রক্ষিতা,পর্ব-১৩

0
866

রক্ষিতা,পর্ব-১৩
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)

মাত্র তিন মাস বাকি। তারপর দু’জনে পথ ভিন্ন। সময় গুলো মনে হচ্ছে খুব তারাতাড়ি চলে যাচ্ছে। অর্ঘমা আর নিফানের মধ্যকার সম্পর্ক কিছুটা ভালোর দিকে। অবশ্য তাতে অবদান নিফানের। সে এগিয়েছে। অর্ঘমাকে সময় দিচ্ছে। হেসে হেসে গল্প করছে। অর্ঘমা আবেগ নিয়ে দ্যাখে সেই হাসি। আর পাঁচ টা স্বামী-স্ত্রীর মতোই কাঁটছে দিন গুলো। তবে তাদের মধ্যে সেক্সুয়াল কোনো রিলিশন হয়নি।
অর্ঘমা কিছুটা মানিয়ে নিয়েছে নিফানের সাথে। যদি নিফান চায় তবে সে ভেবে দেখবে নিফানের সাথে থাকবে। তাছাড়া যাবেই বা কোথায়? সে একা একটা মেয়ে। আপন বলতে তো কেউ নেই।
শাওয়ার নিয়ে চুল মুচতে মুচতে ওয়াশরুম থেকে বের হয় অর্ঘমা। নিফান বেডে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। অর্ঘমা নিফান কে দেখে বলে,,
__‘এসেছেন? আপনি একটু বসুন আমি খাবার রেডি করছি।’
নিফান তাঁকায় অর্ঘমার দিকে। ভেজা চুল। পাতলা জর্জেট শাড়ি চুলের পানিতে ভিজে শরীরের প্রায় অংশ দৃশ্যমান। ল্যাপটপ রেখে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় নিফান। অর্ঘমার খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অর্ঘমা নিফানের চোখের দিকে তাঁকিয়ে ঢোক গিলে। শাড়ি সরিয়ে পেটে হাত রাখে নিফান। কেঁপে উঠে অর্ঘমা। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। ভিতু চোখে তাঁকায় নিফানের দিকে। নিফান কামুক চোখে তাঁকিয়ে তার দিকে। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে তার। শুকনো ঢোক গিলে। আজ প্রায় তিন মাস পর নিফান তার কাছে এসেছে। নিফানের হাত বিচরন করছে তার শরীরে। আজ নিফানের ছোঁয়ায় ভালবাসা খুজে পাচ্ছে সে। নিফানের চোখের দিকে তাঁকায় অর্ঘমা। নিফান তার দিকে তাঁকিয়ে আছে। অনুমতি চাচ্ছে। বার কয়েক আশে-পাশে চোখ বুলায় অর্ঘমা। খানিক বাদে অর্ঘমা নিজ থেকে নিফান কে জড়িয়ে ধরে সম্মতি দেয়। অর্ঘমার সম্মতি পেয়ে হাসে নিফান। বাঁকা হেসে কোলে তুলে নেয় অর্ঘমাকে। বিছানায় শুয়ে দেয়। মেতে উঠে আদিম খেলায়। আজ নিফানের ছোঁয়ায় ভালবাসা খুজে পাচ্ছে সে। নিজেও সারা দেয় নিফানের সাথে।
“সকালের মিষ্টি আলোতে ঘুম ভাংগে অর্ঘমার। মিষ্টি হেসে নিফানের দিকে তাঁকায়। নিফান তাকে জড়িয়ে ধরে তার উপরেই ঘাড়ে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে। নিফানের চুলে গালে হাত বুলায় সে। আজ নিজেকে একজন স্ত্রী হিসেবে পরিপূর্ণ লাগছে। আজ মনে হচ্ছে পাঁচ বছর পর তার স্বামী তার কাছে এসেছে। তাকে ছুঁয়েছে। তাকে পরিপূর্ণ করেছে। মুচকি হাসে অর্ঘমা। নিফানের কপালে ঠোঁট ছোয়ায়। ঘুমের ভিতর ভ্রু কুচকে উঠে নিফানের। তা দেখে হেসে উঠে অর্ঘমা। তার হাসির শব্দে ঘুম ভেংগে যায় নিফানের। ঘুমঘুম চোখে তাঁকায় অর্ঘমার দিকে। সকালের মিষ্টি রোদে বেশ আবেদনময়ী লাগছে তাকে। নিফান কে জাগতে দেখে থতমত খায় অর্ঘমা। এক’ই চাদরের নিচে দু’জন। নিফান উঠতে নেয়। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে অর্ঘমা। তা দেখে নিফান বাঁকা হেসে। ভালো করে জড়িয়ে যায় তার সাথে। স্পর্শ কাতর জায়গা গুলোতে হাত বুলায় কেঁপে উঠে অর্ঘমা। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয় তার। নিফানের থেকে ছুটাতে চায় নিজেকে।
অর্ঘমা চোখ বন্ধ করে বলে,,
__‘ছাড়ুন প্লিস”
হাসে নিফান। নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় তাকে বলে,,
__“যদি না ছাড়ি?
ঢোক গিলে উত্তর দেয় অর্ঘমা,
__‘মরেই যাবো”
ঠোঁট কামড়ে হাসে নিফান। অর্ঘমার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
__‘মেরেই ফেলবো।
নিশ্বাস আঁটকে যায় অর্ঘমার। বিছানার চাদর খামছে ধরে। নিফান তা দেখে হাসে। শুধু হাসে না খিল খিল করে হাসে। আজ তার অকারনেই খুব হাসি পাচ্ছে। নিজেকে সুখি মানুষ মনে হচ্ছে। এমন একটা বাচ্চা বউ যার আছে সে খুশি হবে না কেন? আবার হাসে। হেসে অর্ঘমার নাকে নাক ঘষে। কোলে তুলে নেয় তাকে। কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। আজ তার ইচ্ছে জেগেছে এক সাথে গোসল করার।
দেখতে দেখতে এক মাস শেষ হয়ে যায়। এই এক মাসে অর্ঘমা পুরুনো নিফান কে পেয়েছে। সেই নিফান যে তাকে ভালবাসত। নিফান কাছে আসলে কখনো বাধা দিতো না অর্ঘমা। তবে নিফান তার সম্মতি নিয়ে তার কাছে আসত। নিফানের ছোয়ায় ভালবাসা খুজে পেতো অর্ঘমা। আর সে কারনে কখনো তাকে বাঁধা দিতো না। অবশ্য নিফান তাকে কখনো জোড় করেনি। হেসে খেলে দিন গুলো ভালো যাচ্ছিল।
অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে নিফান। টাই খুজে পাচ্ছেনা। হাক ছেড়ে ডাকে অর্ঘমাকে। একবার না কয়েকবার ডাকতে থাকে। কিচেনে কাজ করছিল অর্ঘমা। বিরক্ত হয়। খুন্তি নিয়ে রুমে আসে। রাগে তেরে আসে তার দিকে। থতমত খায় নিফান। বউয়ের রণচন্ডী রুপ দেখে।
অর্ঘমা বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
__‘কি চাই?
নিফান ক্যাবলা হেসে আমতা আমতা করে বলে,,
__‘টাই! টাই খুজে পাচ্ছিনা।
অর্ঘমা টাই হাতে দিয়ে চলে যেতে নেয়। নিফান তার হাত ধরে আঁটকে দিয়ে কোমড় আঁকড়ে ধরে কাছে টেনে আনে।
এক গাল হেসে বলে,,
__‘বউ কেও চাই’
অর্ঘমার দিকে এগিয়ে যায় নিফান। তার ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়াতে নিলে অর্ঘমা খুন্তি সামনে রাখে। নিফানের ঠোঁট গিয়ে খুন্তিতে লাগে। ক্রুর হাসে অর্ঘমা। খেতে যাওয়ার তাগিদ দিয়ে কিচেনে চলে যায়। নিফান ক্যসবলার মতো ঠোঁটে হাত দিয়ে কিচ্ছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে। কন্ঠ জোর এনে অর্ঘমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,,
__‘বউ পুরুনো হয়ে গেলে বর দের দিকে আর নজর থাকে না বউ দের। রাতে আমারও সময় আসবে।
নিফানের কথা কানে যাওয়া মাত্র খিল খিল করে হেসে উঠে অর্ঘমা। অর্ঘমার হাসির শব্দ পেয়ে। মুচকি হাসে নিফান। আয়নার দিকে তাঁকিয়ে চুল হাত বুলিয়ে। ফিটফাট হয়ে ডাইনিং এ যায় । খাবার শেষে অফিসের জন্য বের হতে নিলে। ভ্রু কুচকে কোমড়ে হাত দিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় অর্ঘমা। তার কোমড়ে শাড়ি গোজা। সেদিকে তাঁকিয়ে হাসে নিফান। পুরোদস্তর গিন্নি লাগছে তাকে। অর্ঘমা ঠোঁট বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,,
__‘তা এতো সেজেগুজে কই যাওয়া হচ্ছে?
নিফান হাসার চেষ্টা করে বলে,,
__‘অফিসে’
অর্ঘমার নিফানের দিকে এগিয়ে গিয়ে চুল মেলো করে দিয়ে বলে,
__এবার ঠিক আছে তবে,,
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
__‘আপনি কি অফিসে মেয়েদের দেখাতে যাচ্ছেন? চুল এলোমেলো করলাম তাতে আরো সুন্দর লাগছে। আপনাকে এত সুন্দর হতে কে বলছে?
নিফান হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সে সুন্দর হয়েছে তাতে তার দোষ কোথায়?

মেডিকেল রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছে অর্ঘমা তার চোখে জল। কিছুদিন ধরে অসুস্থতা বোধ করছিলো। মাথা ঘুরাচ্ছিলো। বমি বমি পাচ্ছিলো। পিরিয়ডের ডেটও মিস হয়। সন্দেহ হচ্ছিলো অর্ঘমা। তাই হস্পিটালে আসে চেকাপ করাতে। যা ভেবেছিলো তাই’ই হয়েছে। সে প্রেগন্যান্ট ‘মা’হতে চলেছে সে। নিফান বাবা। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। অজান্তেই পেটে হাত দেয় সে। এখানে তার ভালবাসা। তার স্বামী নিফানের অংশ বেড়ে উঠছে। তাদের সন্তান। চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায় অর্ঘমা। ছুটে যায় নিফানের কাছে তাকে জানাতে সে বাবা হচ্ছে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here