রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১৬ অন্তিম_পার্ট

0
1101

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১৬ অন্তিম_পার্ট
#তানজিলা_খাতুন_তানু

সুহানি বাঁকা হাসলো। রাহাত একের পর এক ঢোক গিলতে লাগলো।

সুহানিঃ কি ব্যাপার এতটা ভয় পাচ্ছো কেন?

রাহাতঃ কই না তো।

সুহানিঃ রাহাত আমাকে এতটাও বোকা পেয়েও না।আমি খুব ভালো করে জানি নোহানের অ্যাক্সিডেন্ট কে করিয়েছিল।

রাহাত চমকে উঠলো। সুহানির হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে রাহাতকে ওহ কিছুতেই ছাড়বে না।

রাহাতঃ কি বলছো এসব।

সুহানিঃ কেন করলে এরকম।কেন আমার স্বামীকে কেড়ে নিলে আমার থেকে।

রাহাত কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললঃ আমিই সব করেছি আর বেশ করেছি। নোহান বেঁচে থাকলে না আমি তোমাকে পেতাম আর না আমার ব্যবসা পেতাম।

সুহানিঃ মানে? নোহার সাথে তুমিও জড়িত ছিলে।

রাহাতঃ হ্যা আমি ওহ জড়িত ছিলাম‌। সবকিছুর পেছনে আসল মানুষটা আমিই ছিলাম বুঝেছো। এবার তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে।

সুহানিঃ কখনোই না একটা খু”নী”র সাথে আমি কখনোই থাকবো না।

রাহাতঃ খু”নী তো তুমি ওহ।

সুহানিঃ সেটার প্রমান তো নেয় কিন্তু তোমার কাজের প্রমান তো আছে।পুলিশ অফিসার ভেতরে আসুন।

রাহাত পুলিশকে দেখে চমকে উঠলো। রাহাত সুহানির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললোঃ তোমাকে আমি ছাড়বো না।

সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।রাহাত সুহানিকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। সুহানির মাথায় অনেকটাই চোট লাগে। আর অজ্ঞান হয়ে যায়।

বাস্তব…

অবাকঃ সুহানি তারপরেই কি অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সুহানঃ হ্যা দিদি তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাথার আঘাতটার ফলে ওর নানান সমস্যার দেখা যায়। আর অন্য দিকে মেন্টাল ভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়লো। আর তারপরে।

সুহান চোখের পানি মুছলো।দিদির জীবনের পরিনতি টা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি।

অবাক চৌধুরী,,ধীর পায়ে হেঁটে একটা রুমে প্রবেশ করে ভাবনার জগতে ডুব দিলেন..

অবাক চৌধুরী,, একজন নামকরা সাইকোলজিস্ট।
আজকে অবাকের মেন্টাল হসপিটালে প্রথম দিন। হসপিটাল পরির্দশনে এসেছে। একটা রুমের দিকে চোখ আটকে গেলো। ভেতরে একটা সুন্দরী মেয়ে বসে বসে পুতুল খেলছে। কৌতুহল বলতে ভেতরে গিয়ে মেয়েটাকে দেখে থমকে গেলো। অপরুপ সুন্দরী একটা মেয়ে এই মানসিক হাসপাতালে কি করছে।

অবাক আগিয়ে এসে বললোঃ কি করছো?

মেয়েটা অবাকের দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললোঃ তুমি কে?আর তুমি জানো না আমি দিয়ার বিয়ে দিচ্ছি।

অবাক মেয়েটার তাকানো দেখে থমকে গেলো। কি সুন্দর চোখের চাহনি। একটা নিস্পাপ মেয়ে এখানে এরকম অবস্থায় কেন।

অবাকঃ আমি ডক্টর অবাক চৌধুরী। দিয়ার বিয়ে দিচ্ছো মানে?

সুহানিঃ হ্যা আমি দিয়ার বিয়ে দিচ্ছি ওই দ্যাখো এটা দিয়া আর এটা নোহান।

অবাক সামনে থাকা আরেকটা পুতুলের দিকে দেখিয়ে বললোঃ এটা কে?

সুহানিঃ ওটা তো সুহানি।

অবাক কৌতুহলী হয়ে বললোঃ ওই মেয়েটাও কেন বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে আছে।

সুহানি হেসে বললোঃ তুমি কিছু জানো দেখছি। নোহানের তো দুটো বউ।একটা দিয়া আর একটা সুহানি। কিন্তু নোহান দিয়াকেই ভালোবাসে,সুহানিকে একটুও ভালোবাসে না তাই তো এভাবে সুহানিকে একাকে রেখে চলে গেলো দিয়ার কাছে।

সুহানি কাঁদতে চালু করলো। অবাক অনেকটা হতভম্ব হয়ে গিয়ে সুহানি কে থামানোর চেষ্টা করতে থাকে। অবাকের বুকের ভেতরে একটা অজানা শিহরন বয়ে যাচ্ছে। সুহানির কান্না ওকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।‌কি আছে মেয়েটার মাঝে এরকম একটা অনুভুতি হচ্ছে। এই অনুভূতির নাম কি?

এক মাস কেটে যায়…

অবাক সুহানির প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। সুহানির খেয়াল রাখা, দেখাশোনা করা ওর একটা কাজ হয়ে উঠেছে। অবাক ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে আসলো নার্সের ডাকেঃ স্যার আপনি এখানে বাড়ি ফিরবেন না।

অবাকঃ তুমি যাও আমি যাচ্ছি।

নার্স চলে গেলো।অবাক আবারো ভাবনায় ডুব দিলো। অবাকের চোখ ভিজে আসলো সেই ভয়াবহ দিনের কথা মনে পড়তে।

একদিন সকালে হাসপাতালে এসে দেখলো দৌড় দৌড়ি করছে অবাক চমকে উঠলো।

অবাকঃ কি হয়েছে?

নার্সঃ ৩২২ নং কেবিনের রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালো না। কিরকম করছে।

অবাক চমকে উঠে তাড়াতাড়ি করে সুহানির ঘরে এসে থমকে গেলো। সুহানি কিরকম একটা করছে। অবাক সুহানিকে দেখতে লাগলো।

অবাকঃ কি কষ্ট হচ্ছে তোমার।

সুহানিঃ কষ্ট হচ্ছে না আমি আমার নোহানকে দেখতে পাচ্ছি। আমি আমার নোহানকে পাবো‌।

সুহানির প্রানপাখিটা চলে গেলো। অবাক থমকে গেলো।ওর সামনে সুহানির নিথর দেহ পড়ে আছে। সুহানি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে।অবাক অনেক ডাকলো কিন্তু সুহানি আর উঠলো না।

অবাক সুহানের কাছে সুহানির অতীত জানতে চেয়েছিল। ওর মনে জন্য যদি এই কথাটা আগে জানতে চাইতো তাহলে হয়তো সুহানি ওর কাছে থাকতো।সুহানি বেঁচে থাকতো।

কিন্তু ভাগ্য বলে একটা জিনিস আছে। কথাতেই বলে জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে।কোথাও না কোথাও দাঁড়িয়ে সবকিছুর জন্য দিয়া নিজেকে দায়ী মনে করছে। দিয়ার মৃ”ত্যু সবটা এলোমেলো করে দিলো। সুহানির রঙ বেরঙের জীবনটা রঙহীন করে দিলো।

অবাক আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কেন তোমার সাথে ভাগ্য আমাকে আরো আগে দেখা করানো না। কেন তুমি আমার হলে না। কেন আমার ভাগ্য আমার জীবনে #রঙ_বেরঙের_অনুভূতি-র জন্ম দিয়েও রঙহীন করে দিলো।

অবাক ভালোবাসার মানুষটার শেষ পরিনিতি মেনে নিতে পারেনি। সুহানির সমস্ত সম্পত্তি দান করে দিয়েছে সুহান। রাহাত জেলে বন্দি আছে। সুহানির বাবা মাও মেয়ের এই করুন পরিনিতি মানতে পারছেন না। কিন্তু কি করবেন নিজেদের দোষেই তো সবকিছু হলো। আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবার আছে যেখানে মেয়েদের কোনো অধিকার নেয়। সমাজের দোহাই দিয়ে একটা সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা পড়তে হয়।‌অন্যায় না করেও শাস্তি পেতে হয় অনেক নারীকে। তবুও সবাই বলবে নারীরা স্বাধীন।‌সত্যিই কি নারীরা স্বাধীন হয়ে উঠেছে। নাকি স্বাধীনতার নামে এখনো চলছে নির্যাতন।এখনো নারীদের মনে #রঙ_বেরঙের_অনুভূতি -র জন্ম হয়েও জীবনটা হয়ে উঠে রঙহীন।

~সমাপ্ত~

বিঃ দ্রঃ— গল্পটা নিয়েই প্রথম থেকে অনেকের অনেক অভিযোগ ছিলো। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বাস্তবতা কখনোই গল্পের সাথে মেলে না।তবে বাস্তব কখনো কখনো গল্পকেও হার মানায়। গল্পটা কাউকে আঘাত করতে চাইনি। কারোর খারাপ লাগলে দুঃখিত।

হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here