রাতের_কুয়াশা,প্রথম_পর্ব

0
1861

#রাতের_কুয়াশা,প্রথম_পর্ব
লেখাঃ-মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

মেয়েটা বললো, আমার কাছে লঞ্চের টিকিট সংগ্রহ করার টাকা নেই আপনি কি আপনার কেবিনে একটু স্থান দিবেন? আপনি বিছানায় শুয়ে থাকবেন আমি নিচে বসে থাকবো, আসলে আমার আজ ঢাকা শহর পৌঁছানো খুব দরকার। ”

” বললাম, দেখুন এমনিতেই আমি সবসময় মেয়েদের থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলাচল করি তাই আপনি বিরক্ত না করে প্লিজ চলে যান। আপনার যদি টাকার সমস্যা থাকে তাহলে আমি টাকা দিচ্ছি সমস্যা নেই তবুও কেবিনে যায়গা হবে না। ”

” সত্যি সত্যি টাকা দিবেন? ”

” হ্যাঁ, টাকা দিতে আমার কোন আপত্তি নেই আর যেহেতু আপনি বিপদে পরেছেন তাই আপনার সাহায্য করতেই পারি। ”

” ঠিক আছে ধন্যবাদ। ”

মেয়েটা টাকা নিয়ে চলে গেল, নামটা জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। শ্যামলা চেহারার মেয়েটা দেখতে বেশ লাগছিল, কথাবার্তা বেশ গুছিয়ে বলতে পারে। সে যখন নিজের ইচ্ছেতে থাকতে এসেছিল তখন তাকে রেখে দেওয়া উচিত ছিল। বরিশাল থেকে মাত্র এই কিছুক্ষণ আগে লঞ্চ ছেড়েছে, সদরঘাট পর্যন্ত এখন একা একা বসে থাকতে হবে। মেয়েটা পাশে থাকলে সারারাত গল্প করতে করতে কাটিয়ে দিতে পারতাম, ইসস এখন আফসোস হচ্ছে। ভাবলাম, এতটুকু একটা লঞ্চে তাকে খুঁজে বের করা কি খবর কঠিন কিছু? আবার ভাবলাম, ধুর আমি তো নিজেই তাকে বলেছি মেয়েদের থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখি। তাহলে আর তার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে হাসির পাত্র হবো কেন?

ডিসেম্বরের আজকে আটাশ তারিখ, বাংলাদেশের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পরার সময়। কেবিন থেকে বাহিরে বের হতে ইচ্ছে করছে না, কনকনে ঠান্ডার মধ্যে বাহিরে গিয়ে কাঁপা-কাঁপি করার কোন মানে হয়? মেয়েটার গায়ে তখন আমি শীতের কোন পোশাক দেখতে পেলাম না। এত ঠান্ডার মধ্যে সে কি শীতের পোশাক ছাড়াই লঞ্চের মধ্যে থাকবে?

কেবিন থেকে বেরিয়ে পরলাম, উদ্দেশ্য হচ্ছে মেয়েটা কোন যায়গা আছে সেটা খুঁজে বের করা। তারপর যদি দেখি সে সত্যি সত্যি শীতের পোশাক ছাড়া কোন একটা স্থানে যবুথবু হয়ে বসে আছে তাহলে তাকে নিয়ে আসা। আমি মাফলার দিয়ে কান নাক মাথা সুন্দর করে পেচিয়ে দুহাত পকেটে রেখে আস্তে আস্তে হাঁটছি। চারিদিকে অনেক মানুষের ছড়াছড়ি। কেবিন ছাড়া বাকি যারা রয়েছে তারা সবাই খাতা বালিশ নিয়ে নিচে বিছানা পেতে শুয়ে আছে। যারা আগে উঠেছে তারা অনেকখানি শোবার স্থান দখল করে নিয়েছে, আর যারা পরে এসে স্থান দখল করতে পারেনি তারা একরাশ বিরক্তি নিয়ে কেউ বসে আছে আবার কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

একটা পুরুষ বিছানায় বসে বসে ভাত খাচ্ছিল হঠাৎ কি একটা কারণে তিনি তার সামনে বসে থাকা রমণী কে খুব বকাবকি শুরু করলেন। আমি সামান্য থমকে গিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছি কারণ এই মুহূর্তে আমার বিশেষ কোন কাজ নেই। লোকটার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে মহিলা তার স্ত্রী, আর তার বকাবকি করার কারণ হচ্ছে বরিশাল থেকে আসার সময় তিনি লবণ নিয়ে আসেনি। লবনের জন্য এখন তার স্বামী সবার সামনে এমন কান্ড করে বসে। তিনি বারবার নিজের স্বামীর দিকে তাকাচ্ছে আর একটু পর পর চারিদিকে তাকিয়ে দেখছে। চোখের ভাষায় স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন ” ওগো এমন করছো কেন, চারিদিকে সবাই তাকিয়ে আছে। নাহয় একটা ভুল করে ফেলেছি তাই বলে সবার সামনে এভাবে তুমি আমাকে অপমান করবে? “স্ত্রীর চোখের ভাষা তার স্বামী বুঝতে পেরেছে কিনা জানিনা তবে তিনি চুপ করে গেলন। আমি আস্তে আস্তে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম আর চারিদিকে তাকিয়ে মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম।

লঞ্চের নাম ” সুন্দরবন ২ ” কিন্তু লঞ্চের মধ্যে যেই পরিবেশ তা দেখে সুন্দরবনের সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই কেমন শীতের মধ্যে কাঁথা বালিশ নিয়ে মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। এই জন্য মনে হয় ঢাকা শহরের মানুষ এদেরকে বরিশালের কাঁথার গাট্টি বলে উপহাস করে। তিনতলা বিশিষ্ট লঞ্চের সবগুলো তলায় খুঁজে খুঁজে মেয়েটির দেখা পেলাম না। মনে সেও কোন এক যায়গা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে তাই দেখতে পাচ্ছি না। সকলের কাঁথা জাগিয়ে চেক করলে হয়তো পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সেই অসম্ভব কাজটা কীভাবে করবো?

হাঁটতে হাঁটতে লঞ্চের ছাঁদে গিয়ে দাঁড়ালাম, যেখান থেকে ইঞ্জিনের ধোঁয়া বেরুচ্ছে সেখানে কিছু মানুষ মিলে তাস খেলছে। ধোঁয়া বেড়নোর জন্য এই স্থানে সামান্য গরম লাগে তাই এরা তাস খেলার জন্য এই স্থান দখল করেছে। আজকে মনে হয় অনেক বেশি কুয়াশা পরেছে সামান্য দুরের তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। লঞ্চের মাস্টার কীভাবে দিক নিদর্শন ঠিক রেখে সামনে এগোচ্ছে বুঝতে পারছি না। রাতের কুয়াশা এত বেশি পরিমাণ গাড়ো দেখা যাচ্ছে যে মনে হয় মেঘের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।

কিছুক্ষণ খেলা দেখছিলাম, খুব সহজ একটা খেলা কল ম্যারিজ। এদের দেখে মনে হচ্ছে এরা কোন ছাত্র হতে পারে তবে সময় পার করার জন্য তাস খেলা শুরু করেছে। আমি যখন পিরোজপুর থেকে আগে পরিচিতদের সাথে ঢাকা আসতাম তখন তাস খেলে আমারও সময় পার করতাম। তাদের মধ্যে একটা ছেলে বেশি ভালো খেলতে পারে না তাই বারবার ভুল চাল দিয়ে হেরে যাচ্ছে। আমার খেলা দেখার আগ্রহ দেখে একজন তাদের সাথে খেলতে বললো। আমিও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম, তাদের মধ্যে একজন আমাকে একটা সিগারেট দিল। আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, আমি সিগারেট খাই না।

খেলা এইবার টানটান উত্তেজনায় জমে উঠেছে, মনে হয় যেন কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। আমি একমনে তাস খেলছি হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ একজন মেয়ে কণ্ঠে বলে উঠলো।

” আরে আপনি এখানে তাস খেলছেন? আর আমি আপনাকে সমস্ত লঞ্চের মধ্যে খুঁজে খুঁজে পিপাসিত হয়ে গেছি। ”

” পিছিনে ফিরে তাকিয়ে দেখি কতক্ষণ আগে যেই মেয়ে লঞ্চের ভাড়া নিয়েছে সেই মেয়ে। আমি আগের বার তাকে আপনি করে বলেছিলাম কিন্তু এবার ইচ্ছে করে তুমি করে বললামঃ- তুমি এখানে কেন? ”

” আবার কথা বলেন? কেবিনে তালা দিয়ে আপনি এখানে বসে আছেন আর আমি ঠান্ডায় শেষ। ”

” তাস খেলা একটা ছেলে বলে উঠলো, ভাবি ভাইতো সবসময় বাসায় বসে আপনার সাথেই থাকে। তাই আজকে রাতটা আপনি একা একা কেবিনে গিয়ে কাটিয়ে দেন আমরা ভাইর সাথে তাস খেলি। প্লিজ ভাবি একটা রাতেরই তো ব্যাপার তাই না? ”

” আমি মনে মনে বিরক্ত হলাম, কিছু জিজ্ঞেস না করে এরা তাকে ভাবি বানিয়ে ফেলেছে। মেয়েটি কি মনে করবে কে জানে? ”

” মেয়েটা বললো, না ভাই হচ্ছে না কারণ এখন সে যদি কেবিন রেখে এই ছাঁদে খোলা যায়গায় বসে শরীরে বাতাস লাগিয়ে ঠান্ডা বাধায় তাহলে অসুস্থ হলে সেই যন্ত্রণা আমাকে পোহাতে হবে। ”

” আমি আবারও অবাক হলাম কিন্তু কিছু একটা বলতে যাবো তখন মেয়েটি বললো, এখনো বসে আছো তুমি? উঠে এসো বলছি। ”

” সেই ছেলেটা বললো, ভাবি আপনি ভাইয়াকে একবার আপনি আরেকবার তুমি করে বলেন কেন? ”

” রাগ করে বলছি, বুঝতে পারছেন না? ”

” কি করে বুঝবো? আমি তো বিয়ে করিনি। ”

” করার দরকার নেই, কি দরকার শুধু শুধু একটা মেয়েকে বিয়ে করে খাওয়ানোর? দেখেননা আপনার ভাই আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে ফকির হয়ে গেল।”

আমি দেখলাম আর কথা বড়ানো উচিত নয় তাই তাস রেখে উঠে পরলাম। সত্যি সত্যি মেয়েটি ঠান্ডা সহ্য করতে পারছে না, কেমন যেন কুঁকড়ে মুকরে যাচ্ছে। হাটতে হাঁটতে দোতলায় আসলাম, মেয়েটা বললোঃ-

” একটা জরুরি কাজের জন্য আপনাকে খুঁজে বের করেছি। ”

” কি কাজ? ”

” খুব ঠান্ডা লাগছে, তাই ভাবছি চা খাবো কিন্তু টাকা তো টিকিট কেটে শেষ হয়ে গেছে। বাকি কিছু টাকা ছিল কিন্তু সে টাকা দিয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি। আসলে সারাদিন কিছু খাইনি তাই প্রচুর ক্ষুধা লেগেছিল। ”

” ভালো করেছেন, ওই লোকটা আপনাকে ভুল করে ভাবি ডেকেছে আপনি কিছু মনে করেননি তো? ”

” নাহহ কিছু মনে করিনি বরং তাদের সেই ভুল বোঝার জন্য আমার কিছু উপকার হয়েছে। ”

” যেমন? ”

” আমি এখন আপনার সাথে চা খেয়ে তারপর আপনার কেবিনে গিয়ে রাতটা কাটিয়ে দেবো বাহিরে প্রচুর ঠান্ডা। আর যদি আপনি তখনকার মতো আমাকে বের করে দিতে চান তাহলে লঞ্চের মধ্যে যে পুলিশ আছে তাদেরকে বলবো আমার স্বামী রাগ করে আমাকে কেবিন থেকে বের করে দিয়েছে। যদি আপনি তখন আমাকে অস্বীকার করেন তাহলে তাস খেলা ছেলেগুলোকে সাক্ষী হিসাবে ডেকে নিয়ে আসবো। হিহিহি। ”

” মানতে হবে আপনার বুদ্ধি আছে কিন্তু সেই ভালো বুদ্ধি ভালো কাজের জন্য খরচ করলে মনে হয় খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ”

” আপাতত রাতের এই কনকনে ঠান্ডা থেকে বাঁচা হচ্ছে আমার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ। আর তাই আমি আমার বুদ্ধি সেই কাজে ব্যবহার করবো, কি রাখবেন তো আপনার সাথে? ”

” আমি মানুষটা খুব খারাপ। ”

” বললেই হলো নাকি? খারাপ মানুষ কখনো কাউকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে নাকি? আর আমি হলাম তালুকদার বংশের মেয়ে, আমাকে ক্ষতি করা এত সোজা না। ”

” টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি বলে আমি ভালো হয়ে গেলাম? ”

” হুম ”

” আমাকে বছর তিনেক আগে এক ব্যক্তি দুই হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। বিনিময়ে তার একটা কাজ করে দেবার কথা ছিল কিন্তু সেই কাজটা করতে গিয়ে আমি পুলিশের হাতে ধরা খেলাম। তারপর বছর খানিক জেল খেটে বের হয়েছি। ”

” আমার অনেক সাহস। ”

” হাহাহা, এতটা সাহস মেয়েদের থাকা ভালো না। ”

” সাহস তো সাহসই, সেটা সবজায়গা প্রয়োগ করা যায়। ”

” সময় মতো বুঝতে পারবেন। ”

” আচ্ছা সময় আসুক। ”

★★

ক্যান্টিনে চায়ের কথা বলে আমরা কেবিনে এসে বসলাম, আমার প্রচুর অস্বস্তি লাগছে। মেয়েটা খুব বেশি কথা বলে যেটা সহ্য করা কষ্টকর কিন্তু কথার মাধুর্য অনেক সুন্দর আর চেহারা শ্যামলা হলেও একটা মায়াবী ভাব আছে। তাই বিরক্ত হলেও চুপ করে তার কথার প্রতিটি জবাব দিয়ে যাচ্ছি। চা এসে গেল, চা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলামঃ-

” আপনার বাসা কোথায়? ”

” কেন? ”

” জানার ইচ্ছে করছে। ”

” ঢাকা শহরের স্থানীয় বাসিন্দা। ”

” বরিশালে কার কাছে গেছিলেন? ”

” একটা মানুষের কাছে। ”

” যেমন? ”

” আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। ”

” দেখা হয়েছে? ”

” নাহহ। ”

” কেন? ”

” সেটা পারসোনাল কথা আপনাকে বলা যাবে না। ”

” আমি এখনো আপনার নাম জানিনা। ”

” মনিরা খাতুন মুন্নী, সবাই মুন্নী বলে ডাকে। ”

” বাহহ খুব সুন্দর নাম, আমার নাম সজীব। মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব। ”

” তাই নাকি? আমার বয়ফ্রেন্ডের নামও সজীব। যাক অবশেষে আপনার আর আমার বয়ফ্রেন্ডের মাঝে একটা মিল খুঁজে পেলাম। ”

” হাহাহা তাই? ”

” দাঁত বের করার কিছু নেই, শুধু নামটাই মিল আছে তাছাড়া আর কিছু মিল নেই। ”

” যেমন? ”

” আপনি দেখতে সুন্দর, আমার চেয়েও আপনার চামড়া সাদা বেশি কিন্তু আমার সজীব কালো। আপনার শরীর একদম পারফেক্ট, আচ্ছা জিম টিম করেন নাকি? ”

” নাহহ করিনা। ”

” করা উচিত ছিল, আপনার শরীর খুব ভালো তাই জিম করলে খুব ভালো দেখাবে। ”

” আচ্ছা করবো তারপর সজীব ভাইয়ের কথা বলেন শুনতে ভালো লাগছে। ”

” ও একদম চিকন শরীরের অধিকারী বাতাস আসলে সাথে সাথে পরে যাবার উপক্রম হয়ে যায়। ”

” আর? ”

” আর কিছু বলবো না। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না। ”

কিছুক্ষন দুজনেই নীরবে বসে আছি, আমার কাছে একটা পতলা কম্বল ছিল সেটা মুন্নীকে বাহির করে দিলাম। মুন্নী সেই কম্বল জড়িয়ে বসে আছে, আমি ভাবছি আবারও কিছুক্ষণ বাহিরে গিয়ে ঘুরবো। তখন সেই তাস খেলা জমে উঠেছিল কিন্তু মেয়েটার জন্য খেলা হলো না। মেয়েটি না থাকলে তাদেরকে কেবিনে নিয়ে আসতে পারতাম। সবাই মিলে আমরা তাস খেলতাম।

আমি কেবিন থেকে বেরিয়ে বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে লঞ্চ কতদূর এসেছে বোঝার চেষ্টা করছি। একটু পরে লঞ্চের মাস্টার হর্ণ বাজিয়ে দিল, আমি সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমার কাজ শুরু করার সময় হয়ে গেছে। আমি আস্তে আস্তে কেবিনে গিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললামঃ-

” আমি এখন আপনার সাহস পরীক্ষা করে দেখতে চাই। ”

” মেয়েটি বললো, মানে? ”

” আমি এখন কিছু কথা বলবো যেগুলো শুনে ভয় লাগতে পারে আপনার। ”

” ঠিক বুঝতে পারলাম না। ”

” আপনার কাছে মোবাইল আছে? ”

” হ্যাঁ ”

” দেয়া যাবে একটু? ”

” মেয়েটা তার মোবাইল আমার দিকে এগিয়ে দিল আমি মোবাইল হাতে নিয়ে বললাম, আপনি এখন ঘন্টা দুয়েক এই কেবিনে বন্দী থাকবেন। আপনি চাইলে ঘুমাতেও পারেন তবে আমার কাজ শেষ হলে আমি কেবিনের দরজা খুলে আপনাকে আপনার মোবাইল দিয়ে তারপর চলে যাবো। ”

” মানে কি? ”

” হাহাহা এইতো ভয় পাচ্ছেন। ভয়ের কারণ নেই আসলে আপনি এতক্ষণ যেই আমার সাথে ছিলেন আমি সত্যি সত্যি খুব খারাপ মানুষ। আমি একজন ডাকাত দলের সদস্য, আমাদের দলে ৩২ জন লোক আছে। তাদের মধ্যে থেকে ২৫ জনে একটা ট্রলারে করে সামনে গিয়ে বাম হাতে একটা খাল আছে সেই খালের মধ্যে অপেক্ষা করছে। বাকি ৭ জন আমরা সবাই এই লঞ্চে আছি, আমাদের কাজ হচ্ছে এই লঞ্চে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মচারীদের পিস্তল ধরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া। তারপর লঞ্চের মাস্টারকে বলে আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী ওই ছোট খালের পাশে গিয়ে লঞ্চ থামাবে। তখন আমাদের বাকি ২৫ সদস্য এসে এই লঞ্চে উঠে সবার কাছে যা যা আছে সব লুট করে নিবে। তারপর আমরা সবাই চলে যাবো আর আপনারা ঢাকা চলে যাবেন। সম্পুর্ন কাজটা সমাপ্ত হতে দুই ঘন্টা সময় লাগবে, আপনি ততক্ষণে নাক ডেকে ঘুমিয়ে পরুন। আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না বরং আপনি বুঝতেই পারবেন না লঞ্চ ডাকাতি হচ্ছে। ”

” আপনি কি আমার সাথে ফাজলামো করছেন? ”

” আমি আমার পিছন থেকে পিস্তল বের করে তাকে দেখিয়ে বললাম, এবার বিশ্বাস হচ্ছে তো? ”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here