রহস্যময়_অদৃশ্য_ধর্ষন পর্বঃ-০৪

0
1801

রহস্যময়_অদৃশ্য_ধর্ষন পর্বঃ-০৪
লেখকঃ-কৌশিক আহমেদ


গিয়ে পৌঁছালাম,, যেখানে আছেন উনি সেইটা বিশাল বড় প্রসাদ,,যা দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোন রাজ প্রসাদ হবে এটা।হয়তো-বা এই পরী রাজ্যের রাজার প্রসাদ হবে।
প্রথমে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিলাম না,,কিন্তু মনের ভিতর সাহস নিয়ে প্রবেশ করলাম আর দরজার কাছে গিয়ে যা শুনতে পেলাম তাতে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো,,
শুনতে পেলাম শশুড় মশাই কথা বলছেন,,
শশুড়ঃ-তাহলে কি এর কোন প্রতিকার নেই.?
এভাবে আমাদের জাতির কেউ যদি পৃথিবীতে গিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে তাহলে তো আমাদের বদনাম হবে,,,

আরেকজনঃ- শুধু কি মানুষের ক্ষতি হবে.?
যদি সে তার কর্ম সাধন করতে পারে একবার,,তাহলে পুরো জ্বীন জাতি তার দখলে চলে যাবে।
ও যে খারাপ প্রকৃতির তাতে পুরো পৃথিবী আর জ্বীন পরি রাজ্যকে কবরস্থান শ্মশানে পরিনত করে ফেলবে।
সুখের ছিটেফোঁটাও থাকবে না।
দয়া করে সবাইকে মিলে এটা রুখতে হবেই।
যদি শান্তি রক্ষা করতে চান।

আমি চুপচাপ দাড়িয়ে শুনছি আড়াল থেকে।
আসলে কাহিনীটা বুঝতে পারছি না,, উনারা কি বলতর চাচ্ছেন।
সব কিছু কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে।
সাথে টেনশন বেড়ে যাচ্ছে,, উনারা যা বলছেন তা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে পৃথিবীতেও সমস্যার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
আগে ভালো করে শুনতে হবে,,আমি গেলে হয়তো কথা বলা বন্ধ করে দিবে,,
তারচে চুপচাপ শুনাই বেটার।

অন্য আরেকজনঃ- সে নাকি অলরেডি তার কর্মকাণ্ড শুরু করে দিছে আর অলরেডি পাচজনকে ধর্ষন করে মেরেও ফেলেছে,,জানি না আর কত প্রান যাবে।

প্রথম জনঃ- আমি যতদুর শুনেছি তাতে নাকি ১০১ জনকে ধর্ষণ করলে তার উদ্দেশ্য সাধন হবে।
যদি সত্যি ৫ জনকে ধর্ষণ করে থাকে তাহলে তো তার কাজ সাধন করে নিচ্ছে,,
সে আস্তে আস্তে নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের পথে এগিয়ে যাচ্ছে,,
আমি যতদুর জানি ও খুবই খারাপ আর অনেক পাওয়ার ফুল জ্বীন,,আমাদের শক্তিতে ওর সাথে টক্কর দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না।
তাছাড়া ঐ জ্বীনটা হচ্ছে শয়তান পূজারি,,
শয়তানের উপাসনা করে,,
এসব করে তার নিজের প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
যদি একবার কোন ভাবে সে সাকসেস হয়ে যায় তাহলে মানুষ এবং জ্বীন জাতি,, দুইটার জন্যেই ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করবে।
পৃথিবীতে সকল ধর্মের বিনাশ করবে,,সবাইকে শয়তানের উপাসনা করতে বাধ্য করবে।

শশুড়আব্বাঃ-তার মানে সব মিলিয়ে যা দাঁড়াচ্ছে তাতে ঐ শয়তান দুষ্টু জ্বীনটাকে যে করেই হোক আটকাতে হবে,,ওর সকল অপকর্ম ধংস করতে হবে,,ওরে চিনদিনের জন্য বিনাশ করতে হবে।

তৃতীয় জনঃ- কিন্তু মাতুব্বর সাহেব,, বাকিরা যেভাবে বললো তাতে আমাদের সকলের শক্তি মিলেয়েও ওর সাথে লড়া সম্ভব না,,
ওর সাথে রয়েছে শয়তানি বুদ্ধি আর শক্তি।
জাদু বিদ্যায় পারদর্শী,,, যে কোন সময় আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে পারে,,,
ওর প্রতিটা কদমে কদমে রয়েছে হাজারো কু বুদ্ধি আর জাদুর খেলা।

শশুরআব্বাঃ-সৃষ্টি জগতে এক আল্লাহ পাক সর্বশক্তিমান,, তার আগে পরে কারোর শক্তির তুলনা করাও পাপ,,,
শয়তান যতই তার কাজ চালিয়ে যাক,,মহান আল্লাহ তার সৃষ্টিকে বাঁচাতে যে কোন একটা উপায় বের করবেন ইনশাআল্লাহ।
আর শক্তি,,, আল্লাহ পাক চাইলে যে কোন মূহুর্তে ঐ রকম হাজার লক্ষ কোটি কোটি শয়তানের বিনাশ করতে পারেন,,
হয়তোবা আমরা বা মানুষ জাতির মধ্যে পাপ আর অরাজকতা বৃদ্ধি পেয়েছে,, তাই শাস্তি হিসেবে ঐরকম গজব নাজিল হচ্ছে আমাদের জন্য।
এসময় সকলের উচিত দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও সাহায্য চাওয়া,, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব সময় মুমিন ব্যাক্তিদের পাশে থাকেন,, সাহায্য করেন,,।
তাই এখন আমাদের উচিত আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা ও সাহায্য চাওয়া সাথে শত্রুর মোকাবিলা করার সাহস ও শক্তি গড়ে তুলা,,,
নিশ্চয়ই আমরা সফলকাম হবো।
আমিন,,,,,

বাকিরাও সবাই একত্রে আমিন বললেন।
এরপর আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা ও সাহায্য চেয়ে মুনাজাত ধরা হলো,,আমিও বাহিরে থেকেই উনাদের সাথে মুনাজাতে অংশগ্রহণ করলাম।
মুনাজাত শেষে আমি চলে আসলাম কাউকে কিচ্ছু না বলে,,সোজা শশুরবাড়ি,,মানে স্নেহাদের বাড়ি,
এসে দেখি সবাই হইহট্টগোল মজমাস্তিতে মেতে আছে,,
কিন্তু আমার মনটা বিষন খারাপ,,, যে সংবাদ শুনলাম তাতে আমি একদম দুর্বল হয়ে পেড়েছি,,,
কারন আমার জানা দুইটা মেয়ে ছাড়াও এই কয়দিনে আরো তিনটা মেয়ের সাথে এমনটা হয়েছে, কি নিষ্ঠুরতার শিকার না হচ্ছে মেয়ে গুলা।
বিষন কষ্ট লাগছে,,কারন আর কেউ না দেখলেও আমি আর ড্রাইভার দুইজনে তো দুইটা মেয়ের নিজের চোখের সামনেই মৃত্যু হতে দেখেছি,,কতটা বর্বরোচিত মৃত্যু,, কতটা কষ্ট দায়ক এবং লজ্জা জনক।
একটা মেয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় অলঙ্কার হচ্ছে তার ইজ্জত,, তার স্বতিত্য,,কিন্তু একটা শয়তানের শিকার হয়ে মেয়ে গুলোর ইজ্জতের পাশাপাশি নিজের জীবনটা বিনা কারনে দিতে হচ্ছে,, বিনা কারনে তার বাবা মা কষ্ট পাচ্ছে,,না জানি এভাবে কত বাবামায়ের বুক খালি হবে,,না জানি কত ভাই তার কলিজার টুকরা বোনটাকে হারাবে,,এমনকি জানতেও পারবে না কোথায় বা কিভাবে কি হয়েছে,, বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে,, জানতেও পারবে না কেউ,,উল্টো আরো সমাজ এসব মেয়ের নামে কুরটনা করে তার পরিবারের দিকে আঙুল তুলবে,,ছি ছি করবে,,কতনা কথা শুনাবে???

টেনশনে কিচ্ছু ভালো লাগছে না,,আমি একজন আইনের মানুষ হয়েও কিচ্ছু করতে পারছি না।
ছি ধিক্কার দিচ্ছে নিজেই নিজেকে,,
লজ্জা লাগছে নিজের উপর নিজেরই।
না আমাকে কিছু একটা করতেই হবে,,তাতে আমার প্রাণ যাক বা থাক,,,
স্নেহা এসে আবারো আমার পাশে বসলো,,

স্নেহাঃ- কৌশিক,, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি,, ভালবাসি,,তোমার মধ্যে কি কোন সন্দেহ আছে.??

এ আবার কিসের মধ্যে কি বলছে,,এমনিতেই ভাল লাগছে না তারমধ্যে এসব শুনে মাথা বিগড়ে যাচ্ছে। না পারছি কিছু বলতে না পারছি সহ্য করতে,,শুধু এতটুকুই বললাম,,

আমিঃ-আমার প্রতি,, আমার ভালবাসা,, আর তোমার প্রতি বিশ্বাস কতটুকু করি তা যদি তোমার বিশ্বাস থাকে তাহলে প্লিজ এমন কোন কথা বইলো না যাতে মাথা নষ্ট হয়ে যায়।

স্নেহাঃ- আমি তোমাকে বিশ্বাস করি ১০০%,,আমি জানি তুমি কখনো কোন ভুল পথে পা দিবে না।
আমার থেকে কিচ্ছু লুকাবে না,,সো একটা প্রশ্ন করবো।

আমিঃ- হুমমম বল,,,কি বলবে..?

স্নেহাঃ- তোমার সমস্যা কি,,মানে তুমি কি কোন বিষয় নিয়ে টেনশনে আছো কিংবা কোন বিপদের মধ্যে আছো..?
প্লিজ আমার খুবই টেনশন হচ্ছে,, দয়া করে আমার থেকে কিছু লুকাবে না।
(আমার হাত ধরে কান্না মাখা মুখ নিয়ে,, ছলছল চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বললো একধমে)

কি বলবো বুঝতে পারছি না,, স্নেহাকে এ বিষয়ে জানানো ঠিক হবে না,,উল্টো টেনশনে পড়ে যাবে।
তাছাড়া ও নিজেও যেহেতু পরী ছিল তাই আমাকে সাহায্য করতে হয়তো আগ্রহ প্রকাশ করবে।
হয়তো এগিয়ে আসবে সাহায্য করতে,এসে উল্টো না জানি কি বিপদে পড়ে যাবে,,স্নেহা কোন বিপদে পড়ুক তা আমি চাই না,,
তাই উল্টো পাল্টা বুঝিয়ে কাটিয়ে নিলাম বিষয়টা।
জানি যদিও স্নেহা বিশ্বাস করে নাই আমার কথা তবুও এ বিষয়টা স্কিপ করে গেলাম।

যাইহোক অবশেষে পরী রাজ্যে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম,,বাড়িতে এসেই দেখি শত শত কল আসছে ফোনে,,,যেহেতু আমি ঐখানে ছিলাম আর ঐখানে নেট পাওয়ার কোন চান্স ই নাই,,তাই কারোর সাথে যোগাযোগ হয় নি।
বেশির ভাগই কল আসছে ড্রাইভার আর কনস্টেবল মিজানের ফোন থেকে,
কোন কিচ্ছু না ভেবে চিন্তেই কল ব্যাক করলাম।
আর ওদের থেকে শুনতে পেলাম,,

মিজানঃ-স্যার আপনি চলে যাওয়ার পর আরো তিনটা মার্ডার মানে ধর্ষন সহ হত্যা হয়েছে,,যদিও আমরা শিওর না,,কারন আমরা কেউ দেখি নি,,বাট
মোটা পাঁচটা মিসিং কমপ্লেন আসছে থানায়,,তার মধ্যে দুইটা আগের মেয়ে,, তাদের তো চিনতাম মানে দেখেছি আমি আর ড্রাইভার শামিম,, তাই তাদের ছবি দেখেই চিনতে পারছি,, যেহেতু একই ভাবে বাকি তিনটা মেয়ে মিসিং,, তাই বিষয়টা পরিষ্কার যে এরাও ঐ শয়তানের দ্বারা ধর্ষণের শিকার আর হত্যার শিকার হয়েছে,
স্যার জানি না এসব কি হচ্ছে,, আমরা আপনাকে কতবার ফোন করেছি,,কেউ ফোন রিসিভ করে নি,,
লাস্টে আপনার আব্বুর নাম্বার কালেক্ট করে উনার কাছে শুনতে পেলাম আপনি নাকি আপনার শশুড়বাড়িতে গেছেন।
আমরা আপনার শশুড়বাড়ির নাম্বার চেয়েছিলাম বাট আপনার আব্বু দিতে পারলেন না।
যাইহোক আমরা সব জেনে শুনেও কোন পদক্ষেপ তো দূরের কথা,,যারা মারা গেছে আমাদের সামনে,,সব শিওর হয়েও তাদের পরিবারকে জানাতে পারি নি বিষয়টা,,কি করে বলবো এমন নির্মম করুন কাহিনী,, তারা কি মেনে নিতে পারবে.?
তাছাড়া এমন কথা তো বিশ্বাসই করবে না,,
করলেও তারপরও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্যার আমাদের সবাইকে মানা করেছেন যাতে এ বিষয়ে কাউকে কিচ্ছু না বলি,,বিষয়টা স্কিপ করে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন,,
এটা ছড়িয়ে গেলে নাকি পুরো অঞ্চল সহ সারা দেশ ব্যাপি পুলিশ প্রশাসন নিয়ে হাসাহাসি করবে জনগন,,মিডিয়া আজেবাজে কথা বলবে,,আর যারা বিশ্বাস করবে তারা সবাই আতংকে পরে যাবে,,
জনজীবনে অস্বস্তি নেমে আসবে,,স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবে।
স্যার আপনি তাড়াতাড়ি আসেন,,
আমার যে আর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।
প্রতি দিন প্রতিটি পরিবারের লোকজন থানায় এসে কান্নাকাটি করে,,প্লিজ স্যার আপনি তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করেন।

কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলো দুইজনেই।
অবস্থা কতটা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে তা তো আমি জানি,,ওরা জানলে তো হার্টফেল করবে।
না,, এখন নিজের জীবনের মায়া করলে চলবে না।
যা পারি,,যতটুকু পারি ততটুকু দিয়েই এগিয়ে যেতে হবো,,রুখতে হবে শয়তান রাক্ষসটাকে।
স্নেহাদের বাড়ি থেকে ভোরের আগেই এসেছিলাম,,,ফোনে কথা শেষ করে গোসল করে হাল্কা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম কর্মসংস্থানে,,,মানে আমার থানার উদ্দেশ্যে,,,
সারাদিন প্রায় লেগেই গেল পৌছাতে পৌঁছাতে,,
সন্ধার পরপর ৭ টার দিকে থানায় এসে পৌঁছালাম।
এসেই কষ্টে বুকটা ফেটে যাবে এমন অবস্থা।
পরিস্থিতি যা কল্পনা করেছিলাম তার চেয়েও ভয়াবহ।
থানার সামনে শতশত মানুষের মিছিল,,
এ যেন কান্না আর বিদ্রোহের মিছিল লেগে গেছে।
প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছে সবাই,,
সাথে মিডিয়া লেগে পড়েছে,,
পাশ কাটিয়ে অনেক কষ্টে থানার ভিতর ঢুকলাম।

হুট করেই থানার সামনে এত মানুষ আর মিডিয়া থাকার কারনটা কি.?
যদিও প্রতি দিন একটা করে মেয়ে গায়েব হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক,,কিন্তু তাই বলে এত মানুষের মিছিল.?? কম করে হলেও ২ হাজার মানুষ হবে।
কাহিনী তো ভিন্ন কিছু আছেই,, তা জানার জন্য চলে গেলাম ডিউটিরত সিনিয়র কনস্টেবলের কাছে,,
আর যা জানতে পারলাম,,,.??
।।
।।।
।।।।
।।।।।।
।।।।।।।
।।।।।।।।।
গল্পের পরের পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
গল্পটা কেমন হলে বেটার হবে তার মতামত জানিয়ে পাশে থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here