#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০৩
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
সুহানিঃ কি হলো জবাব দিন আমি আপনার কি করেছি,কেন এরকম করছেন আমার সাথে।
নোহানঃ সবকিছু তোমার না জানলেও চলবে,তবে এটা জেনে রাখো তুমি তোমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। আর যদি করো তাহলে তোমার পরিবারের মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুহানি চমকে উঠলো। নোহান কেন এরকম করছে তার কারন ওর অজানা।
নোহানঃ সুহানি কিছু রান্না করো।
সুহানিঃ কি আমি।
নোহানঃ হ্যা তোমাকে এমনি এমনি বাড়িতে বউ করে আনিনি। আজ থেকে এই বাড়ির সব কাজ তুমি করবে।
সুহানি একটা ঢোক গিললো,এতবড়ো বাড়িটা একবার ঝাঁট দিতে গেলে সারাদিন লেগে যাবে। আর ওহ একা হাতে সবকিছু করবে কিভাবে?
নোহানঃ যাও তাড়াতাড়ি।
সুহানি রান্নাঘরে চলে গেলো। সকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তাই সুহানি কফি করলো নোহানের জন্য,দিয়ার মুখে শুনেছিলো নোহান কফি খাই।সুহানি নোহানকে কফিটা দেবার জন্য ওর ঘরে গিয়ে দেখলো ঘরে নেয়, বেলকনি থেকে আওয়াজ আসছে তাই বেলকনিতে যাবার সময় শুনতে পেলো।
– তোমার করা প্রতিটা অন্যায়ের শাস্তি তোমাকে পেতে হবে, ঠিক আমি যেভাবে কষ্ট পাচ্ছি তুমিও ঠিক সেভাবেই তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে।
কথাগুলো নোহান বলছিলো,হাতে একটা ছবি নিয়ে। সুহানির পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে নোহান ছবিটা তাড়াতাড়ি লুকিয়ে সামনে তাকালো।
নোহানঃ তুমি এখানে কি করতে এসেছো।
সুহানিঃ আপনার কফি।
নোহান চোখ মুখ খিঁচে বললোঃ আমি কবি খাইনা।
সুহানিঃ কিন্তু দিয়া…
সুহানির কথাটা শেষ করার আগেই নোহান কফির মগটা ফেলে দিলো। গরম কফির কিছুটা অংশ সুহানির হাতেও পড়ে যায়। সুহানি ব্যথায় আ করে উঠলো।নোহান রক্ত চক্ষু করে সুহানির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ঘরের বাইরে বের করে বললোঃ তোমাকে বারন করেছিলাম কিন্তু তুমি সেই বার বার দিয়ার নাম উচ্চারন করছো। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। আর তুমি এই ঘরে কখনোই আসবে না।
নোহান সুহানিকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা দিয়ে দিলো।
সুহানি পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়েছে।গরম কফি পড়া তার পর নোহান সেখানেই ধরাতে হাতটা লাল হয়ে আছে। সুহানি নিজের ঘরে চলে যায়। সুহানির মাথায় নোহানের তখনের কথাগুলো আসছে।
সুহানিঃ কে ওনাকে কষ্ট দিয়েছে,আর কি কষ্টই বা দিয়েছে,যার জন্য উনি একেবারে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। সবকিছু কেমন জানো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।
সুহানির হাতে মলম লাগিয়ে,রান্নাঘরে গেলো রাতের রান্না করার জন্য।
অন্যদিকে…
– ম্যাম নোহান স্যার সুহানি ম্যাডামকে বিয়ে করেছেন।
রাগে ফোনটাকে আছাড় মেরে বললোঃ না এটা কিছুতেই হতে পারে না। নোহান সুহানিকে বিয়ে করতে পারে না। তাহলে কি নোহান কিছু জেনে গেছে, না এটা হতে পারে না আমার এতদিনের প্ল্যান কিছুতেই শেষ করতে দেবো না। সুহানি,এই সুহানি একটা নাম আমার জীবনকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, আমার পথের কাঁটা আমি কখনোই রাখি না। এবারেও তোমাকেও রাখবো না মিসেস সুহানি শিকদার।
কথাটা বলেই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো। কোন অজানা বিপদে পড়তে চলেছে সুহানি। কে এই মেয়ে?তার সাথে কি শত্রুতা সুহানির,অনেক অনেক রহস্য জমা হচ্ছে।
রাতে নোহান আর খেতে আসেনি। সুহানি ও কিছু খাইনি আর।
পরেরদিন সকালে,,
নোহান অফিসে যাবার জন্য বের হচ্ছে।
সুহানিঃ ব্রেকফাস্ট টা করে যান।
নোহানঃ অফিসে করে নেবো।
নোহান চলে যাচ্ছিলো।
সুহানিঃ দাঁড়ান।
নোহান বিরক্ত হয়ে বললোঃ কি হয়েছে।
সুহানিঃ বলছি আমি অফিসে যাবো।
নোহান ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কোন অফিস?
সুহানিঃ আমি যেখানে কাজ করি।
নোহানঃ কোথায় কাজ করো তুমি।
সুহানিঃ এম ডি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে।
নোহান বাঁকা হেসে বললঃ আচ্ছা যাও।
সুহানি কিছুটা অবাক হলো নোহান রাজি হবে সেটা ওর ধারনাতেই ছিলো না।নোহান চলে যায়, সুহানি খুশি হয়ে রেডি হতে যায় কিন্তু সমস্যা হলো একটাই সুহানির কোনো জামাকাপড় নেয় এখানে কি করে যাবে এখন। সুহানি কোনো উপায় না পেয়ে দিয়ার একটা সালোয়ার কামিজ পড়লো।
সুহানি বাড়ি থেকে বের হতে যাবে,তখনি দেখলো নোহান রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আর ওর হাতে কয়েকটা প্যাকেট।
নোহানঃ তোমার সাহস কি করে হলো দিয়ার জামাকাপড় পড়ার।
সুহানিঃ আমি কি করবো আপনি আমাকে জোড় করে এখানে আনলেন।আমার তো কিছুই নেয় এখানে।
নোহানঃ এই নাও জামাকাপড়। কিছু দরকার লাগলে আমাকে বলবে কিন্তু কখনোই দিয়ার কিছুতে হাত দেবে না।
সুহানির হাতে প্যাকেটগুলো দিয়ে নোহান গটগট করে চলে গেলো।
সুহানিঃ এই মানুষটাকে দিয়া কিভাবে ভালোবাসলো অদ্ভুত মানুষ।
সুহানি রেডি হয়ে চলে গেলো।অফিসে গিয়ে দেখলো ওর ডেস্কে অন্য একজন বসে আছে।
সুহানিঃ কে আপনি আর এখানে কি করছেন?
মেয়েটাঃ আমি শিয়া এই কোম্পানিতে নতুন জয়েন করেছি আর এই ডেস্কটা আমাকে দেওয়া হয়েছে।
সুহানিঃ কি এটা তো আমার।
শিয়াঃ আপনি বসের সাথে কথা বলুন।
সুহানি একগাদা রাগ নিয়ে বসের দরজায় কড়া নাড়লো।
সুহানিঃ স্যার আসবো।
বসঃ হ্যা আসো।
সুহানিঃ স্যার এসব কি,আমার ডেস্কে অন্য একজন কেন?
বসঃ আসলে সুহানি তুমি আর এই অফিসে চাকরি করতে পারবে না।
সুহানি আকাশ থেকে পড়লো।
সুহানিঃ কি সব বলছেন আপনি?
বসঃ হ্যা,তোমাকে এইকাজটা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তুমি আর এই অফিসে কাজ করবে না।
সুহানিঃএসবের মানে কি,আমার নিজের যোগ্যতায় এখানে চান্স পেয়েছিলাম আপনি আমাকে বাদ দিচ্ছেন কেন কোনো একটা রিজন দেখান।
বসঃ আমি কিছুই বলতে পারবো না তোমাকে শুধু এটাই বলবো তোমাকে আমি কেন কোনো কোম্পানিই চাকরি দেবে না।
সুহানিঃ কেন আমি কি করেছি।
বসঃ কিছু না তুমি আসতে পারো। নাহলে আমাকে অন্য স্টেপ নিতে হবে।
সুহানির রাগে দুঃখে অপমানে চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। চোখের পানিটা মুছে বের হয়ে গেলো।
সুহানি বেড়িয়ে যেতেই বস একজনকে কল করলোঃ স্যার আপনার কথা মতো কাজ করেছি।
নোহানঃ ওকে।
বসঃ স্যার একটা কথা বলছি কিছু মনে করবেন না,সুহানির মতো ডিজাইনার কোনো কোম্পানির কাছে থাকা মানে তার কপাল খুলে যাওয়া।রাখছি স্যার।
নোহান ফোনটা কেটে বললোঃ ঠিক এভাবেই তোমাকে সব দিক থেকে একা করে দেবো। একদম একা।
সুহানি বাড়ি ফিরে আসে মনটা ভালো নেয়। ফ্যাশান ডিজাইন ওর স্বপ্ন ওর ইচ্ছা। আর সেখানে চাকরিটা চলে গেলো ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনটাকে ঠিক করার জন্য ডিজাইন করতে বসলো। নিজের মন খারাপ ভালো করার একটাই উপায় ডিজাইন করা,সুহানি ডিজাইন করতে করতে ডুবে গেলো,নিজের রাগ, ক্ষোভ,অভিমান,অপমান সবটা ডিজাইনের উপর ফুটিয়ে তুললো।
নোহান আজকে একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরলো। দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে এদিক ওদিক সুহানিকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও না পেয়ে সুহানির ঘরে গিয়ে দেখলো চারিদিকে কাগজ ছড়িয়ে আছে। সুহানি কাগজের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। গালেতে পানির দাগ আছে তার মানে কান্না করেছে।
নোহান ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি একটা জিনিসের উপর ওর চোখ যায়। কৌতুহল বশত সেটা তুলে নিয়ে চমকে উঠলো।
সুহানির ঘুম ভাঙ্গলো সন্ধ্যার দিকে,মাথাটার অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। মাথা ব্যথা কমানোর জন্য কফি করতে গেলো।কফি করে ড্রইং রুমে এসে দেখলো নোহান গভীর চিন্তায় মগ্ন।
সুহানিঃ কি ভাবছেন।
নোহান ধ্যান থেকে ফিরে বললোঃ না কিছু না।
সুহানি ভয়ে ভয়ে বললোঃ কফি খাবেন?
নোহানঃ দাও।
সুহানি চমকে উঠে কফির মগটা এগিয়ে দিলো। নোহান চুপচাপ কফিটা শেষ করে বললোঃ ভালো হয়েছে কফিটা।
সুহানি আলতো হেসে উঠে যেতে যাবে,তখনি নোহান পেছন থেকে বললোঃ সুহানি।
সুহানিঃ হুম বলুন।
নোহান হাতে কিছু পেপার নিয়ে বললোঃ এইগুলো তোমার।
সুহানি নোহানের হাতে কাগজ গুলো দেখে খুব অবাক হলো।
#চলবে…