#রক্তিম_চন্দ্র
#পর্ব_১৩(শেষ পর্ব)
#তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী
রক্তিম চন্দ্র উঠার সময়…
ভ্যাম্পায়াদের ১১টা রাজ্যের মধ্যে দুরত্ব বহুদূরই বলা যায়। পৃথিবীর একটা কিনার থেকে ঠিক মধ্যবর্তী স্থানের মাঝে যতটা দূরত্ব ঠিক ততটা।
দূরুত্ব যতই হোক। ১১ রাজ্যের অবস্থান করছে একটি বিশাল ময়দানকে ঘিরে। সবগুলো রাজ্য থেকে সেই ময়দানের দূরত্ব সমান। বলা হয়, ময়দানটাই হচ্ছে ১১ রাজ্যের কেন্দ্র বিন্দু।
বহুদিন কোনো ভ্যাম্পায়ার এই ময়দানে পা রাখেনি। প্রয়োজনও পড়ে নি। কেউ চায়নিও আসতে। এই ময়াদানে শুধু ধ্বংসের যুদ্ধ হয়। সকল রাজ্যের ভ্যাম্পায়েরা শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকতে পছন্দ করে। নিজের মধ্যে ততটা ঝামেলা করে না।
এতদিন তাই ছিল। কিন্তু ১০ টা রাজ্যের ভ্যাম্পায়ার কিং-দের কর্মকান্ড সম্পর্কে তাদের রাজ্যের ভ্যাম্পায়াররা সবি জানলেও বলার সাহস কারো ছিল না। কিং-দের হুকুম না মানলে পরিণতি খারাপ হতো। নিশ্চিত মৃত্যু। তাই কখনো কেউ সেই সাহস করে নি।
বিশাল এই যুদ্ধের ময়দানটা গোলাকৃতির। চারদিকে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। ময়দানের মাঝ বরাবর থেকে কিছু অংশ সমতল ভূমি। যেখানে যুদ্ধ হবে কিং-দের। সমতল ভূমি যেখানে শেষ সেই জায়গার চারদিক আটকে দেওয়া হয়েছে। সমতল থেকে উপরের দিকে উঠে যাওয়া স্থান গুলোতে ভ্যাম্পায়ারদের যুদ্ধ দেখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ময়দানে প্রবেশের জন্য দু’টো বিশাল বিশাল দরজা দু’দিকে। দুটো দরজার সামনা সামনি। দরজা গুলোর উপরে এক পাশে রয়েছে কিং-দের বসার ব্যবস্থা আর অন্য পাশে ভ্যাম্পায়ারদের ঈশ্বরের বসার ব্যবস্থা।
এই লড়াইয়ের কোনো নিয়ম নেই। অভিশাপ মুক্তির জন্য লড়াই। যে কিং হারবে সে সরাসরি খোলা ময়দানে সকলের চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি কোনো কিং পরাজয় স্বীকার করে তাহলে সে বেঁচে যাবে আর যার সামনে পরাজয় বরণ করবে তার অধীনে থাকবে। তার কথায় সব করতে হবে।
রক্তিম চন্দ্র উঠতে বেশি সময় বাকি নেই। সকল রাজ্যের ভ্যাম্পায়াররা এসে ইতিমধ্যে হৈ হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। কিং হলিকের রাজ্যের সকল ভ্যাম্পায়ার আজ মুক্ত করা হয়েছে এই লড়াই দেখার জন্য।
১০ রাজ্যের কিং-রা ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছে। সকলের পরনে ভ্যাম্পায়ারদের বিশেষ ভাবে তৈরি যুদ্ধের পোশাক। তারা সকলে তাদের নিজ নিজ আসনে বসে রয়েছে। তাদের মধ্যে কে প্রথম যাবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তারা ভেবে চলেছে কাকে সবার প্রথম পাঠানো যায়।
“কিং সিরবিয়া, কাকে পাঠানো যায় যুদ্ধের জন্য প্রথমে,” বলে উঠল নুইরাস।
“হুম,” কিছুক্ষণ ভাবল সিরবিয়া। সবার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। সকলকে একটু অপ্রস্তুত মনে হলো তার কাছে। নতুন কিং-এর শক্তি সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা নেই। কেউ নিজে গিয়ে প্রথমে যদি হেরে যায় ধ্বংস হয়ে যাবে সে। সকলকে প্রস্তুত কিনা দেখে হেসে উঠল কিং সিরবিয়া। “আপনাদের সকলকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনারা ততটা প্রস্তুত নন। আমি যেতে চাই সবার প্রথমে।”
এটা শুনে বাকী কিং-দের মুখে হাসি ফুটে উঠল। কেউ তো নিজ থেকে প্রথমে যাবার জন্য রাজি হয়েছে।
নুইরাস বলল, “আপনি পারবেন তো নতুম কিং এর সাথে?”
উচ্চস্বরে হাসল সিরবিয়া। বলল, “না পারার কী আছে? ওই নতুন কিং-কে হারানোর কিছু সময়ের ব্যপার মাত্র।”
“নতুন কিং সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তাকে হালকা ভাবে নেওয়ার কিছু নেই কিং সিরবিয়া,” বলে উঠল কিং স্রোতিস।
“যাচ্ছি তো আমি নাকি,” অহংকারী কন্ঠে বলল সিরবিয়া। “দেখি কতক্ষণ টিকতে পারে আমার সামনে!”
বলেই হো হো করে হাসতে থাকল সিরবিয়া।
***
যুদ্ধের পোশাক পরিধান করে দরজার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে রিপ। তার পাশে এসে দাঁড়ানো রেডিস ও জেনি।
রেডিস বলে উঠল, “তুমি নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করো নি, রিপ?”
“যতটুকু করেছি হয়তো এতেই সম্ভব হবে তাদের হারানো,” বলল রিপ।
“আমি তোমার ভিতরে যুদ্ধ জয় হওয়ার জন্য অস্তিরতা দেখেছি৷ আমি জানি তুমি পারবে। কিন্তু ধৈর্য হারিও না কখনোই,” নিচু কন্ঠে বলল রেডিস।
“হুম,” কিছু বলল না রিপ।
রেডিস আবারও বলল, “রিপ, তোমার সামনে ১০ জন। তাও তোমার সামনে তারা শক্তিশালী। তারা সকলেই অলৌকিক শক্তির অধিকারী। তাদের সাথে পারা অসম্ভব তোমার একার পক্ষে। এটাই তোমার ভাগ্য। হয়তো পেরে উঠবে না। কিন্তু ঈশ্বর যখন বলেছেন তুমি আমাদের অভিশাপ মুক্ত করাবে। তুমিই সেই একমাত্র পথ।” দীর্ঘশ্বাস ফেলল রেডিস। “ভরসা আছে। এখন সব তোমার হাতে। আশা নিয়েই সবাই বাঁচে।”
সব চুপচাপ শুনে গেল রিপ। কিছু বললো না।
“আজকে আমাদের ঈশ্বর আসবেন। সাদা কাপড়ের পর্দার আড়াল থেকে সব দেখবেন,” বলল রেডিস। “বিচলিত হয়ো না”
“হুম,” আর কিছু বলল না রিপ।
“এখন আমাকে যেতে হবে, রিপ। ঈশ্বর হয়ত এসে গেছেন ইতিমধ্যে। তার কাছে থাকতে হবে,” বলা মাত্রই রিপের কাঁধে হাত রাখল রেডিস। “জিতেই ফিরো।”
এবার আর চুপ থাকল না রিপ। বলল, “আপনাদের অভিশাপ মুক্ত করেই ফিরবো আমি।”
রেডিস তাকালো রিপের চোখের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে।
জেনি তাকিয়ে আছে রিপের দিকে এক দৃষ্টিতে। কিছু বলার সাহস হচ্ছে না ওর। ভিতরে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটার হয়তো এই যুদ্ধের পর ফিরে না আসতে পারে সেই ভয় রয়েই গেছে ওর মনে।
রিপ বলে উঠল, “আপনি কিছু বলবেন না, জেনি?”
মাথা নাড়িয়ে না-বোধক উত্তর দিল জেনি।
“আপনিও দাঁড়িয়ে না থেকে চলে যান আপনার বাবার কাছে,” স্বাভাবিক কন্ঠে বলল রিপ।
ঘুরে দাঁড়াল জেনি। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে তাকাল রিপের দিকে।
“আপনি আপনার সেই শক্তিটাকে খুঁজে পেয়েছেন?” আবেগ মাখা কন্ঠে বলে উঠল জেনি।
রিপ কিছু বললো না। একটু হেসে উঠলো রিপ।
জেনি হাসিটার কারণ বুঝতে পারলো না। ঘুরে চলে গেল সেখান থেকে।
***
রক্তিম চন্দ্র উঠে গেছে পুরোপুরি। বাতাসে মেঘেদের গর্জন ভেসে আসছে কানে। ঈশ্বরের হুকুমে যুদ্ধ শুরু করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো।
খালি হাতে মোকাবেলা করতে হবে। সাথে যে যার শক্তির ব্যবহার করতে পারবে।
প্রথমে রিপকে আহ্বান করা হলো লড়াইয়ের ময়দানে। রিপের নাম শুনতেই ভ্যাম্পায়ারদের মাঝে হৈ হুল্লোড় পড়ে গেল। রিপের নাম বলতে শুরু করলো সকলে একসাথে। সকলের ধ্বনিতে একটাই শব্দ শোনা যাচ্ছে, “কিং রিপ, কিং রিপ!”
রিপ দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। রিপ তাকে ডাকার আহ্বান পেয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল নিজেই। বেরিয়ে এলো সেখান থেকে। ময়দানের ঠিক মাঝ খানে এসে দাঁড়াল রিপ। সকলের মুখে তার নামের প্রতিধ্বনি দেখে আর শুনে ভালোই লাগছে তার। রিপ তাকালো সামনে থাকা দরজার উপরে। দেখতে পেলো ১০ টা রাজ্যের কিং-দের। রিপ কয়েকবার চোখ বুলিয়ে নিলো তাদের দিকে। রিপ বসে পড়লো সেখানে। ময়দানের মাটি দু’হাতে নিয়ে হাত ঝেড়ে নিয়ে উঠে পড়লো।
তারপর আহ্বান হলো কিং সিরবিয়ার। সিরবিয়া আসন থেকে উঠে দাঁড়াল। নিজের শরীরটাকে ঝাঁকি দিয়ে নিলো কয়েকবার। সামনে এগিয়ে এসে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে নিচে নেমে এলো। ময়দানের মাটি স্পর্শ পা দিয়ে স্পর্শ করলো আস্তে আস্তে।
রিপ আর কিং সিরবিয়া একে অপরের দিকে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। সিরবিয়া রিপকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলল। রিপ চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকে দেখতে লাগলো।
এরপর একটা বিশাল ঘন্টা বাজার মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু ঘোষণা দেওয়া হলো। রিপ আর সিরবিয়া দু’জনেই কয়েক পা পিছিয়ে গেল সেখান থেকে।
সিরবিয়া হাওয়াতে ভাসতে ভাসতে উপরে উঠে গেল। রিপ মাটিতে থেকেই তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
সিরবিয়া ঘুরতে লাগলো রিপের চারদিকে। উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো সিরবিয়া। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ সিরবিয়া তার হাত থেকে এক ধরণের লাল বর্ণের রশ্মি বের করে রিপের দিকে ছুড়ে মারলো। রিপের পিঠে এসে লাগলো সেই রশ্মি। লাগা মাত্রই গায়েব হয়ে গেল সেটা। রিপ নিজের সব শক্তি দিয়েও দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো সেখানে। রিপ খেয়াল করল তার মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আসছে।
সকল ভ্যাম্পায়াররা থেমে গেল। হৈ হুল্লোড় পরিবেশ মুহুর্তেই নিরিবিলি পরিবেশে পরিণত হলো। সকলে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে রিপের দিকে।
রিপ নিজের হাত দিয়ে রক্ত মুছে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল সেখানে। সিরবিয়া এতক্ষণ হেসেই যাচ্ছিল। রিপের দাঁড়ানো দেখে সিরবিয়ার হাসি থেমে গেল। সে ভাবলো, কীভাবে সম্ভব এটা? সবচেয়ে শক্তিশালী রশ্মি তার দিকে মারা হয়েছে। এর পরেও কীভাবে সে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারলো।
রিপের দাঁড়ানো দেখে আবারও সবার মাঝে হৈ হুল্লোড় শুরু হলো। “কিং রিপ, কিং রিপ” বলে চিৎকার শুরু করল সকলে।
সিরবিয়া আবারও রিপের চারদিকে ঘুরতে থাকলো। রিপ শুধু দেখে যাচ্ছে। কিছু করতে পারছে না। কারণ রিপ পারবে না সিরবিয়াকে ধরতে। খালি হাতে সিরবিয়ার সাথে মোকাবেলা করা কখনোই সম্ভব না। রিপ হাওয়ায় ভাসতেও পারবে না। ওর ভিতরের শক্তি এখনো বেরিয়ে আসেনি। ও জানে না তার শক্তি সে পাবে কী না এখন!
রিপের শরীরে একের পর এক রশ্মির মাধ্যমে আঘাত করে যাচ্ছে। রিপ আঘাত সহ্য করে যাচ্ছে কোনো রকমে। কখনো দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেও বেশির ভাগ আঘাতে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে।
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর সকলে ভেবেই নিলো রিপ আর পারবে না কিছু করতে। রিপ এক পর্যায়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মাটিতে। সকলের মাঝে নীরবতা। ভ্যাম্পায়াররা ভেবে নিলো শেষ হয়ে গেল রিপ। জেনি তার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। রিপের পরে যাওয়া দেখে সেও নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ল সেখানে। চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগল জেনির।
কিং হলিকের রাজ্যের সকলের আশা মুহুর্তে মাটির সাথে মিশে গেল। রেডিসও ঘুরে তার পিছে থাকা সাদা পর্দার দিকে তাকলো।
কিং সিরবিয়া উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। বলতে লাগল, “দেখো কিং হলিকের সাম্রাজ্যের ভ্যাম্পায়াররা, তোমাদের অভিশাপ…”
আর কিছু বলতে পারলো না সিরবিয়া। সব কয়েক মুহুর্তের জন্য নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল।
রিপ উঠে দাঁড়িয়ে কিং সিরবিয়ার পেছনে চলে গিয়ে পিঠে এমন একটা ঘুষি চালিয়েছে যে, সিরবিয়া মাটিতে পড়ে গেছে। কয়েকবার উঠতে গিয়েও উঠতে পারল না সে। রিপের উড়ার ক্ষমতা দেখে সবাই চমকে উঠেছে। হঠাৎ রিপের শরীরের চারদিকে সাদা আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসতে লাগল।
এটা দেখে জেনি উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। ওর মাঝেও যেন কোনো এক প্রাণ ফিরে এসেছে৷ রিপ তাকিয়ে দেখতে লাগল চারদিক। আবারো সকলে ওর নাম উচ্চারণ করে যাচ্ছে। কিং সিরবিয়া দাঁড়িয়ে গেল। ভেসে উঠল উপরে। এবার সিরবিয়া আরেকটা রশ্মি ছুড়ল রিপের দিকে। রিপ ওটাকে আটকাতে পারল না। ঠোঁটের এক পাশ ঘেষে চলে গেছে ওটা। ওখান দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগল। রিপ হাতের আঙুল দিয়ে সেই রক্তটা মুছে নিল। সাথে সাথে রিপ দেখল সিরবিয়া ওর সামনের দাঁত বড়ো করে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। বুঝতেও পারেনি রিপ। রিপের ঘাড়ে সিরবিয়া তার মুখ বাড়িয়ে দিয়েছে সমস্ত শক্তি দিয়ে। রিপ দু’হাত দিয়ে মাথাটা ধরে দূরে সরানোর চেষ্টা করল। কিন্তু পারছে না। রিপের শরীরের সমস্ত শক্তি যেন কম হয়ে গেছে সরিবিয়ার সামনে। দাঁত গুলো প্রায় বসিয়ে দিচ্ছে প্রায়, রিপ ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ এভাবে চলতে থাকল। সিরবিয়া জানে, একবার দাঁত গুলো বসিয়ে দিতে পারলে কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু রিপের শক্তি আচমকা বেড়ে গেল। মাটিতে ছুড়ে মারল সিরবিয়াকে। আছড়ে পড়ল সে। রিপ হঠাৎ আপনা-আপনি পড়ে গেল মাটিতে।।প্রচুর শক্তি চলে গেছে সিরবিয়াকে ঠেকাতে গিয়ে।
এরপর সিরবিয়া হাসতে হাসতে চলে আসল রিপের কাছে। কিছুক্ষণ হাত দিয়ে ঘুষি মারতে থাকল। তারপর দুগালে থাপ্পড়। রিপ হঠাৎ ঠেকিয়ে দিয়ে একই কাজ করল সিরবিয়ার সাথে। এভাবে কিছুক্ষণ একে অন্যকে আক্রমণ করে পরাজিত করার চেষ্টা করল। কিন্তু দুজনের অবস্থা একই।
সিরবিয়া লক্ষ করল রিপের শক্তি হ্রাস পেয়েছে অনেক। এরপর আবারো কামড়ে দিতে গেল রিপের ঘাড়ে। রিপ পড়ে ছিল মাটিতে। ওর শরীর প্রায় ক্লান্ত হয়ে আছে। যেই সিরবিয়া এবার কামড়ে দিতে গেল রিপের ঘাড়ে সেই ঘটল আসল ঘটনা। সবাই চুপচাপ হয়ে দেখতে লাগল সব। সকলেই দেখতে পেলো কিং সিরবিয়ার মাথা তার ঘার থেকে আলাদা হয়ে গেছে। সিরবিয়ার শরীর মাটিতে পড়ে গেল উপর থেকে। মাটি স্পর্শ করা মাত্রই আগুন জ্বলতে শুরু করল সেটা।
সকলে দেখতে পেলো রিপ হাওয়ায় উড়ছে জ্বলজ্বল করছে সাদা আলোই তার শরীর। তার হাতে কিং সিরবিয়ার মাথা। রিপের দেহের পরিবর্তন ঘটেছে। তার সামনের ভ্যাম্পায়ের মতো দু’টো দাঁত বেরিয়ে এসেছে। তার পিছনে একটা বিশাল ছায়া। ছাঁয়াটা কোনো দানবের।
জেনিও বিষয়টা দেখতে পেয়ে হাসি খেলে গেল ওর ঠোঁটের কোণে। রেডিসের চোখে মুখেও খুশির আবেশ পড়ল।
বাকি ৯ টা রাজ্যের কিং-রাও তাকিয়ে রইলো। চোখের পলকের মধ্যে সব ঘটে গেছে। কেউ বুঝতে পারলো না। কিন্তু ঘটনার পরিসমাপ্তি সবাই বুঝতে পারলো।
কিং হলিকের রাজ্যের ভ্যাম্পায়ারদের মধ্যে হৈ হুল্লোড় পড়ে গেলো আবার৷ নীরবতা কেটে গেল।
রিপ হাওয়া থেকে নেমে এলো মাটিতে।
৯ টা রাজ্যের কিং-দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এখন। তারা বুঝতে পারছে না এখন কী করবে? এবার আরেকজনকে যেতে হবে। কিন্তু কে যাবে? সকলের মনে একটাই ভাবনা, রিপের শক্তি সম্পর্কে ধারণা ছিল না কারো কিন্তু রিপের শক্তি দেখার পর আর কারো সন্দেহ নেই। এই লড়াইতে কেউ-ই পারবে না তার সাথে। তার দ্রুত গতি আর শক্তির সামনে কোনো কিং-এর শক্তি কিছুই না। সবাই আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রইল রিপের দিকে।
***
সব রাজ্যের কিং-দের মনে আতঙ্ক। চুপচাপ বসে আছে। এখন ২য় জনকে পাঠাতে হবে। কিন্তু কে যাবে সেটা তারা ঠিক করতে পারছে না। কেউ ধ্বংস হতে চায় না। যেখানে সবচেয়ে শক্তিশালি কিং সিরবিয়া গিয়েও কিছু করতে পারলো না। সেখানে তাদের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। চুপচাপ বসে আছে সকলে।
নীরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলো কিং স্রোতিস, “কে যেতে ইচ্ছুক আপনাদের মধ্যে?”
“কেউ কী যেতে চান না?” জিজ্ঞেস করল কিং নুইরাস।
“আপনাদের কী মনে হয় টিকতে পারবেন ওর সামনে কেউ?” পাশ থেকে অন্য একজন কিং বলে উঠল।
“সেটা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে সম্ভব না। তাই বলে নিয়ম অনুযায়ী কেউ কী চেষ্টাও করবেন না?” বলল কিং স্রোতিস।
সকলে চুপচাপ বসে রইল।
“সকলে চুপ করে থাকলে হবে?” জোর গলায় নুইরাস বলল।
“একটা উপায় আছে আমার কাছে। আপনারা চাইলে আমি বলতে পারি,” বলল আরেকজন কিং।
“কী উপায় বলে ফেলুন,” স্রোতিস চিন্তিত কন্ঠে বলল।
সেই কিং বলতে শুরু করল, “আমাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কে ছিল? কিং সিরবিয়া-ই ছিল। সে প্রথমে এগিয়ে গেল। প্রথমে সেই জিতবে বলে আমাদের মনে হয়েছিল কিন্তু অবশেষে জিতল কে? নতুন কিং রিপ। আমরা ভেবেছিলাম তার শক্তি কম। কিন্তু তার শক্তি আমাদের সবার থেকেও বেশি তাই নয় কী?”
“হ্যা। তা তো ঠিক বলেছেন আপনি,” বলে উঠল নুইরাস
সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে সেই কিং-এর কথা গুলো।
সেই কিং আবার বলতে শুরু করল, “এখন নিয়মানুযায়ী তার সাথে লড়াই করে হেরে গেলে ধ্বংস হতে হবে। আপনারা কেউ আশাকরি চাইবেন না ধ্বংস হতে। এখন নিয়মানুযায়ী আরেকটা উপায় হলো তার কাছে পরাজয় গ্রহণ করে তার অধীনে চলা। এতে আমাদের আর ধ্বংস হতে হবে না। নিজের রাজত্ব নিজেরাই ঠিক মতো চালাতে পারব আশা করি।”
সকলে চুপচাপ থাকলো কিছুক্ষণ। তার কথায় যুক্তি আছে। ধ্বংস হওয়ার থেকে তার কাছে পরাজয় গ্রহণ করা উত্তম।
নুইরাস বলে উঠল, “আমি একমত এই বিষয়ে। অন্যরাও কী একমত হবেন নাকি…?”
সকলেও একতম পোষণ করল। সকলে এক সিদ্ধান্ত নিয়ে আসন ছেড়ে উঠে গেল। সকলে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে নিচে নেমে রিপের সামনে এসে দাঁড়াল।
রিপ সকলকে একসাথে দেখে একটু ভরকে গেল। বলল, “আপনারা সকলেই কী একসাথে লড়বেন আমার সাথে? এটা তো কোনো নিয়মে ছিল না।”
“না। আমরা লড়তে আসিনি কিং রিপ,” নিচু স্বরে বলল নুইরাস।
রিপ বুঝতে পারল না কিং নুইরাস এর কথা। তাই বিস্ময় কন্ঠে বলল, “তাহলে!”
“আমরা পরাজয় স্বীকার করছি মহামান্য কিং রিপ।”
নুইরাস বলা মাত্রই সব কিং-রা হাঁটু গেড়ে বসে মাথা নিচু করে রইল।
রিপ হতভম্ব হয়ে গেল। কী ঘটছে তাদের সাথে। বলল, “উঠুন আপনারা।”
সকলে রিপের কথায় উঠে দাঁড়াল। রিপ উচ্চ স্বরে হাসতে শুরু করল। এ হাসি যেন থামবার নয়।
কিং হলিকের (বর্তমান কিং রিপ) রাজ্যের সকল ভ্যাম্পায়াররা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। অন্যান্য রাজ্যের ভ্যাম্পায়াররা তাকিয়ে চুপচাপ দেখে যাচ্ছে দৃশ্যটা।
***
সাদা পর্দার আড়াল থেকে মোটা গোলায় কথা ভেসে আসলো, “কিং রিপের রাজ্য এখন অভিশাপ মুক্ত। নিয়মানুযায়ী ১০ টা রাজ্যকে হারাতে পারলে কোনো কিং সে হবে সকল ভ্যাম্পায়ারদের মূল রাজা। যে শাসন করবে পুরো ১১ টা রাজ্য। তাকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেওয়া হবে। কিং রিপ তোমাদের অভিশাপ মুক্ত করার পাশাপাশি ১০ টা রাজ্যকে হারিয়েছে (একজন বাদে সবাই নিজ থেকে হার মেনেছে)। সেই প্রমাণ করে দিল সে তোমাদের সকলের সবাইকে শাসন করার হওয়ার ক্ষমতা রাখে।”
কথা শুনে সকল ভ্যাম্পায়ারদের মাঝে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে গেল। আনন্দের রেশ পড়ে গেল সকলের মধ্যে। রেডিস সাদা পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সেও তাদের ঈশ্বরের মুখ থেকে এই কথা শোনায় অত্যন্ত খুশী হলো। জেনি খুশিতে তার চোখের অশ্রু মুছতে লাগল।
রিপের হাসি থেমে গেছে। সে এই ঘোষণা শোনার পর থেকে হতবাক হয়ে আছে। কী শুনছে এসব?
আবার সেই গলার আওয়াজ শুনতে পেল সকলে, “কিং রিপ উপরে চলে এসো।”
রিপ এক মুহুর্ত দেরি না করে উপরে চলে যেতে লাগল। বাকি কিং-রা সব তাকিয়ে দেখতে লাগল।
রিপ উপরে উঠে গেল। রেডিস জড়িয়ে ধরে রিপকে হাসি মাখা কন্ঠে বলল, “সাব্বাস রিপ, তুমি পেরেছো।” একটু থেমে আবার বলল, “সাদা পর্দার ওপাশে প্রবেশ করো।”
রিপ সময় নিল না। সাদা পর্দা সরিয়ে ওপাশে প্রবেশ করল। দেখলো সামনে একটা বিশাল আসনে বসে ভ্যাম্পায়ারদের ঈশ্বর।
দেখা মাত্রই সে অবাক হয়ে গেল। একি ঈশ্বর নাকি অন্য কেউ? প্রশ্নটা মনে নাড়া দিয়ে উঠল সাথে সাথে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বসে থাকা ঈশ্বরের দিকে।
না এ ঈশ্বর হতে পারে না! এটা তার বাবা ড.ভ্যালি। যে কোনো এক সমুদ্র যাত্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। নিজের অজান্তেই রিপ বলে উঠলো, “বাবা!”
বসে থাকা ঈশ্বর হেসে উঠল। বলল, “কী ভাবছো পুত্র?”
এই প্রশ্নে সে ভাবনার দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এল।
“এ হতে পারে না। কখনো সম্ভব না,” অবাক কন্ঠে বলে উঠল রিপ।
“এটাই সত্য রিপ,” পিছন থেকে বলে উঠল রেডিস৷ “তুমি ঈশ্বর পুত্র।”
“কিন্তু…”
“কী তোমার মার লেখা ডায়েরির কথা ভাবসো?” ড.ভ্যালি(ঈশ্বর) বলল।
মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যা!”
পিছন থেকে রেডিস রিপের পাশে এসে দাঁড়াল। বলল, “সব বলছি শুনো তাহলে। কিং হলিক এসব সম্পর্কে কিছুই জানতেন না কখনো। যখন ঈশ্বর দেখলেন আমাদের উপর খুব বিপদ তখন কিং হলিককে সব জানালেন। হলিক ঈশ্বরের সব কথা মতো কাজ করলেন। কিন্তু বিপদ কাটলো না। তখন ঈশ্বর দেখলেন বিপদ শুধু আমার রাজ্যে না, বিপদ গোটা মানব জাতির জন্যও। ঈশ্বর চাইলেও বাকি রাজ্যের কিং-দের কিছু বলতে পারতেন না। তারা ততক্ষণে সকলে একত্রিত হয়ে গেছে। কিং সিরবিয়া ছিল এর মূলে। তার কথায় সকলে প্রতিশোধ নেওয়ায় উঠা পড়া লাগে। তারা সবাই ভাবতে শুরু করে ভ্যাম্পায়ারদের মানুষ হত্যা করছে। এজন্য সবাই চায় মানব জাতিকে ধ্বংস করতে। কিন্তু মানব জাতিকে ধ্বংস করলে ধ্বংস হবো আমরা ভ্যাম্পায়ারাও। এটা জানো তুমি, আগেও বলেছি। পরে কোনো উপায় না দেখে কিং হলিককে বলা হয় মানব জাতির এমন কাউকে আনতে যে সব বুঝবে আমাদের জন্য সব করে দিবে। কিন্তু কাওকে পাওয়া যায় না। কারণ সবাই সব পারে না। তখন ঈশ্বর মানব রুপে পৃথিবীতে গেলেন। কিং হলিক বিষয়টা জানতো না। ঈশ্বর তোমার মতো একজন সন্তান কে সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এজন্য মানব নারী প্রয়োজন। তারপর তোমার মার সাথে দেখা। ভালোলাগা। বিয়ে আর তোমার জন্ম। এর মাঝে যা হয় তা কিং হলিককে সামান্য বুঝধানের জন্য যে ড. ভ্যালির সাহায্যে সে সব করছে। কিন্তু ড. ভ্যালির রুপী ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। কিন্তু ঈশ্বর সব জেনে বুঝে সব করে গেছেন। এসবের সাথে জড়িত ছিলাম আমিও। ঈশ্বরের কথা অনুযায়ী কাজ করে গেছি। ঈশ্বর তোমার মাঝে যা শক্তি লুকায়িত করে রেখেছিল তার সন্ধান কি করে তুমি কীভাবে পেলে তা আমারও অজানা। সবচেয়ে বড় কথা তুমি হলে ঈশ্বর পুত্র।”
“আমি প্রশিক্ষণের সময় খেয়াল করি যখনি আমি আঘাত পাই তখন আমার সামনে থাকা নীল ডায়মন্ডটা জ্বলে উঠছে আর ভিতরে একটা শক্তি জাগছে। যতটা আঘাত পাই আমার ভিতরের শক্তি ততটা বাড়ে। তখন বুঝতে পারি, আমি যখন মানব শরীরের শক্তি হারাবো তখন আমার শরীরে ভিতরে লুকায়িত শক্তি আসতে থাকবে। সেই বিষয়টাকে কাজে লাগাই। কিং সিরবিয়া আমাকে মেরে মানব শরীরের শক্তি নিস্তেজ করে দেয় আর তার কিছু সময় পর লুকায়িত অলৌকিক শক্তি পেয়ে যাই আমি,” বলল রিপ। নীল ডায়মন্ডটা ওর জামার ভিতর থেকে বের করে রেডিসের হাতে দিল।
“পুত্র এখন তোমার সময় এসেছে ঈশ্বর হওয়ার,” বলে উঠল ড.ভ্যালি (ঈশ্বর)।
“না। বাবা আমি ঈশ্বর হতে চাই না,” বলল রিপ।
“কেন পুত্র?”
“আমি জানি না ঈশ্বর হয়ে লাভ কী বা কোনো ক্ষতি আছে কিনা। আমার জন্মের পর থেকে আমার মামা পুলিশ অফিসার পল আমাকে যে আদর স্নেহ করেছে তার সামনে ঈশ্বরের ভালোবাসাকেও হার মানাতে বাধ্য। যদিও সেটা সম্ভব আপনাদের কাছে মনে না হলেও আমার কাছে মনে হয়। আমি ঈশ্বর রুপে বাঁচতে চাইনা। আমি আমার সেই মামার আদরের ভাগ্নে হয়ে বাঁচতে চাই।” অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল রিপের চোখ থেকে।
“তাহলে তো পুত্র তোমাকে মৃত্যুর মতো কঠিন সত্য কে মানতে হবে।”
“আমি রাজি। আমার মৃত্যু আমার ভাগ্যে লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমি মানব জাতির ন্যায় মরতে চাই,” মায়া ভরা চোখে তাকাল তার বাবার দিকে।
“ঠিক আছে পুত্র। তুমি তোমার নিয়তি যখন ঠিক করে নিয়েছো। তাহলে তাই হোক।” রিপের কাছে এসে দাঁড়াল ড.ভ্যালি। বুকে জড়িয়ে নিল একবার রিপকে। “নিজের খেয়াল রেখ, রিপ।”
বাবাকে বুকে নিয়ে এক শান্তির ছোঁয়া পেল রিপ। কিছুক্ষণ পর বাবাকে ছাড়ল রিপ।
ঈশ্বর রেডিসের দিকে তাকিয়ে আদেশ করল, “রেডিস, রিপকে পাঠানোর ব্যবস্থা করো। তাকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিও।”
রিপ আবার বলে উঠল, “বাবা, শুধু আমাকে না। আপনার পুত্রের জন্য সৃষ্টি হওয়া সেই নারীকেও পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।”
হাসল রিপের বাবা। বলল, “রেডিস, জেনিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করো আমার পুত্রের সাথে।”
রেডিসের মুখেও হাসি। তার কন্যা ঈশ্বরের পুত্রের সাথে থাকবে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!
রেডিস হাসি মুখে বলল, “ঠিক আছে, ঈশ্বর।”
রিপের বাবা বলল, “পুত্র আর পুত্রের জীবন সঙ্গীকে এক সাথে দাঁড় করাও রেডিস।”
দুজনকে একত্রে দাঁড় করানো হলো।
“তোমাদের দু’জনের সমস্ত শক্তি নিয়ে নিচ্ছি আমি। তোমাদের দু’জনকে মানব রুপ দান করলাম।” একটু থেমে গিয়ে আবার বলল, “এখন তোমরা সম্পূর্ণ মানব জাতির অংশ।”
“ভালোবাসা রইলো বাবা,” রিপ বলে উঠল।
“সবসময় সুখী হও তোমরা।”
বলা মাত্রই ঈশ্বর অদৃশ্য হয়ে গেল। রেডিস রিপ আর জেনিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করল পৃথিবীতে। রেডিসের কাছ থেকে দু’জনে বিদায় নিয়ে পৃথিবীর উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ল এই লাল বর্ণের আলোর বিশাল ময়দান ও ভ্যাম্পায়ারদের পুরো সাম্রাজ্যে থেকে। এসব ঘটনার সাক্ষী রইল, আকাশের “রক্তিম চন্দ্র” টা।
***
পুলিশ অফিসার পলের সকালের রান্না শেষ করে বসে আছে ডাইনিং টেবিলে। খেতে ইচ্ছে করছে না তেমন। খাবার সামনে রেখে বসে আছে। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিল। অফিসে যাওয়ার সময় হয়নি এখনো।
ভাগ্নে এডভেঞ্চারে গেছে। বলে ছিল, তার কিছু হবে না। মাস তিনেক হয়ে এলো তার কোনো খবর নেই। অনেক খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু রিপ যে জাহাজে করে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়েছিল সেই জাহাজ আর রিপ কারো কোনো খোঁজ খবর নেই।
ভাগ্নের দুঃচিন্তায় নাওয়া খাওয়া প্রায় ভুলেই গেছে পল। ইচ্ছে হলে খায়, না হলে না খেয়েই থাকে। খেতেও তেমন ইচ্ছা করে না তার। ভাগ্নের যদি একটা খবর পেতো তাহলেও তার মনে শান্তি লাগতো। এতদিন হয়ে গেল, ভাগ্নের কোনো ক্ষতি হয়নি তো!
পলের ভাবনায় ব্যঘাত ঘটালো তার বাড়ির কলিং বেল। কে আসলো হঠাৎ! সে টেবিল থেকে উঠে দরজার খোলার জন্য এগিয়ে গেল। সরাসরি দরজা খুলে দিল। সামনের দিকে তাকাতেই সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার ভাগ্নে রিপ এসে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।
পল এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল রিপকে। জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেমন আছো, ভাগ্নে? নিজের একি হাল করে রেখেছো?”
রিপ হাসি মুখে বলল, “আরে মামা, দেখোই না পাশে তাকিয়ে একবার কাকে নিয়ে এসেছি!”
পল খেয়ালই করেনি রিপের সাথে আরো কেউ এসেছে। একবার চোখ বুলিয়ে নিল পল পাশে থাকা মেয়েটির দিকে। জিজ্ঞেস করলো, “কে রে রিপ এই মেয়ে?”
জেনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কিছু বলার সাহস পেল না। মুখে সামান্য বৃথা হাসির চেষ্টা করল।
“তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পাবে তুমি মামা। এখন কী ভিতরে যেতে দেবে নাকি বলো?” বলে উঠলো রিপ।
“আরে নিজের বাড়ি আর নিজেই অনুমতি চাইছে। বোকা ছেলে একটা,” হাসতে হাসতে বলল পল।
তিনজনে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। ড্রয়িংরুমে রুমে সোফায় এসে বসল তিনজনে।
“মেয়েটির নাম কীরে রিপ?” জিজ্ঞেস করল পল।
“জেনি, জেনি ওর নাম আর ও এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে,” একটু থামল রিপ। আস্তে করে বলল, “ও আমার জীবন সঙ্গী।”
আস্তে করে বললেও কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল পল। উচ্চ স্বরে হাসলো সে। বলল, “এটা আবার এতো আস্তে বলার কী আছে ভাগ্নে?”
লজ্জিত বোধ করল রিপ আর জেনি দু’জনেই।
“হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না মামার সামনে,” বলল পল।
পল বুঝতে পারলো ওদের নিরিবিলি পরিবেশ দরকার।
“আচ্ছা। তোরা থাক আমি অফিসে যাই৷ ফিরে এসে সব শুনবো। সকালে তো বোধহয় কিছু খাসনি। টেবিলে খাবার রেডি করা আছে খেয়েনিস। আমি উঠি এখন।”
বলেই উঠে গেল পল। বহুদিন পর ভাগ্নেকে দেখে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হলো পল। হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।
রিপ সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। জেনির উদ্দেশ্যে বলল, “আসুন আমার সাথে আপনাকে আপনার ঘর বুঝিয়ে দেই। তারপর বাকি কাজ করা যাবে।”
“আচ্ছা।”
উঠে দাঁড়াল জেনিও। রিপের পিছনে হাঁটতে লাগল জেনি। রিপ জেনিকে তার নিজের শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল, “এই ঘরে আপনি থাকবেন আজ থেকে।”
“আপনি কোথায় থাকবেন তাহলে?” বলে উঠল জেনি। এতক্ষণে তার নীরবতা কাটলো।
“আমি কোনো একটা ঘর আপাতত ব্যবস্থা করে নিবো। এখানে তো অনেক ঘর আছে থাকার জন্য,” বলল রিপ।
জেনি জড়িয়ে ধরল রিপকে। বলল, “আপনি তো এখন আমার জীবন সঙ্গী। আপনি আলাদা থাকবেন কেনো?”
একটু ইতস্তত বোধ করলো রিপ। বলল, “মানব জাতির নিয়মানুযায়ী বিয়ে করে একত্রে থাকতে হয়। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিয়ের কাজটা আপনার সাথে সারতে চাই। এরপর তো সারাজীবন একসাথেই থাকবো।”
জেনি বলল, “ভালোবাসি আপনাকে। ছাড়বো না আর কখনো।”
জেনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিপকে।
“উঁহু! লাগছে তো আমার,” আবেগ মাখা কন্ঠে বলল রিপ।
“লাগুক!”
“ছাড়ুন এখন। আসুন এখন খাওয়া দাওয়া করে নেওয়া যাক। বহুদূর থেকে এসেছি আমরা৷ আপনার খিদে পেয়েছে হয়তো।”
“পেয়েছে তো ঠিকই। কিন্তু এই খিদে না, অন্য খিদে,” ন্যাকামির স্বরে বললো জেনি।
“মানে!”
জেনি রিপের টি-শার্টের কলার ধরে টান দিয়ে বিছানার উপর ফেলে দিল। জেনি ঘরের দরজা আটকিয়ে দিয়ে রিপের কাছে এল।
“এটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু, জেনি,” রিপ বলে উঠল।
জেনি কিছুই শুনলো না। রিপের উপর এসে শুয়ে পড়ল। রিপ কিছু বলতে যাবে তখনি জেনি আঙ্গুল দিয়ে রিপের ঠোঁটে স্পর্শ করে চুপ থাকতে বলল।
রিপ আর কোনো উপায় না পেয়ে বলে উঠল, “খুব ভালোবাসা চাই আপনার তাই না। এখনি দিচ্ছি ভালোবাসা।”
রিপ জেনিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বা গালের তীলে আলতো করে চুম্বন আকল ও। জেনি রিপের কপালে একটা চুম্বন এঁকে দিল তারপর। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে তারা হারিয়ে গেল তাদের দু’জনের জমে থাকা বহুদিনের অতৃপ্ত ভালোবাসাকে তৃপ্ততায় ভরিয়ে তুলতে।
সমাপ্ত