রহস্যের_কুয়াশা☠️ #পর্ব_৫,০৬

0
238

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_৫,০৬
#হাফসা_ইরিন_রাথি
০৫

এইবারের মতো ইহানের আর কিছু করতে হয় নি।মালিহা বেগম নিজেই ভয়ে আর হুজুরের স্মরনাপন্ন হওয়ার কথা চিন্তা করেন নি আর নিজের হাসব্যান্ডকেও করতে দেন নি।দিনকাল বেশ যাচ্ছে মিলির।
আজ বুধবার।আজকের ক্লাস শেষ করেই মিলির স্কুলের ঈদের ছুটি,শুধু মিলির না সব সরকারি স্কুলেরই। ইহান প্রতিদিনই মিলির সাথে স্কুলে আসে কিন্তু মিলির পাশে কাউকে বসতে দেখলেই তার ভালো লাগে না আর সে যদি হয় ছেলে তাহলে তো কথাই নেই,যদিও ছেলে মেয়ে আলাদা বসার ব্যবস্থা এখানে।
–ইহান,তুমি আমার পাশে বসতে পারবে না।তুমি ছেলে তাই ছেলেদের সাথে গিয়ে বসো বুঝলে।

–এটা কেমন কথা হলো?

–এটাই ঠিক কথা হলো।আমি এখন অনেকটুকু বড় হয়ে গেছি তাই তোমার সাথে বসতে আমার লজ্জা করে,হাহাহা।

–৫ বছর হতে এখনো তোমার মাসখানেক বাকি আছে বুঝলে।
মিলি কিছু একটা বলতে নিচ্ছিলো তখনি কোথা থেকে ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল এসে ওকে বললো,
–এই তুমি একা একা কার সাথে কথা বলছো?পাগল নাকি তুমি?
মেয়েটার কথা শুনে মিলির কপাল কুঁচকে এলো রাগে কিন্তু তার আগেই ইহান ওর পা দিয়ে মেয়েটার পা খুব জোরে মাড়িয়ে দিলো আর মেয়েটা ব্যাথায় পায়ে হাত দিয়ে বসে পড়লো।মিলি ইহানের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মেয়েটা বুঝতে পারছে না মিলি কার দিকে তাকিয়ে হাসছে তাই ব্যাথা ভুলে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে দৌড়ে পালালো।আসলে স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই এই মেয়েটা মিলির পেছন লেগে আছে ওকে ডিস্টার্ব করার জন্য।ওর নাম তমা।মিলি আসার আগ পর্যন্ত তমাই ছিল ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল কিন্তু অল্প কিছুদিনেই সব স্যার ম্যামদের মন জয় করে আর পড়াশুনাতে ভালো কর্তৃত্ব দেখিয়ে এখন ক্লাসের টপ স্টুডেন্ট হিসেবে সবার কাছে খুব আদরের মিলি।কিন্তু টপ স্টুডেন্ট হবার পরও মিলি সবসময় লাস্ট বেঞ্চে একা বসে কারণ ওর পাশে ইহান বসে সবসময়।এখন এইটুকু মিলি খুব ভালই বুঝে যে ইহানকে ও বাদে আর কেউ দেখতে পায় না।তাই আজ ইহানকে রাগ করে ছেলেদের সাথে বসার কথা বলেছিল।
–দেখলে তো আমি না থাকলে কি হতো??

–কি আর হতো??আমি এই তমাকে একটা পাঞ্চ মরলেই ও অজ্ঞান হয়ে পড়তো বুঝেছো?

–হুম খুউউব বুঝেছি।যেই না একটা শুটকির মতো মানুষ তুমি তুমি কিনা ওই মুটকির সাথে পারবা।হাহাহা
মিলি ইহানের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। ইহানের জন্য স্কুলে আসা অব্দি ওর ভালো কোনো বন্ধুও হয় নি তাই ইহানের উপর ভীষণ রকমের রেগে আছে ও। ইহান বুঝতে পারলো মিলির রাগের কারণ তাই একটু চিন্তা করার জন্য আপাতত এখান থেকে চলে গেলো।মিলি পাশ ফিরে ইহানকে না দেখতে পেয়ে খুঁজতে লাগলো।
••••••••••••♦•••••••••••••
–লুকিয়ে না থেকে সামনে আয়।
বাতাসে মধ্যে থেকে হঠাৎ একটা ২৫ বছরের মতো সুদর্শন যুবক বেরিয়ে এলো হাসি মুখে।
–তুই কিভাবে বুঝে যাস বলতো??

–আমি আমাদের জাতির অস্তিত্বটা খুব ভালই টের পাই।

–হুম বুঝলাম।তবে শুধু আমাদের জাতির না,সব জাতির অস্তিত্বই তুই টের পাস।

–হবে হয়ত।আমি এখন অনেক পাল্টে গেছি রে রিমাদ।আমার রিদকে হারানোর পর থেকে আমি অন্যরকম হয়ে গেছি।

–হারাস নি তো।সে তো তোর কাছেই আছে।শুধু একটুখানি তফাৎ।
রিমাদের কথায় ইহান অন্যমনস্ক হয়ে “হু” বললো।

–কি ভাবছিস এখানে একা একা বসে??

–রিদের কথা।

–কেনো কি হয়েছে আবার??

–আমি রিদের আশপাশে থাকতে চাই,ওকে খুশি দেখতে চাই,ওকে সবকিছু মনে করাতে চাই।কিন্তু রিদ আজ খুব মন খারাপ করে ছিল আমার জন্য ও কারো সাথে মিশতে পারে না বলে।আমি বুঝতে পারছিনা আমি কি করবো।

–ইহান ভালোবাসা হওয়া উচিৎ মুক্ত,স্বাধীন আর হালকা।ভালোবাসা যদি বোঝা হয়ে যায় তাহলে সেটা বিষাক্ত হয়ে যাবে। রিদকে তুই মুক্তভাবে থাকতে দে।ও যেনো তোকে বোঝা না ভাবে আর যদি এখনই এমন হয়ে যায়,তুই ওর বোঝা হয়ে যাস তাহলে যে জ্বীনরাজের বলা অনুযায়ী সব ভেস্তে যাবে।তোর এতদিনের পরিশ্রম, স্বপ্ন আর ভালোবাসাও।
আমি এখন যাচ্ছি।আমায় রোজা ডাকছে।
ইহান মাথা নিচু করে বসে রইলো আর রীমাদ অদৃশ্য হয়ে গেলো। ইহান ভাবতে লাগলো, সত্যিই তো রিমাদ তো ঠিকই বলেছে। ইহান যেই কাজের জন্য এতো কিছু করছে সব তো নষ্ট হয়ে যাবে।না কিছুতেই হতে পারে না সেটা। রিদকে মানিয়ে নিতেই হবে ওর।
ইহান অনেকক্ষন ভেবে চিন্তে অবশেষে কিছু একটা মাথায় আসতেই মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
–হ্যাঁ এতেই কাজ হবে।
এতক্ষণ ও একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের উপর বসে ছিল।এইবার গাছ থেকে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতেই খেয়াল করলো গাছটাকে।বাহ্,গাছটা দেখি বেশ সুন্দর দেখতে!আসলে দুশ্চিন্তায় থাকায় আমরা আশেপাশের সৌন্দর্য গুলো অনুভব করতেই ভুলে যাই।সাধারণ এই গাছে কতো সৌন্দর্য অপেক্ষা করছে অথচ ইহান কিনা মিলিকে নিয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর জায়গাই খুঁজে পায় না।মনে মনে ঠিক করে নিলো এর পরেরবার মিলিকে নিয়ে এখানেই আসবে।
ইহান তাড়াতাড়ি মিলির ক্লাসের চলে এলো।কিন্তু আসতেই মাথাটা রাগে গজগজ করতেছে মিলিকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে। ইহান দৌড়ে মিলির আর ছেলেটার মধ্যেখানে গিয়ে দাড়ালো।মিলি ওকে দেখে একটা হাসি দিলো কিন্তু সামনে থাকা ছেলেটা ইহানকে দেখতে না পাওয়ায় সে ভাবলো মিলি তাকে দেখেই এতো সুন্দর করে হাসলো।তাই সেও আরেকটা হাসি দিলো।ছেলেটার হাসির আওয়াজ শুনে ইহান পেছন ফিরে ব্রু কুচকে তাকিয়ে ছেলেটাকে বললো,
–এই যে কালো গরু,তোরে দেইখ্যা ও হাসে নি যে তুই হাসি ফিরত দিচ্ছিস।
ইহানের কথা শুনে মিলি মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে। ইহান মিলিকে হাত ধরে টেনে বেঞ্চে এনে বসালো তারপর নিজেও ওর পাশে বসলো।ছেলেটা এখনো সেখানেই বোকার মতো দাড়িয়ে আছে কারণ সে মিলির হাসার কারণ বুঝতে পারেনি আর নাই বা পেরেছে এভাবে চলে যাওয়ার কারণ বুঝতে।
–ইহান তুমি কোথায় গিয়েছিলে??তোমায় আমি কতো খুঁজলাম পেলাম না।

–তার আগে বলো ওই কালো গরুর সাথে তুমি কি এমন কথা বলছিলে??

–কালো গরু কেনো বলছো তুমি ওকে??তুমি দেখছো না ও কতো ফর্সা,তোমার চেয়েও বেশি।
ও আমায় পড়া জিজ্ঞেস করছিলো।ও তো ক্লাসের খুব ভালো একটা ছাত্র আর আমিও ভালো ছাত্রী তাই কাল আসতে না পারায় আমায় পড়াগুলো জিজ্ঞেস করছিলো।
ইহান মিলির মুখে ওই ছেলেটার প্রশংসা শুনে আরো জেলাস হতে লাগলো।ছেলেটাকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথাও মনে মনে ঠিক করে একটা শয়তানি হাসি দিলো।আর এখন ওর এতক্ষণের পরিকল্পনাটা বাস্তবে রূপ দেবার কথা আরো বেশি মনে পড়তে থাকলো।ভাবলো এটা সম্পর্কে আপাতত মিলিকে কিছুই বলবে না,কালকে একেবারেই সারপ্রাইজ দিবে।
–হাসছো কেনো তুমি??

–কিছু না।আমি আসছি।তুমি এখন যেখানে খুশি বসতে পারো কারণ আমি এখন তোমার সাথে বসবো না।
কথাটা এমন রহস্যজনকভাবে ইহান বললো যে মিলি কিছুই বুঝতে পারলো না কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই ইহান সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো।মিলি আর সাত পাঁচ না ভেবে সামনের একটা বেঞ্চে চলে গেলো।সেখানে বসা একটা মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো।মিলিও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আরেকটা হাসি দিলো।মিলি এই মেয়েটাকে আর ক্লাসে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।তবে আশ্চর্য কিছুই হলো না কারণ ইহানের সাথে খেলা করতে করতে অন্যান্য দিকে ওর তেমন খেয়ালই থাকে না। প্রথম পরিচয়েই মেয়েটার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো মিলির।ওর বেশ ভালোই লাগছে কারন ইহান বাদে আজ অব্দি আর কোনো বন্ধু ওর ছিল না। মেয়েটার নাম হলো রুশা।মিলিকে রুশা একসময় হাসতে প্রশ্ন করলো,
–মিলি তুমি কার সাথে একা একা কথা বলো??সবাই বলে তুমি নাকি মানুষ না,ভূত।
মিলি এইবার বুঝতে পারলো যে কেনো কেউ ওর সাথে মিশতে চায় না,ওকে দেখলেই অনেকে পালায়।তাদের চেহারা দেখে মনে হয় খুব ভয় পাচ্ছে।
–তুমি তাহলে আমার সাথে কথা বলছো কেনো??তোমার কি ভয় লাগছে না??
মিলির কথায় রুশা একটু হাসলো আর তেমন কিছুই বললো না।মিলির কাছে কেমন যেনো রহস্য ঠেকলো রুশার হাসিটা।
••••••••••♦••••••••••••
আজ ছুটির পর একা একা বাসায় ফিরতে মিলির অনেক বেগ পোহাতে হচ্ছে।প্রতিদিন ইহান সাথে থাকে বলে দুজন গল্প আর ঝগড়া করতে করতেই চলে যায় কিন্তু আজ ইহান সেই যে গেছে আর আসে নি এর মধ্যে। ইহান মিলির এমন মনমরা ভাব দেখে খুব মজা পাচ্ছে।ও মিলির সাথেই আছে কিন্তু অদৃশ্য হয়ে যা মিলিও দেখতে পারছে না।ক্লাসের সময় চলে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ছুটির পর পরই মিলিকে নেবার জন্য আবার স্কুলে চলে এসেছে ও। ইহান জানে রোজা ঠিকই সামলে নিয়েছে মিলিকে!!প্রথম প্রথম মিলির মা আসতো ওকে নিতে কিন্তু মিলি নিজেই বারণ করেছে যে ও একাই ফিরতে পারবে আর বাসা থেকে স্কুলের দূরত্বও তেমন না মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটা পথ তাই মালিহা বেগমও তেমন আপত্তি জানান নি।আর উনার এমনিতেই মিতুকে নিয়ে আর বাসার কাজ নিয়ে খুব ঝামেলা।একটা রিক্সা অবশ্য ঠিক করা আছে মিলিকে নেবার আর আনার জন্য কিন্তু মিলি হেঁটেই যেতে পছন্দ করে।আজও হাঁটছে একা একা।
বাসায় এসেই ধপাস করে শুয়ে পড়লো বিছানায়।আজ খুব ক্লান্ত লাগছে তবে রুশার সাথে সময় ভালই কেটেছিলো ক্লাসে।আবার অনেকদিন পর যাবে স্কুলে কারণ ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ছুটি শুরু।
–কি কেমন লাগছে এখন??
ইহানের কণ্ঠ শুনে চমকে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো ইহান ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
–খুব ভালো লাগছে।তোমায় ছাড়াও আমি বেশ চলতে পারি,দেখেছো তো।আজ আমার একটা ভালো বন্ধুও হয়েছে।তোমার সাথে আজ থেকে আরি।
কথাটা বলেই মুখ ভেংচালো মিলি। ইহান ওর কাজ দেখে হাসতে লাগলো। ইহানের হাসির মানে বুঝতেই পারে না মিলি।অযথা অকারণে কেনো যে পাগলের মতো হাসে ইহান!
–কাল স্কুলে যাবে না??

–আজ থেকে তো ঈদের ছুটি!

–কিহ্!!

–জ্বী
মিলির কথাটা শুনে ইহান হতাশ হলো তারপর চুপচাপ বসে রইলো।কতো কি ঠিক করেছিল কালকে করার জন্য!! রোজাটাও ওকে কিচ্ছু জানালো না দেখে তার উপরেই সব রাগটা আসছে।

চলবে””””

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_৬
#হাফসা_ইরিন_রাথি
ঈদের ছুটি আর কদিন তাও আবার কোরবানির ঈদের! কোথা দিয়ে যে এলো আর গেলো টেরই পাওয়া গেলো না।কিন্তু ইহান,মিলি,মিতু আর রুশা খুব মজা করেছে এইবার। রুশাকে মিলিই ঈদের দাওয়াত দিয়েছিল কিন্তু সে কিভাবে যে ওর বাসা চিনে এলো সেটা মিলির অজানা।সকালেই মিলিকে নিয়ে রুশা মালিহা বেগমের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাসার পাশের পার্কে গিয়েছিল ঘুরতে।জায়গাটা কাছেই তাই মায়ের পরিশ্রম কমাতে মিতুকেও সাথে করে নিয়ে যায় মিলি।মিতুর বয়স এখন বছর ৩,হাটতে পারে আর একটু একটু কথাও বলতে পারে।মিতুর হাত ধরে রুশা একটু সামনে হাটছে।মিলি ভাবছে রুশা কি ইহানকে দেখতে পাচ্ছে কি না?মিলি একটু পেছনে টেনে নিয়ে গেলো ইহানকে।তারপর ফিসফিসিয়ে বললো,
–তোমায় কি রুশা দেখতে পাচ্ছে ইহান??
ইহান তখন একটা আপেল খাচ্ছিলো,খেতে খেতেই বললো,
–হুম পায় তো।আমরা দুজন তো অনেক আগের বন্ধু!
মিলি খুব অবাক হলো।তাহলে ইহান আর রুশা একে অন্যকে চেনে!মিলি আবারো প্রশ্ন করলো,
–আচ্ছা রুশাও কি তোমার মতো ম্যাজিক জানে??
ইহান দাঁত কেলিয়ে মিলির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।মিলির মনটাই খারাপ হয়ে গেলো কারণ ইহান, রুশা দুজনেই ম্যাজিক জানে অথচ সে জানে না।




আজ ঈদের পর প্রথম ক্লাস।মিলির কদিন ক্লাস করতে না করতেই একটা মায়া জন্মে গেছে ক্লাসের প্রতি।আজ যেহেতু অনেকদিন পর ক্লাস তাই খুব খুশি ও আর তাড়াতাড়ি রওনা দেবার কথা ভাবলো।কিন্তু ইহানের কোনো খোঁজ নেই।সে কোথায় যে আছে!মিলি অনেকক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছে,সেই সকাল থেকে।ঘুমানোর আগেও ওর পাশেই ছিল ইহান,এমনকি ঘুমানো অব্দিও ছিল কিন্তু সকাল থেকেই সে লাপাত্তা।
মিলির ক্লাস ১০ টায়।৯:০০ টা বাজতেই স্কুলে যাবার জন্য রেডী হতে লাগলো।হঠাৎ দরজায় কলিংবেল পড়ায় দৌড়ে গেলো দরজা খুলতে।যদিও ইহান কখনো দরজায় বেল দিয়ে আসে না তবুও ইহান হতে পারে ভেবেই দরজা খুলতে গেলো মিলি।কিন্তু দরজা খুলে আশাহত হলো কারণ এটা ইহান না, রুশা!মালিহা বেগম কিচেন থেকে বললো,
–কে রে এলো মিলি??

–মা, রুশা এসেছে।

–আচ্ছা রুশাকে ভেতরে এনে বসতে বল।আমি তোদের খাবার দিচ্ছি।
মিলি রুশাকে টেনে ভেতরে এনে সোফায় বসিয়ে ওর দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
–ইহানকে তুমি দেখেছো কোথাও??ও কোথায় বলতে পারো?

–ওর তো এখানেই থাকার কথা ছিল।আমি জানিনা,আমায় তো কিছু বলে নি।
মিলি মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে দেখে রুশা মনে মনে হাসল,
–”একটুও পাল্টাস নি তুই রিদ!!”
তারপর ওকে খুশি করতে বললো,
–আমার মনে হয় স্কুলে গেলেই সে ঠিক চলে আসবে।তুমি দুশ্চিন্তা করিও না।
মিলিও একটা হাসি দিলো ওর দিকে তাকিয়ে।দুজন মিলে কিছুক্ষন গল্প করার পর খাবার খেয়ে স্কুলের জন্য চলে গেলো।মিলির আশা স্কুলে গিয়েই ইহানকে দেখতে পাবে তাই জোরে জোরে পা চালাচ্ছে!কিন্তু স্কুলে এসেও পেলো না তাকে।ক্লাস আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে।মিলি, রুশা আর আরেকটা মেয়ে একসাথে বসে আছে সামনের বেঞ্চে। স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন সাথে একটা ছেলে। স্যার সবার সাথে ছেলেটাকে পরিচয় করিয়ে দিতে বললেন,
–মাই ডিয়ার স্টুডেন্টস,তোমাদের জন্য একটা নতুন বন্ধু নিয়ে এসেছি।দেখো পছন্দ হয় কিনা?
সবাই দেখলো ছেলেটিকে।একটা ৬ বছরের মতো বয়সি বাচ্চা ছেলে,খুবই কিউট প্রকৃতির বাচ্চা কিন্তু মুখে অদ্ভুদ সুন্দর একটা হাসি লেগেই আছে।মিলি এতক্ষণে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অবাক!
–ইহান!!!
ইহান মিলির দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে নিজের পরিচয় দিলো,
–হাই,আমি ইহান কিফায়েত।তোমাদের সবার নতুন বন্ধু।আমি মিরপুর ১ এর বাসিন্ধা।
ইহান মিলির আর রুশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একটা ছেলের পাশে গিয়ে বসলো।
–রুশা, ইহান আমাদের ক্লাসে কি করে??ও কি আমাদের সাথে পড়বে নাকি??আর ওকে সবাই দেখতে পাচ্ছে যে!!

–হুম হয়ত পড়বে,তাই তো মনে হচ্ছে।
ছুটির পর ইহান মিলির জন্য গেটের সামনে অপেক্ষা করছিলো তখন সেইদিনর ছেলেটাকে দেখতে পায় যে কিনা মিলির সাথে কথা বলছিল আর মিলি তার প্রশংসা করেছিল।
–”আমার থেকেও বেশি ফর্সা তাইনা??দাড়াও তোমার ব্যাবস্থা আমি করছি কালো গরু।”
ইহান হাতে একটা তুড়ি বাজতেই ছেলেটা নিচে পড়ে গেলো আর তার মুখে লেপ্টে গেলো কলমের কালি।আসলে পাশেই নিচে একটা নষ্ট কালি বের হওয়া কলম কেউ ফেলে রেখেছিল। ইহান ছেলেটার থেকে বেশ দূরে আছে আর সেখান থেকেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মিলি রুম থেকে বেরিয়ে ছেলেটার এমন অবস্থা দেখে ওকে উঠতে সাহায্য করলো। ইহান খুব রেগে গেলো মিলির কাজে।তাড়াতাড়ি করে তার সামনে গিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে গেটের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
–তোমার এতো দরদ উথলে উঠে কেনো ওই পোলার জন্য??দেখলে তো ওর মুখের কি সুন্দর রং হয়েছে।তুমি ওইদিন বলছিলা না আমার চেয়েও ফর্সা??হাহাহা।

–তার মানে তুমি এমনটা করছো ওর সাথে??

–হুম

–তুমি নিজের ম্যাজিক দিয়ে অন্যের অপকার করো।আমি তোমার সাথে কথাই বলবো না।যাও
মিলি গাল ফুলিয়ে আগে আগে চলে যেতে লাগলো। ইহানকে কতো কি জিজ্ঞেস করবে ভাবছিল, কতো খুঁজার পর ক্লাসে এসে পেলো আর এখন কিনা কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলো না। ইহান ম্যাজিক দিয়ে আরেকজনের ক্ষতি করবে সেটা মেনে নিবে না মিলি।ম্যাজিক ভালো জিনিষ,ভালো কাজে লাগবে,,,,,,সেটায় ক্ষতি কেনো করবে??
–আরে রিদ শুনো তো।এমন করিও না।আমি আর এমন করবো না সত্যি বলছি।

–পাক্কা তো??

–হুম যাও পাক্কা।

–তাহলে এইবার বলো তুমি আমাদের সাথে একই ক্লাশে কি করো??তুমিও কি পড়াশুনো করবা নাকি??

–হুম করবো।তুমি ওইদিন বলছিলা তোমার সাথে বসতে দিবা না তাই আমি ঠিক করেছি আমিও পড়বো তাহলেই আমারও একটা সিট থাকবে,অন্তত তোমার চাটাং চাটাং কথা শুনতে হবে না, হুহ
••••••••••••••♦•••••••••••••••
–আর কতদিন সময় লাগবে??

–সবে তো অপেক্ষা শুরু। রিদকে পাওয়া এতো সহজ হবে না তোমার পক্ষে।

–আমি আর পারছিনা।আমার চোখের সামনে আছে আমার রিদ অথচ, অথচ আমি কিচ্ছু করতে পারছি না।কেনো করলেন আপনি এমনটা??অন্যায় করেছেন আপনি আমাদের সাথে!

–শান্ত হও ইহান!আমি জানি আমি অন্যায় করেছি কিন্তু আমার কাছে এখন এর কোনো সমাধান নেই।তোমায় অপেক্ষা করতেই হবে।
তোমার চোখের সামনে ও আছে এটাই কি অনেক নয়??
ইহান নিজেকে শান্ত করলো চোখ বন্ধ করে তারপর আস্তে করে বললো,
–হুম এটাই অনেক আমার কাছে। বেয়াদবি মার্জনা করবেন।আমি আমার রিদকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবো,আশা ছাড়বো না আমি।আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার প্রার্থনা শুনবেন।

–তাই যেনো হয়।

–আপনি সেই বিজটাকে সংরক্ষিত জায়গায় রাখবেন দয়া করে।আমি ওকে আবারো হারাতে চাই না।

–সেসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।তোমার মতো আমিও ওকে ফিরে চাই।আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে এটা।
ইহান আর দেরি না করে জ্বীনরাজকে সালাম দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
••••••••••••••••♦•••••••••••••••••
–তুই গিয়েছিলি জ্বীনরাজ্যে??

–হুম।

–কি বললো জ্বীনরাজ??

–অপেক্ষা!

–রোজা আমায় বললো তুই নাকি রিদের সাথে একই ক্লাশে ভর্তি হয়েছিস??

–হুম রোজা ঠিকই বলেছে।ওর একার পক্ষে রিদের উপর নজর রাখা সম্ভব হবে না,আমি না থাকলে আর তাছাড়া আমি আমার রিদকে চোখের সামনে হাসি খুশি দেখতে চাই।ওর ওইদিন মন খারাপ হয়েছিল তাই আমি রোজাকে ওর খেয়াল রাখার জন্য পাঠাই।নিজেও ওকে চোখের সামনে দেখতে চাই,আশপাশে থাকতে চাই তাই ক্লাসে ভর্তি হওয়াই উপযোগী মনে হলো।

–তুই আমার চেয়ে অনেক ভালো বুঝিস।আমার বিশ্বাস তুই সব বুঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস।

হঠাৎ কি মনে হতেই চাপা কষ্ট নিয়ে ইহান রিমাদকে বললো,
–আচ্ছা সেদিন যুদ্ধের সময় কেনো রিদ ভালোবাসাকে বাদ দিয়ে নিজের রক্তের জন্য যুদ্ধ করলো বলতো??সেদিনের ঘটনাটার জন্যই আজ এমন ভুগতে হচ্ছে আমায়!

–শুধু তোকে না, তাকেও ভুগতে হচ্ছে।আর আমাদের সবাইকেও।নিজের দায়িত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে দুটানায় পড়ে গিয়েছিল ও।দায়িত্বকে আগে স্থান দিয়েছিল। হয়ত ওর জায়গায় তুই থাকলেও একই কাজ করতি।
ইহান আর কিচ্ছু না বলে অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি সামলালো।নাহ্,ও আর ভাবতে পারছে না।চিন্তা করতে চায় না অভিশপ্ত সেই অতীতকে নিয়ে!এখন একটাই লক্ষ্য ওর, একটাই। রিদ,সেটা হলো ওর রিদ।

•••••••••••••♦•••••••••••••••
–চলো রিদ আজ তোমায় একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবো।

–কোথায়??

–আরে চলোই না,গেলেই দেখতে পাবে।তোমার খুব পছন্দ হবে দেখিও।

–মা তো এখন ঘুমাতে বললো!

–তুমি দরজাটা বন্ধ করে চলো।আমরা গেলে তোমার মা টেরও পাবে না।
মিলি এখন আলাদা রুমে ঘুমায়।একটা বিছানায় মালিহা বেগম,জারিফ সাহেব,মিলি আর মিতু ৪ জন খুব সমস্যা হয় বলেই মিলি আলাদা ঘুমানোর কথা বলেছে ওর মাকে।যদিও প্রথমে রাজি হয় নি কিন্তু এখন অনেকদিন হবার পর আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কতক্ষন ওকে শুইয়ে রেখে ঘুম পাড়িয়ে চলে যান তিনি।যদিও মিলি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকে,মিলি ইহানকে ছাড়া ঘুমায় না,যতক্ষণ পর্যন্ত না ইহান মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তাই এখন ওরা ঘুরতে গেলে ওর মা জানতেও পারবে না ও বাসায় আছে কিনা।মিলি চুপিচুপি উঠে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
–এইবার চলো।
ইহান মিলির হাত ধরে ওকে চোখ বন্ধ করতে বললো।মিলি চোখ খুলে দেখলো একটা গছের উপর বসে দোল খাচ্ছে।
–বাহ্,এটা কি গাছ ইহান??

–কৃষ্ণচূড়া!
ইহান গাছ থেকে এক থোকা ফুল নিয়ে মিলির হাতে দিলো।মিলি ফুলগুলো হতে নিয়ে খুব খুশি হয়ে দেখতে লাগলো।
–পছন্দ হয়েছে??

–হুম,খুউউব।কতো সুন্দর লাল টুকটুকে ফুলগুলো।আমার খুব খুব খুব ভালো লাগছে ইহান।
লাল টুকটুকে রক্ত কৃষ্ণচূডার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আর ইহান ওর হাসি মাখা মুখটা দেখতে লাগলো।

চলবে””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here