#রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার,৮পর্ব,৯
লেখক:-রাসেল (কালো ভূত)
৮পর্ব
নিধি এখনো সেই আগের মতোই দরজায় দাঁড়িয়ে আছে,আর ঠিক তখনই বাইরে থেকে নিধির বাবা মিস্টার সবুজ বাড়িতে আসে আর দরজায় নিধি কে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,হাতে তুরি বাজিয়ে বলে,
সবুজ:-কিরে নিধি মা তোর আবার কি হলো যে দরজায় কাঠ পুতুলের মতো এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস,
নিধির মুখে কোনো কথায় নেই,সে যেনো একটা ধ্যানের মধ্যে আছে,সেটা দেখে নিধির বাবা নিধি কে একটু ঝাকুনি দেয়,
নিধি:-কে কে,ওহ বাবা তুমি কখন আসলে,অনেক টাই অবাক হয়ে বললাম,
সবুজ:-আমি তো একটু আগেই আসলাম,আর আসার পর থেকেই দেখছি তুই এইভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস,কাহীনি টা কি একটু খুলে বলতো মা,
নিধি:-না বাবা তেমন কিছু না,যাও তুমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও,আর হা আম্মু কিন্তু আজকে সেই লেভেলের রেগে আছে তোমার উপরে,
সবুজ:-কি বলিস তোর মা যদি রেগে থাকে তাহলে,
তো আমার আজকে রক্ষা নেই,তা মামুনি তোর মা কি নিয়ে রেগে আছে,
নিধি:-তুমি জানোনা আজকে নানুর মৃত্যু বার্ষিকী,
আমরা সবাই সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি আর তোমার আসার কোনো নাম গন্ধই নেই,
সবুজ:-ওরে আমার সেই কথা মনেই নেই এখন যে কি ঝড় আমার উপর দিয়ে যাবে আল্লাহ ভালো জানে,আচ্ছা মা তুই একটু তোর মায়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেনা,তোর কথা তো একটু ও না শুনে পারবেনা,
নিধি:-আমি মেয়ে হয়ে তোমার এই উপকার টুকু করতেই পারি,তবে আমাকে সপিং করিয়ে দিতে হবে,
সবুজ:-আচ্ছা ঠিক আছে এই নে বিশ হাজার টাকা, কিন্তু তোর মা যেনো রাগী কণ্ঠে আমার সাথে কোনো কথা না বলে,
নিধি:-রাগী কণ্ঠে কথা বলবে কিভাবে, আম্মু তো রাগ করেই নি,আমি তো এমনি তোমাকে ভয় দেখালাম বলেই বড়ো আম্মুর পিছনে লুকিয়ে পরলাম,
সবুজ:-এই ফাজিল মেয়ে দাঁড়া আমার সাথে মজা করিস,
সবাই তো বাবা মেয়ের এইসব কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ,এইদিকে রাসেল মনে মনে ভাবতাছে,
রাসেল:কি মেয়েরে বাবা পুরোই জ্বাল মরিচ,
সপিং করার জন্য বাবার থেকে কিভাবে টাকা নিলো,
রহিমা:-সবুজ এইবার থামতো,অনেক মজা করেছিস, দেখছিস না নিধি নিরাপদ স্থানে এসে লুকিয়েছে,
রায়হান:-রাসেল পরিচয় করিয়ে দেই এই হলো নিধি,এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে, এইবার ডাক্তারি পড়তেছে,আর হাসি মাস্তির মধ্যে দিয়েই সারাক্ষণ পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখে,
সবুজ:-আরে রাসেল তুমি কখন আসলে,
আর আমি তো এতো সময় তোমাকে খেয়াল করিনি,
রাসেল:-একটু আগেই এসেছি,
আর দেখবেন কি করে আপনার খেয়াল তো আন্টির কাছে ছিলো,রাগে না জানি কি করে বসে হাসতে হাসতে,
রাসেলের কথা শুনে সবাই ফিক করে হেসে ওঠে,
সবুজ:-আরে তেমন টা না এই ফাজিল মেয়ে টা না কাউকে তার হাত থেকে ছাড় দেইনা,
একদম ফাজিল একটা,
নিধি:-বড়ো মা দেখেছো বাবা আমার নামে কি কি বলতেছে,আমি কিন্তু সেই রাগ করবো তুমি বাবা কে বকা না দিলে ন্যাকা কান্না করে,
রহিমা:-নিধি মা তুই শান্ত হ আমি আছি না,
তাহলে তোর কিসের চিন্তা,আর এইযে ডাক্তার সবুজ আমার মেয়ের নামে এইসব কি বলো হুম,
আমার মেয়েকে একদম ফাজিল বলবে না এই আমি বলে দিলুম,
নিধি:-আচ্ছা বড়ো মা এই ছেলে টা কে এর আগে আমাদের বাড়িতে কখনো দেখিনি,
আজকে আবার কোথা থেকে আসলো,
রহিমা:-আরে নিধি এটা হলো আমার ছেলে যে তোর বড়ো আব্বু কে নিজের জীবন বাজি রেখে বাঁচিয়েছে,
ওর নাম রাসেল, গ্রামে থাকে।
রাসেল তো অবাক এইভাবে ওকে সন্তান বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে,ওর চোখে পানি স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে,
রহিমা:-বাবা তুই কান্না করতেছিস কেনো,
আমি তোকে নিজের সন্তান বলেছি তাই কান্না করছিস তাইনা, সরি আমার ভুল হয়ে গেছে,
রাসেল:-আম্মু তুমি ভুল কেনো করবে বলো,
আসলে আমি তো জন্মের পর বাবা কে দেখেছি বলে কখনো মনে পরেনি,তাই যখন আমাকে সন্তান বলে পরিচয় করিয়ে দিলা,তখন খুসিতে চোখে পানি আটকে রাখতে পারলাম না,
রহিমা:-বাবা তুই কান্না করিস না,
তোর বাবা মা নেই তো কি হয়েছে,আমি তোর মা,
কি আমাকে মা বলে মেনে নিতে পারবি তো,
রাসেল:-হুম কেনো না,
তোমাদের মতো ভালো মনে মানুষ কি পৃথিবীতে আছে নাকি,তোমাদের সন্তান হয়ে থাকা টাও আমার বড়ো ভাগ্যের বেপার,
রায়হান:-রাসেল তাহলে আজ থেকে তুই এই বাড়িতে থাক কেমন,
রাসেল:-না বাবা আমি এখানে একটা বাড়িতে কাজ করি,আমি সেটা রেখে এখানে থাকতে পারবো না,
রহিমা:-দেখ বাবা আমাদের কি কম আছে যে তোকে মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হবে,
রাসেল:-মা কোনো কাজই কিন্তু ছোট না,আর আমিতো আর নিধি আপুর মতো লেখাপড়া করতে পারিনি যে মানুষের বাড়িতে না কাজ করে অন্য কাজ করতে পারবো,
রাসেল নিধি কে আপু বলাতে তো নিধি সেই লেভেলের রেগে যায় আরবলে,
নিধি:-বড়ো মা তোমার গুণধর ছেলে কে বলে দাও আমাকে যেনো আপু না বলে,আমি কোন দিক দিয়ে তার আপু লাগি হুম,
মনে চোখ দিয়ে আগুন বেড় হচ্ছে,এখনি রাসেল কে খেয়ে ফেলবে,এই মেয়ের রাগ দেখে রাসেল তো ভয়ে চুপসে গেছে,
রহিমা:-নিধি মা রাগ করস কেনো হুম,
আর রাসেল ও তোর ছোট তাই নাম ধরেই ডাকতে পারিস আবার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে পেত্নি বলে ও ডাকতে পারস হাসতে হাসতে,
এই কথা শুনে নিধি তো আরো রেগে যায়,
মনে হয় বোমা টা এখনি ফেটে যাবে,
নিধি:-বড়ো মা ভালো হচ্ছে না কিন্তু,
রাসেল কে কি বলে দিচ্ছো হুম,
রহিমা:-এই রাসেল তোর বড়ো তাহলে নাম ধরে কেনো ডাকছিস হুম,
নিধি:-দেখো বড়ো আমি রাসেল কে নাম ধরেই রাখবো ভাই বলতে আমার বয়েই গেছে বলেই রুমে চলে আসলাম,
রহিমা:-ফাজিল মেয়ে একটা,
নিধি তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আই আমাদের এখনি যেতে হবে,
এইভাবে অনেক কথা বলে রাসেল কে মেসেস রহিমা চৌধুরী নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেই,
রাসেলের চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো জল পরছিলো,এটা কষ্টের বৃষ্টি নই সুখের বৃষ্টি,আজ যদি তার মা থাকতো তাহলে হয়তো রোজ এইভাবে খাবার খাইয়ে দিতো,
রহিমা:-জানিস বাবা আমার ছেলে টা আজ থাকলে ঠিক তোর মতোই হতো,জানিনা ও এখনো এই পৃথিবীর বুকে আছে কিনা, কেদেঁ কেদেঁ
রাসেল ওর মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
রাসেল:-কেদোনা তোমার চোখে পানি দেখলে কেনো জানি আমার ও কান্না পায়,
একটু সহ্য হয় না তোর চোখের পানি,
এইভাবে আরো অনেক কথা বলে সবাই,
আজকে যেনো চৌধুরী পরিবারে একটু হলেও সুখের ছোঁয়া পরেছে,
রায়হান:-বাবা চল আমাদের সাথে,
রাসেল:-কোথায় যাবো আমি,
অনেক টাই অবাক হয়ে বললাম,
রহিমা:-নিধির নানুর মৃত্যু বার্ষিকী আজকে,
তাই আমরা সবাই সেখানে যাবো আর তুই না গেলে আমি একটু ও যাবোনা এই আমি বলে দিলাম, অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম
রাসেল কি বলবে এখন সেটা একটুও ভাবতে পারলো না,
সেখানে গেলে তো অনেক টাই দেরি হবে,
আর দেরি করে বাসাই গেলে জেরিন ইনকাউন্টার করে মারবে,এইদিকে মায়ের মন খারাপ হবে না গেলে,কি করবে সেটা যেনো ভেবেই পাচ্ছে না,
রাসেল:-মা দেখো আমি তো অন্যের বাসাই কাজ করি,আর সেখানে গেলে তো অনেক দেরি হবে,
তোমরা বরং গিয়ে ঘুরে আসো কেমন,
সবুজ:-রাসেল দেখ ভাবির রাগ তুলিস না,
ভাবির কথা এই বাড়ির কেউ ফেলতে পারেনা,আর একটু সময়ের জন্য কিছুই হবেনা,তুই বরং সেখান থেকেই চলে আসিস,
রাসেল রহিমা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনো অন্য দিকেই মুখ করে আছে,
তাই রাসেল কিছু না ভেবেই বলল,
রাসেল:-আচ্ছা চলো যাচ্ছি,
আমি কিন্তু বেশি দেরি করতে পারবো না সেখান থেকেই চলে আসবো,আমাকে আটকাতে পারবে না আবার তোমাদের সাথে এখানে আসার জন্য,
তারপর সবাই আর কোনো কথা না বলে গাড়ি করে নিধি মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে বেশি দূরে না,এইদিকে নিধি আর রাসেল এক গাড়ি তে তাই নিধি শুধু বার বার রাসেলের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে যেটা রাসেলের একটু ভালো লাগতাছেনা,
নিধি:- ঐ তুমি কি বোবা নাকি হুম,
আমি কখন থেকে কথা বলার জন্য ছটফট করতেছি আর তুমি সেই চুপ করেই আছো,
কথা বলতে পারনা,
রাসেল:-দেখো নিধি আমার বেশি কথা বলা একদম পছন্দ না,তাই তুমি যদি একটু চুপ করতে তাহলে খুসি হতাম,
নিধি:-আমাকে যতই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করোনা কেনো তোমাকে আমি ছাড়ছি না,
আমার বুকের খাচায় তোমাকে বন্ধি করবই,
তুমি দেখে নিয়ো মনে মনে,
এইদিকে বেশি দূরে না হওয়াই কিছু সময়ের মধ্যে নিধির মামা বাড়ি চলে আসে,এই বাড়ি টা ও অনেক বড়ো,
অনেক লোকজনে ভর্তি,সবাই নেমে পরে আর রাসেলের পিছু তো নিধি ছাড়ছেই না,
সবাই গিয়ে সবার সাথে কথা বলে আর রাসেল কেউ পরিচয় করিয়ে দেয়,
নিধি রাসেলের হাত ধরে বাড়ির সব কিছু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে,যেটা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজনের চোখে আড়াল করতে পারেনি,
রেগে ফায়ার হয়ে যাচ্ছে,এইভাবে রাসেলের হাত নিধি ধরে থাকবে কেনো,আর সে আর কেউনা সে হলো জেরিন,আপনারা তো আবার কিছু বুঝতে চান না অবশ্যই আপনাদের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জেরিন এখানে কেনো,
তাহলে চলে শুনে নেই,আসলে নিধির বড়ো মামা হলো পুলিশের ডিআইজি আর সেই জেরিন কে ইন্ভাইট করেছে,
জেরিন:-বাড়িতে থাকতে তোমার ভালো লাগেনা তাই বাইরে ঘুরতে যাবে,বলে এখন ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে আবার হাতে হাত রেখে ঘুরে বেরাও হুম তোমার হচ্ছে আগে বাড়িতে যেয়েনেই,
মনে মনে,
এইদিকে ঘুরতে ঘুরতে রাসেলের চোখ আটকে যায় জেরিনের উপরের আর বুঝতে পারে নিধি যে হাত ধরে রেখেছে সেটা জেরিন দেখছে আর চোখ দিয়ে আগুন বেড় হচ্ছে,
রাসেল:-জেরিন এখানে কি করে,
আল্লাহ জানে বাড়িতে গেলে আমার কি অবস্থা করে, কতো করে বললাম এই মেয়েকে আমার হাত ধরতে কিন্তু এই খাতচোর মেয়ে কি শোনে কারো কথা,মনে মনে,
এইদিকে জেরিন ধিরে ধিরে রাসেলের সামনে আসে,আর নিধি কে উদ্দেশ্যে করে বলে,
জেরিন:-ম্যাডাম আপনাদের দুইজন কে কিন্তু সেই মানিয়েছে, মনে হয় আল্লাহ আপনাদের একে অপরের জন্যই সৃষ্টি করেছে,
জেরিনের চোখে স্পষ্ট পানি যেটা রাসেলের চোখকে আড়াল করতে পারেনা,
নিধি:- ধন্যবাদ আপনাকে,
অনেক টাই খুশি হয়ে বললাম,
রাসেল:-দেখুন ম্যাডাম আপনে যেমনটা ভাবতেছেন তেমন কিন্তু কিছুই না,
আর এই মেয়েটা আমার বোনের মতো,
আপনে যেটা ভাবছেন সেটা ভুল,
রাসেলের কথা শুনে নিধি রেগে সেখান থেকে চলে যায়,আর জেরিন তো রেগে আছেই,
জেরিন:-তুই আগে বাসাই আই তারপর তোর ক্লাস আমি নিচ্ছি,বাসাই থাকতে ভালো লাগে না ভালো লাগার জন্য ঘরে বউ রেখে বাইরে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘোরা বাসাই আই বের করবো,
রাসেল:-দেখো জেরিন তুমি ভুল ভাবতাছো,
আমি এখানে আসতেই চাইনি,
আমাকে এখানে একজন আসতে বাধ্য করেছে,সেটা আমি তোমাকে পরে খুলি বলছি,
এইদিকে রাসেল আর জেরিনের কথা একজনের চোখ আড়াল করে না,সে হলো রাসেলের মা,
সে ধিরে ধিরে তাদের কাছে আসে আর বলে,
রহিমা:-রাসেল এই মেয়েকে তুই কি চেনোস নাকি,
যেই ভাবে কথা বলতাছিস মনে হচ্ছে তুই এই মেয়েকে ভালো ভাবেই চেনস,
জেরিন:-আন্টি আপনে কি ওকে চেনেন নাকি,
আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে আপনে ওকে খুব ভালো করেই চেনেন,
রহিমা:-চিনবনা কেনো ওতো আমার ছেলে,
ওকে কি আমি ভুলতে পারি নাকি,
ছেলে কথাটা শুনে জেরিন অনেক বড়ো একটা শক্ড খাই,আর দ্রুত রহিমা চৌধুরীর পায়ে ধরে সালাম করে সত্য টা বলতে যাবে তখনই,
রাসেল:-মা এহলো পুলিশ ক্যাডার জেরিন,
আর আমি এর বাসাই কাজ করি,তাই চিনতে কি ভুল করতে পারি বলো,
রাসেল এই কথাটা বলার সময় চোখ থেকে পানি পরতেছিলো,তবুও খুসি লাগছে নিজের বউয়ের মুখে মায়ে সামনে কাজের লোক শব্দ টা না শুনে নিজেই বলতে পেরেছে ভেবে,জেরিন একটু কষ্ট পেলো রাসেল এইভাবে কথা বলার জন্য,আর জেরিন বলে ওঠে,,,,,
চলবে…….
#রাখালের_বউ_যখন_বিসিএস_ক্যাডার
লেখক:-রাসেল (কালো ভূত)
______৯পর্ব______
?
?
জেরিন:-আচ্ছা আন্টি আপনেরা থাকেন আমি আসি কেমন,আমার আবার একটু কাজ আছে,বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম,
রাসেল এইভাবে মায়ের সামনে নিজেকে কাজের লোক বলতে পারলো,আর পারবেইনা কেনো আমিতো তার সাথে বউ হয়েও কাজের লোকের থেকেও খারাপ ব্যবহার করি,তাহলে আমার এখন কষ্ট হচ্ছে কেনো,আর ঐ মেয়ে কে ওর সাথে দেখেই বা কেনো আমার জেলাস হচ্ছিলো,
তাহলে আমি কি ওকে ভালোবাসে ফেলেছি না এটা কখনোই হবেনা,
এইদিকে রাসেল কথাগুলো বলার সময় চোখে পানি ছিলো যেটা রাসেলের মা বুঝতে পারে,
যে রাসেল কিছু তো তার থেকে লুকিয়ে রাখছে,
তাই রাসেল কে একটা ফাকা রুমে নিয়ে আসে রহিমা চৌধুরী,
রহিমা:-আচ্ছা রাসেল আমাকে যদি মা মনে করে থাকিস তাহলে সত্যি করে বল ঐ মেয়েটা সত্যি কি তোর মালিক,
রাসেল অনেক টা সময় ভেবে আমতা আমতা করে বলে,
রাসেল:-হুম মা উনি আমার মালিক,
উনার বাসাই তো আমি কাজ করি,
রহিমা:-শোন যতই শাখ দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করস না কেন, মাছ কিন্তু ঠিকই বোঝা যায়,
আর আমি তো একজন মা তাহলে ছেলের মিথ্যা কিভাবে না বুঝতে পারবো বল,এখন সত্যি করে বল জেরিন তোর কি হয়,কারণ যখন তুই কাজের লোক বলছিলি তখন তোর চোখে স্পষ্ট পানি দেখেছি আমি,যে পানি কোনো মালিকের জন্য নই বরং কোনো আপন মানুষের জন্যই আসে,
রাসেল আর সত্য না বলে থাকতে পারে না,
সোজা ওর মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়,
রাসেল:-মা জানো ঐ জেরিন আমার বিবাহিত স্ত্রী,
কি সেটা ও কখনো মানে না কারণ আমি একটা মূর্খ রাখাল ছেলে,
তারপর রহিম চৌধুরী কে রাসেল শুরু থেকে সবটাই খুলে বলে,শুধু রাসেল যে বিসিএস ক্যাডার সেটা বাদে,
রহিমা:-কি বলিস এতো সুন্দর মিষ্টি একটা মেয়ে আমার ছেলের বউ,তার আবার তোর সাথে এমন করে,দাঁড়া আমি এখনই দেখছি ওকে,ওর সাহস কি করে হয় আমার ছেলে কে কষ্ট দেওয়ার,
রাসেল:-না মা কথা দাও আমাদের এই সম্পর্কের কথা যেনো কেউ না যানে,আর তুমি জেরিন কে কিছু বলবে না কারণ আমি চাই ও নিজে থেকেই শুধরে উঠুক,
রহিমা:-ঠিক আছে কিন্তু আমি তোর কষ্ট দেখতে পারবো না এই বলে দিলাম হুম,
রাসেল:-আমার কোনো কষ্ট হবেনা মা,
আমার বুকে শতো কষ্ট থাকলেও তোমার মুখের ঐ মিষ্টি কথা শুনলেই সব কষ্ট নিমিষেই দূরে পালিয়ে যায়,
রহিমা:-পাগল ছেলে একটা,
ওর কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বললাম,
আচ্ছা এখন চল তাহলে আর মন খারাপ করবিনা একদম,
রাসেল:-যথা আগ্গা মাই ডিয়ার মাদার বিডি,
আপনার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো,
তারপর মা ছেলে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে,
নিচে এসে খাবার পর্ব শেষ করে নেই,
রাসেল:-মা আমি তাহলে এখন আসি,
বুঝতেই তো পারতেছো আমার সামনে কি অপেক্ষা করতেছে,
রহিমা:-আচ্ছা বাবা দেখে শুনে যাস আর এইনে এই কাডটা তোর কাছে রেখে দে, যখন যা লাগে নিয়ে নিবি,
রাসেল:-না মা এটার কি দরকার বলো,
আর আমার তো টাকার কোনো দরকার পরে না,
জেরিন যা দেই সেটা দিয়েই হয়ে যায়,
রহিমা:-শোন বাবা তোর কোনো কথা আমি শুনবো না,তোকে এটা নিতেই হবে এটাই আমার শেষ কথা,
ব্যাস কি আর করা রাসেল না নিয়ে কোনো উপায় খুজে পেলোনা তাই কাডটা নিয়েই বাসাই আসার জন্য রওনা দেই,রাস্তাই হঠাৎ দেখতে পায় ডিজের ডান হাত রাহাত কে,রাসেল ধিরে ধিরে রাহাতের পিছনে যেতে শুরু করে,পিছু করতে করতে এক সময় একটা জঙ্গলে এসে আটকে যায়,কারণ
সামনে একটা ইয়া বিশাল বাড়ি,চারিদিকে অনেক গার্ড দিয়ে পাহাড়াই রেখেছে,তাই ভিতরে না গিয়ে সেখান থেকে চলে আসে,বাসাই আসতেই দেখতে পায়, জেরিন ছোফায় বসে রাগী চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে,
রাসেল:-জেরিন তুমি এখনো খাবার খাওনি মনে হচ্ছে,
জেরিন:-ঐ তোর সাহস কি করে হলো ঐ বাড়িতে যাওয়ার,আরঐ মেয়েটা কে,
খুব মজা লাগছিলো হাতে হাত রেখে একসঙ্গে হাটতে তাইনা,
রাসেল:-জেরিন বিশ্বাস করো আমার সাথে ঐ মেয়ের কোনো কিছু নেই, ওটা নিধি আমার চাচাতো বোন,
জেরিন:-একটু সময়ের জন্য না হয় ধরেই নিলাম নিধি তোর চাচাতো বোন,
কিন্তু কথা হলো এতো বছর হলো আমি শশুর শাশুড়ি নেই বলেই জেনেছি,তাহলে হটাৎ আজ কোথা থেকে তারা আসলো,যেখানে তারা এই দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী,
রাসেল:-আমার সাথে তাদের কোনো না কোনো ভাবে দেখা হয়,আর তাদের কোনো সন্তান নেই একটা ছেলে ছিলো ছোট বেলায় হারিয়ে গেছে,
আর আমার ও কোনো পরিবার নেই তাই তারা আমাকে নিজের ছেলে ভাবে,
জেরিন:-বুঝলাম কিন্তু কথা হলো গিয়ে,
আমার শাশুড়ির কাছে তুই কেনো বললি তুই আমার বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে কাজ করিস,
রাসেল:-আমাকে কি তুমি স্বামী হিসাবে মানো,
কখনো কি মন থেকে বলেছো যে এই মূর্খ রাখাল টা তোমার স্বামী,ঈখনো কাজের লোক ছাড়া অন্য কিছু ভেবেছো,
জেরিন:-তোকে আমার স্বামী মানতে বয়েই গেছে,
আর বাকি রইল কাজের কথা,কাজ করছিস বলেই এখনো তোর পেটে আমার টাকার ভাত যাচ্ছে,বেশিনা আর দুইমাস তারপরেই তুই তোর রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়,
রাসেল:-যখন স্বামী হিসাবে মানতেই পারো না তাহলে এখন এইসব কথা কেনো বলতেছো,
আর হ্যা এই দুই মাস না হয় কাজের লোক হিসাবেই এই রাখাল টাকে সহ্য করো,
জেরিন:-বাববাহ এখন ঠিকই অন্য মেয়ে পেয়ে আমার মুখে মুখে কথা বলতাছিস,
রাসেল আর কোনো কথা না বলে সোজা তার রুমে চলে যায়,আর এসে রান্না করতে চলে যায়,
রাসেল:-কি ভেবেছে ও শুধু শিক্ষিত আর ভালো চাকরি করলেই তারা মানুষ আর মূর্খ দিন মুজুররা কি মানুষ না, অনেক সহ্য করেছি ওর অত্যাচার আর সহ্য করবো না,আমি দেখিয়ে দিবো কোনো রাখাল ও পারে বিসিএস বউ এর স্বামী হয়ে উঠতে,
একদিন রাসেল বাড়িতে নেই কোথাও যেনো গেছে,জেরিন ছোফায় বসে কাজ করতেছে তখনই কলিং বেলটা বেজে ওঠে,
জেরিন:-এখন আবার কে এলো, নিশ্চয়ই ঐ ছোটলোক কাজের লোকি এসেছে,তাই মনে অনেক টা রাগ নিয়ে দরজা খুললাম,আর দরজা খুলে আমিতো অবাক কেননা সেই দিনের মেয়েটা,
নিধি:-হ্যালো ম্যাডাম কেমন আছেন,
জেরিন:-হা আমি অনেক ভালো আছি আপনে কেমন আছেন,আর এখানে হটাৎ কি মনে করে,
নিধি:-হুম ভালো আছি,আর তেমন কিছু না এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম রাসেলের সাথে একটা দেখা করে যায়,
এটা শুনে তো জেরিনের অনেক টাই রাগ উঠে যায়,
জেরিন:-সে তো এখন বাসাই নেই,
কোথায় যেনো গেছে,আপনে বসেন আর কি খাবেন চা না কফি,
নিধি:-না কিছু খাবোনা ধন্যবাদ ম্যাডাম আসি তাহলে,মনটা খারাপ করে,
তারপর নিধি মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে আসে,আর একটু পরে রাসেল বাসাই আসে,
জেরিন রাসেলের গালে ঠাসসসস ঠাসসসস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়,রাগে যেনো চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে,রাসেল তো কিছু বুঝতেই পারলো না কেনো এইভাবে থাপ্পড় দিলো,
জেরিন:-এটা কোনো হোটেল না যে কোনো মেয়ে এসে তোকে খুজবে,এটা একটা ভদ্রলোকের বাড়ি,
আমার এখানে থাকতে হলে এইসব চলবে না,
রাসেল কিছু বুঝতে পারেনা,
কিন্তু আন্দাজ করতে থাকে নিশ্চয়ই নিধি এসেছিলো,বেচারা কি আর করে গালে হাত দিয়ে রুমে চলে আসে,বিকালে নিধির কাছে ফোন দেই,
রাসেল:-তুমি এই বাসাই কেনো এসেছিলে সেইটা কি জানতে পারি,
নিধি:-সেখান দিয়েই যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু দেখা করেই যায় কিন্তু কি হলো তোমার দেখাতো পেলামি না,
রাসেল:-শোনো তুমি আমাকে না বলে এই বাসাই কখনো আসবেনা,বলে দিলাম আসলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না,বলেই ফোন রেখেদিলাম,
নিধি:-যাহ বাবা মহারাজের আবার এতো রাগ কেনো হলো, নিশ্চয়ই ঐ পুলিশ ডাইনি টা কিছু বলেছে আমার পাগল টাকে,মনডাই কয় ডাইনিটাকে ইনজেকশন দিয়ে পাগল বানিয়ে দেই,
এইভাবে কেটে যায় একটি মাস,এখন জেরিন অনেক বেশি অত্যাচার করে রাসেলের উপর যেইটা রাসেল নিরবে সহ্যকরে,কারণ রাসেল জানে জেরিন এখন অন্য কারো সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে,
আপনেরা অবশ্যই ভাবতাছেন রাসেল কি করে বুঝতে পারলো জেরিন অন্য কারো সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে,তাহলে চলুন কিছু দিন আগের একটা ঘটনা দেখে আসি,রাসেল একদিন বাজার থেকে হেটে হেটে আসতেছে তখনই একটা কফি শপে চোখ আটকে যায়,যেখানে জেরিন একটা ছেলে সাথে বসে কফি খাচ্ছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা মেইড ফর ইজ আদার,রাসেলের চোখে নোনা পানি ভর করে,কিছুতেই যেনো বাধা মানছেনা চোখের পানি,
রাসেল:-হাইরে জেরিন তোকে আপন করে পেতে কতই না কষ্ট সহ্য করছি আর একটি বারও ভেবে দেখলিনা এই রাখল টা তোকে কতটা ভালোবাসে,
চোখে পানি মুছে ধিরে ধিরে নিনিদের বাড়িতে চলে আসে,কেননা রাসেলের যখন বেশি কষ্ট হয় তখনই রহিমা চৌধুরীর কাছে আসলেই সব কষ্ট যেনো নিমিষেই দূর হয়ে যায়,বাসাই এসে দেখে রাসেলের মা ছোফায় বসে আছে,রহিমা চৌধুরী ঠিকই বুঝতে পেরেছে ছেলের বুকে কষ্টের মেঘ জমেছে,যেটা কেউ দেখছে না,
রহিমা:-বাবা তোর কি হয়েছে মুখটা এমন শুখনো লাগছে কেনো,
এইদিকে রাসেল কিছুই বলছেনা,
বাড়ির সবাই তো চিন্তাই পরে গেলো,রাসেলের কি হলো কনো কথা বলছে না,
রায়হান:-রাসেল তোর কি হয়েছে এইভাবে মন খারাপ করে আছিস কেনো,কি হয়েছে বল আমাদের,
রাসেল:-কিছুনা বাবা এমনি একটু মন খারাপ,
রহিমা:-তোর মন খারাপ আবার কেনো,
কি হয়েছে সব খুলে বল,
রাসেল:-মা কিছু হয়নি,
তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করছো না কেনো,
রাসেল গিয়ে রহিমা চৌধুরীর কোলে মাথা রেখে ছোফায় শুয়ে পরে,আর রহিমা চৌধুরী রাসেলের মাথায় হাত বুলিয়ে এ দিচ্ছে,এইটা করলেই যেনো রাসেলের সকল কষ্ট হামেসাই দূর হয়ে যায়,
রায়হান:-বাবা রাসেল আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিছি,তোর বিয়ে দিবো,
বিয়ে কথাটা শুনেই তো রাসেল অবাক হয়ে যায় আর রহিমা চৌধুরী তো রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে,আর নিধি তো সেই খুসি কেননা সে ভেবেছে তার বড়ো আব্বু তার সাথেই বিয়ের কথা বলবে,
রাসেল কিছু বলেনা, রহিমা চৌধুরী ও আগের মতোই রাসেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,হটাৎ
রহিমা চৌধুরীর চোখ আটকে যায় রাসেলের,,,,
চলবে…..