রক্ষিতা,পর্ব:০১
আশুথিনী_হাওলাদার
একটা কাগজে সাইনের মাধ্যমে নিজের ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে করা রক্ষিতা হয়ে গেলাম। অদ্ভুত না? নিজের মনে কথাটা বলে অর্ঘমা আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে হালকা ঠোট প্রসারিত করে হাসে। নিজেকে জড়বস্তু মনে হচ্ছে অর্ঘমার। যে মানুষটি তিন বছর আগে মাঝ পথে এসে তার হাত ছেড়ে চলে গিয়েছিল আজ এত বছর পর সেই লোকটার বিয়ে করা রক্ষিতার উপাদি নিয়ে তার বাড়ি আর সংসার পা রাখলো অর্ঘমা। ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে এই শ্রেষ্ঠ উপহার টা হয়তো কোনো প্রেমিকা আজ অব্দি পায়নি।
হ্যা, এটা তো তার পাওনা ছিল কারন তার দোষ সে নিফান কে ভালোবাসে কিন্তু নিফান কি কোনোদিন অর্ঘমাকে ভালোবেসেছিল? প্রশ্নটা তোলা থাকলো সময় করে একদিন নিফান কে জিজ্ঞেস করা যাবে সে কি তাকে কখনো কোনো দিন এক বিন্দুও ভালোবেসেছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অর্ঘমা অতীত নিয়ে ভাবছে হঠাৎ পেটে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে হকচকিয়ে পিছনে তাকাতে নেয় কিন্তু হাতের মালিক তাকে আটকে দিয়ে পেট খামছে ধরে। অর্ঘমা চোখ খিচে বন্ধ করে আঘাতের যন্ত্রনা সহ্য করে নেয়। মুসকি হেসে পিছনের মানুষটিকে উদ্যেশ্য করে বলে,
__‘এই ব্যাথার চেয়ে বড় ব্যাথা আমি বুকে অনুভব করছি নিফান। তাই আঘাতে আমি কষ্ট পাচ্ছিনা।’
নিফান চোখ কটমট করে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে আরও জোড়ে খামচে ধরে পেট যন্ত্রনায় অর্ঘমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তবুও অর্ঘমা নিশ্চুপ। এই চুপ থাকাটা নিফানকে জ্বালাচ্ছে সে তো চায় অর্ঘমা ছটফট করুক কষ্টে কিন্তু এই মেয়েতো দিব্যি ঠোটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে রাখছে ভাংগবে তবু মচকাবে না।
নিফান অর্ঘমার কানের কাছে ঠোট হিসহিসিয়ে বলে,
__’আমিও দেখবো তুমি কত দিন এটা সহ্য করতে পারো
নিফান নিজের থেকে ধাক্কার অর্ঘমাকে ফেলে ঘরে চলে যায়।
অর্ঘমা সে মুখে হাত দিয়ে চাপা স্বরে কেঁদে দেয়। এই পাষান লোকটাকে কখনো তার কাঁন্না-যন্ত্রনা দেখাবেনা সে।
অর্ঘমা নিজের মনে বিরবিরায়,
__‘ভালোবাসি তোমায় নিফান কিন্ত তোমাকে কখনো আমি ক্ষমা করবোনা। আজ তুমি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে তোমার রক্ষিতা বানালে। সমাজের কাছে আমি এক রক্ষিতা নিফান শুধু তোমার জন্য। আচ্ছা নিফান বিয়ে করা রক্ষিতা কেউ হয়? হ্যা! হয় তো আমি’ই তো তোমার বিয়ে করা রক্ষিতা তাই না হো হো করে হেসে দেয় অর্ঘমা নিজের ভাগ্যকে নিজের জন্মকে, নিজেকে ঘৃনা হচ্ছে অর্ঘমার।
‘সবাই ঠকালো তাকে শেষে যাকে ভালোবাসলো সে মানুষটাও তাকে খুব বাজে ভাবে ঠকালো।’
__‘আই হেইট ইউ নিফান’
‘আই রিয়াল্লি রিয়াল্লি হেইট ইউ’
আচ্ছা একটা মানুষের প্রতি দুই রকম অনুভূতি হয়?
হয়ত, অর্ঘমার হচ্ছে তো সে যেমন নিফান নামক পুরুষটিকে পাগলের মতো যেমন ভালোবাসে ঠিক তেমনি ঘৃনাও করে। এক’ই মানুষের প্রতি দু’টি ভিন্ন অনুভূতি। কিন্তু ভালোবাসার চেয়ে কি ঘৃনা মাত্রা বেশি? না ভালোবাসার কাছে তা খুব ই সামান্য কিন্তু তবুও ঘৃনা করে তাকে খুব খুব।
নিজেকে শান্ত করে অর্ঘমা ঘরে যায় গিয়ে দেখে নিফান পোশাক না পালটিয়েই শুয়ে পরেছে।
নিফানে পাশে গিয়ে বসে অর্ঘমা কিচ্ছুক্ষন তাকিয়ে থাকে তার দিকে। একদিন এই মানুষটিকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বোনা ছিল একটা ছোট্ট সংসার ভালোবাসায় ভরপুর কিন্ত, কিন্তু মানুষটা তাকে ছেড়ে গিয়েছিল। ছোটো কয়েকটা নিশ্বাস গেলে নিফানের পায়ের কাছে গিয়ে পায়ের জুতো খুলে শার্ট খুলে দিতে নেয় তখনই নিফান নড়েচড়ে উঠে চোখ মেলে তাকিয়ে অর্ঘমাকে দেখে চোখ-মুখ শক্ত করে শীয়া থেকে উঠে বসে বলে,
_‘কি করছিলে?’
অর্ঘমা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে উত্তর দেয়,
_‘আপনি পোশাক না পালটে ঘুমিয়ে পরছিলেন তাই ভাবলাম আমি শার্ট আর জুতো খুলেএএ
কথা শেষ করার আগেই নিফান বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্ঘমাকে টেনে তুলে শক্ত করে অর্ঘমার হাত মুচকে ধরে নিফান। রাগী চোখে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে বলে,
__‘তুমি স্রেফ আর স্রেফ আমার রক্ষিতা তাই ঘরের বউ হওয়ার একদম চেষ্টা করবেনা। রক্ষিতারা কখনো ঘরের বউ হয়না তাই রক্ষিতা রক্ষিতা মতো থাকবে, মাইইন্ড ইট। নিফান অর্ঘমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে চলে যায়। অর্ঘমা অবাক চোখে নিফান যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। নিফানের প্রতিটা বলা শব্দ তার কানে বাজছে। নিফান মাত্র কি বলল তাকে রক্ষিতা? রক্ষিতারা কখনো ঘরের বউ হয়না!
অর্ঘমা নিজের কান শক্ত করে দু’হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরে এই শব্দ গুলো সে শুনতে চায়নআ কিন্তু না কাজ হচ্ছে না তারপরও কথা গুলো বারবার প্রতিদ্ধনী হয়ে তার কানে বিধছে।
ফেলে চলেই তো গিয়েছিলো নিফান ফিরে এসে আবার কেন তার নরক জীবন টাকে আরও নরকে পরিনত করছে কি দোষ তার যার কারনে নিফান তাকে এত শাস্তি দিচ্ছে। ‘কি দোষ তার? কি দোষের শাস্তি দিচ্ছে নিফান তাকে।
চোখ মুছে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় অর্ঘমা সাথে পার্স নিয়ে হাস্পাতালের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। ওই হাস্পাতালেই তো একটা মানুষ আছে যে তার নিজের আপন তার জীবন বাঁচানোর জন্যই তো আজ রক্ষিতার ট্যাগটা গায়ে মাখাতেও দু’বার ভাবেনায়।অবশ্যই তা তার ভালোবাসার মানুষ নিফানের দেয়া ট্যাগ।
‘অর্ঘমা পিছন থেকে নিফান গলা জড়িয়ে ধরে তার গালে গাল ঘেঁষে তাকে প্রশ্ন করে,
__‘আমায় তুমি কতটা ভালোনাসো নিফান?’
নিফান অর্ঘমার হাত ধরে টেনে তাকে পিছন থেকে সামনে এনে তার কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
_‘তুমি কতটা ভালোবাসা চাচ্ছো?’
_‘যতটা তুমি ভালবাসবে’ (অর্ঘমার উত্তর)
ভ্রু কুচকে বাকা হাসে নিফান তারপর বলে,
_যদি বলি ভালোবাসিনা তাহলে কি করবে?
অর্ঘমা রেখে নিফানের কোল থেকে উঠে তার চুল ধরে টেনে রেগে বলে,
_’কি বললি? ভালোবাসিস না অকে দেখি আমাকে ভালো না বেসে তুই কই যাস’
_‘আরে আরে আমার চুল’
_‘তোর চুল টেনে তুলে তোকে টাক করে দেব আজ
অর্ঘমা রাগে ফুসছে আর নিফান সে অর্ঘমার হাত তার মাথা থেকে সরিয়ে অর্ঘমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে হোহো করে হাসতে থাকে।
অর্ঘমা নিজেকে নিফানের থেকে ছাড়িয়ে তার দিকে ফিরে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকায়।
এই লোকটাকে সে খুব ভালোবাসে তাই নিফান কে ছাড়া বাঁচা তার পক্ষে অসম্ভব।
নিফান ও মুচকি হেসে অর্ঘমাকে আরও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় অর্ঘমার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে আলতো ভাবে ঠোঁট ছোয়ায়। কেপে উঠে অর্ঘমা। তাকে ছেড়ে দিতে নিতে’ই নিফান তার ডান হাত দিয়ে আলতো করে অর্ঘমার পেট স্পর্শ করে তাকে নিজের সাথে আরও জড়িয়ে নেয়। দু’জনের মাঝে কোন দুরত্ব নেই। শিউরে উঠে অর্ঘমা বার কয়েক নিশ্বাস নেয়। নিফান অর্ঘমার অবস্থা দেখে বাকা হেসে তাকে কিছুটা কাছে টেনে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
__‘এই সামন্য ছোয়ায় এই অবস্থা তাহলে বিয়ের পর,,,’
কিছুটা থেমে বলে,
__‘অবশ্য তাতে আমারই লাভ। তাই না? উডবি মিসেস নিফান আহমেদ।’
’অর্ঘমা লজ্জায় গুটিয়ে নেয় নিজেকে এই ছেলেটার মুখে কোনো লাগাম নেই নির্লজ্জ’
গাড়ির হর্নের শব্দে অর্ঘমা ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে। অর্ঘমার হঠাৎ মনে হলো নিফান হয়ত সেদিন সত্যি বলেছিল যা সে মজা ভেবে নিয়েছিল। নিফান তার সাথে নাটক করে গিয়েছিল ভালোবাসার। সে কিছুই বুঝতে পারেনি কিন্তু এতটা নিখুত অভিনয়ও করা যায়? এতটা? সব সব অভিনয় নাটক, ছলনা। বুকটা ভআড়ি হয়ে যায় অর্ঘমার এদানিং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়তার। মনে হয় এখন’ই তো সে শ্বাস আটকে মারা যাবে। কিন্তু মৃত্যু তো আসেনা।
তাচ্ছিল্য হেসে অর্ঘমা সিএনজি ভাড়া মিটিয়ে হাসপাতালের ভিতরে চলে যায়।
কেবিনের সামনে গিয়ে দরজার কাছে হাত রেখে ভিতরের শুয়ে থাকা মানুষটির দিকে তাকায় অর্ঘমা। কবে ঠিক হবে সে কবে তার জীবন কিছু টা হলেও আগের মতো হবে। একটু সুখ একটু শান্তি, একটু সস্তি কি তার ভাগ্যে নেই এতো পোড়া কপাল তার এতটা। হাসপাতালের বেডের শুয়ে থাকা মানুষটিও তাকে ফেলে চলে যাওয়ার পায়তারা করছে। এই একজন’ই তো আছে তার নিজের বলতে। আর তাকে বাচানো সে হাজার বার রক্ষিতা হতে পারবে। নিফান জানতো তার বড় দূর্বলতা আর সেই দূর্বলতা কে কাজে লাগিয়েই নিফান তাকে রক্ষিতার ট্যাগ দিলো। রক্ষিতা!
ভালোবাসার মানুষটির দেয়া নাম।
।
চলবে?