#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১৫
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
– নোহান কোথায় গেলো?
এতক্ষন ধরে সুহানের কাছে গল্প শুনছিলো ডক্টর অবাক চৌধুরী। সুহানির জীবনের গল্পটা জানার কৌতুহল প্রকাশে সুহান সবটা বললো ওনাকে।মাঝে কেটে গেছে ২টো বছর। সুহান আগের থেকে অনেকটাই বড়ো হয়ে গেছে। কলেজে ভর্তি হয়েছে।
সুহানঃ পরেরদিন সকালে নোহান দা গাড়ি অ্যা’ক্সি’ডে’ন্টে মারা যায়। দিদি খুব ভেঙ্গে পড়ে প্রান প্রিয় বান্ধবী তারপরে নোহান দার মৃ”ত্যু টা মেনে নিতে পারে না। রাহাত দা দিদির পাশে এসে দাঁড়ায়।
অবাকঃ সব ঠিক আছে কিন্তু অনেকগুলো কনফিউশন থেকেই যাচ্ছে।
সুহানঃ কি?
অবাকঃ ১. দিয়াকে কে মে’রে ছিলো?
২. নোহা কেন সুই’সাইড করলো।
৩. নোহানের অ্যা’ক্সি’ডে’ন্টটা কি আদোও অ্যা’ক্সি’ডে’ন্ট নাকি অন্য কিছু।
সুহানঃ সব কনফিউশন দূর করছি।
অতীত…
নোহানের মৃ’ত্যু’র পরে সুহানি খুব ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু হঠাৎ করেই হুট করে স্বাভাবিক হয়ে যায় বিষয়টা সবার একটু অন্যরকম লাগলেও সবাই খুশি হয়।
সুহানি বসে আছে বাগান বাড়িতে,চারিদিকে মোমবাতি দিয়ে ঘেরা। রাহাত বাগান বাড়িতে এসে সুহানিকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে গেলো।
রাহাতঃ আমাকে হঠাৎ এখানে ডাকলে কেন?
সুহানি মুচকি হেসে বললোঃ কিছু কথা বলবো বলে।
রাহাতঃ কি কথা।
সুহানিঃ আমার জীবন কাহিনী।
রাহাতঃ মানে?
সুহানিঃ জানো রাহাত আমি আমার বাপি মায়ের খুব আদরের ছিলাম ওনারা আমার সব সময় সবকিছু আবদার রেখেছেন কিন্তু নোহান আমার জীবনে আসার পরে সবটাই এলোমেলো হয়ে যায়। নোহান আমাকে বিনাদোষে দিয়ার খু’নী মনে করে আমাকে বিয়ে করলো।
রাহাত চমকে উঠে বললোঃ দিয়ার খু’নী মানে?
সুহানিঃ দিয়া আর বেঁচে নেয়। আচ্ছা রাহাত বলো তো নোহান এটা ভাবলো কিভাবে যে দিয়ার ক্যারিয়ার করার জন্য আমি নিজের প্রোজেক্ট ওকে দিয়ে দিয়েছিলাম সেই দিয়াকে মে’রে ফেলবো।
রাহাতঃ কি বলছো এসব।
সুহানিঃ হ্যা সত্যি বলছি,দিয়ার মৃ’ত্যু’র দায়ে নোহান আমাকে শাস্তি দেবার জন্য জোড় করে বিয়ে করলো। আমাকে মানসিক ভাবে শাস্তি দিতে লাগলো।
রাহাত সুহানির দিকে তাকিয়ে আছে, সুহানি কে স্বাভাবিক লাগছে না।
সুহানিঃ জানো রাহাত আমার বাপি আর মা ও আমার কথা বুঝলো না। বিয়ে হয়ে গেছে তাই মানিয়ে নিতে হবে তাই আবারো আমাদের বিয়ে দিলো। বিয়ের দিনেই নোহা দি টপকে গেল। আচ্ছা তুমি কি জানো নোহা কিভাবে মা’রা গেছে?
রাহাতঃ সু’ই’সা’ই’ড করেছে তো।
সুহানিঃ হুঁ না। নোহা কে খু*ন করা হয়েছে।
রাহাত চমকে উঠলো।
সুহানিঃ আমি ঠিক বলছি
রাহাতঃ মানে?
সুহানিঃ আমি ঘরে কনের সাজে বসে ছিলাম।
ফ্ল্যাশব্যাক…
সুহানি কনের সাজে বসে আছে তখনি ওর মনে পড়লো। দিয়া ওকে একটা গিফট্ দিয়েছিলো। আর বলেছিলো
– যেদিন তোর বিয়ে হবে এটা সেদিন খুলবি।
সুহানি তাড়াতাড়ি করে সেই প্যাকেটটা খুলতে লাগলো। খুলে দেখলো তাতে একটা পেনড্রাইভ আছে। সুহানি ল্যাপটপে লাগিয়ে দেখলো,দিয়া আর সুহানি সমস্ত ছবি দিয়ে খুব সুন্দর করে এডিট করা একটা ভিডিও। সুহানি চোখের পানি মুছলো। আজ দিয়া থাকলে ওর জীবনটা এরকম হতো না। সুহানি পেনড্রাইভ টা খুলে নেবে কিন্তু একটা ফোল্ডার দেখে সন্দেহ জাগলো। সুহানি সেটাকে চালু করে দেখলো ওতে একটা ভয়েস আছে সেটা চালু করতেই সুহানি চমকে উঠলো।
সুহানি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নোহানদের পেছনের দরজা দিয়ে নোহার ঘরে ঢুকলো। সুহানিকে এই সময় দেখে নোহা চমকে উঠলো।
নোহাঃ তুমি?
সুহানিঃ আমাকে দেখে অবাক হচ্ছো কেন?
নোহাঃ তোমার তো বিয়ে তুমি এখানে কি করছো?
সুহানিঃ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে এসেছি।
নোহাঃ কি প্রশ্ন
সুহানিঃ কেন প্রতারনা করেছো নোহানের সাথে?
নোহাঃ কি বলছো এসব তুমি
সুহানিঃ আমি সব জানতে পেরে গেছি। আর সবকিছুর প্রমান আমার হাতে আছে।
নোহাঃ কি প্রমান।
সুহানিঃ নিজেই শুনে নাও।
সুহানি একটা ভয়েস চালু করলো্
– সুহা আমি দিয়া, তোকে আমার কিছু বলার আছে।নোহানের দিদি নোহা অনেক রকমের বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত। নোহানের কোম্পানির পেছনে অনেক অনেক বেআইনি কাজ করেন। নোহানকে উনি বাঁচতে দেবেন না। তুই নোহানকে দেখে রাখিস। আর ওনার সব বেআইনি কাজের প্রমান পত্র আমার লকারে রাখা আছে।
সুহানিঃ কি হলো চমকে উঠলেন কেন?
নোহা একটা ছুড়ি বের করে বললোঃ আমার পথে যে যে বাধা হয়ে এসেছে আমি তাকেই সরিয়ে দিয়েছি। তোমাকেও ম’র’তে হবে।
সুহানিঃ নোহানের উপর এর রাগ কেন তোমার? ওহ তো তোমার ভাই ।
নোহাঃ সৎ ভাই। ওর জন্য আমি আমার বাপির ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ওর জন্য আমার এত বড়ো সাম্রাজ্য হাত ছাড়া হয়ে গেছে। ওর জন্য আমি সবকিছু হারিয়েছি।
সুহানিঃ পাগলের মতো বলো না।
নোহাঃ পাগলের মতো না সঠিক কথা। ওহ না যদি আসতো তাহলে এই শিকদার পরিবারের সবকিছু আমার হতো। বাপি আমার একার থাকতো আমাকে ভালোবাসতো একাকে সবকিছুর রানি আমি হতাম। আর আমি সেটা হবোই আমি নোহানকে ধ্বংস করে দেবো।
সুহানিঃ আমি থাকতে সেটা হতে দেবো না।
নোহাঃ কিছু করতে পারবে না। ঠিক যে ভাবে আমি বাপি-মম আর দিয়াকে শেষ করেছি ঠিক সেভাবেই তোমাকে শেষ করবো।
সুহানিঃ বাপি মম মানে?
নোহা হেসে বললোঃ ওনাদের আমিই গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট করিয়েছিলাম সেদিন একটুর জন্য নোহান বেঁচে যায় আর আমার সব প্ল্যান নষ্ট করে দেয়। তারপরে দিয়া এসে নোহানের জীবনটা গুছিয়ে দেয় সবই ঠিক ছিলো কিন্তু কোথা থেকে দিয়া সব কিছু জানতে পেরে গিয়ে আমাকে থ্রেট দেয়। আর উপরে চলে গেলো। দিয়াকে বলেছিলাম আমার পেছনে পড়ো না শেষ হয়ে যাবে কিন্তু কথা শুনলো না। আর মাঝ খান থেকে তোমাকেও জড়িয়ে দিলো সবকিছুর প্রমান তোমার কাছে রেখে দিলো তাই তোমাকেও তো উপরে যেতে হবে।
সুহানি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একজন মেয়ে সম্পত্তির জন্য তার বাবা মার সাথে এরকম করতে পারে সেটা ওর ধারনার মাঝেই ছিলো না।
সুহানিঃ এতটা খারাপ তুমি।
নোহাঃ হ্যা আমি খুব খারাপ খুব স্বার্থপর আমার সবকিছু চাই সবকিছু।
সুহানি নোহার ঘর থেকে বের হয়ে গেল। নোহা র”ক্তা’ক্ত হয়ে পড়ে থাকলো বিছানায়। এই পৃথিবীতে বেঈমান দের থাকার কোনো অধিকার নেই। বেইমানি করলে একটাই শাস্তি মৃ’ত্যু।
সুহানি নিজের ঘরে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ দিয়া আমি তোকে কথা দিয়েছিলাম তোর খু’নীকে নিজের হাতে শাস্তি দেবো আমি দিয়েছি এবার তুই খুশি তো।
দিয়ার কন্ঠস্বর শোনা গেলোঃ আমি খুশি কিন্তু তোকে একটা কথা দিতে হবে তূই আমার নোহানকে দেখে রাখবি।
বাকিটা সবারই জানা। সুহানি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
বাস্তব…
রাহাত সমস্ত কথা শুনে চমকে উঠলো।সুহানি নোহাকে খু’ন করেছে এটা বিশ্বাস করতে পারছে না।
সুহানিঃ কি হলো রাহাত এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
রাহাতঃ কি বলছো এসব তুমি
সুহানিঃ সত্যি বললাম।
সুহানি রাহাতের দিকে তাকিয়ে এমন একটা কথা বললো তাতে রাহাত চমকে উঠলো।
রাহাত তুতলে বললোঃ কি বলছো এসব।
সুহানি বাঁকা হাসলো।
#চলবে….
বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং।