রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :10,11
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :10
রিনিকে খাওয়া শেষ করে। রহমার পানি টা এগিয়ে দেয়। তারপর,
রহমান বলেঃরিনি,আমি তোমাকে বিয়ে করছি।
এটা বলে,রিনির হাতটা ধরে।
রহমান আবার বলেঃ
পরশু মানে আগস্ট এর ২ তারিখ আমাদের বিয়ে। কাল আমাদের গায়ে হলুদ হবে। আমি তোমাকে প্রিন্সের মতো অবৈধ ভাবে স্পর্শ করতে চাইনা।সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে নিজের করতে চাই। তাছাড়া, মানুষের সাথে হঠাৎ কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, আর দম বন্ধ হয়ে যাওয়া একই কথা। আমি চাই আজীবন তোমার সাথে কথা বলতে। মৃত্যুর আগ অবধি তোমার অবুঝ মনের কথা গুলো শুনতে। তোমার কথা বলা যেন বন্ধ না হয়।সব সময় কিচির মিচির কথা বলেই যাবে।সারাজীবন এর এই বাঁধনে পরশু বেধে নিবো ওগো রূপসী কন্যা।চাইলে ও পারবে না ছাড়তে। সবার শেষে বলে,
Ek tum ho jo
Kuch kehti nahi,
Ek tumhari yaadein hai,
Jo chup rehti nahi….
এই কথা বলেই রিনির প্রতি উত্তর এর অপেক্ষা না করেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে রহমান। রিনি এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস কর তে পারছেনা।
মেয়ে টার ধৈর্য এর বাঁধ যেন একদম ভেঙ্গে যায় যায় অবস্থা । হাত, পা ঘুটিয়ে বসে আছে রিনি। চোখ গুলো বড্ড জ্বালাচ্ছে, অনবরত টপটপ পানি ঝরে পড়ছে।
রিনি বলেঃ ইয়া, আল্লাহ। মা- বাবার দুইজনের সম্মতি না থাকলে কোন কাজ করা উচিত নই।আমার ভুলের জন্য আজ আমি নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছি।আসলেই, মা বাবা কোন একজনের মনে ও যদি কষ্ট পাই।তাহলে সন্তান কখনো সুখে থাকেনা।
ইয়া মাবুদ,আমার ভুলের শাস্তি কি এখনো শেষ হয়নি।বাবার অমতে সেদিন বের হওয়ার এতো বড় শাস্তি ।আর কতো প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে????
বন্ধ ঘরে, অন্ধকার করে রেখেছে রিনি।এই বন্ধ করে, অবিরত অবুঝ মেয়ের মতো কান্না করে চলছে। কিন্তু তার কান্না শুনার জন্য কেউ নেই। মায়ের কোলে মাথা রেখে শোয়ে থাকলে যে কতটা কষ্ট কমে তা আজ রিনি হারে হারে টের পাচ্ছে।
রিনি বলেঃ আমার মনে না জায়গা করতে পারলো প্রিন্স(ইনতিয়াজ)
না পারলো রহমান।তাদের কাছে আমার মনটা কিছু না।আমি যেন তাদের খেলনার পুতুল। আজ থেকে সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম যা হবে মেনে নিবো।আল্লাহ যা করেন।যদি এক পর্যায়ে আমার মরণ ও হয় হাসি মুখে মেনে নিবো।
তাছাড়া,
সবাই বলে কাউকে
কষ্ট দিয়ে সারাজীবন
সুখী থাকা যায় না।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়
সুখী তারাই থাকে
যারা অন্যকে কষ্ট দেয়।।।
মেনে নিবো সব কষ্ট। মনে করবো আমার মাঝে কোন অনুভূতি নেই।
এসব বলে বলে, রিনি
কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো,নিজে জানে না। কতক্ষণ ঘুমালো রিনি জানে না।ফজরের আযান কানে আসে।রিনি জেগে ওঠে। গোসল করে নেই। কারণ সারারাত ফ্লোরে ঘুমিয়ে ছিল। তাছাড়া মানসিক ভাবে প্রস্তুতির জন্য একটা গোসল করে মনটা হালকা করে নেই। অতঃপর নামাজ পড়ে। রিনি তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। একটু দূরত্বে একটা সাগর দেখা যাচ্ছে। সাগরের প্রত্যেকটা গর্জন যে কিছু বলতে চাইছে। রিনির আজ প্রিন্স এর কথা মনে পড়ছে। কারণ, এত সব কিছু যখন ঘটে গেছিলো রাতের গভীরে রিনির সাথে। তাই রিনি, প্রিন্স কে মনে মনে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কাল থেকে রিনির নামের পাশে থাকবে অন্য একজনের নাম।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
হঠাৎ দরজার মধ্যে কড়া নাড়ে কেউ। রিনির মনে হচ্ছে, কেউ রুমে প্রবেশ করেছে। রিনি যেমন ছিল তেমনই বসে আছে। দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তাসনিয়া(রহমানের বোন)।
তাসনিয়া বলেঃ এই যে এইদিকে আসেন?
রিনি চুপচাপ তাসনিয়ার কাছে গেল।এমন সময়, তাসনিয়া তার হাতে হাততালি দেয়। হাততালি দেয়ার সাথে সাথে বেশ কয়েক টা মেয়ে রুমে প্রবেশ করে। রিনি লক্ষ্য করে দেখে.
সবার হাতে একেক টা থালি আছে। একটা তে আছে, হলুদ লেহেঙ্গা, সাজ সজ্জা, ফুল, হরেক রকমের জিনিস।
তাসনিয়া বলেঃ রিনি তুমি কাল থেকে শয়তান জিনের একমাত্র পুত্র বধু হবে। তাছাড়া, একমাত্র শক্তি শালী শয়তান জিন প্রিন্স রহমান এর বউ হবে। আজ তোমার গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। চুপচাপ, কোন কথা না বলে, বসে পড়।ওরা তোমাকে প্রস্তুত করবে।
রিনি বসে পড়ে। একটা শব্দ ও বলে নি।কারণ কাল রাতেই সব কিছু ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।তবে,
রিনি একটা জিনিস বুঝতে পারছেনা।প্রিন্স(ইনতিয়াজ) তো ভালো জিন।নেহাত আমার সাথে খারাপ কিছু করেছে। তবে,
তাদের তো কোন শত্রু নেই। কারণ, খারাপ জিন দের এড়িয়ে চলতো তারা। যার ফলে, প্রিন্সদের ধারণা তাদের শত্রু নেই।তাহলে, রহমানের সাথে বন্ধুত্বের সৃষ্টি কেমনে?প্রিন্স কি জানতো না? রহমানের জন্ম পরিচয়ের বিষয়ে???এমন সময়,
কে যেন একজন বলে উঠে ঃ…….
প্রিন্স (ইনতিয়াজ) এর আজ বড্ড অদ্ভুত লাগছে। মন টা আনচান করছে।অবশ্য এই উদ্ভব অনুভূতি টা কাল থেকে শুরু হয়েছে।তবে সকাল থেকে মন খু ডাক দিচ্ছে। তার মনে হচ্ছে, খুব কাছের কিছু দূরে স্বরে যাচ্ছে। আপন কাউকে হারিয়ে ফেলছে।তবে এমন কেন হচ্ছে স্পষ্ট বুঝতে পারছে না।তাছাড়া বোতলটা ও এখনো একি জায়গায় আছে।
প্রিন্স কি তাহলে কিছু একটা হারিয়ে ফেলছে?????
অর্কের বাসায় প্রবেশ করতেই, রাজা,লোভা এবং শাম্মি কে দেখে অবাক হয়ে যাই সবাই।তখনই,
শাম্মি বলেঃ সবাই কেমন আছেন?আপনারা আমাদের দেখে নিশ্চিত অবাক হয়ে গেছেন।
অতঃপর, শাম্মি সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে সবাই কে। সবাই ফ্রেশ হয়ে একসাথে বসে।
অর্ক বলেঃ মুগ্ধ ভাই,আপনার চেম্বার বন্ধ রাখছেন নাকি?
মুগ্ধ বলেঃ হুম। এখানে আসবো বলে বন্ধ রাখছি।
সুমি তাদের সাথে যা যা হয়েছে সব খুলে বলে। হাবিব ও সব কিছু খুলে বলে। হাবিবের সাথে ও সুমি, জান্নাতের সাথে যা হয়েছে তা শুনে, অর্ক ও রাহাত হুজুর লাবু এবং রেশমির সাথে যা যা হয়েছে তা খুলে বলে। সবাই বিস্ময় হয়ে যাই। সবাই মুগ্ধ কে ধন্যবাদ দেয়।সুমি ও জান্নাত কে রক্ষা করার জন্য।সুমি কে সবাই বলে,ভালোই করেছিস, মুগ্ধ কে নিয়ে এসে।
এমন সময়,
রাজা রশিদ বলেঃ হুহ অনেক কিছু ঘটে গেল।তবে এর পেছনে কে আছে অনুমান করতে পারছি।রিনি মা কে খুঁজে পাই।তারপর দোষী দের সাজা দেবার ব্যবস্হা করবো।
লাবু ও রেশমী বলেঃ সবাই আসেন খেতে বসি।রাত তো অনেক গভীর হয়েছে।
সবাই খেতে যাচ্ছে।সাথে রাবেয়া ও যাচ্ছে। তাছাড়া, এইখানে রাবেয়া আসার পর থেকে একদম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ঘুমের ইনজেকশনের ইফেক্ট কেটে যেতেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে।সবার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। সুমি ও জান্নাত এর কাছে ক্ষমা চাইলো।তারা অবশ্য, মাফ করে দেয়। কারণ, রাবেয়ার কোন দোষ ছিলো না। যা করছে, প্যারানরমাল কিছু একটা করেছে।সবাই প্রফুল্ল মনে টেবিলের দিকে যাচ্ছে।
তবে, সবার পেছনে ছিল, রাজা মশাই ও মুগ্ধ।
রাজা মশাই বলেঃ মাহাবুব উদ্দিন মুগ্ধ। একদম বাবার মতো হয়েছো।তবে তোমার বিষয়ে জান্নাত জানে তো?
মুগ্ধ একটু চমকে উঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে মুগ্ধ বলেঃ আপনি কেমনে জানেন আমার বাবার দেয়া নাম।
রাজা মশাই বলেঃ তুমি যে জিন তা আমি তোমাকে দেখে বুঝতে পারছি। অবশ্য এমনি এমনি তো আর রাজা হয়নি জিন রাজ্যের।আর তোমার বাবা আমার বন্ধু। আমি জানি তুমি জান্নাত কে অসম্ভব ভালোবাস।তবে,নিজের বিষয়ে না লুকিয়ে সব সত্যি বল।কারণ, বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে,আর জুড়া লাগনো যায় না।বিশ্বাস হলো আয়নার মতো। ভেঙ্গে গেলে জুড়া লাগাতে পারবে না শত চেষ্টা করে ও।
ভালোবাসা,পবিত্র ইচ্ছে, বিশ্বাস, যোগ্যতা থাকলে ভালবাসা কে জয় করা যায়। সব কিছু গুণ তোমার মাঝে দেখতে পাচ্ছি,
তাছাড়া তুমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছ।।তুমি খুব ভালো ভাবে রাখতে পারবে জান্নাত কে।তোমার অস্তিত্বের কথা টা বলে দিবে।আশা করছি,রিনি কে খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
মুগ্ধ একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলেঃ ইনশাআল্লাহ।
সবাই রাতের খাবার শেষ করে। কথা মতে,কাল সকাল থেকে শুরু হবে তাদের অনুসন্ধান।ছেলেরা ২ টি রুমে, মেয়ে রা বাকি দুটি রুমে ঘুমাতে গেল।
ঘুম একটু গভীর হতেই, জান্নাত এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জান্নাত রুম থেকে বেরিয়ে আসে, জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে,,,,,,,
চলবে……..
রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :11
ঘুম একটু গভীর হতেই, জান্নাত এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জান্নাত রুম থেকে বেরিয়ে আসে, জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে,,কে যেন দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়।জান্নাত চিন্তা করে এতো রাতে কে ওখানে। কে তা দেখার জন্য, জান্নাত বেরিয়ে পড়ে। তবে কাউকেই দেখে নি বারান্দা তে,।হঠাৎ জান্নাত উঠানে দেখতে পেল একটা ছায়া মুর্তি।জান্নাত আবার এগিয়ে গেছে সেদিকে।কিন্তু এবার ও গায়েব।আবার লক্ষ্য করে, ছায়া মানবি হেটে যাচ্ছে। জান্নাত ও নাছোড় বান্দা পিছু নিলো।কারণ এট এনি কস্ট জানতে হবে, কে এটা!!!
ছায়া মানবি হেটে হেটে চলছে বেস কিছুক্ষণ ধরে। অবশেষে, একটা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে পড়ে। জান্নাত ও কিছু টা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। জান্নাত লক্ষ্য করে এটা এতটা মেয়ে।নদীর পানিতে মেয়ে টার চুল ভেসে উঠেছে।অনেক লম্বা চুল গুলো। মেয়ে টি নদীর পানিতে নেমে যাই। অমাবস্যার কারণে বিদঘুটে অন্ধকার ছিল। তাই জান্নাত এর দেখতে কষ্ট হচ্ছিল।
ছায়া মানবি নদীর পানিতে ফুটে থাকা শাপলা তে হাত দিয়ে ছিড়ে নেই।নদীতে অনেক গুলো শাপলা ফুল ফুটে ছিল। একটা ফুল হাতে নিয়ে ছায়া মানবি ঠোঁট জোড়া নাড়ছে। তাই জান্নাত অনুমান করে।ছায়া মানবি
কোন মন্ত্র উচ্চারণ করেছে। আবার নদীতে লাগিয়ে দেয় শাপলাটা।তবে এখন শাপলা টা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। চকচক করছে। জান্নাত কে পানিতে নামতে বাধ্য করছে।শাপলাটা জান্নাত কে তার দিকে আকর্ষিত করছে। জান্নাত নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। জান্নাত আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে নদীর জলে।
সবাই কে সতর্ক করে দিয়েছিল মেয়েরা যেন একা কোথাও না যায়। কিন্তু অতি আগ্রহ একদম সুখের হয়না। জান্নাত এর অতি আগ্রহের জন্য এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে।
জান্নাত এর গলা অবধি পানি।তবে চোখ জোড়া স্থির করে তাকিয়ে আছে শাপলা ফুলের দিকে।অসম্ভব চকচক করছে।শাপলা টা যতোই স্পর্শ করতে চাইছে। ততই জান্নাত এর হাতের নাগালে চলে যাচ্ছে। জান্নাত আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। জান্নাতের খেয়াল নেই সেদিকে।জান্নাত এর শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। জান্নাত যেন কোন এক ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এখন খুব ভালো ভাবে অনুভব করছে ।হাত, পা ছড়াছড়ি করছে। জান্নাত সাতার কাটতে জানে না।তাই আস্তে আস্তে নদীর গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া জান্নাত স্পষ্ট বুঝতে পারছে,এখন তার পা টা ও কে যেন পানির ভিতরে টান দিচ্ছে। জান্নাত এর দুচোখ অন্ধকার ঘিরে আসছে।হঠাৎ, জান্নাত এর অবচেতন শরীর বুঝতে পারছে,কে যেন কোমরে স্পর্শ করছে। জান্নাত নিশ্বাস নিতে পারছে একটু একটু তবুও কষ্ট হচ্ছে। জান্নাত এর মস্তিষ্ক আর কাজ করছে না। সেন্স লেস হয়ে পড়ে জান্নাত ।
মুগ্ধ অনেক চেষ্টা করছে তবুও জান্নাত এর সেন্স ফিরে আসছে না। শ্বাস প্রশ্বাস ও বড্ড অস্বাভাবিক। মুগ্ধ ডাক্তার তাই বেশ বুঝতে পারছে বড্ড ক্রিটিকাল অবস্থা।এই মুহূর্তে অক্সিজেন দিতে হবে। অন্য তাই মারাত্মক ভাবে খারাপ কিছু হবে। মুগ্ধ কোন উপায় না পেয়ে। মুগ্ধ,
কিছু চিন্তা না করে কৃত্রিম পদ্ধতি নিশ্বাস প্রদানের প্রয়োগটি জান্নাত এর উপর এপ্লাই করে । মুগ্ধের ঠোঁট জোড়া জান্নাত এর ঠোঁটের সাথে আটকে দেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর জান্নাত একটা বড় করে শ্বাস নেই। মুগ্ধের ঠোঁট সরিয়ে নেই। মুগ্ধ আবার চেক করে দেখে।এখন নরমাল আছে সব।তবে জান্নাত এর পুরো শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে। ভিজে কাপড়ে আর বেশিক্ষণ থাকলে জান্নাত এর আরও ক্ষতি হবে। মুগ্ধ দাঁড়িয়ে যায় । হাত দুটো প্রসস্থ করে।মুগ্ধের কাঁধ দিয়ে এক জোড়া ডানা বেরিয়ে আসে। খুব সর্তকতার সাথে কোলে তুলে নেই জান্নাত কে ।চোখের এক পলকে মুগ্ধ
ছুটে চলে, অর্কের বাসার গেইটের সামনে। মুগ্ধ নিজের ডানা লুকিয়ে নেই। কারণ, মুগ্ধ চাইনা,সে যে জিন পরী একথা সর্ব প্রথম জান্নাত ছাড়া কেউ জানুক। তাছাড়া, জান্নাত জানার পরে,যদি ও কাউকে জানাতে চাই। তাহলে, সে জানাতে পারে।মুগ্ধ তাড়াতাড়ি জান্নাত কে ঘরে শায়িত করে। সবাই দেখে জান্নাত কে।সুমি,শাম্মি তাদের সাথে জান্নাত কে নিয়ে যায়। কাপড় চেঞ্জ করে দেয়।
সুমি নিজেকে দোষ দিচ্ছে। কারণ, কালকে সিরাজ এর সাথে ব্রেকআপ হয়েছে তাই মন খারাপ ছিল।জান্নাত যখন মাঝ রাতে ডেকে দেয়। আর বলে, সুমি একটু বাইরে আয় না।তখন রাগ দেখায় সুমি।যার ফলে জান্নাত একা বেরিয়ে ছিল।
শাম্মি বলেঃ আপু যা হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করে কি হবে?ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। তাছাড়া মুগ্ধ ভাইয়া আছে না।যে কেয়ার করে।হায় আল্লাহ। দেখলেই জিলাসী হয়।
আসলে, কেউ একজন ঠিকই বলেছিল,এক রমনীর সুন্দর হলে, অন্য জন জিলাসী করবে।তাছাড়া, কারো স্বামী বা প্রেমিক বেশি কেয়ার করলেও এটা দেখে মেয়েদের জিলাসি হয়।ঠিক তেমনই, শাম্মির ও জিলাসি হয়েছে জান্নাত এর প্রতি মুগ্ধের কেয়ার ও ভালোবাসা দেখে।?
সকালে রৌদ্রময় আলোতে,জান্নাত চোখ জোড়া খুলে। সবাই অনেক খুশি হয়েছে। সুমি বলেঃ সরি।কালকের জন্য।
জান্নাত বলেঃ সরি তে কাজ হবে না।তাছাড়া কি পেত্নী কি মনে করচস এতো সহজে ছেড়ে দেবো তুকে।শালার, বজ্জাত সিরাজ এর জন্য আমাকে রাগ দেখিয়ে ছিলি।সিরাজের ছেয়ে ভালো কারো সাথে তুর বিয়ে দিবো দেখিস।ওই সিরাজ এর লগে আর যোগাযোগ করবি না।করলে তুর একদিন কি আমার একদিন।
সুমি বলেঃ ওকে মেরি আম্মা জান।এবার তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা।রিনিকে খুঁজে বের করতে হবে।
রাহাত হুজুর বলেঃ তা জান্নাত, এত রাতে কই গেছিলা।কেন গেলে?তোমাদের মেয়ে দের একা কোথাও না যেতে বলছি না।
জান্নাত সব কিছু খুলে বলে। জান্নাত বলেঃ তবে মরার পথের থেকে কে ফিরিয়ে আনছে জানি না।
রাজা মশাই ও লোভা বলেঃ ওই যে এক কোণায় একটা ছেলে বসে আছে না মুখ গুমরে সে বাচিয়েছে।আল্লাহ সহায়ক ছিলেন। ছেলে টা ওচিলা ছিল।তাছাড়া,
ও ছাড়া আর কে বাঁচাবে।
জান্নাত লক্ষ্য করে দেখে। এটা তো মুগ্ধ। জান্নাত বলেঃ আপনি? কেমনে কি?
আমি যে ওখানে কেমনে জানলেন?
মুগ্ধ বলেঃ জানি তুমি সব উত্তর না পাওয়া অবধি অস্থির হয়ে থাকবে।শুনো তাহলে।
সবাই মনোযোগ দিয়েছে।মুগ্ধ শুরু করে।কাল রাতে…..
এমন সময়,
কে যেন একজন বলে উঠে:রিনি মেম আপনার হাতটা দেন।চুড়ি পরিয়ে দিব।
রিনি হাতটা বাড়িয়ে দিল।রিনিকে একজন সাজাচ্ছে। একজন খোপা করেছে। একজন জুয়েলারি পরাচ্ছে। রিনির নিজেকে জুয়েলারির দোকান মনে হচ্ছে। বেশ কিছু সময় পর সাজ শেষ হয়েছে।
তাসনিয়া বলেঃ দেখি কেমন লাগছে?
রিনি কে তাসিনিয়ার সামনে আনা হয়।
তাসনিয়া বলেঃ বাহ আমার ভাই এর পছন্দ আছে। বেশ লাগছে।
রিনি এবার নিজেকে আয়নার মধ্যে দেখে।রিনি মনে মনে বলছে, অনেক ইচ্ছে ছিল বউ সাজার, এই ভাবে যে সাজতে হবে চিন্তা করিনি।
রিনি অস্পষ্ট স্বরে বলেঃহলুদ শাড়ি, সাদা ফুলের হাত,মাথার,গলার গহনা।সাথে নাকে নাক ফুল। ঠোঁটে মিষ্টি রঙের লিপস্টিক।এতো কিছু তে আমি নিজেকেই চিনতে পারছি না। বড্ড অচেনা লাগছে আয়নার সেই প্রতিবিম্ব কে।
তাসনিয়া বলেঃ আস নিচে যায়। সবাই এসেছে।ভাই ও প্রস্তুত।
সবাই মিলে নেমে যাই। রিনি এই প্রথম তার রুম থেকে বেরিয়েছে।তবে যখন থেকে নিচে নেমেছে একটা অনুভূতি কাজ করছে। রিনির মনে হচ্ছে, কাছের কেউ খুব আশেপাশে আছে।
রিনি নামতেই, রহমান জিন তার হাত বাড়িয়ে দেয়। রিনি অনিচ্ছার শর্তে ও রহমানের হাতটা ধরে। রহমান রিনির কানের কাছে মুখ করে ছোট ছোট করে বলে,
ফাগুনের আহবানে,
শুধু দুজনে।
হারিয়ে যাবো দূর অজানায়।
পাশে থেকো চিরদিন।
মৃত্যু অবধি,
ভালোবাসায়।।।।।?
এসব কথা শুনে রিনির রাগ হচ্ছে বড্ড। ইচ্ছে করছে, পালিয়ে যেতে।কিন্তু রিনি যে নিরুপায় ।রহমানের রোমান্টিক কথা শুনলে বড্ড গা ঘিনঘিন করে রিনির।অবশ্য, সব কিছু ভাগ্যের কাছে ছেড়ে দিলেও মন মানতে নারাজ।মন যে বেহায়া। এই মন নামক জিনিস টা রহমান কে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা।আসলে, মনটা যে বড়ই খেয়ালি। মাঝে মাঝে অদ্ভুত আচরণ করে।
রহমান লক্ষ্য করে রিনির মুখে রাগের চাপ ফুটে উঠেছে। আবার,রহমান, রিনির কানের কাছে এসে বলে,
kabhi kabhi gussa
Muskurahat se
Zada khas hota hai,
Kyun ki
Muskurahat toh sab ki liya
Hota hai.
Magar gussa sirf us
K liya,
Hota hai,
Jinhei humm kabhi khona,
Nahi chahta ?
রহমান মনে মনে বলছে, রিনি ভালবাসা আর যুদ্ধে ভুল বলে কিছু নেই,হ্যাঁ ভুল বলে কিছু নেই। কিছু কিছু জিনিস জোর করে আদায় করে নিতে হয়।
রহমান চেয়ে আছে রিনির দিকে। আজ রিনিকে অপসারী লাগছে। রহমান আর রিনিকে স্টেজ এ নিয়ে গেল।
রিনি চুপ হয়ে আছে। দুজন কে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে। রিনির হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে। রিনির চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে চাইছে, কিন্তু চোখে যে জল নেই।তাই চোখ জোড়া দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে নি।
রিনির মেহেদী লাগানোর সময় রহমান রিনিকে ছোট ছোট কন্ঠে বলে,
তুমি যদি হও মেহেদী ,
আমি হবো সেই মেহেদীর রঙ,
দুজনে মিলে করবো
এবার প্রেম নামক ডং?
রিনি হেসে উঠে রহমানের এমন কথা শুনে। রহমান চলে গেল, মেহমান দের সাথে গল্প করতে। রহমান মেহেদী দেয়নি। কারণ ছেলে দের মেহেদী দেওয়া ঠিক না।
রিনির হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছে।তবে মেহেদী তে নামের অক্ষর দিতে গিয়ে E অক্ষর হয়ে গেছে। যে মেহেদী দিচ্ছি লো সে ভয় পাই। কারণ, রহমান যদি দেখে আস্তো রাখবে না।মেয়ে টা অক্ষর টাকে বুঝা না যায় মতো করে দিয়েছে। তবে কেউ মন দিয়ে খুঁজলে ঠিকই খুঁজে পাবে।
আসলেই, এটা কি কোন কোইন্সিডেন্ট ছিল? নাকি নিয়তির কোন ইশারা???
রিনির কিছুই ভালো লাগছে না।নিজেকে নিজে ভরসা দিচ্ছে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রিনি আবার মনে মনে বলছে, সব ঠিক হয়ে যাবে, একটা বাজে রকমের মিথ্যা কথা। সব কখনো ঠিক হয় না।হলুদ কখনো লাল হয়না।সাদা কখনো কালো হবে না।দুই আর দুয়ে মিলে কখনো পাঁচ হয়না।কষ্টের দাগ কখনো মুছে যায় না।সব কখনো ঠিক হয় না।সব আগের মতোই থাকে। আমরা শুধু মেনে নিতে শিখি।মানিয়ে নিতে শিখি। কষ্ট কখনো কমে যায় না।কষ্ট কখনো চলে যায় না। কষ্ট তার জায়গাতেই থাকে। আমরা শুরুতে তাকে তাড়িয়ে দিতে চাই।যেদিন টের পাই সে কখনো চলে যাবে না সেদিন থেকে আমরা তাকে আপন করে নিই।নীরবে,নিঃশব্দে ভেতর থেকে মারা যেতে থাকি।
এসব চিন্তা করতে করতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। যার ফলে,
অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে । সবাই চলে যেতেই।বাসায় যে মহিলা ছিল, উনি বলে, মেম আপনি আমার রুমে বসেন।আমি আপনার রুমে একটু পরিষ্কার করে আসি।আসলে, সময় পাইনি। সবাই রাতে হাড্ডি খেয়ে ছে।এগুলো পরিষ্কার করতে করতে দেরি হলো।
জিনদের খাবার হলো, পশুর হাড্ডি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার।
রিনি বলেঃ আচ্ছা সমস্যা নেই। তোমার রুম কোন দিকে?
মহিলা সিড়ির নিচের রুম টা দেখিয়ে দেয়। রিনি সেই রুমে প্রবেশ করে। রিনির কেমন জানি লাগলো। খুব আপন কেউ আছে এই রুমে এমন মনে হচ্ছে।রিনি সোফায় বসে পড়ে। প্রিন্স এতক্ষণ মন খারাপ করে বসে ছিল।কিন্তু যখন বোতল বেদ করে বাইরে তাকিয়ে দেখছে,আরে এটা কাকে দেখতে পাচ্ছে।
প্রিন্স বলেঃ এটা কে? এটা কি আমার রিনি? রিনি রিনি।প্লিজ হেল্প মি।
বোতলে থাকার ফলে প্রিন্স এর কথা রিনি শুনতে পেল না। রিনি সম্পূর্ণ রুম টা দেখছে।আর চিন্তা করছে,আজ রাতে ঘুম হবে না।আসলে, রাত শত্রুর চেয়ে ও ভয়ংকর। দিনের আলো নিভে যখন রাতের আধার নেমে আসে তখনই মনের কষ্ট গুলো জ্বলে উঠে। রাতটা শুধু কি ঘুমের জন্য?
হাজারো অতীত আর ভবিষ্যত কল্পনা আর স্বপ্ন এর স্বর্গরাজ্য।এসব বলে সামনে তাকিয়ে দেখে।
এমন সময় টেবিলে দেখে একটা বোতল।
রিনি বলেঃ বাহরে বোতল একটা কেন এখানে? তবে বোতলটা বেশ সুন্দর।তবে কেন জানি মনে হচ্ছে কোথায় জানি বোতল টা দেখেছি। কিন্তু কোথায় দেখেছি?
এই বলে, রিনি এগিয়ে যাচ্ছে বোতলটার দিকে…….
চলবে……..