রক্ষিতা,পর্ব-১০

0
834

রক্ষিতা,পর্ব-১০
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)

কিছুদিন ধরে নিফানের ব্যাবহারে অবাক হয় অর্ঘমা। নিফান তাকে সময় দিচ্ছে। তাকে নিয়ে তার পছন্দের জায়গায় গুলোতে ঘুরতে যাচ্ছে। নিফান তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে গল্প করছে। ব্যাপার গুলো খুব ভাবায় অর্ঘমাকে। যেনো আগের নিফান কে দেখছে সে। আজ নিফান তাকে নিয়ে তাদের ভার্সিটিতে এসেছে। সেই শাটল ট্রেন। এই শাটল ট্রেনে তাদের দু’জনের অনেক স্মৃতি। অর্ঘমার ভিতর অন্য রকম এক ভাললাগা কাজ করে। হাটতে হাটতে ভার্সিটির ঝুলন্ত ব্রিজের কাছে যায়। মনে হচ্ছে এই তো কালও সে এই ঝুলন্ত ব্রিজে উঠে লাফিয়েছে। লাফিয়ে নিফানের কাঁধে উঠে ঝোলা। তাকে জ্বালানো। সবটা মনে পরছে সব। খিল খিল করে হেসে ওঠে অর্ঘমা

অর্ঘমার পাগলামির কাছে হেরে গিয়ে তাকে ভালবেসে ফেলে নিফান। এমন একটা বাচ্চা বাচ্চা দুষ্টু হাসি-খুশি মেয়েকে না ভালোবেসে থাকা যায়না। ততদিনে অর্ঘমা সেকেন্ড ইয়ারে উঠে যায়। নিফান মাস্টার্সে। স্বপ্নের মতোই ভালবেসে কেটে গিয়েছিলো দিন গুলো। ভার্সিটির সবার মুখের আলোচিত জুটি ছিল নিফান-অর্ঘমা। যাদের ভালিবাসা দেখে টিচাররা অব্দি মুগ্ধ হতো।
একদিন হঠাৎ ভুত চাপে অর্ঘমার মাথায় সে শাড়ি পরবে। এবং তা নিফান কে কিনে দিতে হবে। নিফান তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে সে শাড়ি পরতে পারবেনা। যে জীবনে সেলোয়ার-কামিজ অব্দি পরেনি। জিন্স -শার্ট ছাড়া সে পরবে? শাড়ি! বরাবরের মত নিফান হেরে যায়। বাধ্য হয়ে তাকে শাড়ি কিনে দেয়। প্রত্যেক বারের মতো সেবারও অর্ঘমা অঘটন ঘটায়। শাড়ি পড়ে হাটতে গিয়ে পরে গিয়ে। পা মচকে ফেলে। সে কি কান্না। তার পা বোধায় ভেংগে গেল। নিফান তাকে এত বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে ভাংগেনি শুধু মচকে গিয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। নিজের মতো মতো ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে যায় আর নিফান তার পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। সেবার নিফানকে অনেক ঘাটায় অর্ঘমা। নিফানও চুপচাপ তার মহারানীর সকল যন্ত্রণা সহ্য করেনায়। ভার্সিটির সব প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে আইডেল ছিল অর্ঘমা-নিফান। একদিন হঠাৎ উদাও হয়ে যায় নিফান। বেশ কিছুদিন তার দেখা নেই। খোজ নেই। ফোন অফ। কেঁদে কেঁদে নিজের খুব বাজে অবস্থা করে অর্ঘমা। সে সময় পাশে ছিল তার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড নিহিতা। নিহিতাও খুব করে খোজার চেষ্টা করে নিফানের কিন্তু নিফানের খোজ নেই নিফানের বন্ধুরাও কেউ জানেনা নিফান কোথায়। নিফানের বেস্ট ফ্রেন্ড আরাফ সেও নিফানের সাথে উধাও। বেশ কিছুদিন পর নিফানের দেখা মিলে। চুল উস্ক খুস্ক দেখে মনে হচ্ছে খুব বড় ঝড় বয়ে গেছে তার ভিতর। অর্ঘমা তাকে পেয়ে সে যে জড়িয়ে ধরে। আর কেউ তাকে ছাড়াতে পারেনা। নিফান শুধু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাঁকিয়ে ছিল। বেশ কিছুদিন এমন নিশ্চুপতায় কাটে। একদিন অর্ঘমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখে নিফান। অবাক হয় অর্ঘমা। হঠাৎ এভাবে বিয়ে। তবে নিফানের জোড়াজুড়িতে রাজি হয় অর্ঘমা। নিফানের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে থাকে নিফানের বন্ধু আরাফ সাথে আরও কিছু ফ্রেন্ড। অর্ঘমার পক্ষ থেকে নিহিতা। সেদিন দ্বিতীয় বারের মতো শাড়ি পরে অর্ঘমা। লাল টুকটুকে বউও সাজে। নিফানের ফ্লাটে গৃহ প্রবেশ হয় তার। তারপর ফুলসজ্জা সেদিন রাতে প্রথম বারের মতো নারী হিসেবে পরিপূর্ণ হয় অর্ঘমা। নিজের স্বামী নিজের ভালবাসার মানুষটির কাছে নিজেকে তুলে দেয় সে। নিজের স্বামীর কাছে নিজের কুমারিত্ব হারায় সে। দু’জনের ছোটো টোনাটুনির সংসার ভালোই যাচ্ছিল। তবে নিফান প্রায় অন্যমনস্ক থাকত। অর্ঘমা কারন জানতেও চেয়ে কখনো সদ উত্তর পায়নি। একদিন হঠাৎ করে নিফান আবার উধাও হয়ে যায়। সাথে দিয়ে যায়। ডিভোর্স পেপার। অর্ঘমা সেদিন এক বিন্দুও কাঁদেনি শুধু ডিভোর্স পেপার টা হাতে নিয়ে তাঁকিয়ে ছিল। ডিভোর্স পেপারে নিফানের সাইনের দিকে। মানুষিক ভাবে ভেংগে পরে অর্ঘমা। ঢাকা ফিরে যায়। সেখানে গিয়ে হয় আর এক বিপত্তি তার ভাইয়া যাকে ভালোবাসে তাকে তাদের পরিবারের সবাই চিনতো। অর্ঘমা তো ভাবি বলতে অজ্ঞান ছিল। সেই ভাবি মাকি বেঁচে নেই তার ভাইয়া কে ভুল বুঝে সুইসাইড করে নেয়। বেশ কিছুদিন পর অর্ঘমা ভাইয়া। অভ্র নিজেকে নিজে গুলি করে সুইসাইড করে ফেলে। নিজের ভালবাসার মানুষ তাকে ভুল বুঝে চুলে গিয়েছে এটা মনতে পারেনি সে। তাই নিজেকেও মেরে ফেলে সে। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর যখন বাবা- মা শুনে তারা হাসপাতালে ছুটে যায় লাশ নিয়ে আশার সময় ট্রাকের সাথে সংঘর্ষের মারা যায় তারা৷ অর্ঘমা শুধু নিজের মা-বাবা আর ভাইয়ার লাশের দিকে তাঁকিয়ে ছিল। সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটেছিল যে অর্ঘমা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

হাটতে হাটতে একটা গাছের কাছে যায় অর্ঘমা। গাছে “অর্ঘমা লাভস নিফান” লেখাটায় হাত বুলায় অর্ঘমা। মৃদু হাসে সে। কত কত স্মৃতি এখানে। মনে হয় সব সেই আগের মতো জিবন্ত সতেজ। শুধু তাদের সম্পর্ক মৃত।
নিফান এসে তার পাশে দাঁড়ায়। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দূরের নিচু হওয়া গাছেটির দিকে তাকায়। তাদের অনেক সুন্দর মুহুর্ত জড়িয়ে আছে ওই জায়গা ওই গাছের সাথে। মৃদু হাসে নিফান। হয়তো তারও অর্ঘমার করা পাগলামি গুলোর কথা মনে পরে গেছে।
অর্ঘমা নিফানের চোখে চোখ রেখে বলে,,
__‘আপনি জানেন নিফান। আজ আমাদের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী। আমি কিন্তু আপনাকে ডিভোর্স দেয়নি নিফান। ডিভোর্স পেপারে সাইনও করেনি। কোর্টে তা জমাও দেয়নি। তাই দ্বিতীয় বিয়েটা করারও দরকার ছিলনা। কারন আমাকে স্পর্শ করার বৈধ্যতা আপনার সেই পাঁচ বছর আগে থেকেই ছিল।
চোখে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে নিফান। সে ভাবছিল অর্ঘমার হয়তো মনে নেই।
নিফানের দিকে শান্ত চোখে চেয়ে তার গালে হাত রাখে অর্ঘমা। বলে,
__‘আজ আপনাকে একটা সত্যি কথা বলবো নিফান?
‘আমি না আপনাকে আর ভালোবাসিনা’
নিশ্বাস আটকে যায় নিফানের অর্ঘমা থেকে দুই’পা পিছনে চলে যায় হতবে অর্ঘমার চোখ থেকে চোখ সরায়৷ না। অর্ঘমার পুরু মুখে তাকায় সে। তার ঠোঁটের কোনে হাসি। শ্বাস উঠাতে পারেনা নিফান। বুকে ধুকবুক করছে৷ মনে হচ্ছে সে নিশ্বাস নিতে পারছে না। আজ! আজ অর্ঘমা বলেই দিলো তাকে ভালবাসে না। অর্ঘমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে এটা বলতে পেরে সে খুব খুশি।
নিফানকে নিস্তব্ধ করে রেখে চলে যায় অর্ঘমা। নিফান সেখানেই নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
যেতে যেতে মৃদু হাসে অর্ঘমা,,
কারন আজ জীবনে প্রথম সে নিফান কে মিথ্যে বলেছে। যাকে ভালোবেসে এত এত পাগলামি করেছে তাকে নাকি সে ভালোবাসে না। নিজের নিশ্বাস আটকে যাবে। তবুও এটা ভাবতে পারবেনা যে,, সে নিফান কে আর ভালবাসেনা। তবে সে তার কাছে থাকতেও চায়না।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here