রাঙিয়ে দিয়ে যাও,পর্ব:০৬,০৭

0
1216

রাঙিয়ে দিয়ে যাও,পর্ব:০৬,০৭
লেখনীতে ~মাহি আফরোজ
[৬]

“মে আই কাম ইন স্যার?”

“ইয়েস,কাম ইন।”

আস্তে আস্তে পা ফেলে প্রিন্সিপালের রুমে প্রবেশ করে মাহি আর হিমানী।আজ স্কুলে আসতেই পিয়ন মারফত খবর পেয়ে তারা এসেছে প্রিন্সিপালের কেবিনে।শীততাপনিয়ন্ত্রিত রুমে দাড়িয়ে টেনশনে ঘাম ছুটে যাচ্ছে মাহির।না জানি কি বলার জন্য ডেকেছে।এই কেবিনটা খুব সুন্দর করে সাজানো।স্যারের রুচি আছে বলতে হবে।চারদিকে সব পরিপাটি। কোথাও অগোছালো কিছু নেই।কিছুক্ষণ লেখালেখি করে ডায়রির ওপর কলমটা একেবারে সোজা করে রাখল সময় নিয়ে।তার কাজকর্মেই বোঝা যাচ্ছে খুব খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষ তিনি।চোখের চশমাটা প্রায় নাকের কাছে গিয়ে ঠেকেছে।চশমার ওপর দিয়ে তিনি ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“দাড়িয়ে থেকেই কি সব কথা শুনবেন নাকি দয়া দেখিয়ে বসবেন?”

এতক্ষণ উনি বলেননি বলেই ওরা দুজন বসেনি।এই লোকটার ওপর প্রচন্ড রাগ হিমানীর।চেয়ার টেনে বসতে গিয়ে মাহির হাত লেগে টেবিলের ওপর রাখা গ্লোবটা বোধহয় দুই তিন ইঞ্চি স্হান পরিবর্তন করে।ভ্রু-কুঁচকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ মাহির দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
“আপনাদের দু’জনের ট্রেনিং এ যেতে হবে।আপনারা মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিন।পরবর্তী নির্দেশনায় আপনাদের ডিটেইলস এ জানানো হবে।এবার আপনারা আসতে পারেন।”

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে থেমে গেলেন জনাব আজমল স্যার।ওরা দুজনে বের হয়ে আসে প্রিন্সিপালের কেবিন থেকে।

“ডিটেইলস এ না জানলেও তো একটু বুঝিয়ে বলা যায় নাকি?জ্বীনে ধরা লোক কোথাকার। ” হিমানী কথাগুলো ফিসফিসিয়ে মাহিকে বলে।

“ম্যাম স্যার বলল আমাদের নাকি কিসের জানি ট্রেনিং এ যেতে হবে?”মাহি ওদের হেড টিচার নাজমা আইরিনকে বলে।

“হ্যাঁ মা। তোমার আর হিমানিকে যেতে হবে।বাচ্চাদের শিক্ষাদান বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় এ আলোচনা পর্যালোচনা করা হয় সেখানে।তোমাদের তেমন জরুরি কাজ নেই।শুধু মনোযোগ দিয়ে বুঝতে হবে।ইচ্ছে হলে তারা প্রশ্নও করতে পারে এই আর কি।”

“ম্যাম এটা কি কয়েকদিনের মধ্যেই নাকি দেরি হবে?”

“কয়েকদিন বাদ দাও।কালও হতে পারে আবার পরশুও হতে পারে।আবার সপ্তাহও পার হতে পারে। তোমরা নিজেদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত রাখো।সেখানে কিন্তু তোমাদের মতো অনেক টিচার আসবে।”

হিমানি হাসিমুখে বলে,
“ম্যাম যাই তাহলে।”

“আচ্ছা যাও।”

হিমানি আর মাহি ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষ থেকে পরিচয়।দুইজনে যে এক স্কুলে চাকরী করতে পারবে তা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি।ওরা যে স্কুলে চাকরি করে ওটা প্রথম শ্রেণি থেকে দশমিক শ্রেণি পর্যন্ত। ওরা প্রাইমারি সেক্টরে আছে।

ক্যান্টিনে বসে থেকে ওরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলো।সে সময় ওদের কাছে এসে উপস্থিত হয় ওদের আরেক কলিগ সায়ন।মুখটা দেখেই বোঝা সে ভীষণ খুশি।ওকে হাসিমুখ দেখে মাহির টেনশন হয়।আসলে সায়ন ভীষণ হিংসাপরায়ণ ছেলে।বিশেষ করে মাহি আর হিমুর পেছনে লেগে থাকে সারাক্ষণ। ওরা ফ্যাসাদে পড়লে সায়ন দুর থেকে দাঁত কেলিয়ে হাসে।

“কি বিষয় সায়ন ভাই, এত খুশি খুশি দেখাচ্ছে। বিয়ে ঠিক হইছে বুঝি?”হিমু)

” হুম।কাল জেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে একজন শিক্ষা অফিসার আসবে।যেহেতু আপনারা নতুন তাই প্রিন্সিপাল স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমস্ত দায়ভার আপনাদের দুজনের একজনকে নিতে হবে।”

হিমু জিজ্ঞেস করে,”উনার আবার কি দায়ভার নেবো।সে কি বাচ্চা। যে ফিডার খাওয়াবো,ডায়পার পড়িয়ে দেবো।আমাদের সেক্টরে যতগুলো ক্লাস আছে তাদের কাউন্সিলিং করাবো ব্যাস হয়ে যাবে।”

“সে কাল দেখা যাবে।শুনেছি তিনি খুবই কড়া।আপনারা যখন ছ’মাসের ট্রেনিং এ ছিলেন মাধ্যমিকের সেক্টরে এসে একজনকে সাসপেন্স করেছিলো।”

সায়ন উঠে চলে যায়।মাহি ভাবে যদি ওই আজমল স্যার তাকে কাউন্সিলিং এর দায়িত্ব দেয় তবে।হঠাৎ করে নতুন কারো সামনে বা একেবারে নতুন পরিবেশে মাহি ইতস্তত বোধ করে।ভালো করে কথা বলতে পারে না।হিমুর ওপর ভরসা করা যায় না।সিরিয়াস মুহুর্তে সে একেবারে ঝামেলা করার ওস্তাদ। কতবার আজমল স্যারের মিটিংয়ে জোড়ে কথা বলা,হঠাৎ হেসে ওঠা এগুলো করেছে।শুধু ওর বাবার পজিশনের খাতিরে চাকরিটা ওর টিকে আছে।যদিও সে কয়েকবছর পর বিদেশ চলে যাবে।মাহি ভাবে কত কত শিক্ষিত বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ায়।অথচ হিমুর মতো অনেক মানুষ পজিশনে কাজ করে যা তাদের দরকারই হয়না।

মাহিকে এত ভাবতে দেখে হিমু বলে,
“দ্যাখ এত ভাবার দরকার নাই।যদি তোকে আমাকে সাসপেন্স করেই ফেলে।তাহলে দুজনের কাজ হলো শুধু ওর মুখটা মনে রাখা কিংবা একটা ছবি তুলে রাখা।তারপর ও যখন কোথাও যাবে ওকে কিডন্যাপ করে আমাদের গোডাউনে নিয়ে গিয়ে আচ্ছামত ধোলাই দেবো।তারপর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমাদের মা বলে ডাকবে।”

হিমুর কথায় মাহি যারপরনাই আশ্চর্য হয়।সে বিস্মিত কন্ঠে বলে,
“সিরিয়াসলি হিমু,এত সম্বোধন বাদ দিয়ে সে মা ডাকবে?”

হিমু জুসের ক্যান পাইপটা মুখ থেকে সরিয়ে বলে,
“মা বলবে না তো কি আলমগীরের মতো তোকে সাবানা মনে করে ওগো বলবে।আরে সে একজন শিক্ষা অফিসার।বয়স তো পঞ্চাশ হবেই।”

মাহি নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়।হিমুও ওর সাথে উঠে আসে।হিমু বলে,
“তুই যে একটা দেশদ্রোহী বিদেশি এজেন্ট তা তো জানতাম না মাহি।”

হিমুর কথায় মাহি থেমে যায়।অবাক হয়ে বলে,
“আমি দেশদ্রোহী,বিদেশি এজেন্ট।কিন্তু কিভাবে?”

হিমু মুখখানা অসহায়ের মতো করে বলে,
“আমি কি সুন্দর একটা বুদ্ধি দিলাম।অথচ তুই এই বুদ্ধিজীবির কথা উপেক্ষা করলি,দাম দিলি না।তা তোকে দেশদ্রোহী ছাড়া কি বলব?”

মাহি জানত হিমু এমনই কিছু বলবে।আর ও মনে মনে ভাবছিলো হিমুকে কাউন্সিলিং করানোর দায়িত্ব দেওয়ার কথা।মাহিকে চুপ থাকতে দেখে হিমু ওর হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে সে চুপ করে আছে কেনো।মাহি কোনো কথা না বলে ফোন করে কালকের অফিসারের নাম জিজ্ঞেস করে।কলটা কেটে দিতেই মাহি হিমুকে বলে,
“কাল যিনি আসবেন উনার নাম আল রহমান রিয়াদ।নামটা মনে রাখ।কিডন্যাপিং এ কাজে লাগবে।তাছাড়া কিডন্যাপ কে করবে?”

“আমার কাজিনকে ডিডোকে দিয়ে।”

“গতবার যে ভুল করে তোর বয়ফ্রেন্ড ভেবে সিয়ামকে গাড়িতে তুলেছিলো।”

স্কুল ছুটি দিয়েছে আধাঘন্টা আগে।কফিশপে বসে আধাঘন্টা সময় ধরে গল্প করছে সিয়াম,হিমু আর মাহি।স্নেহা চিটাগং গিয়েছে আজ দুদিন হলো।ওরা মুলত বসে আছে রাশেদের জন্য। রাশেদ ছেলেটার সাথে মাহির কলেজ থেকে পরিচয়।স্নেহার সাথে ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ার থেকে পরিচয়।স্নেহা আর সিয়াম আবার ছোটবেলা থেকে এক সাথে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে।এভাবেই চারদিকে ছড়িয়ে থাকা পাঁচটি প্রাণ আজ একসাথে চলাফেরা করে।রাশেদ মাহির দুই ইয়ার সিনিয়র ছিলো।ও যখন কলেজে সবেমাত্র ভর্তি হলো তখন রাশেদ ইন্টারের ফাইনাল এক্সাম দেবে।এখন রাশেদ আর সিয়াম এই শহরের বড় একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে।এখান থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের ভালো অফার দেওয়া হয়।আর স্নেহা মেডিকেল ট্রেণিং এ আছে।

আরো দশমিনিট পরে রাশেদ আসে।ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দেয় কফি হাউজের মেরুন রংয়ের চেয়ারটায়।মাহির ফোনে একটা নম্বর থেকে ফোন আসতেই রাশেদ তৎক্ষনাৎ নম্বরটা দেখে ফোন কেটে দেয়।মাহি বুঝে উঠতে পারে না।রাশেদ হাতটা বাড়িয়ে দেয় মাহির দিকে।সুন্দর স্বাভাবিক কন্ঠে বলে ওঠে,
“কংগ্রাচুলেশনস মাহি।”
মাহিসহ সবাই রাশেদের দিকে তাকায়।রাশেদ নির্বিকারভাবে টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে বলে,”আবির ফিরে এসেছে মিষ্টি। ”

সিয়াম আগ্রহী কন্ঠে বলে,”কখন আসলো? ”

“কাল রাতে।”

সবাই নির্বাক হয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে থাকে।মাহির প্রতিক্রিয়া দেখতে চায় হয়তো।কিন্তু মাহি পাথরের মতো বসে থাকে।কথা বলতে ভুলে যায় যেনো।তার এখন কি করা উচিত সে ভেবে পায়না।সে এখন হাসবে না কাঁদবে, নাকি খুশিতে লাফাবে।মাহি ভেবে পায়না এতবছর পর তাকে দেখলে সে কি খুশিতে পাগল হয়ে জড়িয়ে ধরবে,নাকি ও নিজেই অভিমানে মুখটা ফিরিয়ে রাখবে….”

চলবে……

রাঙিয়ে দিয়ে যাও
লেখনীতে- মাহি আফরোজ

[৭]

এই অবদি দু’বার মাহি মেইন গেটে উঁকি মেরে এসেছে।কিন্তু অফিসারের গাড়ি তো দুরের কথা হর্ণ অবদি পাওয়া যাচ্ছে না।প্রিন্সিপালের পীড়াপীড়িতে সে আবারও গেইটের দিকটায় গিয়ে দাড়ায়।লোহার গেইটের পাশে একটা চেয়ারে সিকিউরিটির লোকটা দাড়িয়ে আছে।পাশেই একটা কালো রঙের গাড়ি দাড় করানো।গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে পেটমোটা এক লোক।গায়ের পোশাক বলে দিচ্ছে সে গাড়ির ড্রাইভার। মাহি শুনেছে শিক্ষা অফিসাররা মাঝে মাঝে সিভিলে বা ছদ্মবেশে ভিজিটে আসে।এই লোকটাও তো অফিসার হতে পারে।বিষয়টা ভালোভাবে বোঝার জন্য মাহি মিছিমিছি ফোনটা বের করে লোকটার সামনে যায়।যেই না লোকটার চোখে চোখ পড়েছে লোকটা একটু তাকিয়ে থেকে হঠাৎ জোড়ে বলে উঠে,
“এই খাড়াও,তুমি সেই মিষ্টি চিনি না?”

লোকটার কথায় মাহির রাগ সপ্তমে ওঠে।নিজেকে গাধা মনে হচ্ছে।একটা ড্রাইভারের সাথে সিনিয়র অফিসারের তুলনা করছে।সে নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে বলে,
“আজব তো। কিসের মিষ্টি চিনি?আমার নাম মাহি আফরোজ। ”

“তাহলে সেদিন মিষ্টি কইয়া ডাক দিলো ক্যান?”

গুছিয়ে মিথ্যেটা মাহির ঠিক করে হয়না।এই কাজের এক্সপার্ট হিমু।কিন্তু সে কিছুক্ষণ আগে ফ্লোরে চিৎপটাং হয়ে পড়ে ঠাঁই নিয়েছে স্কুলের মেডিক্যাল রুমের এক বেডে।মাহির এমন ভাবনা চিন্তার মাঝেই গাড়ি থেকে নামে আসে একটা ছেলে।ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কি ব্যাপার রইস,কার সাথে কথা বলো?”

“যেই বিচ্ছু মাইয়া আপনার গাড়িতে জুস ফালাইছে তার বোনের লগে কথা কই।”

রিয়াদ এতক্ষণ খেয়াল করেনি মাহিকে।মোবাইল পকেটে রেখে এগিয়ে এসে রইসকে বলে গাড়িটা পার্ক করে আসতে।মাহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“তো মিস চিনি,বলুন।”

আজ সকাল থেকে যেনো মাহি অবাকের পর অবাক হচ্ছে। আর এটা সেই লোকটাই। ডেয়ার নিয়ে যার কাছে গিয়েছিলো টাকা চাইতে। কিন্তু বৃষ্টি আসতে দৌড়ে চলে এসেছিলো।কিন্তু এই লোকটা কি বলতে বলছে।

“প্রথম কথা আমার নাম চিনি নয়।আর দ্বিতীয়ত আমি কি বলব?”

“আপনার বোধহয় স্মৃতিশক্তি কম মিস চিনি।ওই যে সিনেমায় দেখায় না শর্ট-টার্ম মেমোরি লস।”

“আমি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাবে কেনো?আমার মনে হচ্ছে পাগলের প্রলাপের জন্য আপনাকে আর আপনার ড্রাইভারকে পাবনা পাঠানো উচিত।আপনি চাইলে পাগলাগারদের নম্বর দিতে পারি।”

রিয়াদ হাত ঘড়িতে সময়টা দেখে নেয়।মুখে লম্বা হাসির রেখা টেনে বলে,
“এইবার একেবারে পরিস্কার হয়ে গেলো সব।”

“কি পরিস্কার হলো?”

“এই যে আপনার মেমোরি লস হয়েছিলো আর আপনি পুর্বে পাগলা গারদে ছিলেন।না থাকলে ওদের নম্বর কেনো আপনার কাছে।তাই বলি আমাদের প্রথম দেখা আপনার মনে নেই কেনো?”

মাহি লোকটার কথায় সত্যি পাগল হয়ে যাবে।এই লোকটা বড় অসভ্য, ইতর।একটা অচেনা মেয়েদের সাথে কিভাবে পায়ে পা মাড়িয়ে ঝগড়া করছে।নিজেকে যথাসম্ভব কন্ট্রোল করে মাহি বলে,

“নম্বর যে কারোর কাছে থাকতে পারে।এটা এই প্রমাণ করে না যে আমি সেখানে ছিলাম।”

“একজন সুস্থ মানে মানসিকভাবে সুস্থ লোকের কাছে কখনোই পাগলাগারদের লোকদের নম্বর থাকতে পারে না মিস চিনি।কই আমার কাছে তো নেই?”

লোকটা সেই কখন থেকে মাহিকে অপমান করছে।নাহ আর অপমান সহ্য করা যায় না।এই লোকটার ম্যানার্স নেই।সকাল সকাল এত জ্বালাতন করা লোকটাকে মাহির ইচ্ছে করছে মাথায় ইট দিয়ে বাড়ি দিতে।

“শুনুন আজকে শুধু আপনি বেঁচে গেলেন ভিজিটিং অফিসারের কারণে।নইলে আপনাকে আমি যে কি করতাম ধারণার বাহিরে।”

“ভিজিটিং অফিসারের সাথে আপনার কি কাজ?আপনি সুন্দরমতো হেঁটে হেঁটে পাবনা যাচ্ছিলেন তা যান না।”

মাহির কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বেরুচ্ছে। হেঁটে কখনও পাবনা যাওয়া যায় নাকি।

“সহ্যের সীমা পার করছেন আপনি।আজ যদি প্রিন্সিপাল আমার ওপর ভিজিটারের কাউন্সিলিং এর দায়িত্ব না দিতো তবে আপনাকে আমি নিজের টাকা দিয়ে উগান্ডা পাঠাতাম।”

লোকটা চোখ থেকে চশমাটা খুলে পেছন ফিরে ওদের স্কুলটা দেখে নেয়।আর বলে,

“ওহ্ আপনি তাহলে এই স্কুলের টিচার।তা এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

“আরে নাহ্!আমি স্কুলের ঝাড়ুদাড়।স্কুলের ঝাড়ুর শলা ভেঙে গিয়েছে।ঝাড়ুর ট্রাক আসার কথা তাই দাড়িয়ে আছি।আর আপনার কি কাজ নেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঝগড়া করছেন।”

“কাজেই তো এসেছিলাম মিস চিনি। কিন্তু মনে হয় না কাজটা ঠিকমতো হবে।আচ্ছা যাই। ”

এই লোকটা প্রচুর বেয়াদব।এর যেনো বিয়ে না হয়। হলেও বউ যেনো ভেগে যায়।এত অসভ্য লোকের কোনো অধিকার নেই গাড়ি করে আরামে ঘুরে বেরানোর।এর গাড়ির চাকা যেনো ব্লাস্ট হয়ে যায়।গাড়ি থেকে এ যেনো কাদায় পড়ে যায়।

মাহির গালদুটো লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচুর রেগে আছে।রিয়াদ ভয় পাওয়ার ভান করে বলে,

“আমি একটু আপনাদের স্কুলে যেতে চাচ্ছি।”

“তো যান না। আমি কি আপনাকে টেনে ধরে রেখেছি?”

“আসলে আমি ভয় পাচ্ছি।গেইটে যদি এমন পাগল স্মৃতিশক্তিহীন ঝগরুটে থাকে না জানি ভেতরে কি আছে।আমার মতো স্মার্ট, ভদ্র, আর ইনোসেন্ট ছেলেকে নিয়ে যদি কোনো টানাহিচড়া হয়।ওহ্ আল্লাহ্ আমি বাকিটা ভাবতে পারছি না।”

নাহ্ বহুত হয়েছে। আর তো সহ্য করা যায়না।এমনিতেই ভিজিটিং অফিসারের কথা মনে হতেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এই অসহ্য লোকটা সেই তখন থেকে ননস্টপ অসহ্যকর কথা বলে যাচ্ছে। মাহি এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজতে থাকে।ওর ভাব রিয়াদ বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে বলে,
“আপনার এখন একটা শক্ত পাথর বা ইট খুঁজছেন তাই না?”

“ঠিক ধরেছেন।”

“আর ওটা দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি দেওয়ার প্ল্যান আছে তাই না।”

“আরে আপনি দেখছি খুব ইনটেলিজেন্ট।”

“এটা একটা রোগ।আপনি চাইলে আমি সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে নিয়ে যেতে পারি।যদিও কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট এর নম্বর আমার সংগ্রহে নেই।কারণ আমি পুর্বে এবং এখন পর্যন্ত মানসিকভাবে সম্পুর্ণ সুস্থ।।আপনি চাইলে আমি নেট থেকে কালেক্ট করে দেবো।আসলে এমন সোশ্যাল সার্ভিস করা আমার নিত্যদিনের কাজ।আর আপনাকে দেখে আমার অলরেডি সিমপ্যাথি চলে আসছে।আমাদের দেখা হচ্ছে তাহলে আবার।তখন না হয় নম্বর টা নিয়েন।”

কথা শুনে মাহির চোয়াল ঝুলে যাওয়ার উপক্রম। অচেনা মানুষকে হেনস্তা করার বইয়ের লেখক বোধহয় ইনি।কথাগুলো বলে লোকটা গেইট দিয়ে ঢুকে বাগানের আড়ালে হারিয়ে গেলো।কপালে এক হাতের আঙুল দিয়ে অনবরত নাড়ছিলো ও।একজন টিচার হয়েও রাস্তার পাশে ওই সুন্দর অসভ্য লোকটার সাথে তর্ক করে গো হারা হারল।মাহির ভাবনার মাঝেই রইস এসে বলল,

“রিয়াদ স্যার কি ইশকুলে চইলা গেলে?”

“হ্যাঁ গিয়ে আমায় ধন্য করেছে।”

মাহির কানে বাজতে থাকে রইসের বলা রিয়াদ স্যার।এই নামটা মাহির খুব চেনা চেনা লাগে।পরক্ষনেই সে ওকে জিজ্ঞেস করে,
“উনার নাম রিয়াদ? ”

“খালি রিয়াদ না।এক্কেবারে আল রহমান রিয়াদ।”

মাহি আজ শেষ। সে সবসময়ই বোকার মতো কাজ করে।আজ আবারও একটা বোকামি করে বসল।সে কোনোমতে আবারও বলল,
“উনি কি জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে চাকরি করে।”

রইস স্বাভাবিকভাবেই বলে,
“হয়,আমার স্যার বিরাট অফিসার।আজ তো এই ইশকুলেই স্যার আইসে।”

মাহি আর এক মুহুর্ত দাড়ায় না।জোড়ে জোড়ে পা ফেলে হেঁটে চলে যায় স্কুলের ভেতর।না জানি আজ কপালে কি আছে।দোয়া ইউনুস পড়ে ফুঁ দিতে থাকে নিজের শরীরে।একদিকে ভিজিটিং অফিসার অন্যদিকে প্রিন্সিপাল স্যার।আল্লাহ্ তুমি আজকে আমায় রক্ষা করো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here