#রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার,১৯ পর্ব
লেখক:-রাসেল (কালো ভূত)
১৯ পর্ব
রায়হান:-বলছিতো আগে কথা না বলে শুনবি তো নাকি,আগামীকাল আমাদের সবাইকি একটা অনুষ্ঠানে যেতে হবে,যেখানে একটা পুলিশ অফিসার কে পুরষ্কৃতো করা হবে।
রহিমা:-তাই নাকি তাহলে তো ভালোই একটু মজাই হবে,অনেক দিন হলো কোথাও যাওয়া ও হয়না।
রায়হান:-কিন্তু এটাতে একটা আশ্চর্য ঘটনা আছে,যেই পুলিশ কে পুরষ্কার দিবে তাকে নাকি এখনো তেমন কেউ দেখে নাই।
জেরিন:-হুম বাবা ঐ অফিসার কে এখনো কেউ দেখেনি,ডিজে গ্যাং কে ধরে দেওয়ার জন্য তাকে পুরষ্কৃতো করবে।
এইদিকে রাসেল শুধু মিট মিট করে হাসতাছে,এটা ভেবে,যখন এরা সবাই জানবে রাসেল সেই অফিসার, তখন এদের সবার রিয়াকশন টা কেমন হবে,বিশেষ করে জেরিনের।
জেরিন:-ঐ তুমি আবার মিট মিট করে হাসতাছো কেনো হুম,মনে হচ্ছে মনের মধ্যে গভীর রহস্য লুকিয়ে রেখেছো।
রাসেল:-আরে না কি যে বলোনা,আমি আবার কি লুকিয়ে রাখবো তোমাকে না জানিয়ে বলো।
জেরিন:-সেটাও ঠিক কিন্তু এটা যে পুলিশের চোখ এতো সহজে ফাকি দেওয়া সম্ভব না,তোমার হাসির মানেই বলে দিচ্ছে,জোরুর ঢালমে কুছ কালা হে।
রহিমা:-বউমা বাদ দাও তো ঐসব আর খাবার শেষ করো,জানো না খাবারের সময় কোনো কথা বলতে নাই।
রাসেল:-কিন্তু মা তুমি যে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছো এটা কি কথা না।
রহিমা:-আরে ফাজিল ছেলে আমি তো তোদের বুঝিয়ে দিলাম,তাই এটাতে সমস্যা হবে না,এবার চুপ করে খা,বাদর ছেলে একটা।
রাসেল:-নিধি খাবারের সময় শুধু কাজের কথা বলবি যেনো সবাইকে বোঝানো যায়,তাহলে কিছু হবে না আর কথা ও বলা হয়ে যাবে।
রহিমা:-রাসেল তোর কিন্তু এবার খবর আছে,চুপ চাপ খেয়ে নে নাহলে দেখিসনি কি করি।তোর বাবা আমাকে দেখে ভয় পাই আর তুই একটুও ভয় পাস না।
রাসেল:-মা আব্বু তো তোমাকে দেখে ভয় পাবেই কারণ তুমি হলে আব্বুর স্ত্রী,আর আমার মা মানে বলতে গেলে আমার মেয়ে তাহলে বলো বাবা মেয়েকে ভয় কেনো পাবে।
রহিমা:-ওরে ফাজিল তোরে তো,
কথায় কথায় যুক্তি দিস হুম।
রায়হান:-রাসেল বাবা এবার থামতো মা ছেলে মিলে কি শুরু করলি হুম,জানিস না খাবার সময় আসলেই কথা বলতে নাই।
রাসেল:-বাবা শেষ মেষ তুমিও কথা বলতে শুরু করলে এটা কিন্তু আমি মোটেও আশা করিনি।
রায়হান:-তোরে তো,
এই জেরিন একটা লাঠি আনোতো ওর বাদরামি আমি বের করছি।কিরে কোথায় যাস দাড়া।
কে শোনে কথা,রাসেল তো লাঠির কথা শুনেই একটা দৌড়ে রুমে চলে আসে,বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে।
রাসেল:-আজকে বাসার সবাইকে সেই রকম জ্বালিয়েছি,বাবাকে ছাড়িনি,ভাবতেই তো আমার হাসি পাচ্ছে।
তখনি দরজার বন্ধ করতে করতে জেরিন বলে ওঠে।
জেরিন:-তোমার হাসি বের করতে যদি আর একটু সময় ঐখানে থাকতে,তোমার ঐসব কথায় বাবা কিন্তু অনেক টাই রাগ করে ছিলো।
রাসেল:-জানো আমার না আসলেই খুব হাসি পাচ্ছে,বাবা আর মাকে কিভাবে রাগিয়ে দিলাম,ইশরে নিধি কে কিন্তু রাগানো টা মিছ হয়ে গেলো।
জেরিন:-তাহলে চলো আবার সবাই কে নিচে ডেকে নিয়ে যায়,তোমার তো আবার এই কাজ টা না করলে পেটের ভাত হজম হবেনা।
রাসেল:-হাহাহা এইসব বাদ দাও তো অনেক হাসি তামাশা হয়েছে।
জেরিন:-আচ্ছা শোনো কালকে কিন্তু আমাকে ড্রেস পরে সকালেই যেতে হবে,ডিআইজি স্যার করা গলাই কথাটা আমাকে বলে দিয়েছে।
রাসেল:-তুমি সকালে গেলে আমি কোথায় থাকবো,তুমি ছাড়া কি আমার সময় কাটবে নাকি বলো।
জেরিন:-আহারে আমার বুঝি কোনো কাজ নেই শুধু তোমার সাথে শুয়ে বসে থাকলেই চলবে তাইনা।আর শোনো তুমি কালকে একটু রেডি হয়ে এসো বাবা মা সবার সাথে বুঝতে পেরেছো, নাকি মাথার ভিতরে এখন দুষ্টুমি চিন্তা ভাবনা,কিলবিল কিলবিল করতেছে কোনটা হুম।
রাসেল:-আপাতো তো সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিলাম আর দুষ্টুমি টাই সামনে আনলাম,আমার এতো সুন্দর পরীর মতো বউকে দেখে দুষ্টুমি না করে কি ভাবে থাকি বলো।
জেরিন:-এই দেখো একদম ফাজলামো নই কিন্তু হা,সব সময় এইসব চিন্তা ভাবনা তাইনা।
দুষ্ট কোথাকার।
জেরিন এইসব হাসতাছে আর বলতাছে আর রাসেল তো এটা ওটা বলে জেরিন কে হাসিয়েই যাচ্ছে,খুব বেশি যে ভালোবেসে ফেলছে,এখন জেরিন কে ছাড়া মনে হয় রাসেল নিশ্বাস নিতে ও কষ্ট হয়।এক কথাই এখন রাসেল আর জেরিন দুটি দেহে একটি প্রাণ।
জেরিন:-সারাজিবন এইভাবে আমাকে ভালোবেসে তোমার বুকে আগলে রাখবে তো,কখনো ছেড়ে যাবে নাতো।
রাসেল:-এই পাগলি কাদছো কেনো হুম,
তোমাকে সাড়াজিবন ভালোবেসে বুকে ধরে রাখবো,মৃত্যু ছাড়া তোমার থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।
জেরিন রাসেল কে শক্ত করে জড়িয়ে ওরে কপালে একটা কিছ করে, ঠোঁটে চুমু দিয়ে ভালোবাসার এক অজানা সাগরের গভীর তলদেশে হারিয়ে যায়,যেখানে আছে শুধু সুখ সুখ,।।।।।।।।।।
সকালে রাসেলের আগেই জেরিন উঠে ওআশরুমে গিয়ে গোসল করে আয়নার সামনে বসে একটু নিজেকে পরিপাটি করতেছে,রাসেলের তবুও ঘুম যেনো ভাঙেই না,তাই জেরিন ওর ভেজা চুলের পানি রাসেলের চোখের উপরে ছিটে দেয়,আর রাসেলের ঘুম চলে যায় ঘুমের দেশে ওকে জেরিনের কাছে রেখে।
জেরিন:-বাবু তোমার কি ঘুম ভাঙছে নাকি আরো ঘুমাতে হবে হুম।
রাসেল:-ঘুমাতে কখন দিলে বলো,সারা রাত তো শুধু দুষ্টুমি করেই পার করে দিলে।
জেরিন:-ছি অস্বভ্য একটা,কখন কি বলতে হয় সেটাও জানোনা,দেখছো না তোমার পাঠক পাঠিকারা কান পেতে আছে তোমার কথা শোনার জন্য।
রাসেল:-শুনতে দাও তাদেরো হক আছে এটা শোনার কারণ আমার পাঠক পাঠিকারা অনেক কষ্টে মোবাইলে এমবি ভরে আমাদের এই ভালোবাসার কথাগুলো মন দিয়ে শোনে।
জেরিন:-তাহলে তো আর তাদের তারিয়ে দেওয়া যাবেনা তারা তোমার অনেক বড় ফ্যান,
আচ্ছা এখন ওঠো বেলা আটটা বাজে,
আমি নিচে গেলাম।
জেরিন উপরের কথাটা বলে রাসেলের কপালে একটা চুমু দিয়ে নিচে চলে যায়,এইদিকে রাসেল বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রুমে আসে।তখনি ওর ফোনে ডিআইজি স্যারের কল আসে।
রাসেল:- আসসালামুয়ালাইকুম স্যার কেমন আছেন।
ডিআইজি:- ওয়ালাইকুমাসালাম আমি ভালো আছি,তুমি কেমন আছো।আর শোনো আজকে কিন্তু তোমাকে ড্রেস পরে যেতে হবে সেটা ভুলে যেয়োনা।আর ড্রেস এই খান থেকে নিয়ে যাইয়ো,খুব যত্ন করে রাখা আছে।
রাসেল:-স্যার এটা কি আমি ভুলতে পারি বলেন।
আজকে যে আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন।
সবাই আজকে এই রাখাল ছেলে কে অন্য রুপে দেখবে।
ডিআইজি:-রাসেল তুমি হচ্ছো এই দেশের গর্ব,
তুমি রাখাল হয়েও বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেখিয়ে দিছো ইচ্ছা শক্তি যদি হয় লক্ষ্য বস্তু তাহলে সাফল্য অবশ্যই আসবে।
আরো অনেক সময় কথা বলে রাসেল ফোন রেখে দিয়ে নিচে নেমে আসে,আর দেখে সবাই খাবার টেবিলে ওর জন্যই অপেক্ষা করতেছে।
রাসেল:-কিরে ময়দা সুন্দরী খাবার না খেয়ে এইভাবে বসে বসে কি সাধনা করতেছিস শুনি।
নিধি:-ভাই সেই কপাল কি আমাদের আছে,
তুই আসিস নাই বলে আমাদের এই ভাবে না খেতে দিয়ে খাবার নিয়ে বসিয়ে রেখেছে।
জেরিন:-তোমাকে সেই কখন ডেকে আইছি আর তুমি এখন আসতাছো,এতো সময় কি করলে বলো।
রাসেল:-আরে কিছু না,আচ্ছা এখন সবাই তাহলে খাওয়া শুরু করি কেমন,এমনিতেই খাবার কে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছো।
রায়হান:-রাসেল দেখ আজকে যদি তুই খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে আজাইরা কথা বলতে শুরু করোস তো আমি কিন্তু তোর পনেরোটার খবর বানাবো এই আমি বলে দিলাম।
রাসেল:- বাবা আমি তো তোমার ভদ্র ছেলে,আমি কি এসব করতে পারি বলো।
রায়হান:-দেখ তুই কিন্তু আবার কথা বলতে শুরু করেছিস।আমাকে রাগাস না বলেদিলাম।
রাসেল কিছু বলেনা কারণ রাসেল খুব ভালো করেই যানে তার বাবার রাগ সম্পর্কে,চুপ চাপ খেয়ে উঠে রুমে যেতে নিবে তখনই।
রায়হান:-রাসেল রেডি হয়ে নিছে আই একটু পরে আমরা সবাই অনুষ্ঠানে যাবো আর তুই বউমাকে নিয়ে যাবি,জেরিনের ডিউটি আছে।
রাসেল:-এইরে এখন কি হবে মনে মনে।
বাবা তোমরা সবাই যাও আমি একটু পরে আসি,
একটা কাজ আছে সেটা করেই আসবো।
রায়হান:-আমি যেটা বলেছি সেটাই ফাইনাল আর কোনো কথা হবেনা,যা গিয়ে রেডি হয়ে নে।
রাসেল কোনো উপায় না পেয়ে চোখের ইশারায় জেরিন কে বুঝাইতে বলে,আর জেরিন রাসেলের অবস্থা দেখে রায়হান চৌধুরী কে বলে।
জেরিন:-বাবা ও যখন বলছে একটা কাজ করেই আসবে তাহলে ও কাজটা করেই আসুক না।হতেও তো পারে কাজটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ।
রায়হান:-আচ্ছা ঠিক আছে,তবে দেরি যেনো না হয়,আর এই নবাবের বংশধর বউমা বললো বলে তোকে সময় দিলাম।
রাসেল মনে মনে জেরিন কে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে রুমে চলে আসে আর পিছে পিছে জেরিন ও চলে আসে,রাসেলের যে আজকে খুব খুসি লাগতাছে।
জেরিন:-আচ্ছা তোর কি কাজ যে সবার সাথে যেতে পারবে না।
রাসেল:-একটা কাজ আছে যেটা তোমাকে বলা যাবে না তবে তুমি খুব তারাতারি জানতে পারবে।
প্লিজ বলার জন্য আমাকে জোর করোনা।
জেরিন:-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তাহলে কাজটা শেষ করে আসো আমি বরং গেলাম,
রাসেল জেরিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয় আর জেরিন সোজা সবাইকে বোলে অনুষ্ঠানের সেই জায়গায় চলে যায়,একে একে বাড়ির সবাই চলে যায়,বাসাই শুধু রাসেল আছে,একটু পরে রাসেল রেডি হয়ে সেখানে চলে যায়,যেখানে ড্রেসটা আছে।ড্রেসটা নিয়ে পরে নেয়,এই পোশাকে
খুব মানিয়েছে ওকে,এইদিকে রাসেলের পরিবারের সবাই অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হয়,রায়হান চৌধুরী স্টেজে বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বসে,আর বাকি সবাই স্টেজের সামনে বসে পরে,
জেরিন তো স্টেজে সবার মাঝেই আছে,তার চোখ শুধু রাসেল কেই খুজতেছে কিন্তু রাসেলের দেখা কিছুতেই পাচ্ছে না তাই জেরিন রায়হান চৌধুরীর কানে কানে জিগ্গেস করে।
জেরিন:-বাবা আপনার ছেলে কোথায় তাকে তো কোথাও দেখতে পারতাছি না,নাকি আজকে এই অনুষ্ঠানে সে আসবেনা।
রায়হান:-আসবে তো বললো হয়তো ওর কাজটা করতে একটু দেরি হচ্ছে,তার জন্য আসতে দেরি করতেছে,তুমি কোনো চিন্তা করিও না ও ঠিক এসে যাবে।
একে ওকে অনেক মানুষ তাদের নিজেদের মতো করে বক্তব্যে দিচ্ছে, অনুষ্ঠান সেই লেভেলের জমে উঠেছে, কিন্তু সবার মনে একটাই চিন্তা সেই পুলিশ কে কখন দেখবে,প্রায় একটা ঘন্টা পর,ডিআইজি স্যার মাউথ পিচ টা হাতে নিয়ে বলতে শুরু করে।
ডিআইজি:- আসসালামুয়ালাইকুম,এখানে উপস্থিত সবাইকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা,
আপনারা এখানে যেই জন্য উপস্থিত হয়েছেন,
সেইটা সবার অজানা নই,তবুও অনেক মানুষ মনে করতে পারছে না আমি আবার তাদের মনি করিয়ে দেয়,আমাদের দেশে ডিজে সন্ত্রাসী নামের যেই চক্র টা ছিলো সেটা কোনো পুলিশ অফিসার দমন করতে পারে নি, কিন্তু সেই কাজটা খুব সাহসিকতার সাথে সম্পূর্ণ করেছেন,আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গর্ব সিরাজগঞ্জের ছেলে মিস্টার আবির মাহমুদ রাসেল,তাকে কিছু মানুষ ছাড়া আজো কেউ দেখতে পায়নি,কিন্তু আজকে আপনেরা সবাই তাকে দেখতে পারবেন,আমি আর বেশি কিছু বলে আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে সোজা কথাই আসি,সেই সাহসী অফিসারের হাতে পুরষ্কার তুলে দিবেন এইদেশের নামকরা ব্যবসায়ী জনাব রায়হান চৌধুরী,পুলিশ অফিসার রাসেল কে এই স্টেজে এসে পুরষ্কার গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
চলবে…….