#রাজকুমারী__নীনা( ভৌতিক__গল্প )
#পর্ব_০১
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
ক্লাবে উচ্চ শব্দ গান চলছে আর কিছু ছেলেদের ডান্স করছে, কিছু ছেলেমেয়ে ড্রিংক করছে, কেউ কেউ ড্রিংক করতে করতে ডান্স করছে।
মৃওিকা দোস্ত তোদের না একটা বাংলো আছে। শুনলাম তোদের বাংলোর পিছনে একটা পুরুনো রাজপ্রাসাদ আছে।চল না আমার সবাই মিলে একবার রাজপ্রাসাদটা ঘুরে আসি। ডান্স করতে করতে এনা কথাটি বললো।
এই কথা শুনার সাথে সাথে মৃওিকার মুখে চোখে স্পষ্ট ভয় দেখা দিলো।
মৃওিকাঃ এনা তোদের তো আগে ও আমি বললাম ওই প্রাসাদটা ভালো না। ওইখানে সেই বৃদ্ধ অদ্ভুত দেখতে মহিলাটা নাকি আত্মাদের বন্দী করে রেখেছে। আমি যাব না মরতে যাব নাকি।
এনাঃ দূর তুই কোন আদি যুগে পরে আছিস বল তো।ওইসব আত্মা – টাত্মা বলতে কিছু নাই।শুধু অভিনয়ে এইসব হয়।কুসংস্কার নিয়ে পরে আছিস রাহুল প্লিজ মৃওি কে একটু বুঝা আমরা সবাই মিলে ওই প্রাসাদটা একবার ঘুরে আসি।
রাহুলঃ মৃওিপাখি ভয় পেয়ো না। আমরা সবাই একসাথে যাব।প্লিজ রাজি হয়ে যাও আমার ও প্রাসাদটা দেখতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ প্লিজ মৃওি।আই লাভ ইউ মৃওি।তুমি যদি আমায় ভালোবেসে থাকো তাহলে রাজি হও।
মৃওিকাঃ রাহুল আমি ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।কিন্তু বুঝতে চেষ্টা করো ওই প্রাসাদটা ভালো না। যারা যারা প্রাসাদের ভিতর প্রবেশ করেছিলো কেউ ফিরে আসে নি।
রাহুলের সাথে ডান্স করতে করতে বললো।
পাশে ডান্স করতে থাকা একটা ছেলে এসে বললো,,,রিয়েল মৃওিকা তুই এইসবে বিশ্বাস করিস কবে থেকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি, তুই,রাহুল,রীদিমা,জয় সবাই যাব কিছু হবে না। প্লিজ প্লিজ রাজি হয়ে যা।আমার ও অনেক দিনের ইচ্ছে প্রাসাদটা দেখার।
তৌশিক এর দিকে মৃওিকা অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।
সবার জোরাজোরিতে মৃওিকা শেষে রাজি হলো।
সবাই মিলে ঠিক করলো দু দিন পর বিকেল চার টায় রওনা দিবে।
কিন্তু মৃওিকা এখনও ভয় পেয়ে আছে।
বাবা বলেছিলো,,ওই প্রাসাদে নাকি কোন রাজকুমারীর আত্মা একশো বছর ধরে বন্দী আছে। খুব ভয়ানক নাকি ওই আত্মাটা।কথাটা ভাবতেই শরীর কেমন শিরশির করছে।
ওদের জোরাজোরিতে রাজি তো হয়ে গেলাম।কিন্তু ওইখানে যাওয়ার পর কি হবে।
রাহুলঃ কি ভাবছো মৃওিপাখি?।
রাহুলের ডাকে মৃওিকার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলো।
মৃওিকা কিছু না বলে একটা মলিন হাসি দিল।
মৃওিকার ভীতু চেহারা দেখে জয় বললো,,
আরে মৃওিকা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দরকার হলে আমাদের রক্ষার জন্য কিছু নিয়ে যাব।কি রীদিমা ঠিক বলছি না।বলে,রীদিমাকে চোখ মারলো।
মৃওিকাকে একটু ভয় দেখালো।
রীদিমা দুষ্ট হেসে বললো,,, ঠিক বলেছো জয়।
সবাই একসাথে হাসা শুরু করলো। মৃওিকার ভীতু চেহারা দেখে।
আর মৃওিকা আসহায় চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।
দু দিন পর,,,,,,,,,,,,,,,,
বিকাল চার টায় সবাই একসাথে হলো মৃওিকাদের বাংলোতে যাওয়ার জন্য।
বাংলোতে যাবে আগে সবাই। তারপর সেখান থেকে প্রাসাদ এ যাবে।সবার মনে আলাদা একটা উওেজনা কাজ করছে মৃওিকা ছাড়া।
বাবাকে মৃওিকা বলে এসেছে,, বাংলোতে সব বন্ধুরা ঘুরতে যাবে কিছু দিনের জন্য।
বাবা প্রাসাদের দিকে যেতে মানা করছে।
[মৃওিকার মা বেঁচে নেই।মৃওিকার জন্মের দু দিন পরই মারা গেছে ]
সবাই গাড়িতে ওঠে বসলো। রাহুল ড্রাইভ করছে মৃওিকা রাহুলের পাশে বসেছে।
[ আপনাদের একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি,,,,,,,,,,
গল্পে মৃওিকা রাহুলের গাল ফ্রেন্ড,, এনা- তৌশিক,,রীদিমা – জয়]
গাড়ি চলছে আপন গতিতে।
কিছুক্ষণ পর,,,,,,,,
রাহুলঃ মৃওিকা তোমাদের বাংলোতে যাওয়ার এই রাস্তাটা অনেক দূরে।বাংলোতে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে। অন্য কোন রাস্তা নেই যাওয়ার জন্য।
মৃওিকাঃআছে কিন্তু ওই রাস্তাটা অনেক বিপদজনক। এই রাস্তাটা বড় হলেও সমস্যা কম।প্লিজ রাহুল ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার দরকার নাই।এই রাস্তা দিয়েই চলো।
জয় বলে উঠলো,,এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই মৃওি।প্লিজ রাস্তা কোন দিকে বল।
সবার জোরাজোরিতে মৃওিকা দক্ষিণের রাস্তাটা দেখিয়ে দিলো।
বাবার মৃওিকে বলেছিলো দক্ষিণের রাস্তাটা বিপদজনক। ওই রাস্তা দিয়ে যেন না যায়।
গাড়ি ঘুরিয়ে রাহুল দক্ষিণের রাস্তা দিয়ে চালানো শুরু করলো।
মৃওিকার ভয়ে অবস্থা খারাপ।
এরা আমার কোনো কথা শুনছে না। একে তো রাত দশটা বাজে তার ওপর এই নির্জন রাস্তাটা কেউ চলাফেরা ও করেনা এই ভয়ানক রাস্তা দিয়ে। বাংলোতে দু বার গিয়েছিলাম।তখন বাবা সব বলেছিলো।
কিছুক্ষণ গাড়ি চালানোর পর দূর থেকে কাউকে রাস্তার মাঝখানে হাঁটতে দেখা যাচ্ছিলো।এমন আস্তে আস্তে হাঁটছ যে কোনো সময় এক্সিডেন্ট হতে পারে।
গাড়ি লোকটির সামনে আসলে ওরা বুঝলো এইটা একটা মহিলা।সাদা কাপড় পরে রাস্তার মাঝখানে হাঁটছে। কাপড়ের আঁচল রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। পিছন থেকে খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।পিছন
দিকটায় কেমন ভয়ানক দেখাচ্ছে।
মৃওিকা ভয় জড়িত কন্ঠে,, রাহুলের বাম হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,,,প্লিজ রাহুল চল আমার ফিরে যাই।এই রাস্তাটা ঠিক নয় আমাদের জন্য আগে বলেছিলাম আমি।
রাহুলঃ মৃওি পাখি তেমন কিছু হবে না। তুমি ভয় পেয়ো না বলে মৃওিকে এক হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রাহুল।
হঠাৎ এনা বলে উঠলো,,রাহুল গাড়ি থামা না হয় মহিলার ওপর ওঠে যাবে।কেমন আজব মহিলা রে বাবা কতক্ষণ ধরে হর্ন বাজাচ্ছে সরছেই না। মরার শখ হয়েছে মনে হয়।
রিদীমাঃ রাস্তার মাঝখানে কেউ এইভাবে হাঁটে। যতসব ফাউল মহিলা।
রাহুল গাড়ির গতি স্লো করে দিলো। নাহয় যেকোনো সময় মহিলাটির ওপর চালিয়ে দিবে।
রাহুল জোরে জোরে হর্ন বাজাচ্ছে কিন্তু মহিলাটি সরছেই না। রাহুলের মেজাজ বিগড়ে গেল। বারটা বেজে আসছে তার ওপর এই আজব মহিলাটা সরছেই না।
রাহুলঃ গাড়ি থামিয়ে বললো।তোরা বস আমি বাহিরে গিয়ে দেখছি।
রাহুল গাড়ির দরজা খুলতে যাবে তার আগে মৃওিকা খপ করে রাহুলের হাত ধরে ফেললো।মাথা নাড়িয়ে মানা করছে না যেতে।হয়তো খারাপ কিছু হতে পারে।
রাহুল বিরক্তিকর চোখে মৃওির দিকে তাকালো।
মৃওিকাঃ প্লিজ রাহুল যেওনা।খারাপ কিছু হতে পারে।
রাহুল রেগে মৃওিকার হাত সরিয়ে বললো,, মৃওি তোমার মাথায় শুধু এইসব ঘুরে। হাত ছাড় আমি দেখছি মহিলাটা রাস্তা কেন ছাড়ছে না।আর না হয় সারা রাত এইখানে পরে থাকবো নাকি।
এনা, রিদীমা, তৌশিক,জয় ওরা ও মানা করলো না যেতে।মহিলাটাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।আর এত রাতে কেউ চুল খোলা রেখে সাদা কাপড় পরে রাস্তার মাঝখানে হাঁটবে নাকি।মোটেও স্বাভাবিক নয় কিছু তো ঘাপলা আছেই।
সবার জোরাজোরিতে রাহুল গাড়ি থেকে বের হলো না।
জয়ঃরাহুল তুই একটা কাজ কর গাড়ি স্টার্ট দে।যা হবার হবে।
রাহুল গাড়ি স্টার্ট দিলো।গাড়ি চালিয়ে মহিলাটির কাছে চলে আসল। এখন কি করবে মহিলাটা সরছে না, গাড়ি ওপর দিয়ে চালিয়ে দিবো নাকি।
আর কিছু না ভেবে রাহুল চোখ বন্ধ করে মহিলাটির ওপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দিলো।রাহুলকে এমন করতে দেখে সবাই ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
তারপর সবাই চোখ খুলে যা দেখলো সবাই তাতে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।
চলবে,,,,,,,,
[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]
#ফিহা আহমেদ ?