রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার,৪পর্ব,৫

0
645

#রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার,৪পর্ব,৫
লেখক:-রাসেল (কালো ভূত)
৪পর্ব

কেন্দ্রের কাছে আসতেই রাসেলের চোখ ছানা বড় হয়ে যায় কেননা সামনে বৃষ্টি আর জেরিন দাঁড়িয়ে,
জেরিন কে দেখেই রাসেল আড়ালে চলে যায়,আর এইদিকে জেরিন রাসেলের মতো কাউকে দেখতে পেয়ে,

জেরিন:-বৃষ্টি দেখ ঐদিকে রাসেলের মতো কেউ,
অবাক হয়ে,

বৃষ্টি:-কি বলছিস তুই,দুলাভাই এখানে কি করে আসবে শুনি,আর দেখি কোথায়,

তখন জেরেমি সাইটে ইশারা করে দেখাই কিন্তু সেখানে রাসেলের মতো কাউকেই দেখতে পাইনা,
দেখি বৃষ্টি ভলে ওঠে,

বৃষ্টি:-কোথায় রে দুলাভাইয়ের মতো তো কাউকেই দেখছিনা,
তুই কি দিনের বেলায় ও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিস নাকি, যেখানে খুব তো বলস দুলাভাই কে পছন্দ করিস না আর এখন বাড়িতে রেখে এসেছে ও চোখের সামনে দেখতে পাস,

জেরিন:-দেখ বৃষ্টি একদম ফালতু কথা বলবিনা,
আমি ওকে একটু ও পছন্দ করিনা,
আমার স্বামী হওয়ার কি যোগ্যতা আছে ওর,
আর আমি সত্যি দেখেছি একটু আগেই ছিলো ওখানে দাঁড়িয়ে,

বৃষ্টি:-হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না,
চল এখন হলে ডুকে যায় নাহলে আবার পরে দেরি হয়ে যাবে,যদি আবার চোখের সামনে দুলাভাই কে দেখিস হাসতে হাসতে,

তারপর দুইজনে আর কথা না বাড়িয়ে সোজা পরীক্ষার হলে চলে যায়,
কিন্তু জেরিনের মনে তো একটাই চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে, সে স্পষ্ট রাসেলের মতো কাউকে দেখেছে তাহলে একটু সময়ের মাঝে কোথায় হারিয়ে গেলো, নাকি তার মনের ভুল,
না কিছুই সে ভাবতে পারছেনা,এইদিকে রাসেল তো লুকিয়ে গিয়ে,

রাসেল:-আল্লাহ বড় বাঁচা বেঁচে গেছি,
আর একটু হলে মনে হয় জেরিনের কাছে ধরা খেয়েই যেতাম, এখন যদি তার সাথে আমার সিট হয় তাহলে কি করবো,

এইসব ভাবতে ভাবতে রাসেল একটা মাক্স পরে নেই যেনো সহজেই রাসেল কে জেরিন চিনতে না পারে,ধিরে ধিরে হল রুমে চলে আসে,অনেক কষ্টে সিট খুজে বের করে, অবশেষে চিন্তা মুক্ত হয় কেননা জেরিনের রুমে রাসেলের সিট পরে নাই,
সময় হয়ে গেলো পরীক্ষার, পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়,
রাসেল তো সেই খুশি কেননা তার সব কিছুই জানা জিনিস, মনে মনে একটা রহস্য ময় হাশি দিয়েই মনোযোগ দিয়ে লিখতে শুরু করে,
এইদিকে জেরিনের ও ভালোই কমন পরেছে,
সেও খুশি মনে পরীক্ষা দিতে থাকে,
পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে গেলে সবাই বেড় হয়ে আসে,

বৃষ্টি:-তোর পরীক্ষা কেমন হলোরে,
আমি তো যেই পরীক্ষা দিছি তাতে বিসিএস তো থাক কোনো কিছুতেই টিকবো না,

জেরিন:-আমার ভালোই হয়েছে,
আশা করি আমি বিসিএস এ টিকে যাবো,

বৃষ্টি:-আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুই পুলিশ ক্যাডারে টিকে যাবি, যে কোনো একটা গ্রেডে,

জেরিন:-দোয়া করিস আল্লাহ যেনো তোর বলা কথা কবুল করে, আমার যে ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া,

এইভাবে দুই বান্ধবী কথা বলতে বলতে বাসার দিকে যেতে থাকে,এইদিকে রাসেল লুকিয়ে লুকিয়ে জেরিন কে দেখছিলো,
দেখতে দেখতে চোখের পলকেই হারিয়ে যায় জেরিন রা তাই রাসেল ও চলে আসে সেখান থেকে অন্য একটা নির্জন জায়গায়, নদীর ধারে একটা গাছের নিচে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে রাসেল, পেটেও খুদা কিন্তু পকেটে তেমন কোনো টাকাই নাই, চোখ দিয়ে অশ্রু জড়তে থাকে,সেটা পেটে খুদা লেগেছে তার জন্য না, রাসেল কান্না করতেছে আজকে যে বড্ড বেশি তার বাবা মার কথা মনে পরতেছে, বড্ড জানতে ইচ্ছে হচ্ছে,কারা তার বাবা মা,
এইসব ভাবতেছে তখনই হঠাৎ কোথা থেকে একটা গুলির শব্দ কানে ভেসে আসে রাসেলের,
তাই রাসেল গুলির শব্দটা অনুসরণ করে খুজতে থাকে কোথায়, অবশেষে দেখতে পাই একটা মধ্যে বয়সকো লোককে মেরে মাটিতে ফেলে রেখেছে,
আশে পাসে কেউ নেই, লোকটার পেটের এক সাইট থেকে রক্ত বেড় হচ্ছে, রাসেল কাছে গিয়ে দেখতে পাই এখানো জ্ঞান আছে,তাই গুলি লাগার জায়গায় ব্যাগ থেকে গামছা বেড় করে শক্ত করে বেধে নিয়েই কোলে তুলে পাশের একটা হাসপাতালে নিয়ে আসে, রাস্তায় কোনো গাড়ি পায়নি,তাই কোলে করেই এনেছে,

রাসেল:-ডাক্তার সাহেব ডাক্তার সাহেব কোথায় আপনেরা তারাতাড়ি আসেন,

রাসেলের চিৎকার শুনে ডাক্তার নার্সরা দৌড়ে চলে আসে,আর এসেই ডাক্তার সজীব বলে,

সজীব:-এই আপনে এতো চিৎকার করতেছেন কেনো, কি সমস্যা আপনার হুম, রাগী কণ্ঠে,

রাসেল:-দেখেন এই লোকটার শরীরে গুলি লেগেছে, অনেক রক্ত বেড় হয়েছে,
তারাতাড়ি কিছু করেন নাহলে লোকটা মারা যাবে,

সজীব:-গুলি লেগেছে তাহলে এটাতো পুলিশ কেস, যান গিয়ে আগে পুলিশে রিপোর্ট লেখিয়ে আসেন,

রাসেল:-দেখুন ডাক্তার এখন যদি থানায় যায় তাহলে এই রুগীকে অপারেশনের রুমে না বরং থানা থেকে এসে কবরস্থানে নিয়ে যেতে হবে,
দেখুন ধীরে ধীরে রুগী নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে,

রাসেলের কথা শুনে ডাক্তার সজীব কাছে আসে আর রুগীকে দেখেই চমকে ওঠে,
কেননা রুগীটা আর কেউ না তার আপন বড় ভাই

সজীব:-ভাইয়া তোমার এই অবস্থা কি করে হলো,

ভাইয়া শব্দ টা শুনে তো সবাই অবাক,
আর রাসেল তো পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে,
ডাক্তারের কথা শুনে,

সজীব:-এই তোমরা দাঁড়িয়ে কেনো তারাতাড়ি ভাইয়া কে অপারেশন রুমে নিয়ে যাও,
তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,

রাসেল কে উদ্দেশ্য করে বলেই সজীব দৌড়ে চলে যায়,রাসেল ভাবতাছে,

রাসেল:-কি আজব নিয়ম তাইনা,
একটু আগেই বলল পুলিশে রিপোর্ট না করলে চিকিৎসা করবে না আর তার ভাই জানতে পেরে পুলিশে রিপোর্ট ও করতে হলো না, কিছুই করতে হলোনা, হাইরে মানুষ আমরা,

রাসেল অপারেশন রুমের সামনে একটা চেয়ারে বসে আছে দুই ঘন্টা হয়ে গেলো,তবুও লোকটির কি অবস্থা জানতে পারেনি,
একটু পরে দেখতে পাই ডাক্তার সজীব চিন্তা মনে আসতাছে,

রাসেল:-ডাক্তার সাহেব রুগীর অবস্থা কি এখন,
আমি অনেক সময় হলো এখনে বসে আছি কোনো খবরি পাচ্ছি না,

সজীব:-দেখো ভাইয়ার অবস্থা এখন অনেক খারাপ, যদি সময় মতো তিন ব্যাগ o+ রক্ত না পাই তাহলে ভাইয়াকে বাঁচানো সম্ভব না,
আমি অনেক জায়গায় খোঁজ করেছি এই গুরুপের রক্ত এখন কোথাও নেই,

ডাক্তার সজীব চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,
এই দিকে রাসেল তো আরো চিন্তাই পরে গেলো,
আজ রক্তের জন্য একটা মানুষ মারা যাবে,
তখনই রাসেলের মনে পরে ওর তো রক্তের গুরুপ এটাই, মনেই ছিলোনা,

রাসেল:- ডাক্তার সাহেব আমি রক্ত দিতে চাই আপনে যদি কিছু মনে না করে।
আমার রক্তের গুরুপ ও o+,

সজীব:-তাহলে তো ভালোই হলো কিন্তু আমরা তোমার থেকে বড় জোর দুই ব্যাগ রক্ত নিতে পারবো, তার বেশি নিতে পারবোনা,তোমার ক্ষতি হবে,

রাসেল:-দেখুন আমার তো এই দুনিয়ায় তেমন কেউ নেই বললেই চলে,
যে আছে সেটাও মিথ্যা মায়ার বাঁধনে মোড়ানো,
আর এই লোকটির পরিবার আছে,
তার বেঁচে থাকা টা দরকার,

তোমাকে কি বলে বলে যে বুঝাবো সেই ভাষা আমার জানা নেই,
তোমার মতো মানুষ যে আজও এই দুনিয়ায় আছে সেটা তোমাকে না দেখলে বিশ্বাস হতো না,
আচ্ছা চলো আমার সাথে,

তারপর ডাক্তার রাসেল কে নিয়ে একটা বেডে শুয়ে দেয়, পাশেই পরে আছে সেই লোকটির নিস্তেজ দেহটি,রাসেলের শরীর থেকে রক্ত যাচ্ছে ঐ লোকটার শরীরে, দুই ব্যাগ রক্ত গেলেই রাসেল বুঝতে পারে তার শরীর টা দুর্বল হয়ে আচ্ছে,
শরীরের ভিতরে কি যেনো কামড়াচ্ছে,
এইভাবে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়াই সম্পূর্ণ হয়ে যায়,
রাসেল অনেক টা সময় শুয়ে থাকে,

সজীব:-এখন কেমন লাগতাছে তোমার,
আর শোনো তুমি শুয়ে থাকো,
উঠলেই কিন্তু মাথা ঘুরে পরে যাবে,

কথাটা বলেই ডাক্তার সজীব বাইরে চলে যাই,
এইদিকে রুগীর বাড়ির সবাই হাসপাতালে চলে আসে, রাসেল মনে করে সে এখন অনেক টাই সুস্থ তাই বিছানা থেকে উঠে সামনে পা বাড়াতেই ঠাসসসসস করে মাথা ঘুরে পরে যায়,
মানে অজ্ঞান হয়ে যায়, তখনই মিস রহিমা চৌধুরী রুমে ডুকছিলো আর রাসেল কে ধরে ফেলে,
ও আপনেরা তো আবার ভাবতাছেন এই রহিমা চৌধুরী টা আবার কে,তাহলে শোনেন রাসেল যার জীবন বাঁচালো উনি হলেন এই দেশের টপ বিজনেস ম্যানদের মধ্যে একজন মিস্টার রায়হান চৌধুরী,আর রহিমা চৌধুরী হলেন তার স্ত্রী,

রহিমা:-সজীব এই ছেলেটা,
তোমার ভাইয়ার কাছে কি করছিলো, আর এইভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলো কেনো,

সজীব:-ভাবি আমি বলেছিনা একটা ছেলে ভাইয়ার জীবন বাঁচিয়েছে, এই ছেলেটাই সেই ছেলে, আর অতিরিক্ত রক্ত দেওয়ার কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে,আমি মানা করে গেছি বিছানা থেকে না উঠতে তাও উঠে গেছে,

রহিমা:-কিহ বলো,
আমার স্বামীর জীবন বাঁচিয়ে এখন নিজের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিছে,
যাও তারাতাড়ি চিকিৎসা করো,নাহলে সমস্যা হবে,

তারপর ডাক্তার সজীব রাসেল কে স্যালাইন সাথে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে রাখে,এইদিকে জেরিনের কেনো জানি ভালো লাগতাছে না কোনো কিছুতেই,
শুধু ভার ভার রাসেলের কথায় মনে পরতাছে,
দেখতে দেখতে সকাল হয়ে যায়,
রায়হান চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে, কিন্তু রাসেলের জ্ঞান ফিরলেও ঘুম এখনো ভাঙে নাই,

রায়হান:-এই রহিমা এই ছেলেটা কে,
আর আমি এইখানে আসলাম কি করে, আমার তো সর্গের টিকিট হয়েয়েই গেছিলো,

রহিমা:-এই ছেলেটাই তোমাকে হাসপাতালে এনে নিজের জীবন বাজি রেখে রক্ত দিয়ে তোমাকে বাঁচিয়েছে,

রায়হান:-ওহহহ তাই নাকি,
ও কে আর, কোথায় থাকে সেই কথা কি জেনেছো,

রহিম:-না এইছেলের সাথে তো কথা বলাই হয়নি,
দুর্বল থাকার কারণে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে রেখেছিলো, এখন ঘুমাচ্ছে,

একটু পরে রাসেলের ঘুম ভেঙে যায়,
একটু একটু করে চোখ মিলে দেখে রুমে সেই লোকটা আর একটা মধ্য বয়সি একটা মহিলা,

রহিমা:-বাবা তোমার ঘুম কেমন হলো আর এখন শরীর টা কেমন লাগতাছে,

রাসেল:-কালকের থেকে আজকে একটু ভালো লাগতাছে, কিছু মনে করবেন না,
আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না,

রহিমা:-এতে মনে করার কি আছে,আর তুমি তো আমার ছেলের মতোই, আর তুমি জাকে বাঁচালে আমি তার স্ত্রী,আচ্ছা বাবা তোমার নাম কি,
কোথায় থাকো,

রাসেল:-আমার নাম রাসেল, আমি এখানে থাকি না, থাকি সিরাজগঞ্জ জেলায়,
এখানে একটা কাজে এসেছিলাম,
আমি যখন নদীর ধারে বসেছিলাম,তখন আংকেল কে ঐ অবস্থায় দেখতে পায়,

রায়হান:-ওহহহ আচ্ছা,
আর বলিওনা, কালকে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিলো,টাকাওয়ালাদের তো শত্রুর অভাব নেই,

রহিম:- সত্যি বাবা তোমার মা অনেক ভাগ্যবতি, যে তোমার মতো একটা ছেলেকে গর্বে ধারণ করেছে,

রাসেল মা কথাটা শুনেই মন খারাপ করে ফেলে,
কি করে বলবে, সে যে এতিম, এই দুনিয়ায় তার বাবা মা আছে কিনা সেটাও জানেনা,

রাসেল:-আপনেরা যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে আমি চলে যাবো, কালকে যেতাম,
সেইখানে দেরি হয়ে গেলো,

রহিমা:-সেকি বাবা তুমি আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন থেকে তার পরে যাবে,

রাসেল:-সেটা সম্ভব না,
আমার গ্রামে অনেক কাজ পরে আছে, আমাকে যেতেই হবে,

রহিমা:-আচ্ছা এই টাকা গুলো রাখো তোমার কাজে লাগবে,যেহেতু থাকবেনা সেহেতু জোর তো আর করতে পারবো না,

রাসেলের দিকে কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,
রহিমা চৌধুরী,

রাসেল:-এইটা কি বলছেন,
উপকার করেছি তার জন্য টাকা দিচ্ছেন,
টাকা দিয়ে ছোট করবেন না, ধন্যবাদ বাই ভালো থাকবেন,

কথাটা বলেই রাসেল তাদের থেকে বিদাই নিয়ে চলে আসে,দোকান থেকে কিছু খেয়ে নেই,
শরীর টা খুবই দুর্বল, আস্তে আস্তে বাস স্টান্ডে এসে একটা টিকিট কেটে বাসে উঠে বসে পরে,

রায়হান:-তুমি কেনো ওকে টাকা দিতে গেলে বলো,
ছেলেটা সত্যি রাগ করেছে আমাদের উপরে,

রহিমা:-আমি কি জানি রাসেল এইটা মনে করবে,
আমি তো দিয়েছিলাম টাকা টা দিয়ে ওর যেনো কোনো উপকার হয়,

এইভাবে অনেক কথা বলে দুইজন,
রাসেল ও বাড়ি চলে আসে, এসেই শুয়ে পরে কম্বল টা গায়ে জড়িয়ে,তার প্রায় ঘন্টা খানেক পরে জেরিন ও বাড়িতে আসে,আর রুমে ঢুকেই তো জেরিনের মেজাজ গরম হয়ে যায়,,,,,

চলবে……..

#রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার
লেখক:-রাসেল (কালো ভূত)
______৫পর্ব______
?
?
রুমে ঢুকেই তো জেরিনের মেজাজ টাই গরম হয়ে যায় কেননা রাসেল ওর বিছানায় ঘুমিয়ে আছে,
খুব জোরে রাসেলের কাছে আসে বিছানা থেকে তোলার জন্য,কিন্তু কাছে এসেই ভাবে,

জেরিনা:-না থাক একটু না হয় ঘুমিয়েই আছে তাতে কি হয়েছে, মনে হচ্ছে এই দুই দিন ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনি কেমন শুকিয়ে গেছে,
ছি আমি এইসব কি ভাবছি ছি, জেরিন এইসব ভাবলে তোর চোলবে না, তোকে এই রাখালের মায়া থেকে নিজেকে বের করতেই হবে,

এইসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেস হতে চলে যায়,
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে রাসেলের ওঠার কোনো নাম গন্ধ নেই তাই জেরিন ডাকার জন্য বাইরে থেকে ভিতরে যাবে তখনই,,,

শাওন:-রাসেল এই রাসেল আসিছ নাকি বাড়িতে,
নাকি কোথাও চলে গেছিস,

জেরিন:-ভাইয়া আপনার বন্ধু ঘুমিয়ে আছে,
এখনো ওঠে নাই মনে হচ্ছে এই দুইদিন খুবই কষ্ট করেছে,কিচ্ছু খাইনি,

শাওন:-কি বলেন ভাবি রাসেল এই সময়ে ঘুমিয়ে আছে মানেটা কি, ওতো রাতের বেলায় মনে হয়ে মনের আনন্দে ঘুমাতে পারেনা আর আজকে সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে আছে, বড়ো আজিব বাত
আচ্ছা ভাবি আপনে তো পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন, তা কেমন পরীক্ষা দিলেন আর বাড়ি তে কখন আসলেন,

জেরিন:-ভাইয়া আল্লাহ রহমতে আমার পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছে, আর কিছু সময় আগেই এসেছি, আর এসেই দেখি আপনার বন্ধু ঘুমিয়ে আছে, তা আজকে কাজে যায়নি নাকি,

শাওন:-রাসেল কাজে যাবে মানেটা কি ও তো বাড়িতেই ছিলোনা, একটা কাজের জন্য কোথাও চলে গেছিলো,,,
এইরে কি কি বলে ফেললাম রাসেল তো মানা করেছিলো মনে মনে

জেরিন:-কি দুইদিন বাড়িতে ছিলোনা মানে কোথায় গেছিলো তাহলে,
এই কথাতো আমাকে একবার ও বলেনি,

শাওন:-কি করে বলবে আপনেতো ওকে স্বামী বলে মানেনি না মনেমনে, আরে ভাবি আমি বলছি কি আসলে ও তানভীরের সাথে কোথাও যেনো একটা কাজে গেছিলো আমার কাজ থাকাই যেতে পারিনি, আচ্ছা ভাবি থাকে আমি গেলাম আর আগামীকাল রাসেল কে কাজে পাঠিয়ে দিয়েন,

জেরিন কে কথাটা বলেই শাওন তারাতাড়ি চলে যায়, আর এইদিকে জেরিনের মনে যেই চিন্তার ছাপ পরেছিলো সেটা দূর হয়ে যায়,তানভীরের সাথে কাজে গিয়েছিল সেটা শুনে,
জেরিন রুমে গিয়ে দেখতে পায় রাসেল এখনো ঘুমিয়েই আছে মাগরিবের আযান দিচ্ছে তাই গায়ে হাত রাখে তাকে ডাকার জন্য,

জেরিন:-এই শুনছিস নাকি তারাতাড়ি ওঠ আর কতো ঘুমাবি, এখন তো মাগরিবে আযান দিচ্ছে,
কি হলো উঠছিস না কেনো,
না এইভাবে উঠবে না,নাকি শরীর খারাপ নাকি দেখিতো,

দেখার জন্য কপালে হাত রাখে, হাত রাখতেই তো লাফ দিয়ে দূরে চলে যায় কেননা, জেরিনের মনে হচ্ছিলো সে কোনো অগ্নিকুণ্ডে রাহ রেখেছে এতো গরম রাসেলের শরীর, জ্বরে একদম পুরে যাচ্ছে,

জেরিন:-এতো দেখি জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে,এখন আমি কি করি, আমি কি ওর সেবা করবো, না আমি ওর সেবা কেনো করবো আমি তো ওকে দেখতেই পারিনা, ও বাঁচুক আর মরুক তাতে আমার কি,

কথাগুলো বলেই সেখান থেকে চলে আসে, কিছুই তো রান্না করা নেই,আর সে তো রান্না করবেনা, হবু পুলিশ ক্যাডার বলে কথা,এখন তাহলে রান্না করবে কে ভাবতে ভাবতেই রাসেল কে ডাকার জন্য আবার যায়,

জেরিন:-এই ওঠ কি পেয়েছিস হুম পরে পরে ঘুমাবি, আর আমি বসে বসে সেটা দেখবো তাইনা,তুই জানিস না ঘরে খাবার মতো কিছুই নেই,রান্না করতে হবে, আর তুই যে পরে পরে ঘুমাচ্ছিস তাহলে রান্না করবে কে,

রাসেল চিৎকার শুনে ধিরে ধিরে চোখ খুলে দেখতে পায় জেরিন চলে এসেছে,আর সেই এইভাবে চিল্লাচিল্লি করতেছে,রাসেলের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবু ধিরে ধিরে বলে,

রাসেল:-জেরিন তুমি কখন এসেছো,
আর তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে সেইটা আগে বলো,,

জেরিন:-হুম ভালোই হয়েছে,
আর তকে আমার জন্য কষ্ট করতে হবেনা, কারণ আমি জানি আমি পুলিশ ক্যাডারে টিকবই,
আর আমি পুলিশ হলেই তোকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো, কারণ তোর মতো রাখালের সাথে আমার যায় না,আমার স্বামী হওয়ার কোনো যোগ্যতায় তোর নেই।

ডিভোর্সের কথা শুনেই রাসেলের মনে হচ্ছে পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়,কি বলছে জেরিন ওকে ডিভোর্স দিবে,

রাসেল:-এই তোমার মাথা ঠিক আছে তো নাকি কি বলতেছো, তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবে,

জেরিন:-হুম কেনো পারবোনা বল, তোকে আমি বিয়ে করেছিলাম, আমার পড়াশোনার খরচ যেনো ঠেকে না থাকে তার জন্য,
স্বামী হিসাবে পাশে রাখার জন্য, থোরি না

রাসেল:-আচ্ছা তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো তবুও আমাকে ডিভোর্সের কথা বইলো না,
আমি তোমাকে ছাড়া কিছুতেই বাঁচতে পারবো না,

জেরিন মনে মনে ভাবে আরে আমি এইভাবে তোকে ডিভোর্স দিবোনা,এতো পরিমাণে কষ্ট দিবো যে তুই নিজে থেকে আমাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হবি, আচ্ছা এসব কথা এখন রাখ আমি পরে ভেবে দেখবো আগেতো গিয়ে রান্না কর অনেক খুদা লেগেছে,

রাসেল:-আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাই করতেছি,
তবুও তুমি এই ডিভোর্স শব্দ টা বলিও না, আমার কলিজাতে পানি থাকেনা।

কথাটা জেরিন কে বলেই রাসেল জ্বর নিয়েই রান্না করতে চলে যায়,খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও কিছুই করার নেই কাজ তো করতেই হবে,
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরতেই আছে তবুও যেনো দেখার মতো কেউ নেই,
দেখতে দেখতে রাত হয় যায়, জেরিন খেয়ে ঘুমিয়ে যায় রাসেল যে কিছু খেতেই পারলো না সেই খোঁজ একটুও নিলো না,রাসেল চোখে জলনিয়েই মাটিতে বিছানা করে ঘুমিয়ে যায়, কিন্তু ঘুম যে আসতেই চাইছেনা, আজ কে যেনো ঘুম পরীটাও তার সাথে লুকোচুরি খেলতেছে,আসলেই এটা ঠিক কষ্ট যখন আসে চারিদিক থেকেই আসে,
রাতে জেরিনের পানি পিপাসা পায় তাই পানি খাওয়ার জন্য উঠেই শুনতে পাই কেউ গোঙানি করতেছে, জেরিন ভয় পায় ভুত মনে করে,
মনে ভিতরে এই কেজি সাহস নিয়ে খুজে বের করে রাসেল এমন করতেছে,রাসেল জ্বরে কাপছে,

জেরিন:-এহ আল্লাহ এতো দেখি জ্বর আগের থেকে অনেক বেশি হয়ে গেছে,
আমি কি নিষ্ঠুর দেখো, একসাথে একই ঘরে থাকি, সেই মানুষ টা অসুস্থ আর আমি তাকে একটু ও সাহায্য করছিনা, যেখানে মনে হয়না কোনো শত্রুও এমন আচরণ করতে পারবে, আমি এখন কি করবো ওর জন্য,
এইভাবে থাকলে তো বড়ো কোনো দুঘটনার শিকার হতে পারে,

জেরিন:-না আমি এইসব নিয়ে এতো চিন্তা কেনো করতেছি, আমি তো জানি প্রচণ্ড জ্বর আসলে মাথায় পানি দিতে হয়,আর আমার ব্যাগে তো ওষুধ আছেই।

জেরিন ভয়ে ভয়ে বাইরে থেকে বালতি করে পানি এনে রাসেলের মাথায় পানি দিতে থাকে সাথে জলপট্টি তো আছেই,
এইভাবে একঘন্টা করার পরে জেরিন বুঝতে পারে এখন জ্বর একটু কমেছে, তাই পানি দেওয়া বন্ধ করে ওর ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে খাইয়ে দিয়ে,
আর ঘুম আটকে না রাখতে পেরে ওর কম্বল টা রাসেল কে দিয়ে শুয়ে পরে,
সকালে রাসেলের ঘুম ভেঙে যায়, শরীরটা দুর্বল তবুও মনে হচ্ছে রাতের থেকে একটু ভালো লাগছে, কিন্তু কম্বলটার দিকে চোখ পরতেই অবাক হয়,

রাসেল:-চুপি চুপি সেবা ঠিকই করবে অথচ সামনে শুধু অবহেলা, এটার মানে আজো বুঝতে পারলাম না,

তখনই জেরিনের ঘুম ভেঙ্গে যায় আর রাসেলের কথা শুনতে পেরে যায়,

জেরিন:-কি ভেবেছিস তোকে এমনি মরতে দিবো,
তা কি করে হয়, তুই যে আমার সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, তুই মরলে আমার স্বপ্ন পূরণ কে করবে,

রাসেল কিছু বলেনা, কারণ টাতো বলেই দিলো কেনো সেবা করেছে,তাই কিছু না বলেই চলে যায় রান্না করতে, কারণ রান্না না করলে তো আর পেটে ভাত জাবে না,এইভাবে চলে যায় কিছু দিন
তাদের বিসিএসের রেজাল্ট পাবলিস্ট হয়,
জেরিন বাজারে কম্পিউটার ঘরে গিয়ে পুরো লিস্ট বের করে দেখতে পায় সে পুলিশ ক্যাডারে টিকেছে, বৃষ্টি টেকেনি,
তাই খুসি মনে বাড়িতে চলে আসে,এইদিকে রাসেল কাজ করতাছে তার যে আজকে রেজাল্ট দিবে সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই,কাজ করতে করতে বিকাল হয়ে যায়।

তানভীর:-রাসেল কাজ তো সেই সকাল থেকেই করতেছি, এখন সারা রাত ও কাজ করবো নাকি,

রাসেল:-আরে বেটা আমার তো খেয়ালি নেই যে কাজের সময় শেষ, আগে বলবিনা বেটা,
আচ্ছা চল বাড়িতে যায়,

তারপর দুজনে বাড়িতে চলে আসে,
রাসেল বাড়ির কাছে আসতেই দেখতে পাই বাড়ির সামনে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে,
যেটা দেখে রাসেলের মনে ভয়ের ছাপ পরে।
তবুও এগিয়ে যায়,জেরিন রাসেল কে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে,

জেরিন:-যানো আমি আজ খুবই খুশি যেটা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না, আজ আমি স্বার্থক,

রাসেল ভাবে কি বেপার যেই মেয়ে আমার সাথে ভালো করে কথায় বলে না আর এখন জড়িয়ে ধরে কথা বলতাছে কারণ কি,

রাসেল:-আচ্ছা জেরিন কি হয়েছে সেটা তো আগে খুলে বলো,নাহলে আমি বুঝবো কিভাবে তোমার এতো খুসি হওয়ার কারণ টা কি।

জেরিন:-আরে তোমাকে তো আসল কথায় বলা হয়নি, আমি বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে টিকেছি,
আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, শুধু তোমার জন্য,
ঈ না থাকলে হয়তো সম্ভব হতোনা।

রাসেল:-এই ভাবে বলছো কেনো সব কষ্ট তো তুমি করেছো আর আমি শুধু অনুপ্ররেণা জোগিয়েছি,
অনেক অনেক শুভকামনা রইল তোমার জন্য,
জীবন অনেক বড়ো হও,

শাওন:-ভাই রাসেল এতো কথা বাদ দাও,
ভাবি বিসিএস ক্যাডার হয়েছে এখন যাও মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করো,

রাসেল:-হুম খাওয়াবো তো আমার বউ তার স্বপ্ন পূরণ করেছে সাথে আমাদের গ্রামের ও নাম উজ্জ্বল করেছে,তাহলে কিন্তু হিসাবে মিষ্টি তোদেরি খাওয়ানো টা দরকার আর আমাকে বলছিস,

শাওন:-ভাই যতো যায় বলো কাজ হবে না মিষ্টি খাওয়াতেই হবে,
বুঝেছো এতো বাহানা বাদ দাও,

রাসেল:-খাওয়াবো তোরে ভাই একটু টাকা পয়শা তো জোগাড় করতে দে, মনে কর এটা বাকী রইল,

তখন শাওন আর কিছু বললনা কারণ শাওন ভালো করেই জানে রাসেলের কাছে যদি টাকা থাকতো তাহলে এতো করে বলতেই হতোনা,

শাওন:-আচ্ছা বন্ধু ঠিক আছে তোর কাছে যখন টাকা হয় তখন না হয় আমরা সবাই মিলে টাকা ভরে মিষ্টি এনে সবাইকে খাওয়াবো,

রাসেল:-হুম সেটাই করিস,
বুঝতেই তো পারতাছিস আমার অবস্থা এখন কেমন, সেটা তোদের থেকে কিন্তু কেউ ভালো জানেনা,

গ্রামের সবাই দলে দলে এসে জেরিন কে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে,এইদিকে রাসেলের মুখে হাসি নেই কারণ রাসেল যে তার খবর টা জানতেই পারলোনা,
এইসব ভাবনা চিন্তার মধ্যে দিয়ে দিন টা পেরিয়ে রাত চলে আসে,জেরিন বাইরে গেছে ফ্রেস হওয়ার জন্য,আর রাসেল বসে বসে ভাবতাছে সেকি তাহলে টিকতে পারেনি,জেরিনের স্বামী হওয়ার যোগ্য কি হতে পারবেনা, ভাবতে ভাবতেই রাসেলের চোখ আটকে যায় টেবিলে রাখা একটা কাগজের উপরে,আর তারাতাড়ি সেই কাগজ টা হাতে নিয়ে নেয়,কাগজের উপরের অংশে চোখ পরতেই রাসেলের আমাবর্ষার মতো কালো মুখ টা পূর্ণিমার রাতের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কেননা,,,,,,

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here