রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১৩,১৪

0
874

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১৩,১৪
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(১৩)

সারা বাড়ি জ্বলজ্বল করছে রঙিন হয়ে আছে। কিন্তু সুহানির মনে কোনো আলো নেই রঙ নেই। রঙহীন একটা মানবে পরিনত হয়েছে ও।

সুহানির আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললোঃ দিয়া কেন তুই চলে গেলি। তুই থাকলে কখনোই আমাকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। তোমার স্বামীতে আমাকে ভাগ বসাতে হতো না।

সুহানি পেছন থেকে একটা কন্ঠস্বর শুনে পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠে কাঁপা কাঁপা গলায় বললঃ দিয়া।

দিয়াঃ হ্যা আমি। তুই বলেছিলিস না আমার মৃ”ত্যু”র প্র”তি”শো”ধ নিবি। আমার খু”নী”কে নিজের হাতে শা”স্তি দিবি কোথায় গেলো তোর প্রতিজ্ঞা বল।

সুহানিঃ আমি সব কথা রাখবো আমাকে একটু সময় দে।

দিয়াঃ সুহা ওহ তোকেও ছাড়বে না তোকেও ছাড়বে না ছাড়বে না।

দিয়া আসতে আসতে মিলিয়ে গেলো অন্ধকারে। সুহানি চিৎকার করে বললোঃ দিয়া কোথায় গেলি তুই। দিয়া।

তারপরে আর কিছুই মনে নেয় ওর। যখন চোখ খুললো তখন দেখলো কেউ একজন মাথার কাছে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো নোহান বসে আছে। সুহানি উঠে বসে নোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।নোহান আচমকা একরকম আক্রমনে প্রস্তুত ছিলো না। সুহানিকে কিছুই না বলে চুপ করে সুহানির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সুহানি আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে আসে,তারপরে নিজের উপস্থিতি টের পেয়ে সরে আসে নোহানের বুক থেকে।

নোহান সুহানিকে স্বাভাবিক হতে দেখে জিজ্ঞেস করলোঃ কি হয়েছিলো তুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে কিভাবে?

সুহানি নোহানকে বলতে গিয়েও আটকে গেলো।‌ নিজেকে স্বাভাবিক করে বললোঃ এমনি শরীরটা খারাপ লাগছিলো তাই।

নোহানঃ ও তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি।

নোহান চলে যায়। সুহানি দিয়ার বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। সুহানির ভাবনার মাঝেই হয়তো দিয়া এসেছিলো কিন্তু দিয়ার কথাগুলো ফেলে দেবার মতো নয়। কিন্তু কে আছে এই সবকিছুর পেছনে।

সুহানির ভাবনার মাঝেই একটা কল আসে। সুহানি ফোনটা রিসিভ করে দেখলো কলটা করেছেন রাহাতের বাবা।

সুহানিঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।

আঙ্কেলঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তোমার সাথে কথা আছে।

সুহানিঃ আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি আমাকে কেন কল করেছেন।‌

আঙ্কেলঃ এরকম করার মানেটা কি?

সুহানিঃ আঙ্কেল বাপি চাই আমি নোহানকে বিয়ে করি। আর তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেবার জন্য আমাকে এটা করতেই হবে।

আঙ্কেলঃ তাই বলে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে

সুহানিঃ আঙ্কেল জীবনে অনেককিছুই হয় যেইগুলোর উপরে আমাদের কোনো হাত থাকে না। ভাগ্য আর কঠিন বাস্তবতার কাছে বারবার হেরে যায় আমাদের ইচ্ছাগুলো।

আঙ্কেলঃ তবুও একবার বলবো ভেবে দ্যাখো।

সুহানিঃ ভাবার কিছু নেয়। নোহান আর আমার বিয়েটা হবে।

আঙ্কেল হতাশ হয়ে বললেনঃ ওকে তোমাদের নতুন জীবনের শুভেচ্ছা রইলো।

ফোনটা কেটে দিয়ে সুহানি বিরবির করে বললোঃ‌ নতুন জীবন না ন’র’কী’য় জীবন।

আসতে আসতে দিন এগিয়ে আসলো। সুহানি নিজের বাড়ি ফিরে এসেছে। নোহান নিজে দিয়ে গেছে সুহানিকে।

সুহানির বাবাঃ মা মন খারাপ করিস না। যেটা হয় ভালোর জন্যই হয়।

সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আমার ভাগ্যে আর ভালো কিছু নেয় বাপি। আমার জীবনটা রঙহীন হয়ে গেছে আর এই রঙহীন জীবনটা কখনোই রঙিন হবে না।

বাবাঃ সবটাই বিধাতার লিখন। মেনে নে আর কি করবি।

বাবা চলে গেলেন। সুহানি ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

সুহানিঃ মা এরকম কেন হলো আমার সাথে কি দোষ আমার।

মাঃ সবার তো দোষ থাকে না। বিনাদোষে ও যে শাস্তি পেতে হয়।

সুহানি মায়ের বুকেই থাকলো আর উঠলো না।

সময় চলে যায়। বিয়ের আর কয়েক ঘন্টা বাকি আছে। সুহানিকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কিন্তু সুহানির মনে কোনো আনন্দ নেয়,ফূর্তি নেয়। নোহান কিছুটা হলেও সম্পর্ক টাকে মেনে নিয়েছে। তাই ওহ আগের তুলনায় একটু স্বাভাবিক আছে।

নোহান আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ দিয়া আমি তোমার বান্ধবীকেই বিয়ে করছি অন্যায় করলে আমাকে মাফ করে দিও। সুহানি আমার প্রয়োজনে পরিনত হয়েছে আমার বেঁচে থাকার জন্য সুহানিকে লাগবে আমার।

কয়েকঘন্টা পরে…

নোহান বিয়ে করতে চলে এসেছে। সুহানিকে নিয়ে আসার জন্য ঘরে আসলো কয়েকটা মেয়ে। কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ। ধাক্কা ধাক্কি করার পরেও সুহানি দরজা খুললো না। সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়লো।‌মেয়েগুলো সুহানির বাবা মাকে ডেকে নিয়ে আসলো। খবরটা নোহানের কানে পৌঁছাতেই নোহান তাড়াতাড়ি দরজাটা ভেঙ্গে অনেক কষ্টে ভেতরে গিয়ে যা দেখলো তাতে সবাই চমকে উঠলো।

নোহান চিৎকার করে উঠলোঃ সুহানি…

সুহানি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। নোহান তাড়াতাড়ি করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ডাক্তারকে ফোন করা হলো। তিনি এসে জানালেন, সুহানি কোনো বিষয়ে উত্তেজিত হবার ফলে এরকম হয়েছে।

নোহান চিন্তায় পড়ে গেলো। সুহানি কি বিষয় নিয়ে এতটা উত্তেজিত এই বিষয়টা আগেই একবার হয়েছে। সুহানি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।

কিছুক্ষন পর,,সুহানির জ্ঞান ফিরে আসলো। সবাই জানতে চাইছে কি হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুর উত্তর না দিয়ে বললোঃ বিয়ের সময় চলে যাচ্ছে।

সুহানির কথায় সবাই বিয়ের জোগাড় করতে থাকে।

কাজিঃ মা তুমি কি রাজি,রাজি থাকলে কবুল বলো।

সুহানিঃ কবুল, কবুল,কবুল

একফোঁটা চোখের পানি ফেলে দিয়ে মনে মনে বললোঃ তোর কথা রাখতে আবারো নোহানের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসলাম। তোর কথা রাখতেই নোহানকে মেনে নেবো দিয়া। তুই এবার খুশি তো।

নোহান আর সুহানির বিয়ে হয়ে যায়। নোহান বিয়ে শেষে সুহানিকে নিয়ে ওর বাড়িতে যাবে। সুহানির মা,ভাই কাঁদছে। কিন্তু সুহানি অনুভুতি হীন হয়ে আছে। কোনো কান্না আসছৈ না।‌চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

সুহানির মা ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।বাবা এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললোঃ মা’রে ভালো থাকিস,,অনেক সুখী হ তুই।

সুহানি কিছুই বললো না। শুধু মাত্র চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।

নোহান আর সুহানি বাড়িতে উঠে বসলো,সুহানি জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাবছে,, কিছুক্ষন আগের কথা,

সুহানি নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। তখনি পেছন থেকে একটা কষ্ঠস্বর ভেসে আসলোঃ কি সুন্দর লাগছে তোকে সুহা।

সুহানি তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো,দিয়া দাঁড়িয়ে আছে।

সুহানিঃ দিয়া তুই এসেছিস,জানিস আমি তোর..

দিয়াঃ‌ চুপ,আমি সবটাই জানি।

সুহানিঃ তুই খুশি তো।

দিয়াঃ না এখনো খুশি হয়নি।

সুহানিঃ কেন?

দিয়াঃ আমার নোহানের জীবনটা গুছিয়ে দে না সুহা।নতুন করে ওকে নিয়ে বাঁচতে শুরু কর না সুহা।

সুহানিঃ কি বলছিস এসব তুই।

দিয়াঃ ঠিক বলছি ওকে আপন করে নে না।

সুহানি কিছু বলবে তার আগেই একটা ঝলকানি চোখে পড়লো।আর দিয়া কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।

সুহানিঃ‌দিয়া,দিয়া দিয়া কোথায় গেলি তুই।‌কেন আমাকে ছেড়ে গেলি।

সুহানি দিয়াকে অনেক খুঁজেও খুঁজে পেলো না।আর উত্তেজিত হবার জন্য অজ্ঞান হয়ে গেলো।

সুহানি বাস্তবে ফিরে আসলো গাড়ির হর্নের আওয়াজে।

নোহানঃ চলো।

সুহানিঃ হূম।

নোহান সুহানিকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখলো সবার মুখগুলো কিরকম যেন হয়ে আছে।

নোহানঃ‌ কি হয়েছে।‌আর দিদিয়া কোথায়?

মেডঃ ম্যাম তো ঘরেই।

নোহানঃ‌ডাকো।

মেডঃ স্যার ডেকেছিলাম, কিন্তু দরজা খোলেননি।

নোহানঃ‌কখন থেকে।

মেডঃ‌আপনার বাড়ি থেকে বের হবার পড়ে থেকে।

নোহান তাড়াতাড়ি দৌড়ে উপরে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।‌কিন্তু কেউ দরজা খুললো না। নোহান কোনো কিছু না ভেবেই দরজাটা ভেঙ্গে ঢুকে যা দেখলো তাতে …

#চলবে

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(১৪)

নোহান মেডের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে নোহা র ঘরে গিয়ে,দরজাটা ভেঙ্গে ঢুকে, চমকে উঠে চেঁচিয়ে উঠলোঃ দিদিয়া।

নোহা বিছানায় র’ক্তা’ক্ত হয়ে শুয়ে আছে। নোহান এত র’ক্ত দেখে শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক এমন ভাবেই দিয়াকে দেখেছিলো।

নোহান নোহাকে কোলে তুলে ডাকতে লাগলো। নোহা আর সাড়া দিলো না। নোহা’র নি’থ’র দেহ পড়ে আছে। নোহান চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ দিদিয়া কেন ছেড়ে গেলি তুই আমাকে, ছোটো বেলায় বাপি আর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো আর এখন তুই। আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো তোদের ছেড়ে। বল না তোর এই অবস্থা কে এরকম করলো।

নোহা কে পুলিশ পোস্টমর্টেম করার জন্য নিয়ে গেছে। নোহানের মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। একা চুপচাপ বসে আছে। সুহানিও কিছু না বলে চুপ করে বসে আছে।

নোহা র লা’শের পাশ থেকে একটা চিরকুট পাওয়া গেছে,তাতে লেখা ছিলো—

আমার মৃ’ত্যু’র জন্য কেউ দায়ী নয়। ভাই পারলে আমাকে মাফ করে দিস। আর আমার চোখ আর কিডনি গুলো যদি পারিস কোনো অসহায় মানুষকে দিয়ে দিস।

ইতি____
নোহা

পরেরদিন…

নোহার মৃ’ত দেহটাকে দাফন করা হয়েছে। নোহা ২টো চোখ আর ২ টো কিডনি দান করা হয়েছে ওর কথা মতোই। পুলিশ এটাকে সুইসাইড বলেই ধরে নিয়েছে। নোহান মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। নোহা র সু’ই’সাই’ড এর কারনটা এখনো রহস্যময়। সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে আছে কাছের মানুষকে হারানোর কতটা কষ্ট সেটা নোহানকে না দেখলে বোঝা যায় না। জীবন থেকে সবকিছুই আসতে আসতে হারিয়ে গেছে।

সময় কেটে যায়, কিন্তু আঘাত গুলো শুকায় না। নোহানের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। নোহান আর আগের মতো কোনো কিছুই ঠিক করে না। সারাদিন চুপচাপ বসে থাকে। কম কথা বলে।

রাহাত আজকে সুহানির বাড়িতে এসেছে। সুহানি একটু অবাক হয়েছে বটেই কিন্তু রাহাতকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে বললোঃ কেমন আছো।

রাহাতঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি।

সুহানিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

রাহাতঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে

সুহানিঃ কি?

রাহাতঃ আমাকে ঠকানোর কারনটা কি?

সুহানি মাথা নিচু করে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।

রাহাতঃ দ্যাখো সুহানি তুমি আমাকে নাই পছন্দ করবে তাহলে কেন আমার প্রোপজাল এক্সসেপ্ট করলে।

সুহানিঃ সরি,আমার সেদিন হ্যা বলা উচিত হয়নি। আমাদের হাতে সবসময় সবকিছু থাকে না। কিছু কিছু কাজ নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হয়। আর সবকিছুকে মেনে নিতেও হয়।

রাহাতঃ তুমি কি খুশি?

সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ খুশি না হয়ে যাবো কোথায়। তোমাকে একটা কথায় বলবো নতুন করে নতুন জীবন শুরু করো। জীবন কখনোই কারোর জন্য থেমে থাকে না।

রাহাত মনে মনে বললোঃ আমি তো তোমাকে নিয়ে জীবন সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আর সেটা হলো কোথায়।

রাহাত সুহানিকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। সুহানি নাজের চোখের পানি মুছে নিলো। নোহানকে নিয়ে নিজের জীবন সাজাতে চাইছে কিন্তু কিভাবে সাজাবে। যখনি মনে করৈ নতুন করে সবকিছু শুরু করবে তখনি পুরানো কথাগুলো মনে পড়ে যায়।

রাত্রিবেলা…

নোহান চুপ করে বসে আছে। সুহানি নোহানের সামনে বসে বললোঃ কি ব্যাপার আপনার মন খারাপ কেন?

নোহানঃ আমি হয়তো জীবনে অনেক অ’প’রা’ধ করেছি তার জন্য আমার কাছের মানুষ গুলো আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

সুহানিঃ অ’প’রা’ধ

নোহানঃ যখন বয়স ১২ তখন বাপি আর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।‌সেদিন মৃ’ত্যু’র মুখ থেকে আমি ফিরে এসেছিলাম। একজনকে ভালোবেসে নতুন করে নিজেকে সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেও আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলো। আর শেষে আমার দিদিয়াও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আমি বেঁ’চে থাকবো কিভাবে?

সুহানিঃ আমি কে হয় আপনার?

নোহানঃ জানো ভালোবাসাটা মন থেকে আসে চাইলেও কারোর প্রতি ভালোবাসা জন্মানো যায় না। চেষ্টা করেও আমি পারিনি তোমাকে দিয়ার জায়গায় বসাতে। আমি চেয়েছিলাম নতুন করে শুরু করতে কিন্তু পারিনি। জীবন,স্মৃতি আমাকে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে দেয়নি। আটকে পড়ছি দিয়ার মায়াজালে। হ্যা আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি অনেক অনেক অন্যায় করেছি। প্রথমে বিনা দোষে দোষী করেছি তারপরে নিজে ভালো থাকার জন্য তোমাকে নিজের কাছে বন্দি করেছি। আমি অপরাধি।

সুহানির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। নোহানের স্বীকারোক্তি সুহানিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।

সুহানিঃ আজ হঠাৎ সবকিছু স্বীকার করছেন কেন?

নোহানঃ আমার মনে হচ্ছে দিয়ার সাথে আমার দেখা খুব তাড়াতাড়ি হবে।

সুহানিঃ এসব কি বলছেন আপনি?

নোহানঃ হ্যা ঠিক বলছি।আমি তোমার অমতেই একটা কাজ করেছি।

সুহানিঃ কি কাজ।

নোহানঃ আমি লইয়ার কে দিয়ে ডির্ভোস পেপার রেডি করিয়েছি।

সুহানি চমকে উঠলো।

নোহানঃ তোমাকে মুক্ত করে দিলাম আর আমার সমস্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমার নামে আর অর্ধেক আমার তৈরি করা অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রমের নামে করে দিয়েছি।

সুহানিঃ আমার নামে কেন?

নোহানঃ দরকার ছিলো।

সুহানিঃ আমি নেবো না।

নোহানঃ না নিলে দান করে দিয়ো‌। ভালো থেকো তুমি আর নিজের খেয়াল রেখো। এখন নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

সুহানি কিছু আর না বলে নিরবে ঘরটা ত্যাগ করবে তখনি নোহান সুহানির হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।সুহানি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো নোহানের দিকে। নোহান আলতো করে সুহানির কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বললোঃ তোমাকে আমি বৈধ ভাবে প্রথম স্পর্শ এবং শেষ স্পর্শ করলাম।

নোহান কথাটা বলেই বেলকনিতে চলে গেলো।সুহানি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নোহানের এমন কাজের কোনো কারন কিছুই বুঝতে পারলো না। আর না বুঝতে পারলো নোহানের কোনো কথা।

১বছর পরে…..

— দিয়া সত্যি তুই খুব ভাগ্যবতী। নোহান সত্যি তোকে খুব ভালোবাসতো,তাই তো দ্যাখ না। সবকিছু থেকে কি সুন্দর ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো। একটা বার আমার কথা ভাবলো না।একটা বার বুঝলো না আমার কি হবে।‌আমি না মানলেও নোহান আমার স্বামী ছিলো‌।আর বাপির কথা সত্য ছিলো,বাপি বলেছিলো পবিত্র সম্পর্কের টানে একজন অপর জনের উপর দূর্বল হয়ে পড়ে। আমি আগে বুঝিনি কিন্তু তুমি চলে যাবার পরে বুঝে ছিলাম আমি তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছি। আচ্ছা নোহান তুমি কি কখনোই আমার প্রতি দূর্বল হওনি।আমার প্রতি কোনো মায়া জন্মায়নি। না জন্মায়নি,জন্মালে হয়তো আমাকে একাকে রেখে চলে যেতে না। কারন তুমি তো সবসময়ই দিয়াতেই আসক্ত ছিলে,কখনোই দিয়ার থেকে বের হতে পারোনি। সত্যি বলতে কখনোই চাওনি, তোমার সবটা জুড়ে ছিলো শুধুমাত্র দিয়া। আমার রঙযুক্ত জীবনটা তুমিই রঙহীন করেদিলে,আমার তুমিই নতুন রঙের অনুভূতির জন্ম দিলে। কিন্তু কি হলো সেই তো আমাকে আবারো রঙহীন করে দিলে।

দিয়ার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে কথা গুলো বললো সুহানি।জীবন সুহানির সাথে বড্ড বেশি খেলছে। এই খেলার পরিনতিই বা কি?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here