#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ,২২,২৩ শেষ
[২২]
রাতের শহরে বাইক নিয়ে ঘুরে ঘুরে একটা বাড়ি খুঁজে যাচ্ছে আরাভ। আর টি প্লাজার ওনার আসলাম খানের বাড়ি খুঁজে পেতে এতটা কষ্ট হবে সেটা বুঝতে পারেনি। এতবড় বিজনেসম্যান এর বাড়ি খুঁজতে তাকে এত কাঠখড় পুড়াতে হবে ভাবেনি। উত্তরার সাত নং সেক্টরে এসে একটা ছেলেকে আসলাম খানের বাড়ি কথায় জিগ্যেস করতেই সে বলল এই নামে কাউকেই চিনে না। আরাভ ব্যর্থ আর হতাশাগ্রস্থ মন নিয়ে বাইকে উঠে বসে। সমনের রাস্তা বরারব অনেকটা পথ এগিয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, তবে কি শেষ পর্যন্ত ডেথ এর জয় হবে।হেরে যাবে আমাদের এতগুলো মানুষের এতদিনের পরিশ্রম। না ডেথ কিছুতেই জিততে পারেনা। তবে যে শেষ হয়ে যাবে আমাদের দেশ। এই দেশের গোপন তথ্য যদি অন্য কোন দেশে বিক্রি করে দেয় তাহলে আমাদের দেশ আবার অন্যদেশের গোলামি করবে। এই দেশের মানুষের উপর আবার শুরু হবে অন্যায় অত্যাচার শোষণ। এমনিতেই নীলকররা আমাদের কম অত্যাচার করেনি। তাহলে এবার কি করা উচিৎ? ডেথ এর সন্ধান ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। হাতে আছে আর মাত্র চারঘন্টা। ভাবনায় ডুবে বাইক চালাচ্ছে আরাভ এমন সময় ওর বাইকের সামনে এসে পরে একটা অর্ধবয়স্ক লোক। আরাভ ব্রেক করতে করতে লোকটা সাথে লেগে যায়। লোকটা রাস্তার পাশে পরে যায়। আরাভ দ্রুত বাইক থেকে নেমে লোকটার কাছে যায়। তাকে উঠিয়ে পাশে বসায়। লোকটা হাতে অনেকটাই লেগেছে। কুনুইয়ের পাশ থেকে রক্ত বের হচ্চে। আরাভ মাথা নিচু করে লোকটার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। লোকটা আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,
” তোমাদের বয়সের দোষ এটা। এই বয়সে তোমাদের মাথায় যে কত কি চলে। কোন কাজে ঠিক মতো মন দাওনা তোমরা। ফাকা রাস্তায়ও এক্সিডেন্ট করো। তা কোথায় যাচ্ছো?”
” এদিকেই। আসলে আমি একটা বাড়ি খুজছিলাম।”
“কার বাড়ি?”
” আসলাম খানের বাড়ি।”
” আসলাম খান! এদিকে তো কোন আসলাম খান নেই।
” আপনি কি এখানে অনেক আগে থেকেই থাকেন?”
” হ্যাঁ, ছোট থেকেই থাকি। এখানেই জন্ম এখানে বড় হয়ে উঠা।”
” আর টি প্লাজার ওর্নার আসলাম খান, চিনেন। ডাকাতের হাতে যিনি খুন হয়েছে।”
” সে তো অনেকবছর আগে মারা গেছে। তার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে তুমি কি করবে।”
” কোথায় বাড়ি?”
” ওই তো সামনে গিয়ে বামে দেখবে এটা রাস্তা তার কিছুদূর একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। সাদা রং করা।কিন্তু ওখানে তো কেউ থাকে না। ওনার বউ আগেই মারা গেছে তারপর সে। তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে একটা ছেলে আসে এই বাড়িতে। সেই দেখাশুনা করে বাড়িটা।”
আরাভ উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
” ধন্যবাদ আংকেল।”
লোকটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরাভ বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় আর লোকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আরাভের চলে যাওয়ার দিকে।
ধবধবে সাদা একটা আধুনিক ডিজাইনের ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে এসে বাইক দাঁড় করায় আরাভ। আশ্চর্যের বিষয় এই বাড়িতে একটা কেয়ারটেকার ও নাই। আরাভ গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। পুরনো এ্যান্টিক ডিজাইনের শোপিচ দিয়ে সাজানো বাড়ির ড্রয়িংরুম। আসবাবপত্র সবই আধুনিক। বাড়ির ভিতরটা রাজপ্রসাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আরাভ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বাড়িতে একটা মানুষের উপস্থিতি পেল টের পেল। আশ্চর্য এই বাড়িতে কি কেও থাকে না নাকি। সামনে শিড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। কেউ না থাকায় মন্দ হয়নি। শিড়ি দিয়ে উপরে উঠে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় আরাভ। ভিতর থেকে একটা মৃদু শব্দ আসছে। মন মাতাল করা শেই শব্দ। এই শব্দ সে আগে কখনো শুনছে কি না বলা মুশকিল। দরজায় টোকা দিতেই সেটা খোলে গেল। ভিতরে প্রবেশ করলো আরাভ। সামনে দিকে তাকাতেই আশ্চর্যের সিমা যে পেড়িয়ে গেলো। এ যেন কোন কম্পিউটার ল্যাব। আরাভ হতবিহম্বল হয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখতে থাকে। সামনে কালো হুডি পরিহিত একটা লোক বসে আছে মাথার অর্ধেকটা ডাকা তাই বুঝতে পারছে না লোকটা কে? আরাভ ভিতরে প্রবেশ করলো। লোকটা মাথা থেকে হুডি খুলে আরাভের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
” ওয়েলকাম, ওয়েলকাম মিস্টার জুহায়িন আহমেদ আরাভ।”
স্বস্তির শ্বাস ফেলল আরাভ। মনিরুল ইসলাম। তার ধারণাটাই ঠিক। এসবের মূলে আসলে মনিরুল ইসলাম। যেদিন প্রথম ডেথ এর নাম ধারন করে মনিরুল ইসলাম তখন তিনি এই কালো হুডি কিনেছিলেন। অদ্ভুত এক ক্ষমতা আছে এই হুডির। এটা পরলে নিজেকে খুব পাওয়ারফুল মনে হয়। মনিরুল ইসলাম আবার বললেন,
” আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?”
” কেন করছো এসব? নির্দোষ মানুষের প্রান নিয়ে খেলে তোমার কি লাভ?”
” পাওয়ায়, পাওয়ায়, বুঝলে। আর কি বললে, নির্দোষ। নির্দোষ তো আমার বোনটাও ছিল তাহলে তাকে কেন জিবন দিতে হলো।”
” তার শাস্তি তো তুমি দিয়েছো তোমার পালিত বাবাকে। তাহলে এই দেশ? দেশের প্রতি কেন এত বড় অন্যায় করছো? তুমি বুঝতে পারছো এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ।”
মনিরুল ইসলাম হাসলো। ভয়ংকর সেই হাসি। পুরো রুম কেপে উঠলো তার হাসিতে। তারপর বলল,
” ওদিকে তাকিয়ে দেখো ডাটা সেভেন্টি ফাইভ পারসেন্ট লোডিং। বাকি টুয়েন্টি ফাইভ হলেই সব গোপন ইনফরমেশন আমার হাতে।”
আরাভ হাসলো। ভিষন রহস্যময় সেই হাসি। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে পিসির সামনে গিয়ে বসলো। কিবোর্ডে হাত রাখতেই মনিরুল ইসলাম বলল,
” কিচ্ছু করতে পারবে না। না তুমি আমাকে মারতে পারবে আর না এই ডাটা লোডিং বন্ধ করতে পারবে। আর আমি না চাইলে তুমি এখন থেকে বেরও হতে পারবে না।”
আরাভ কিবোর্ডের উপর হাত রাখলো।চারিদিকে এক অদৃশ্য দেয়াল দ্বারা আবৃত। এখানে কোন ইন্টারনাল কোডিং ব্যবহৃত হয়েছে। যার পাসকোড শুধু মনিরুল ইসলামের জানা। এখন এখান থেকে বের হওয়া মুশকিল। চিন্তায় পরে যায় আরাভ। তবে সেটা মনিরুল ইসলামকে বুঝতে দেয়না। কিবোর্ড ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মনিরুল ইসালমের মুখোমুখি দাঁড়ায়। আরাভে মুখে লেগে আছে হাসি। রহস্যময় হাসি। যেটা দেখে রাগে শরীর কিড়মিড় করছে মনিরুল ইসলামের।
______________________
আরাভকে ওভাবে বেড়িয়ে যেতে দেখে চিন্তায় পরে যায় ভূমি। যাওয়ার আগে একবারও ভূমির সাথে কথা বলেনি নি। মনে হলো যেন ভূমিকে ইগনোর করলো সে। ভূমি আর বসে থাকতে পারেনা। অনিমা বেগমকে বলে আরাভের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে। বাড়ির গাড়ি নিয়ে ফ্ল্যাটের সামনে এসে দেখা হয় দিগন্তের সাথে। দিগন্ত হন্তদন্ত হয়ে আরাভের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছে। ভূমিকে দেখে দিগন্তের পা থেমে যায়। ভ্রুযুগলে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে ভূমির কাছে এসে জিগ্যেস করে,
” তুমি এখানে?”
“আরাভের সাথে দেখা করতে এসেছি।”
দিগন্ত কথার সমাপ্তি টানে।
” ওও আচ্ছা, আমিও ভিতরে যাচ্ছি। চল তাহলে।”
দু’জনেই ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজালে তুহিন এসে দরজা খুলে দেয়। দিগন্তকে দেখে প্রসন্ন হাসলেও ভূমিকে এক্কেবারেই আশাকরেনি। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ভূমির দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করে,
” ভাবি আপনি?”
ভূমি তুহিনের কথার কোন জবাব দেয়না। ওকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে গিয়ে আরাভকে ডাকতে থাকে। ততক্ষণে সবাই ভূমির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আরাভে দেখতে ন। পেয়ে ভূমি তাহমিদের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
” আরাভ কোথায়? ওকে দেখছিনা কেন?”
“আরাভ সন্ধার দিকে বের হয়েছে আর ফিরেনি।”
” কেথায় গেছে?”
” মনিরুল স্যারের বাড়ি। এতক্ষণে বোধহয় স্যারের সাথে দেখাও হয়েছে। এখন আর ওক নাম্বার ট্যাপ করা যাচ্ছে না।”
ভূমির মনটা কেমন বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। সবার দিকে একবার তাকালো। এখানে উপস্থিত সকলে খুব চিন্তায় আছে সেটা তাদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্চে। দিগন্ত প্রশ্ন করলো,
” তোমরা সবাই যাবে তো নাকি?”
” হ্যাঁ, এইতো বের হবো।”
” তাহলে আর দেরী করে কাজ নাই। চলো সকলে বেড়িয়ে পরি।”
” আমিও যাব।” বলল ভূমি।
তাহমিদ ভূমির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
” তুমি যাবে মানে?”
” হ্যাঁ যাব আমি আপনাদের সাথে।”
সবাই যখন বেড়িয়ে যাচ্ছিলো তখন ভূমি বলে উঠলো,
” আপনাদের সেফটি হিসাবে কিছু নিবেন না।”
তুহিন দাঁড়িয়ে বলল,
” সেফটি মানে!”
” আরাভ যাওয়ার সময় ওর বুলেট প্রুফ জ্যাকেট নিয়েছে। আপনাদের টাও নিয়ে যান যদি কোন প্রয়োজন হয়।”
“বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। এই তুমি কোনভাবে আরাভের রেড জ্যাকেট এর কথা বলছো না তো।” প্রশ্ন করলো তাহমিদ।
” হ্যাঁ, ওই রেড কালারের জ্যাকেট।
ভূমির কথা শুনে তাহমিদ তুহিন ও সোহান একে অপরের দিকে তাকালো। ওদের চোখমুখ জুড়ে অজানা আতঙ্ক। ভয়ে হতবিহম্বল। তিনজনে একসাথে বলে উঠলো,
” কিহহহ,,, আরাভ ওই জ্যাকেট নিয়ে গেছে আর আপনি এখন বলছেন। আপনার ধারনা আছে ওটায় কি আছে?”
ভূমি হতবিহম্বল চোখে সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আরাভ তো বলল ওটা বুলেট প্রুফ জ্যাকেট।”
” মিথ্যে বলেছে। ওটা বুলেট প্রুফ নয়। ওটা টাইমার জ্যাকেট। এক বিজ্ঞান মেলায় কিনেছিল আরাভ। আমরা যখন জিগ্যেস করলাম এটা দিয়ে কি করবি। তখন বলল, যদি প্রয়োজন হয় কোনদিন কাজে লাগাবো সেদিন।”
সোহানের কথা শুনে ভূমি দুপা পিছিয়ে যায়। আতঙ্ক চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে পরে। দিগন্ত ভূমিকে ধরে শোফার বসিয়ে ওর সামনে এক গ্লাস পানি ধরে। ভূমি সেদিকে না তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
” আমি এখনি আরাভের কাছে যাবো।”
___________________
মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে দুপা পিছিয়ে যায় আরাভ। অধোরে হাসি রেখে বলে,
” তোমাকে বলেছিলাম আইনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করো। আমার কথা শুনলে না।” এই বলে জ্যাকেটের চেইন খুলতে খুলতে পাশে তাকায়। পিসিতে স্পষ্ট ভাসমান ডাটা লোডিং এইটটি এইট পারসেন্ট। আরাভ সেদিকে তাকিয়ে বলল, “গ্রেট” আচ্ছা ডেথ তোমার মনে আছে আমি বলেছিলা, মৃত্য যেদিন তোমার সামনে এসে দু-হাত বাড়িয়ে ডাকবে সেদিন আর তোমার নিস্তার নেই।” এই বলে জ্যাকেটের পুরো চেইন খুলে দিলো। তারপর মনিরুল ইসলামের দিকে দু-হাত বাড়িয়ে বলল,
” এই নাও, আজ আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়েছি তোমার মৃত্যু হয়ে। ডাকছি তোমায় দুহাত বাড়িয়ে।”
আরাভের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠে মনিরুল ইসলাম। আরাভের বুক থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে। মনিরুল ইসলামের বুঝতে বাকি রইলো না, এই জ্যাকেটে টাইম বোম লাগানো আছে। মনিরুল আরাভের থেকে দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
” দূরে থাকো আমার থেকে। ভূলে যেওনা আমি তোমার সিনিয়র।”
আরাভ প্রাসন্ন হেসে জবাব দেয়,
” আজ আমি আমার সিনিয়র স্যার নয় ডেথ এর মুখোমুখি হয়েছি। আমার ভাবতেই অবাক লাগে মিস্টার মনিরুল ইসলাম উপস্ সরি ডেথ, একজন শিক্ষক হয়ে কি করে একটা জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করে। যেখানে শিক্ষকের ধর্মই হলো জাতিতে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া।”
মনিরুল ইসলাম আরাভের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এই ছেলে আটঘাট বেধেই এসেছে। দেশের প্রতি জাতির প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে এমন করতে পারে একটা মানুষ। যে নিজের জিবন দিতে দু’বার ভাবে না। আরাভ বলল,
” তুমি অনেক ট্যালেন্টেড ডেথ। তোমার ট্যালেন্ট যদি তুমি ভালোকাজে ব্যাবহার করতে তাহলে হয়তো আজ তোমার মৃত্যু হয়ে তোমার সামনে দাঁড়াতাম না। বরং আমার মতো হাজারজন তোমার মৃত্যুর পথ রুখে দাঁড়াতো। নিজেদের জিবন দিয়ে হলেও তোমাকে বাচাতো।তবে আফসোস, তুমি সেটার প্রাপ্য নও।”
আরাভের বুকের ক্ষত ক্রমশ গভীর হচ্ছে। ব্যথা করছে। যন্ত্রনায় ছটফট করতে তার পুরো শরীর। চোখের সামনে ভেসে উঠে তার নীলাদ্রিতার নিষ্পাপ মুখখানা। কতটা ভালোবাসা মিশে আসে সেই চাওনিতে। তার নীলাদ্রিতা অপেক্ষা করছে। তারই প্রতিক্ষায় সে প্রহর গুনছে। ফিরতে হবে তাকে। তবেই যে এই যন্ত্রনা থেকে তার মুক্তি মিলবে। মনিরুল ইসলাম ঠায় চেয়ে আছে আরাভের দিকে। আজ মনে হচ্ছে এই পুরো জিবনটাই বৃথা তার। এত এত পরিশ্রম কতে জিবন থেকে কি পেলো সে। সেইতো দিনশেষে হাজারজন মানুষের ঘৃনা আর অভিশাপ। প্রতিশোধের নেশার জিবনের মানেটাই ভুলে গেছে সে। হয়তো তারও থাকতো আজ আরাভের মতো এমন এক বন্ধু যে তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করতো। দুচোখ ভরে আসে তার। আজ জিবম নিয়ে তার বড্ড আফসোস হচ্ছে। আরাভ নিজের হাতের ঘড়ির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায় তারপর মনিরুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে। আর সাথে সাথে বিকট শব্দে উড়ে যায় পুরো ল্যাব হয়তো এই আধুনিক ডিজাইনের অতি যত্নের বাড়িটাও। আর তখনি এই বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয় তাহমিদ তুহিন সোহান ভুমি আর দিগন্ত। সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আগুনে লেলিহান শিখায় জ্বলসে যাওয়া বাড়ির দিকে। কি থেকে কি হলো করো বুঝে উঠার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পরে ভূমির দেহখানি।
চলবে,,,,,,
#Mahfuza Afrin Shikha
#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[২৩] শেষ
সকালের এক ফালি মিষ্টি রোদ এসে মুখে পরতেই চোখ পিটপিট করে বালিশে মুখ গুজে দেয় ভূমি। চাদরটা মাথার উপর পর্যন্ত টেনে নেয়। অনিমা বেগম জানালার পর্দাগুলো সাইট করে চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে ভূমির মাথা থেকে চাদর সরিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদরে সূরে ডাকলেন,
” ভূমি, অনেক বেলা হয়েছে এবার উঠ। কলেজে যাবি কখন?”
” আর একটু ঘুমাই না মামুনি।”
” এই না না। আজ কলেজে মেলা আছে সেকথা ভুলে গেলি।”
চাদর সড়িয়ে উঠে বসলো ভূমি। অনিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আজ কত তারিখ?”
অনিমা বেগম হাসলেন। ভূমির গালে হাত রেখে বললেন,
” ঘুম এখনো কাটেনি। আজকের দিন তো তুই কখনো ভুলিস না।”
ভূমি নির্বাক তাকিয়ে রইলো অনিমা বেগমের দিকে। অনিমা বেগমের চোখ ছলছল করছে। কম্পায়মান গলা। ভূমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়াল। ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল,
“এখুনি বের হবো। খাবার রেডি করো মামনি।”
অনিমা বেগমের চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পরলো জল। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভূমির বিছানা গুছাতে লাগলেন। বালিশের নিচে হাতরে একটা ফটোফ্রেম হাতে পড়লো। অনিমা বেগম ছবিটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। আরাভের হাসিমাখা এক ছবি। কোন এক পাহারে ট্টিপে গিয়ে তুলেছিলো ছবিটা। পিছনে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। প্রকৃতির মতোই সিগ্ধ আরাভের সেই হাসি। ছবিটা ঠিক জায়গায় রেখে বিছানা পরিষ্কার করলেন। ফটোফ্রেমের পাশে রাখা চিরকুটার দিকে হতাশার দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সেটা আবার বালিশের নিচে রেখে দিলেন।
ভূমি ফ্রেশ হয়ে একটা নীল শাড়ি পরে দুহাতে মুঠোভরতি নীল চুড়ি গড়িয়ে নিলো। কানে ঝুমকো চোখে গাঢ় কাজল ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পায়ে নূপুর পরে আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো। না খারাপ লাগছে না একদম আরাভের স্বপ্ন দেখা নীলাদ্রিতার মতো। দেয়ালে সাঁটানো আরাভের বড় ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল,
” সাজটা তোমার মনের মতো হয়েছে তো? আবশ্যই হয়েছে এমন রুপেই তো আমাকে দেখতে চেয়েছিলে তুমি। দেখো তোমার মনের মতো করে সেজেছি আজ। পুরো এক বছরপর তোমার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তোমার মনের মতো সাজবোনা তা কখনো হয়।”
ছবির উপর হাত বুলিয়ে তাতে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে গেলো ভূমি। অনিমা বেগমকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। আজ আবার কলেজে বিজ্ঞান মেলা। গত পাঁচবছর যাবৎ ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকের এই দিনে বিজ্ঞান মেলা হয়ে আসছে। এই মেলার প্রধান গেটে আরাভের বিরাট বড় এক ছবি টানানো থাকে। মূলত এই মেলাটা আরাভকে ঘিরেই। আজ থেকে ছয়বছর আগে আজকের এই দিনে দেশ ও জনতার কল্যান স্বার্থে নিজের জিবন ত্যাগ করেছিলো এই কলেজের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের লেকচারার জুহায়িন আহমেদ আরাভ। তারই মৃত্যুর স্বরনার্থে এই মেলার আয়োজন। হ্যাঁ এর মাঝেই কেটেগেছে ছয় বছর। এই বছরগুলোর এক একটা দিন ভূমির জন্যে এক একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। সেদিনের দুর্ঘটনায় নিজের মানসিক ভারসাম্য হাড়িয়ে ফেলে ভূমি। ভূমির স্বাভাবিক জিবনে ফিরাটাও এতটা সহজ ছিলোনা। পুরো দুইবছর মানসিক হসপিটালে চিকিৎসায় আজকে সুস্থ জিবন যাপন করছে ভূমি। ভূমির সুস্থ জিবনে ফিরে আসার পর তাহমিদ ভূমির হাতে একটা চিরকুট তুলে দেয়। আরাভের লেখা চিরকুট। সেদিন চিরকুট পরে খুব কেদেছিল ভূমি তারপর থেকে আজ অব্ধি কাদে নি সে। ভূমি সুস্থ হয়ে পুরোপুরিভাবে আরাভের বাড়িতে চলে আসে। তখন অনিমা বেগমের পাশে দাঁড়ানোটা ঠিক মনে করেছে। আজ পর্যন্ত ভূমি অনিমা বেগমের সাথেই থাকেন। দিগন্তের পরিবার ভূমিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ভূমি তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে দিগন্ত অন্যকাউকে বিয়ে করে। আজ ওদের ঘর আলোকরে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। তাহমিদ এখন এই কলেজের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের হেড। আগে যেখানে মনিরুল ইসলাম ছিলেন। রেদওয়ান পুলিশে জয়েন করেছে। তুহিন সোহান সবাই আজ স্যাটেল।ভূমিও আজ একজন লেকচারার। ভাসানী কলেজের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের লেকচারার। তন্ময় বাবা মাকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলেগেচে। ওখানে একটা কোম্পানিতে জব করে সে। ভূমি রিক্সা থেকে নেমে একটা ফুলের দোকানে গেলো। একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে হাটা শুরু করলো কলেজের উদ্দেশ্য। কলেজের পাশে একটা জাগায় এসে দাঁড়ালো সে। সামনের সোনালি অক্ষরের নামটার দিকে তাকাতে চোখ স্থির হয়ে গেলো। বুকের ভিতরটা চাপা ব্যথায় আর্তনাদ হয়ে উঠলো। বড় বড় করে সোনালি অক্ষরে লেখা জুহায়িন আহমেদ আরাভ। ভূমি তার পাশে দাঁড়ালো। নামের উপর হাত বুলিয়ে গোলাপগুচ্ছ রাখলো। তারপর বলতে লাগলো,
” আমাকে আজ কেমন লাগছে বলবে না। নাকি আজও চুপ করে থাকবে। গত চারবছর ধরে তো শুধু আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি। আরাভ তুমি কি শুনতে পাও আমার কথা। শুনতে পাও আমার বুকের ভিতরের আর্তনাদ। কেমন নিশ্চিতে ঘুমিয়ে আছো। তোমার নীলাদ্রিতার বুকের ক্ষতটা সারাবে না। তার চোখের জল মুছিয়ে দিবে না।”
প্রিন্সিপ্যাল স্যারসহ আরো কয়েকজন স্যার ম্যাম এসে দাঁড়ালো ভূমির পাশে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার ভূমির মাথায় হাত রেখে বললেন,
” কাঁদিস না মা। আরাভ তোর আর্তনাদ শুনতে পাবে না। মৃত মানুষ কারো চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারেনা।”
ভূমি শীতল চোখে স্যারের দিকে তাকালো। তারপর আরাভের কবরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসলো দিগন্ত তুহিন সোহান রেদওয়ান তাহমিদ। তাদের সকলের চোখেজল। সবাই আরাভের কবরের উপর ফুলের তোড়া রেখে আর আত্নার মাগফেরাতের জন্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রার্থনা করলো।
সারাদিন মেলার কাজে ব্যাস্ত থাকায় বিকালে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয় ভূমি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছে তখন একটা গাড়ি এসে থামলো ভূমির সামনে। ভূমি একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়। বিরক্ত হয়ে সামনে তাকাতেই দেখে একটা সুদর্শন যুবক, বয়স আনুমানিক ত্রিশ বত্রিশ হবে। যুবকটা হাসি মুখে এগিয়ে আসলো ভূমির দিকে। ভূমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বলল,
” ডক্টর আপনি?”
” এদিকে এসেছিলাম একটা কাজে। বাড়ি যাচ্ছেন? চলুন ড্রপ করে দিচ্ছি।”
” ধন্যবাদ আপনাকে। আমি চলে যেতে পারবো।”
” আরে চলুন না। আপনার বাড়ি যাব। অনেকদিন মামির সাথে দেখা হয়না এই সুযোগে দেখাটা করে আসবো।”
যুবকটার জোরাজুরিতে ভূমি বাধ্য হয় তার সাথে যেতে। গাড়িতে ভুমি চুপচাপ বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ একটা নাম শুনে পাশে তাকায় ভূমি।
“নীলাদ্রিতা,,,,
ভূমি আশ্চর্য চোখে পাশে তাকায়। যুবকটা তার ভুল বুঝতে পেরে জিব কাটে। মৃদু হেসে বলে,
” আরাভ আপনার ঠিক নামই দিয়েছে। এই সাজে আপনাকে একদম নীলাদ্রিতা, নীলাচল নীলাঞ্জনার মতো লাগছে।”
” আপনি??
” আরে ম্যাডাম আমি সব জানি। ভুলে যাবেননা আপনার চিকিৎসাটা আমিই করেছি।”
বিরক্তিতে মুখে চ উচ্চারণ করে ভূমি। তারপর বলে,
” প্লিজ আমাকে এই নামে ডাকবেন না। আমি চাইনা আর কেউ আমাকে এই নামে স্বম্বোধন করুক।
“আচ্ছা সরি।” আমনে ড্রাইভ করে যুবকটা। পাশে ভূমির দিকে একপলক তাকিয়ে বিড়বিড়াল,
” আমি তো শুধুমাত্র আরাভের ভালোবাসার পাখিটা আমার হৃদ আকাশে মুক্ত করে দিতে চেয়েছি।”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে যুবকটা। মনেমনে বলল,
” আরাভ আমার কাজিন হলেও আজ ওকে আমার বড্ড হিংসে হয়। ও আজ না থেকে তোমার মনে জুরে বিরাজ করছে। আর আমি তৃষ্ণার্ত পাখির ন্যায় চেয়ে আছি কখন তোমার একটু ভালোবাসা পবো। দুবছর তোমার ট্রিটমেন্ট করেছি। তোমার গল্প শুনে তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছি। অথচ আমি জানি কখনো আমার এই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না।”
___________________
কলিংবেল বাজাতেই অনিমা বেগম দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে দেখে অনিমা বেগম বলে উঠলেন,
” আরে মাহির তুই। এতদিনে মনে পরলো মামির কথা।”
মাহির, ডক্টর মাহির খান একজন সাইক্রিটিয়াস। মাহির অনিমা বেগমের গলা জড়িয়ে বলল,
” ও মাই সুইচ মামি। রাগ করোনা। জানোই তো ব্যাস্ত থাকি।”
” ঠিক আছে আয় ভিতরে আয়।”
অনিমা বেগম মাহিরকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসলেও ভূমি নিজের রুমে চলে যায়। মাহির ভূমির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। তারপর বলল,
” ম্যাডাম এখনো নিজের সিদ্ধান্তে অটুট।”
” হ্যারে, ওর কিছুতেই বিয়ের জন্যে রাজি হবে না।”
” আরেকটু চেষ্টা করোনা মামি। আমার কিন্তু তোমার এই অবাধ্য মেয়েটাকেই চাই।”
” আমিও চাই ও কাউকে বিয়ে করে জিবনটা নতুন করে শুরু করুন। ওর যে পুরো জিবনটাই পরে রয়েছে।”
আজ রাতটা মাহির এই বাড়িতেই থেকে গেছে। রাতে ওর স্থান হয়ে আরাভের ঘরে। মাহির ঘরেময় পায়চারী করতে করতে বলল,
” তোর ঘরে জায়গা পেলাম ভাই। অথচ তোর প্রেমিকার মনের হোদিশ ও পেলাম না। তোর প্রেমিকা শুধু পুড়াতে জানে। তার ভালোবাসা অনলে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি সে খেয়াল কি রাখে। কি যে বিরহ তার প্রেমে। আমি তো পাগলা প্রেমিক হয়ে যাচ্ছি রে।”
বিছানায় হাতপা ছড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো মাহির। ঘুম নেই ভূমির চোখে। সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে উঠে পরে। বালিশের নিচ থেকে আরাভের রেখে যাওয়া চিরকুট নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোই পড়তে থাকে চিঠিটা। এই চারবছরে এতবার পড়েছে যে এটা না দেখেও গড়গড় করে বলতে পারে। তবুপ আরাভে হাতের স্পর্শ ছুলেই যেন মনের মধ্যে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যায়। চিঠিতে হাত বুলিয়ে পড়তে থাকে।
নীলাদ্রিতা,
চিঠিটা তোমার হাতে, তাহলে হয়তো আমি আর এই পৃথীবিতে নেই। কেমন আছো নীলাদ্রিতা? নিশ্চয় আমার উপর খুব রেগে আছো? আমিও তোমাকে খুব মিছ করছি নীলাদ্রিতা। খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে।
আচ্ছা পরের জন্ম বলে হয়কি কিছু? যদি কখনো হয় তাহলে সেই জন্মে তোমাকে প্রেমিকা নয় নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসাবেই চাইবো। কেন জানো? তোমাকে খুব কাছ থেকে ভালোবাসার সুযোগ হয়ে উঠেনি আমার। লোকলজ্জার ভয়ে তোমার জন্যে মন উতলা হলেও তোমার কাছে যেতে পারিনি। পারিনি অফিস থেকে ফেরার পথে তোমার জন্যে তরতাজা বেলী ফুলের একটা মালা কিনতে। পারিনি রাত বিরাতে হঠাৎ তোমাকে নিয়ে পিচডালা রাস্তায় হাটতে। খুব করে চেয়েছি এককাপ চায়ে রাত বিরাতে আমাদের আলাপ হোক। আমার বুকের মাঝখানটা তোমার রাতের বালিশ হোক। পারিনি তোমার হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে বলতে, ” কখনো ছেড়ে যেওনা আমায়।” যদি কখনো সুযোগ হয় তোমাকে চাওয়ার তাহলে এই হতভাগা প্রেমিক তোমাকে কেবল নিজের স্ত্রী রুপেই চাইবে। আমি শুধু তোমার ভালোবাসার মনুষ হতে চাইনি। চেয়েছি তোমাকে ভালোবেসে তোমার সুখ দুঃখের ভাগীদার, তোমার হাসি কান্নার অংশীদার, খারাপ সময়ে তোমাকে মানুষিক সাপোর্ট দেওয়ার একজন নির্ভরযোগ্য মানুষ হতে। তোমাকে খুব কাছ থেকে ভালোবেসে যাওয়ার বড্ড ইচ্ছে আমার। একবার তোমাকে এত করেও চেয়ে পাইনি পরেরবার এই সুযোগ আমি কিছুতেই মিছ করবো না। কিছুতেই না। নীলাদ্রিতা, নীল শাড়িতে যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন তোমাকে নিয়ে একটা স্বপ্ন বুনেছিলাম, জানো আমার সেই স্বপ্ন! উহ তোমাকে তো বলা হয়নি আমার সেই স্বপ্নের কথা। ” আমার স্বপ্ন- “নীল শাড়ি তে খোলা চুলে আমার হাত ধরে হাটবে তুমি, অনেক বাতাসে যখন তোমার চুল তোমার মুখে এসে পরবে, তখন পরম মমতায় মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিব আমি। ছুঁয়ে দিব তোমার সুন্দর নিষ্পাপ মুখ টা। লজ্জায় তোমার সুন্দর মুখ টা লাল হয়ে যাবে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকব আমি, আর তুমি আমাকে উপহার দিবে, তোমার অদ্ভুত সুন্দর নিষ্পাপ হাসি টা। যে হাসিতে ঝড়বে মুক্তো আর ফুটবে ফুল, কৃষ্ণচূড়া ফুল !! হারিয়ে যাব আমি সেই হাসি তে…
আর তোমার পায়ে নুপুর পড়িয়ে দিব আমি। তুমি হাঁটবে আমি কান পেতে শুনবো তোমার নূপুরের ধ্বনি!! তোমার সুন্দর পা গুলোতে সুন্দর নুপুর বাজবে, আনমনে তাকিয়ে থাকবো আমি। হঠাৎ করেই তুমি জড়িয়ে ধরবে আমায়। তোমার শরীরের মিষ্টি গন্ধ আমার নাকে আসবে। আদরে আদরে শিহরিত হবে তুমি…
এলোমেলো বাতাসে কোন এক রাজকন্যার শাড়ির আচল উড়ছে, তা দেখে চাঁদ মামা লজ্জায় পালাবে!! পুরো দুনিয়া অন্ধকার হওয়ার আগেই আরো একটা সুন্দর আলো আমার চোখে ভাসবে, তোমার আলোয় আলোকিত হবে পৃথিবী। ফুল ফুটবে, গান গাইবে পাখি, আকাশে সাত রঙা প্রজাপতির মেলা বসবে।!! অবাক পৃথিবী আশ্চর্য হয়ে তোমার পানে তাকিয়ে থাকবে।…
গভীর আবেশে তোমার কোলেই ঘুমিয়ে পরবো আমি। হঠাৎ ঘুম ভাঙবে আমার। তাকিয়ে দেখবো, আমার রাজকন্যা টাও ঘুমিয়ে গেছে। তোমার চুল গুলো নেড়ে দিব আমি। তখনই জেগে উঠবে তুমি। ঘুম থেকে উঠেই দেখবে তোমার পাশে একটি লাল গোলাপ!! আমার পক্ষ থেকে গোলাপ টা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাবে। অবাক হয়ে তাকাবে তুমি। গোলাপ টাকে বলবে, কিগো ফুল, সুগন্ধ নেই কেন তোমার??
গোলাপ বলবে, এক দেশে কি দুই রানী বাস করে?
একি তুমি কাঁদছো নীলাদ্রিতা! তোমার চোখের জল সহ্য করার ক্ষমা আমার কোনদিনও ছিলো না। আজও নেই। তাই বলছি প্লিজ চোখের পানিটা মুছে নাও। কি ভেবেছ মরেগেচি বলে তোমার থেকেও দূরে চলে গেছি। তুমি ভূল নীলাদ্রিতা। আমি তোমার খুব কাছে আছি। চোখটা বন্ধকরো, দেখবে তোমার চোখের সামনে আমি। প্লিজ আর কাঁদবে না। আমাকে বাঁচিয়ে রাখো তোমার হাসিতে। তোমার ঠোঁটের সিগ্ধ নির্মল হাসিটা আমি বড্ড ভালোবাসি। সবসময় তোমার মুখে হাসি দেখতে চেয়েছি। আমাকে বাঁচিয়ে রাখোনা তোমার ওই হাসিতে। তোমার হাসিতেই যে আমার সব শান্তি। একটা কথা রাখবে? নিজের জিবনটা নতুন করে শুরু করো। কি ভাবছো? আমি স্বার্থপরের মতো কথা বলছি। কি করে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছি। আমি কিন্তু এতটাও ভালোমানুষ না। নিজের ব্যাক্তিগত মানুষটা আমি কাউকে দিবো না। শুধু একবার চলে আসো আমার জগতে। এখানে যে আমি তোমার জন্যে অধীর আগ্রহে বসে আছি।আমার জগতে তেমার নিমন্ত্রণ রইলো। এখানে তুমি সম্পূর্ণ আমার, আমার। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছ সেই প্রর্থনা করি। তোমার জগতে তোমার ভালো থাকার অধীকার আছে। তাই বলছি নিজের জিবনটা নতুন করে শুরু করো। আর একটা কথা রাখবে আমার। আমার মা-কে একটু দেখো। আমি ছাড়া তার আর কেউ নেই। আমার মা-কে একটু ভালোবাসবে নিলাদ্রিতা? ভাবছো তো কেমন ছেলে আমি? একমাত্র মা-কে রেখে কেন এই পথ বেছে নিলাম। যখন আমি এই ডেথ এর ধ্বংসের পরিকল্পনা করি তখন জানতাম না এর পরিণাম এতটা ভয়াবহ হবে। এখানে আমি না হলে অন্য যে কাউকে তার জিবন দিতে হতো। ডেথ আমাদের মতো সাধারণ ছিলো না।” অনেক আশা নিয়ে রেদওয়ান তুহিন তাহমিদ সোহনকে নিয়ে হ্যাকিং গ্রুপ ক্রিয়েট করি। ওদের লিড করতাম আমি। দলের লিডার হয়ে অন্যকাউকে কি করে মৃত্যর দিকে ঠেলে দিতাম আমি। কার্থেজের “হার্নিবল” নামটা নিশ্রয় শুনেছ। তারপর স্কপিও। আমি নেপোলিয়ন, ওয়েলিংটন জীবন বিস্তৃতি পরিসরে অধ্যায়ন করেছি যাতে ওদের মতো করে আমার দলকে লিড করতে পারি। তারপর ওয়াশিংটন, লিংকন, জেনারেল জর্জ প্যেটন, ডেয়াইট আইশেনোয়্যার, ওমর ব্রাডলে প্রমুখ ইত্যাদি আরো অনেকে আছে। যারা সেই সময়ের বিখ্যাত নেতা ছিলেন। আমি ভালোভাবে দল লিড করেছিলাম, তবে যখন ডেথ এর পুরো পরিকল্পনা জানতে পাড়লাম তখন আর কিছুই করার ছিলো না। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সাহসিকতা অন্যতম গুন। আর সাহসিকতার অন্যতম লক্ষণ প্রতিজ্ঞায় অটুট থাকা। ফলাফল যাই হোক প্রতিজ্ঞায় অটুট থাকতেই হবে। তাই আমি আর পিছপা হতে পারিনি।
এই চিঠির সাথে আমি একটা চেইন রেখে গেলাম। সাথে আমার নামের লকেট। ইচ্ছে ছিলো আমাদের সোহাগ রাতে নিজ হাতে পরাবো তোমার গলে। সেটা তো আর হলো না। এটা তুমি নিজে পরে নিও। মনে রাখবে আমি সবসময় তোমার সাথে আছি।
ভালো থেকো নিলাদ্রিতা, আর নিজের জিবনটা নতুন করে গুছিয়ে নিও।
ইতি,
তোমার হতভাগা প্রেমিক।
চিঠিটা বুকের মাঝে ধরে রাখে। তারাভরা দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
” অথচ আমি আমার এই হতভাগা প্রেমিকটাকেই চেয়েছি স্বামি রুপে।”
তুমি বলেছিলে অন্যকাউকে বিয়ে করে নিজের জিবন শুরু করতে। একবারও ভাবোনি এই কাজ করা কতটা কঠিন। কতটা যন্ত্রনার। আমি তো মনে প্রানে তোমাকেই স্বামি হিসাবে মেনে নিয়েছি সেখানে অন্যকেউ? সম্ভব না। আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারলাম না। জানো খুব করে ইচ্ছে করে তোমার কাছে চলে যায়। এ বুকে লুকানো যত কষ্ট আছে সবটা কেঁদে ভাসিয়ে দেই তোমার বুকে। কষ্ট হয় আমার। খুব কষ্ট হয়। তুমি তো তোমার জগতে আমার জন্যে অপেক্ষা করছো। আমি না হয় এজিবনটা প্রতিক্ষায় কাটিয়ে দিবো। তবু তো আমরা এক হবো তোমার রাজ্যে। যেখানে আর হাড়ানো ভয় থাকবে না। আমি যে তোমার আমন্ত্রণের প্রতিক্ষায় দিন গুনছি। তোমার করা নেমন্ত্রণ আমি মনে প্রানে সুপে নিয়েছি। তাইতো আর এই জিবনে কারো ঠাঁই হলো না। ভালোবাসি তোমায় খুব ভালোবাসি।
সমাপ্তি,,,,,,,,,