রাঙিয়ে দিয়ে যাও,পর্ব:১০,১১

0
886

রাঙিয়ে দিয়ে যাও,পর্ব:১০,১১
লেখনীতে- মাহি আফরোজ
[১০]

সন্ধা নেমে গিয়েছে ইতিমধ্যে।দিশা নিজেরমত বই নিয়ে পড়তে বসেছে।দিশার আব্বু বাসায় নেই।মাহির জন্য কিছু জিনিস কিনতে গিয়েছে।সেদিন বাসায় এসেই মাহি ওর আব্বাকে ট্রেনিং এর কথা জানিয়েছিলো।নাজমা নিজের মেয়ের পাশে বসে আছে।হঠাৎই আবির ওদের বাসায় আসে।এতবছর পর আবিরকে যেনো চেনাই যাচ্ছে না।গায়ের রংয়ের সাথে মুখের গড়নও কিঞ্চিৎ পরিবর্তন হয়েছে।সে এসে হাসিমুখে ওদের সাথে কথা বলতে থাকে।হালকা কিছু নাস্তা করার মাঝেই মোতাহার এসে হাজির হয় বাড়িতে।সেও আবিরের সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে।

মাহি বাসায় নেই।এটা আবির জানেনা।ওর মা’ই বলতে দেয়নি।কিন্তু আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে না সে তাড়াতাড়ি চলে যাবে।আজ বাসায় রাশেদের সাথে প্রচুর ঝামেলা হয়েছে।আবিরের ভয় ও মাহিকে না সব বলে দেয়।গল্পে গল্পে কেটে যায় অনেকক্ষণ। মোতাহার এসবের পরোয়া করে না।সে মেয়েকে ঘুড়ির মতো নয় পাখির মতো ওড়ার স্বাধীনতা দিয়েছে।ঘুড়ির সুতো সবাই দেখতে পায়,কিন্তু পাখির সাথে নীড়ের যে সম্পর্ক তা অটল,অনড়।সুতো ছিঁড়ে ঘুড়ি উড়ে যেতে পারে,কিন্তু পাখি হাজারও মাইল পাড়ি দিয়ে ফিরে আসবে আপন আলয়ে।মেয়ের প্রতি এতটুকু বিশ্বাস তার আছে।

মোতাহারের ফোন বেজে ওঠে।মাহি কল দিয়েছে। হালকা কিছু কথা বলে সে ফোনটা রেখে দেয়।নাজমা জিজ্ঞেস করে,
“কি বলল ও?কখন ফিরবে?আবিরের উপস্থিতি তার কন্ঠে জড়তা এনে দিয়েছে।

” একটু পরেই রওনা হবে।চিন্তা করতে হবে না।”

নাজমা কিছু বলার আগেই আবির বলে,
“সন্ধা নেমে পড়েছে।বাড়ি আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে। মেয়ে মানুষ একা একা চলাফেরা করা ঠিক নয়।”

নাজমা বলে,”কি করব তোমার চাচা তো মাত্র আসল।এখন নিতে যায় কিভাবে?”

আবির উঠে দাড়ায়।মোতাহার ডাক দেয়,

“আবির”

আবির ঘুরে দাড়ায়।মোতাহার বলে,”অনেকদিন ধরেই মাহি একলা পথ চলে।আমি তাকে একা পথ চলতে শিখিয়েছি।এতদিন যখন সমস্যা হয়নি,বোধকরি আজও হবে না।”

নাজমা অনুরোধের স্বরে বলে,”ছেলেটা যখন চাইছে তখন না হয় ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে ওকে সাথে করে নিয়ে আসুক।”

“সপ্তাহের এই একটি মাত্র দিনটায় ও বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যায়।আগে সারাক্ষণ একসাথে থাকত।এখন সাতদিনে একদিন দেখা হয়।এই সময় আবিরের ওখানে যাওয়া ঠিক হবে না।তাছাড়া রাশেদ আছে ওর সাথে।”

রাশেদের কথা শুনতেই মাথাটা গরম হয়ে যায় আবিরের। সে এসে থেকে যা যা দেখছে তা কখনও কল্পনাও করেনি।রাশেদ তার মুখের ওপর কথা বলে,তর্ক করে।মিষ্টির যা ইচ্ছে হয় ও তাই করে।আবিরের আসা কয়েকদিন অথচ আবির ওকে ইচ্ছে করে দেখলেও মিষ্টির ভাব গা-ছাড়া।সব ভুল আবিরের। যদি কথা বার্তা বন্ধ না করে যোগাযোগ রাখত।তবে মিষ্টির এত সাহস বাড়ত না।এই চাকরী,বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া সব অসহ্যকর লাগছে আবিরের।

___________

“তখন আমি মাত্র ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শেষ করেছি।স্কুলের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে গিয়ে পরিচিত হলাম খুবই মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ের সাথে।কথা বলে জানলাম তার নামও মিষ্টি। এমনকি সে আমাদের গ্রামেরই।প্রাইভেট পড়তে আসা মেয়েটার সাথে আমার নিমিষেই ভাব জমে গেলো।তার বড় বড় চোখ আর কথায় কথায় হাসি।তারপর আস্তে আস্তে জানলাম যে মেয়েটাকে নিয়ে ভাইয়ার সমন্ধে নেগেটিভ কথা বার্তা ছড়াচ্ছে সেই মেয়েটাই এটা।
আমার ভাইয়াকে আমি ভালো করে চিনতাম।মিষ্টি অনেক কথা বললেও কখনও তার মুখে ভাইয়ার কথা শুনিনি।আমাদের ভার্সিটিতেই ও ভর্তি হলো।সেই নিউ টেনে পড়া ছোট্ট মিষ্টি এখন সরকারী চাকুরীজীবি। এতটা বছর ওর সাথে চলে আমি এতটুকু বুঝেছি সে সবসময় চাইত ভাইয়া ওকে ভালোবাসুক।ও অপেক্ষায় থাকত।অনেকগুলো ছেলের প্রপোজাল সে ফিরিয়ে দিয়েছে।কারণ সে তার সেই কিশোরী বয়সের ভালোবাসাকে পেতে চাচ্ছিলো। কিন্তু ভাইয়া ছিলো সম্পুর্ণ বিপরীত মেরুর মানুষ।সে এতটা বছরে কখনও মিষ্টির খোঁজ নেয়নি।”

এতটুকু বলে রাশেদ একটু থামে।দাড়িয়ে থাকা মাহির হাতটা ধরে বলে,

“মাহি আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।তুই শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না,তারও বেশি কিছু।তুই মিষ্টি একটা মেয়ে।আমি মনে করি তোর কোনো কলঙ্ক নেই।”

সিয়াম, স্নেহা আর হিমু নিজেদের মনে মনে ধিক্কার জানায়।সত্যি রাশেদের মতো মাহিকে ওরা ভালোবাসতে পারেনি।আর ওর রাশেদের সম্পর্কে কতটা বাজে কল্পনা করেছিলো।মাহি এতক্ষণ ঠাঁই দাড়িয়ে ছিলো।রাশেদের কথা শুনে সে ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।চোখের পানি আজ বাঁধ মানছে না।আজ প্রথম ফ্যামিলি বাদে গ্রামের কোনো মানুষের মুখে শুনলো তার কোনো কলঙ্ক নেই।

রাশেদ মাহিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওকে চেয়ারে বসায়।হাতদুটো ধরে রেখে বলে,
“আমার ফ্যামিলিতে তুই মানিয়ে নিতে পারবি না মাহি।যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে কিসের মানিয়ে নেওয়া।তুই যেমন ভাইয়াকে এক তরফা ভালোবেসে এসেছিস তা সত্যি, ঠিক তেমনই সত্যি ভাইয়া তোকে কখনও ভালোবাসেনি।সে স্বার্থপরের মতো শুধু জোড় করতে জানে।মানিয়ে নিয়ে ভালোবাসতে সে পারে না।”

স্নেহা বলে,”আমি ভেবেছিলাম আবির এতবছর পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে।”

“না রে স্নেহা সে কখনও ভালোবাসেনি।যদি তাই হতো তাহলে সে ফিরে এসে আমাকেই দেখতে আসত।সে তা করেনি।বরং অনেকগুলো মেয়ের ছবি নিয়ে যাদের পছন্দ হয়েছে তাদেরই দেখতে গিয়েছে।”

মাহির কথায় হতাশা ঝড়ে পড়ে।সে খুব ক্লান্ত। আজ মনে হচ্ছে সে হেরে গিয়েছে।সব ছেড়েছুড়ে একদিকে চলে যেতে ইচ্ছে করছে তার।রাতের আকাশের ওই চাঁদটাকে দেখছে সে।আচ্ছা ওই চাঁদ কি ক্লান্ত হয়না প্রত্যহ রাত্রি পোহানোর অপেক্ষায়।

____________
রাশেদ আর মাহি একটা অটো নিয়ে বাড়ি ফেরে।ফেরার পথে ওদের অটোটা একটা মাইক্রোর সাথে ধাক্কা লাগে।মাইক্রোটা ঘোরানোর সময় ধাক্কা লাগায় শুধু অটোচালকের হাতের কনুইটা একটু ছিলে গিয়েছে।গাড়িতে বসে থাকা বয়স্ক ভদ্রলোকটা তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসে।সবার অবস্থা জিজ্ঞেস করে অটোচালককে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায়।হাতের কনুই ছিলে যাওয়া একজন অটোচালকের কাছে সাধারণ বিষয়।বয়স্ক লোকটা অটোচালককে কিছু টাকা দেয়।

“তুমি ঠিক আছো মা?”

“জ্বী আংকেল।”

“সাথের ছেলেটা কি তোমার ভাই?”

“প্রথমত ভাই,দ্বিতীয়ত বন্ধু।”

লোকটার বয়স হলেও পোশাক,চাল-চলনে মনে হচ্ছে বয়স উর্দ্ধে ত্রিশ -পয়ত্রিশ। কথায় কথায় জানতে পারে উনার নাম আজমির দেওয়ান।পদবী শুনেই বোঝা যাচ্ছে প্রভাবশালী কোনো ব্যাক্তিত্ব।কিন্তু কি অমায়িক ব্যাবহার।ওর বড় মামার বাসার পাশেই রিশাদ দেওয়ান ভিলা।লোকটা কি তারই কেউ।মামার কথা মনে আসতেই মনে পড়ে ট্রেনিং এর আগে ওর মামা বাসায় ডেকেছিলো।ওর মামাও একজন স্কুল টিচার।

চলবে……

রাঙিয়ে দিয়ে যাও
লেখনীতে-মাহি আফরোজ

[১১]

স্রষ্টা বলেছেন,তুমি যাকে’ই আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসবে,আমি তাকেই তোমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবো। এবং তোমাকে একা করে রাখব।

তিনি আরও বলেছেন,কখনো বলবেনা আমি তাকে ছাড়া বাঁচবোনা! তবে আমি তাকে ছাড়াই তোমাকে বাঁচাবো।এবং পেছনের অনুগত সব আবেগ কেড়ে নিয়ে,তোমাকে দিব্যি সামনে নিয়ে যাব!

তুমি কী দেখোনা?ঋতুরাও বদলাতে থাকে।ছায়া দেয়া গাছের পাতাও যায় শুকিয়ে।ধৈর্য্য হারিয়ে যায়। কিন্তু তোমার স্রষ্টা ধৈর্য্যশীল ও পরম দয়ালু। সেই ঝরে যাওয়া পাতার ডাল থেকেই আবার সবুজ পাতা গজায়, তুমি কী দেখো-না তোমার স্রষ্টার এই নিদর্শন?
যে মানুষটাকে তুমি নিজের অংশ ভাবতে সেই মানুষটাই একদিন অচেনা হয়ে যায়।
তোমার মন ভেঙে যায় ?

এমনকি তোমার বন্ধুও শত্রুতে পরিণত হয়
আর শত্রুও খানিক সময় পরে পরিণত হয় বন্ধুতে।

যে মানুষটাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে সেও প্রতারণা করে.. তবে তুমি কেন স্রষ্টা বিমুখ হয়ে মানুষকে ভরসা করো ! অদ্ভুত এই পৃথিবী………
যখন তুমি ভাবো এটা হবেনা কখনো, কিন্তু পরোক্ষণে সেটাই হয়,সেটাই হবার নয় কী?
তুমি বলো- আমি পড়বোনা অথচ তুমি পড়।
তুমি বলো- আমি বিস্মিত হবোনা ” অথচ তুমি রোজ বিস্মিত হও।

এবং সবচেয়ে বিচিত্র বিষয় হচ্ছে……
তুমি বলতে থাকো- আমি মরে গেছি। অথচ তুমি বাঁচো,তুমি বেঁচে থাকো। তোমার স্রষ্টা তোমাকে বাঁচায়,তোমার স্রষ্টা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখেন।
(মাওলানা জালালউদ্দিন মোহাম্মদ রুমি)

মাহি চুপচাপ বসে আছে মেঝেতে।কথাগুলো তার মনে গিয়ে দারুন ভাবে আঘাত হেনেছে।প্রতিটা কথাই সত্যি। মাহি সেই দশম শ্রেণী থেকে এই অবদি সর্বদা ভেবে চলে এসেছে সে আবিরকে ছাড়া বাঁচবেনা।অথচ দীর্ঘ নয় বছর সে এমনিতেই নয় হেসে খেলে সুন্দরমতো সময় পার করেছে।

এক তালিমে নাজমা মাহিকে নিয়ে এসেছে।ছোটবেলা মাহি এই তালিমে বহুবার এসেছে।কিন্তু এখন আর যাওয়া হয় না।তালিমের মেয়ের কি সুন্দর কালো চুল,চোখে সুরমা দিয়ে থাকতো,দেখতে খুব সুন্দর লাগত মাহির।যদিও উনি মাথা মুখ সর্বদা ঢেকে রাখেন।কিন্তু যখন উনি ওযু করতেন কিংবা উনাকে কিছু খেতে দেওয়া হতো ও আর সৌমি দুজনে দাড়িয়ে থেকে উনাকে দেখতো।তালিম শেষে তোবারক নিয়ে তাকে সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করে তবে দুজনে বাড়ি আসত।সময়টা কত দ্রুত পার হয়ে যায়।

ভীড়ের মধ্যে মাহি এগিয়ে যায় ভদ্রমহিলার দিকে।মাহিকে এক দেখায় উনি চিনতে পারে।সালাম দিয়ে মাহি কথা বার্তা বলে।সৌমির কথাও উনি জিজ্ঞেস করে।শরীরে তার বার্ধক্যের ছাপ প্রগাঢ়।তবে এখনও সেই মিষ্টি হেসে কথা বলে।মাহি আবারও সালাম দিয়ে চলে আসে।

_____________

মাহি তালিমে বলা কথাগুলো বারবার ভাবতে থাকে।নিজেকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া উচিত।তবে তা আবিরের ক্ষেত্রে নয়।আবির তার ভালোবাসার পরোয়া করে না।সে তাকে কখনও ভালোবাসেনি।

দুপুরে খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলো রাশেদ।ও একা নয়। পাশে আবিরসহ অনেকেই আছে।মোবাইলে মাহির কল আসে।পাশে বসে থাকায় আবিরও অনস্কীনে জ্বলজ্বল করছে সুন্দর একটা ছবিসহ বাংলা ফ্রন্টে লেখা মাহি।রাশেদ মোবাইলটা নিয়ে বাহিরে চলে যায়।আলী বিষয়টা খেয়াল করে আবিরকে উস্কে দিতে বলে,
“বিয়ের বর একজন আর গল্পের সাথী অন্যজন।”

আলীর কথায় আবির চুপ করে থাকে।আবিরের নিরবতা দেখে আলী আবারও বলে,
“সময় থাকতে কিছু একটা করো।পরে দেখা যাবে ভাই ভাই খুনাখুনি হইবা এক মেয়ে নিয়ে।”

ছি!কি জঘন্য মন মানসিকতা ওর।অথচ আবির যেনো বোধহীন।সে মনে মনে রাগে ফুসছে।আর তাতে ইন্ধন গোছাচ্ছে আলী।

“রাশেদ,আমি অনেক ভেবেছি।আমি আমাকে ভালোবাসার জন্য কাউকে একটা সুযোগ দিতেই পারি।কিন্তু সে আবির নয়।”

রাশেদ মাহির কথায় চুপ হয়ে আছে।পরন্ত দুপুরে মাহি কি পাগলের প্রলাপ বকছে।রাশেদের নিরবতা দেখে মাহি আবারও বলে,

“তুই সবসময় বলতি না যে,আমি তোর ভাইয়ার মাঝে কি এমন দেখেছি?আসলে আমি তাকে দেখার পর আর কাউকে ভালো করে দেখিনি।পারিবারিক অসচ্ছলতা, পড়াশোনার চাপ,আশেপাশের মানসিক যন্ত্রণা সব মিলিয়ে আমি একটা অসুস্থ পরিবেশে ছিলাম।কিন্তু আমি এখন নতুন করে বাঁচতে চাই।কাউকে ভালোবাসতে চাই যে আমায় ভালোবাসবে।”

“মাহি আমি তোকে সাপোর্ট করি।আমিও চাই তুই মরিচিকার পেছনে না দৌড়াস।তুই ভাইয়ার চেয়ে ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস।”

রাশেদ কলটা কেটে দেয়।মাহির কথা ভাবতেই তার ভালো লাগছে।পেছন ফিরতেই ও আবিরকে দেখতে পায়। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় আবির বলে,

“কার সাথে কথা বলছিলি?”

রাশেদ ত্যাড়াভাবে উত্তর দেয়,
“জেনেও প্রশ্ন করছো?তবে শোনো মাহির সাথে কথা বলছিলাম।”

“তাই বলি মাহি কার বুদ্ধিতে এতটা বাড় বেড়েছে।তোকে যতটা ইনোসেন্ট মনে হয় তুই তার চেয়েও বেশি শয়তান।” আবির জোড়ে চেচিয়ে কথাগুলো বলে।আবিরের জোড়ে কথা শুনে প্রায় অনেকেই হাজির হয় সেখানে।

আবিরের কথায় একটু মুচকি হেসে রাশেদ বলে,
“আমি শয়তান হই তা ভালো,তবে তোর মতো প্রতারক নই।”

“আমি প্রতারক তোকে কে বলেছে?”

এমন করেই বাড়তে থাকে আবির আর রাশেদের কথা-কাটাকাটি। বড়রা এসে ওদের থামায়।আলী সবাইকে বলে যদি এই বিয়ে হয় তাহলে মিষ্টিকে চাকরী ছাড়তে হবে।চাকরী করা অবস্থায় যদি মিষ্টি এই বাড়িতে আসে তবে আলী আর কখনও এই বাড়িতে আসবে না।এমনকি ও বউ,বাচ্চাকেও আসতে দেবে না।আলী বাড়ির বড় জামাই।পরিস্থিতি ঘোলাটে।
আবির সবার সামনে দম্ভ নিয়ে বলে,

“আমি যা বলব মিষ্টি তা অক্ষরে অক্ষরে শুনতে বাধ্য। চাকরী ছাড়া তো মামুলী ব্যাপার।আমি বললে অন্য কারোর সাথে কথা অবদি বলবে না।আমার বউকে আমি চাকরী করতে দেবো না।”

সকলের কথায় রাশেদ চুপ থাকলেও আবিরের কথায় সে এখন হেসে ওঠে।বলে,
“অমনি মিষ্টি তোর বউ হয়ে গেলো।আগে দ্যাখ ওরা কি বলে?মিষ্টি রাজী আছে কি না।ওর তোকে পছন্দ কি না।”

আবির রাগে তেড়ে আসে রাশেদের দিকে।রাশেদও এগিয়ে যায়।দুইভাই মুখোমুখি দাড়ায়।
“রাশেদ,আমার ধৈর্যের বাঁধ কিন্তু ভেঙে যাচ্ছে।আমার মতো ছেলে ওকে বিয়ে করবে এটা ওর ভাগ্য আর বহুদিনের স্বপ্ন।ও আমায় ভালোবাসে।”

“নিজেকে এতোটা ইমপোর্টেন্স দিওনা ভাইয়া।কে কার যোগ্য তা সময়ই বলে দেবে।আর ভালোবাসার মূল্য তুমি কি বোঝো।” কথাগুলো রাশেদ বলতেই আবিরের বাবা এসে দুজনকে আলাদা করে দেয়।

আবিরের কাকা বলে,
“কিসের জন্য ভাই হয়ে অন্য ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করছো আবির।মিষ্টির বাবা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে ওরা এই বিয়েতে রাজি নয়।”

রাশেদ নিজের ঘরে যাওয়ার আগে আবিরকে বলে যায়,”কাউকে রেসপেক্ট না দিয়ে তার কাছে যেমন রেসপেক্ট পাওয়ার আশা করতে নেই, তেমন কাউকে ভালোনাবেসে তার থেকে ভালোবাসা আশা করা বোকামী।মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভাইয়া।”

আবিরের মাথা মনে হচ্ছে রাগে আগুন হয়ে আছে।এত চাপ সে নিতে পারছে না।মিষ্টি আর আগের মতো নেই ভাবতেই তার মাথার শিরাউপশিরা রাগে দপদপ করছে।মিষ্টির সাথে দ্রুত দেখা করতে হবে।গালে কষে একটা থাপ্পড় মারলে সব ঠিক হয়ে যাবে।আবির মিষ্টির সাথে দেখা করার জন্য রওনা হয়।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here