#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১১,১২
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(১১)
সুহানি নোহানের বাড়িতে ফিরে যায়। নোহা একটু অবাক হয়,সে ভেবেছিলো সুহানি ফিরবে না কিন্তু সুহানি ফিরেছে কিন্তু কেন? নোহান সুহানিকে ফিরতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো, ওহ খুব ভালো করেই জানতো সুহানি ফিরবে। সবকিছু জানার জন্য সুহানি ঠিক ফিরবে। নোহানও চাই সুহানি সবটা খুঁজে বের করুক। দিয়ার আসল খু”নী কে সবার সামনে নিয়ে আসুক।
সুহানি এমনি এমনি ফিরে আসে নি।কিছু সন্দেহ কিছু তথ্য সুহানি কে আসতে বাধ্য করেছে এখানে।সুহানির মনে থাকা সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে। সবকিছুর গভীরে ওকে যে যেতেই হবে।
সুহানি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ দিয়া তোকে আমি কথা দিচ্ছি তোর খু’নীকে আমি নিজের হাতে শাস্তি দেবো।প্রমিস।
সুহানি নিজের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অফিসে কোনো তথ্যই পেলো না।নোহানের রুমে ঢুকে এদিক ওদিক দেখছিলো কিন্তু তেমন কিছুই পেলো না। সুহানি ঘর থেকে বের হয়ে যাবে এমন সময় একটা জিনিসে চোখ আটকে গেলো, কৌতুহল বশত সেটাকে তুলে নিয়ে দেখলো। কিছু একটার বিল, কিন্তু কিসের?
সুহানি বিলটাকে না ফেলে দিয়ে নিজের সাথে নিয়ে গেলো। সন্দেহ, কৌতুহল সবকিছুই ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না। কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছে না।এমনকি নোহান কেও না।
সুহানি বিলটাকে নিয়ে ভালো করে দেখেতে লাগলো কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।অনেক দোটানার মধ্যে গিয়ে বিলটাকে রেখে দিলো। সবকিছুই ধোঁয়াশা।
পরেরদিন,অফিসে..
সুহানি নিজের ডেস্কে মন খারাপ করে বসে আছে তখন শাওন এসে বললোঃ কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
সুহানিঃ কিছু না।
শাওনঃ আরে বলো না,যদি কিছু হেল্প করতে পারি।
সুহানি শাওনের দিকে একপলক তাকিয়ে,কিছু একটা ভেবে বললোঃ একমিনিট।
তারপরে নিজের ব্যাগ থেকে বিলটা বের করে বললোঃএটা কিসের বিল বলতে পারবে?
শাওন সুহানির হাত থেকে বিলটা নিয়ে ভালো করে দেখে বললোঃ এটা তুমি কোথায় পেলে।
সুহানিঃ বলবো পরে আগে বলো।
শাওনঃ আমি সিওর না আমি সত্যিটা যাচাই করে বলবো।
সুহানিঃ আচ্ছা।
শাওন চলে গেলো।সুহানির সন্দেহটা অনেক বেড়ে গেলো।
রাত্রিবেলা…
শাওনঃ হ্যালো সুহানি।
সুহানিঃ বলো।
শাওনঃ তুমি যেই বিলটা দিয়েছিলে সেটা তুমি কোথায় পেলে।
সুহানিঃ কেন কি হয়েছে বলো।
শাওনঃ বিল গুলো কোনো বেআইনি কাজের বিল।
সুহানি চমকে উঠলো। নোহানের ঘর থেকে বেআইনি বিলটা কি করে এলো।তারমানে কি নোহান কোনো বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত। সুহানি কে সবকিছু জানতেই হবে।
২দিন পর..
সুহানি নোহানের বিরুদ্ধে সমস্ত কিছু খোঁজ খবর নিয়েছে। সবকিছু জানতে পেরে স্তব্দ হয়ে গেছে। নোহান বাড়ি ফিরতেই সুহানি ওর সামনছ দাঁড়িয়ে বললোঃ আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে?
নোহানঃ কি বলো।
সুহানিঃ আমার সন্দেহ হচ্ছে একটা বিষয়ে।
নোহানঃ কি
সুহানিঃ আমার মনে হচ্ছে আপনিই দিয়াকে খু’ন করেছেন।
নোহান রক্ত চক্ষু করে সুহানির দিকে তাকালো।
নোহানঃ পাগল হয়ে গেছো নাকি?
সুহানিঃ না আমি পাগল হয়নি আমি একদম ঠিক আছি, আপনি আপনার বেআইনি কাজ ঢাকার জন্য দিয়াকে মে”রে ফেলেছেন।
নোহানঃ বেআইনি কাজ মানে?
সুহানিঃ আমার সামনে বেশি নাটক করবেন না। আমি আপনার আসল চেহারা জানতে পেরে গেছি,আপনিই সবকিছু করেছেন, আপনিই দিয়ার খু’নী।
নোহান সুহানির কোনো কথায় বুঝে উঠতে পারছে না।
নোহানঃ কি বলছো এসব।
সুহানিঃ সবকিছুর প্রমান এখানেই আছে। ভালো করে দেখে নিয়েন। আমার ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে আপনি আমার স্বামী।
নোহান ফাইলটা নিয়ে দেখতে লাগলো। ফাইলটা তে যত সব বে’আ’ই’নি কাজের প্রমান আছে। নোহান কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তার কোম্পানির পেছনে এরকম কিছু কাজ চলছে সেটা কখনোই ভাবতে পারেনি।
পরেরদিন…
সুহানি বাড়ি থেকে চলে গেছে নোহানকে অ’প’রা’ধী করে দিয়ে। বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলে ঘরের দরজা দিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়লো।
ভাগ্য কোথায় কাকে নিয়ে আসে সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারে না। সুহানির ভাগ্যটা এতটা খারাপ সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনি। ভাগ্য কোন খেলায় মেতে উঠেছে কেউ জানে না।
২দিন পর..
আজকে সুহানি অফিসে এসেছে।
সুহানিঃ আসবো।
নোহান সুহানিকে দেখে অবাক হলো। সুহানি আজকে অফিসে আসবে সেটা বুঝে উঠতে পারিনি।
নোহানঃ হ্যা আসো।
সুহানিঃ আমি আর এই অফিসে কাজ করবো না।এই তার দরখাস্ত।
নোহানঃ এটা কিন্তু এগ্রিমেন্ট পেপারে লেখা ছিলো না।
সুহানিঃ আমাকে জোড় করে আর কিছু করাতে যাবেন না। তার ফলটা কিন্তু ভালো হবে না তাহলে।
নোহান সুহানির দিকে তাকালো। সুহানির চোখে মুখে রাগ দেখতে পাচ্ছে। নোহান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সুহানির করা অভিযোগ গুলো কে মিথ্যা বলে প্রমান করতে কিন্তু কিভাবে করবে?নোহানের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সুহানি নয় অন্য কেউ এসবের পেছনে আছে।
নোহানঃ সুহানি আমার কথাটা একবার শোনো।
সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আমি কিভাবে আপনার কথা শুনবো আপনি একবারও শুনেছিলেন আমার কথা। বিনা দোষে আমাকে শাস্তি দেবার জন্য বিয়ে নামক একটি পবিত্র সম্পর্কের সাথে আমাকে জড়ালেন। আর আপনার বিরুদ্ধে সমস্ত কিছুর প্রমান আছে আমার কাছে তাই আমি আপনার কথা শুনবো না।
নোহান নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো। সত্যি দিয়ার মুখের কথা শুনে সুহানিকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি। সকল সত্যতা যাচাই না করে প্রতিশোধের নেশায় অনেক বড়ো একটা ভুল করে ফেলেছে।
সুহানি অফিস থেকে বেড়িয়ে কাউকে একজনকে দেখে চমকে উঠলো। মানুষটার পেছন দিতে থাকলো। হঠাৎ সামনে একটা গাড়ি চলে আসে, সুহানি রাস্তায় পড়ে যায়। হাতে একটু ব্যথা পাই।
গাড়ি থেকে নেমে আসলো একজন সুদর্শন পুরুষ।
ছেলেটাঃ সরি মিস।
কোনো পুরুষের কন্ঠ শুনে সুহানি মাথা তুলে তাকিয়ে চমকে উঠলো। উল্টো দিকের মানুষটাও চমকে উঠলো।
দুজনে একসাথে বলে উঠলঃ তুমি।
সুহানিঃ ধাক্কাটা আমাকেই দিতে মন চাইলো তোমার।
রাহাত আলতো করে হেসে বললোঃ কি করবো বলো বুঝতে পারিনি।আর বুঝতে পারলে তোমাকে কখনোই ধাক্কা দিতাম না।
সুহানিঃ হুম বলো খবর কি।
রাহাতঃ আমার তো খুবই ভালো। তোমার
সুহানি মেকি হাসি দিয়ে বললঃ আমার ওহ ভালোই।
রাহাতঃ তো ম্যাডাম মুখটা এমন লাগছে কেন?
সুহানিঃ কিছু কিছু সময় সবকিছু কারন বলা ঠিক না।
রাহাতঃ আচ্ছা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলবো নাকি চলো না কোথাও গিয়ে বসি।
সুহানিঃ এখন না।
রাহাতঃ প্লিজ।
সুহানিঃ ওকে।
রাহাত আর সুহানি কফিশপে গিয়ে বসলো।দুজনে দুজনের সাথে কথা বলছে ।
সুহানিঃ আঙ্কেল বললেন বিয়ে করবে। তার মেয়ে কে?
রাহাতঃ এখনি জানতে হবে। কয়েকদিন অপেক্ষা করো। একটা পার্টিতে তাকে প্রোপস করবো।
সুহানিঃ প্ল্যান টা তো ভালোই মনে হয় সে রাজি হয়ে যাবে।
রাহাতঃ সত্যি
সুহানিঃ হ্যা তুমি কোন দিক থেকে কম আছো।সব মেয়েই চাইবে তোমার মতো স্বামী পেতে।
রাহাতঃ তোমার কথায় ভরসা পাচ্ছি।
সুহানিঃ হুম।
কয়েকদিন পর…
নোহান আর সুহানির যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। নোহান নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে। তবে কিছুই আর করার নেয় সুহানি ওকে ভুল বুঝে চলে গেছে।
আজকে রাহাতের জন্মদিনের পার্টি আছে।সুহানিকে যাবার জন্য বার বার রিকুয়েস্ট করেছে। সুহানি ও এসেছে।
সুহানিঃ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ রাহাত।
রাহাতঃ থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
সুহানিঃ ওয়েলকাম।
রাহাতঃ থ্যাঙ্ক গড তুমি এসেছো।
সুহানিঃ কেন আমি কি স্পেশাল কেউ নাকি।
রাহাতঃ হয়তো।
সুহানিঃ মানে?
রাহাত একটা মুচকি হাসলো। সুহানি কিছুই বুঝতে পারলো না রাহাতের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
রাহাত ওদিকে চলে গেলো।সুহানি সবার সাথে কথা বলতে লাগলো। সবটাই দূর থেকে লক্ষ্য করছে নোহান। রাহাত আর সুহানি কে একসাথে দেখে বুকের ভেতরে জ্বালা পুড়া করছে। সুহানির জন্য মনের ভিতরে একটা দূর্বলতা তৈরি হয়ে গেছে।
হুট করেই রাহাত একটা এমন কাজ করলো তাতে সুহানি চমকে উঠলো।
#চলবে…
#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(১২)
রাহাতের এমন কাজে সুহানি আর নোহান দুজনেই চমকে উঠলো।
রাহাত নিজের হাতে একটা গোলাপ নিয়ে সুহানির দিকে তাক করে বললোঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই উইল ম্যারি ইউ।
সুহানির কানে নোহানের বলা ওই একই কথাটা বাজতে লাগলো। নোহান ওহ সুহানিকে ঠিক একই কথা বলেছিলো।সুহানির চোখটা অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। নোহান গম্ভীর মূখটা সুহানির চোখে পড়লো। ওদিকে সকলেই সুহানিকে বলছে উত্তর দেবার জন্য। নোহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুহানির দিকে খুব করে চাইছে সুহানি রাহাতকে না বলে দিক। সুহানি চোখের পানিটা চোখেই আটকে দিয়ে নোহানের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রাহাতের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে নিলো। সকলেই আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো। সবাই খুব খুশি কিন্তু দূটো মানুষ বাদে নোহান আর একজন সুহানি। কোনো এক কারনে খুশি হতে পারছে না। হয়তো নোহানের বৈধ স্ত্রী বলে। কিন্তু আদোও কি এই সম্পর্কের কোনো ভিত্তি আছে।
সবাই সবার মতো করে আনন্দ করতে লাগলো। সুহানি এক সাইটে দাঁড়িয়ে আছে হুট করে কেউ একজন ওকে টেনে সাইটে নিয়ে আসলো। সুহানি সামনে তাকিয়ে দেখলো নোহান।
সুহানিঃ কি হলো আমাকে আনলেন কেন?
নোহানঃ কি শুরু করেছো তুমি এসব কি?
সুহানিঃ আমি এতদিনে ঠিক কাজ করেছি। আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই।কিছুদিন পরে ডির্ভোস চাই আমার।
নোহান সুহানিকে আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরে বললঃ এত সহজে আমার থেকে মুক্তি তুমি পাবে না মিসেস সুহানি শিকদার।
সুহানিঃ আমি মিসেস শিকদার নয় আমি সুহানি হাসান বুঝেছেন।
নোহান বাঁকা হেসে বললঃ তুমি মানো আর না মানো সত্যি তো এটাই। আর এটা গোটা দুনিয়া জানবে তুমি নোহান শিকদারের স্ত্রী।
সুহানিঃ কোনোদিন না আমি কখনোই আপনাকে স্বামী হিসাবে মানবো না।
নোহানঃ আমার কথা না শুনলে অপমানিত হবার জন্য তেরি হও।
সুহানিঃ কি করবেন আপনি?
নোহানঃ আমি তোমার কিছুই করবো না।ভাবো একবার যদি সকলে জানে আমাদের বিয়ের হবার পরেও তুমি রাহাতকে বিয়ে করছো তাহলে একবার ভাবো এই সমাজ তোমার পরিবারকে কি ছেড়ে কথা বলবে।
সুহানির দূর্বলতা ওর পরিবার। আর নোহান সবসময় ওই জিনিসেই আঘাত করে।
সুহানিঃ আমাকে এই সবকিছু থেকে মুক্তি দিন না দয়া করে।
নোহান সুহানির কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললোঃ আমার থেকে তুমি মুক্তি পাবে না মিসেস শিকদার,,তুমি আমার ছিলে আর থাকবে।আমাদের বন্ধনটা উপর ওয়ালার দ্বারা সৃষ্টি। মৃ”ত্যু ব্যতীত তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে কেউ পারবে না।
নোহান চলে গেলো কথাটা বলে,সুহানি থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত সেটা বুঝে উঠতে পারলো না।
পরেরদিন সকালে…
সুহানি ওর বাবার সাথে বসার ঘরে বসে আছে। কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেয়ে সুহানির মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
মাঃ আসলে নোহান বাবা তুমি
সুহানি নোহানের নাম শুনে চমকে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো সত্যি সত্যি নোহান এসেছে।
নোহানঃ আন্টি আমি কি ভেতরে আসতে পারি
মাঃ হ্যা বাবা এসো।
নোহান ভেতরে এসে বসল। সুহানির বাবা নোহান এর দিকে তাকিয়ে আছে।
নোহানঃ আঙ্কেল আমি আপনার মেয়েকে নিয়ে যেতে চাই।
সুহানি চমকে উঠলো নোহানের কথায়। নোহান বাড়ি তে এসে ওকে এভাবে নিয়ে যেতে চাইবে এটা ওর ধারনার বাইরে ছিলো।
বাবাঃ আমি কেন তোমার সাথে আমার মেয়েকে ছাড়বো?
নোহানঃ আঙ্কেল সুহানি আমার বিবাহিত স্ত্রী। আমি চাইলেই ওকে নিয়ে যেতে পারি তাই না।
বাবাঃ কিন্তু তুমি ওর মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করছো।
নোহানঃ সমস্তটাই পরিস্থিতির শিকার। আমি চাইলেও এটা বদলাতে পারবো না সুহানি আমার স্ত্রী।
বাবাঃ ভালোবাসো আমার মেয়েকে?
নোহান সুহানির দিকে তাকালো। সুহানি এতক্ষন মাথা নীচু করে ছিলো কিন্তু বাবার করা এমন প্রশ্ন শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল।
বাবাঃ কি হলো উত্তর দাও।
নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ ভালোবাসি না।
সুহানি নোহানের দিকে তাকালো। নোহান সুহানির চোখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কিন্তু আমার রঙহীন জীবনটাকে রঙিন করার জন্য সুহানিকে আমার লাগবে। আমার বেঁচে থাকার জন্য সুহানিকে আমার লাগবে।
সুহানির বাবা নোহান এর দিকে তাকিয়ে আছে। নোহান ওনার দিকে তাকিয়ে বললোঃ আঙ্কেল আমার হাতে কি নিজের মেয়েকে তুলে দেবেন।
সুহানির বাবা নোহান আর সুহানির দিকে একপলক তাকালো। তারপরে কিছু একটা চিন্তা করে বললেনঃ আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেবো না।
সুহানি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নোহান হতাশ চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সুহানির বাবা নোহানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমি আমার মেয়েকে আমার জামাই এর হাতে তুলে দেবো।
সুহানির চোখ কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসার উপক্রম। নোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
বাবাঃ কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
নোহানঃ কি শর্ত।
বাবাঃ দ্যাখো নোহান আমরাও এই সমাজে বাস করি। আমাদেরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাই আমি চাইনা আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে কেউ কোনো কথা বলুক। আমি চাই তোমাদের বিয়ে দিয়ে সুহাকে তোমার হাতে তুলে দিতে।
নোহানঃ কিন্তু আঙ্কেল আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।
বাবাঃ সেটা তো আমরা জানি অন্য কেউ তো জানে না।
নোহান আর কিছু বললো না। সুহানি কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
বাবাঃ কি রাজি তো।
নোহানঃ ওকে।
বাবাঃ তাহলে আমি বিয়ের দিন ঠিক করে তোমাকে জানাচ্ছি।
নোহানঃ ঠিকাছে। কিন্তু আঙ্কেল আমি সুহানিকে নিয়ে যেতে চাই।
বাবাঃ কিন্তু
নোহানঃ প্লিজ আঙ্কেল।
বাবাঃ ওকে।
সুহানি ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ওর বাবা রাজি হয়ে যাবে সেটা বুঝতে পারেনি।
সুহানি নিজের ঘরে বসে আছে। রাস্তায় নোহানের সাথে একটাও কথা বলেনি। চুপচাপ ছিলো। বাড়িতে এসেও কিছু বলেনি একদম চুপচাপ ছিলো।
নোহান হাতে খাবার নিয়ে বললোঃ সুহানি এটা খেয়ে নাও।
সুহানিঃ আমি খাবো না।
নোহানঃ আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি। আমি খেতে বলেছি।
সুহানি কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকলো। নোহান ওর পাশে বসে খাবারটা নিজের হাতে নিয়ে সুহানির মুখের সামনে ধরলো। সুহানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নোহানের দিকে।
নোহান বাঁকা হেসে বললঃ এভাবে তাকিয়ে না থেকে কি বলবে বলো। আমি জানি আমি দেখতে ভালো।
সুহানি যেই না কিছু বলবে বলে মুখটা খুললো তখনি নোহান ওর মুখে ঢুকিয়ে দিলো খাবার টা।সুহানি নোহানের কাজে হতভম্ব হয়ে গেলো।
২ দিন পর…
নোহান সুহানির খেয়াল রেখেছে। আগের মতো ব্যবহার আর করে না। এখন সবসময় আগলে রাখে। সুহানি নোহানের এরকম পরিবর্তন এ অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে। নোহান আর সুহানির বিয়ে ঠিক করা হয়েছে সামনের সপ্তাহে শুক্রবার।
নোহান আর সুহানির বাবা ফুল দমে ডেকোরেশন করছে।
সুহানির বাবা রাহাতের বাড়িতে আসতেই রাহাতের বাবা অবাক হয়ে বললোঃ আরে আপনি । আমি তো ভাবছিলাম আপনার কাছেই যাবো।যাক ভালোই হয়েছে এসেছেন।
সুহানির বাবাঃ কি করবো বলুন আরো আগেই আসতাম কিন্তু একা মানুষ তো কত দিক সামলাবো বলুন।
রাহাতের বাবাঃ সেটাই তো। আপনার সাথে একটা কথা ছিলো। আপনি কি সুহানির বিয়ের কথা নিয়ে কিছু ভাবছেন।
সুহানির বাবাঃ সেই জন্যই এখানে আসা।
রাহাতের বাবা একটু খুশি হলেন।
সুহানির বাবাঃ এই নিন কার্ড।
রাহাতের বাবা একটু অবাক হয়ে বললোঃ কিসের কার্ড।
সুহানির বাবাঃ সুহানি আর নোহানের বিয়ের কার্ড।
রাহাতের বাবা চমকে উঠে বললঃ কি বলছেন আপনি এসব কবে হলো।
সুহানির বাবাঃ কিছু দিন আগেই নোহান ভালো ছেলে তাই আর না করিনি। আসবেন কিন্তু আজ আসি।
সুহানির বাবা চলে গেলেন। রাহাতের বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন।কিভাবে এই কথাটা তার ছেলেকে জানাবে। কিন্তু তার আগে সুহানির সাথে কথা বলতে হবে। কেন করলো ওহ এটা।
#চলবে…