#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০৭,০৮
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#ধামাকা_পার্ট
(৭)
সুহানি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কথাগুলো ভাবছে দিয়া কোথায়? কি হয়েছিলো সেদিন। সবকিছু আমাকে জানতেই হবে।
রাত্রিবেলা,,
নোহান সুহানিকে ডেকে পাঠিয়েছে ডাইনিং রুমে।
নোহান মেডকে বললঃ তোমাদের ম্যামকে বলো খাবার খেতে।
সুহানিঃ কদম দি তোমাদের স্যারকে বলে দাও আমার খিদে নেয়।
নোহানঃ কদম তোমার ম্যামকে বলে দাও খাবার না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে তারপরে বলবে আমি খেতে দেয়নি,এসবে আমি নেয় বাবা চুপচাপ খেতে বলো।
সুহানিঃ কদমদি ওনাকে বলে দাও আমি এরকম কখনোই বলবো না।আমার খিদে নেয় আমি খাবো না,ওনাকে খেতে বলে দাও।
কদম একবার এর দিকে আর একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। দুজনে ঝগড়া করছে কিন্তু মাঝখানে কদমকে রেখে অদ্ভুত।
কদমঃ তোমার ঝগড়া করো আমি যায়।
কদম চলে যায়,নোহান আর সুহানি একে অপরের দিকে রাগি চোখে তাকায়। সুহানি নিজের ঘরের দিকে যেতে যাবে তখনি নোহান পেছন থেকে বললোঃ খাবার না খেলে মেডিসিন খেতে পারবে না।তাই চুপ করে খাবার গুলো খাও
সুহানি অবাক হয়ে নোহানের দিকে তাকালো। নোহান কিভাবে জানলো ওর মেডিসিন লাগবে।
নোহানঃ এত চিন্তা ভাবনা না করে চুপচাপ খেয়ে নাও।
সুহানিঃ খাবো না।
নোহানঃ আমাকে জোড় করতে বাধ্য করো না।
সুহানি নোহানের চাপে পড়ে কোনো রকমে একটু খেয়ে মেডিসিন নিয়েছো।
২ দিন পর…
সুহানি এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। এই দুদিন অফিসে যায়নি। আজকেও যায়নি একা ঘরে বসে আছে। তখন শাওন ওকে ফোন করে একটা জায়গায় আসতে বললো। সুহানি প্রথমে না করলেও শাওনের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে যায়।
সুহানি রেডি হয়ে শাওনের কথা মতো একটা রেস্টুরেন্টে পৌঁছায়।
সুহানিঃ কি ব্যাপার এতটা খুশি কেন?
শাওনঃ কারন আছে। আজকে সারাদিন তোমাকে আমি ট্রিট দেবো।
সুহানিঃ কারনটা?
শাওনঃ পড়ে বলি।
সুহানিঃ ওকে।
শাওন ওর আর সুহানির জন্য খাবার অর্ডার করলো। দুজনে খাচ্ছে আর কথা বলছে হেসে হেসে।
ওদের দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে আছে নোহান।হ্যা ওই রেস্টুরেন্টেই নোহান একটা ডিল করতে এসেছে। ডিল করতে করতে ওর চোখ পড়ে শাওন ও সুহানির উপরে।
নোহানকে বার বার অন্যমনস্ক হতে দেখে,মিস্টার আহমেদ বললোঃ মিষ্টার শিকদার এনিথিং রং।
নোহান ওইদিকে তাকিয়েই বললোঃ না কিছু না।
নোহানের দৃষ্টি অনুসরন করে মিষ্টার আহমেদ বললোঃ ওদের আপনি চেনেন নাকি।
নোহান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। মিষ্টার আহমেদ দাঁত বের করে বললোঃ তাহলে মিষ্টার শিকদার ওই মেয়েকে আমার কাছে পাঠাতে পারবেন এক রাতের জন্য,তাহলে আমাদের সব ডিল আপনাদের সাথেই করবো।
নোহান রাগী চোখে মিষ্টার আহমেদের দিকে তাকালো। নোহানের রাগী চোখ দেখে বললোঃ আরে রাগ করেন কেন? এতে আমার ওহ লাভ আর আপনার ওহ।
নোহানঃ আমার লাভ ক্ষতি আমিই দেখে নেবো,এবার আপনার টা আপনি দেখুন। আমি আপনার সাথে কোনো ডিল করবো না।
মিষ্টার আহমেদঃ এতটা রেগে যাচ্ছেন কেন?
নোহান আহমেদের গলার কলারটা ধরে বললোঃ ওর দিকে চোখ তুলে তাকালেনা আপনার চো’খ দু’টো আর চো’খে’র জা’য়’গা’তে থা’ক’বে না।
মিষ্টার আহমেদঃ আমার একবার যেদিকে চোখ যায় আমি সেটা হাসিল করেই ছাড়ি।
নোহানের মাথায় আগুন ধরে গেল, মিষ্টার আহমেদ কে মারতে লাগলো। গোটা রেস্টুরেন্টের সবাই ওনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ম্যানেজার ছাড়াতে চাইছে কিন্তু নোহান মে’রেই যাচ্ছে।
নোহানঃ নোহান শিকদার নিজের জিনিসের উপর কারোর নজর সহ্য করে না। আর কোনোদিনও যদি ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখি ওখানেই মে’রে ফেলে দিয়ে আসবো।
নোহান মিষ্টার আহমেদ কে ছেড়ে দিলো। মিষ্টার আহমেদ রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলো। ম্যানেজার সকলকে চলে যেতে বললো। সবটাই দাঁড়িয়ে দেখছিলো সুহানি আর শাওন। রেস্টুরেন্টের পরিবেশ স্বাভাবিক হতেই শাওন সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ সুহা এখান থেকে চলো। স্যার দেখলে চাকরি থাকবে না।
সুহানিঃ তুমি যাও আমি আসছি।
শাওন সুহানিকে রেখে আড়ালে চলে যায়। নোহান সুহানির কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে আছে, নোহানের কথাটা বার বার কানে বাজছে, কি এমন কারন যার জন্য নোহান মা’রা’মা’রি করতে লাগলো।
সুহানি নিজের চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো কি হয়েছে।
নোহান কিছুই না বলে,চলে গেলো।নোহান চলে যেতেই শাওন সুহানিকে এসে বললোঃ চলো।
সুহানিঃ কোথায়?
শাওনঃ একটা কাজ আছে চলো।
সুহানিঃ কি?
শাওনঃ গেলেই দেখতে পাবে।
শাওন আর সুহানি একটা পার্কে এসে দাঁড়ায়।
সুহানিঃ এখানে কেন?
শাওনঃ তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
সুহানিঃ কি কথা
শাওন হাঁটু গেড়ে বসে বললোঃ আই লাভ ইউ
শাওনের এমন কথায় সুহানি আকাশ থেকে পড়লো। অপরদিকে সবটাই দেখেছিলো নোহান। শাওন সুহানিকে প্রোপস করছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না। গাড়িটা চালিয়ে ওখান থেকে চলে যায়, বাকি কথাগুলো না শুনেই।
সুহানিঃ এসব কি?
শাওন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললোঃ প্র্যাক্টিস করলাম।
সুহানি ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কিসের?
শাওনঃ প্রোপস করার।
সুহানিঃ কিছুই বুঝতে পারলাম না।
শাওনঃ আসলে আমি একজনকে ভালবাসি,তাকে প্রোপস করবো কিন্তু কিভাবে করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না তাই তোমাকে দিয়ে টেষ্ট করলাম।
সুহানি আলতো করে হেসে বললোঃ এটা কিন্তু ঠিক না। আমাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে অন্য কারোর হতে পারো না তুমি।
শাওন সুহানির দুষ্টুমি বুঝতে না পেরে বললোঃ কি বলছো এসব আমি তোমাকে বোনের মতো দেখি।
সুহানি দাঁত বের করে বললোঃ আর আমি দাদা হিসাবে তোমাকে।
শাওনের জানে প্রান ফিরে আসলো। বেচারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো খুব জোরে।
সুহানিঃ তা আমার ভাবিটা কে?
শাওনঃ আগে তাকে বলি তারপর।
সুহানিঃ ওকে।
শাওনঃ আচ্ছা একটা কথা বলবো।
সুহানিঃ কী?
শাওনঃ তোমার সাথে কি নোহান স্যারের কোনো সম্পর্ক আছে।
সুহানি শাওনের মুখে এই কথা শুনে চমকে উঠলো, কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললোঃ আরে কি বলো না,আচ্ছা বাদ দাও আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে বাই।
সুহানি শাওনকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো বাড়িতে। শাওন ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললোঃ মনে হচ্ছে কিছু একটা আড়াল করতে চাইছো,যাই হোক তবে আমার মনে হচ্ছে তোমাদের মাঝে কোনো না কোনো সম্পর্ক তো আছেই। রেস্টুরেন্টে যখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলে তখন তোমাদের চোখে অন্য কিছু একটা ছিলো।
রাত ১২টা…
এখনো পর্যন্ত নোহান বাড়িতে ফেরেনি।সুহানি জেগে আছে, রহিম চাচা ওহ জেগে ছিলেন কিন্তু সুহানি জোর করে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
গাড়ি আসার আওয়াজ শুনতে পেয়ে সুহানি দরজাটা খুলে দিল। এলোমেলো পায়ে নোহান দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। নোহানের গা থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। সুহানি চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বললোঃ আপনি মদ খেয়েছেন?
নোহানঃ হ্যা খেয়েছি বেশ করেছি আবার খাবো তাতে তোমার কি?
সুহানি বুঝতে পারলো নোহান জ্ঞানে নেয়,নোহানকে কোনো রকমে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। বিছানায় দিয়ে চলে যাবে,নোহান হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললোঃ প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যেয়ো না দিয়ার মতো।
সুহানিঃ আচ্ছা যাবো না।
নোহানঃসত্যি তো।
সুহানিঃ হুম,আচ্ছা বলুন তো দিয়া কোথায়?
নোহানঃ দিয়া তো আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।
সুহানিঃ কোথায় গেছে দিয়া।
নোহান যেটা বললো,তাতে সুহানি চমকে উঠলো। সুহানির মনে হচ্ছে কানে কম শুনছে। মাথাটা ভো ভো করে ঘুরছে। না এটি কিছুতেই হতে পারে না। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধ লেগে গেছে। নোহানের কথাটি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সুহানি।
সুহানিঃ কি বলছেন এসব আপনি?
নোহানঃ হ্যা ঠিক বলছি দিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
নোহান সুহানিকে ধরে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। সুহানির চোখ দিয়েও একটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
#চলবে…
#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(৮)
সূর্যের একটুকরো আলোর ছটা নোহানের মুখে এসে পড়তেই নোহানের ঘুমটা ভেঙে গেলো। নিজেকে নিজের বিছানায় দেখে একটু অবাক হলো,কাল তো সুহানির উপরে রাগ করে বারে চলে গিয়েছিলো। এই ঘরে কে নিয়ে আসলো সুহানি?
সুহানির নাম নিতেই সুহানি হাজির, এককাপ কফি নিয়ে নোহানের ঘরে আসলো। নোহান সুহানির দিকে তাকালো,মেয়েটাকে আজকে অন্যরকম লাগছে, মনে হচ্ছে প্রানহীন কোনো মানুষ। কি হয়েছে ওর, অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো নোহানের।
সুহানি কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বললোঃ আজকে আমি কিছু প্রশ্ন করবো তার উত্তর দেবেন প্লিজ।
নোহান সুহানির দিকে তাকালো,চোখটা ছল ছল করছে যেকোনো সময় পানি গড়িয়ে পড়তে পারে। চোখে একরাশ কাকুতি মিনতি।
সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ দিয়া কোথায়?
সুহানির মুখে সকাল বেলাতেই দিয়ার নামটা শুনে রাগটা বাড়তে লাগলো নোহানের। গম্ভীর স্বরে বললোঃ তোমাকে বলেছি না দিয়ার নাম উচ্চারন করবে না।
সুহানির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। নোহানের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললোঃ কি অপরাধ আমার,আমি কি করেছি যার জন্য আমার প্রিয় বান্ধবীর মৃ’ত্যু’র খবরটি পর্যন্ত আমি পাইনি।
নোহান সুহানির দিকে চমকে উঠে তাকিয়ে বললোঃ তুমি।
সুহানিঃ কালকে মদের নেশায় আপনি বলেছিলেন।
নোহান রাগে নিজের মাথার চুল টানতে লাগলো। নেশার ঘোরে দিয়ার মৃ’ত্যু’র খবরটা বলে দিয়েছে সুহানি কে।
সুহানিঃ বলুন সত্যিটা কি করেছি আমি।
নোহানঃ কি করেছো আবার জানতে চাইছো, শুধুমাত্র তোমার কারনে আমার দিয়া আজকে আমার কাছে নেয় আমি একা হয়ে গেছি।
সুহানিঃ আমি কি করেছি,আর কিসব বলছেন আপনি। দিয়ার কোনো ক্ষতি করা তো দূরের কথা সেটা কখনো ভাবতেও পারিনা আমি।আর কেনই বা আমি দিয়াকে মা’র’বো।
নোহানঃ এই কারনটাই খুঁজে বেরাচ্ছি।আর যেদিন পেয়ে যাবো। সেদিনই তোমার শে’ষ দিন হবে।।
নোহান ঘর থেকে চলে যায়। সুহানি কান্নায় ভেংগে পড়লো। এখন ওর কাছে সবটা পরিস্কার। নোহান ভাবছে দিয়ার মৃ’ত্যু’র পেছনে ওর হাত আছে। সেই জন্য ওর জীবনটা শেষ করবে বলে ওকে তিলে তিলে শেষ করবে বলে বিয়ে করে এনেছে। কিন্তু নোহানকে বোঝাবে কি করে দিয়ার কোনো ক্ষতিই কোনো দিন ওহ তাই নি। আর সেখানে ওর প্রান নেবে কিভাবে। যে করেই হোক সবকিছু নোহানের সামনে প্রকাশ করতে হবে। এই মিথ্যা বেড়াজাল থেকে বের হতেই হবে ওকে।
নোহান সুহানির কাছ থেকে চলে গিয়ে বাগানে চলে যায়, অশ্রুসিক্ত নয়নে সামনের দিকে তাকিয়ে আগের কথা ভাবতে থাকে…
সেদিন ছিলো শুক্রবার। দিয়া কোনো একটা কারনে ফার্মহাউজে গিয়েছিলো কারনটা এখনো পর্যন্ত নোহান জানে না জানলে হয়তো দিয়া আজকে ওর সাথে থাকতো। নোহান বিজনেস মিটিং এ ব্যস্ত ছিলো দিয়ার নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে।ফোনটা রিসিভ করে দিয়ার গলার আওয়াজ শুনে ওর আত্মা কেঁপে উঠলো।
নোহানঃ দিয়া তুমি ঠিক আছে তো।
দিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললঃ নোহান আমার হাতে বেশি সময় নেয় তুমি আমার কথাটা শোনো।
নোহানঃ কি সব বলছো তুমি,তুমি কোথায়।
দিয়াঃ আমি ফার্ম হাউসে।
নোহানঃ আমি এক্ষুনি আসছি।
নোহান তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে ফার্ম হাউসে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে দিয়াকে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো। দিয়া র”ক্তা”ত্ব হয়ে মেঝেতে কাতরাচ্ছে। পেটের একপাশে ছুড়ির চিহ্ন।
নোহান চিৎকার করে উঠলোঃ দিয়া।
দৌড়ে গিয়ে দিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।
নোহানঃ কি হয়েছে তোমার বলো আমাকে।
দিয়াঃ আমাদের আর একসাথে থাকা হলো না। আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না।আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি নোহান।
নোহানঃ এসব কিভাবে হলো বলো আমাকে। কে করেছে এসব।
দিয়া আটকে আটকে বললোঃ সুহা
নোহান অবাক হয়ে বললোঃ সুহা,এসব করেছে।
দিয়া আরো কিছু বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি তার আগেই ওর প্রানপাখিটা উড়ে যায়। নোহান কান্নায় ভেংগে পড়লো। দিয়ার হাতটাকে নিজের হাতের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললোঃ তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমার মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি ওর কাছ থেকে তিলে তিলে শোধ করবো।
হ্যা নোহান দিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে আর সুহানিকেও জ্বালাচ্ছে এই এই ম’র’ণ খেলার পরিনতি কেই জানে না।
পরেরদিন অফিসে….
সুহানি আজকে অফিসে এসেছে। নোহান ওহ এসেছে কিন্তু কাল সকালের ঘটনার পর দুজন দুজনের সাথে কথা বলেনি।
সুহানি হাতে ফাইল দেখতে দেখতে হাটচ্ছিলো। হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগে আর হাতের ফাইলটা পড়ে যায়।নোহান নিজের কেবিন থেকে বের হতেই এই ঘটনা দেখতে পেলো।সুহানির সাথে ধাক্কা লাগা মানুষটার দিকে তাকিয়ে সুহানিকে একটা ধমক দিয়ে বললোঃ সরি আঙ্কেল। এই দেখে চলতে পারো না। সরি বলো্ ওনাকে।
স্যারঃ নোহান সুহানিকে কিছু বলো না। আমারই দোষ।
নোহানঃ আঙ্কেল ভেতরে আসুন।
নোহান ওনাকে নিয়ে চলে গেলো কেবিনে। উনি সুহানিদের কলেজের প্রফেসর।
নোহানঃ আঙ্কেল আমাকে বলতে পারতেন আমি চলে যেতাম।
স্যারঃ তুমি ব্যস্ত মানুষ তাই আমিই আসলাম আর আসলাম বলে একটা মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেলো।
নোহান ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কে?
স্যারঃ সুহানি।
নোহান অনেকটা অবাক হয়ে বললোঃ আপনি চেনেন ওকে।
স্যারঃ হুম।আর আমাদের কলেজে কে না চেনে ওকে। কলেজের সবথেকে বেশি নম্বরপ্রাপ্ত এখনো পর্যন্ত কেউ ওর বেশি নম্বর পাইনি।
নোহান চমকে উঠলো। কৌতুহল বশত হয়ে বললোঃ এত ভালো স্টুডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও সেদিন অনুষ্ঠানে সিলেক্ট হলো না কেন?
স্যারঃ জানি না তবে আমার একটা সন্দেহ হয়
নোহানঃ কী?
স্যারঃ সুহানি ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের প্রোজেক্ট টা খারাপ করেছিলো। আর অদ্ভুত হলো সুহানির প্রোজেক্ট এর প্ল্যানের সাথে দিয়ার প্রোজেক্ট এর খুব মিল ছিল।
নোহানঃ আপনি কি মনে করেন।
স্যারঃ আমার যতটা মনে হয় আর আমি যতটা সুহানি কে চিনি তাতে আমার মনে হয় দিয়ার প্রেজেন্ট করা প্রোজেক্ট টা সুহানির তৈরি।
নোহান অবাক হয়ে বললোঃ এটা কি বলছেন আপনি, ওটা যদি সত্যি সুহানির প্রোজেক্ট হয় তাহলে দিয়ার কাছে আসলো কিভাবে।
স্যার আলতো হেসে বললোঃ সুহানির প্রান ছিল দিয়া। দিয়ার জন্য ওহ সবকিছু করতে পারতো, দুজন দুজনের বন্ধু নয় বোন ছিলো। দিয়ার একটা চাকরির দরকার ছিলো তাই হয়তো সুহানি এটা করেছে।
নোহানের মাথা ঘুরছে। ওনার কথা গুলো শুনে নোহানের মনে প্রশ্ন জাগছে সত্যি কি দিয়াকে সুহানিই মে”রে ছিল না অন্য কেউ। আর যদি সুহানিই এই কাজটা করে থাকে তার পেছনে কারনটা কি?
এরই মাঝে পিওন এসে,২কাপ চা দিয়ে গেলো। নোহান স্যারকে চা খেতে বললেন। যদিও নোহান একটু অবাক হয়েছে,কারন ওহ কিছুই আনতে বলেনি তার উপর চা এনেছে।
স্যার একটা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে,এক চুমুক দিয়ে বললোঃ নোহান একটু সুহানিকে ডেকে দিতে বলো না।
নোহান তাই করলো। সুহানিকে দেখেই স্যার বললেনঃ কেমন আছিস মা।
সুহানিঃ হ্যা আঙ্কেল ভালোই আছি আপনি?
স্যারঃ আর আমি ভালো থাকবো কিভাবে আমার মা টা আমার একবারও খোঁজ নেয়নি।
সুহানিঃ কে বললো খোঁজ নেয়নি আমি ঠিকই খোঁজ নিই।
স্যারঃ তা আমি খুব ভালো করেই জানি।তোর বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু তোকে পাইনি। তোর বাবাকেও জিজ্ঞেস করলাম ওহ কিছুই বললো না। আমি ভাবতে পারিনি নোহানের অফিসে তোকে পেয়ে যাবো।তা কবে থেকে জয়েন করলি এখানে।
সুহানিঃ কিছুদিন আগেই।আগে আপনি বলুন আন্টি কেমন আছে,আর রাহাত এর খবর কি?
স্যারঃ তোর আন্টি তো ভালোই আছে। আর রাহাত কিছুদিন পরে দেশে আসবে।
সুহানিঃ ওহ,অনেকদিন পর আসবে তো
স্যারঃ হুম,এবার হলে ওর বিয়েটা দিয়েই দেবো।
সুহানিঃ এটা তো খুব ভালো কথা। রাহাত জানে এই কথাটা।
স্যারঃ হুম জানে। আর ওর পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়েটা হবে।
সুহানিঃ কে সে?
স্যারঃ ওটা সারপ্রাইজ থাকুক।
সুহানি হেসে দিলো। স্যারের শেষ কথাটা নোহানের ঠিক ভালো লাগলো না।উনি আরো কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেলেন।
নোহানঃ আঙ্কেলের সাথে এতটা পরিচিতি কিভাবে?
সুহানি হেসে বললোঃ আমি দিয়া আর রাহাত খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। কিন্তু রাহাত পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে যায় অনেকদিন আগে।
নোহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো সুহানির দিকে।
#চলবে…