তার উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছে সবাই। তিনতলায় আসতে একটা ছেলেকে বেহুস হয়ে পরে থাকতে দেখে আরাভ দ্রুত পায়ে সামনে এগিয়ে যায়। প্রিন্সিপ্যাল সহ বাকি স্যারেরা হতবাগ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বেহুস হয়ে পরে থাকা ছেলেটার পাশেই হাটুগেরে বসে আছে দিগন্ত। তার পাশেই পরে আছে তার রিভালবার। দিগন্তের চোখ মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। আরাভের দিকে করুন চোখে তাকালো। আরাভ দিগন্তের চাহনি উপেক্ষা করে বলল,
” আপনি এই ছেলেটাকে শ্যুট করে দিলেন ডিটেকটিভ?”
” আমি শ্যুট করিনি। ওর নিজের লোকই ওকে শ্যুট করেছে।”
” নিজের লোক মানে। কি বলতে চাইছেন ডিটেকটিভ বয়।” সব স্যারের মাঝখান থেকে মনিরুল ইসলাম এগিয়ে এসে বলল। দিগন্ত তখন সবার দিকে একপলক তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
” আমি যখন কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম একটা ছেলে কলেজের ভিতরে প্রবেশ করছে। আমার ছেলেটাকে সন্দেহ হলো তাই আমি তার পিছু করতে করতে এখানে চলে আসলাম। এখানে এসেই দেখলাম সেই ছেলেটা এই ছেলেটাকে কিছু দিচ্ছে। আমি ওদের দিকে বন্ধুক তাক করে বললাম, ” একপাও নড়বে না, না হলে শ্যুট করে দিবো।” ছেলেদুটো বিষ্ময় চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি এক পা করে এগোচ্ছি তখনি ছেলেটা আমার পা বরাবর শ্যুট করে।আমি খেয়াল করতেই অন্যদিকে সরে যাই সেই সুযোগে ছেলেটা পালিয়ে যায়। তবে এই ছেলেটা পালাতে পারেনা। আমি তাকে ধরে ফেলি। এবং তাকে জেড়া করতেই সে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো অমনি এই ছেলেটার ঘাড়ে এসে গুলি লাগে। আমি তাৎক্ষণিক আশেপাশে তাকাতেই কাউকে দেখতে পাইনি।”
কথাগুলো বলে থামে দিগন্ত। মনিরুল ইসলাম ছেলেটার নাকের নিচে হাত রাখে তারপর পার্লস চেক করে বলে,
” হি ইজ ডেড।”
দিগন্ত বলল,
” আমি পারছি না, এই ডেথ এর সাথে কিছুতেই পেরে উঠতে পারছিনা। আজ আরো একজন নির্দোষের প্রান গেলো।”
আরাভ এতক্ষণ চুপচাপ সবটা লক্ষ করছিলো। এবার বলল,
” এই ডেথ খুব চালাক। আমার মনে হয় আপনি এই ডেথ পর্যন্ত সহজে পৌঁছাতে পারবেন না ডিটেকটিভ। আপনাকে আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে।”
মনিরুল ইসলামের মুখ যেন উজ্জল হলো। নিজেই নিজেকে বাহবা দিতে লাগলো। আসলে নিজের নামে প্রশংসা শুনতে কার ভালো না লাগে। সে বলল,
” সত্যিই এ ডেথ এর ক্ষমতা আছে বলতে হবে। এর কাছে পৌঁছানো অনেক কঠিন।”
আরাভ ভ্রু কুঁচকে তাকালো মনিরুল ইসলামের দিকে। আরাভের কেন যেন মনে হলো মনিরুল ইসলাম ডেথ এর প্রশংসা করছে। কিছুক্ষণ মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো। পাশ থেকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার বললেন,
” আপনারা যে যার ক্লাসে যান। আমি পুলিশকে খবর দিচ্ছি।পুলিশ এসে ডেড বডি নিয়ে যাবে।”
আরাভ কিছু বলবে তার আগেই মনিরুল ইসলাম দিগন্তকে বলল,
” আমার এখন ক্লাস নেই। আপনি আসুন আমার সাথে ডিটেকটিভ বয়। আপনার এখন বিশ্রাম প্রয়োজন।”
দিগন্ত না করতেই যাচ্ছিল মনিরুল ইসলাম জোর করে তাকে নিয়ে চলে গেলো আরাভ বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মনিরুল ইসলামের চলে যাওয়ার দিকে। আজ স্যারকে একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে স্যার আজ বেশ খুশী।
দিগন্তকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে এক গ্লাস ঠন্ডা পানি দিলো পান করতে। দিগন্ত এক নিঃশ্বাসে পুরোটা শেষ করে। মনিরুল ইসলাম সামনের চেয়ারে বসলো। দিগন্ত উশখুশ করছে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্যে। এখন তাকে ডিপার্টমেন্টে যেতে হবে।মনিরুল ইসলাম দিগন্তের সামনে এক প্যাক কেক রেখে বলল,
” আপনাকে দেখে ক্ষুধার্থ মনে হচ্ছে। কেকটা খেয়ে নিন। আমার এখানে আর কিছু নেই। আপাদত এটা দিয়েই ক্ষুধা নিবারণ করুন।”
দিগন্ত বলল,
” না না স্যার। তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি এখন আসছি। আমাকে একটু ডিপার্টমেন্টে যেতে হবে।”
” আরে ডিটেকটিভ বয়। রিল্যাক্স। বসুন আপনি। কেকটা আমার নিজের হাতে বানানো। খেয়ে বলুন কেমন হচ্ছে। আর আপনার ডিপার্টমেন্টে আমিও যাচ্ছি।”
দিগন্ত এমনিতেই ক্ষুধার্থ।সকাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র এক কাপ কফি খেয়েছে। মনিরুল ইসলামের অনুরোধ রাখতে এক টুকরো কেক মুখে পুরে দেয়। কেকের উপর কামড় বসাতেই দিগন্ত চোখ বন্ধকরে ফেলে। তারপর বলে, “ওয়াও জাস্ট এম্মেজিং।” মনিরুল ইসলাম হাসলো। দিগন্ত কেক চিবুতে চিবুতে বলল,
” আপনি বোধহয় রান্নাটা অনেক ভালো করেন।”
“এটা আমার হবি।” মৃদু হেসে বলল মনিরুল ইসলাম।
তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে দু’জনেই ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
______________________
পিসির সামনে মাথায় হেডফোন গুজে বসে আছে আরাভ। তার ডানপাশে তাহমিদ বা পাশে তুহিন আর পিছনে সোহান। তারা সবাই মিলে “স্টিবেন গোমস্” নামের একটা আইডি হ্যাক করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। স্টিবেন গোমস্’ গত হয়েছে প্রায় কুড়ি বছর আগে তবে তার আইডি এখনো চালাচ্ছে তার সহকারীরা। স্টিবেন গোমস্’ তিনি-ই একমাত্র ব্যাক্তি যে কিনা এই “দ্যা ফরবিডেন” ড্রা*গ সম্পর্কে সব তথ্য জানতেন। তিনি তার আইডিতে অত্যন্ত গোপন ভাবে সব তথ্য রেখে দিয়েছেন। এবং এগুলো রক্ষা এবং গবেষণার জন্যে অনেক সাইন্টিস্ট নিয়োজিত করেছেন। আরাভ এখন এই স্টিবেন গোমস্ এর আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করছে। আর কিছুক্ষণ পরে হয়তো সফলও হবেন ঠিক এই সময়ে পিসির উপর একটা নাম ভেসে উঠে” ডেথ কলিং” সবাই আশ্চর্য হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। ডেথ কল করেছে কেন? তাহমিদ বলল, “ডেথ এর কল রিসিভ করা উচিৎ।” সোহান তাহমিদের কথায় তাল মিলিয়ে বলল,” আমারও তাই মনে হচ্ছে। মনে হয় ডেথ কিছু বলতে চায়।” আরাভ সবার মতামত নিয়ে হেড ফোন খুলে কলটা রিসিভ করে লাউডস্পিকার দেয়। তখন ওপাশ থেকে ডেথ বলে উঠে,
” তোমরা আমার ইনফোরমেশন বাহিরে টান্সফার করছো। ঠিক করোনি। এর দাম তোমাদের দিতে হবে। ডেথ কাউকে ছাড়ে না।”
আরাভ কিছু বলবে তার আগই কল ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। তুহিন বলল,
” এই ডেথ এর মাথায় এখন চলছেটা কি?”
” খবর কোথাও না কোথাও থেকে লিংক হচ্ছে। আমাদের আরো সাবধানে চলতে হবে। আর হ্যাঁ এখন কোন তথ্যই বাহিরে লিংক করা যাবে না।” বেশ গম্ভীর হয়ে কথাগুলো বলল আরাভ।
আরাভের কথার গুরুত্ব বুঝিয় দিলো ওর গম্ভীরতা আর চোখের দৃঢ়তা। কেউ আর এই বিষয় নিয়ে কথা বলল না। সবাই আবার আগের কাজে মনোযোগ দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেদের কাজে সফলও হলো তারা। তবে তারা দ্যা ফরবিডেন নিয়ে যে তথ্য পেলো সেটা অবিশ্বাস্য ছিলো। এমনও ড্রা*গ থাকতে পারে। এতটা ভয়ংকর কোন ড্রা*গ হতে পারে কি!”
এরপর কেটে গেছে সপ্তাহ খানেন। মনিরুল ইসলাম প্রতিমুহূর্ত একটা কথাই ভেবে যাচ্ছে, এই স্টার গ্রুপ কার হতে পারে। এই কলেজের কেউ হতো হতে পারেনা। এই কলেজে ওর চেয়ে ভালো কম্পিউটার শিক্ষা কেউ জানেনা। তাহলে কে হতে পারে। এসবের মাঝেও অভিকে বলছিলো দিগন্তের উপর নজর রাখতে। একদিক অভি এসে খবর দিলো এই শহরে দিগন্তের কেউ নেই। তবে সে একদিন ভূমিদের বাড়ি গিয়েছিল। ব্যাস, মনিরুল ইসলাম পেয়ে গেলো স্টার গ্রুপের লোক বের করার উপায়। মনে মনে বলল, সরি মিছ আমাইড়া হাসানাত ভূমি। এই দিগন্তের জন্যে তোমাকে রেফার করতে হবে।
এর মধ্যেই শুরু হলে কলেজে সেমিনার। রেজাউল করিম নামের এক বিজ্ঞানি আসবে কলেজে। রেজাউল করিম একজন নিউক্লিয়ার সাইন্টিস্ট। তিনি নতুন নতুন অস্ত্র নির্মানের কাজ করেন। যেগুলো বাহিরে শত্রুর হাত থেকে নিজ দেশ রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়ে। এবার সেমিনারে তিনি তার নতুন স্পেশাল তৈরী করা অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করবেন। রেজাউল করিম এসে সেমিনারে আলোচনা করলেন এবং এই কলেজের স্টুডেন্ট থেকে আরো অনেক কিছু শিখলেন তিনি। তার চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয়। চারিদিকের লাইট অফ হয়ে। সবাই যখন নিজ নিজ মোবাইলে ফ্ল্যাশ জ্বালাতে ব্যাস্ত। ঠিক সেই সময় বড় পর্দায় আলোর দেখা মিলল এবং চারিদিকে আবার আলোকিত হলো। সবাই উৎসুক নিয়ে তাকালো পর্দার দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে পর্দার মধ্যে ফুটে উঠলো একটা মেয়ের ছবি। কয়েকটা ছেলে মেয়ের মুখ থেকে বেড়িয়ে আসলো, ভূমি। এটাতো ভূমির ছবি।” সবাই যখন পর্দার দিকে তাকিয়ে ভাবছে কি হতে চলেছে তখন পর্দায় ভেসে উঠলো আরাভ আর ভূমি কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি। সেদিন রেস্টুরেন্ট আরাভ ভূমিকে জড়িয়ে ধরেছিলো সেই ছবি। তার কিছু মুহূর্ত পর ভূমির কয়েটা শর্ট ড্রেস পরা ছবি ভেসে উঠলো। চারিদিকে যখন ভূমিকে নিয়ে হায়হায় করছে। ভূমি নিজের কান্না চাপাতে মুখে হাত দিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো। আরাভ এতক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সব দেখছিলো। আসলে এমন কিছু হতে পারে সেটা তার ধারণার বাইরে ছিলো। আরাভ দ্রুত তার লেপটপ অপেন করলো। কিছুক্ষণ টাইপিং করার পর যেটা দেখলো সেটা তার রাগ হলো। ডেথ এমন একটা কাজ কি করে করতে পারলো। তারপর দ্রুত আবার টাইপিং করতে লাগলো। যে করেই হোক এই ছবি এখনি সড়াতে হবে। একি এত নরমাল কোড ব্যবহার করা। তারমানে এটা ডেথ এর প্ল্যান, স্টার গ্রুপকে সামনে আনার জন্যে এটা ডেথ এর প্ল্যান ছিলো। দু আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করতে লাগলো আরাভ। কি করবে এখন। এই মুহূর্তে ডেথ এর সামনে যাওয়া মানে নিজের কাজ অসম্পূর্ণ রাখা। কিছুক্ষণ ভেবে উঠে দাঁড়ালো আরাভ। যা হবে পরে দেখা যাবে এই মুহূর্তে ভূমির সম্মান আগে বাঁচাতে হবে। আরাভ দ্রুত হাত চালিয়ে ছবিগুলো বন্ধকরে দিলো। তারপর নিজের লেপটপ অফ করে দৌড়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেল। দূর থেকে মনিরুল ইসলাম আরাভকে দেখে মৃদু হেসে বলল,
” আরাভ, তারমানে ড্রা*গ গ্রুপ আরাভ লিড করে। আর ডিটেকটিভ বয়কে খরব লিংক আরাভ করে। এবার খেলা জমবে তাহলো।” মুখ থেকে মিচ শব্দ করে আফসোসের সূরে বলল, মাঝখান থেকে বেচারি ভূমির সম্মান নষ্ট হলো। তবে যাই হোক এই মেয়েটা আমার কাজ সহজ করে দিবে। ” ক্রুর হাসলো সে।
চলবে,,,,,,,,
#Mahfuza Afrin Shikha.