রাকা,২,৩

0
1219

রাকা,২,৩
ফারজানা রহমান তৃনা
পার্ট-২

আমি যে স্কুলে যাচ্ছিনা এই বিষয়টা আব্বুর চোখ এড়ায়নি। আব্বু এখন আমাদের বাসার সর্বেসর্বা। একাধারে কর্তী-কর্তা দুটোই। তাই তার সবদিকেই খেয়াল থাকে। আমাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কেন স্কুলে যাচ্ছিনা, কেন ঘরকুনো হয়ে বসে থাকি সারাক্ষন, ইত্যাদি সব প্রশ্ন। আমি বলেছি, সামনে এক্সাম। ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই বাসায় বসে পড়াশোনা করছি। এভাবে ওভাবে অনেক বাহানা দিয়ে,বলে,বুঝিয়ে কোনোমতে চুপ করিয়ে রেখেছি।

ক্লাস সিক্সের ফাইনাল এক্সামে আমি ফেইল করেছিলাম। এমনিতেও ভালো করছিলাম না কোনো সেমিস্টারেই।
আসলে আমাদের পারিবারিক পরিবেশটা আর যাই হোক পড়াশোনার জন্য উপযোগী নয়। আমার রোল এক ছিলো ক্লাস সিক্সে। কিন্তু এক বিষয়ে ফেইল আসছিলো। তাই তারা বিশেষ বিবেচনায় আমাকে পাশ দিয়েছিলো। অবশ্য একটা এক্সাম হয়েছিলো আমার, অফিস কক্ষে। যে মেয়ের রোল ১, সে কেন ফেইল করবে এটার কারণ দর্শাতে। আমার হেডস্যার আমার দাদার খুব কাছের বন্ধু বলেই হয়তো সেটা আরো বেশি করে সম্ভব হয়েছে। আপন স্যারের ও কিছুটা অবদান আছে। স্যার মোটামুটি অনেক কিছুই জানতো যে কেন আমার এই দশা হয়েছিলো। সে বছরেই উনি ঐ স্কুলে জয়েন করেছিলো। হয়তো আমার ভাগ্যের টানেই।

ক্লাস ফাইভে আমি প্রথম বুঝতে পারি,
আমার আম্মু আর আমার আব্বুর সম্পর্কটা ঠিক ভালো যাচ্ছেনা।
অন্যদের বাবা-মায়ের মত আমার বাবা- মা নয়।
আমাদের বাসায় ঝগড়াটা প্রায় প্রতিদিনই হতো। আম্মু গ্রামের মেয়ে তাই অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতো। আব্বু শহরেই বড় হয়েছে তাই গালাগাল কম দিতো। আম্মু যখন গালিগালাজ করতো তখন আব্বুর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখলে আরো বেশি চটে যেত।
আর মাঝেমধ্যে কাঁদতো কেন যেন।
আব্বু শুধু রাগ করে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতো। কিছু বলতো না। আসলে আমি তখন খেয়াল করে দেখিনি আব্বু আসলে কি করতো তখন।
হয়তো তখন খেয়াল করলেই বুঝতাম, আমার আব্বুর ও কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে।

আমার পড়াশোনার বিষয়টা তারা দুজন মিলেই হ্যান্ডেল করতো। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির জন্য সেটা খুব ভালোভাবে যে চলতো, তা নয়। আমার টিউটর আমাকে দেখতো বলেই সেবার আমি কোনোমতে ভালোভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। আমার টিউটর মাস্টারের নামই আপন। তখন তিনি চাকরীর আবেদন করে ঝুলে ছিলেন,আমাদের স্কুলে এইতো সেদিনই জয়েন করেছেন। আপন স্যার থাকাকালীন ও আম্মু আব্বুর ঝগড়া শুরু হতো মাঝেমধ্যে। তখন স্যার জিজ্ঞেস করলে, আমিও পটপট করে সব বলে দিতাম। এতকিছু বুঝতাম না। এসব পারিবারিক বিষয় যে অন্য কাউকে বলতে নেই, সেই সেন্সটুকু তৈরী হয়নি তখনো। সে অনেক আগের কথা।

ক্লাস ফাইভের ঘটনা,
একদিন দেখলাম আব্বু আম্মুর ঝগড়া খুব বেশি গভীর হয়ে গেছে। তখন সন্ধ্যাবেলা। বোন আর আমি পড়ার টেবিলে। আমি আমার হোমওয়ার্ক করছিলাম। ঐ রুমে তুমুল ঝগড়া চলছে। ওসব দেখা,শোনার জন্য আগে দৌঁড়ে ছুটে যেতাম।
স্থির চোখে তাকিয়ে শুনতাম তাদের ঝগড়া।
আব্বু আমাদের দেখলেই বকা দিত। বলতো,
মা তোমরা এখানে কেন? যাও ভেতরে যাও। মায়ের থেকে এসব শিখতে হবে না।
তবুও যেতাম। আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনতাম।

বুঝতামই না,
হঠাৎ করে এসব কেন হচ্ছে।
আস্তে আস্তে বুঝে গেছি। রোজ রোজকার এইসব ঝগড়াফ্যাসাদ আর কত দেখবো, শুনবো?
সবই তো জানা, সবই মুখস্থ। কখন আম্মু কোন গালি দিবে সেটাও জানি। আব্বু কখন কি কি বলবে তাও জানি। রোজ এক জিনিস আর কত ভালো লাগে? না। ভালো লাগেনা। অসহ্য লাগে।
তাই চুপ করে বসে থাকতাম।

যেদিন রাতে তুমুল ঝগড়া লেগেছিলো তার পরেরদিনই আমার একটা ক্লাস টেস্ট ছিলো।
এত জোরে জোরে চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছিলো যে কোনোভাবেই পড়তে পারছিলাম না। তাই কানে আঙুল গুজে পড়ছিলাম জোরে জোরে।
অমন সময় শুনলাম, ঐ ঘর থেকে বিকট আওয়াজ আসছে। যেন জিনিসপত্র ভাঙচুর হচ্ছে ক্রমাগত।

আমি আর বসে থাকতে পারলাম না।
দৌঁড়ে গিয়ে ঐ রুমে গেলাম।
আপু দরজার পর্দার আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেখলাম, আব্বু আম্মুকে মারছে।
আমি যখন গেলাম তখন দেখলাম আব্বু আম্মুকে থাপ্পড় মারছিলো আর তার হাতে একটা লাঠি। এটা দেখে আমি প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাসই করে উঠতে পারছিলাম না, আব্বু কি আম্মুকে মারছে? আম্মু জোরে জোরেই কাঁদতেছিলো। আম্মু যত যাই করতো তবুও তাকেই তখন বেশি পছন্দ করতাম। আব্বুকে সামান্য ভয় পেতাম। দৌঁড়ে গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরছিলাম সেদিন। আব্বুর দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বলছিলাম,
– আব্বু তুমি এত পঁচা কেন? তুমি আমার আম্মুকে মারছো? লাঠি দিয়েও মারছো? তুমি আর কখনো আমাকে আদর করবানা আব্বু। কখনো না। তুমি একটা বাজে আব্বু।

আব্বু আমার দিকে অসহায়ের মত কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো। তারপর হাত থেকে লাঠি ফেলে দিয়ে শার্ট পরে বাইরে চলে গেছিলো সাথে সাথে।
আম্মু কিছুক্ষন কেঁদেকেটে আবার উঠে রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার আয়োজন করে।
আম্মু ভোজনরসিক। দুনিয়া তোলপাড় হয়ে যাক, তবুও তার খাওয়াটা ঠিক থাকতে হবে।
কিছুটা অমনই।
আম্মু যতক্ষন রান্নাবান্না করলো,ততক্ষন আমি বসে ছিলাম। পাহারা দিচ্ছিলাম, আম্মু কাঁদছে না তো? আম্মুর কষ্ট হচ্ছে না তো? আম্মুর কিছু চাই কিনা। কত কেয়ার করতাম আম্মুকে। আম্মু সেদিন ও সুন্দর করে রান্নাবান্না শেষ করলো। আপুকে ডেকে খেতে বসলেন। সবাই মিলে খেলাম। আব্বুকে ছাড়া আমি খেয়েছি এমন দিনের সংখ্যা কম। সেদিন জেদের বশত খেয়েছি।
আম্মু একদম স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। আব্বুকে ছাড়াই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আম্মু ঘুমাতে চলে গেলো। এরপর আপু আর আমি বসে থাকতাম পড়ার টেবিলে। কিছুই তো পড়া হয়নি। স্কুলে গিয়ে পড়া দিবো কিভাবে?

যেদিন ঝগড়া বেশি হতো সেদিন আব্বু বাসায় ফিরতো একটু রাত করে।
সে এসেই খাওয়া শেষ করে একবার আমাদের রুমে এসে আমাদের দেখে যেত,আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে চলে যেত। পরদিন সকালে আবার সব আগের মত।
সব স্বাভাবিক। আব্বুও স্বাভাবিক। আম্মুও স্বাভাবিক।

কিন্তু মারামারির ঘটনাটা ঐ একদিন হয়েই থেমে যায়নি।
এরপর থেকে বার বারই হয়েছে।
আব্বু আম্মুর গায়ে হাত তুলতো।
আমরা শুনতাম, দেখতাম।
কেন তুলতো, কেন এত বিদ্বেষ কিছুই বুঝতাম না। আম্মু কাঁদতো,কিছুই বলতো না আমাদের সামনে। আব্বুর প্রতি আস্তে আস্তে একটা ঘৃণা চলে আসতে লাগলো। ক্লাস ফাইভের পরীক্ষার পর তো অশান্তি আরো বেড়ে গেলো। তখন আর ঘরেই থাকা যেত না।

আগে তো শুধু আব্বুর গলার আওয়াজ পেতাম। কিছুদিন পর থেকে আম্মুও সমান তালে যোগ দিলো।
আব্বু বলতো,
– দুশ্চরিত্রা! বেয়াদব! কয়জন লাগে তোর? কী মনে করছোস আমি কিছু বুঝিনা?

আম্মু আরো এক ধাপ উঁচু গলা করে বলতো,
– আমার জীবনের চরম ভুল আপনারে বিয়ে করা বুঝলেন? চল্লিশ বছরের বুড়া! চরম ভুল করছি। আমার জীবন ধ্বংস করছেন আপনি।

আব্বু আবার বলতো,
– আমার জীবন না শুধু তুই আমার মেয়েদের জীবন ও ধ্বংস করছোস বেয়াদব। তোর মত বউ আমার শত্রু যে তার ও না হোক। অসভ্য, দুশ্চরিত্রা!
….চলতেই থাকে এভাবে।

ঝগড়া, অশান্তির পর আব্বু ব্যবসার কাজে চলে গেলে আম্মু দম-মুখ খিঁচে বসে থাকতো।
আমি ছোট ছিলাম। এটা ওটা চাইতে গেলে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাতো।
ভাত নিজে নিয়ে খেতে হতো।
কখনো বা আপুই বেড়ে দিতো।
তারপর নিজে ও খেত। আপু এমনিতেও খুব বেশি একটা কথা বলে না।

আমি মাছ খুঁটে খেতে পারতাম না।
তাই ভাতের থালা নিয়ে আম্মুর কাছে চলে যেতাম।
আম্মু নিজে অনেক আগেই খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকতো। টিভিতে সিরিয়াল দেখতো।
তাই আমি কোনো কিছু না ভেবেই আম্মুর কাছে চলে যেতাম, আম্মু খাইয়ে দিবে এই আশায়। কিন্তু আম্মু দিতো না। হঠাৎ করেই আম্মুর আমুল পরিবর্তন হয়ে গেছিলো। আম্মু আমাদের কোনো কাজই করতে চাইতোনা। আমাদের সাথে কেমন যেন বিরুপ আচরণ করতো।

একদিনের ঘটনা বলি।
আম্মুর কাছে গিয়ে “খাইয়ে দাও না আম্মু” বলতেই আম্মু বজ্রকণ্ঠে জানালো,
– এত বড় মাইয়্যা হইছো এখনো নিজের খাওনডাও খাইতে পারোনা? হইছো তো পুরা বাপের মতন। সবই পারো, কিন্তু করবানা। ঐ আমি আছিনা? তোমাগো মুনি-চাকরাণী।
আমি কাতর কণ্ঠে বলি,
– আম্মু মাছের কাটা হাতে লেগে যায়। পারিনা খেতে। এগুলা আমার ফেভারিট মাছ আম্মু। একটু খাইয়ে দাওনা। আচ্ছা আমি হোমওয়ার্ক করে দিবো তোমাকে।
আম্মু গলা উঁচায়ে বলে,
– তোর হোমওয়ার্ক করলে আমার কী? ঐ তুই দেখোস না আমি কাজ করতেছি? আমি এখন সারাদিন কাজ কাম কইর‍্যা টিভি দেখতে আসছি, এখন আবার তোরে নিয়া পইড়্যা থাকমু? আমারে শান্তি দিবিনা তোরা?
আম্মু তখন খুব ব্যস্ত।
সিরিয়াল দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
আমার গলায়,হাতে কাঁটা আটকাক, এতে কার কী? আমি চলে আসি।
সামান্য কারণে আম্মুর এত গরম বকাবকি শোনার কোনো মানে হয়না তো।

আপু যখন দেখে আমি আর পারছিই না, তখন নিজের খাবার ছেড়ে আমার থালা হাতে নেয়।
মাছ খুটে দিয়ে বড়ার মত করে বানিয়ে দিয়ে বলে, নে, এবার খা। এইবার পারবি তো? নাকি মুখে তুলে দিবো?
আমি হাসি হাসি মুখ করে খেয়ে নেই।
তানিশা আপু পড়াশোনায় অতটা ভালো না। এক ক্লাসে দুইবার থেকে থেকে সে এখন আমার এক বছরের সিনিয়র। এমনিতে বয়সের ক্ষেত্রে সে আমার সাড়ে তিন বছরের বড়। তবে পরিবেশ -প্রতিকুলতার খাতিরে সে একটু বেশিই বুঝদার। আমার আম্মু আমার আপুকে বেশি আদর করতো। কারণ আপু তার মনের মত। ও তো সব বুঝতো। তাই আম্মুর কাছাকাছি কম ঘেষতো,কম ঘাঁটতো। আম্মু যা বলতো তাই শিরোধার্য করে চলতো। এমন কিছুটা।

মাঝখানে আমিই ছিলাম সমস্যা।
আম্মু আমাকেই হয়তো ভালোবাসতো না।
মাঝেমধ্যে ভাবতাম,
আমি আমার আম্মুর মেয়েই তো?

আমি সারাক্ষন ভাবতাম, কখন আপন স্যার আসবে পড়াতে। ঐ সময়টুকুতেই আমি শান্তি পাই।
আমাদের বাসায় তখন আমার সমবয়সী কোনো ছেলে-মেয়ে ছিলো না। সব বড় বড়।
আমার খেলার সাথী বলতে শুধু আমার আপুই ছিলো। কিন্তু ও আমার সাথে খেলতো না।
ওকে ফোন কিনে দিয়েছিলো আম্মু। ওর বার্থডে গিফট হিসেবে। আব্বু রাজি ছিলো না তাই টাকা দেয়নি। তবে কেক এনে অনুষ্ঠান করেছিলো।
আম্মু তবুও কোথা থেকে যেন একটা ফোন এনে তুলে দিয়েছিলো আপুর হাতে।
ফলপ্রসূ, সে ওটা নিয়েই সারাক্ষন ব্যস্ত থাকতো।

আপন স্যার আমার মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে আমি বলে দিতাম।
স্যার আমার আম্মুকে ডেকে নিয়ে একদিন বলেছিলো,
– আপা, রাকা তো অনেক ছোট। বেচারি নিঃসঙ্গতায় ভুগছে। ওকে একটু সময় দিয়েন। এরকমভাবে অনেক বাচ্চারাই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আম্মু বলেছিলো,
– আপনার যা কাজ, তাই করেন দয়া করে। বাকিটা আমরাই দেখবো।
স্যার বলছিলো,
– বুঝলাম। কিন্তু একটা রিকুয়েস্ট, ওর সামনে আপনারা আপনাদের পারিবারিক অশান্তিগুলো করবেন না দয়া করে। মেয়েটা কষ্ট পায়।
– পারিবারিক অশান্তি বলতে? আম্মু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

স্যার কিছুটা ইনিয়েবিনিয়েই বলেছিলো,
– না মানে ঝগড়াঝাঁটিগুলো যদি একটু আড়ালে করতেন.. আসলে এটা বাচ্চাদের উপর খুব বাজেভাবে এফেক্ট ফেলে। জানেন ই তো।

আম্মু রেগে আগুন হয়ে চেয়ার থেকে উঠে বলেছিলো,
– এখন আমরা ফ্যামিলিতে কি করবো না করবো সব আপনি ঠিক করে দিবেন? বাচ্চা আপনার না আমার? আপনার যা কাজ তাই করেন। পড়াতে আসছেন, পড়ায়ে চলে যাবেন। আমাদের পারিবারিক বিষয়ে এত নাক গলাবেন না দয়া করে। বলে চলে গেলেন।

আমি টেবিলেই মাথা নিচু করে বসেছিলাম।
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলেন।
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছিলেন,
– ভালো করে পড়ো রাকা। তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। ফাইট কররে হবে সবকিছুর সাথে, হুম?
এসব দেখে মন খারাপ করবেনা একদম।

কথাগুলো বলে সে তার ব্যাগ থেকে একটা পুতুল বের করে দিয়ে বলেছিলো,
– এটা হচ্ছে আরেকটা রাকা। এখন থেকে এটার সাথেই খেলবে। আর আমি তো আসবোই। এবার আসি। বলে চলে গেলেন।

আমি পুতুল হাতে নিয়ে রুমে চলে যাই।
রুমে গিয়ে পুতুলটার পিছনে সাইন পেন দিয়ে বড় বড় করে লিখে দেই, আ-প-ন স্যার। একপাশে গুটি গুটি করে লিখি রাকা। আরো কিছু নাম লিখতাম। যেমন,আব্বু-আম্মু-তানিশা..
কিন্তু কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুম থেকে উঠেই একটা থাপ্পড় খাই আম্মুর হাতে। আম্মু কিসব যেন বলছে! কেন এগুলা শুনতে হচ্ছে আমায়? বুঝে উঠতে পারছিলাম না কিছুই।

(চলবে)

#রাকা (৩)

আম্মু আমাকে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই চড় দিতে শুরু করলো।
আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
আপু এসে জিজ্ঞেস করলো,
– কী হইছে? কী করছে ও আম্মু?
আম্মু তখন আমার দিকে চোখ পাঁকিয়ে বলে,
– এই তোর এত বড় স্পর্ধা ক্যান? এত বড় সাহস কে দিছে তোরে? ঐ বেয়াদবের বাচ্চা!
আমি ভ্রু কুঁচকে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করি,
– কী করছি আমি?
আম্মু রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে গলার স্বর সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে উত্তর দেয়,
– আপন স্যার কে হয় তোর? তোর বাপ না তোর জামাই? এই বল, এই বেয়াদব তোর কে হয় উনি?

আমি কথাগুলো শুনে ভড়কে যাই।
আম্মু আগে আমাকে খুব কম ধমকাতো।
এখন আর সেই দিন নেই। মারধর চলে হরহামেশাই। কোনো কারণে রাগ উঠলেই সেটা আমার উপর ঝাঁড়া আবশ্যক। তবে এরকম শব্দ ব্যবহার করেনা তেমন। আর করবেই বা কি করে,আম্মুর সাথে আমার কথাবার্তাই হয় নগণ্য।
বাসার কেউই তো আমাকে সময় দেয়না।
আগে দেখতাম আপুকে প্রচুর গালিগালাজ করতো। আজ আমার উপর দিয়েও যাচ্ছে।
কিন্তু আমি আমার দোষটা বুঝতে পারছি না এখনো। কী করলাম আমি!
ভালো মেয়ের মত চুপচাপ খেলা করে ঘুমাচ্ছিলাম, এটাই কি আমার দোষ?

আম্মু আবার আমাকে জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,
– আমরা আমাদের বাসায় কি করি না করি সব তোর ঐ স্যারের কাছে বলতে হইবো? কি? কিছু বলিস না ক্যান? পড়াশোনা তো কিচ্ছু নাই। উল্টা স্যারেরে দিয়া আমারে বুঝাও? বাপের মত হইছোস? সব দোষ খালি আমার? ক্যান? তুই তোর বাপের কাছে তারে নিতে পারলি না? আমারে ক্যান কথা শুনাইলো?
আমি তোর খেয়াল রাখিনা?

আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,
– আমি কিছু বলিনাই তো। স্যার জিজ্ঞেস করছে,হোমওয়ার্ক কেন করিনা। আমি শুধু বলছি বাসায় খুব শব্দ হয়, তাই পড়তে পারিনা। মাথায় ঢুকে না কিছুই। বাসায় আমার মনোযোগই বসে না পড়ায়।

আম্মু আমার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে বললো,
– তাই বুঝি? কি সাধু রে তুই! তা যখন শোরগোল হয়না তখন পড়তে পারোস না? বাহানা বানাস না?আর এতটুকু মেয়ে হইছো এখনই এত তিড়িংবিড়িং করো ক্যান মা? এই পুতুল কে দিছে তোমারে হ্যাঁ? আর কী লিখছো এইখানে?
আপন স্যার? ও আবার রাকাও লিখছোস! বাব্বা! মনে মনে এতদূর! এখনো তো ডিম থেকেও ফুঁটোনাই। এহনি? এক্কেবারে ভালো হইছে। এইবার তোর বাপ বুঝবে। আমি খুশি হইছি।

আমি চোখ চুলকাতে চুলকাতে বললাম,
– এটা আপন স্যার আমাকে দিছে আম্মু। স্যার বলছে,এই পুতুলের নাম ও রাকা। তাই এইটার গায়ে এইটার নাম লিখে দিয়েছি। আর স্যার দিয়েছে তাই স্যারের নাম ও লিখছি। স্যার খুব ভালো আম্মু। পুতুলটা দেখো। লিখাগুলো ও দেখো। সুন্দর না আম্মু? দাঁড়াও আমি তোমাদের নাম ও লিখে দেই! রাগ করোনা আম্মু, আমি ঘুমায়ে পড়ছিলাম। নয়তো রাকার পাশে তোমার নাম,আব্বু আর আপুর নাম ও লিখতাম…
কথাটা শেষ না হতেই আম্মু চোখ রাঙিয়ে বললো,
– হইছে? শেষ হইছে তোর ন্যাকামিগুলো? এই ঢং দেখাস তুই আমারে? বুঝাস আমাকে যে তুই কিচ্ছুই বুঝোস না? আমি কি পিটার খাই? বেয়াদব। এই তুই এইটা নিলি কেন? বল কেন নিলি? এখনি বিয়ে দিয়া ফেলমু? না বলনা! দিয়ে দেই বিয়ে। আমিও বাঁচি। এমনিতেও তোদের সংসারে আমার আর মন টিকেনা।

সামান্য কারণে আম্মু এখন রেগে যায়।
তার হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে।
কিছু একটা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন।

আমি আপন স্যারকে কেন বললাম, আমাদের বাসায় ঝগড়াঝাঁটি করে আমার আব্বু-আম্মু,তাই আমার ভালো লাগেনা। এজন্য আমি পড়তে পারিনা। এটা আমার অপরাধ। কিন্তু প্রতিদিন পড়তে না পেরে,ইনকমপ্লিট হোমওয়ার্কের জন্য যে শাস্তি পেতে হতো,লজ্জ্বা পেতে হতো ক্লাসে- ওটা তো কোনো বিষয় না।

আম্মুর রাগের আসল কারণ কি জানিনা।
তবে আম্মুর ঐ অজ্ঞাত কারণের রাগ আমার উপরে ঝেড়েছিলো সেদিন।
দরজা খোলা রেখেই হাতের সামনে যা পেয়েছে,তা দিয়েই মেরেছিলো।
আপু ধরতে এসেও ধরেনি।
কারণ তার গায়ে কোনোভাবে একটা মার পড়ে গেলে তার সমস্যা হয়ে যাবে । অথবা সে এমন কিছুই চাচ্ছিলো মনে মনে।
কেন? ঐ যে সেদিন রাতে আব্বুকে বলে দিছিলাম,
” আব্বু তানিশা আপু পড়ার টেবিলে বসে পড়েনা। ফোনে কথা বলে সারাক্ষন। ”
সেজন্য শাস্তিস্বরুপ আপুর ফোন একদিনের জন্য নিয়ে গেছিলো আব্বু।
তাইজন্যই সে সেদিনের প্রতিশোধ নিলো আমাকে বিনা কারণে মারার মত একটি অমায়িক দৃশ্যের একজন নির্বাক দর্শক হয়ে। অবশ্য এমনিতে ও আপুর কাছ থেকে আমি এমন কিছু আশা করিনা।
আম্মু আমাকে প্রায়াশই এভাবে মারে।
আপু প্রথম প্রথম থামাতে আসতো।
এখন আর থামায় না। সরে যায়।

আম্মু আমাকে সেদিন কি না দিয়ে মারছে?
ঝাড়ু,স্কেল,ফুলদানি,কলমদানি ছুঁড়ে মারা হতে শুরু করে যা আছে সবই ব্যবহার করেছে এক এক করে।

আমার অপরাধ একটাই, আমি আমার মন খারাপের কারণ আমার আব্বু আম্মুর প্রতিদিনের করা অশান্তিগুলো- আপন স্যারকে বলেছি।
এটাই আমার ভুল! ভুল নয় শুধু! মহাভুল!
কতবার কান ধরে, আম্মুর হাতে পায়ে ধরে মিনতি করেছি,
– আম্মু আম্মু প্রমিস! আর কখনো স্যারকে বলবো না কিছু! জীবনেও না। আম্মু…. আর মাইর‍্যো না! প্লিজ!

না! আম্মু শুনেনি।
শুধু মেরেই গেছে। কারণ আম্মুর সম্মানে আঘাত লাগছে। আম্মুর সম্মান আম্মুর এই অসহায় মেয়ের মিনতি,ব্যাথার চেয়েও বেশি।
অথবা অন্য কোনো কারণ।
যেটা আমাকে মারলেই কমে যায়।

রাতে আর ঘুমাতে পারলাম না।
আব্বু আসবে আসবে করে অপেক্ষায় রইলাম সারা রাত। আম্মু রাত এগারোটায় আপুকে পাঠিয়েছিলো খেতে যাওয়ার জন্য। আমি জানিয়েছি, আমি খাবো না। আব্বু আসলে খাবো। আম্মু জোরে জোরে বলেছে,
– থাক তানিশা। তুই আমার কাছে আয়। উনি বাপকা বেটি। বাপে আসলেই খাবে। যত্তসব ঢং!
আমার রাগ হচ্ছিলো ভীষণ!
না,আম্মুর প্রতি না। আমার প্রতি।
কেন আমি মন ভালো করতে গিয়ে এতগুলো ব্যাথা ডেকে আনলাম? তাই!

আব্বু সেদিন রাতে আর আসেনি।
সেদিন কেন যেন ভোর রাতে উঠে গেছিলাম।
উঠে দেখি আম্মু আমার পাশে শুয়ে আছে।
আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখলাম, এই অবিশ্বাস্য জিনিস সত্য কিনা।
দেখলাম,না! সত্যিই তো আম্মু!
এত বেশি মারছে, মায়ের মন, আর দূরে থাকতে পারেনি। মনে মনে অভিযোগ জানালাম আম্মুকে, তাহলে এত মারো কেন শুধু শুধু?

আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালাম সারা রাত।
আর খুব খুশি হয়ে ইচ্ছা করেই কিছু “ইচ্ছে স্বপ্ন” দেখতে লাগলাম..
ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে ভাবতে লাগলাম,
আম্মু নিশ্চয়ই আমাকে আদর করেছে
এতক্ষন। আমার ব্যাথার জায়গাগুলোয় হয়তো মলম ও লাগিয়ে দিয়েছে! ইত্যাদি..
ঘুমন্ত আম্মুর গালে কয়েকটা চুমো খেলাম। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম।
শান্তির ঘুম হয়েছিলো সেদিন!

পরের দিন আব্বু আসলো।
রেজাল্ট শিট নিয়ে আমি বাসায় এসেই আব্বুর হাতে ওটা দিতে হলো। কারণ রেজাল্ট শিটে সিগনেচার লাগবে অভিভাবকের।
আর আব্বুতো যখন তখন চলে যায়।
তাই দেখামাত্রই দিয়ে দিলাম।
আব্বু শিটের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– রাকা মা। তোমার রেজাল্ট এমন হলো কেন? এটাতে তো তোমার নাইন্টির বেশি পাওয়া উচিত ছিলো! মাত্র ৭৩ পাইলা কেন! বাসায় কি পড়াশোনা করোনা নাকি?

আম্মু শুনে রান্নাঘর থেকে জোর গলায় বললেন,
– দেখেন দেখেন, আমি বলছিনা? আপনার মাইয়্যার পড়াশোনায় কোনো মন নাই! মেয়ে এখন পড়েনা, খালি স্যার দেহে। স্যার ও দেখি এটা ওটা আনে। আবার স্যারের কাছে নালিশ ও দেয় আমগো পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে! আপনেরে বলছিনা? পড়াশোনা একটুও হয়না আপনার মাইয়্যার। এই স্যারডাই সমস্যা। উনারে পাল্টান। আমার কথা শুনেন তানিশার বাপ।

আব্বুই আপন স্যারকে বলেছিলো আমাদের পড়ানোর জন্য। কিন্তু আপু পড়েনি। আপুকে অনেক বলার পর আপু জানিয়েছে,সে কিছুতেই পড়বেনা এই স্যারের কাছে।

আব্বু রেজাল্ট শিটের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চিন্তিত স্বরে বললেন,
– আপন তো এমন ফাঁকি দেওয়ার কথা নয়! ছেলেটা তো খুব ভালো পড়ায় শুনলাম! ফার্স্ট ক্লাস একটা ছেলে… ও তো এতটা নেগ্লেক্ট করার কথা না…

আম্মু বললো,
– ঐ আরকি! পোলাপাইনগরে পড়ায় না শুধু এইডা ঐডা কিন্না দিয়া মন যোগায়ে মাস গুণে আরকি!

আমি চোখ সরু করে তাকালাম দুজনের দিকে।
ইচ্ছা করছিলো বলি,
বাসায় এত ঝামেলা তার উপর আবার রেজাল্ট ও একেবারে নাইন্টি আপ লাগবে তোমাদের!
না পেলেই বকাঝকা। সাথে আপন স্যারের দোষ!
কিন্তু এটা তো দেখো না যে আমরা আসলে পড়ার মত পরিবেশ পাচ্ছি কি না। আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু আমাদের সামনে আছে কিনা।
সবশেষে যেটা জরুরি,
আমাদের মন ভালো আছে কিনা।
না! তা দেখবে কেন? তোমাদের নিজ নিজ কাজই তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা বাচ্চারা মরি আর বাঁচি, তোমাদের নাইন্টি আপ রেজাল্ট এনে দিতে হবে।
শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে ভজন স্যার এসব বলেছিলো।
সবাই জানে, শুধু তোমরাই জানো না।

আপন স্যারের প্রতি আম্মুর প্রথম থেকেই ক্ষোভ কেন যেন! প্রথম ক’মাস কিছুই হয়নি। আম্মুও সন্তুষ্ট ছিলো। কিন্তু হঠাৎ ক্লাস ফাইভের মাঝখানে আম্মু আর আপন স্যারকে সহ্য করতে পারেনা।
তাই যেভাবেই হোক, আম্মু প্রমাণ করতে চায়, আপন স্যার খারাপ, সে পড়ায় না।
কিন্তু আব্বু স্যারকে চেনে। এবং রোজ সে খবর নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো বলেই স্যারকে পাল্টায় নি।
এটা নিয়েও কয়েকবার ঝগড়া হয়েছিলো আব্বু আম্মুর মাঝে।
কিন্তু আব্বু সেল্ফ ডিপেন্ডেড মানুষ।
নিজের যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই করে।
আর আব্বুর এই গুণের জন্য আমিও খুশি ছিলাম।

আব্বু তখন বাসায় থাকতো না।
আম্মু বাসার সব কাজ কোনোমতে শেষ করে কোথায় যেন বেরিয়ে পড়তো।
ক্লাস ফোরের দিকে আমি ও যেতাম সাথে।
ক্লাস ফাইভে উঠার পর আর নিজ থেকে যেতে বলতাম না।
আম্মুর ইচ্ছা হলে বা জোর করলে তবেই বাধ্য হয়ে যেতাম।
একদিন আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলো। আমাকে সাথে নেয় কেন তার কারণ তখন বুঝতাম না।

আমরা আজিমপুর পেরিয়ে নীল ক্ষেত মোড়ে যেতেই লক্ষ্য করলাম একজন হাত উঁচায়ে ইশারা করছে আমাদের।
লোকটাকে আমি চিনি।
ইনিই সেই আংকেল যার সাথে আমার আম্মু হরহামেশাই দেখা সাক্ষাৎ করে।
আংকেল বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের থামতে বলছে।
আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
আম্মু সাধারণত বোরখা পরেই বেরোয়।
কিন্তু আংকেলের সাথে দেখা করতে আসলে সবচেয়ে ভালো,দামী, ইস্ত্রি করা থ্রি-পিসটাই নামিয়ে পড়ে। সুন্দর করে সাজগোজ করে।
এক কথায় পরিপাটি হয়েই আসে। আর আমাকে কোনোমতে একটা জামা পরাতে পারলেই শেষ।

আমরা নিউ মার্কেটের প্রথম গেইটের সামনে গেলাম সবাই।
আংকেল আমাকে দেখেই গাল টিপে জিজ্ঞেস করলেন,
– কেমন আছো রাকা মামণি?
আমি ও সবসময় হাসি দিয়েই বলতাম,
– ভালো আছি আংকেল। তুমি?
আংকেল আমার হাত ধরতো এক হাতে।
অন্য হাত দিয়ে ধরতো আমার আম্মুকে।
আমরা একসাথে নিউ মার্কেটের অলিগলিতে ঘুরতাম। আংকেল আমাকে বেলুন কিনে দিতো। হাওয়াই মিঠাই, ফুসকা, চানাচুর, বার্গার কত কি কিনে দিতো! আর আম্মুর জন্য কিনতো চুড়ি, কানের দুল, ঘড়ি এটা ওটা সহ আরো অনেক কিছু!

আমি তো তখন মাত্র ক্লাস ফাইভে।
অনেক বড় হয়ে গেছিলাম।
তাই তখন আমার কোলে না উঠলেই বরং ভালো লাগতো।
কিন্তু আংকেল কথার ফাঁক-ফোঁকোরে পট করেই আমাকে কোলে তুলে ফেলতেন। খুব বেশি শক্ত করে ধরে রাখতেন বিধায় আমার আংকেলের কোলে একদম সস্তি লাগতো না। কোল থেকে নেমে যাওয়ার কথাও বলা যাবেনা। বললেই আম্মু চোখ রাঙাবে। অথবা বলবে, রাকা এরকম করলে তোকে এখানে একা রেখেই চলে যাবো। আর কখনো বাসা ফিরতে পারবি না।

আমি আর কি বলবো?
চুপচাপ হয়ে থাকি আংকেলের কোলে।
আর অপেক্ষা করতে থাকি, কখন নামাবে, কখন আমি হাঁটতে পারবো।

আমাদের শপিং শেষে, আমাকে একটা দোকানে রেখে তারা আধ ঘন্টা সময়ের জন্য উধাও হয়ে যেত।
দোকানদার চাচা আমার আম্মুর পরিচিত। আস্তে আস্তে আমারো পরিচিত হয়ে উঠেছিলো।
আমি ঐ চাচার কাছে বসে থাকি। একটা টুলে বসে হাওয়াই মিঠাই আর আইসক্রিম খেতে খেতে চারপাশ দেখতে থাকি।
আর অপেক্ষার প্রহর গুণি,কখন আম্মু আসবে, কখন আমরা বাসায় যাবো।

(চলবে)

ফারজানা রহমান তৃনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here