রাগী বর,১৩,১৪

0
2018

রাগী বর,১৩,১৪
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া
পর্ব:১৩
.
ছোঁয়া বারবার শুধু হাতে ফু দিচ্ছে ।
এত জ্বলছে বেচারির হাতটা ।
রক্ত জমাট বেধে রয়েছে কেটে যাওয়া স্থানে ।
পরিষ্কার করার জন্য ছোঁয়া স্যাবলন আনতে যাচ্ছিল ঠিক ওই সময় কনক স্যাবলনটা নিয়ে নিজের পকেটে নিয়ে নিল ।
এইবার ছোঁয়ারও প্রচুর রাগ উঠলো ।
রেগে গিয়ে কনককে বলছে ,,,,
.
ছোঁয়া ::: এইটা কি করলেন আপনি ।
স্যাবলনটা এইভাবে পকেটে ভরে নিলেন কেন ?
.
কনক ::: স্যাবলন দিয়ে তোমার কাজটা কি ?
.
ছোঁয়া ::: দরকার আছে আমার ।
.
কনক ::: কি দরকার ?
.
ছোঁয়া ::: আমার হাত কেটে গেছে ।
রক্ত জমাট বেধে রয়েছে ।
পরিষ্কার করব দেন ।
.
কনক ::: তোমার হাতই কাটুক আর অন্য কিছুই হোক আমার স্যাবলন তুমি ব্যবহার করতে পারবে না ।
তুমি অন্য কারোর টা নিয়ে পরিষ্কার কর যাও ।
আমার জিনিসে তুমি হাত দিলে সেই জিনিস আমি জীবনেও ব্যবহার করব না ।
আশা করি কথাটা বুঝতে পেরেছ ।
.
ছোঁয়া কনককে কিছু বলার আগেই ঘর থেকে হন হন করে বের হয়ে চলে গেল ।
ছোঁয়াও কনকের পিছু পিছু ঘর থেকে বের হয়ে গেল ।
দুইজনেই নিচে চলে আসল ।
ছোঁয়া আমেনার কাছে গেল আমেনাকে সাহায্য করতে লাগল ।
সবাই ব্রেকফাস্ট করার জন্য বসে রয়েছে ।
.
ছোঁয়া এক এক করে সবাইকে খাবার দিল ।
যখন কনককে দিতে গেল তখন কনক রাগ দেখিয়ে না খেয়েই চলে গেল ।
কনকের এই ব্যবহারে ছোঁয়া আরও কষ্ট পেল ।
কনক না খেয়ে চলে গেছে তাই‌ ছোঁয়াও কিছু খেল না ।
না খেয়েই উপরে চলে গেল ।
উপরে যেয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগল ।
.
কান্না করতে করতে বেচারি চোখ লাল করে ফেলেছে ।
একটু পরে ছোঁয়ার ফোনটা বেজে উঠল ।
রিমি কল করেছে ।
ছোঁয়া নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে কলটা রিসিভ করল ।
তারপর বলতে লাগল ,,,
.
ছোঁয়া ::: হ্যা বল রিমি ।
.
রিমি ::: তুই আজকে কলেজে আসবি না ।
.
ছোঁয়া ::: না রে দোস্ত ।
একদম পরীক্ষার দিনই আসব রে ।
.
রিমি ::: ও ।
তুই কি কান্না করছিস ?
মানে তোর কন্ঠটা আজকে একটু অন্যরকম লাগছে ? মনে হচ্ছে তুই কান্না করছিস ?
.
ছোঁয়া ::: আমি কেন কান্না করতে যাব রে ।
আসলে ঠান্ডা লেগেছে তো এরজন্য কন্ঠটা এইরকম মনে হচ্ছে ।
.
রিমি ::: ও ।
এখন আমি রাখি ।
বাই ।
.
ছোঁয়া ::: হুম ।
বাই ।
.
ছোঁয়ার হাত এখনও জ্বলছে ।
আগের থেকে আরও বেশি জ্বলছে ।
মনে হচ্ছে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ওর পুরো শরীর ।
একটু পরে আমেনা ছোঁয়াকে ডাকতে লাগল ।
ছোঁয়া নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে নিচে চলে আসল ।
.
ছোঁয়া নিচে গিয়ে আমেনাকে রান্নায় সাহায্য করতে লাগল ।
আমেনা বুঝতে পেরেছে ছোঁয়া উপরে যেয়ে কান্না করেছে ।
কিন্তু কিসের জন্য কান্না করেছে সেটা এখনও আমেনা বুঝতে পারে নি ।
ছোঁয়ার মন মেজাজ এখন ভালো না এখন কিছু জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে না তাই আমেনা ছোঁয়াকে এখনও কিছু জিজ্ঞাসা করেনি ।
.
একটু পরে অনন্যা আসল ।
এসে নিয়েই বলতে লাগল খাবার দিতে ওর নাকি এখন প্রাইভেট আছে ।
ছোঁয়া তাড়াতাড়ি করে অনন্যাকে খাবার দিল ।
অনন্যা খেয়াল করল ছোঁয়ার হাতে কাটা দাগ ।
তাও আবার রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে ।
অনন্যা ছোঁয়াকে জিজ্ঞাসা করছে ,,,
.
অনন্যা ::: ভাবি তোমার হাত কাটল কিভাবে ?
.
ছোঁয়া ::: কালকে রাতে দরজার সাথে হাতটা লেগে একটু কেটে গেছে ।
সমস্যা নেই পরে আমি ওষুধ লাগিয়ে নিব ।
তুমি চিন্তা কর না তুমি তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নাও তোমার তো আবার প্রাইভেট আছে ।
.
অনন্যা ::: না ভাবি তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছ আমার কাছ থেকে ।
ভাইয়া কি তোমার উপর রাগ দেখিয়েছি ?
.
ছোঁয়া ::: না না তেমন কিছু না ।
উনি কেন আমার উপর রাগ দেখাবেন ।
.
ঠিক ওই সময় আমেনা আসল ।
আমেনা এসে ছোঁয়াকে বলতে লাগল ,,,
.
আমেনা ::: বউমা তুমিও এখন অনন্যার সাথে খেয়ে ফেল ।
দেরি করে খাওয়ার দরকারটা কি ?
এখনই খেয়ে ফেল ।
.
ছোঁয়া ::: না আম্মু ।
আমি এখন খাব না ।
আমার মোটেও এখন খিদে নেই ।
.
ছোঁয়া না খেয়ে আবার উপরে চলে গেল ।
আমেনা অনন্যাকে বলছে ,,,,
.
আমেনা ::: এখন তুই তোর ভাবিকে কোন বিষয় নিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করবি না ?
.
অনন্যা ::: কেন আম্মু ?
.
আমেনা ::: এখন তোর ভাবির মন মেজাজ কিছুতেই ভাল না ।
.
অনন্যা ::: ওকে আম্মু ।
আম্মু আমি এখন যাই ।
আমার প্রাইভেট শুরু হয়ে গেল ।
.
আমেনা ::: হুম যা ।
.
অনন্যা চলে গেল ওর প্রাইভেটে ।
ছোঁয়া উপরে যেয়ে কান্না করছে আর বলছে ,,,
.
ছোঁয়া ::: কেন আপনি বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না যে আমি কারোর সাথেই কিছু করেনি ।
বিয়ের আগে তো কেউ আমার জীবনে ছিলই না আর বিয়ের পর শুধু আপনিই আমার জীবনে আর কেউ না ।
আর ওই শয়তানটা শুধু শুধু আমার পিছনে ঘুরে । আপনি আমাকে কেন বিশ্বাস করছেন না ।
আমায় শুধু কষ্টই দিয়ে যাচ্ছেন আপনি ।
.
ছোঁয়া শুধু কান্নাই করে যাচ্ছে ।
আমেনা আসল ঘরে ।
আমেনা আচমকা বলা শুরু করল ,,,,
.
আমেনা ::: তোমার না পরীক্ষা শুরু হচ্ছে তুমি এখনও পড়তে বস নি বউমা ।
.
ছোঁয়া তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে নিল ।
বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলছে ,,,,
.
ছোঁয়া ::: এই তো আম্মু বসছি ।
.
আমেনা ::: গুড ।
তা তোমার খাবারটা কি উপরে পাঠিয়ে দিব বউ মা ।
.
ছোঁয়া ::: না আম্মু আমার খিদে নেই ।
আমি খাব না ।
.
আমেনা ::: তা বউমা তোমার কি কিছু হয়েছে ।
.
ছোঁয়া ::: না আম্মু আমার কিছুই হয় নি ।
আমি এখন পড়ব ।
.
আমেনা ::: ঠিক আছে তুমি পড় বউ মা ।
.
ছোঁয়া তো বই খুলে বসল কিন্তু কিছুতেই পড়াই মনযোগ দিতে পারছে না ।
.
আর ওইদিকে সিরাজ একদম আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে ।
শুয়ে রয়েছে সিরাজ আর বলছে ,,,,
.
সিরাজ ::: কবে যে তোকে ডিভোর্স দিবে আর আমি তোকে পাব ।
আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না আমার ময়না পাখি ।
.
সিরাজ মোবাইলে ছোঁয়ার ছবি বের করে কথাগুলো বলছে ।
বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখল ।
সিরাজ ওর চোখটা বন্ধ করল ।
সিরাজ ছোঁয়াকে কল্পনা করছে ।
.
সিরাজ আর ছোঁয়ার বিয়ে হয়েছে ।
ছোঁয়া সিরাজের রুমে বসে রয়েছে ।
সিরাজ ওর রুমে চলে আসল ।
ছোঁয়া সিরাজকে দেখে উঠে দাঁড়ালো ।
আর সিরাজকে দেখে ভয় পাচ্ছে ।
ছোঁয়া সিরাজের থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।
.
সিরাজ ছোঁয়ার কাছে গেল আর ছোঁয়ার কোমড়ে হাত দিল ।
ছোঁয়া একটু কেঁপে উঠল ।
সিরাজ ছোঁয়াকে কাছে টেনে নিয়ে ইচ্ছামত চুম্বন দিতে লাগল ।
তারপর ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিল ।
বিছানায় শুইয়ে দিল ।
.
সিরাজ ওর চোখটা খুলে ফেলল ।
তারপর মুখে একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগল ,,,,
.
সিরাজ ::: তার মানে আমি এতখন স্বপ্ন দেখছিলাম ।
কবে যে এই স্বপ্নটা সত্যি হবে ।
.
এই কথা বলার পর পর কোলবালিশকে জড়িয়ে ধরল ।
কোলবালিশকে জড়িয়ে ধরে নাচানাচি করতে লাগল ।
.
ছোঁয়া কিছুখন বইয়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়াল ।
আর এখন বিকেল হয়ে গেছে ।
ছোঁয়া এখন নিচে গেল ।
আমেনা আর অনন্যা ওইখানেই বসে রয়েছে ওরা বসে বসে টিভি দেখছে ।
.
কিন্তু ছোঁয়ার মাথাটা অনেক ঘুরাচ্ছে ।
ছোঁয়া সব কিছু অস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ।
ছোঁয়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না ।
আমেনা আর অনন্যার কাছে আসার পর ছোঁয়া মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল ।
আমেনা আর অনন্যা তাড়াতাড়ি করে ছোঁয়াকে নিয়ে ঘরে শুইয়ে দিল ।
.
অনন্যা তাড়াতাড়ি করে ওদের পারিবারিক ডক্টর রাশেদকে কল করল ।
রাশেদ কলটা রিসিভ করল ।
আর বলতে লাগল ,,,,
.
রাশেদ ::: অনন্যা কি হয়েছে ?
.
অনন্যা ::: রাশেদ ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি আস না ।
ভাবি সেন্সলেস হয়ে গেছে ।
.
রাশেদ ::: হুম অনন্যা ।
আমি এখনি আসছি ।
.
রাশেদ হল আমেনার বড় ভাইয়ের ছেলে ।
ও একজন ডক্টর ।
কারোর কোন কিছু হলে সর্বপ্রথম রাশেদকে ডাকা হয় ।
আর তাই অনন্যা রাশেদকেই এইখানে আসতে বলল ছোঁয়াকে চেকআপ করার জন্য ।
রাশেদ আসতেছে ওদের বাড়িতে ।
.
কনক কিসের জন্য যেন একটু বাড়িতে এসেছিল ।
বাড়িতে এসে দেখে এই অবস্থা ।
কনক আমেনাকে জিজ্ঞাসাকে করছে ,,,,
.
কনক ::: আম্মু কি হয়েছে ছোঁয়ার ?
.
আমেনা ::: জানি না হঠাৎ করেই সেন্সলেস হয়ে গেছে ।
.
কনক ::: ডক্টরকে কল কর ।
.
অনন্যা ::: রাশেদ ভাইয়া আসছে ।
ওই তো এসে গেছে ।
.
রাশেদ এসে গেছে ।
রাশেদ ছোঁয়াকে দেখতে লাগল ।
রাশেদ ছোঁয়াকে চেকআপ করে একটু ভয় পেল ।
বিশেষ করে কাটা দাগ দেখে ।
ভয় পেল যে এখনও রক্ত জমে রয়েছে ।
কনক রাশেদকে জিজ্ঞাসা করছে ,,,,,
.
কনক ::: রাশেদ ।
ছোঁয়ার হয়েছে টা কি ?
.
রাশেদ ::: ভাবি একে তো খাই নি তার জন্য সেন্সলেস হয়ে গেছে ।
কিন্তু ,,,,
.
কনক ::: কিন্তু কি রাশেদ ,,,
.
রাশেদ ::: এই কাটা অংশে এখনও কোন ব্যান্ডেজ বা স্যাবলন দেওয়া হয়নি ।
এর জন্য এইখানে ইনফেকশন হয়ে গেছে ।
এর জন্যও আবার মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেছে ।
এখন যদি তাড়াতাড়ি হসপিটালে না নেওয়া হয় তাহলে ভাবিকে বাঁচানো সম্ভব নয় ।
আর যদি বেঁচেও যাই তাহলে হাত কেটে ফেলতে হবে ।
.
কনক ::: কি ?
না যে করেই হোক আমি ওকে সুস্থ দেখতে চাই‌ ।
.
রাশেদ ::: তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ।
অপারেশন করাতে হবে ।
.
কনক ছোঁয়াকে কোলে করে নিয়ে নিচে নামল ।
গাড়িতে নিয়ে শুয়াল ।
সেই গাড়িতে শুধু অনন্যা উঠল আর কনক গাড়ি ড্রাইভ করছে ।
আর রাশেদ আর আমেনা আর এক গাড়িতে আসছে ।
ছোঁয়াকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হল ।
.
.
.
চলবে ।

রাগী বর
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া
পর্ব:১৪
.
কনক ছোঁয়াকে তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে গেল ।
রাশেদ এসে তাড়াতাড়ি করে ছোঁয়াকে তাড়াতাড়ি করে ওটি তে নিয়ে গেল ।
কনক আর বাকি সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে ।
সবাই‌ ছোঁয়ার জন্য অনেক চিন্তা করছে ।
কি যে হবে মেয়েটার সাথে এইটাই ভেবে ।
কনক শুধু নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে ।
.
একটু পরে রাশেদ বের হল ।
রাশেদকে দেখে কনক রাশেদকে জিজ্ঞাসা করছে ,,,
.
কনক ::: কি হয়েছে রাশেদ ?
সাক্সেস ফুল না ।
.
রাশেদ ::: রক্ত লাগবে ।
রক্ত যদি এখন না দেওয়া হয় তাহলে আমরা কিছুই করতে পারব না ।
.
কনক ::: ব্লাড গ্রুপ কি ?
.
রাশেদ ::: দাঁড়াও ভাইয়া পরীক্ষা করে দেখতে হবে ।
.
কনক ::: তাড়াতাড়ি ।
.
রাশেদ আবার ভিতরে ঢুকল ।
কিছুখন পর বের হল ।
তারপর বলতে লাগল ,,,
.
রাশেদ ::: বি পজিটিভ ।
.
কনক ::: বি পজিটিভ আমারও তো ব্লাড গ্রুপ বি পজিটিভ ।
আমার টা কি দিলে হবে না ।
.
রাশেদ ::: কেন হবে না ।
ভাইয়া তুমি শুধু তাড়াতাড়ি আস ।
ভাবির এখনি রক্ত লাগবে ।
.
কনক ::: হুম চল ।
.
কনক ছোঁয়াকে রক্ত দিতে চলে গেল ।
কনকের কাছ থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিল ।
তারপর ছোঁয়ার কাছে নিয়ে যাওয়া হল ।
কনক রক্ত দিয়ে এসে বাইরে চলে আসল ।
বাইরে এসে আবার নিশ্চুপ হয়ে বসে পড়ল কনক ।
কোন কথাই বের হচ্ছে না এখন মুখ থেকে ।
কিন্তু মনে মনে কনক নিজেকেই বলছে ,,,,
.
কনক ::: তুই এইটা কি করলি কনক ।
মানছি যে ছোঁয়ার ওই কাজের জন্য ছোঁয়াকে শাস্তি দিতে চাচ্ছিস তাই বলে এত বড় শাস্তি ।
তুই অনেক খারাপ কনক ।
…..না না অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমার ।
আজকে সকালে ওই কাজটা করাই উচিৎ হয়নি ।
একটু বেশিই করে ফেলেছি আজকে সকালে ।
আমার রক্ততেই যেন ও সুস্থ হয়ে উঠে এই দোয়া করি আল্লাহর কাছে ।
.
একটু পরে রাশেদ ওটি থেকে বের হল ।
বের হয়েই রাশেদ বলতে লাগল ,,,,
.
রাশেদ ::: অপারেশন সাক্সেসফুল ।
কিছুখনের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে
.
ছোঁয়াকে ওটি থেকে বের করে আনা হল ।
সবাই রাশেদকে জিজ্ঞাসা করছে …. ওরা কি এখন ছোঁয়ার সাথে দেখা করতে পারবে ।
রাশেদ সবাইকে বলছে ,,,
.
রাশেদ ::: এখন তো সবাই দেখা করতে পারবে না তাও আবার একসাথে ।
তবে কনক ভাইয়া তুমি ভাবির পাশে এখন থাকতে পার ।
.
কনক মুখে একটা হাসি দিল ।
রাশেদ কনককে ছোঁয়ার কাছে নিয়ে গেল ।
কনক ছোঁয়ার পাশে যেয়ে বসল ।
রাশেদ কনককে দিয়ে এসে বাইরে চলে আসল ।
ছোঁয়ার এখনও জ্ঞান ফিরে আসে নি ।
কনক বলছে ,,,,
.
কনক ::: তোমার সাথে একটু বেশিই করেই ফেলেছি ।
এতটাও কঠোর হওয়া উচিৎ হয়নি আমার ।
একটু তো নরম হওয়া উচিৎ ।
.
কনকের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।
এক ফোঁটা ছোঁয়ার হাতের উপর পড়ল ।
তখনই ছোঁয়ার হাতটা নড়ে উঠল ।
সাথে সাথে কনক তার চোখের পানি মুছে ফেলল ।
আস্তে আস্তে ছোঁয়া তার চোখটা খুলতে লাগল ।
অবশেষে ছোঁয়ার চোখটা খুলল ।
.
ছোঁয়া চোখ খুলেই কনককে দেখতে পেল ।
ছোঁয়া কনককে বলছে ,,,,
.
ছোঁয়া ::: আপনি ।
.
কনক ::: ভেব না যে তোমার উপর দয়া দেখাচ্ছি তার মানে এই নয় যে আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি ।
তুমি যা কাজটি করেছ তার পরে তোমায় ক্ষমা কোনদিনও করব না ।
.
ছোঁয়া ::: আ,,,পনি এ,,ইসব কি ব,,লছেন আ,,,মি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
আ,,র আমিই বা এই,,খানে কেন ?
আ,,মার কি হয়েছে ?
.
কনক ::: অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলে তুমি ।
পুরো একদিন তুমি কিছুই খাও নি ।
না খেয়ে থাকার জন্য তুমি সেন্সলেস আর ওই‌ হাতে ব্যাথা ।
.
ছোঁয়া ::: ওফ মাথাটা যে কেমন যন্ত্রনা দিচ্ছে আমি আর পারছি না ।ওফ,,,
.
একটা নার্স আসল ভিতরে ।
ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরেছে দেখে বাহিরের সবাইকে বলে দিল কথাটা ।
সবাই ছোঁয়াকে দেখার জন্য ছুটে চলে আসল ।
সবাই ছোঁয়াকে জিজ্ঞাসা করছে ,,,
.
—- কেমন আছ ।
.
ছোঁয়া ::: এখন ঠিক আছি আমি ।
কিন্তু মাথাটা ,,,,
.
রাশেদ ::: এখন উনাকে একটু রেস্ট নিতে দিন ।
সবে মাত্র জ্ঞান ফিরেছে উনার ।
ভিড় আর চিল্লাচিল্লি উনার পক্ষে এখন মোটেও ভালো না ।
.
আমেনা ::: ঠিক আছে আমরা সবাই বাইরে যাচ্ছি ।
.
সবাই বাইরে চল গেছে ।
কনকও বাইরে যাচ্ছি রাশেদ কনককে আটকে দিয়ে বলছে ,,,
.
রাশেদ ::: ভাইয়া তুমি কোথায় যাচ্ছ ?
তুমি ভাবির পাশে থাক ।
নইতো‌যে ভাবি একা হয়ে যাবে ।
.
কনক ::: ওকে ।
.
সিরাজ ছোঁয়াকে পাওয়ার জন্য এতই পাগল হয়ে গেছে যে সব জায়গায় শুধু ছোঁয়াকেই দেখতে পাচ্ছে ।
সিরাজ দেখছে যে ছোঁয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইয়ার রিং খুলছে ।
কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারছে না সিরাজ ওইখানে যেয়ে নিজে খুলে দিচ্ছে ।
আর শুধু ছোঁয়ার চুলের ঘ্রান নিচ্ছে ।
.
ছোঁয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল ।
যখন নিজের ঠোঁট ছোঁয়ার দিকে দিল তখনই ছোঁয়া অদৃশ্য হয়ে গেল ।
সিরাজ আবারও বলতে লাগল ,,,
.
সিরাজ ::: আজকে আবারও ,,,
আমি আর ওয়েট করে থাকতে পারছি না ।
কবে যে আমার জানপাখিটা আমার হবে ।
.
সিরাজ নিচের দিকে যেতে লাগল ।
আরমান আর তার স্ত্রী কথা বলছে ,,,
.
আরমান ::: ছোঁয়া যে এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সেটা সিরাজ যেন কোনভাবে জানতে না পারে ।
জানতে পারলে যে পাগলামো শুরু করে দিবে ।
.
সিরাজের মা ::: ঠিক আছে ।
.
সিরাজ নিচে নামার সময় সব কিছু শুনে ফেলেছে ।
কথাটা শোনার পর থেকে সিরাজ একদম পাগলামো শুরু করে দিয়েছে ।
আর বলতে লাগল‌,,,,
.
সিরাজ ::: কি হয়েছে আমার ছোঁয়ার ?
ও হাসপাতালে কেন ?
আজকে আমি সব কিছু ,,,
.
সিরাজের মা ::: কি করছ কি তুমি সিরাজ ?
এইরকম পাগলামো কর না ।
এই আপনি একটু বোঝান ।
.
আরমান কোন মতে সিরাজকে শান্ত করে ঘরে নিয়ে গেল ।
.
কালকে ছোঁয়াকে‌ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে ।
এখন ছোঁয়াকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে ।
অনেক রাত হয়ে গেছে তো তাই‌ ছোঁয়া এখন ঘুমাচ্ছে ।
আর পাশে কনক বসে রয়েছে ।
.
বাড়ির অনেকেই আজকে থাকতে চেয়েছিল হাসপাতালে ছোঁয়ার সাথে কিন্তু কনকই থাকতে দেইনি কাউকে ।
কনক একাই থাকতে চাই‌ ছোঁয়ার সাথে ।
কনক এখনও জেগে রয়েছে কারন ছোঁয়ার যদি কোন কিছুর প্রয়োজন হয় ।
.
সকাল‌ হয়ে গেছে ।
রাশেদ আসল আর ছোঁয়াকে চেক করল ।
আর ছোঁয়াকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল ।
.
কনক ছোঁয়াকে গাড়িতে নিয়ে যেয়ে বসাল ।
কনক গাড়ি ড্রাইভ করছে ।
ছোঁয়া কনকের দিকে তাকাল‌ ।
ছোঁয়া মনে মনে বলছে ,,,
.
ছোঁয়া ::: এই রাগি মানুষটাকেই যে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি ।
আপনি কেন আমাকে ভুল বুঝছেন কনক ।
একবার শুধু আমার কথাটা শুনার চেষ্টা করুন কনক ।
.
কনক আর ছোঁয়া বাড়ি পৌছে গেছে ।
কনক প্রথমে গাড়ি থেকে নামল ।
ছোঁয়া গাড়ি থেকে নামছিল শরীর দূর্বল থাকার কারনে ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে না তাই পড়ে যাচ্ছিল‌ ।
কনক সাথে সাথে এসে ছোঁয়াকে ধরে ফেলল ।
.
কনক ছোঁয়াকে কোলে নিল ।
কোলে করে নিয়ে ঘরে নিয়ে গেল ।
ছোঁয়ার মা আর বাবা এসেছে ছোঁয়াকে দেখতে ।
ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়াকে বলছে ,,,
.
ছোঁয়ার বাবা ::: এখন ঠিক আছিস তো মা ।
.
ছোঁয়া ::: হুম আব্বু ।
.
ছোঁয়ার মা ::: কালকে ভালো করেও দেখতে পারে নি মেয়েটাকে ।
এখন ভালো করে দেখতে পেয়ে মনটা একটু শান্ত হল ।
.
ছোঁয়া ::: আম্মু ।
.
ছোঁয়া ও ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরল ।
আর কান্না করছে ।
ছোঁয়ার মা ওকে বলছে ,,,
.
ছোঁয়ার মা ::: কাঁদিস না মা ।
তোর চোখের জল যে আমার আর তোর আব্বুর যে সহ্য হয় না ।
.
ওনারা কিছুখন ছোঁয়ার কাছে থেকে আবার নিচে চলে গেল‌ ।
কনক ছোঁয়ার কাছে এসে ছোঁয়ার চোখের পানি মুছে দিল ।
.
সিরাজ তো একদম পাগল হয়েই গেছে ।
ছোঁয়ার হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা শুনে আর কনক এখনও ছোঁয়াকে ছাড়ছে না কেন সেটার জন্য ।
তাই সিরাজ রাগে আরমানকে বলছে ,,,
.
সিরাজ ::: ড্যাড ওই শয়তান টা ছোঁয়ার নিশ্চয়ই কিছু করেছে তাই ছোঁয়া হাসপাতালে ভর্তি ছিল ।
শয়তানটা ছোঁয়াকে এখনও ডিভোর্স দিচ্ছে না কেন ?
.
আরমান ::: কাম ডাউন ।
তুমি আর চিন্তা কর না মাই সান আমি কিছু একটা করছি ।
.
সিরাজ ::: প্লিজ ড্যাড ,,
যা করার তাড়াতাড়ি কর ।
আমি যে আর পারছি না ।
প্লিজ ড্যাড ।
ছোঁয়া শুধু বারবার আমার স্বপ্নে আসছে ।
সব জায়গায় শুধু ওকে দেখি ।
আমি বাস্তবে ওকে চাই কবে পাব আমি ওকে ।
.
আরমান ::: চিন্তা কর না খুব শীর্ঘই পাবে ।
.
আরমান সিরাজকে ঘরে পাঠিয়ে দিল ।
আরমান নিজেই নিজেকে বলছে ,,,
.
আরমান ::: সত্যিই আমাকে তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে ।
তা না হলে যে আমার ছেলেটা যে একদম পাগল হয়ে যাচ্ছে ।
ওই কনক চৌধুরি ছোঁয়াকে বিয়ে করার আগেই আমার ছেলের জন্য ছোঁয়াদের বাড়িতে যাওয়া উচিৎ ছিল ।
তাহলে আমাকে এত কিছু করতে হত না ।
.
.
.
চলবে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here