রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার,অন্তিম পর্ব

0
1464

#রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার,অন্তিম পর্ব
লেখক:-রাসেল (কালো ভূত)

সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে সেই অফিসার যে এতোদিন ছদ্মবেশে ছিলো,টান টান উত্তেজনাই জমজমাট পুরো অনুষ্ঠান,সবাই এদিক সেদিক খুজতেছে রাসেল কোথা দিয়ে আসে,হটাৎ সবার চোখ আটকে যায় এক পুলিশের ড্রেস পরিহিত ছেলের উপরে,পাঁচ ফুট নয় ইন্চি হাইডে তাকে দেখতে একদম সুপার ম্যানের মতো লাগছে,এইদিকে রাসেলের পরিবারের সবার চোখ তো কপালে ওঠার মতো অবস্থা রাসেল কে পুলিশের পোশাকে দেখে,এখানে রাসেল কিভাবে আসতে পারে,আর বেচারি জেরিন তো মনে হচ্ছে এই মাথা ঘুরে পরে যাবে,এটা সে কি দেখছে,একটা রাখাল কিভাবে বিসিএস ক্যাডার হতে পারে,রাসেল স্টেজে চলে আসে সবার দৃষ্টি যেনো রাসেল কেই ঘিরে রেখেছে।রাসেল স্টেজে উঠে সবাই কে স্যালট করে।

ডিআইজি:-আপনারা স্টেজে দাড়ানো এই ছেলেকে অবশ্যই চেনেন,কিন্তু কেউ স্বপ্নেও ধারণা করতে পারেন নাই এই সেই সাহসী পুলিশ অফিসার মানে বিসিএস ক্যাডার,যায় হোক এবার মেইন কাজে ফেরা যাক,আমি মিস্টার রায়হান চৌধুরীকে অনুরোধ করবো তার নিজ হাত দিয়ে পুলিশ অফিসার রাসেল কে পুরষ্কার তুলে দেওয়ার জন্য।

সবাই করোতালি দিয়ে তাদের কে উৎসাহীত করে,
রাসেলের বাবা রাসেলের হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়,
রাসেলের থেকে চোখ যেনো ফেরাতেই পারছে না।
রাসেল ওর বাবা কে ধন্যবাদ জানাই,

ডিআইজি:-আমি আবারো মাউথ পিচটা হাতে নিলাম আপনাদের কিছু কথা বলার জন্য,
আমি চাই রাসেল সবার উদ্দেশ্য কিছু বলুক।

সবাই হাতে তালি দিয়ে রাসেল কে উৎসাহ দেয়,রাসেল ডিআইজি স্যার কে ধন্যবাদ দিয়ে মাউথপিচ টা হাতে নিয়ে বলতে শুরু করে।

রাসেল:-এইখানে উপস্থিত সবাই কে জানাই আসসালামুয়ালাইকুম,আমার নামটা সবাই কমবেশি শুনেছেন কিন্তু কখনো দেখতে পারেন নাই,আমি রাখাল হয়েও আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি,যেটা আজো কেউ জানেনা,
হয়তো সবাই আজকেই প্রথম জানতে পারলেন আমি একজন রাখাল হয়েও বিসিএস ক্যাডার হয়েছি,জীবনে অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি,এমনো দিন গেছে,যেদিন আমার পেটে কোনো খাবার পরেনি,ভালো কোনো চাহিদা পূরণ করতে পারিনি,গ্রামের কেউ জানতো না আমি লেখাপড়া করি,বেশি কিছু বলবো না পরিশেষে একটা কথায় বলতে চাই,ইচ্ছা শক্তি কে মজবুত করেন তাহলে দেখবেন স্বপ্ন আপনার সফল হবেই।

রাসেল চোখ টা মুছে সামনে তাকিয়ে দেখতে পায় সকলের চোখেই পানি,সবাই হাত তালি দিচ্ছে,
আজ যেনো এক আনন্দের দিন ওর কাছে,
স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসে।

রায়হান:-বাবা তুই এতো বড় একটা কথা আমাদের থেকে লুকিয়েছিস,তুই শিক্ষিত হয়েও আমাদের বুঝতে দিস নাই যে তুই এতোটা শিক্ষিত,এতো নিখুঁত অভিনয় কিভাবে করতে পারলি বল।

রহিমা:-আজ আমার সত্যি খুব গর্ভ হচ্ছে,
আমার ছেলে রাখালের কাজ করেও বিসিএস ক্যাডার হয়েছে,কিন্তু তুই যদি আমাদের আগেই বলতি তাহলে আরো বেশি খুসি হতাম।

রাসেল:-মা আমি চাইনি কেউ জানুক একজন রাখাল ছেলে এতোটা শিক্ষিত ও বিসিএস ক্যাডার,
আর আমি এটা যদি আগেই বলেদিতাম তাহলে জেরিন হয়তো আমার মন কে ভালোবাসতো না বরং আমার নামি ক্যারিয়ার টাকে ভালোবাসতো,যেটা আমি কখনোই চাইনি।

এইদিকে জেরিন কিছুই বলছে না শুধু অবাক হয়েই আছে,কি বলবে সে রাসেল এতো বড় একজন অফিসার হওয়া সত্বেও কি না কি বলে অপমান করেছে,লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে নিজের কাছেই।

জেরিন:-আচ্ছা তুমি বিসিএস পরীক্ষা কবে দিলে,আমি এক ঘরে থেকেও কখনো দেখিনাই তুমি পড়াশোনা করেছো।

রাসেল:-জানো তুমি যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতে তখন আমি উঠে তোমার বইগুলো পড়তাম,যেদিন তুমি পরীক্ষা দিতে আসলে সেদিন আমিও এসেছিলাম,আর সেইদিনি মা বাবার সাথে আমার পরিচয়,মনে আছে একদিন আমি তোমার রেজাল্টের কাগজ টা থাতে নিয়েছিলাম,সেদিন আমি আসলে আমার রোলটা খুজতে ছিলাম যেটা কিনা সবার প্রথমেই ছিলো।

জেরিন:-যানো আজকে সত্যি নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে,তোমার মতো এতো বড় একজন মানুষ কে আমি শুধু অবহেলাই করে এসেছি,কখনো জানার চেষ্টা ও করিনি তুমি খেয়েছো কিনা,অথচ নিজে না খেয়ে আমার জন্য ঠিকই খাবার জোগাড় করতে।

রাসেল:-মন খারাপ করোনা কারণ আল্লাহ আমাদের সাথে যা করে সবা কিছুই কোনো না কোনো পরীক্ষা নেওয়ার জন্যই করে,হয়তো আমাকে সঠিক ভাবে জানার জন্যই অমনটা করেছো।

জেরিন:- সত্যি আজ আমি ভাগ্যবতি তোমার মতো একটা সুন্দর মনে মানুষ কে নিজের জীবন সঙ্গী হিসাবে পেয়ে।

আজকে চৌধুরী পরিবারে খুসির যেনো কোনো কমতি নেই,রাসেল ও আজ অনেক খুশি,কেননা আজকে তার আছে সুন্দর একটা ক্যারিয়ার আর আছে সুন্দরী বিসিএস ক্যাডার বউ,এইভাবে দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেক গুলো মাস এসে যায় জেরিনে ডেলিভারির সময়,সবাই যেনো জেরিন রেখে কোথাও যায় না,না জানি কখন কি হয়,একদিন রাসেল অফিসে বসে কি যেনো করছে তখনি রহিমা চৌধুরী ফোন করে বলে।

রহিমা:-বাবা রাসেল তুই তারাতারি বাসাই চলে আই বউমা কেমন জানি করতেছে।

রাসেল:মা তাহলে তুমি জেরিন কে হাসপাতালে নিয়ে যাও নিধি কে নিয়ে,আমি চাচ্চু কে বলে দিচ্ছি আর যতো তারাতাড়ি সম্ভব আমি বাবা কে নিয়ে হাসপাতালে আসতাছি,বলেই ফোনটা কেটে দেই।

রাসেলের চোখে পানি জেরিনের এমন কথা শুনে,জেরিন যে ওর বেচে থাকার একমাত্র উৎস,ওকে ছাড়া যেনো রাসেলের পুরো পৃথিবী টাই অন্ধকার,রাসেল ও চাচা সবুজ কে ফোন করে সবটা বলে বাবা ছেলে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়,একটু পর পর ফোন করে খবর নিচ্ছে কি অবস্থা,অনেকটা সময় পরে ওরা হাসপাতালের কাছে এসে পরে,রাসেল গাড়ি থেকে নেমেই একটা দৌড়ে ভিতরে চলে আসে।

রাসেল:-মা জেরিনের কি অবস্থা,আমার কলিজা পাখি ঠিক আছে তো( কাদো কাদো গলাই)

রহিমা:-বাবা নিজেকে শক্ত কর,সবুজ দেখতেছে,
এখনো কিছু বলে নাই।

তখনই নিধি ও নিধির বাবা মিস্টার সবুজ বেরিয়ে আসে,আর রাসেল দৌড়ে গিয়ে ওর চাচ্চু কে জিগ্গেস করে।

রাসেল:-চাচ্চু চাচ্চু আমার জেরিনের কি অবস্থা এখন ও ভালো আছে তো নাকি।

সবুজ:-রাসেল এভাবে ভেঙে পরলে কি চলবে হুম,নিজেকে শক্ত কর আর আল্লাহ কে ডাক,
আর শোন জেরিন অপারেশন করাতে হবে নাহলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

নিধি:-ভাইয়া তুমি আগে ভাবির সাথে একটু দেখা করে আসো,ভাবি শুধু বার বার তোমার কথাই বলতাছে।

নিধির চোখেও পানি যেই মানুষ টা সব সময় দুষ্টুমি নিয়েই থাকতো আজকে তার চোখে ও পানি,
রাসেল দৌড়ে জেরিনের কাছে আসে।

রাসেল:-এই কলিজা তোমার কিছু হবেনা,একদম ভয় পাবেনা,আমি তো তোমার পাশেই আছি তাইনা।

জেরিন:-জানিনা তোমার এই ভালোবাসা আমার কপালে সইবে কিনা,তবে হা আমি যদি চলে যায় তাহলে তুমি কিন্তু একদম কাদবে না।

রাসেল:-এই সব বলবে না আমি তোমার কিছুই হতে দিবোনা,

রাসেল জেরিন কে জড়িয়ে ধরে উপরের কথাগুলো বলে,দুজনের চোখেই পানি,আজ মৃত্যু ও যেনো ওদের ভালোবাসার কাছে হার মেনে যাবে।

সবুজ:-রাসেল এখন অপারেশনের জন্য নিয়ে যেতে হবে,দেরি হলে আবার সমস্যা হতে পারে।

জেরিন:-ছোটআব্বু আমি রাসেল কে ছাড়া কোথাও যাবো না এই আমি বলে দিলাম,
আমি মরলে ওর কোলে মাথা রেখেই শেষ নিশ্বাস টুকু ফেলতে চাই,

এমন কথা শুনে কার চোখে পানি না এসে পারে বলেন,লোকে বলে ডাক্তারের চোখে নাকি পানি নাই তারা নাকি মায়াহিন মানুষ,আজ তাদের সবার চোখেই পানি রাসেল আর জেরিনের ভালোবাসা দেখে।

নিধি:-ভাবি দেখো তোমার কিছুই হবেনা,আমি বাবা তো তোমার সাথে আছি তাইনা কোনো ভয় নেই।

জেরিন:-না আপু তোমার ভাইকে ছাড়া আমি অপারেশন রুমে যাবো না তো যাবো না,আমি যানি ঐ রুমে গেলে আর ফিরে আসবো না।

রাসেল:-জেরিন কেনো পাগলামো করছো,তোমার কিছুই হবেনা।আমিতো আছি নাকি।

জেরিন:-তোমার সাথে একটু দুষ্টুমি রাগ অভিমান করি বলে আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো।(অভিমানি কণ্ঠে)

রাসেল:-এই কলিজা এভাবে বলো আমার বুঝি কষ্ট হয় না,আমি তোমার কিছু হতে দিবো না,তোমাকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাচবো বলো।

সবুজ:-রাসেল তুই বরং আমাদের সাথেই চল কোনো সমস্যা নেই তুই যথেষ্ট শক্ত মানুষ।

রাসেল:-চাচ্চু আমি যে ওর কষ্ট সহ্য করতে পারবোনা,ওর জন্য আমার জিবন টাও হাসতে হাসতে হাসতে দিতে পারবো কিন্তু ওর কষ্ট আমি কিছুতেই দেখতে পারবো না।

জেরিন কে সবাই মিলে অনেক বোঝানোর পরে অপারেশন রুমে যেতে রাজি হয়,রাসেলের হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ডাক্তাররা অপারেশন রুমে নিয়ে যায়,সবাই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে,সবার মুখেই যেন চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

রহিমা:-বাবা এইভাবে কান্না করিস না বউমার কিছুই হবেনা,দেখবি একটু পরেই তোর সাথে দুষ্টুমি করবে।

রহিমা চৌধুরী মনে কষ্ট নিয়েও হাসতে হাসতে উপরের কথাগুলো বলে,তবুও রাসেলের কান্না থামছে না,কি করে থামবে বড্ড বেশি ভালোবাসে যে পাগলি টাকে,দেখতে দেখতে অনেক টা সময় পার হয়ে যায়,ডাক্তাররা বেরিয়ে আসে,আর রাসেল দৌড়ে গিয়ে জিগ্গেস করে।

রাসেল:-চাচ্চু অপারেশন ঠিক ভাবে হয়েছে তো নাকি।

রাসেলের কথার কোনো জবাব দেইনা সবুজ,
কেনো যানি মনটা মলিন করে রেখেছে।

রাসেল:-এই নিধি চাচ্চু তো বলছেনা তুই বলনা প্লিজ আমার কলিজা পাখির কি অবস্থা।

নিধিও কিছু বলেনা,
সবাই যেনো আরো বেশি চিন্তায় পরে যায়,
অবশেষে মিস্টার সবুজ বলে।

সবুজ:-রাসেল এখনি গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আইসেক,
দুইজনের জন্য।

সবুজের কথা শুনে সবার মুখেই হাসির রেখা ফুটে ওঠে কিন্তু দুইজন শুনে একটু চিন্তা মনে থেকেই যায়।

রাসেল:-চাচ্চু দুইজন মানে তো বুঝলাম না।

নিধি:-আরে গাধা কিছুই বোঝেনা,ভাবির দুইটা সন্তান হয়েছে,একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একদম তোদের দুইজনের মতো।

এই কথা শুনে সবাই অনেক খুসি,রাসেল দৌড়ে গিয়ে আগে মিষ্টি ফ্যাক্টরি নিয়ে আসে??
সবাই মিষ্টি খেতে ব্যস্ত হয়ে পরে আর রাসেল গিয়ে ওর ছেলে মেয়ের কাছে যায়।

রাসেল:-ওলেবাবালে আমার পাগলি টা বুঝি রাগ করেছে আমার উপরে।

জেরিন:-যাও তোমার সাথে কথা নেই,
তুমি আমাকে এতোটা কষ্ট দিছো যে দুইটা সন্তানের মা হয়ে গেছি,তুমি খুসি তো বলো।

রাসেল:-হাহাহা খুসি হবোনা বলো,
এখন যে আমার কাছে আছে সুন্দর একটা ক্যায়ার সাথে আছে সুন্দরী একটা বিসিএস ক্যাডার রাগওয়ালা বউ,আর চাদের মতো ফুটফুটে ছেলে মেয়ে খুসি না থেকে কি পারি।

এভাবেই চলতে থাকুক ওদের ভালোবাসাই ঘেরা দুষ্ট মিষ্টির সংসার,আপনারা ওদের জন্য দোয়া করেন মিষ্টি ছাড়াই,এই গল্পটা এখানেরি ইতি টেনে দিলাম,যানিনা গল্পটা শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত কতোটা ভালো করতে পেরেছি তবুও চেষ্টা করেছি যতোটা ভালো করা যায়,ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন,আপনাদের মাঝে আবার ও হাজির হবো
নতুন কোনো গল্প নিয়ে আমি লেখক রাসেল(কালো ভূত)

?????সমাপ্ত?????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here