রাগী বর,০৩,০৪
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া
পর্ব:০৩
.
ছোঁয়া ::::: স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছে এই অধিকার।আপনার কাছে আসা,আপনার পাশে বসা,আপনার সাথে সবসময় চলা এইসব অধিকার সব আল্লাহ আগে দিয়ে রেখেছে আগে থেকেই।তাতেও যদি আপনার সমস্যা হয় আমার কিছু যাই আসে না।সবাই নিচে আমাদের কে খুজছে নিচে যাচ্ছি আমি।
.
ছোঁয়া নিচে চলে যাচ্ছে।হাতটা ধলতে ধলতে যাচ্ছে।হাতে একদম রক্ত জমে গেছে।কনক নিজেই নিজেকে বলছে,,,
.
কনক ::::: বেশি সাহস ওর।আজকের শুধু রাতটা আসতে দাও তখন বুঝাব আমি কি জিনিস।আমার জীবনে এই মেয়ের কোন জায়গা নেই।কখনই এই মেয়েকে নিজের স্ত্রী বলেও মানব না।আই হ্যাড হার।
.
কনকও নিচে চলে আসল।বিকেল হয়ে গেছে।একে একে অনেক গেস্ট চলে যাচ্ছে।শুধুমাত্র আত্নীয়রা চলে গেল।একটু রাত হতে না হতেই ছোঁয়ার পরিবাররা চলে গেল।চলে যাওয়ার সময় ছোঁয়া ওদেরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করল।
.
সবাই রাতের বেলা নিচে বসে রয়েছে।সবাই মিলে এখন একটা অনুষ্ঠান করছে।এখন নাকি নাচ আর গান হবে।এই অনুষ্ঠানটা করছে ছোটরা।তাদের মধ্যে অনন্যা রয়েছে।ওরা একে একে সবাইকে নিয়ে মজা করল।এখন বাকি রইল ছোঁয়া আর কনক।তাই অনন্যা বলছে,,,
.
অনন্যা ::::: যাদের বিয়ে হয়েছে তারাই তো কোন কিছুই করল না।এখন তাদেরকে সুন্দর একটা নাচ দিতে হবে।ভাইয়া আর ভাবি তোমাদের দুইজনকে সুন্দর একটা নাচ দিতেই হবে তাও আবার রোমান্টিক গানে।
.
ছোঁয়া ::::: কি বলছ অনন্যা তুমি,,,,
.
কনক ::::: কি বলছিস টা কি তুই অনন্যা।তুই ভালো করেই জানিস আমি এইসব অপছন্দ করি।
.
অনন্যা ::::: তুমি অপছন্দ করলে কিছু যাই আসে না।আজকে তোমার কোন কথা শুনা হবে না।তুমি আর ভাবি এখন রোমান্টিক গানে ডান্স করছ এইটাই ফাইনাল।তাড়াতাড়ি আস তোমরা এইখানে।
.
অনন্যা নিজেই ছুটে এসে কনক আর ছোঁয়াকে টেনে ধরে নিয়ে গেল।সামনে ধার করিয়ে দিল।ছোঁয়া আর কনক বুঝতে পারছে না এখন ওরা কি করবে।সবার জোরাজুরিতে দুইজনেই রাজি হয়ে গেল।কনক যখন ছোঁয়াকে টাচ করল তখন ছোঁয়া সাথে সাথে কেঁপে উঠল।কারন জীবনে প্রথম ছোঁয়াকে কোন ছেলে টাচ করল।
.
ছোঁয়া শুধু বারবার কেঁপেই চলেছে।দুইজনের নাচ শেষ।সবাই জোরে জোরে হাততালি দিল।ছোঁয়া লজ্জা পেয়ে উপরে চলে গেল।আর মনে মনে বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: রাক্ষসটা আমাকে ছুল আর আমার কোনরকমই লাগল না।আর উনি এত এইরকম কেন সকলের সাথেই রাগ দেখিয়ে কথা বলেন।মানছি যে উনি একটা রাগি মানুষ তাই বলে এত রাগ দেখাতে হবে।এত রাগ কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি।
.
কনক ঘরে ঢুকেই দরজাটা আটকিয়ে দিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে টান দিল।অনেক শক্ত করে ধরল হাতটা।কনক অনেক রেগে রয়েছে ছোঁয়ার উপর।ছোঁয়া অনেক ব্যাথা পাচ্ছে।ছোঁয়া আর সহ্য করতে পারছে না।ছোঁয়া একসময় বলে উঠল,,,
.
ছোঁয়া ::::: আমার হাত ছাড়ুন আপনি।আমার খুব ব্যাথা লাগছে।হাতটা ছাড়ুন।
.
কনক ::::: হাতে ব্যথা পান আর হাত কেটেই যাক আই ডন্ট কেয়ার।আজকে দুপুরে বেলাই আমার যা খুশি তাই বলেছেন কিন্তু আমি কিছুই বলেনি তাই বলে ভাববেন না যে রাতে কিছু বলব না।এখনই দেখতে পারবেন আমার কত রাগ।এখন তুমি বুঝবে।
.
এই কথা বলে কনক আরও শক্ত করে ধরল ছোঁয়ার হাতটা।ছোঁয়া আস্তে আস্তে করে চিৎকার করে উঠল।কনক হাতে একটা কাঁচের গ্লাস নিল।তারপর সেটা দূরে ছুড়ে মারল।আর ছোঁয়াকে সেই কাঁচগুলোর উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
.
ছোঁয়ার হাত দিয়ে অনেক রক্ত পড়ছে।ছোঁয়া কান্না করছে।তারপর কনক ছোঁয়ার উপর কাঁথা আর বালিশ ছুঁড়ে মারল।আর বলল,,,
.
কনক ::::: লাইট টা অফ করে দিয়ে নিচে শুয়ে পড়।
.
কনক এই কথা বলার পর পরই শুয়ে পড়ল।ছোঁয়ার হাত দিয়ে এতই রক্ত পড়ছে যে না বলার মত।ব্যান্ডেজ যে কোথায় রাখা আছে এই ঘরে সেটা তো ছোঁয়া জানেই না।ছোঁয়া একটা পুরনো শাড়ি বের করে তা ছিড়ে হাতটা কোন রকমে বেঁধে রাখল।
.
তারপর লাইটটা অফ করে দিয়ে ছোঁয়া শুয়ে পড়ল।আর কান্না করতে লাগল।কান্না করতে করতে একসময় ছোঁয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।আজানের শব্দে ছোঁয়ার ঘুম ভাঙ্গল।তারপর ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে ওযু টা করে এসে নামাজটা পড়ে নিল।
.
কালকে রাতে যে ছোঁয়ার হাত দিয়ে রক্ত পড়ছিল সেই রক্ত বোঝা যাচ্ছে।তাই ছোঁয়া পুরোনো কাপড়টা পানিতে ভিজিয়ে রক্ত মুছে দিল।তারপর নিচে চলে আসল।নিচে যেয়ে দেখে কনকের মা আমেনা নিচে রান্না করছে।হাতটা লুকিয়ে নিচে নেমে আসল।আমেনা ছোঁয়াকে দেখে বলছে,,,
.
আমেনা ::::: বউমা তুমি উঠে পড়েছ।কিন্তু তুমি এখনও এইভাবে কেন তুমি রেডি হওনি কেন?
.
ছোঁয়া ::::: রেডি কেন হব আম্মু?কোথায় যাব আমি আম্মু?
.
আমেনা ::::: কালকে তোমাকে কি বলেছি তুমি তোমার পড়াশুনা চালিয়ে যাবে।আজকে তুমি কলেজে যাবে।তাই তো বলছি এখনও রেডি হয়নি।
.
ছোঁয়া ::::: সেটা তো আমি বুঝতে পেরেছি আম্মু কিন্তু,,,,
.
আমেনা ::::: কিন্তু কি?
.
ছোঁয়া ::::: কিন্তু আমার বই খাতাগুলো এখনও আনা হয়নি এখানে।তাহলে আমি কি করে কলেজে যাব আম্মু।আজকে না হয় নিয়ে আসি কালকে থেকে না হয় কলেজে যাব আমি।
.
আমেনা ::::: ঠিক আছে তুমি যেটা ঠিক মনে কর।বউমা এই কফিটা কনককে দিয়ে আস।সকালবেলা সময়মত কফি না পেলে ও আবার রাগারাগি শুরু করে দিবে।তুমি তাড়াতাড়ি দিয়ে আস।
.
ছোঁয়া ::::: হুম ঠিক আছে।আমি দিয়ে আসছি।
.
ছোঁয়া উপরে গেল কফিটা নিয়ে।ছোঁয়া উপরে যেয়ে দেখে কনক ঘুম থেকে উঠে গেছে।কনক ছোঁয়াকে দেখে একটু রেগে গেল।ছোঁয়ার হাতে কফি মগ দেখে বলছে,,,,
.
কনক ::::: তুমি আমার জন্য কফি নিয়ে এসেছ কেন?
.
ছোঁয়া ::::: আসলে আম্মু বলল কফিটা আপনাকে দিয়ে আসতে।আমি ইচ্ছা করে আনি নি।আম্মুর কথা তো আর ফেলতে পারি না।
.
কনক ::::: ও।দাও।
.
ছোঁয়া কফি মগটা কনকের হাতে দিল।কনক এক চুমুক দিয়েই বলছে,,,
.
কনক ::::: কফি একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে।কতবার বলেছি আমাকে গরম কফি দিতে কে শুনে আমার কথা।তোমার সব দোষ তুমি ইচ্ছে করেই লেট করে নিয়ে এসেছ কফি।
.
ছোঁয়া ::::: কি আমি ইচ্ছে করে লেট করেছি।আমি তো কোন লেটই করেনি।
.
কনক ::::: হ্যা তুমি ইচ্ছে করেই লেট করেছ।
.
এই কথা বলে রাগ দেখিয়ে ছোঁয়ার শরীরে কফিটা ছুড়ে দিল।আসলে কফিটা গরম রয়েছে।কনক ইচ্ছে করেই এই কাজটা করেছে ছোঁয়াকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।রাগ দেখিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
.
ছোঁয়া চলে যাচ্ছে ঘর থেকে।ঘরের বাইরে এসে দেখে আমেনা বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।ছোঁয়া আমেনাকে দেখে বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: আম্মু আপনি এইখানে?
.
আমেনা ::::: আমি সব কিছুই দেখেছি কোন কিছুই আমার কাছ থেকে তুমি লুকাতে পারবে না।নিচে থাকার সময় আমার সন্দেহ হচ্ছিল যখন তুমি তোমার হাতটা বারবার লুকাচ্ছিলে আমার কাছ থেকে।তাই পিছু নিয়েছি।আর তাই এইসব দেখতে পেলাম।
.
ছোঁয়া ::::: আম্মু উনি আমাকে মোটেও ভালোবাসেন না।উনি তো আমাকে তার পাশেই চান না তার স্ত্রী বলে মেনে নিতে চান না।তাহলে আমি উনাকে আমার আঁচলে বেঁধে রাখব কি করে।
.
আমেনা ::::: এইভাবে সব অত্যাচার সহ্য না করে প্রতিবাদ কর তাহলেই নিজের আঁচলে বেঁধে রাখতে পারবি এই রাগী বরটাকে।আর চুপ করে থাকবি না তুই।সাথে সাথে প্রতিবাদ করে উঠবি তুই।
.
ছোঁয়া ::::: হুম এখন থেকে আমি তাই করব আম্মু।আমি আর সহ্য করব না উনার অত্যাচার।আজকে থেকেই প্রতিবাদ করব আমি।
.
আমেনা ::::: এখন আর এইখানে থাকার কোন দরকার নেই তুমি এখন নিচে চল।
.
ছোঁয়া ::::: হুম আম্মু চলুন।
.
ছোঁয়া আর আমেনা নিচে চলে আসল।আমেনা রান্না করছে।ছোঁয়া আমেনাকে সাহায্য করছে।একটু করে অনন্যা আসল এইখানে।এসেই ছোঁয়াকে বলা শুরু করল,,,
.
অনন্যা ::::: ভাবি তুমি কেমন আছ?
.
ছোঁয়া ::::: আলহামদুলিল্লাহ।তুমি।
.
অনন্যা ::::: এই তো আছি আর কি।
.
ছোঁয়া ::::: মানে।
.
অনন্যা ::::: কিছু না।
.
কে যেন কলিংবেলটা বাজাল।অনন্যা যেয়ে দরজাটা খুলে দিল।কনকের বন্ধু জয়।অনন্যা দেখে বলছে,,,
.
অনন্যা ::::: আপনি।ভিতরে আসুন।
.
জয় ::::: হুম।
.
অনন্যা ::::: কিন্তু ভাইয়া তো,,,,ওই তো ভাইয়া এসে গেছে।
.
অনন্যা ছোঁয়ার কাছে গেল।দুই বন্ধু মিলে গল্প করছে।অনন্যা ছোঁয়াকে বলছে,,,
.
অনন্যা ::::: দেখ ভাবি ভাইয়ার বন্ধু কত হ্যান্ডসাম।আর অনেক রোমান্টিক।ভাইয়ার মত এত রাগি না।
.
ছোঁয়া ::::: তাহলে তো মনে হয় তুমি ভালবাস।
.
অনন্যা ::::: যা।
.
আমেনা আসল এইখানে।আমেনা এসেই বলছে,,,
.
আমেনা ::::: জয় তুমি এসেছ।
.
জয় ::::: হুম আন্টি।
.
আমেনা ::::: তোমার বন্ধুটা তো বিয়ে করে ফেলল তাও আবার রাগি বন্ধুটা।তুমি কবে বিয়ে করবে।
.
জয় ::::: জানি না আন্টি।এখনও মনের মত মেয়ে খুজে পাইনি তো।
.
অনন্যা ::::: কি এখনও মনের মত মেয়ে খুজে পাননি।এতগুলো মেয়ে থাকতে।এত মেয়ের আপনার চোখের সামনে ঘুরছে।
.
জয় ::::: ও মা তাই।তুমি যদি রাজি থাক তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি।
.
.
.
চলবে।
রাগী বর
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া
পর্ব:০৪
.
জয় ::::: ও মা তাই।তুমি যদি রাজি থাক তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি।
.
অনন্যা ::::: আপনি কি বলছেন এইসব?
.
জয় ::::: আমি তো মজা করলাম তোমার সাথে।তুমি সিরিয়াস নিলে নাকি।
.
অনন্যা ::::: ও।না আমি সিরিয়াস নেইনি কথাটাকে।
.
কনক ::::: এইসব কথা বাদ দিয়ে যে কথাটা বলতে এসেছিস সেই কথা বল।আর তোর কথা শেষ হলে আমারও তোকে কিছু বলার আছে।
.
জয় ::::: হুম বলছি।
.
অনন্যা মনটা খারাপ করে উপরে চলে গেল।ছোঁয়াও ওর পিছন পিছন গেল উপরে।আর অনন্যার ঘরে গেল।অনন্যা মন খারাপ করে বসে পড়ল।ছোঁয়া অনন্যার কাছে যেয়ে বসল।তারপর বলতে লাগল,,,
.
ছোঁয়া ::::: আমি জানি তুমি এই কথাটাকে সিরিয়াসভাবে নিয়েছিলে।
.
অনন্যা ::::: উনি কি বুঝেন না আমি সত্যিই ওনাকে ভালোবাসি।আনাকে আমার জীবনসঙ্গী করতে চাই।কিন্তু উনার মনে আমার জন্য কোন জায়গা নেই ভাবি।আমি সত্যিই কথাটাকে অনেক সিরিয়াসভাবে নিয়ে নিয়েছিলাম।উনি কি আমায় একটুও ভালোবাসেন না ভাবি।
.
ছোঁয়া ::::: সেটা তো আমি জানি না।কিন্তু তুমি মন খারাপ করে বসে থেক না।তোমাকে এইভাবে ভালো দেখায় না।আর এখনি কিসের বিয়ের চিন্তা করছ সবে মাত্র দশম শ্রেনিতে পড়।এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।
.
অনন্যা ::::: ভাবি তুমিও তো সবে মাত্র একাদশ শ্রেনিতে পড় তবুও তুমি বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা কেন করলে।তবুও বিয়ে করলে কাকে আমার রাগী ভাইয়াটাকে।
.
ছোঁয়া ::::: আমি কোন বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা করেনি।আব্বু আম্মুর জোর জবরদস্তি আর তাদের খুশির জন্য আমি এই বিয়েটা করেছি।কিন্তু,,,,
.
অনন্যা ::::: কিন্তু কি ভাবি?
.
ছোঁয়া ::::: কিছু না অনন্যা।তুমি এখন নিচে চল।ব্রেকফাস্ট করবে চল।
.
অনন্যা ::::: হুম চল।ভাবি তোমার হাতে কি হয়েছে।ব্যান্ডেজ কেন?
.
ছোঁয়া হাতটা লুকালো।ছোঁয়া এখন কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এখন মিথ্যে কথা বলতে হবে অনন্যাকে।ছোঁয়া হাতটা শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে অনন্যাকে বলতে লাগল,,,
.
ছোঁয়া ::::: কোথায় কিছুই হয়নি তো আমার হাতে।তুমি ভুল দেখছ অনন্যা।তুমি এখন নিচে চল অনন্যা।
.
অনন্যা ::::: হুম চল ভাবি।
.
ছোঁয়া আর অনন্যা দুইজনে মিলে নিচে চলে আসল।সোজা খাবার টেবিলের ওইখানে চলে আসল।আমেনা ছোঁয়াকে দেখে বলছে,,,
.
আমেনা ::::: বউমা তুমি কোথায় ছিলে?তোমাকে খুজছিলাম সেই কখন থেকে আর তোমাকে খুজেই পাওয়া যাচ্ছে না।
.
ছোঁয়া ::::: আম্মু আমি অনন্যার সাথে ছিলাম।আম্মু আপনি কি কিছু বলবেন বা কোন কাজ আছে।কাজ থাকলে আম্মু বলেন আমি এখনি করে দিচ্ছি আম্মু।
.
আমেনা ::::: না বউমা কোন কাজ নেই।সকালের নাস্তা করার সময় হয়ে গেছে।আর তোমার কোন খোজ খবর নেই।তুমি এখনি খেতে বস।
.
ছোঁয়া ::::: আম্মু এখনি খেতে হবে আমাকে।কিন্তু এখন তো আমার কিছুই খেতে ভালো লাগছে না।
.
ছোঁয়ার শ্বশুর কায়সার সাহেব আসলেন।তিনি ছোঁয়াকে বলতে লাগলেন,,,
.
কায়সার ::::: খেতে ইচ্ছে করছে না মানে টা কি?বউমা তুমি কি এখনও নিজেকে মানিয়ে নিতে পার নি নাকি।
.
ছোঁয়া ::::: আব্বু আপনি।আসসালামুলাইকুম আব্বু।আপনি কি যে বলছেন আব্বু তেমন কিছুই না।আমি নিজেকে এই বাড়ির সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছি।
.
কায়সার ::::: ওলাইকুমআসসালাম।তাহলে খেতে চাচ্ছ না কেন?আমি বলছি তোমাকে এখনি খেতে বস।আমি তোমার কোন কথাই শুনব না।
.
ছোঁয়া ::::: জ্বি আব্বু আমি এখনি বসছি।
.
ছোঁয়া বাধ্য হয়েই খাবার টেবিলে যেয়ে বসল।আমেনা ছোঁয়ার প্লেটে খাবার বেড়ে দিল।সবাই খাচ্ছে এখন।সবার খাওয়া শেষ।কায়সার সাহেব কনককে বলছে,,,
.
কায়সার ::::: জয় এসেছিল তো সে এখন কোথায় তাকে দেখতে পাচ্ছি না তো।
.
কনক ::::: আব্বু জয় চলে গেছে।
.
কায়সার ::::: সে কি কথা না খেয়েই চলে গেল।আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করে যেত।একসাথেই বের হতে পারতাম।
.
কনক ::::: আমি আর আম্মু অনেকবার বলছি আমাদের সাথে খেতে কিন্তু বলল যে পরে একদিন খেয়ে যাবে এখন নাকি জরুরি কাজ আছে তাই চলে গেছে।
.
কায়সার ::::: ও।কিন্তু আমার তো জয়ের সাথে জরুরি কথা ছিল।কনক তুই আমাকে জয়ের নাম্বারটা দে।মোবাইলে কথা বলে নিব।
.
কনক ::::: ঠিক আছে নাও।
.
কনক কায়সার সাহেবকে নাম্বারটা দিয়ে দিল।তারপর দুইজনেই বের হয়ে চলে গেল।আমেনা অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলছে,,,
.
আমেনা ::::: কি রে অনন্যা তোর আবার কি হল।এইভাবে মন খারাপ করে বসে রয়েছিস কেন?কি হয়েছে কি তোর?
.
অনন্যা ::::: কিছুই না মা।আমার কিছুই ভালো লাগছে না।আমি এখন আমার ঘরে যাচ্ছি।স্কুলে যেতে হবে আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।আজকে স্কুলে যেতে লেট করতে পারব না আমি।আমি এখন যাই।
.
আমেনা ::::: হুম যা তাড়াতাড়ি।
.
অনন্যা ও ওর রুমে চলে গেল।তারপর রেডি হয়ে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিল।
.
আমেনা আর ছোঁয়া দুপুরের জন্য রান্না করছে।ঠিক এইসময় কলিংবেলটা বেজে উঠল।ছোঁয়া যেয়ে দরজাটা খুলে দিল।ছোঁয়া দরজা খুলে দেখে একটা দাঁড়িয়ে আছে।লোকটা ছোঁয়াকে বলছে,,,,
.
লোকটা ::::: এইখানে ছোঁয়া নামের কি কেউ থাকে।থাকলে তাকে একটু ডেকে দিন।
.
ছোঁয়া ::::: আমিই ছোঁয়া।কি হয়েছে।
.
লোকটা ::::: বই খাতা আর কি যেন পাঠিয়েছে।
.
ছোঁয়া ::::: ও হ্যা।ভিতরে এনে দিয়ে যান প্লিজ।
.
লোকটা ::::: হুম এনে দিচ্ছি।
.
লোকটা সব কিছু এনে দিল ভিতরে।ছোঁয়া কিছু টাকা দিল ভিতরে এনে দেওয়ার জন্য।আর এই বাড়িতে যে কাজ করে রহিম সে সব কিছু উপরে নিয়ে গেল।আমেনা ছোঁয়াকে বলছে,,,
.
আমেনা ::::: বই খাতা সব কিছু চলে এসেছে কালকে থেকে কলেজে যাবে হুম।
.
ছোঁয়া ::::: জ্বি আম্মু।
.
দুপুর হয়ে গেছে।অনন্যা স্কুল থেকে চলে এসেছে।অনন্যা ফ্রেস হয়ে এসে খেতে বসল।আমেনা ছোঁয়াকেও জোর করে খেতে বসাল।ছোঁয়া খাবার নাড়ছে আর মনে মনে বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: আমি যে খেতে বসেছি।ওই রাক্ষসটা কি খেয়েছে।সেই যে সকাল বেলা খেয়েছে।এখনও পর্যন্ত খেল কি না একমাত্র আল্লাহ জানে।রাক্ষসটা যদি আমার সাথে ভালো করে কথা বলত তাহলে ফোন করে জানতে পারতাম খেল কিনা।
.
কনক বসে কাজ করছে।কনকের মনে হল কে যেন ওকে স্মরন করল।এর জন্য কনক চুপ করে বসে রয়েছে।আর অন্যদিকে মন চলে গিয়েছে কনক।কনক ভাবছে এই সময় কনককে কে স্মরন করতে পারে।
.
অফিসের একজন স্টাফ সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছে।আর সেই কখন থেকে বলেই যাচ্ছে,স্যার শুনছেন ফাইলটা সাইন করিয়ে দিন।কনক বিরক্ত হয়ে বলছে,,,
.
কনক ::::: কি হয়েছে টা কি এইভাবে চিল্লাচ্ছ কেন?(রেগে কথাটা বলল)
.
স্টাফ ::::: স্যার ফাইলটা সাইন করাতে নিয়ে এসেছি।
.
কনক ::::: এতে চিল্লিয়ে কথা বলার কি আছে?
.
স্টাফ ::::: সেই কখন থেকে আপনাকে ডাকছিলাম কিন্তু আপনি শুনছিলেন না।
.
কনক ::::: ওকে দাও ফাইলটা।সাইন করে দিচ্ছি।
.
কনক ফাইলটা সাইন করে দিল।একটু পরে কনকের পিয়ন আসল কনকের খাবার নিয়ে।কনককে খাবার দিল।কনক খাচ্ছে।
.
ছোঁয়া কিছুখন ভাত নাড়াচাড়া করার পর গালে হাত দিয়ে মুখে খাবার দিল।ছোঁয়ার গালে হাত দেখে আমেনা ছোঁয়াকে বলছে,,,
.
আমেনা ::::: গালে হাত দিতে নেই।
.
ছোঁয়া ::::: ও ভুলে গেছি।
.
আমেনা ::::: কি হয়েছে তোমার বউমা।সেই কখন থেকে খাবার দিয়েছি এখনও পর্যন্ত কিছুই খাও নি।রান্না কি ভালো হইনি।
.
ছোঁয়া ::::: কি যে বলছেন আম্মু।আমি আসলে ভাবছিলাম ওল রাক্ষ,,,মানে উনি খেয়েছেন নাকি সেইটা চিন্তা করছিলাম তো।
.
আমেনা ::::: ও বুঝতে পেরেছি।তুমি নিশ্চিন্তে খাও।আমার ছেলেটা সেই কখন খেয়েছে।তুমি আরামে খাও।
.
ছোঁয়া ::::: হুম।
.
রাত হয়ে গেছে।সবাই নিচে রয়েছে।কায়সার আর কনক চলে এসেছে।কায়সার আর কনক সোফায় এসে বসল।কিছুখন রেস্ট নিয়ে কায়সার সাহেব সবাইকে বলছে।বিশেষ করে অনন্যাকে বলছে,,,,
.
কায়সার ::::: আমি অনন্যার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি।অনন্যার এস এস সি পরীক্ষা দেওয়ার পর বিয়েটা হবে।
.
অনন্যা ::::: কি বলছ তুমি বাবা।কার সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছ।আমি তো চিনিই না আর এস এস সি র পর বলছ আমার বিয়ে হবে।একটা অচেনা ছেলেকে কি করে বিয়ে করি।
.
কায়সার ::::: আমি কিছুই জানি না আমার কথাই শেষ কথা।
.
এই কথা বলেল কায়সার সাহেব নিজের রুমে চলে আসলেন।অনন্যা বলছে ,,,,
.
অনন্যা ::::: বাবা,,,
.
অনন্যা রাগ করে নিজের রুমে চলে গেল।একে একে সবাই যে যার ঘরে চলে গেল।কনকও নিজের ঘরে চলে গেল।তার কিছুখন পর ছোঁয়াও চলে গেল ঘরে।
.
কনক দরজাটা আটকিয়ে দিল।কনক ছোঁয়ার দিকে বালিশ আর কাঁথা ছুড়ে মারল।আর বলতে লাগল,,,
.
কনক ::::: নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়।আর লাইট অফ করার দরকার নেই আমার কাজ আছে।
.
ছোঁয়াও কিছু কম না।ছোঁয়া বালিশ আর কাঁথা উপরে উঠিয়ে বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: দেখুন কনক ভাববেন না যে এই দুইদিন আপনার দেওয়া কষ্টগুলো সহ্য করেছি তার মানে এই নই যে আজকেও সহ্য করব।আমি উপরেই শুব।
.
কনক ::::: ছোঁয়া আমি তোমাকে কিছুতেই আমার পাশে শুতে দেব না।তুমি নিচেই ঘুমাবে।
.
ছোঁয়া ::::: আমি নিচে ঘুমাবো না।আমি উপরেই ঘুমাবো।আর আপনার পাশে ঘুমাবার আমার অধিকার আছে।
.
কনক ::::: না।
.
ছোঁয়া ::::: আপনি কিছুই করতেই পারবেন না।এই তো আমি ঘুমালাম।আপনার যা কাজ করার আপনি তাই করেন।গুড নাইট।
.
ছোঁয়া উপরেই ঘুমিয়ে পড়ল।কনক তো একদম রেগে আগুন হয়ে রয়েছে।
.
.
.
চলবে।