রাকা (১৮)

0
636

রাকা (১৮)
ফারজানা রহমান তৃনা

তানিশা আপু তার কথার উত্তর পেয়েই আবার চলে গেলো। তারা হঠাৎই যেন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লো। দুলাভাই একপ্রকার টেনে হিঁচড়েই নিয়ে গেলো তাকে। আমার রুমটাই হয়েছে এখন তাদের থাকার রুম। আমি কখনো আব্বুর রুমে, কখনোবা এক্সট্রা রুমে গিয়ে গিয়ে দিন কাটাচ্ছি।
সন্ধ্যা হয়ে এলো।
দরজায় কলিংবেল বাজছে।
আমার কেন যেন মনে হলো অনু চৌধুরী এসেছে। কিছুক্ষন চুপ হয়ে বসে ছিলাম। ভাবলাম আপু এসেই খুলুক। কিন্তু ওরা আবার দরজা আটকিয়ে কি যেন করছে।
আপুর দরজা খোলার সম্ভাবনা নেই।
তার সব কাজ ঐ বন্ধ রুমে,রফিকের ওরফে আমার দুলাভাইয়ের সাথে।

আমিই দরজা খুললাম।
আব্বু এসেছে। যাক, অনু চৌধুরী ফেরেনি!
তার চোখ মুখ কেমন যেন পরিষ্কার।
দরজা খুলতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আম্মু, তোমার আপু কই? তুমি না বললা ও আসছে? কই আমার মেয়ে?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, হুম আসছে তো।
ঐ যে ওখানে।
আব্বু যেন খুশিতে আত্বহারা হয়ে গেলো।
গলা ছেড়ে ডাকলো,
– তানিশা… তানিশা… কই তুই মা..
তার হাতের ব্যাগ আমিই নিয়ে রেখে দিলাম।
তার কোনোদিকেই কোনো হুঁশ নেই খুশিতে,উত্তেজনায়।
এখন যেন তানিশা আপুকে একবার দেখাই তার জন্য এভারেস্ট জয়ের মত আনন্দের সমতুল্য।

আমি দরজার কাছে গিয়ে জোরে জোরে ডাকলাম,
– আপু, বেরিয়ে আয়! আব্বু আসছে।
পাঁচ মিনিট পরই সে দরজা খুলেছে।
আব্বু তখন ও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আর হাতে হাত ঘষছেন ক্রমাগত। এটা হচ্ছে আব্বুর মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনার লক্ষণ।
আপুকে বেরিয়ে আসতে দেখেই সে দৌঁড়ে চলে গেলো তার কাছে।

গিয়ে দুই হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে বললো,
– মা, তুই ফিরে এসেছিস? তুই আমার সাথে এটা করতে পারলি? তুইও এত কষ্ট দিতে পারলি আব্বুকে? তুই জানিস না তানিশা, তোরা আমার কলিজার টুকরা। আমি তোদের ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আমার সবকিছু তো তোদের জন্যই।
তানিশা আপু আব্বুকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না শুরু করে দিলো। আব্বুও নিঃশব্দে কাঁদলো।
কিছুক্ষন পর,
আপুর পিছন থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো রফিক ওরফে আমার বাউণ্ডুলে দুলাভাই সাহেব।

আব্বু দুলাভাইকে দেখা মাত্রই তানিশা আপুকে তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– এই এইটা কে! এ তোদের সাথে এখানে কী করছে? এখানে ঢুকতে দিলো কে ওকে?
সে হুট করে দেখেই চিনে উঠতে পারলো না তাকে।

তানিশা আপু ঠোঁট কামড়াচ্ছে আর ভয়ে নিচের দিকে মাথা দিয়ে রেখেছে।
আব্বু এবার রুঢ় কন্ঠে রফিককে বললো,
– এই তুমি এখানে কেন? এখানে আমার বাসায় ঢুকছো কিভাবে??

সে দাঁত বের করে হাসছে।
তারপর আঙুল দিয়ে দাঁতের চিপা থেকে কি যেন বের করতে করতে বললো,
– আব্বা, আপনি বুঝতেছেন না আমি কে? হিহ্ হি।

এরকম একটা উদ্ভট,বখাটে ছেলের মুখে
‘আব্বা ডাক শুনে আব্বু বিকারহীন হয়ে গেলো।
– আব্বা মানে? মস্করা করো? থাপড়ায়ে গালের দাঁত ফেলে দিবো। বেয়াদব।
তারপর উত্তরের আশায় তানিশা আপুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– তানিশা, এটা কে? এখানে ঢুকলো কিভাবে?
সে প্রচন্ড উত্তেজনায় দুলাভাইয়ের চেহারা মনে করে পারছে না। সে আবছা আবছা চিনতো।

তানিশা আপুর কপাল কুঁচকে গেছে।
সে অনিমেষ চোখে ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে উত্তর দিলো,
– আব্বু, ও..মানে..ও…ও হচ্ছে রফিক। আমার হাজবেন্ড!
কথাটা শুনেই আব্বু এক পা পেছনে নিয়ে মৃদ্যুস্বরে বলে উঠলো, কি!
তারপর রক্তচক্ষু নিয়ে বললো,
– তোর এত বড় সাহস, তুই এই ছেলেকে নিয়ে আমার বাসায় ঢুকছোস? তোর মা তোকে বলেনাই কিছু?

তানিশা আপু আমতা আমতা করে বললো,
– বলছে তো। তুমিই নাকি বলছো, আমি যেন ফিরে আসি তোমার কাছে।
– হ্যাঁ আমি বলছি তুই ফিরে আসতে।
কিন্তু এই ছেলে আসছে কেন? ওকে তো দেখলেও আমার ঘেন্না লাগে। ওকে নিয়ে আসতে বলিনাই আমি। বলছি?

তানিশা আপু বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো,
– আব্বু, আমি এখন আর একা নই। আমার সাথে এখন ও জড়িয়ে আছে। আমি মানেই ও। আমাকে আসতে বলা মানেই ওকে আসতে বলা। এখন তো বিয়ে হয়েই গেছে। এখন তো মেনে নাও আব্বু! আর মুখ ফিরিয়ে নিওনা। প্লিজ!

– তোর স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি তানিশা! তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস? আমাকে? তুই এই ছেলেটাকে ছাড়তে পারবিনা,ঠিক আছে! থাক তুই ওর সাথে। কিন্তু আমার কাছে কেন আসলি তাহলে? আমি এই ছেলেকে কোনোদিন মেনে নিবো না। মরে গেলেও না।

– তাহলে কার কাছে যাবো আব্বু? কেন মেনে নিবানা?

– জানিনা। তোর তো গুণবতী মা আছে। তার কাছে যা। সে তো তোকে নিজেই বিয়ে দিয়েছে। নিজের পথের অনুসারী বানাইছে তোকে। মেনে নিবো না কেন, সেটা অনেবার বলা হইছে।

– আব্বু, আম্মু তো এখন আর শুধু আমাদের আম্মু নাই। এখন সে অন্য কারো আম্মু,অন্য কারো বউ। আমি কিভাবে তার কাছে গিয়ে থাকবো? ওখানে আম্মুর নতুন সংসারে আমি কেন যাবো? আর এইটা তো আমারো বাসা। এখানে আসবো না তো কই আসবো?

– মুখে মুখে তর্ক করবিনা একদম।
বলে আব্বু সামান্য চুপ করে গেলো।
হয়তো সে এখন মনে মনে ভাবছে,
অনুর কি ওখানে বাচ্চাও হয়ে গেছে?
এত তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে অনু?

কিচুক্ষন পর কঠিন গলায় বলার চেষ্টা করলো,
– তানিশা, তুই এখনি আমার বাসা থেকে চলে যা। এখনি। নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বললাম।

দুলাভাই উঠে বললো,
– আব্বা, আমার মধ্যে আফনে এমন কি সমস্যা দেহেন বলেন, আমি ঠিক কইর‍্যা ফালাই। আর প্যাঁচাল কইরেন না তবুও। আফনে এখন ব্যবসায় নাই, ঘরে আইছেন আব্বা। বোঝেন একটু। আমি ছেলে হিসেবে খুব ভালো দেইখাই তো আপনার মত একজনের মাইয়্যারে বউ হিসাবে পাইছি। বোঝেন না ক্যান!

আব্বু তার কথা শুনে আরো চটে গেলো।
সে উঠেই ঠাঁস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো রফিকের গালে।
রফিক রাগে সাপের মত শব্দ করছে,ফোঁসফোঁস।
তানিশা আপু মুখে হাত দিয়ে দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে।

দুলাভাই আপুর দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বললো,
– তানিশা, তুই তোর বাপরে ক, সে কামডা ঠিক করেনাই। একেবারেই ঠিক করেনাই। এইডার মাশুল তারে দিতে হইবো।

আব্বু রফিকের কলার ধরে অগ্নিদৃষ্টিতে বললো,
– ঐ বেয়াদবের বাচ্চা, তুই আমার সামনেই ওকে তুই তুকারি করছিস? আমার মেয়েকে থ্রেট দিচ্ছিস? ঐ শুওর, তোর এত বড় সাহস হয় কি করে?
তানিশা আপু তার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আব্বুকে সরিয়ে নিলো।
আমি কিছুই করছি না।
শুধু দেখছি।
কারণ আমার মনে হচ্ছে এসব অবাস্তব কিছু অথবা আমার কল্পনা।

আব্বুকে সরিয়ে এনে তানিশা আপু পূর্ণ দৃষ্টি রেখে বললো,
– আব্বু, তুমি এটা ঠিক করোনি। ও চলে যাবে আজকেই। এইতো কিছুক্ষন পর।
আব্বু রুঢ় কন্ঠে বললো,
– তুই ও চলে যাস। আমার তোর মত মেয়ের দরকার নাই। এত নিচ প্রকৃতির মেয়ে না থাকাই ভালো।
– সত্যি? আমি নিচ প্রকৃতির? আমি চলে গেলেই খুশি হবে তুমি?
– হ্যাঁ।
– বাহ্, কিন্তু আমি তো ভাবলাম তোমাকে তোমার নাতির মুখ দেখিয়ে তবেই ফিরবো। ও ততদিন এখানে থাকবেনা। কারণ ওকে তোমার পছন্দ না।

কথাটা শুনেই যেন আব্বুর রাগ-অভিমান সব ধুঁয়ে জল হয়ে গেলো।
সে পূর্ণ নজরে বিস্ময়ের চোখে বললো,
– কী বললি তুই? নাতির মুখ মানে?
তানিশা আপু করুন চোখে তাকিয়ে চোখের পল্লব কাঁপাতে কাঁপাতে বললো,
– তুমি আমাকে দেখে এখনো বোঝোনি? আর কিভাবে বোঝাবো?
এই কথা বলেই সে অন্যদিকে ফিরে গেলো লজ্জ্বায়। তারপর গম্ভীর গলায় বললো,
– রফিক এখনই চলে যাবে আব্বু।
ও আমাকে দিতে আসছে।
একা একা চলতে-ফিরতে পারিনা তো তাই। এখনি চলে যাবে।

আব্বু সামান্য কঠিন গলাতেই না পারতে বললো,
– না। তুইও চলে যা। তুই আমার কাছে থাকলে এই ছেলেকে ছেড়ে দিতে হবে। ব্যস। আমার এক কথাই।

তানিশা আপু এবার আব্বুর দিকে ফিরলো।
দুলাভাই চড় খেয়েই হনহনিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ফেলেছে। তাই সে এখন এখানে নেই।

তানিশা আপু প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে কপাল কুঁচকে বললো,
– আব্বু, আ_আ_আমি আসলে ওকে ছেড়ে চলে আসছি। কারণ তুমিই বলো,
আমি কিভাবে ওরকম একটা পরিবেশে থাকবো সারাজীবন…কিন্তু তোমার জামাই ছেঁড়ে দিয়েছি শুনেও আমাকে একা ছাঁড়েনি।
তার আমাকে নিয়ে তোমার মতই কত দুশ্চিন্তা। সে বলেছে, সে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবে শুধু। তারপর চলে যাবে। আর কখনো আমি না চাইলে আসবেনা। বুঝলা এবার,মানুষয়া কতটা ভালো?

আব্বু যেন আশ্বস্ত হয়ে গেলো আপুর মুখে এরকম কিছু শুনে।
সে ভাবতেও পারেনি এই মুহূর্তে এরকম কিছু শুনতে পারবে বলে।
সে তানিশা আপুর মাথায় হাত রেখে বললো,
– আসলেই? তুই সত্যি বলছিস তো?

তানিশা আপু হ্যাঁসূচকভাবে মাথা নাড়ালো।

আব্বু আবার উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– আমার বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তুই সত্যিই ওকে ছেড়ে দিয়েছিস? সত্যি?

– হ্যাঁ আব্বু। সত্যি।

– তো, হঠাৎ কিভাবে ছেড়ে দেওয়ার মত কারেক্ট চিন্তাটা মাথায় আনলি?

আপু নাসিক্য ধ্বনি প্রয়োগ করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
– কারণ আমি আর তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারছি না আব্বু। বিশ্বাস করো! তুমি তো আমার ভালোই চাও। তুমি যখন চাও_ই না তখন ঠিক আছে। রাখবো না আমি এই সম্পর্ক। আম্মুও তো তাই বুঝাইছে। তোমরা তো আমার ভালোই চাও। কেন যে আমি এমন করত গেলাম..

আব্বুর মুখে সামান্য হাসির আভা।
– তাহলে ও এইভাবে কথা বলতেছিলো কেন? আব্বা আব্বা করতেছিলো কেন?

– ও মুখে কিছু বলে না আব্বু। শুধু রাগ দেখায় সবার উপর। ওর সাথে আমার কিছু না থাকলেও আমি তো আজীবনই ওর স্ত্রী হয়েই থাকবো। আর আমি ওর স্ত্রী মানে তুমি ওর আব্বা। তাই বলছে হয়তো। মানুষটা তোমার মেয়েকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে নিজে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে,অথচ তুমি তাকে বিনিময়ে চড় দিলা। তাই কষ্ট পেয়ে… যাই হোক। বাদ দাও ওর কথা।

– এসব তো আগেই বলতে পারতি। প্রথমে এত নাটক করলি কেন? প্যানপ্যানিয়েই তো মাথা গরম করলি। আচ্ছা,তুই এখনি ওকে চলে যেতে বল।

– আচ্ছা।

– আচ্ছা শুন, ডিভোর্স পেপারে সাইন করছে ও? অফিশিয়ালি ডিভোর্স হইছে?

– না আব্বু। সেই ব্যবস্থা তো তুমি করবা। তুমিই করে দিও।

– আচ্চা, ওকে ওর নাম্বার রেখে যেতে বলিস।

– তুমিই বলো না।

– না। আমার ওই ছেলের সাথে কথা বলার রুচি নেই।

– আচ্ছা আব্বু। আমি বলে দিচ্ছি। ও এখনই চলে যাবে।

কথা শেষ না হতেই রফিক সাহেব দরজা খুলে বেরোলেন। বেরিয়েই তানিশা আপুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন।
আপুও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
তারা যেন চোখে চোখেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা সেরে নিলো।

দুলাভাই আব্বুর সামনে এসে সালাম দিয়ে বললো,
– আব্বা, গেলাম। আপনার মেয়েরে রাইখ্যা গেলাম কিন্তু। বলে আবার হাসছে।

আব্বু চেয়ারে বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে। সে তার কথার ভ্রুক্ষেপ ও করলো না।

এই কথা শেষে আবার কিছুটা টিটকারির ছলে বললো,
– শ্বশুরআব্বা, আপনি এত নিষ্ঠুর ক্যান? প্রথম মেয়ে জামাই আমি,অথচ আফনে আমারে কিছুই দিলেন না। আজকে যাও দিলেন তাও ভালো কিছু দিলেন না। চড় দিলেন! আপনার ব্যবস্থা করা যায় কিভাবে বলেন তো?
শেষের কথাটা বললো খুব আস্তে।
আব্বু সামান্য শুনতে পেয়েছে হয়তো।
কিংবা শোনেনি।
সে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে চেয়ার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।

আব্বু চলে যাওয়ার পর দুলাভাই আমার সামনেই তানিশা আপুকে জড়িয়ে ধরে বেদমে কিছুক্ষন চুমু খেলো।
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
আমার এখনই এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত।
উঠে দাঁড়াতেই সে আমার সামনে এসে বললো,
– শালিকা, গেলাম হ্যাঁ? খাওয়া দাওয়া কি ঠিকমত করোনা? শরীরের মাংস তো ঠিক জায়গায় নাই দ্যাখতাছি। বলে এত বাজেভাবে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলো যে আমার লজ্জ্বায় ইচ্ছা করছিলো মরে যাই। আমি দৌঁড়ে চলে গেলাম বারান্দায়।
আপু দেখলাম হাস্যজ্জ্বল চোখে বললো,
– ধুর! তুমিও না! ও এরকম ইয়ারকি বুঝে না। আচ্ছা এখন তাহলে যাও..

দুলাভাই চলে গেলেন।


অনু চৌধুরীর আজমল উদ্দীনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে সকালে।
সে আজমল উদ্দীনের বাড়িতে যেতে চায়।
কিন্তু আজমল উদ্দীন নিতে নারাজ।
– আচ্ছা, এত জেদি কেন তুমি? তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে কোথায় থাকবা অনু? তোমাকে তো সব বলছি, ওখানে আমার কোনো ঘর-দুয়ার নাই। মাঝেমধ্যে ভাইদের সাথে গিয়া দুদিন থাকি, এই। বাড়িতে কয়দিন কাটায়ে আবার শহরে, তোমার কাছেই তো চলে আসি। এখন তোমাকে গ্রামে নিলে কোথায় রাখবো আমি? বলো!

– ক্যান? তুমি যেইহ্যানে থাকতে পারো,ওইহানে আমি ক্যান পারুম না? তোমার ভাইদের বাড়িতে না হয় আমিও থাকলাম। সমস্যা কী এইহানে, বুঝতাছি না আমি।

– কেন? কী দরকার?

অনু চৌধুরী শীতল গলায় বললেন,
– দ্যাখো,অধিকার ছাইড়্যা দিলেই লস। তোমার বাপের বাড়িতে তোমার ও অধিকার আছে। তোমার ভাইগো নিজস্ব বাড়ি আছে, তোমার নাই ক্যান? তোমারো তো লাগবো। তোমার বউ বাচ্চা নাই নাকি?

– আমার লাগবেনা। আছে, সেই ব্যবস্থা আমি করবো। শ্রীগ্রই করবো। তোমার এত ভাবা লাগবে না।

– লাগবে। সম্পত্তি লাগবো না তোমার? আজীবন কি এই বাসা বাড়ি নিয়াই থাকবা? এত টাকা তো জোগান দিতা পারবা না। বাচ্চাকাচ্চা পালন করা
কি মুখের কথা? এত অল্প আয় তোমার!

– সম্পত্তি ভাগ হওয়ার সময় এমনিতেই আমাকে ভাগ দিবে ভাইরা। আমার তাদের উপর আস্থা আছে।

– ছাঁই আছে। কিচ্ছু পাইবা না তুমি,কিচ্ছু না।আমরা আগামী সপ্তাহেই বাড়িতে যামু। শেষ। যাইয়্যা গোঁ ধইর‍্যা তাগো উপরে বইস্যা থাকলে,খাইলে বাড়ির জায়গা,সম্পত্তি না দিয়া যাইবো কই? দৌঁড়াইয়া আইস্যা দিবো,কইলাম তোমারে,যাও,মিলাইয়া নিও।

আজমল উদ্দীন ভীষণ বিরক্তিভাজন মুখ করে তাকিয়ে আছে অনু চৌধুরীর দিকে।
সে অনু চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
সারাক্ষন শুধু টাকা টাকা, সম্পত্তি সম্পত্তি!
এরকম মেয়ে মানুষ খুব বিপজ্জনক।
তাছাড়া অনুকে কোনোভাবেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবেনা। নিয়ে গেলেই সসর্বনাশ!
খাল কেটে কুমির আনার কোনো মানে হয়?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here