রঙ_বেরঙে,পর্বঃ০৪

0
1305

রঙ_বেরঙে,পর্বঃ০৪
সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

কিছুক্ষণ পূর্বে সম্পন্ন হয়েছে আনিকা এবং নির্বেদের বিয়ে। আনিকার বাসায় কাজি ডেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেন মোহরে বিয়ে হয়েছে তাদের।
বিয়ের পর আনিকা কিছু খাবার মুখে তুলেছে।নির্বেদ নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে তাকে ঘুমানোর জন্য বলছিল।কারণ তাকে এখন ফিরতে হবে।প্রনব সাহেব আজ তাকে ব্যবসায়ী কিছু কাজ বুঝিয়ে দিবেন।

“প্রণয়ীকে ছেড়ে দিবে না?”

আনিকার কথায় নির্বেদ বলল,

“ও থাকা না থাকা কী সমান নয়?”

“একজন নারী কখনোই তার স্বামীকে অন্যের সাথে মেনে নেয় না।”

“ওর সাথে আমাকে কখনো ভাগ করতে হবে না। কারণ আমি কোনো পণ্য নই আনিকা।”

“বিয়েটা কী খুব জরুরি ছিল?”

“বাবাকে আমি বলেছিলাম তোমার কথা।কিন্তু সে আমাকে সুযোগ দেয়নি।
বলেছিল প্রণয়ীকে বিয়ে না করলে পরদিন পুরো পরিবারকে মৃত দেখবো।
তার মাথায় হাত রেখে কসম কাটানোর পর আমার কোনো পথ খোলা ছিল না।”

“আজ তবে কেন এলে?”

“নিজেকে জিজ্ঞেস করো।তুমি নিজের এতটা ক্ষতি করার চেষ্টা না করলেও পারতে।”

“এর মানে কী তোমার বাবা আমাকে মেনে নিবে না?”

“সময় আসুক দেখা যাবে।”

“না তুমি বুঝতে পারছো না।তুমি যদি প্রণয়ীকে না ছাড়ো তবে আমাকে সমাজ কী বলবে জানো?
তোমার ২য় পক্ষ। আমি মেনে নিতে পারবো না।”

“কেউ বলবে না।তাছাড়া প্রণয়ীর মতোন মেয়েরা খুব একটা বেশি দিন বাঁচে না।”

“তুমি সত্যি আজ চলে যাবে?আজ আমাদের বাসর।”

“যেদিন তোমার কাছে ফিরবো।একবারে ফিরবো।পিছন ফিরে তাকাবো না।কিন্তু আজ আমাকে ফিরতে হবে।”

আনিকার কপালে গভীর চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো নির্বেদ। বিছানায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল আনিকা।গত কয়েক দিন নিজের উপর যা তা অত্যাচার করেছে সে।নির্বেদকে সে খুব ভালো ভাবে চিনে। তাই নিজেকে কষ্ট দিয়ে হলেও তাকে তার কাছে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেছে সে।
আনিকা চোখ বন্ধ করেই ধীর গতিতে বলল,

“নারী যখন তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতে পায়,ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যেতে থাকে অন্ধকারে তখন সে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।ভালো মন্দ বিচার করে না।প্রয়োজনে নিজের সর্বোচ্চ ক্ষতি অবধি করতে দ্বিধা বোধ করে না।”

প্রণয়ীর জন্য পুরো বাসা প্রনব সাহেব পরীরাজ্যের মতোন সাজিয়েছেন।সে অবচেতন মনে আঘাত পাবে এমন কোনো কিছুই বাসায় নেই। ড্রয়িং রুমে কাউচে মাথা রেখে ফ্লোরে বসে আছে প্রণয়ী।তার সামনে বিভিন্ন রঙের পাজেল রাখা। প্রণয়ীর
পরণে পোশাকের রঙ সাদা রঙের। পাজেল হাতে রেখেই সে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে। টিভির স্ক্রীনে তখন চলছে একটি এনিমেশন ভিডিও। নির্বেদ মিনিট দুয়েক পূর্বে এসে বসেছে
প্রণয়ীর পাশের কাউচে।
এনিমেশন ভিডিওটা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো প্রণয়ী।

একজন রাজার চার জন স্ত্রী। সবার ছোটো স্ত্রীকে সে সব থেকে বেশি ভালোবাসে। তাকে আদর করে সবার থেকে বেশি।দামী উপহার, গয়না না চাইতেই দেয় ছোটো রানীকে।
তৃতীয় রানী সে পাশের রাজ্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য রাজাকে পরামর্শ দেয়।যে সত্যিকারের সুন্দরী এবং দয়ালু। রাজা যখন কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হয় তৃতীয় স্ত্রীর কাছে ছুটে যায়। কারণ তার ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তার কারণে।
কিন্তু যখন সে নিজের প্রথম স্ত্রীর কথা চিন্তা করে সে হতাশায় ডুবে যায়। তার প্রথম স্ত্রী একজন ভালো নীতি নির্ধারক। যে রাজার স্বাস্থ্য এবং সম্পদের খেয়াল রাখতো।
কিন্তু রাজা কখনো তাকে ভালো ভাবে নিতে পারেনি।একদিন রাজা বুঝতে পারলেন তিনি মরন রোগে আক্রান্ত। তিনি হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন যখন তিনি মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে ভাবছিলেন।রাজা তার ছোটো স্ত্রীকে ডেকে বললেন,

মৃত্যুর পর সে কী তার সাথে যাবে না কি?

ছোটো স্ত্রী যে সবচেয়ে প্রিয় ছিল সে নিষেধ করলো।রাজা ব্যথিত হলেন এরপর ৩য় স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন সেও মানা করলো এবং জানালো রাজার মৃত্যুর পর সে বিয়ে করে নিবে। যথারীতি ২য় স্ত্রীও একই জবাব দিলো।রাজা তখন ব্যথিত মনে অপেক্ষা করতে লাগলেন অন্তিম সময়ের জন্য।
সে সময় বাহিরের থেকে কারো কন্ঠ শোনা যাচ্ছিলো যে বলল,

“আমি আপনার সাথে যাবো।আপনি যেখানেই যান না কেন আমি আপনার সাথে যেতে রাজি।”

রাজা তাকিয়ে দেখলেন তার প্রথম স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন।রাজা অনুশোচনায় ভুগলেন।এতদিন যাদের জন্য প্রথম স্ত্রীকে অবহেলা করেছেন আজ তারাই তাকে ছেড়ে যাচ্ছে শুধু প্রথম স্ত্রী বাদে।

সত্যি বলতে রাজা হচ্ছে আমরা সবাই।চতুর্থ স্ত্রী সে হচ্ছে আমাদের দেহ। যা মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাদের ত্যাগ করে।কিন্তু আমরা সারা জীবন এই দেহকে সকল প্রিয় জিনিস দিয়ে থাকি। তৃতীয় স্ত্রী হচ্ছে আমাদের সমাজে আমাদের স্থান এবং ধন সম্পত্তি।যখন আমরা মারা যাবো অন্যের অধীনে চলে যাবে। দ্বিতীয় স্ত্রী হচ্ছে আমাদের পরিবার, আত্নীয়স্বজন এবং বন্ধু। তারা সারা জীবন আমাদের পাশে থাকলেও মৃত্যুর পর দ্রুত কবর স্থানে রেখে আসে।সাথে থাকে কবরের পাশ অবধি।
এবং প্রথম স্ত্রী হচ্ছে আমার আত্মা।কিংবা নিজস্ব সত্তা। দেহ,সম্পদ, ক্ষমতার দোহাই দিয়ে যাকে আমরা প্রায়শই অবহেলা করি। একমাত্র নিজস্ব সত্তাই আমাদের সঙ্গী হয়ে থাকে। আমরা যেখানে যাই আমাদের সাথে সাথে চলে।পৃথিবীতে আমরা বেঁচে থাকার জন্যই বেঁচে থাকি।কিন্তু নিজস্ব সুখের পিছনে কয়জন ছুটে যাচ্ছি?

ভিডিও ক্লিপ শেষ হতেই প্রণয়ী হাসি মুখে পাশে তাকাতেই নির্বেদকে দেখতে পায়।তার মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কারণ নির্বেদ যখন তার কাছে আসে তখন তাকে অত্যাচার ব্যতীত ভালোভাবে কথা অবধি বলেনি।

প্রণয়ী সেখান থেকে ছুটে চলে যেতে চাইলে চেয়ারের সাথে লেগে পড়ে গেল।নির্বেদ দ্রুত তুলতে গেলে তার হাতে কামড়ে দেয় প্রণয়ী।হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই দ্রুত পালায় প্রণতী।

রাত গভীর হলেও ফোনে কথা চলছিল আনিকার সাথে। হঠাৎ সে আবদার করলো ভিডিও কলের। কলে আসতেই সে দেখলো নির্বেদের বিছানায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে প্রণতি।যার লম্বা চুল বিছিয়ে আছে পুরো বিছানায়।

“তুমি কোথায় ঘুমাবে?”

“কেন বিছানায়?”

“ওর সাথে?”

“তাই তো থাকছি।”

“ভালো। তবে যাও, ঘুমিয়ে পড়ো। মনে হয় বিরক্ত হচ্ছো।”

“আশ্চর্য, বিরক্ত কেন হবো?”

“কারণ হোক সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। কিন্তু তবুও সে একজন নারী।তাকে দেখে কামনা জেগে উঠা কোনো খারাপ কিছু নয় তাই না?”

নির্বেদ জবাব দিতে পারে না।তার পূর্বেই নিচ থেকে চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
দ্রুত নিচে নেমে সে দেখলো প্রনব সাহেবের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে খুব একটা সময় সে বাঁচবে না।
হয়তো হাসপাতাল অবধিই সময় তার হাতে নেই।

চলবে ,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here