রহস্যের_কুয়াশা☠️ #পর্ব_৭,০৮

0
189

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_৭,০৮
#হাফসা_ইরিন_রাথি
০৭

মিলির ৫ বছরের জন্মদিন আজ।তাই বাসায় অনেক অতিথি সমাগম ঘটেছে।মিলির কিছু বন্ধু বান্ধব সহ ইহান আর রুশাকেও ইনভাইট করা হয়েছে।মিলি একটা সাদা পার্টি গাউন পরেছে।মিলি নিজের রুমে বসে চুল আচড়াচ্ছিলো আর পাশেই বসে রুশা আর ২ টি মেয়ে।মালিহা বেগম ব্যাস্ততার কারণে মিলিকে সাজানোর দিকে মনোযোগ দিতে পারছেন না। ইহান একটু দূরে একটা সোফায় বসে চুপচাপ গালে হাত দিয়ে মিলিকে লক্ষ্য করছে।
–থামো।
ইহানের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো।কিন্তু ইহান সেসবে ক্রুক্ষেপ না করে মিলি সামনে গিয়ে ওকে হাত ধরে টেনে বাসার বাইরে নিয়ে চললো।
–কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
ইহান মিলিকে সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে নিয়ে এলো।
–এখানেই দাড়াও
মিলি গাছের নিচে দাড়ালে ইহান একটু পরই ওর সামনে চলে এলো হাতে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া। ইহান মিষ্টি করে একটু হেসে ফুলটা মিলির মাথার বেনের সাথে সুন্দর করে আটকে দিলো।
–চলো এইবার ফিরা যাক।
মিলি মাথায় হাত দিয়ে ফুলটা দেখে তারপর নাচতে নাচতে ইহানের সাথে বাসায় ফিরে চললো।
সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটে গেলো।মিলির ৫ম তম জন্মবার্ষিকী অবশেষে শেষ। ইহানকে আলাদা করে চিনতে পারে নি মিলির বাবা মা কারণ অন্যান্য বন্ধুদের সাথেই একজন ধরে নিয়েছিল।মিলি এখন বিছানায় শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে আর ওর পাশেই ইহান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মিলি চোখ পিটপিট করে খুললো একটু।
–এই ঘুমাও বলছি।নাহলে মাইর দিবো কিন্তু।

–ঘুম আসছে না যে।আমায় গল্প শুনাও প্লিজ।নাহলে আমার ঘুম আসবে না যে।

–আচ্ছা শুনো তবে।
মিলি শোনার প্রস্তুতি নিতে ইহানের আরো কাছ ঘেষে শুয়ে পড়লো। ইহান বলতে লাগলো………

সেটা প্রায় অনেক অনেক দিন আগের কথা।একটা রাজ্যে পরীর মতো সুন্দরী একটা রাজকন্যা ছিল।সে ছিল যেমন সাহসী,বুদ্ধিমতী আর তেমনই যুদ্ধা।রাজকন্যা ছিল রাজার একমাত্র কন্যা।তিনি তার কোনো ছেলে সন্তানের থেকেও বেশি ভালবাসতেন মেয়েকে। তাই রাজকন্যার মাঝে কোনো কিছুর কমতি তিনি রাখেন নি।সব কাজে, শিক্ষায় দীক্ষায় আর রণ কৌশলে তার কাছে হেরে যেতো রাজ্যের সবচেয়ে বিদ্বান বা যুদ্ধাও।রাজকন্যার রূপের জন্য অনেকেই তার জন্য পাগল ছিল কিন্তু ওর সাথে বুদ্ধির খেলায় জিততে পারেনি কেউ।তাই সবাইকেই নিরাশ হতে হয়।রাজকন্যাদের রাজ্যের সবচেয়ে বড় শত্রুরাজ্য ছিল রাজা আহামের রাজ্য।রাজা আহাম চাচ্ছিলেন রাজা সোলাইমান(রাজকন্যার বাবার নাম)
এর রাজ্যকে লুট করে আত্মসাৎ করতে।তিনি অনেক গোপন গুপ্তচর নিয়োগ করেছিলেন রাজা সোলাইমানের রাজ্যের অবস্থা জানার জন্য।তার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা ছিল রাজকন্যা।কারণ রাজকন্যা একাই কয়েকজন ভালো যুদ্ধার সমতুল্য ছিল।কিন্তু সমস্যা হলো কেউই রাজকন্যার ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না।কোনো গুপ্তচর সাহস করছে না তার কাছে যাওয়ার বা তার উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার।অনেক করেও যখন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না তখন রাজার ছেলে নিজে রাজকন্যার উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার দায়িত্ব নিতে চাইলেন।
যথারীতি সাধারণ মানুষের বেশভূষায় বেরিয়ে গেলো রাজপুত্র।তাকে দেখে এখন কেউ বুঝার অবকাশ পাবে না যে সে একজন রাজপুত্র।রাজপুত্র ইতিপূর্বে আর কখনো রাজকন্যাকে দেখেনি তাই কিন্তু একজনের খবর অনুযায়ী সকাল ৯ টা নাগাদ রাজকন্যা সাঁতার কাটতে আর গোছল করতে ঝিলে আসেন।তাই তিনি সেখানেই একটা পাগলের মতো বেশ ধরে বসে রইলেন।
রাজপুত্র প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর দেখতে পেলেন একটা সুন্দর ঘোড়া উড়ে আসছে।ঘোড়াটা থামতেই সেখান থেকে নেমে এলো রাজকন্যা নিজে।একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরিহিত মেয়ে বেরিয়ে এলো।শাড়ির রঙের সাথে গায়ের রং মিলে একাকার।এতদিন শুধু রাজকন্যার সাহসিকতা আর রূপ সমন্ধে শুনেই এসেছে রাজপুত্র কিন্তু আজ সচক্ষে দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
–এই এখানে একটা ছেলে কি করছে??আমি এই সময় আসবো তোমরা জানতে না??
তার সাথে থাকা মেয়ে দুটো পাগল বেশী রাজপুত্রের কাছে ছুটে গেলো ওকে তাড়াতে।
–এখানে কি করছেন? যান এখান থেকে।
কিন্তু পাগল তাদের কথায় উঠার কোনো লক্ষণ না দেখিয়ে পাগলামি করেই যাচ্ছে।রাজকন্যা কখনো ছেলে সৈন্য রাখে না সাথে তাই দাসীরা পারছিল না পাগলটাকে তাড়াতে।অনেক চেষ্টা করার পর রাজকন্যার ভীষণ মায়া হলো এই শুকনো চেহারার পাগল লোকটাকে দেখে।রাজকন্যা অনেক কঠোর হলেও তার মনটা ছিল অনেক দয়ালু।
–থাক থাক একে আর তাড়াতে হবে না।বেচারা পাগল,কি আর হবে বসে থাকলে। তার চেয়ে বরং তোমরা গাড়ি থেকে কিছু ফল মূল আর খাবার এনে ওকে দাও,ও খাক।আমরাও গোসল করি।
দাসিগুলো তাই করলো।কিছু ফল আর খাবার এনে রাজপুত্রর সামনে দিয়ে দিলো।রাজকন্যা লোকটার সামনে এসে মিষ্টি করে একটু হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘাটে চলে গেলো।
রাজপুত্র তো এতক্ষণে তার ভুবন মোহিনী হাসি দেখে দুনিয়া সব ভুলে গেছে।সে কেনো এসেছিল,কি তার কাজ,তার বাবা তার তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে এসব তার কিচ্ছু মাথায় নেই।শুধু আছে একটা জিনিস সেটা হলো এই হাসি!!
রাজপুত্র খাবার সামনে নিয়ে বসে বসে রাজকন্যার সাতার কাটা দেখতে লাগলো।ওর চুলগুলো পানিতে সাপের মতোই চলছিল।এতো সুন্দর সোনালী চুল আর কখনো দেখেনি সে।



মিলি ঘুমিয়ে গেছে মনে হওয়ায় ইহান মিলিকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
–ঘুমিয়ে পড়েছো??
কিন্তু মিলির কোনো সাড়া নেই। ইহান একটা দীর্ঘশ্বাস অনেক কষ্টে আটকে মিলিকে কপালে চুমু খেলো তারপর জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো।আজ অনেকদিন পর খুব মনে পড়ছে অতীতের দিনগুলোকে।যদিও প্রতিনিয়ত মনে পড়ে কিন্তু আজকের মনে পড়ায় সব কিছু যেনো স্পষ্ট,চোখের সামনের ভেসে উঠা ছবি।
সকাল হতেই আবার স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো মিলি–ইহান।আজকে স্কুলে একটা প্রতিযোগিতা হবে ক্লাসের ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে।
–তোমার কি মনে হয় রিদ??

–কোন ব্যাপারে??

–কে জিতবে প্রতিযোগিতায়??ছেলে নাকি মেয়ে??

–সেটা জানিনা তবে আমি জিতবো।

–ওরে বাবা খুব কনফিডেন্ট দেখছি।ওকে দেখা যাবে যে জিতে।আজ তো আমিই জিতবো,যেভাবেই হোক।

–ওকে দেখিও।
ক্লাস শুরু হলো। স্যার চলে এসেছেন।এখন প্রতিযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে।
–মাই ডিয়ার স্টুডেন্টস,আজকের প্রতিযোগিতাটা হবে তোমাদের IQ,কথা বলার ধরন,আরো কিছু যোগ্যতার উপর নির্ভর করে।এটার কারণটা হলো এই বছর সব সরকারি স্কুলের একদম ছোটো যেই ব্যাচ মানে ক্লাস ওয়ান,তাদের উপর যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা যাচাই করে তাদের বিভিন্ন পুরষ্কার দেবার ব্যাবস্থা করেছে সরকার।এখানে ৬৪ টি জেলা থেকে মোট ১০ জন স্টুডেন্ট পুরিস্কার টা পাবে।আগে স্কুল ভিত্তিক যাচাই করে ৩ জন নেওয়া হবে তার পর তাদের আবার অন্যান্য স্কুলের সাথে কম্পিটিশন করতে হবে।এভাবে করতে করতে ১০ জন যারা টিকবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।যদিও তোমাদের মতো ছোট বাচ্চাদের জন্য ব্যাপারটা কঠিন আর জটিল মনে হচ্ছে কিন্তু সরকার চায় শিক্ষার্থীদের পারিবারিকভাবে কতটা গুরুত্ব সহকারে শিখানো হয় সেটা দেখতে।আর ছোটো বয়স থেকেই উৎসাহিত করতে তাদের।তাই তোমাদের সবার এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
চলো এইবার শুরু করা যাক…

আমি একটা প্রশ্ন করবো।প্রশ্নের জবাব যারা জানো তারা হাত তুলবা,কেউ আগেই বলবা না।আমি সবাইকেই উত্তর জিজ্ঞেস করবো।তোমাদের মধ্যে যার বা যাদের উত্তর আমার কাছে বেশি সুন্দর, গুছালো আর বুদ্ধিদীপ্ত মনে হবে সেই জিতবে।ওকে??

–yes,স্যার

–প্রথম প্রশ্ন,
একটা sentecnce (বাক্য)আর একটা phrase(খণ্ড বাক্য) এর মধ্যে পার্থক্য কি??
প্রায় ১০ জনের বেশি স্টুডেন্ট হাত তুললো কিন্তু। ইহান ইংলিশ বইটার উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করলো তারপর ওর মুখে একটা হাসি ফুটলো।কিন্তু তাকিয়ে দেখলো রিদ হাত তুলে নি।তার মানে রিদ এটার উত্তর জানে না।জানার কথাও না সেটা ইহান অনুমান করতে পারে কারণ এসব সম্পর্কে ওর নিজেরও জ্ঞান নেই কিন্তু এই মাত্রই বই থেকে সব জেনে নিয়েছে তাই সবটা ওর ব্রেইনে সেট হয়ে গেছে। ইহান রিদের দিকে তাকিয়ে হাসছে দেখে তার খুব রাগ হচ্ছে।পাশ ফিরে দেখে রুশাও হাত তুলেছে।সবাই হাত তুললো অথচ ও পারছে না ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে।প্রতিবার স্যাররা কোনো প্রশ্ন করলে ওর মনে হয় জিনিসটা কোথায় যেনো পড়েছে আগেও তাই উত্তর ফটাফট দিয়ে দেয় কিন্তু আজকের পড়াটা কিছুতেই মাথায় আসছে না হাজার চেষ্টায়ও না।

স্যার একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন এখন ইহানের পালা।
–sentence হলো একটা subject,verb আর object এর সমন্বিত পরিপূর্ণ বাক্য যে নিজেই নিজের অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম।আর phrase হলো কোনো নির্দিষ্ট subject,verb বা object ছাড়া একটা খন্ড বাক্য।খন্ড বাক্য অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজে কখনো কোনো অর্থবোধক বাক্য তৈরি করতে পারে না।খণ্ড বাক্য নিজেকে প্রকাশ করতে অন্যের উপর নির্ভরশীল।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো খণ্ড বাক্যে subject বাobject থাকে না কিন্তু sentece এর দুটি অবশ্যম্ভাবী উপাদানই হলো এই subject &object.
ইহান এতো সুন্দর করে হাত নেড়ে নেড়ে কথাগুলো বুঝলো যে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ওকে দেখতে লাগলো।স্যাররা যেভাবে বাচ্চাদের বুঝায় সেভাবেই ইহান এখন ওর টিচারকে বুঝলো।মিলি অবশ্য হিংসায় মুখ বাকালো ওর এমন ভালো করে বুঝাতে পারার ক্ষমতা দেখে।

চলবে””””””

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_৮
#হাফসা_ইরিন_রাথি
ক্লাস ভিত্তিক ৩ জনের মধ্যে মিলি আর ইহানের সাথে আরেকটা মেয়েও নির্বাচিত হলো।মিলি প্রথমের প্রশ্নগুলোর উত্তর না জানলেও পরেরগুলোর উত্তর খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছিল।
–তোমাদের ৩ জনকে ১ মাস পর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে।ভালো মতো প্রস্তুতি নিও।

আস্তে আস্তে দিন কেটে যাচ্ছিলো।মিলি ইংরেজিটা ভালো করে আয়ত্বে আনলো যাতে প্রতিযোগিতার দিন সমস্যায় না পড়তে হয়।ওর ইংরেজি বাদে মুটামুটি সব বিষয়েই ভালো অভিজ্ঞতা আছে।আর ইহান? ইহান নিজে তো পড়াশুনো করেই না সারাদিন মিলিকে জ্বালায়।
–হ্যাঁ পড় পড় ভালো করে পড়।দেখলে তো তোমার ঐ কালো গরুটা কিভাবে একটা প্রশ্নের জবাবও দিতে পারলো না?

–তুমি শুধু নাফিদের পেছনে লেগে থাকো কেনো বলোতো?আজাইরা।
এখন প্লিজ আমায় পড়তে দাও।আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে।

–কই আমি তো পড়ি না।তুমি এতো পড়ে কি করবা?

–আমি তো তোমার মতো ম্যাজিক জানি না যে চুরি করবো।

–এক্সকিউজ মি,আমি চুরি করি না বুঝলে।নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো,হুম
মালিহা বেগম চলে আসায় মিলির কথাটা মুখেই রয়ে গেলো। মেয়েকে সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে উনি ভীষণ খুশি হোন।মিলির জন্য চা করে এনে ওর সামনে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবার চলে গেলেন।উনার পেছন পেছন মিতুও এসেছে। ইহানকে মিতুকে কাছে ডাকলো।
–আমি মিতুকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি। রুশাও যাবে আমার সাথে।তুমি চাইলে আসতে পারো।

–নো,থ্যাঙ্কস।
মিলি এই বলে নিজের পড়া করতে লাগলো। ইহান ভীষণ বিরক্ত হলো ওর কাজে।সেইদিন ক্লাসে সিলেক্ট হবার পর থেকে শুধু বই নিয়েই পড়ে থাকে মিলি। সারাদিনে ইহানকে একটুও সময় দেয় না,ওর সাথে খেলে না,ঘুরতে যায় না। ইহান মন খারাপ করে মিলির দিকে ভেজা চোখে অপলক তাকিয়ে রইলো কতক্ষন।তারপর অদৃশ্য হয়ে গেলো সেখান থেকে।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
–ইহান তুই এখানে একা মন খারাপ করে বসে আছিস যে?(রিমাদ)

–আমার মনে হয় ও রিদের কোনো ব্যাপারে মন খারাপ করে আছে।(রোজা)

–কেনো কি হয়েছে আবার?
ইহান এইবার মাথা তুলে ওদের দিকে তাকালো।এই দুজন বন্ধুর উপর ও অনেক কৃতজ্ঞ।আপন ভাই বোন ও কারো জন্য এতটা করে না যতটা ওরা করেছে বা করছে।ওদের দিকে তাকিয়ে হাসার একটু ব্যার্থ চেষ্টা করলো ইহান।
–তেমন কিছু না।
(অন্যমনস্ক হয়ে)আমার বারবার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি পারবো না। রিদ হয়তো বা পুরোপুরি মানুষে পরিণত হয়ে যাবে রে।ওকে আমি পারছিনা সব কিছু থেকে দূরে রাখতে।ওর ১৬ বছর হবার আগেই আমায় যা করার করতে হবে।৫ বছর তো পেরিয়েই গেলো।আমার খুব ভয় হয়, পাছে আমি আমার রিদকে হারিয়ে না ফেলি।
ওকে স্বান্তনা দিতে রুশা ওর মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্বনার সুরে বললো,
–তুই চিন্তা করিস না দোস্ত।আমাদের সবার এতো চেষ্টা,এতো দোআ আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই আমাদের হতাশ করবেন না।

–আর সেদিন আমরা তো ভালোর পথেই ছিলাম, ন্যায়ের পথে।আমরা ঐ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আমাদের সমগ্র জ্বীন জাতিকে রক্ষা করেছি। রিদ যদি সেদিন শহীদ না হতো তাহলে আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো সমগ্র জ্বীন জাতি।তাই আমাদের এতদিনের সবার এতো প্রচেষ্টা কিছুতেই ব্যার্থ হতে পারে না,কিছুতেই না।

–কিন্তু রিদ এই পৃথিবীর দুনিয়াবি জিনিসের উপর এতই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে যে আমি ওকে এসবের থেকে দূরে রাখতেই পারছি না।ও নিজের ওই প্রতিযোগিতার জন্য সারাদিন বই নিয়েই পড়ে থাকে।এভাবে চলতে থাকলে তো সম্ভব না।আমি কিভাবে পারবো তাহলে।
রিমাদ দৃঢ় ও কঠিন গলায় ইহানকে দোষারোপ করে বললো,
–তোর জন্যই এসব হয়েছে।
ওর কথা শুনে ইহান চোখ বড় বড় করে বললো,
–আমার জন্য!!!

–হ্যাঁ তোর জন্যই।তুই স্কুলের ব্যাপারগুলোতে ওকে যেতে বাধ্য করেছিস।তুই কোন দরকারে ওইদিন ক্লাসে প্রশ্নের জবাব দিতে গেলি?তুই দিছস দেইখাই তো রিদ নিজেও তোর চেয়ে উপরে উঠার জন্য জিদ করেই এখন এতো পড়তেছে।স্কুলের ওই ছেলেদের ব্যাপারে তুই কেনো এতো সিন্সিটিভ?তুই কেনো ওই মোটা করে ছেলেটাকে মারতে গেলি ওইদিন?এসব করে তুই রিদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিস,তুই কি বুঝতে পারিস?
ইহান এতক্ষন মন দিয়ে রিমাদের কথাগুলো শুনছিল।ও ভেবে দেখলো রিমাদ ঠিকই বলেছে।ওর বাড়াবাড়ির জন্যই আজ রিদ জেদ ধরে পড়তেছে যাতে ও জিততে পারে। ইহান মনমরা হয়ে বললো,
–আমি কি করবো বল?ওর পাশে কাউকে আমি সহ্য করতে পারি না যে!ওই ছেলেটা ওর পেছনেই ঘুরঘুর করে শুধু।আর আমি তো প্রতিযোগিতার কথা বলেছিলাম যাতে করে রিদের সাথে একটু খুনসুটি করতে পারি কিন্তু ও যে নিজেকে বড় প্রমাণ করতে এমনভাবে বই নিয়ে পড়ে থাকবে আমি তো সেটা বুঝিনি!
রুশা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল ওদের দুজনের কথোপকথন।এইবার কথা না বলে পারলো না।
–রিদ তো বরাবরের জন্যই এমন ছিল।ও নিজেকে ছোটো ভাবতে পারে না।বস্তুত ওর মতো যোগ্যতা কারো ছিলোও না।
ইহান শূন্যে তাকিয়ে একটা অর্থহীন হাসি দিয়ে বললো,
–সব ছাড়লেও এই জিনিসটা রয়েই গেলো তোমার খাদিজাতুল রিদ!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
আজ ৩ দিন হলো মিলি ইহানকে দেখে না। ইহান সেদিন সেই যে গেছিলো আর আসেনি।এসেছে তবে মিলি দেখেনি।ও দূর থেকে মিলিকে দেখতো।মিলি এখন বই সামনে রেখে অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছে ইহানের কথা। ইহান দূর থেকে ওর এই অন্যমনস্ক ভাব দেখে কষ্ট পেলেও ঠিক করেছে ওর সামনে আসবে না।
–আমি তোমার সামনে আসতে পারছি না রিদ।আমায় ক্ষমা করো।তোমায় আমার গুরত্ব বুঝতে হবে।এভাবে যদি তুমি বুঝতে পারো!
স্কুল ২ দিন বন্ধ ছিল আজ খোলা। রুশার মোবাইল নাম্বার না থাকায় রুশাকেও কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারছে না ইহানের ব্যাপারে।এই রুশা অসময়ে চলে আসে অথচ এই প্রয়োজনের সময় তিনি লাপাত্তা!আসলে ইহান রুশাকে মানা করে দিয়েছে যাতে সে স্কুলে না যায় বা রিদের সাথে দেখা না করে।
মিলি স্কুলে গেলে কোনো একটা খবর নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে ভেবে আবার পড়ায় মন দিলো। ইহানের গুরত্ব এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারে নি ও।আগের মতো যদিও পড়তে পারে না, ইহানের কথা মনে হয়, ইহানকে মিস করে কিন্তু এখনো বই ভালই পড়ে আর সেজন্যই ইহান ওর সামনে আসে না।
রেডী হয়ে স্কুলে চলে গেলো কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হলো যখন কাউকেই পেলো না,না ইহানকে না রুশাকে।খুব খারাপ লাগতে লাগলো ওর কারণ এখন ও ঠিকই বুঝতে পারছে যে ইহানের সাথে ওইদিন ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা নাকচ করে দেওয়াতেই ইহান রাগ করে আসছে না।
এভাবে আরো ৪ টা দিন কেটে গেলো।মালিহা বেগম খেয়াল করতে লাগলেন মিলি এখন কেমন যেনো একটু মনমরা হয়ে থাকেন।আর আগের মতো বইও পড়ে না।মাঝে মাঝে উনি রুমে গেলে দেখেন বই সামনে নিয়ে কি যেনো ভাবছে অন্যমনস্ক হয়ে।এখন খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে খাওয়ার কোনো খবর নেই।
–কি হয়েছে মা?তোমার মন খারাপ কোনো কারণে?
মিলি মাথা নেড়ে না জানালো তারপর খাবার খেতে লাগলো।মালিহা বেগম ওকে ওই শিক্ষা প্রতিযোগিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন।মিলি কাটা কাটা কিছু উত্তর দিয়ে খাবারটা অর্ধেক শেষ করেই পেট ভরে গেছে বলে রুমে চলে গেলো।মালিহা বেগম বুঝতে পারেন না উনার এই মেয়েটার কোনো ভাবগতিক।মাঝে মাঝে ওকে স্বাভাবিক আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই মনে হয় আবার মাঝে মাঝেই মনে হয় খুব অস্বাভাবিক কিছু একটা আছে।মাঝে মাঝেই মিলি কেমন যেনো বড় হয়ে যায়!ওর বয়সের তুলনায় বড় মানুষের মতো আচরণ করে।এসব কিছুই এখন ওর পরিবার স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে যদিও,কিন্তু মাঝে মাঝেই খুব ভাবায় ব্যাপারগুলো উনাদের।মিলির আজকের ব্যবহারটা খুব অদ্ভুদ লাগলো ওর মায়ের কাছে।চিন্তিত হয়ে গেলেন উনি মিলিকে নিয়ে।

চলবে””””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here