#রক্তিম_চন্দ্র
#পর্ব_৭
#তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী
রিপের চোখে সূর্যের আলো এসে পড়ছে৷ ঘুম ভেঙ্গেছে ওর। চোখের পাতা খুলতে পারছে না। সূর্যের আলোর কারণে খোলা যাচ্ছে না বলা চলে। চোখ বন্ধ রেখেই বসে পড়ল বিছানায়। এবার চোখের পাতা খুলতে পারল রিপ। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল একবার। জানালার পর্দা সরিয়ে রাখা হয়েছে৷ জানালা দিয়ে সূর্যের আলো সরাসরি তার বিছানায় এসে পড়ে। যে কারণে তার সকালের ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
এই বিষয়টা নতুন কিছু নয় তার জন্য। তারা মামা পল এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে বহুদিন যাবৎ। দু-তিনবার ডেকে ওর ঘুম না ভাঙ্গলে জানালার পর্দা সরিয়ে রেখে যায়। সূর্যের আলো এসে রিপের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রিপ। চোখ ডলতে ডলতে বেড়িয়ে গেল বেডরুম থেকে। রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকলো সরাসরি। যা প্রতিদিন দেখে আজও তাই। তার মামা পল রান্না করছে।
মানুষটা বড়ই অদ্ভুত। কখনো নিজের জন্য কিছু করে না। তার ভাগ্নের জন্য সব করে যাচ্ছে। কখনো কাজের লোকও রাখেনি। নিজেই সব কাজ করে গেছে। ভাগ্নেকে ভালোবেসে সব করে আসছে। তার বোন হিলারি মারা যাওয়ার আগে সব কাজ সেই করতো কিন্তু হিলারি মারা যাবার পর আবার রান্নায় হাত লাগিয়েছে। নিজে রান্না করে ভাগ্নেকে না খাওয়ালে তার চলেই না।
মন দিয়ে রান্না করছে পল। ভাগ্নের উপস্থিতি খেয়াল করে নড়ে চড়ে দাঁড়াল সে। রসিকতার স্বরে বলল, “ঘুম ভেঙ্গেছে আপনার মহারাজ?”
রিপ তার মামার কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখল। হাসি মাখা কন্ঠে বলল, “হ্যা। আপনার মহারাজের ঘুম ভেঙ্গেছে।”
“গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার রেডি করছি,” বলল পল।
“আচ্ছা মামা, যাচ্ছি।”
রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল রিপ।
রিপ তার মামাকে দেখে বরাবরই অবাক হয়। সে রিপের জন্য কত কিছুই করে। আজও বিয়ে করে নি সে। কোন কারণে করেনি সে জানে না। কিন্তু রিপের মনে হয় তার জন্যই করে নি। কোথাও ঘুরতে গেলে তার পিছনে লোক লাগিয়ে রাখে যাতে সে কোনো বড় বিপদের সম্মুখীন না হয়। হলেও যাতে তার বেশি ক্ষতি না হয়। রিপ মাঝে মাঝে এসব কর্মকান্ডে রাগ করে থাকলেও পরে সব ঠিক হয়ে যায়। যখনি তার মামার মুখ তার চোখের সামনে ভেসে উঠে, ঠিক তখনি মনে হয় এই তো তার সারা পৃথিবী। কিন্তু সে তার পৃথিবীটাকে রেখে ঘুরে বেড়ায় সকল স্থানে। এভাবে আর নয়। রিপ মনে মনে ঠিক করল,”তার মামা রিটায়ার্ড করলে তাকে নিয়েই ভ্রমণ করবে সারা পৃথিবীতে৷ তার একমাত্র সঙ্গী হবে তার মামা। মামা ভাগ্নে মিলে ভ্রমণ করে বেড়াবে সারা পৃথিবীর কোণায় কোণা৷ আর সেই সাথে রহস্য বের করে নতুন নতুন সমাধান করবে ওরা।
রিপ ভাবতে ভাতে অনেক এক্সাইটেড হয়ে পড়ল। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল সে। ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে মামাকে ডাকলো। কিন্তু তার মামা আশেপাশে নেই মনে হচ্ছে। থাকলে তার ডাক শোনা মাত্রই ছুটে চলে আসতো। রিপ তার বেডরুমে গিয়ে তার পোশাক পরিবর্তন করে নিল। তারপর সোজা ড্রয়িংরুমে এসে পড়ল সে। এখনে তার মামা নেই। ও চিন্তিত হয়ে উঠল। মামা সাতসকালে গেল কোথায়? পরনে থাকা হাতের ঘড়ির দিলে খেয়াল করলো। না, অফিস টাইমও হয় নি। তাহলে তার মামা কই গেল? আবারো সে ডাক শুরু করল তার মামাকে।
রিপ সারা বাড়ি খুঁজে দেখতে লাগল ভালো করে। কোথাও নেই তার মামা। রিপ খুঁজতে খুঁজতে তার মামার বেডরুমে চলে এলো। বেডরুমের সব কিছু এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিছানার চাদর এলোমেলো। আলমারি থেকে জামা কাপড় বের করে বিছানার উপর রাখা। ঘরের সব আসবাপত্র ঠিক জায়গায় নেই। দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেনো সার্চ করতে এসেছিলো এখানে। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা হবে হয়তো।
রিপ এতক্ষণ বেডরুমের দরজা দিয়ে ডুকে দাঁড়িয়ে থেকে সব খেয়াল করছিলো। বেডরুমের ভিতরে ডুকেই লক্ষ্য করলো ভালো করে আলমারির দিকে। একটা কিছু তার নজর কেড়েছে। সেখানে একটা বই পড়ে আছে। অনেক পুরোনো বই। সেটায় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
এগিয়ে গেল রিপ। বইটা আলামারির নিচে পড়ে আছে। সেটা হাতে নিয়ে দেখত লাগলো। সেটার উপরে লক্ষ্য করলো (d-6) লেখা আছে মোটা করে। তাও লাল বর্ণের কোনো কিছু দিয়ে। দেখে কলমের কালি মনে হলেও তার মনে সন্দেহ জাগলো। কেনো জানি তার মনে হলো এটা কোনো কলমের কালি নয়। অন্য কিছু হবে হয়তো। এটা ভেবে বইটা নাকের কাছে নিয়ে শুঁকতে লাগলো।
“কি করছিস রিপ?” পল বলে উঠল পেছম থেকে।
কখন রিপের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে ও মামা ও জানে না।
পিছনে ঘুরে তাকালো রিপ। বলল, “এইতো মামা তোমাকেই খুঁজ ছিলাম।”
পল হাসি মাখা মুখে জিজ্ঞেস করল, “কেন? খিদে পেয়েছে বুঝি?”
“হ্যাঁ,” ইতস্তত বোধ করল রিপ। “ততটাও না অবশ্য! কিন্তু তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আর তোমার বেডরুম এলোমেলো কেন?”
“আর বলিস না, কিছু মশলা শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই বাহিরে গিয়ে ছিলাম আনতে সেগুলো।”
“ও আচ্ছা, আর বেডরুমের এ অবস্থা করেছো কেন?”
হাসলো পল। বলল, “টাকা কোথায় রেখে ছিলাম মনে ছিল না তাই পুরো বেডরুম খুঁজে বের করতে হল।”
“হুম, বুঝলাম।” হাতে থাকা বইটা বাড়িয়ে দিল পলের দিকে। “মামা দেখো এই বইটা পেলাম তোমার ঘরের আলমারির নিচে পড়ে ছিল। দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো।”
এতক্ষণ খেয়াল করেনি পল তার ভাগ্নের হাতে থাকা বইটাকে। বইটা হাতে নিয়ে পুরো বইতে হাত বুলিয়ে নিলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “এটা ছিল তোর মামীর বই। ভাবতে পারিস তোর মামীর ফেলে যাওয়া শেষ উপহার।”
“মামী তোমাকে দিয়েছিল নাকি?” আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল রিপ।
“না রে।” প্রসঙ্গ পাল্টালো পল। “আচ্ছা, যেভাবেই হোক এটা তোর মামীর কাছ থেকে পাওয়া। আর কিছু জিজ্ঞেস করিস না তো এই ব্যপারে।”
রিপ বুঝতে পারল তার মামা কিছু একটা লুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বইটা হাতে পাওয়া পর তার মামার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। বিষণ্নতা কাজ করছে তার ভিতরে। তাই রিপ আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইল না। কিন্তু তার মনও মানছে না। একটা প্রশ্ন নিজের অজান্তেই জিজ্ঞেস করে ফেলল ওর মামাকে, “আচ্ছা মামা এখানে এই (d-6) লেখা আছে, এটা কী তোমার প্রতি কোনো কিছু লেখা নাকি? এমনেই এখানে লিখে রাখা।”
“না রে। জানি না। কিন্তু তোর মামী লিখেছিল মৃত্যুর আগে।”
পল নিজের মুখকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছে সেই কখন থেকে। রিপকে কিছু জানতে দিতে চায় না পল। তবুও নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এলো মুখ থেকে বিষয়টা। হয়তো আবেগী হয়ে বলে ফেলেছে। এখন আর কী করার আছে।
রিপের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল এই মাত্র। সে এতদিন জানতো তার মামী চলে গেছে দূরে। জানতো না তার মামী মারা গেছে। নাকি রিপ ভুল শুনল? সে বিস্ময় কন্ঠে বলল, “মামী মারা গেছে!”
“হ্যাঁ,” চোখ দিয়ে দুফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে নিচে পড়ল পলের। এতদিনের কান্নার জলকে জমিয়ে রাখা আর নিজেকে শক্ত করে রাখা সম্ভব হলো না আজ। বহুদিন পর ভাগ্নের সামনে নিজের অজান্তেই চোখের জল পড়তে লাগল এক ফোঁটা দু’ফোঁটা করে।
রিপ বুঝতে পেরে মামাকে জড়িয়ে ধরল। চোখ মুছে দিল তার হাত দিয়ে। বলল, “মামা, তুমি কাঁদছো কেন? আমি আছি তো।” প্রসঙ্গ পাল্টালো। “চলতো এখান থেকে। রাখো এসব। খিদে লেগেছে খাবো। আসো জলদি, খেতে দাও।”
বইটা নামিয়ে বেডের উপর রেখে দিল পল। রিপের দিকে তাকিয়ে বলল, “সব আস্তে আস্তে বলব তোকে।” নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। “তোর খিদে পেয়েছে তাই না। এখন চলতো খাওয়া দাওয়া করে নেই আমরা। আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে নাকি!”
রিপ ন্যাকামির স্বরে বলল, “সেটাই তো বলছি। তুমিই তো কী কান্না কাটি শুরু করে দিলে।”
আদর মাখা কন্ঠে পোলেন বলল, “এখন চলেন মহারাজ খাওয়া-দাওয়া করতে।”
খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর অফিসে চলে গেল পল। পলের বেডরুম আগের অবস্থাতেই আছে। সে অফিসে চলে যাওয়ার পর রিপ পলের বেডরুমে এসে উপস্থিত হয়। তার চোখ শুধু বইটার উপর।
রিপ মাথা থেকে সকল চিন্তা ঝেড়ে ফেলল কিছু সময়ের জন্য। সে চিন্তা করল, কী করা যায় এখন? কোথা থেকে শুরু করবে? ঘর গোছানোর অভ্যাস নেই রিপের। তবুও আজকে এসেছে মামার বেডরুম গুছিয়ে রাখতে। মামা এসে দেখলে খুশী হবে অনেক এই ভেবে।
আলমারি গোছানো থেকে শুরু। একে একে সকল কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখল। তারপর রুমের সকল আসবাবপত্র নিজের মতো করে গুছিয়ে রাখলো। তারপর বেড। একে একে সব গুছিয়ে ফেলল একা হাতে। অনেক সময় পেরিয়ে গেলো এতে। গোছানোর কাজে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। ক্লান্ত হয়ে মামার বেডরুম থেকে নিজের বেডরুমে এল রিপ। হাতে করে নিয়ে এলো সেই বইটা। বেডের উপর রেখে দিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো রিপ।
কিছু সময় পর ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসে রিপ নিজের বেডরুমে। এদিকে রিপ ভাবনায় পড়ে গেল ওই বইটা নিয়ে। বইটাকে হাতে নিয়ে পায়চারি করছে সে। পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে আবার পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে হাটাহাটি করছে রুমের ভিতরেই।
কী করবে বুঝতে পারছে না। বসে পড়ল বিছানার উপর। বইটাতে তখন (d-6) লেখার লাল বর্ণের ঘ্রাণ নিতে চাইছিল। কিন্তু তার মামা এসে পড়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। এখন আবারও বইটা নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করল। সে অবাক হলো প্রথমবার। সে আবারো ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করল। সে যেটা ভাবছে ঠিক সেটাই। এটা ভিন্ন একটা ঘ্রাণ। রক্তের মতো বুঝতে পারল। অনেক বছর আগের। ঘ্রাণটার জন্য বমি আসবে মনে হচ্ছে ওর। কিন্তু রক্ত হলে কার রক্ত এটা? মনের অজান্তে প্রশ্নটা খোঁচা দিয়ে ওঠা মাত্রই প্রথমে মনে হল তার মামীর কথা।
রিপ এখন সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে কিছুসময়ের জন্য। সে (d-6) লেখা নিয়ে ভাবছে। এটা কীসের ইঙ্গিত করে? কী হতে পারে এটা?
বইটার পাতা উল্টাতে থাকল আর ভালো করে দেখতে লাগল। সে ডিটেকটিভ মুভি আর গল্পের বই পড়েছে৷ এ বিষয়ে অনেক স্টাডিও করেছে কম বেশি। তাই এসব সম্পর্কে তার ধারণা খুব কম নয়। সে বইটার প্রতিটা পৃষ্টা উল্টে পাল্টে দেখতে লাগল একে একে৷
বইয়ের প্রতিটা পৃষ্টার প্রতিটা লাইনে তার চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল। সে খেয়াল করল পৃষ্ঠা সংখ্যা নাম্বারিং দিয়ে হলেও 399 এর পরের পেইজের সংখ্যাটা কেটে d করে দেওয়া হয়েছে। এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে কেউ ধরতে না পারে এটা সহজে। নিখুঁত ভাবে যাকে বলে। কিন্তু এই নিখুঁতভাবে করা কাজটা ধরে ফেলতে রিপের সময় লাগল না। এবার সে বুঝতে পারল আসল রহস্য বইয়ের এই পেইজটাতেই লুকিয়ে আছে। d তো পেয়ে গেছে এবার শুধু 6 এর পালা।
এই 6 মানে কী ছয় নাম্বার লাইন নাকি এই 6 মানে ছয় নাম্বার শব্দ। সে প্রথমে ছয় নাম্বার শব্দ দেখলো। না এটা কী করে হয়! ছয় নাম্বার শব্দ তো (is)। এটা দিয়ে কিছু হয় না। ও নড়েচড়ে বসলো এবার। বইয়ের পৃষ্ঠায় ছয় নাম্বার লাইনটা খেয়াল করলো। সেখানে লেখা আছে (There is a bank known as predict city bank)। এখান থেকে নেওয়ার মতো শুধু এই ব্যাংকের নামটাই৷ তাহলে কী এই ব্যাংকে কিছু আছে যা মামী রেখে গিয়েছিল। নাকি বিষয়টা অন্য কিছু? যেটা হতে পারে মামার জন্য। মামা কী এটার মানে খুঁজেছিল?
ফোনটা তার বেডসাইড টেবিলে রাখা থাকে। ও হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে কল করলো তার মামাকে।
কিছুক্ষণ কল যাওয়ার পর ফোনের ওপাশ থেকে রিসিভ হলো।
“হ্যালো,” ফোনের ওপাশ থেকে পল বলল।
“মামা কিছু কথা ছিল,” উত্তেজনার স্বরে বলল রিপ।
“কী হয়েছে ভাগ্নে? তোমার কন্ঠে উত্তেজনার ভাব বুঝতে পারছি। বলে ফেল কিছু লাগবে নাকি?” জানতে চাইল পল।
“না। কিছু লাগবে না। আচ্ছা মামা, তুমি কী বইটার উপরে লেখা (d-6) এর মানে কখনো খুঁজে পেয়েছিলে।”
কিছু বুঝতে পারলো না পল। এরকম একটা কথা জিজ্ঞেস করছে কেন তার ভাগ্নে! বলল, “সত্যি বলতে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি। তবে আশা ছাড়িনি।”
“মামা আমি হয়তো এটার মানে পেয়েছি। তুমি ভাবতেও পারবে না…”
“কিহ্, সত্যি!” বিস্ময় কন্ঠে বলল পল।
“হ্যাঁ মামা,” খুশিতে গদগদ হয়ে বলল এবার রিপ।
“আচ্ছা, আমি বাসায় এসে সামনাসামনি শুনতে চাই।”
“আচ্ছা মামা। জলদি এসো।”
ফোন কেটে দিল রিপ। তার ভাবনায় এখন কাজ করছে মামা যেহেতু এর মানে এখনো পায়নি তাহলে ব্যাংকে কিছু একটা আছে তার মামী রেখে গেছে বা অন্যরকম কিছুও হতে পারে। হতে পারে অনেক কিছুই। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে তাকে খোঁজ নিতে হবে আগে।
কথাটা ভেবেই একটা নিরব হাসি খেলে গেল রিপের ভিতরে। বহুদিন পর আজ হয়তো কোনো রহস্য সমাধান করেছে রিপ।
***
রিপ দাঁড়িয়ে আছে সেই ব্যাংকের সামনে যেটা সে গতকাল বইয়ের ভেতর থেকে পেয়েছে। যেখানে লুকিয়ে আছে এক অজানা রহস্য। কী এমন আছে এখানে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এসেছে রিপ। সেটা যদি কোনো বস্তু হয় তাহলে অবশ্যই সেটা সাথে সেটা নিয়ে যেতে এসেছে।
গতকাল রাতে রিপ তার মামাকে সব খুলে বলে। সে কীভাবে পেল এটার উত্তর। এই (d-6) মানে কী ছিল।
যখন তার মামীর সম্পর্কে বলতে লাগলো সব। মামীকে খুন করা হয়েছিলো তারপর কীভাবে কী হলো? এই বইটা কীভাবে পেলো? সব বলল যখন সেই সময় রিপ আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল। সে বুঝতে পারল না কেন তার মামীকে খুন করা হয়েছিলো আর কী এমন আছে ওই ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত লুকায়িত সেটার জন্য তার মৃত্যু হয়েছিল।
সেটার উত্তর খুঁজতে এসেছে সেই ব্যাংকে।
ব্যাংকে ঢুকে তার মামীর সম্পর্কে খোঁজ শুরু করল। কিছুক্ষণ খোঁজাখু্ঁজির পর জানতে পারে তার মামীর নামে একটা লকার আছে। যেটা বহুকাল আগে থেকেই বন্ধ পড়ে আছে। সেই লকারের খোঁজ কেউ করতে আসেনি কখনো। তার কাছে অনেক খবর পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো খবর পাওয়া যায়নি। একসময় তারা জানতে পারে তার মামী মারা গেছে। এতদিন তারা ভেবেছে কেউ হয়তো আসবে কিন্তু তাও আসেনি। আজকে তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। কারণ আজ রিপ নামে কেউ এসেছে। তার মামী নাকি বলে গিয়েছে তাদের, “যদি কখনো কেউ আসে লকারের ব্যাপারে খোঁজ করতে, তাহলে যেনো চাবিটা দিয়ে দেয়।”
তার মামীর নামের লকারের চাবিটা পেতে সময় লাগল না তার। সব বুঝতে পারে ম্যানেজার তখন বহু বছর ধরে বন্ধ থাকা লকারের সেই চাবি দিয়ে দেয়।
রিপ চাবি নিয়ে চলে গেল লকার রুমে। সাথে ম্যানেজারও আছে ব্যাংকের। সেখানে গিয়ে তার মামীর লকার খুঁজে বের করল। সেই চাবি দিয়ে সে তার মামীর লকারটা খুলল। খোলার আগেই ম্যানেজার বাহিরে চলে গিয়েছে।
লকারের ভিতরে ধূলো জমে গেছে। ভিতরে একটা কালো কাপড়ে মোড়ানো একটা ব্যাগ রয়েছে। প্রায় ২৩ বছর যাবৎ বন্ধ এই লকার। ব্যাগটা রিপ হাতে নিয়ে ধূলো ঝেড়ে নিল। তারপর ব্যাগটা খুলে দেখে ডায়মন্ড। ডাায়মন্ডটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা নীল রং এর ডায়মন্ড। দেখতে অদ্ভুত রকমের।
সে খেয়াল করলো ডায়মন্ড গরম হতে শুরু করেছে। লকার রুমটা অত্যাধিক ঠান্ডা হলেও ডায়মন্ড গরম হচ্ছে আপনা-আপনি। কোনো উপায় না পেয়ে কালো ব্যাগটাতে ভরে ফেলল। ব্যাগের মুখটা বেঁধে নিল ভালো করে। এখন হাতে নিয়ে দেখলো ডায়মন্ডের গরম ভাবটা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে৷ আজব! কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি খেলে গেল রিপের মনে।
চলবে?…
(সবাই মন্তব্য করবেন আশা করি।)