রাগী বর,পর্ব:০১
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া
ছোঁয়ার মা বাবা ছোঁয়াকে জোর করেই বিয়ে দিচ্ছে।ছোঁয়া মোটেও এখন বিয়ে করতে রাজি নয়।সবে মাত্র ছোঁয়া ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে।আর এখনি ছোঁয়ার মা বাবা ছোঁয়াকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।আর আজকে ছোঁয়ার বিয়ে।ছোঁয়া মোটেও এই বিয়েতে খুশি নয়।শুধু মাত্র মা বাবার খুশি আর জেদের কাছে হার মেনে এই বিয়েটা করছে।
.
ছোঁয়াকে নিয়ে সবাই অনেক মজা করছে।ছোঁয়ার সেইটা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।উল্টে ছোঁয়ার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।ছোঁয়া মনে মনে বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: একে তো এত ভারি লেহেঙ্গা আর গহনা সামলে রাখতে পারছি না,,,,
তার উপর এদের বকবকানি আমি আর সহ্য করতে পারছি না,,,
হাই আল্লাহ এই শয়তানিগুলোর হাত থেকে তুমিই রক্ষা করতে পার,,,,
.
ছোঁয়া আর এদের কথা সহ্য করতে না পেরে একসময় বলেই ফেলল,,,
.
ছোঁয়া ::::: প্লিজ তোমরা চুপ করবে এখন,,,,
একে তো এত ভারি লেহেঙ্গা আর গহনা তার মধ্যে তোমরা,,,,
শোন এই বিয়েটা আমি মোটেও নিজের ইচ্ছায় করছি না তোমাদের খুশি আর জেদের জন্য করছি,,,,
প্লিজ তোমরা একটু চুপ কর আর যদি চুপ করে না থাকতে পার তাহলে আমার ঘর থেকে প্লিজ যাও,,,,
.
ছোঁয়ার খালা ::::: ঠিক আছে আমরা চুপ করছি,,,
.
সবাই একদম চুপ হয়ে গেছে।বিয়ের সময় হয়ে গেছে।ছোঁয়া খুব কান্না করছে।কারন ছোঁয়া অপরিচিত একটা মানুষের হয়ে যাচ্ছে।ছোঁয়া নিজেকে মানিয়ে তুলবে কিভাবে সে বাড়িতে।
.
বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে।এখন ছোঁয়ার বিদায় দেওয়ার পালা।ছোঁয়া খুব কান্না করছে ওর মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে।ছোঁয়া চলে যাচ্ছে বলে সবাই কান্না করছে ছোঁয়াকে নিয়ে।
.
যে খালাত ভাইগুলো ছোঁয়াকে নিয়ে কোন চিন্তা করত না আজ সেই ভাইগুলো ছোঁয়ার জন্য কান্না করছে।ছোঁয়াও ওদেরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।ওরা ছোঁয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।এখনও ছোঁয়ার কান্না থামছে না।
.
এর ভিতরে ছোঁয়া এক মিনিটের জন্যও ছোঁয়া ও ওর স্বামীর দিকে তাকাল না।ছোঁয়ার চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছে।ছোঁয়া ও ওর শ্বশুরবাড়িতে পৌছে গেছে।গাড়ি থেকে নামলো।ছোঁয়ার শ্বাশুড়ি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।ছোঁয়ার ননদ আগেই চলে এসেছে।ছোঁয়ার ননদের নাম লাবন্য।লাবন্য বলছে,,
.
লাবন্য ::::: ভাইয়া ভাবিকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আস,,,,
.
ছোঁয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে এখনও।ছোঁয়ার স্বামী ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে ভিতরে গেল।কিছু নিয়ম পালন করিয়ে লাবন্য আর আরও কিছু মেয়ে ছোঁয়াকে ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসল।
.
ছোঁয়া একলা একা ঘরে বসে রয়েছে।আর মনে মনে ভাবছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: যতই আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই বিয়েটা হোক না কেন যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সে তো আমার স্বামী,,,,
তাকে তো আমি দূরে ঠেলে দিতে পারি না,,,,
আমাকে তো তার কাছে যেতেই হবে,,,,,
.
ছোঁয়া একটু পরে দরজা খোলার শব্দ পেল।ছোঁয়া আবারও চোখ বন্ধ করে নিল।কারন ছোঁয়ার খুব লজ্জা করছে ছোঁয়া যে তার স্বামীর দিকে তাকাতে পারছে না।অনেক কষ্টে তাকালও ছোঁয়া ওর স্বামীর দিকে।
.
ছোঁয়া তো ওর স্বামীর দিকে তাকিয়ে পুরাই অবাক।কারন এ কনক যে বিজনেসে সবার থেকে টপে আছে।তার সাথে ছোঁয়ার বিয়ে হয়েছে।সেটা ছোঁয়া কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।ছোঁয়া বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।একটু পরে কনক রাগি গলায় বলে উঠল,,,
.
কনক ::::: আপনি এইখানে কি করছেন আমার ঘরে,,,,,
এখনি বের হন এইখান থেকে,,,
আর প্লিজ এই ন্যাকামো আমার সামনে দেখাবেন না,,,,
আর শুনন আপনি আমার সাথে এক বিছানায় থাকবেন না আপনি নিচে থাকবেন,,,,
ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট,,,,
.
ছোঁয়া কনকের এই কথাগুলো শুনে ভয়ে বিছানায় বসে পড়ল।বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।ওয়াশরুমে ঢুকেই বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: এত রাগ উনার এইরকম রাগি মানুষ জীবনেও দেখিনি,,,,
আল্লাহ এই রাক্ষসটাকে আমার কপালে লিখে রেখেছিলে,,,,
উনি যদি রাগি হয়ে থাকে আমি তার থেকেও দ্বিগুন রাগি,,,,
উনি আমাকে কি মনে করেন উনার রাগ সবসময় আমি সহ্য করব না না আমি সহ্য করব না,,,,
ওফফ সেই গরম লাগছে এখনি চেন্জ করতে হবে,,,,
এত ভারি যে এইগুলো,,,,
.
ছোঁয়া শাড়িটা পড়ে নিল।তারপর বাইরে চলে আসল।ছোঁয়া ওয়াশরুম থেকে বের হতেই না হতেই কনক ছোঁয়ার দিকে বালিশ আর কাঁথা ছুড়ে মারল।কনক ছোঁয়াকে বলছে,,,,
.
কনক ::::: নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়ুন,,,,,
ঘুমানোর আগে লাইটটা অফ করে দিয়ে আসুন,,,,
.
ছোঁয়া ::::: ঠিক আছে,,,,,
.
ছোঁয়া লাইটটা অফ করে দিয়ে এসে শুয়ে পড়ল নিচে।ছোঁয়া কোনদিন নিচে শোয়নি।আজ জীবনে প্রথম শোল।ছোঁয়ার খুব শীত করছে।এই সামান্য কাঁথায় ছোঁয়ার হচ্ছে না।ছোঁয়া মনে মনে বলছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: দেখ দেখ রাক্ষসটা কত আরামে ঘুমাচ্ছে আমাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে,,,,
উনার রাগকে আমি মোটেও ভয় পাই না,,,,
উনি উনার রাগ নিয়ে থাকুক আমি আমার মত থাকব,,,,
আজকেই আমাদের বিয়ে হয়েছে আর আজকের এই রাতেই উনি আমার সাথে এইরকম ব্যবহার করলেন,,,,,
.
ছোঁয়া কান্না করছে।কান্না করতে করতে বালিশ একদম ভিজিয়ে ফেলেছে।ছোঁয়া সারারাত ঘুমাতে পারল না।আযান দিয়ে দিয়েছে।ছোঁয়া উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে ওযু করে এসে নামাজটা পড়ে নিল।ছোঁয়া মনে মনে বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: কি রকম মানুষরে নামাজ পড়তেই উঠছে না।উনি কি সারাটা খন রাগ নিয়েই থাকেন নাকি,,,,
রাক্ষস একটা,,,,,
রাগ নিয়েই থাকুন আপনি আপনার কাছে আমার কিছু যাই আসেনা,,,,
.
সকাল হয়ে গেছে।লাবন্য বাইরে থেকে ডাক দিচ্ছে ছোঁয়া আর কনককে।ছোঁয়া তাড়াতাড়ি করে কাঁথা আর বালিশটা উপরে উঠিয়ে নিল।তারপর ছোঁয়া বলছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: জ্বি খুলছি দরজাটা,,,
.
ছোঁয়া দরজাটা খুলে দিল।লাবন্য বলছে,,,
.
লাবন্য ::::: ভাইয়া কি উঠেছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: না এখনও উঠেনি ,,,,
.
লাবন্য ::::: তুমি তাড়াতাড়ি করে ফ্রেস হয়ে নিয়ে নিচে চলে এস,,,,
.
ছোঁয়া ::::: ওকে,,,,,
.
ছোঁয়া আবার ভিতরে ঢুকল।ইসস কেমন করে শুয়ে রয়েছে।একে কেউ দেখে মনে করবে এ একটা রাগি মানুষ।সব সময় রাগি রাগি ভাব নিয়ে থাকে।সব কিছু নিয়ে সিরিয়াস থাকে।ছোঁয়া শুধু তাকিয়ে দেখছে কনক।
/
.
.
চলবে।
[আশা করি সবার ভালো লাগবে।]