#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_১১,১২
#হাফসা_ইরিন_রাথি
১১
মিলিকে হুজুরের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর জ্বীন হাজির করা হয়। ইহান মিলিকে এখানে দেখে খুবই অবাক হয় আর ভীত হয়ে যায়।
–রিদ তু….তুমি এখানে কি করছো? কেনো এসেছো এখানে?
(চিৎকার করে)পালিয়ে যাও রিদ।
মিলি ইহানের কণ্ঠস্বর চিনতে পারে কিন্তু ইহানকে দেখতে পাচ্ছে না। ইহানের কণ্ঠস্বরটা ভেসে আসছে সামনে বসে থাকা ছেলের মুখ থেকে।মিলি অসহায়ের মতো বলতে থাকে,
–ইহান তুমি এসেছো?আমার এখানে খুব ভয় লাগছে ইহান।
–আমার সাথে যাবে?
তখনি হুজুর কি যেনো একটা দোয়া পড়ে ফু দিলেন আর ইহান চিৎকার করতে লাগলো।মিলি ওকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে হুজুর ওকে বাঁধা দেয় তাই অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে।
–কেনো এসেছো?
–আমার রিদকে নিয়ে যেতে।
–ও রিদ না,ও মিলি।তোমার ভুলের জন্য এই মেয়েটার জীবন নষ্ট হতে যাচ্ছে।আর সাথে ওর পুরো পরিবার।তুমি চলে যাও।তোমার যা লাগে তাই দেওয়া হবে।
–আমার রিদকে লাগবে।ওকে নিয়েই আমি চলে যাবো।আর কখনো আসবো না, সত্যি বলছি।আর ওই আমার রিদ।
–না তুমি ওকে নিতে পারবে না।অন্য যা লাগে তুমি চাইতে পারো।
–আমার ওকেই চাই,সব কিছুর বিনিময়ে।
অনেক তর্ক বিতর্কের পর ইহানকে তাড়াতে সক্ষম হলেন হুজুর।যাওয়ার আগে ইহান অনেক কেদেছিলো,হুজুরকে অনেক অনুনয় করেছিলো কিন্তু তিনি ওর কথা কিছুই শুনেন না।মিলি ইহানের কান্না শুনে কাদতে কাদতে নিজের জ্ঞান হারায়।চোখ খুলে দেখে ওর ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে আর চারপাশে মা বাবা ওকে ঘিরে বসে আছে,সাথে ওর দাদু,মামাকেও চিনতে পারলো।মিলি বুঝতে পারলো না এতক্ষণ কি ও স্বপ্ন দেখছিল নাকি সত্যিই তেমনটাই হয়েছে।কিন্তু তখনি নিজের ডান হাতে কিছু একটার আঘাত অনুভব করলো।বাম হাতে স্পর্শ করতেই দেখলো ওর হাতে একটা ছোটো মতো তাবিজ খুব শক্ত করে বাধা আছে।মিলিকে চোখ খুলতে দেখে আর তাবিজে হাত দিতে দেখে ওর ওর বাবা ওকে ব্যাস্ত ভাবে উঠিয়ে বসালো।মিলির পুরো মাথা খুব ভারী হয়ে আছে,অনেক কষ্টে বসতে পারলো।
–এখন ঠিক আছো মামুনি?
মিলি মাথা নাড়লো।ওর দিকে সবাই উদ্বেগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মিলি অনেক কষ্টে তাবিজটা ধরে ওদের বুঝাতে সক্ষম হলো যে এটা কি?
–এটা হুজুর তোমায় দিয়েছে।সবসময় সাথে রাখবে,ভুলেও হারিয়ে ফেলবে না কিন্তু।খুব গুরুত্বপূর্ন জিনিস এটা।(খুব সতর্কতার সাথে)
মিলি বললো বুঝতে পারলো না এটা কি এমন গুরুত্বপূর্ন জিনিস হতে পারে কিন্তু হুজুরের কথা শুনেই ওর কেমন মুখ শুকিয়ে গেলো।তাহলে কি যা যা এতক্ষণ দেখলো সবটা বাস্তবে ছিলো??মিলি ছলছল চোখে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,
–ইহান!
কেউ শুনতে পেলো না ওর এই কথা।সবাই ওকে খাওয়াতে আর সেবা করে তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।মিলির মাথায় কিচ্ছু কাজ করছে না।১০০ টা দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। ইহান কি তবে এই আসবে না? ইহান এমনভাবে কেনো কান্না করলো? ইহানকে এতটা অসহায় হতে কখনো দেখেনি মিলি।কিন্তু সেই কান্না আর ওই ব্যাপারগুলো যে সত্যি,বাস্তব এইটা মেনে নিতেই ওর মন সায় দিচ্ছে না।
***
ইহান বাচ্চাদের মতো কান্না করছে হাউমাউ করে আর ছাড়া পেতে চাইছে কিন্তু রিমাদ ওকে সর্বশক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে।অবশেষে চেষ্টা রেখে ক্লান্ত হয়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়লো ইহান।মাটিতে বসে কান্না করতে লাগলো।ওর কান্না দেখে রিমাদ আর রোজাও কান্না করছে।
–আমায় আমার রিদকে এনে দে।আমি কেনো সেখানে যেতে পারছি না।
–ইহান প্লিজ তুই এমন বাচ্চাদের মতো করিস না।বুঝার চেষ্টা কর ওরা প্রটেকশন নিয়েছে তাই তুই বা আমরা কেউ রিদের কাছে যেতে পারবো না যতক্ষণ না রিদ ওই তাবিজটা ফেলে দেয় নিজ থেকে।
রোজা আর রিমাদ অনেক শান্তনা দিয়েও কোনো সুবিধা হলো না।কিছুক্ষণ পর জ্বীন রাজ নিজে এলেন।
–আপনি তো কিছু একটা করুন।আপনার মেয়ে হয় সে।আপনি অন্তত চুপ করে থাকবেন না।
–আমারও কিছুই করার নেই।আমি তোমাকে এখন এই পরিস্থিতিতে একটাই উপদেশ দিবো,”সৈন্যদের গড়ে তোলো। রিদের সব মনে পড়তে পারে আমি এমন একটা লক্ষণ দেখছি কিন্তু বছর খানেক সময় অবশ্যই লাগবে।ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো।”
–তাহলে তো সৈন্যদলকে প্রস্তুত করায় আমি কোনো কারণ দেখছি না!
–ভুলে যেও না ইহান, রিদের সব মনে পড়তেই একটা বিশাল যুদ্ধ হতে যাচ্ছে।আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।আর আপাতত আমরা পৃথিবীতে গিয়ে রিদের উপর নজর রাখতে পারবো না তাই এখান থেকেই রাখতে হবে।
***
মিলি প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে কারণ ও প্রতিদিন রাতেই ইহানের কান্নার আওয়াজ শুনে মাঝরাতে ভয় পেয়ে কাদতে কাদতে ঘুম ভাঙ্গে।এভাবে চলতে চলতে ওর অবস্থার অবনতি হতে থাকে আর ইহান নিজেকে সারাদিন ব্যাস্ত রাখে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে।
মিলিকে ডাক্তার দেখিয়ে উন্নতি এই হয়েছে যে এখন ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে পারে কিন্তু প্রতিদিনই প্রায় সেই স্বপ্ন দেখে আর ইহানকে মনে পড়ে।এখন ও কিছু কিছু বুঝতে পারে যে কে ছিল ইহান?কেই বা ছিল রুশা।কারণ সেইদিনের পর থেকে আর কোনোদিন রুশা আর ইহানকে দেখতে পায় নি মিলি।ওদের অস্তিত্বই খুঁজে পায় নি কোথাও আর নাই বা পেয়েছে ঠিকানা।মিলি অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায় নি।
মিলির এইবার ৮ বছর চলছে। ইহান আগের মতো আর উৎফুল্ল নেই।সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থেকে কাজ শেষে তন্ময়ী-র পাড়ে এসে বসে থাকে আর দিন গুনতে থাকে।মিলি এইবার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলে কিন্তু অস্বাভাবিক একটা জিনিস রয়েই গেছে আর সেটা হলো সেই অদ্ভুদ স্বপ্নটা।এই স্বপ্নটার জন্য মিলি চাইলেও ভুলতে পারে না ইহানকে।অপেক্ষা করতে থাকে ওর সবচেয়ে প্রিয় এই বন্ধুটি হয়ত আবারো ফিরে আসবে,ওর সাথে খেলা করবে,দুজন মিলে ঘুরতে যাবে।
জ্বীন রাজের মতে বয়সের দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার আগে কোনো কিছুই মনে পড়ার সম্ভবনা নেই।কিন্তু ইহান ঠিক বুঝতে পারলো না উনার কথাটা। বয়সের দ্বিতীয় ধাপ মানে কি?
–বয়সের দ্বিতীয় ধাপ নিশ্চই কৈশোর।শৈশবের পরেই তো কৈশোর। রিদের এখন ৯ বছর ছুঁইছুঁই তাই কৈশোরের আর বেশি দূরে নেই।অযথা দুশ্চিন্তা না করে আমাদের সাথে একটু ঠিক করে কথাও তো বলতে পারিস?প্রেমিকা গুরুত্বপূর্ন এবং সবচেয়ে প্রিয় তাই বলে কি বন্ধুত্বের দাম নেই?
–ওর আমাদের সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। চল আমরা যাই।(রোজা)
রোজা আর রিমাদ চলে যেতে উদ্যত হলে ইহান ওদের পেছন ডাকে।ওরা পেছন ফিরতেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।৩ বন্ধু একই সাথে গলা জড়িয়ে কাদতে লাগলো। ইহান কাদতে কাদতে বললো,
–তোরা আমার কাছে সব রে।তোরা না থাকলে রিদকে আমি কখনো ফিরে পেতাম না,কোনো সম্ভাবনাই থাকতো না। রিদকে যতটুকু চাই, তোদেরও চাই।আমি তোদের সত্যি অনেক ভালোবাসি বন্ধুরা।
–আমরাও।
চলবে””””
#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_১২
#হাফসা_ইরিন_রাথি
মিলির ১০ বছরের জন্মদিনে ইহানকে যেকোনোভাবে উপস্তিত থাকতে হবে কারণ ও মিলিকে কথা দিয়েছিল ১০ বছর পূর্ণ হলে নিজের বাড়িতে ঘুরতে নিয়ে আসবে আর মিলিকে দেওয়া কথা ফেলতে পারবে না কিছুতেই ও।কিন্তু কিভাবে কি করবে ও কিছুই ঠিক করতে পারছে না তাই ওর বন্ধুদের ডেকেছে এই বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য। ইহান এখন তন্ময়ীর পাড়ে বসে আছে আর পানিতে ঢিল ছুড়ছে।হঠাৎ পেছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো,
–আমি তোমায় সাহায্য করবো।
ইহান পেছন ফিরে দেখলো সাফিয়া দাড়িয়ে আছে।সাফিয়া হলো অলিভারের ছোটো বোন যে কিনা সেই রিদের জ্বীন রাজ্যে থাকাকালীন সময় থেকেই ইহানকে পছন্দ করে বিয়ের জন্য পিড়াপিড়ি করে আসছে।ওদের পারিবারিক ভাবে বিয়েও ঠিক ছিল কারণ সাফিয়ার বাবা আর রিদের বাবা দুজন বন্ধু ছিলো।এতদিন পর সাফিয়াকে দেখে চমকে গেলো ইহান।কিন্তু পরমুহূর্তেই মনের মধ্যে থাকা প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকলো।
–তুমি??তুমি এখানে কি করো?তোমার সাহস তো কম নয়! এখান থেকে চলে যাও বলছি।
–আমি তোমাকে সাহায্যই করতে চাইছি।ভেবে দেখো।
–যাও এখান থেকে।(জোরে চিৎকার করে)
–ঠিক আছে আমি যাচ্ছি কিন্তু তোমার প্রয়োজন হলে আমার নাম ধরে ডেকো।
এই কথাটা বলে ইহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেলো সাফিয়া।সাফিয়া যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই রুশা আর রিমাদ এলো। ইহান ওদের দুজনকে পুরোটা খুলে বললো সাফিয়ার কথাগুলো।কিন্তু তখনো রেগে ওর চেহারা লাল হয়ে আছে।
–ইহান তুই শান্ত হ।শান্ত হয়ে ভাব,ওরা কিন্তু আমাদের উপকার করতেই চাচ্ছে।
–ওরা আমাদের শত্রু,উপকার কিভাবে…….দাড়া দাড়া,ওরা মানে?আমি তো শুধু সাফিয়ার কথা বলছিলাম।তার মানে কি………
–হ্যাঁ তুই যা ভাবছিস সেটাই।সাফিয়া নিজ থেকে এখানে আসে নি,ওর বাবা বা ভাই কেউ ওকে পাঠিয়েছে রিদকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সাহায্য করতে।আর ওরা এটা কেনো চাইছে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছিস।
ইহান অনেকক্ষন চিন্তা করে দেখলো রিমাদ আর রোজা ঠিকই বলছে।
–তাহলে এখন আমায় কি করতে বলিস?প্লিজ সাজেস্ট কর,আমি পাগল হয়ে গেছি মনে হয়।আমার মাথা একদম কাজ করতেছে না।
–কি আর করবি?সিম্পল তুই সাফিয়াকে নাম ধরে ডাকবি,ও যেমনটা বলেছে।
–হুম তাই হোক।
ইহান সাফিয়ার নাম ধরে একটা ডাক দিতে না দিতেই সে এসে হাজির।এমন মনে হলো যে ও এখানেই কোথাও লুকিয়ে ছিল। ইহান ওর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে সাফিয়া হাসলো কিন্তু ওর হাসি দেখে যেনো ইহানের গা জ্বলছে। রিমাদ বুঝতে পেরে ইহানের কাধে একটা হাত রেখে ওকে শান্ত করলো। ইহান কিছু বলছে না দেখে রোজা বললো,
–তুমি কিভাবে আমাদের সাহায্য করবে?বলো?
–আমি তো তোমাদের সাহায্য করবো না,আমার ইহানকে সাহায্য করবো।
ইহান রেগে গিয়ে বললো,
–তোমার ঐ নোংরা মুখে আমার নাম নিবে না বলে দিলাম।
–ইহান শান্ত হ।
তুমি কিভাবে সাহায্য করবে সেটা বলো,এতো ভনিতা করা ভালো লাগছে না কারো।
–আচ্ছা শুনো তবে।
আমার হাতে এই যে জিনিসটা দেখছো এটা দিয়ে তুমি এখানে থেকেও একবার রিদের স্বপ্নে যেতে পারবে বা ওর মনে তোমার ইচ্ছেমতো কোনো চিন্তা সৃষ্টি করতে পারবে।বাকিটা তোমরা বুঝে নিও,আমি এখন যাই।
ইহানের হাতে ছোট্ট একটা কালো কুচকুচে বড় ধরনের বীজের মতো জিনিস দিয়ে সাফিয়া অদৃশ্য হয়ে গেলো। ইহান,রোজা আর রিমাদ সেটা ভালো করে দেখতে লাগলো।
***
আজ মিলির ৯ বছরের জন্মদিন আজকে।প্রতিবারের মতোই বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব এসেছে আর মা কাজে ব্যাস্ত।কিন্তু মিলির কিছুই ভালো লাগছে না।জন্মদিনের এতো এতো গিফটের মধ্যে অনেক কিছুই আছে।খেলনা,পুতুল,এমনকি অনেক সুন্দর জামা আর দামী গিফটও আছে কিন্তু মিলির কেবলই মনে হচ্ছে ৫ বর্ষিয়া জন্মদিনে ইহানের কাছ থেকে পাওয়া সেই কৃষ্ণচূড়ার কথা!যেটা ইহান এটে দিয়েছিল ওর চুলের মধ্যে।অতি সাধারণ কিন্তু তবুও অসাধারণত্ব বহন করে চলেছে যেনো সেই স্মৃতি।
মিলির প্রতিদিনই মনে হয় হাতে বাধা এই তাবিজটা খুলে ফেলে কিন্তু সুনিশ্চিত জানে না যে এটা খুললে আদো কি হবে বা হতে চলেছে তাই কিছুই করার মনস্থির করতে পারছে না কিন্তু ইহানের মতো ভালো আর বিশ্বস্ত বন্ধুকে ভুলে থাকা অসম্ভব প্রায়।মিলির প্রায়ই মনে মনে কোনো এক অটুট বন্ধন যেনো শত শত বছর ধরে ওদের মধ্যে আছে,চলমান__কিন্তু সব ঝাপসা আর রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা যেনো।
মিলি এখন প্রতীক্ষায় আছে ওর ১০ বর্ষীয় জন্মদিনের,কারণ ইহান ওকে কথা দিয়েছিল ১০ বছর পূর্ণ হলেই মিলিকে তার বাসায় নিয়ে যাবে।আর মিলি জানে ইহান ওকে দেওয়া কথার কখনই খেলাপ করবে না,যেভাবেই হোক আসবেই আসবে।
মিলি এখন ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ স্টুডেন্ট।সবার পেছনের সেই বেঞ্চটায় একাকী চুপ করে বসে থাকে যেটায় ইহান আর ও সবসময় বসতো।যতো দিন যাচ্ছে ততো কৈশোরের দিকে পা বাড়াচ্ছে আর ততই ভেতরের অনুভূতিগুলো স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।
প্রকৃতি কখনোই কারো জন্য নিজের বৈশিষ্ট্য বিসর্জন দেয় না,সে আপন মনে চলতে থাকে আর এভাবেই কেটে যায় দিনের পর সপ্তাহ তারপর মাস আর বছর।ঘুরে ফিরে আরেকটা বছর কেটে যাবার পথে।কিন্তু মিলির মনে হচ্ছে ও যেনো আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে না,যেনো ও আগেই বড় ছিল।শারীরিকভাবে বড় হচ্ছে কিন্তু মানসিকভাবে যেনো আগেই এতটা বড় ছিল।চিন্তা গুলো আগের মতোই শুধু একটু পরিবর্তন আর সেটা হলো এখন ইহানের প্রতি অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে যেটা অনেকটা দুর্বোধ্য,ঠিক যেনো বন্ধুত্ব না তার চেয়ে বেশি।
***
মিলির ১০ বছর পূর্ণ হতে এখনো একটা মাস বাকি তাই মিলি ঠিক করলো এবার আর কোনো অবহেলা বা ভয় না করে একাই যাবে সেই হুজুরের সাথে দেখা করতে।যেমন ভাবা তেমন কাজ।আজ সোমবার সকাল ৯ টার দিকেই বাসা থেকে প্রাইভেটে যাবার নাম করে বেরিয়ে গেলো।এখন আর ও ছোট নেই।বয়সন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তনে নিজেকে বড় মনে হয় সবার।যাওয়ার সময় ব্যাগে করে বোরকা নিয়ে গেছিলো আর সেটাই বাসা থেকে বেরিয়ে একটা পার্লারে গিয়ে পরে নিলো তারপর রওনা হলো হুজুরের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
যদিও সাহস সঞ্চার করে যাচ্ছে কিন্তু যতই এগোচ্ছে ততই কেমন যেনো একটা অস্বস্তি আর অশুভ কিছুর আশঙ্কা বাড়ছে।কিন্তু নিজেকে এই বলে শান্তনা দিচ্ছে যে আমাকে পারতেই হবে নিজের অস্তিত্বের জন্য।মিলির কেনো যেনো সব কিছু কেমন পর পর মনে হয়।পৃথিবীটা ওর কাছে বড় অজানা মনে হয়,মনে হয় যেনো এটা আমার স্থান না কিন্তু ও তো এখানেই জন্মেছে!মাঝে মাঝে নিজের চিন্তাগুলোকে ও কেমন অদ্ভুদ আর দুর্বোধ্য ঠেকে,মনে হয় সব কিছুই কোনো একটা ঘন রহস্যের কুয়াশায় চাপা পড়ে আছে যার উত্তর ওর অজানা,মনে হয় এগুলো যেনো ওর মধ্যে থেকে অন্য একজন চিন্তা করিয়ে নিচ্ছে।সব অজানাকে বুকে চেপে এভাবে থাকা অসম্ভব যন্ত্রণার হয়ে দাড়িয়েছে।আজ হয়তো কোনো একটা কিছু হবেই হবে এমনটাই মনে হচ্ছে ওর।
মিলি হুজুরের বাড়িতে চলে এলো।আজ ও একটা সমাধান বের করেই ছাড়বে এমনটাই বলছে মন।বাসায় ঢুকতেই একজন লোক এসে ওকে বসতে বলে চলে গেলো।প্রায় ১৫ মিনিট বসে থাকার পর হুজুর আসলেন।মিলি উঠে দাড়ালো তারপর সালাম দিলো।
–তুমি তোমার হাতের তাবিজটা সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলতে এসেছো তাই তো মা?
মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে হুজুর মুচকি হেসে বললো,
–আমার পালিত জ্বীনরা আমায় সব বলেছে।
মিলি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–আমি কি এই তাবিজটা খুলে ফেললে ইহানের সাথে দেখা করতে পারবো আবারো?
প্রশ্নের জবাবের জন্য উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো হুজুরের মুখের দিকে।হুজুর ওর এমনভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে মুখের হাসিটা বজায় রেখেই বললো,
–হুম পারবে কিন্তু খুব কঠিন সিদ্ধান্ত এটা।ভালো করে ভেবে দেখবে যে তুমি এটা খুলে ইহানের কাছে যেতে চাও নাকি এখানেই ইহানকে ছাড়া বাবা মার কাছে থাকতে চাও।মনে রাখবে তোমার বাবা মা তোমায় অনেক ভালোবাসে।
মিলির মন খারাপ হয়ে গেলো মা বাবার কথা শুনে কিন্তু তবুও ওর চাই ই চাই ইহানের সাথে দেখা করা।মন খারাপের ধকলটা কাটিয়ে উঠে বললো,
–আমি বাসায় গিয়ে ভেবে দেখবো।কিন্তু তাবিজটা কি করতে হবে?
–এটা খুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে বা নদীতে ফেলে দেবে।কিন্তু খুব সতর্ক থাকবে,তোমার আশেপাশে অনেক কিছু আছে হয়তো অদৃশ্য, হয়তো তোমার ক্ষতি করতে চায়।
–আমার ক্ষতি করতে চায়? কারা?
হুজুর কিছুই বললেন না শুধু একটু হাসলেন।মিলি বুঝলো উনি কিছুই বলতে চান না তাই সালাম দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হুজুর বলে উঠলো,
–খোদার মর্জি কে বুঝতে পারে!
মিলি সেখান থেকে দ্রুত বাসায় ফেরার জন্য গাড়িতে উঠলো।বাসার কাছে এসে কি মনে করে মোড়ের দোকান থেকে একটা গ্যাস লাইটার কিনে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।মিলির মনে এখন অনেক চিন্তা।বাসায় গিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।মালিহা বেগম অনেক প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পেলেন না।তিনি এসবে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন কারণ যেদিন থেকে উনারা মিলিকে নিয়ে হুজুরের বাড়ি থেকে এসেছেন সেদিন থেকেই মিলি কেমন যেনো হয়ে গেছে। কারো সাথেই ঠিক মতো কথা বলে না,রাতে চিৎকার করে উঠতো প্রতিদিনই যদিও এখন তেমন হয় না।কেমন যেনো চুপচাপ আর একাকী থাকে সবসময়।মালিহা বেগমের মাঝে মাঝে মনে হয় উনার মেয়ে বুঝি ৯ বছর না,একটা ২০ বছরের মেয়ে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে গেলেন উনি কারণ উনার জানা আছে মিলির দরজায় এখন যতই ধাক্কাধাক্কি করুক সে দরজা খুলবে না।
মিলি এসেই বিছানায় শুয়ে হুজুরের কথাগুলো ভাবতে লাগলো।
–”কে আমার ক্ষতি করবে?অদৃশ্য তো শুধুমাত্র ইহানেই আমি হতে দেখেছি!আর কে থাকতে পারে?
হুজুরই বা এতো সহজে আমায় তাবিজ নষ্ট করার উপায় বলে দিলো কেনো?কি কারণে?
সব কেমন রহস্য মনে হচ্ছে মিলির কাছে।
চলবে”””
(ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)