#রক্তিম_চন্দ্র
#পর্ব_২
#তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী
বজ্রপাতটা আরেকটুর জন্য পলের উপর পড়েনি। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সে। যদিও বা বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিল। তবুও, খুব একটা ক্ষতি হয়নি। পল খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। বাইকটাকে তার বাড়ির নিজস্ব গ্যারেজে রেখে সোজা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। রেইনকোর্টটা জায়গা মতে রেখে ডাইনিং রুমে থাকা সোফায় এস বসে পড়ল সে। হেলান দিয়ে একটা বড়ে করে নিশ্বাস নিলো পল। অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে সে।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে উঠে গেল সেখান থেকে পল। পকেট থেকে ফোনটা বের করে নিয়ে সময় দেখল, রাত ১২ টা বেজে ৩০ মিনিট। কখন যে এত রাত হয়ে গেছে তার হিসেব নেই। বুঝতেও পারেনি সময় কীভাবে আগাচ্ছে। সে এতক্ষণে খেয়াল করলো তার মাথা ব্যথাও নেই।
হঠাৎ তার পেট ঢেকে উঠল। সে বুঝতে খিদে পেয়েছে অনেক। রাতে বাসায় না ফিরে বাহিরে কিছু খায় না সে। যথাসময়ে বাড়ি এসে খেয়ে নেয়। তারউপর কাজের চাপে আজকে খুব একটা খাওয়া হয়নি পলের। সকালে বাড়িতে রান্না করে সেখান থেকে অল্প করে খেয়ে সেগুলোই ফ্রিজে রেখে বেরিয়ে গিয়ে ছিল অফিসের উদ্দেশ্যে। সারাদিনে মাত্র ৬ কাপ কফি খেয়ে কাটিয়েছে আজ।
খিদের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তার রেখে যাওয়া সকালের খাবার গুলোকে গরম করেই রাতের খাওয়ার কাজ চালিয়ে নিল কোনোরকমে।
রাতের সব কাজ গুছিয়ে নিয়ে বেডরুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল পল। রাত গভীর হলে মানুষের সারা দিনের চিন্তা ভাবনা যেমন চলে আসে মস্তিষ্কে। পোলেনের ক্ষেত্রেও তার বিপরীত নয়। সব ধরণের চিন্তা ভাবনা ঝাপটিয়ে ধরল পলকে।
পল পুলিশ অফিসার হলে কী হবে! তার জীবনে সুখ নেই৷ কারণ তার স্ত্রী তাকে গত পাঁচ বছর আগে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। পল তার কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে, তাকে সময় দিতে পারে না। এজন্য তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর পল আর নতুন করে কোনো বিয়ে করেনি আর করলেও হয়তো আগের মতোই ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতো, এই ভেবে আর করা হয়নি তার। হাজার হলেও তার একমাত্র স্ত্রীকে সে খুব ভালোবাসত। ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে গেলেও ভালোবাসা পলের কাছে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
তবে আজকে পল অনেক খুশি। পল আজকে যা করেছে তার জন্য নিজেকেই সে মনে মনে বাহবা দিচ্ছে। সময়মতো না পৌঁছালে ওখানে হয়তো কোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারতো। কিন্তু এখন আর সেই চিন্তা নেই পলের। কালকে সকালে একবার হাসপাতাল হয়ে অফিসে যেতে হবে তার। দেরি করে ঘুমালে হয়তো ভোর সকালে উঠতে পারবে না। তাছাড়া বাহিরে এখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এমনিতেও শীতল পরিবেশ পেলে পলের ভালো ঘুম হয়। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে ভেবে সে তার ঈশ্বরকে আবারও একটা ধন্যবাদ দিয়ে নিজেকে নিজেই “শুভরাত্রী” বলে ঘুমিয়ে পড়ল।
***
পরের দিন সকাল। বাহিরে পাখির কিচিমিচির শব্দে মুখরিত পরিবেশ। চারদিকে সূর্যের আলো ছড়িয়ে নতুন একটা দিনের আবির্ভাব ঘটেছে। কাজের জন্য ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। যে কারণে সকাল শুরু হতে না হতেই রাতের নীরব শহরটা জেগে উঠছে। শহরের মানুষের সমাগম শুরু হয়ে গেছে। রুজিরোজগারের জন্য সবাই বেরিয়ে পড়েছে যার যার কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে।
হাসপাতালে মহিলার জ্ঞান ফিরে এসেছে কিছুক্ষণ আগেই। তার যখন জ্ঞান ফিরল তখন একটা অচেনা লোক তাকে বিদায় জানিয়ে চলে যাবার পরপরই তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে অন্য একটা কেবিনে এনে রাখা হয়েছে। তাও যেমন-তেমন কেবিন নয়, একদম ভিআইপি কেবিন।
কেবিনের ভিতরে এক কোণে আছে সোফা, একটা বেড, একটা টিভি, ফ্যান বলতে গেলে সবি আছে। ভিআইপি একজন মানুষের যা যা দরকার হয় তাই। মহিলাটাও সেই সব সুবিধাই পাচ্ছে।
পলকে এখানকার সবাই ভালো করেই চেনে। ডাক্তাররাও তাকে খুব পছন্দ করে তার কাজের জন্য। তার সাথে আসা কোনো রোগীকে কী কখনো কেউ ছোট করে দেখতে পারবে! তার উপর একজন মহিলা যে কিনা কিছু সময় আগেই একজন নবজাতকের মা হলো। নতুন একটা জীবন দিতে সক্ষম হয়েছে, নতুন একজনকে পৃথিবীর আলো দেখাতে সফল হয়েছে সে।
নাবজাতকের মা বেডে শুয়ে আছে। তার পাশে তার সদ্য জন্মানো সন্তান। কিছুক্ষণ আগে নার্স এসে দেখে গেছে তাকে। এখন সে কেবিনটাতে একা। একা না বললেও চলে কারণ তার সন্তান আছে তার সাথে।
মহিলাটা বারবার কেবিনের চারপাশে তাকিয়ে দেখছে। সেই সাথে ভাবছে, সেই লোকটা কে ছিলো? গতকাল সে না থাকলে হয়তো তার সন্তানের কোনো বড় ক্ষতি হতে পারতো, সেই সাথে তারও ক্ষতি হতে পারত। মহিলা মনে মনে বলল, “সেই লোকটা আসলেই মহান।”
মহিলাটা তার সন্তানের দিকে তাকিয়ে দেখেছে কয়েকবার। কী মায়াবী তার চেহারা! নিজের সন্তানকে সুস্থ দেখে তার মনটা ভরে উঠেছে। রাতে প্রসবের ব্যথাটাকে সেই কখন সে ভুলে গেছে তার নিজেরও খেয়াল নেই৷ সন্তানের দিকে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছে এখন ওই ব্যথাটা সামান্য ব্যথা।
এখনো মহিলাটার শরীরটা দূর্বল হয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তুতি নিল সে। মনের মাঝে একটা বিষয় জানার খুব আগ্রহ রয়েই গেল তার। সেই লোকটার পরিচয় নিতে পারেনি। লোকটা আজ সকালে এখানে আসবে বলে ছিল কিন্তু এখনো আসল না। সে আসলেই তখন পরিচয়টা জেনে নিতে হবে আগে।
***
কাল রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সকালটা একটু বেশি-ই ঠান্ডা হয়ে আছে, হিম শীতল পরিবেশ।
ঘড়ির এলার্ম বেজে উঠলো। পল বিছানা থেকে হাত দিয়ে বেড সাইড টেবিলে রাখা ঘড়ির এলার্মটা বন্ধ করে দিল। শোবার আগে প্রতিদিন এলার্ম দিয়ে ঘুমানো তার অভ্যাস। পুলিশ অফিসার বলে কথা, সময় মেনে চলতে হয়। সেই সাথে অনেক নিয়ম-কানুনও বাধ্য হয়ে হলেও মেনে চলতে হয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো পল। সরাসরি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল সে। একে একে বাকী সব কাজ দ্রুতই গুছিয়ে নিল। সকালের রান্নাটা করে খাওয়ার কাজ শেষ করে সে তার ইউনিফর্ম পড়ে বেরিয়ে পড়ল বাড়ি থেকে। এরপর গ্যারেজ থেকে তার বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
আজ সকালে সবার আগে হাসপাতালে যেতে হবে। বাড়ি থেকে বের হবার আগে ফোন করে তার এক সহকর্মীকে বলে দিয়েছে, থানায় যেতে দেরি হবে। সে যেনো সেখানের কাজগুলো যেনো গুছিয়ে রাখে। পলের বাড়ি থেকে হাসপাতালে যেতে প্রায় আধাঘন্টা সময় লাগে।
বাইক এসে থামল সোজা হাসপাতালের পার্কিং লটে। সেখানে বাইকটা রেখে হাসপাতালে প্রবেশ করলো পল। গতরাতে অপারেশন থিয়েটারের ভিতরেই মহিলার সাথে সামান্য কথা বলেই চলে আসে পোলেন।
গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে রিসেপশন থেকে সেই মহিলাকে কোন কেবিনে রাখা হয়েছে সেটা জেনে নিল। কেবিনটা হচ্ছে তিন তলায় গিয়ে হাতের ডানপাশে ৩০৫ নং কেবিন।
পল গ্রাউন্ড ফ্লোরের একদম বামপাশে থাকা সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল তিন তলায়। তারপর করিডোরে ডান দিকে হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেল ৩০৫ নং কেবিনের সামনে।
কেবিনের দরজা খোলা ছিল। পল দরজাটা ধাক্কা দিয়ে সামন্য অংশ খুলে উঁকি দিল ভিতরে। দেখতে পেলো সেই মহিলা মাথার বালিশ একটু উপরে উঠিয়ে সেখানে হেলান দিয়ে বসে আছে আর তার পাশে সেই নবজাতক।
ভিতরে প্রবেশ করল পল। সেখানে গিয়ে আগে দেখল নবজাতককে। নবজাতক ঘুমাচ্ছে। খুব সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। দেখেই মন ভরে উঠলো পলের। কী দারুণ নিষ্পাপ চেহারাটা।
পল নবজাতকের মা’র দিকে তাকিয়ে বলল, “কেমন লাগছে আপনার এখন?”
“এখন ঠিক আছি,” আস্তে করে বলল সেই মহিলা। “ভালোই লাগছে এখন আগের থেকে কিছুটা।”
“কাল রাতে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে আমিই এখানে নিয়ে এসেছি..”
“হ্যা, জানি,” পলকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল সেই মহিলা। “রাতের কথা তেমন মনে নেই কিন্তু আপনাকে দেখেই বুঝেছি আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। এজন্য আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকবো সারাজীবন।” গুঙিয়ে উঠল নবজাতকের মা।
“বাদদিন তো এসব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ,” মুখে সামান্য হাসি পলের। “আমি এসব পছন্দ করি না। ঈশ্বর চেয়েছে তাই হয়েছে এসব। আসল প্রশংসার ক্রেডিট ঈশ্বরের নিজেই। বাই দ্য ওয়ে, আপনার নামটা কি জানতে পারি?”
“হ্যা, অবশ্যই,” হাসি মাখা কন্ঠে বলে উঠল সেই মহিলা। “আমার নাম হিলারি।”
“আপনার নামটা অনেক সুন্দর।” পলের মুখে হাসি আটকে আছে। “আচ্ছা আপনার পরিচয়টা দেন আর ঠিকানাটাও। কারণ আপনার বাড়িতে খবর দিতে হবে। কাল রাতে আপনার যা অবস্থা ছিল তাই এসব জিজ্ঞেস করে আপনার উপর চাপ প্রয়োগ করতে চাইনি। তার উপর আপনি নবজাতকের মা হয়েছেন সেই সময়।”
“আসলে আমি এখানে থাকি না,” একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল হিলারি। “আমার বাড়ি এ শহরে নয়। হয়তো এদেশেও নয়। গতকাল রাতে যে জায়গা থেকে আমাকে নিয়ে এখানে এসেছেন সেখানকার পাশের নদীটার মাধ্যমে ভাসতে ভাসতে এখানকার কিনারায় এসে পৌঁছেছি।”
“মানে!” বিস্ময় কন্ঠে বলে উঠল পল। “এটা কী করে বা কীভাবে হলো? বুঝতে পারলাম না বিষয়টা! যদি কষ্ট করে বিষয়টা খুলে বলতেন আমাকে?”
“আপনি এখানাকার পুলিশ তাই না?”
“হ্যাঁ। আপনি দয়া করে ঘটনাটা বলুন।”
“বলছি, শুনুন তাহলে,” বলতে শুরু করল নবজাতকের মা। “আমার স্বামী ভ্রমন প্রিয় মানুষ ছিলেন। আমরা বেশি ভ্রমন করতাম জাহাজে করে সমুদ্রের মধ্যে। গত পাঁচ দিন আগেও আমরা একটা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বের হই। আমার স্বামী নতুন কোনো স্থানে যেতে চাইছিল কিন্তু আমাকে নিতে চায়নি। আমি জোর করে এসেছি প্রেগন্যান্ট অবস্থায়। ভালোই চলছিল আমাদের ভ্রমন কিন্তু হঠাৎ একটা ঝড় এসে সব বদলে দিল। আমাদের জাহাজটাকে বাতাসে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল উল্টো দিকে। বারবার উল্টে পড়তে চাইছিল। অনেক জোরে জোরে দুলতে থাকে একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক। হঠাৎ সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এসে জাহাজটাকে ডুবিয়ে নিয়ে যেতে লাগল সমুদ্রের নিচে। আমি ও আমার স্বামী প্রাণপ্রণে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম। কোনো উপায় না পেয়ে লাফ দিলাম সমুদ্রের মাঝে। লাফানোর আগে ভেবে ছিলাম হয়তো আর বাঁচবো না কিন্তু ভাগ্যের কী খেলা! বেঁচে রইলাম আমি ও আমার সন্তান। আমাকে পানির স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে এলো অজানা এই জায়গায়। আমার স্বামী বেঁচে আছে কী না তাও জানি না।” চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল মহিলাটার । তবুও কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিলো সে। চোখ মুছে নিয়ে বলতে থাকল, “স্বামীর জন্য চিম্তা-ভাবনা আর কষ্ট হলেও আমার সন্তান যে ঠিক আছে এটাই বেশি। উপরওয়ালা হয়তো আমার ভাগ্যে এটাই লিখে রেখে ছিলেন। আর তাই ঘটল।”
“ওহ! খুব দুঃখজনক ঘটনা,” আস্তে করে বলল পল। “আপনার স্বামীর নাম কি জানতে পারি? খোঁজ নিয়ে দেখতাম। যদি কোনো খবর পাওয়া যায়…!”
“আমার স্বামীর নাম ড.ভ্যালি।”
“আচ্ছা,” নামটা শুনে পল একটু অবাক হলো। “ইনি কী সেই গিনিয়ানার বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড.ভ্যালি। যিনি আবিষ্কারের পাশাপাশি পুরোনো জিনিস খোঁজ করেন সব জায়গায় থেকে আর সেগুলো নিয়ে রিসার্চ করে থাকেন?”
“হ্যা, কিন্তু তাকে আপনিও চেনেন কীভাবে?” জিজ্ঞেস করলো নবজাতকের মা।
“এটা কীরকম প্রশ্ন করলেন আপনি, ম্যাডাম! তাকে সারা পৃথিবীর মানুষ ভালো করেই চিনে আর আমরা প্রশাসনের লোক হয়ে চিনব না? তা কী করে হয়। বিখ্যাত একজন মানুষকে না চেনার কি আছে?”
“আচ্ছা,” মনে মনে বলল হিলারি। কিছু একটা ভেবে সে পলকে জিজ্ঞেস করল, “এটা কোন জায়গা?”
“এটা ফ্রেইজা সিটি আর আপনারা বর্তমানে ঘার্নিয়াতে,” হাসি মুখে বলল পল।
“আচ্ছা। এতদূর সমুদ্রে ভেসে এসে গেছি,” বিস্ময় তার কন্ঠে।
“হ্যাঁ। তবুও আপনি পুরোপুরি সুস্থ। ভাগ্য হয়তো এটাকেই বলে,” উপরে দিকে তাকিয়ে পল ঈশ্বরকে আবার একটা “ধন্যবাদ” জানিয়ে দিল।
হিলারি একটু ভেবে নিয়ে পলকে জিজ্ঞেস করল, “আমার সাথে একটা ডায়েরি ছিল দেখেছেন? আমার বুকের সাথে বাঁধা ছিল।”
“তখনতো রাত ছিল দেখতে পাইনি আর আমি তো আপনাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছিলাম। আপনার আশে পাশে খেয়াল করা হয়নি তেমন,” স্বাভাবিক কন্ঠে বলল পল। “যতদূর মনে পড়ে, আপনার বুকে তেমন কিছু ছিল বলে মনে হয় না। ডাক্তারও তেমন কিছু পায়নি। পেলে হয়ত জানাত।”
“আমার সাথেই ছিল,” চিন্তিত হয়ে উঠল হিলারি। “আমি যখন এখানে নদীটার কিনারায় উঠি তখনো সেটা আমার কাছে ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেটা বুকের সাথে বাঁধা ছিল। ওটা যে করেই হোক আমার লাগবেই।” অনুরোধের স্বরে মহিলা পলকে বলল, “খুঁজে এনে দিতে পারবেন, প্লিজ। আমার স্বামীর দেওয়া শেষ স্মৃতি ছিল ওটা।”
“এমন ভাবে বলছেন কেন? আপনি যেহেতু বলছেন খুঁজে দেখবোন পাওয়া যায় কিনা,” আস্থা জাগিয়ে পল বলল, “আপনাকে ওই ডায়েরি ভাবতে হবে না। আমি যেভাবেই পারি খুঁজে এনে দেবো।”
“আর একটা সাহায্য করবেন আমাকে?”
“সাহায্য বলছেন কেন? আপনার জন্য কিছু করা এটা তো আমার কর্তব্য,” হাসি মাখা মুখে বলল পল।
“আমাদের একটা থাকার জায়গা আর আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিবেন?” অনুনয়ের কন্ঠে বলল হিলারি।
হাসি থেমে গেল পলের। বলল, “দেখুন, একটা কথা বলি। আপনি তো আমার বড় বোনের মতো। আমি আমার বাসায় একা থাকি। আশা করি সেখানে আপনার থাকতে কোনো অসুবিধে হবে না আর ওই নবজাতকের জন্যও অসুবিধে হবে না আশা করি।”
“আপনি একজন অচেনা মানুষকে আশ্রয় দিবেন?” বিস্মিত হয়ে পলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল হিলারি।
“কেন? আপনার কোনো সমস্য আছে কী তাতে?”
“না, তা নেই।” একটু থেমে গেল হিলারি। “যখন থাকতে দিবেন আমরা থাকবো কিন্তু আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবেই কিন্তু,”
হো হো করে হেসে উঠল পল। “আমি একাই থাকি আর আমার যে আয় আছে সেগুলো ব্যয় করার মতো মানুষও নেই। তাই ব্যয়ের জন্য কিছু মানুষও দরকার আর আপনি আমার বড় বোনের মতো। নাহ্, বড় বোনই হোন। আজ থেকে এই ছোট ভাই থাকতে বড় বোনের কোনো কষ্টই হতে দিবো না। আমার ভাগ্নের জন্য তো আমি এতটুকু করতেই পারি নাকি?”
“আমি এতটা ভাগ্যবান যে তোমার মতো একটা ভাই পেলাম আজ,” চোখে অশ্রু এসে গেল হিলারির। এক পর্যায়ে সেই অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
“বোন তুমি কাঁদছো কেন? কোনো ভাই কী তার বোনের কান্না সহ্য করতে পারে?” আবেগ মাখা কন্ঠে বলল পল।
নবজাতকের ঘুম ভেঙ্গে কান্না শুরু করে দিল। পল তার সদ্য সম্পর্ক হওয়া ভাগ্নেকে কোলে নিয়ে কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। এটা দেখে হিলারি মন খুশিতে ভরে উঠল। নিজের চোখের পানি মুছে নিল নিজ হাতে আর তাকিয়ে রইল পলের দিকে।
“এর তো একটা নাম ঠিক করা উচিত,” হিলারির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল পল। “বোন তুমি একটা নাম ঠিক করে দাও?”
“তুমি ওর মামা, তুমিই ঠিক করো,” হাসি ভরা মুখে বলল হিলারি।
“আচ্ছা,” কিছুক্ষন চুপ করে ভেবে নিল পল, “আজ থেকে আমার ভাগ্নের নাম হবে, রিপ।”
নামটা বলেই রিপের কপালে আলতোভাবে একটা চুমু একে দিল পল।
হঠাৎ পলের ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা রিসিভ করে যা জানতে পারল, তা শুনতে পেয়েই পলের কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠল। রীতিমত ঘাম ঝরতে লাগল পলের কপাল বেয়ে।
চলবে?…
(অবশ্যই সবাই মন্তব্য করবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)”