রঙ তুলির প্রেয়সী-১১,১২

0
1442

রঙ তুলির প্রেয়সী-১১,১২
ফারজানা আহমেদ
১১

মাহির হাতে ছবিটা দেখে অবাক হয়ে তাকালো জাওয়াদ। তারপর হেসে দিলো। মাহি নাক ফুলিয়ে বললো, ‘হাসছিস কেন তুই? আমিতো তোর একটা ছবি এঁকেছি। তুই জীবনেও আমার এঁকেছিস?’

জাওয়াদ নিজের ছবি আঁকা চালাতে চালাতে বললো, ‘আমার কী ঠেকা লেগেছে? তোর ছবি আঁকার জন্য ছবি আঁকা শিখলাম?’ বলে ছবির ফিনিশিং দিলো জাওয়াদ। একটানা দু’দিন থেকে ছবিটা আঁকছিলো সে।

‘ওহ, তাই বল। আমি কে তুই আমার ছবি আঁকবি? থাক। এটা রাখ, আমার পক্ষ থেকে উপহার। অনেক যত্ন করে এঁকেছি।’ বলে হাতের ছবিটা চেয়ারের ওপর রেখে ঘুরে দাঁড়ায় মাহি। চোখ ছলছল করছে তার। পা বাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য আর তখনই পেছন থেকে জাওয়াদ ওর একটা হাত চেপে ধরে। মাহি ফোঁস করে পেছনে না তাকিয়েই বলে, ‘ছাড় বলছি। ছাড়।’

‘কী বললি তুই? তুই কেউ না?’

ফিরে তাকায় মাহি। জাওয়াদের চোখে চোখ রেখে বলে, ‘কে হই আমি তোর?’

জাওয়াদ নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। আস্তে আস্তে টেনে মাহিকে নিজের কাছে এনে দাঁড় করায়। নিজের মুখোমুখি। তারপর ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কেউ না?’

মাহির স্থির দৃষ্টি তখনও জাওয়াদের চোখের ওপর। সে শীতল কণ্ঠে বললো, ‘কে?’

জাওয়াদ কিছু না বলে মাহির হাত ছেড়ে দেয়। তারপর মাহির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাহির দু’বাহু ধরে তাকে নিয়ে সেই ছবিটির সামনে দাঁড় করায় যেটা সে আঁকছিলো। মাহির ছবি, বাতাসে মাহির চুল উড়ছে আর সে হাসছে প্রাণখোলা হাসি। ছবিটির সামনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো মাহি। ছলছল করা নোনা জল টুপ করে গাল বেয়ে পড়লো তার। সে ফিরে তাকায় জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদ দু’হাতে মাহির মুখটা উঁচু করে চোখে চোখ রেখে বললো, ‘তুই আমার প্রেয়সী। আমার রঙ তুলির প্রেয়সী!’ বলে মাহির কপালে একটা নিবিড় চুমু দিলো জাওয়াদ। আবেশে চোখ বুজে এলো মাহির। দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো সে জাওয়াদকে। কিছুক্ষণ ওভাবে কেটে যাওয়ার পর মাহি জাওয়াদকে ছেড়ে দিলো। তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এটা কী করছিস? ছবি আঁকার সময় একদম গোসল করে ফেলিস রঙ দিয়ে। এখন আমার কাপড়চোপড় ও খারাপ করে দিলি!’

‘যাক বাবা! তুই-ই তো জড়িয়ে ধরলি। আমি ধরেছি?’ কপাল কুঁচকে বললো জাওয়াদ।

মাহি বললো, ‘তাও তো আমি ধরেছি। তুই তো ধরিসওনা।’

আবারও ঠোঁট কামড়ে হাসে জাওয়াদ। বলে, ‘ধরার কথা ভেবে বলছিস? আমি ধরলে শুধুই ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবোনা। অনেক কিছু করেও ফেলতে পারি!’ বলে চোখ টিপ দিলো সে। মাহি লজ্জা পেলো। ঘুরে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো, ‘ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি। সবাই তো শুয়ে পড়েছে, ভেবেছিলাম শুয়ে পড়বো। এই রাত বিরেতে আমাকে গোসল করাচ্ছিস।’

জাওয়াদও হেসে ভেতরে গেলো ফ্রেশ হতে। চটপট শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। দেখলো পাশের বারান্দায় মাহি চুল থেকে তোয়ালে খুলে দড়িতে মেলে দিচ্ছে। হালকা আলোয় দেখলো জাওয়াদ, মাহি একটা টাইটস আর সাদা টি-শার্ট পরে আছে। হাত উচু করে তোয়ালে মেলে দেয়ার সময় তার টি-শার্ট উঁচু হয়ে ফর্সা পেট খানিক উন্মুক্ত হয়েগেলো। চেয়ে থাকতে পারেনা জাওয়াদ, চোখ ফিরিয়ে নিলো। বুকের ভেতর কেমন যেন হাহাকার করছে তার। দুইটা মাস দূরে থাকতে হবে ভাবতেই বুক পুড়ে, খুব পুড়ে! এমন সময় পেছনে মাহির উপস্থিতি টের পায় জাওয়াদ। আস্তে করে বলে, ‘এসেছিস!’

মাহি নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায় জাওয়াদের পেছনে। তারপর হুট করে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখে। মাহির স্পর্শে সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে জাওয়াদের। সে দুরুদুরু বুকে মাহিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মাহি আরো জোরে আঁকড়ে ধরে। জাওয়াদ খেয়াল করে তার পিঠের ওপর শার্ট ভিজছে। মাহি কাঁদছে! চট করে পেছন ফিরে মাহির মুখ দুহাতে ধরে জাওয়াদ। ব্যস্ত হয়ে বলে, ‘এই কাঁদছিস কেন তুই? কিজন্য?’

‘আমাদের আর দেখা হবে জাওয়াদ?’ ভেজা চোখে বললো মাহি।

জাওয়াদ অবাক স্বরে বললো, ‘আশ্চর্য! দেখা কেন হবেনা? আমি একেবারে তো যাচ্ছিনা। মাত্র দুমাসের ট্রিপ রে পাগলি!’

‘কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি আর এভাবে তোকে জড়িয়ে ধরতে পারবোনা।’ বলে জাওয়াদকে আঁকড়ে ধরে মাহি।

জাওয়াদ মাহিকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলে, ‘পাগলামি কথাবার্তা ছাড়। এতো কান্না শিখলি কোত্থেকে?’

মাহি মাথা তুলে জাওয়াদের দিকে তাকায়। দু’হাতে ভালো করে চোখ মুছে। তারপর জাওয়াদের দু’পায়ের উপর উঠে দাঁড়ায়। জাওয়াদের খুব কাছে গিয়ে বলে, ‘আমাকে আদর করবি? হতে পারে এরপরে আর সুযোগ পাবিনা…’

জাওয়াদের বুকটা কেঁপে ওঠে। মাহিটাও না! এমন এক একটা কথা বলে। জাওয়াদ ঢোঁক গিলে ধরা গলায় বলে, ‘মাহি পাগলামির সীমা আছে। এসব কেমন কথা? আমি কী হারিয়ে যাচ্ছি?’

‘আমিতো হারিয়ে যেতে পারি জাওয়াদ…’ মাহির কন্ঠ খুব শীতল শোনালো। এতোটাই শীতল যে জাওয়াদের বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠলো। জাওয়াদ ধমকের স্বরে কিছু বলতে যাবে তখনই মাহি একটা আঙ্গুল জাওয়াদের ঠোঁটের ওপর চেপে ধরে বললো, ‘একটা চুমু দিবি? অনেকক্ষণ ধরে? সত্যি বলছি, আর কিন্তু সুযোগ পাবিনা…’

জাওয়াদ মাহির ঠোঁটের নিচের সুন্দর তিলটায় হালকাভাবে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, ‘মাহি এমন করে কেন বলছিস তুই?’

‘উফ জাওয়াদ! বড্ড কথা বলিস!’ বলে হুট করে নিজের ঠোঁট জাওয়াদের ঠোঁটে ছোঁয়ায় মাহি। হুট করে জাওয়াদ বুঝতে না পারলেও পরে নিবিড়ভাবে মাহিকে নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে চুমু দেয় জাওয়াদ, মাহির কথামতো… অনেকক্ষণ ধরে। তারপর আরো অনেক অনেক চুমু দিয়েছিলো জাওয়াদ তার প্রেয়সীর গালে, গলায়, ঘাড়ে। জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ভেজা চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ নিয়েছিলো। সেদিনই সে পেয়েছিলো প্রেয়সীর শেষ ছোঁয়া। প্রেয়সীর ঠোঁটে শেষ বারের মতো ছোঁয়াতে পেরেছিলো নিজের ঠোঁট! শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরেছিলো বুকে…

দরজায় ঠকঠক আওয়াজে ঘোর কাটে জাওয়াদের। চোখ খুলে তাকায় সে। টের পায় তার চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে। হাসলো জাওয়াদ। অনেকদিন পর জল গড়ালো কিনা! আবার ঠকঠক আওয়াজ হলো দরজায়। সময় দেখে নিলো জাওয়াদ, রাত সাড়ে ন’টা বাজে। এতো সময় কেটে গেল! জাওয়াদ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো তিথি দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে। সাদা রঙের টপস আর নীল স্কার্ট পরা। চুলগুলো খোঁপা করা। গলায় নীল স্কার্ফ পেঁচানো। তিথির মুখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা যেন তোলপাড় করতে লাগলো জাওয়াদের। কী হলো হঠাৎ করে ওর? এমন তো ও ছিলোনা! এই মেয়েটাকে দেখলে ওর এমন হচ্ছে কেন? কেন ইচ্ছে করছে ওকে…

‘কী ব্যাপার? শুনতে পাচ্ছেন না?’ তুড়ি বাজায় জাওয়াদের চোখের সামনে তিথি। জাওয়াদের হুঁশ আসে। তিথি কী ওকে কিছু বলছিলো?

‘হ-হ্যাঁ?’ তিথির ঠোঁটের নিচের তিলটা একবার দেখে জাওয়াদ। তারপর আবার তাকায় তিথির চোখের দিকে।

‘হ্যাঁ হ্যাঁ কী? খেতে যাবেন না? সবাই এতোবার ডেকে গেল!’

‘কখন?’ অবাক হয় জাওয়াদ।

‘ওমা! সেই কখন থেকে!’

‘আমি খাবোনা। বলে দিও, ক্ষিধে নেই।’ বলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তিথিকে দেখতে লাগলো জাওয়াদ। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ঘরের ভেতরে এনে বসিয়ে রেখে দেখতে থাকুক।

‘কেন? মোটা হয়ে যাচ্ছেন নাকি? ডায়েট?’

জাওয়াদের যেন কানে যাচ্ছেনা কথা। সে দেখছে তিথিকে। মন দিয়ে। তিথির যেন কেমন লাগলো। অদ্ভুত এক চাহনি জাওয়াদের। তিথির বুকটা কেমন করে উঠলো। এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? সে হুট করে বলে বসলো, ‘এভাবে তাকাচ্ছেন কেন আমার দিকে?’

তিথি কথাটা বলামাত্র জাওয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো। আস্তে করে বিড়বিড় করলো, ‘আমার সামনে এসোনা… এসোনা…’

‘হ্যাঁ?’ তিথি বুঝতে পারলোনা জাওয়াদ কী বললো। ‘কী বলছেন?’ বলে হাত নাড়লো জাওয়াদের সামনে।

‘আমি খাবোনা। আমার ক্ষিধে নেই।’ বলেই তিথির মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিলো জাওয়াদ। তিথি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। কী হলো? হুট করে এমন করলো কেন? তিথি ভেংচি দিলো। নিজে নিজেই জোরে জোরে বললো, ‘ভেবেছিলাম আর মোগ্যাম্বো বলবোনা। কিন্তু তুমি আসলেই মোগ্যাম্বো। এটা ছাড়া আর কিছুই যায়না তোমার সাথে। খাইওনা ভাত। একদিন না খেলে কিছু হবেনা, যেই বডি তোমার! হুহ!’ বলেই গটগট করে হেটে চলে গেল তিথি। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো জাওয়াদ। তিথির বলা কথাগুলো শুনেছে সে। শব্দ করে হেসে দিলো জাওয়াদ। তারপর নিজের চুলে হাত বুলালো। ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসলো। আচ্ছা, মাহির বলা কথাটাই কী সত্যি হলো? এই দু’বছর পর?
_________________

‘জাওয়াদ খাবেনা?’ টেবিলে বসতে বসতে বললো রিয়াদ।

মুনতাহা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বললেন, ‘ক্ষিধে নেই বললো। ডাকলাম শুনলোও না। পরে নাকি তিথিকে বলেছে খাবেনা।’

‘কী হলো হঠাৎ। আমি দেখে আসি।’ বলে উঠতে লাগলো রিয়াদ। হেলাল আহমেদ আঁটকে দিয়ে বললেন, ‘থাকুক। একা থাকতে দাও। ওর ক্ষিধে পেলে নিজেই এসে খেয়ে নেবে।’

আদিয়া বললো, ‘আজকে কফিও চায়নি।’

‘না চাক। খাও তোমরা। ওর সবকিছুই তো জানো।’ বললেন হেলাল আহমেদ। কেউ আর কোনো কথা বললোনা। তিথি চুপচাপ খাচ্ছে আর ভাবছে, কী অদ্ভুত ছেলেটা! এক এক সময় এক এক রকম!
______________

জাওয়াদ নিজেকে আঁটকে রাখতে পারছেনা। বারবার সময় দেখছে। ঘড়ির কাঁটা রাত দু’টো ছুঁইছুঁই। রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য বারবার দরজার কাছে গিয়ে ফিরে আসছে জাওয়াদ। দরজা খোলা পাবে কি? অনেক দোনা মোনা করে দরজা খুলে বাইরে বেরোলো জাওয়াদ। তারপর ভালো করে চারিদিকে দেখলো। নাহ, কেউ নেই। ধীর পায়ে হেঁটে তিথির রুমের সামনে গেল সে। বুকটা কাঁপছে। কিন্তু নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে আজ তার। মরে যাচ্ছে যেন সে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলতে গেল জাওয়াদ। অবাক হলো, দরজা খোলা। এই মেয়ে পাগল নাকি? দরজা খুলে ঘুমায়! দরজা খুলে আরেক দফা অবাক হলো জাওয়াদ। লাইট জ্বালানো। লাইট জ্বালিয়ে কেউ ঘুমায়? হেসে দিলো জাওয়াদ। তাকিয়ে দেখলো দরজার দিকে মুখ করে কাত হয়ে শুয়ে আছে তিথি। গায়ে একটা চাদর জড়ানো। ঘুমোচ্ছে গভীরভাবে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে তিথির ঠিক সামনে হাঁটুগেড়ে বসলো জাওয়াদ। খুব কাছ থেকে দেখতে লাগলো তিথিকে সে। যতোই দেখছে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে খুব সাবধানে একবার ছুঁয়ে দিলো সে তিথির ঠোঁটের নিচের তিলটাকে। খুব, খুব ইচ্ছে করছে এই কপালটায় একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতে। এতোদিন পরে কেনো এই মেয়েটার জন্য এমন করছে জাওয়াদ সে জানেনা। সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে তার। কী হবে না হবে কিছু না ভেবেই খুব সাবধানে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় সে তিথির কপালে। তিথির ঘুম তখনও ভাঙ্গেনি। হাসে জাওয়াদ। এতো গভীর ঘুম! কোলে করে তুলে নিয়ে গেলে কেমন হয়? পরক্ষণেই সে নিজের ভাবনার জন্য নিজেই বোকা বনে যায়। ইশ, সারারাত এভাবে এখানে বসে থেকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। জাওয়াদ একবার নিজের বুকের ওপর শার্ট খামচে ধরে। এখানে থাকলে আরো অনেক নিষিদ্ধ ইচ্ছারা জাগবে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। কিন্তু সে যেতে পারছেনা, এখানে এই মেয়েটার কাছে থাকতে তার ভালো লাগছে। ওকে দেখতে তার ভালো লাগছে। মনের সাথে যুদ্ধ করে উঠে দাঁড়ায় জাওয়াদ। আরেকবার তিথিকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে ঘুরে বেরিয়ে গেল। সাবধানে দরজা লাগিয়ে পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে।

দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো তিথি। সারা শরীর কাঁপছে তার। একটু বেশিই কাপছে। হাসফাস করছে। শরীরের ওপর থেকে টেনে চাদরটা সরালো সে। উঠে গিয়ে এক গ্লাস ভর্তি জল ঢকঢক করে গিললো। তারপর ফ্লোরে বসেই হা করে নিশ্বাস নিতে লাগলো জোরে জোরে। ঢোঁক গিললো বার পাঁচেক। এটা সত্যি ছিলো? ও এসেছিলো? কপালে… চোখ দিয়ে জল গড়ায় তিথির। ভাগ্যিস ভুল করে লাইট জ্বালানো অবস্থায়ই ঘুমিয়ে গেছিলো। নয়তো অন্ধকারে না চিনে অনেক জোরে চিৎকার দিতো তিথি। দরজা খোলার শব্দ শুনেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। জাওয়াদকে দেখে একেবারে রোবট হয়ে শুয়ে ঘুমের ভান করছিলো। তিথির বুক কাঁপতে থাকলো। কী করবে সে এখন? কী করলে এখন তার শান্তি লাগবে? বড্ড অশান্ত হয়ে আছে মনটা। কেন যেন মনে হচ্ছে এক্ষুণি সে জ্ঞান হারবে… পৃথিবীটা যেন ঘুরছে… কী চলছে জাওয়াদের মনে? তিথির মতোই কিছু কি সে ভাবছে?
___________________

আজ জাওয়াদ ঘুমোবেনা। আজ তার অনেক কাজ। অনেক বড় কাজ। আলমারি থেকে সেই জিনিসের ব্যাগটা বের করতে গিয়ে মাহির ডায়েরিটা চোখে পড়ে জাওয়াদের। ডায়েরিটা হাতে নিলো জাওয়াদ। তারপর ত্রস্ত পায়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। আজ আবার পড়বে সে এই ডায়েরিটা। শেষ বারের জন্য। হয়তো কাঁদবেও এটা পড়ে, শেষ বারের জন্য।
__________

চলবে…….
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী
১২.

৭ মার্চ ২০১৮
————————–
তোকে রিসিভ করার জন্য রিয়াদ যাবে আমি জানি। তাই, এটা রিয়াদের হাতে দিয়ে বলবো যেনো এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়েই এটা তোর হাতে ধরিয়ে দেয়। এই ডায়েরিটা যখন তুই পাবি, মনে হয় তখন আমি থাকবোনা। তখন আমি দূরে থাকবো। অনেক দূর। তোর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমি জানি, এটা শেষ করার পরে তুই ক্রোধে ফেটে পড়বি। কেন তোকে কিছু জানানো হয়নি এটা বলে পুরো পৃথিবী এক করে দিবি। ফুপি, ফুপা, আদিয়া, রিয়াদ, মা, বাবা, সবার সাথে রাগারাগি করবি। খবরদার! আর যাই কর, আপন মানুষদের সাথে একদম রাগারাগি করবিনা বলে দিলাম। যদি রাগারাগি করিস, এটা নিয়ে কোনোদিন কাউকে একটাও কথা বলিস তাহলে আমি ভাববো… হয়তো সত্যিই আমাদের মধ্যে ভালোবাসা বলতে কিছু ছিলো না। এটাকে যদি ভালোবাসার দোহাই দেয়া বলিস, তবে তা-ই। আমিই সবাইকে মানা করেছি যাতে তোকে কেউ কিচ্ছুটি না বলে। আমিতো জানি এই ট্রিপটা শুধুই তোর বন্ধুদের সাথে বেড়ানোর জন্য নয়। ওখানে তুই আরো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিস। ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। জিতলে তোর সলো এক্সিবিশন হবে। তোকে যদি ওরা এসব বলতো তাহলে সব ফেলে তুই চলে আসতি। কী ভেবেছিস? আমাকে না বললে আমি জানবোনা? আমি ঠিক ঠিক জেনে নিয়েছি। শুধু আফসোস থেকে গেল, নিজের চোখে তোর সাফল্য দেখে যেতে পারলাম না। অবশ্য, তোকে না বলার আরো একটা কারণ আছে। এটা তোর শাস্তি। কিসের শাস্তি? এইযে আজ পুরো নয় দিন কেটে গেছে, তুই আমার ফোন তুলছিস না। এইজন্য আমি তোকে শাস্তিটা দেবো। এসে যখন দেখবি আমি নেই, তখন পস্তাবি। কেন একবার আমার সাথে কথা বলিসনি সেজন্য খুব কাঁদবি। জানিস? বড্ড অভিমান জমেছে বুকে। পাহাড় সমান। না না, পাহাড় না, আকাশ সমান। অসীম। যেদিন তুই আমাকে ঐ কথাগুলো বললি সেদিন আমি কেঁদেছি। অনেক কেঁদেছি। এইযে এখন লিখছি, এখনও কেঁদেকেটে ডায়েরিটা ভরিয়ে দিচ্ছি। তবে সেদিনের কান্নাটা ছিলো আমার শুধুই বেদনার কান্না। আর আজকের কান্নাটা হচ্ছে অভিমান, আর সাথে শারিরীক কষ্টেরও। এইযে বসেছি, বসতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও বসেছি। কারণ লিখতে হবেই আমায়। কোমরে ব্যথা করছে খুব। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সেটা সহ্য করছি আমি। লেখার মাঝে কয়েকবার উঠে হাঁটছি। তবুও লিখছি। আচ্ছা জাওয়াদ, আমাকে এভাবে অবিশ্বাস করলি কেন? কীভাবে ভাবলি আমি এমন করবো? একবারও খুঁতিয়ে দেখলিনা কেন যে ও সত্য বলছে নাকি মিথ্যা? সেদিন তুই আমাকে ঐ কথা জিজ্ঞেস করার পর আমি তোকে ফিরতি কোনো উত্তর দেইনি বলে তুই রাগ করেছিস। কিন্তু আমি কেন উত্তর দেইনি সেটা কি ভেবেছিলি জাওয়াদ? সেদিন তুই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিস আমি এরকম ‘কেন করেছি?’। মানে তুই ভেবেই নিয়েছিস আমি এমন করতে পারি। তুই যদি এই ‘কেন করেছিস?’ না জিজ্ঞেস করে এই ঘটনা সত্যি না মিথ্যা এটা জিজ্ঞেস করতি তাহলে হয়তো আজ সবকিছু অন্যরকম হতো। প্রেয়সীর ঠোঁট আর ঠোঁটের নিচের তিলে পরম আবেশে চুমু খেলেই ভালোবাসা হয়ে যায় না। প্রেয়সীর হাঁটু সমান চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলেই ভালোবাসা হয়ে যায়না। প্রেয়সীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখে চোখ রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ে থাকলেই ভালোবাসা হয়না। ভালোবেসে প্রেয়সীকে বিশ্বাস করতে হয়। বিশ্বাসের আবরণই যদি না থকে, তাহলে কোনোকালেই সেটাকে ভালোবাসা বলে আখ্যায়িত করা যায়না। আমি জানি, তোর সামনে যে প্রমাণ রাখা হয়েছিলো সেটা ফেলে দেয়ার মতো না। আমি বলছিনা ফেলে দে। আমি শুধু বলছি, একবার কি আমাকে বিশ্বাস করা যেতো না? আমি সজ্ঞানে তোর ছোঁয়ানো ওষ্ঠদ্বয়ে অন্য কারো ছোঁয়া লাগতে দেবো সেটা তুই কীভাবে ভাবলি? থাক, কিছু বলবোনা। শুধু অনুরোধ করবো দেশে আসার পরে অন্তত আর কিছু না করলেও এটার সত্যতা যাচাই করে নিবি।

১০ মার্চ ২০১৮
—————————-
আজ ১২ দিন হয়ে গেল। তুই আমার ফোন তুলিসনা। কথা বলিসনা। আমার যে সময় ঘনিয়ে এসেছে সেটা যতই বুঝতে পারছি ততই কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। প্রিয়জনদের ছেড়ে দূরে যাওয়ার কষ্টটা খুব বেদনাদায়ক। কিন্তু চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগাম বার্তা পাওয়ার পর সেই বেদনার আগুন শিখা হৃদয়কে দগ্ধ করে দেয়। আর যতোই দিন ঘনাতে থাকে ততোই হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে। তোকে খুব মনে পড়ছে। আমি খেতে পারিনা, ঘুমাতে পারিনা… নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।বাবা প্রতিদিন আমার মাথার কাছে বসে থেকে কাঁদে। মা উদ্ভ্রান্তের মতো কাঁদে। ফাহি তো কিছুক্ষণ পরপর এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদে। ফুপি তোকে কল করে বলে দিতে চেয়েছিলেন, বলতে দেইনি। তুই প্লিজ এসে এদের কারো সাথে রাগ করিসনা। জানিসই তো, মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির ইচ্ছা পূরণ করতে হয়। এরাও আমার ইচ্ছাটাই পূরণ করছে। আমিই এদের মানা করেছি তোকে কিছু না বলতে। জানিস? রিয়াদও আমার জন্য কেঁদেছে। অবাক না? যে রিয়াদ আমাকে হিংসা করতো তুই ওর থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসিস এটা বলে। সেই রিয়াদ আমার জন্য কেঁদেছে। ওকে যে আমি কীভাবে তোকে সব বলা থেকে আঁটকিয়েছি তুই ভাবতে পারবিনা! তবুও আমি চাই তুই প্রতিযোগিতা টা জিতে যা। আমাকে ভুল বুঝেছিস, জানি তোর সেই ভুলটা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তোর সাথে আর কোনো মধুর সময় বানাতে পারলাম না বলে বড্ড আফসোস হচ্ছে!

১৪ মার্চ ২০১৮
—————————
কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারছিনা। যতো সময় যাচ্ছে দুর্বল হচ্ছি। লিখতে গিয়ে অনেক কষ্ট হয়রে, হাত চলেনা। এখন শুয়ে শুয়ে লিখছি। হাতের লেখা খুবই বাজে হচ্ছে। আমি আর্তনাদ করছি জাওয়াদ। আমার আর্তনাদ কি তোর হৃদয় অবধি পৌঁছাতে পারছেনা? এতো কঠিন হচ্ছিস কীভাবে? আমার কষ্ট হচ্ছে জাওয়াদ। আর দু’দিন পর হয়তো আমার আর হুশই থাকবেনা। আজই ডায়েরিটার কার্যক্রম শেষ করতে হবে। এতো রাগ তোর! এতো রাগ! একটাবার ভাবছিস না তোর ভালোবাসা, তোর প্রেয়সী এমনটা করতে পারেনা! আমি সেদিন রাগ করে কল কেটে দিয়েছিলাম। তুই ওভাবে বলায় অনেক রাগ হয়েছিলো আমার। একটু রাগ দেখালাম বলে তুই আমাকে এভাবে রাগ দেখাবি? আমার জীবনের শেষ সময়টুকুতে তোকে আমি পাশে পাইনি… একটাবার তোর গলা শোনার জন্য চাতক পাখির মতো করে ছটফট করেছি এতোদিন। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে জাওয়াদ। আমি কিছু লিখতে পারছিনা। যা কিছু হয়েছে এতে তোর কোনো দোষ নেই। অনেকেই চেয়েছিলো আমরা আলাদা হয়ে যাই, তাদেরই চক্রান্তের ফাঁদে তুই পা দিয়েছিস। তোর ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি চাইলেই সব ঠিক করে দিতে পারি, নিমেষেই ভেঙ্গে দিতে পারি তোর ভুল। কিন্তু বিধাতার মনে হয়তো অন্যকিছুই ছিলো। উনি হয়তো আমাদের এক হওয়া কপালে রাখেন নি। তাই আমিও আর চেষ্টা করি নি। মরণব্যাধি হয়েছে, সব ঠিক করে আর মায়া বাড়িয়ে কী লাভ? তারচে বরং আমার ওপর রাগ করে থাক। তাহলে তোর কষ্টও হবেনা। খুব ইচ্ছা ছিলো… সবুজ জামদানী শাড়ি পরে, পিঠময় খোলা চুলগুলো ছড়িয়ে রেখে, কানে ফুল গুজে তোর সামনে এসে দাঁড়াই। তুই তো আমাকে এভাবেই দেখতে চেয়েছিলি তাইনা? কিন্তু দেখনা… আজ তুই ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে। আমার সেই হাঁটু সমান চুলগুলোও ব্লাড ক্যান্সার নামক ব্যাধির ট্রিটমেন্ট এর জন্য পড়ে যাচ্ছে। তোর সবথেকে প্রিয় আমার ঠোঁটের নিচের তিল, সেখানটাও কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে। জাওয়াদ… আমরা কোনোদিন কেউ কাউকে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা বলি নি। আমরা দু’জনে বাসর রাতে একে অপরকে ‘ভালোবাসি’ বলতে চেয়েছিলাম। অথচ দেখ… বাসরটাই ভাগ্যে নেই। জাওয়াদ… আমি তোর রঙ তুলির প্রেয়সী তো হতে পেরেছি। কিন্তু তোর জীবনের প্রেয়সী হতে পারলাম না। বিধাতা হয়তো অন্য কাউকে সেই অধিকার দিয়ে রেখেছেন। যে একাধারে তোর রঙ তুলির প্রেয়সী হবে, সাথে হবে তোর জীবনের প্রেয়সী। জাওয়াদ শোন, একদম দেবদাসের মতো পড়ে থাকবিনা। আমার জন্য কষ্ট পাবিনা। নিজেকে দোষ দিবি না। আমি একদম তোর ওপর রাগ করে চলে যাচ্ছিনা। ভালোই হয়েছে তুই নেই, নাহলে তোর আকুলতা আমি সহ্য করতে পারতাম না। মরার আগেই মরে যেতাম। জাওয়াদ, ওরা সবাই আমার ইচ্ছা পূরণ করেছে। তোকে কিছু জানায় নি। এখন তুই আমার শেষ ইচ্ছাগুলো পূরণ করবি। বাড়ি এসে কারো সাথে রাগারাগি করবিনা। হ্যাঁ, তোর জন্য একটা উপহার রেখে গেলাম আমি। রঙ তুলি রেখে গেলাম। তোর জীবনের প্রেয়সীকে এই রঙ তুলি দিয়ে তোর রঙ তুলির প্রেয়সী বানাবি। এই রঙ তুলির ছোঁয়ায় প্রথমবারের জন্য তোর প্রেয়সীকে তুই আঁকবি। জাওয়াদ, তোকে খুব ইচ্ছে হচ্ছে একবার ভালোবাসি বলতে। তোকে খুব ভালোবাসি জাওয়াদ। খুব হিংসা হচ্ছে আমার তোর প্রেয়সীর ওপর। কারণ এই অল্প জীবনে তুই আমাকে কতটা ভালোবাসা দিলি, তাহলে তুই তোর প্রেয়সীকে কতোটা ভালোবাসা দিবি সারাজীবন? আফসোস হচ্ছে! আমার ভাগ্যে সেটা কেন আল্লাহ লিখে দিলেন না?

ডায়েরিটা যতোক্ষণ পড়ছিলো ততক্ষণ কেঁপে কেঁপে কাঁদছিলো জাওয়াদ। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তার। হা করে নিশ্বাস নিচ্ছে সে। ঠোঁট কামড়ে যতোই কান্না থামাতে চাইছে ততোই কান্না বেড়ে যাচ্ছে। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ যেনো কাঁদছিলো তার। ডায়েরিটা হাত থেকে বিছানার ওপর রেখে দু’হাতে চুল খামচে ধরে কাঁদে জাওয়াদ। যেদিন ডায়েরিটা প্রথম পড়েছিলো সেদিনও কেঁদেছিলো জাওয়াদ। খুব কেঁদেছিলো। রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে এই ফ্লোরেই বসে চিৎকার করে কেঁদেছিলো। যতদিনে যে বুঝেছে যে সে মাহিকে ভুল বুঝেছে ততদিনে মাহি ওপারে পাড়ি জমিয়ে ফেলেছিলো। হ্যাঁ, জাওয়াদ মাহির কথা রেখেছিলো। সে কারো সাথে রাগারাগি করে নি। সেদিনের পর থেকে হাসিখুশি, দুষ্টুমি করা জাওয়াদ হয়ে গিয়েছিলো গম্ভীর, চুপচাপ। সেদিনের পর থেকে জাওয়াদ ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়েছিলো। প্রতিযোগিতা জিতেছিলো ঠিকই, কিন্তু পরে কেউ তাকে আর এক্সিবিশন এ পাঠাতে পারেনি।

চোখ মুছে জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিলো জাওয়াদ। উঠে আস্তে আস্তে হেটে মাহির ছবিটার সামনে গেল যেটা তার দেয়ালে টানানো। পরম মমতায় হাত বুলালো সেটার ওপর। ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, ‘দেবদাস হয়ে বসে থাকছিনা। দু’বছর পর তোরই মতো একটা পাগলি আমাকে আবার রঙ তুলি হাতে নিতে বাধ্য করলো। হ্যাঁ, ওকে দেখলে আমার বুক কাঁপে একইভাবে। পৃথিবী থমকে যায়, প্রেমের আগুন শিখায় আমি দগ্ধ হই। হাত বাড়িয়ে আমার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। একইসাথে দুজনকে হৃদয়ে রাণী বানানো যায়? হ্যাঁ যায়৷ তুই আমার হৃদয়ের রাণী। আর ওকে আমার হৃদয়ের সাথেসাথে আমার জীবনের রাণী বানাবো। তোকে হারিয়েছি। ওকে হারাতে দেবোনা… দেবো না…’

বলে হেটে গিয়ে সেই ব্যাগটা হাতে নিলো জাওয়াদ, যে ব্যাগে মাহি ওর জন্য রঙ তুলি রেখেছিলো। তারপর সানসেট এর ওপর থেকে ইজেলটা বের করলো। সেটা মুছে ঠিক করে রাখলো। আলমারি থেকে খুঁজে আর্ট পেপার বের করলো। রঙ ঠিক করলো। তারপর… কাঁপা কাঁপা হাতে পেপারে আঁকতে লাগলো। রঙ তুলির প্রেয়সীকে…
___________

চলবে…….
ফারজানা আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here