রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :34,35

0
1032

রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :34,35
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :34

রিনি চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করছে কালকের রাতের কথা মনে করতে। তখনই, রিনির মনে পড়ে, সে নেশার ঘোরে আবছা আলোতে দেখেছিলো,
ঐশী,তাকে তোলে নিয়ে আসছিলো।

রিনি বলেঃ আচ্ছা। ঐশীর ওতো নেশা হয়ে ছিলো তাহলে আমাকে কেমনে এতো দূর নিয়ে এসেছে?
আচ্ছা কোন ভাবে কি কালকে প্রিন্স এসেছিলো?
সে কি সব করলো!
ওফ,
সব কিছু অদ্ভুত লাগছে।

রিনি ফ্রেশ হতে গেলো।রিনি কাপড় চেঞ্জ করার সময় বুঝতে পারে, তার শরীর থেকে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে। রিনি ঘ্রাণ টা আবার ভালো ভাবে অনুভব করলো।রিনি এক মিনিটে বুঝতে পারলো, এটা প্রিন্স এর কাছ থেকে যে ঘ্রাণ আসতো সেই সুঘ্রাণ টা রিনি তার কাপড় থেকে পাচ্ছে।

রিনি কিছু টা বিভ্রান্ত হচ্ছে। কাল রাতে যে নেশা বেশি হওয়াতে তার তেমন কিছু মনে নেই। অনেক চেষ্টা করে ও মনে পড়ছে না।

রিনি ওয়াশরুমে চলে গেল। কারণ তার রেডি হতে হবে।ওয়াশরুমের মধ্যে প্রবেশ করে,
রিনি আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।

রিনি বলেঃ ওফ এতো চিন্তা করলে আমার আবার প্রেশার উঠে যাবে।বাড় মে যায়ই প্রিন্স(ইনতিয়াজ)।অর বাড মে যায় ই মাহমুদ স্যার।
ওফ,
আমি রেডি হয়ে যাই। ভার্সিটি তে যেতে হবে আজ।তারপর, ঐশী কে ও ডেকে দিতে হবে। অনেক ঝামেলা আহা।

রিনি আজ একটা লাল রঙের ট্রিপিচ পড়েছে। চুল গুলো হালকা করে খোলে দিয়েছে।চোখে কাজল,আর একটা ছোট টিপ।কানে দিয়েছে ছোট ছোট ঝুমকো কানের দোল। রিনি প্রস্তুত হয়ে গেছে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঐশী কে ডাক দিচ্ছে। কিন্তু ঐশী উঠছে না।
রিনি আর কোন উপায় না পেয়ে এক বালতি পানি ঢেলে দেয়। ঐশী এবার তাড়া হোড়া করে উঠে গেছে।

ঐশী বলেঃ আবে,কি হয়ছে?
কে মরছে নাকি?
এভাবে ডাকছিস কেন?
যা বে ফোট বে!
আমি ঘুমাবো।

রিনি বলেঃ আরে,আজ যে ক্লাস আছে।তাইতো ডাকছি।যদি না উঠিস দেরি হয়ে যাবে। তখন যদি শাস্তি দেয় কি করবি?
নতুন নতুন ভার্সিটি কোন নিয়মকানুন জানি না।তাই তাড়াতাড়ি যায় একটু।তাছাড়া,

যা প্রস্তুত হয়ে নে।না হয় মাইর খাবি।

ঐশী বলেঃ অকে মেরি মা।যাচ্ছি আমি। তবে একটা কথা বলি রিনি,
তোরে না আজ সেই লাগছে। ওয়াও।আজকে অনেকে দেখে ক্রাশ খাবে।আর কিছু তো ফিদা হয়ে নাকি পড়ে যাবে দেখিস।
হি হি হি।

রিনি বলেঃ যাহ।তুই একটু বাড়িয়ে বলিস আরকি।
যা এবার দেরি হয়ে যাবে।

ঐশী ও রেডি হয়ে গেছে। তারা দুজন চলেছে ভার্সিটির দিকে।

ভার্সিটি তে প্রবেশ করেছে একটু দেরি তে। কারণ
জেম এর কারণে দেরি হয়ে গেছে। দুজন হাঁপাতে হাঁপাতে ক্লাসে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে, রিনির পানির পিপাসা পেলো।রিনি পানি পান করতে চলে গেল। তারপর, ঐশী একা ক্লাসে চলে গেল। কিন্তু যখন রিনি পানি পান করে ক্লাসে প্রবেশ করতে যাচ্ছি লো।তখন দেখে, মাহমুদ স্যার ক্লাসে।কিন্তু, ঐশী ক্লাসে বসে পড়েছে। রিনি বুঝতে পারে, প্রথম ক্লাস টা মাহমুদ স্যার এর।আহা।

রিনি বলেঃ স্যার,আমি কি আসতে পারি?

মাহমুদ বলেঃ সময় দেখছেন? আপনি ২ মিনিট দেরি করে ফেলেছেন।
সো,বের হয়ে যান দাঁড়িয়ে থাকেন। আমার ক্লাস শেষ হয়ে গেলে আপনি আসিয়েন।

রিনি ভাবলেশহীন ভাবে আস্তে আস্তে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে রোদ প্রবেশ করেছে। রিনি গায়ে রোদ পড়ছে।রিনি চিন্তা করছে, একটা ক্লাস শেষ হবে ৫৫ মিনিট পর। কিন্তু রিনির যে রোদ সহ্য হচ্ছে না।

রিনির মাথা টা চক্কর দিচ্ছে। রিনির চারপাশে অন্ধকার লাগছে।রিনির চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে, ঐশী ক্লাসের বাইরে,
লক্ষ্য করে,……….

?

শাম্মি বলেঃ হাবিব,আমি কি মা,বাবাকে আপনার কথা জানাবো?
হাবিব বলেঃ শাম্মি,যতদ্রুত সম্ভব বলো।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্রিয়।

শাম্মি বলেঃ আচ্ছা প্রিয়।তবে এটা আমাদের শেষ দেখা?

হাবিব বলেঃ আজব,কেন শেষ দেখা?
তাহলে কি তুমি পাল্টি মারবে নাকি?

শাম্মি বলেঃ আপনি ভুল বুঝলেন।আমি বলতে চাইলাম,বিয়ের আগে শেষ দেখা। বিয়ের পর তো ২৪ ঘন্টা আপনার সাথে এবং আপনার চোখের সামনে থাকবো!

হাবিব বলেঃ ওফ তাই বলো।একটুর জন্য ভয় পেয়ে গেছিলাম।

শাম্মি বলেঃ আমাদের মনে হয়, এখন যাওয়া উচিত।

হাবিব বলেঃ একটা আবদার রাখবে?

শাম্মি বলেঃ জি বলেন কি আবদার আমি রাখার চেষ্টা করবো।

হাবিব বলেঃ তোমার হাত দুটো স্পর্শ করতে চাই। ১ মিনিটের জন্য।

শাম্মি ১ সেকেন্ড ও সময় নষ্ট করে নি।তার হাত দুটা হাবিবের দিকে এগিয়ে দেয়।

হাবিব শাম্মির হাত দুটা তার বুকের বা পাশে রাখে।আর একটা বড় করে নিশ্বাস নিলো।

হাবিব বলেঃ জানো,শাম্মি আমি একটা প্রশান্তি অনুভব করছি।ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই আমরা এক হবো।

শাম্মি বলেঃ ইনশাআল্লাহ।

দুজন দুজনার বাসায় ফিরে আসে। হাবিব আজ বড্ড খুশি। অবশেষে প্রিয় মানুষ টার কাছ থেকে ভালোবাসি কথা টা শুনতে পেলো।হাবিব ফুরফুরে মন নিয়ে শুয়ে পড়েছে।
এমন সময় পাশের বাসার আয়ান আবার একটা ছড়া আবৃত্তি করছে,
সে বলছে,
“দূর নীলিমায় নয়,
আছি তোমার পাশে।
খুজে দেখ,
পাবে হৃদয়ের মাঝে।
শুনবো না কোনো গল্প,
শুধু গাইবো একটা গান।
যে গানে রয়েছে,
তোমার প্রতি ভালোবাসার টান।।।
(কবিতা লেখিকা ঃ উর্মি)

হাবিব বলেঃ শাম্মি বড্ড খুশী দিয়েছো আজ।জানো একটা কথা আজ সত্যি হলো,সেটা হচ্ছে,
“দেরিতে হবে কিন্তু,
ঠিকই হবে তুমি যা চাও তাই হবে।
মনে রেখো,
তোমার সময় টা খারাপ,
তোমার জীবন টা নয়।
শুরু অপেক্ষা কর,
সময় সবকিছু ফিরিয়ে দিবে”

আসলেই,ভালো কিছু পেতে অপেক্ষা করা শ্রেয় আজ অপেক্ষার ফল পেলাম।
আল্লাহ শুকরিয়া।

এটা বলে,হাবিব ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়। আজ যেনো তার চোখে প্রশান্তির ঘুম আসবে।গভীর ঘুমের মধ্যে মগ্ন হয়ে আছে হাবিব।

?

রহমান জিন বলেঃ সুমি,আসলে,
জান্নাত নিজে ও জানে না।তার অজান্তেই, সে মুগ্ধ কে ভালোবেসে ফেলেছে।তবে প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে।কিছু একটা তাকে আটকাচ্ছে।

সুমি বলেঃ তাহলে, আপনি বলে দেন যে আপনি জানেন, জান্নাত যে মুগ্ধ কে ভালোবেসে ফেলেছে। মুগ্ধ অনেক খুশি হবে। এটা তার জন্য বেস্ট একটা মুহূর্ত হবে।

রহমান বলেঃ সুমি ভুলে ও বলবে না তুমি।কারণ, ভালবাসার কথা টা প্রিয় মানুষ টার মুখ থেকে শুনতেই বেশি ভালো লাগে।
আমি চাই,জান্নাত, নিজ মুখে এই কথা শিখার করোক।

এসব বলছিলো।তখনই, জান্নাত চলে আসে।

সুমি বলেঃ এসে গেলি?

জান্নাত বলেঃ হুম।

সুমি বলেঃ আরে,তোর কাপড়ে এগুলো কি রে?

জান্নাত বলেঃ কই?

জান্নাত দেখে,তার কাপড় কাক পায়খানা করে দিয়েছে।জান্নাতের এখন অসহ্য লাগছে। কি করবে?
রাবেয়ার সাথে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্তো ছিলো যে, কাক এর কুকাজ টা লক্ষ্য করে নি।

তখনই,মুগ্ধ ও কামাল ফিরে আসে। বেশ কিছু প্যাকেট নিয়ে।

রাবেয়া বলেঃ দাও সব।আমি সব ঘুছিয়ে নি।

সব দিলো কিন্তু মুগ্ধ একটা প্যাকেট দিলো না।

রাবেয়া বলেঃ কি হলো?
দাও।
এটাতে কি আছে মুগ্ধ?

কামার বলেঃ আরে বলো না আর।
মুগ্ধ পানি আনতে গেছে। আমি গেছিলাম খাবার আনতে। তখন নাকি মুগ্ধ দেখে একটা
পিচ্চি মেয়ে একটা শাড়ি আর একটা ছোট হাতের মালা বিক্রি করছে।মুগ্ধের সামনে এসে,অসহায় বঙ্গি তে বলে,যে ভাইয়া এগুলো নাও প্লিজ।
অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছি বিক্রি করার পারছিনা।

মুগ্ধ আর না করে নি।নিয়ে নিলো সব কিছু। তবে সে চিন্তার মধ্যে পড়ে যায় এসব সে কি করবে। তাই ভাবনায় আছে। সেই কারণেই,তোমাকে প্যাকেট টা দিচ্ছে না রাবেয়া ।

সুমি বলেঃ কই দেখি এদিকে দাও সেটা। জান্নাত এর খুব দরকার এটা।তার কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে।তাছাড়া অতিরিক্ত কাপড় ও নেই। সো এটা দাও।

মুগ্ধ এক ঝটকায় দিয়ে দিলো।সুমি ও দেরি না করে,জান্নাত কে দিয়ে দিলো।জান্নাত কাপড় পাল্টে আসতে গেলো।

সবাই অপেক্ষা করছে জান্নাত এর জন্য। অবশেষে জান্নাত আসলো।পরণে তার সাদার মধ্যে লাল রঙের কাজ করা শাড়ি। চুল গুলো খোপা করেছে।হাতে সেই ছোট ফুলের মালাটা পড়েছে। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মুগ্ধ তো৷ পলক ই ফেলছে না।মুগ্ধ মনে মনে, পিচ্চি টাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। পিচ্চির জন্যই তো আজ, জান্নাত মুগ্ধের দেয়া শাড়ি টা পড়েছে।

জান্নাত বলেঃ আরে,আরে আমার লজ্জা করছে কিন্তু এভাবে সবাই যে তাকিয়ে আছো যে?
এবার কি আমরা যাত্রা শুরু করবো!

সবাই বলে উঠেঃ হা হা।এবার যাত্রা শুরু করবো। তবে,খুব সুন্দর লাগছে।

যাত্রা শুরু করেছে।
সবাই হাঁটছে।প্রচন্ড গরম।তার মধ্যে সূর্য টা অনেক উত্তাপ দিচ্ছে। সবাই হাপিয়ে উঠেছে। সবার অবস্থা খুব খারাপ।
এমন সময় সবাই কিসের একটা শব্দ শুনতে পেলো।আর অনুসন্ধান করছে কোথা থেকে শব্দ টা আসছে।

সবাই অনুসন্ধান করে অবশেষে
দেখে একটা খুব সুন্দর…..

চলবে…..

রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :35
************
রিনির মাথা টা চক্কর দিচ্ছে। রিনির চারপাশে অন্ধকার লাগছে।রিনির চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে, ঐশী ক্লাসের বাইরে,
লক্ষ্য করে,
রিনি নিচে পড়ে যাচ্ছে। ঐশী চিৎকার দিয়ে রি,,,রিনি বলার আগেই মাহমুদ স্যার তাড়াতাড়ি রিনি কে ধরে টান দেয়। রিনি পড়ে যায় নি।বরং এখন মাহমুদ স্যার এর বুকে লেপ্টে রয়েছে।
রিনি চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলেছে।
ক্লাস এর শিক্ষার্থী,
সবাই চলে এসেছে।সবাই জড়োসড়ো হয়ে রিনি কে দেখছে।
অবশ্য ভার্সিটি তে কেউ প্রশ্ন তোলেনি মাহমুদ এর এমন শাস্তির জন্য। কারণ, ভার্সিটির নিয়ম কানুন এর মধ্যে এটা ও একটা নিয়ম ছিলো।কোন স্টুডেন্ট দেরি করে আসলে টিচার চাইলে শাস্তি স্বরুপ ক্লাস এর বাইরে দাঁড়িয়ে রাখতে পারে। তবে কখনো কোন স্যার এমন করে নি।এই প্রথম মাহমুদ স্যার এমন করেছে ।

সব শিক্ষার্থী গুলো,
চিৎকার চেচামেচি করছিলো।কি হলো রিনির?
চোখ জোড়া খুলছে না কেন?
তাই মাহমুদ চিন্তা করে পরের ক্লাস এর স্যার টা কে আজকে তাড়াতাড়ি ক্লাস টা নিতে বলবে।যার ফলে ভিড় টা কমে যাবে।

তাছাড়া,
মাহমুদ এর ক্লাস শেষ প্রায়। তাই মাহমুদ অন্য একটা স্যার কে ক্লাস এ আসতে বলেছে। রিনিকে একটা বেঞ্চে শুয়ে দিয়েছে।

মাহমুদ ঐশী কে বলেঃ যাও ক্লাসে।আমি রিনি কে দেখছি। আর বাসায় আমি ড্রপ করে দিবো।তুমি চিন্তা করিও না। অকে!

ঐশী বলেঃ অকে।
ঐশী এই মাহমুদ স্যার নামক ব্যাক্তিতোটা টা কে বিশ্বাস করে।শুধু বিশ্বাস করে বললে ভুল হবে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে।কারণ, এতো বছর ধরে পরিচিত মাহমুদ স্যার। কখনো কারো ক্ষতি করে নি।সবসময় সবাই কে সাহায্য করেছে।সকলের বিপদে সাহায্য করেছে।সবসময় সবাই কে ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি,
বড়দের যেমন শ্রদ্ধা করেছে ছোট দের তেমন আদর, স্নেহ করে ।তাই ঐশী চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে মাহমুদ স্যার কে।বিশ্বাস করে বলেতো সবচেয়ে প্রিয় বান্ধুবী কে একা রেখে এগিয়ে যাচ্ছে ক্লাসের দিকে। সপে দিয়েছে, মাহমুদ স্যার এর কাছে।

ঐশী ক্লাসে চলে গেল।

মাহমুদ কোলে তুলে নিলো রিনি কে। রিনিকে গাড়ি তে তোলে নেলো।মাহমুদ চিন্তা করে কি করবে!মাহমুদ বলেঃ আগে ডাক্তার এর কাছে নেয়া যাক।দেখি তিনি কি বলেন!

রিনিকে ডাক্তার এর কাছে নেয়া হলো,

মাহমুদ এখন ডাক্তার এর সামনে বসে আছে । ডাক্তার বলেঃমিস্টার মাহমুদ, রোদে রিনির এলার্জি আছে।বেশিক্ষণ রোদের তাপ রিনির জন্য ক্ষতিকর। তাই রোদের তাপ সহ্য করতে না পেরে সেন্স লেস হয়ে গেছে। একটু পর হোশ আসবে।

মাহমুদ রিনিকে নিয়ে আবার গাড়ি তে তোলে। এখনো রিনি বেহুশ।এই বেহুশ অবস্থায় রিনির বাসায় রেখে আসা সঠিক মনে হয় নি মাহমুদ এর।
তাই মাহমুদ কোন উপায় না পেয়ে রিনি কে তার ঘরে নিয়ে গেল।

রিনি কে সুন্দর করে শোয়ে দেয়। রিনি নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছে। মাহমুদ কিছু সময় ধরে ঘুমন্ত রিনির দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
আর আপন মনে বলে উঠেঃ
“কাচের দেয়াল উঠে গেছে,
তোমার আমার মাঝে।
কপালে লেখা হলো দেখা,
হলো না আসা কাছে,
দুটি হৃদয় আছে বসে,
আহত দুটি মন।
ছোতে গিয়ে যায় না ছোঁয়া।
দূরত্ব ভীষণ।
(কবিতা লেখকঃউর্মি)

মাহমুদ আলতো করে রিনি কে একটা চুমু দেয় রিনির কপালে। রিনি কারো স্পর্শ পেয়ে একটু নড়ে চড়ে উঠে। হঠাৎ করে, বেহুশ অবস্থা তে মাহমুদ এর হাত ধরে শক্ত করে। আর কোন নড়াচড়া করছে না।

মাহমুদ বলেঃ মেয়ে রা খুব অদ্ভুত। আসলেই,মেয়ে রা খুব ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়,তাদের একটু যত্ন করে রাখলে তারা আপনার জন্য জীবন ও দিতে পারে নিঃসন্দেহে।
একটু ভালোবাসার পরশ পেতেই সেই পরশটা যত্ন করে আগলে রাখছে রিনি অবচেতন অবস্থা তে।

মাহমুদ আপন মনে বকবক করছে আর রিনি কে দেখছে।
হঠাৎ করে, মাহমুদ বলেঃ রিনি,এতো সহজে ধরা দিচ্ছি না। খোঁজে নিতে হবে তোমার নিজের থেকে।

এটা বলে মাহমুদ তার হাতটা আস্তে করে রিনির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেই। আবার, একবার রিনির নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে মাহমুদ
রুমে থেকে বেরিয়ে আসে। মাহমুদ এর মনটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। কেনো জানি সব কিছু অসহ্য লাগছে। মেয়ে টা কে শাস্তি দিতে গিয়ে এটা কি করে ফেললো।মাহমুদ এর মনে অপরাধবোধ কাজ করছে।

মাহমুদ বলেঃ তাহলে কি মাফ চাইবো?
ধুর এটা করলে আস্কারা পাবে।দোষ ছিলো তাইতো শাস্তি দিলাম।

মাহমুদ আর কিছু না ভেবে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ পাণে দেখে আছে।

মাহমুদ বলেঃকেউ একজন ঠিকই বলেছেন। মন খারাপ এ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কারণ, আকাশের বিশালতার কাছে আপনার মন খারাপ কিছু ই না।

মাহমুদ আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে রিনির সেন্স ফিরে আসার।

এভাবেই বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেছে। রিনি আস্তে আস্তে চোখ জোড়া খোলে।মাথা টা এখনো ঝিমঝিম করছে। রিনি চোখ জোড়া খোলে দেখে, সে একটা বিছানা তে শোয়ে আছে।
রিনি বলেঃ আমি কোথায়?
এটা কার ঘর?
কার রুম?
রিনি আস্তে আস্তে ফ্লোরে পা রাখে।রুমের একপাশে অন্ধকার ছিলো।কিন্তু বাকি রুম আলোকিত ছিলো।রিনি মনে প্রশ্ন জেগে ওঠে,
কি আছে ওই দিকে?
কেনো এতো অন্ধকার?

রিনি এগিয়ে গেছে। রিনির কাছে পর্যাপ্ত আলো ছিলো না।তাই আলো খুজতে লাগলো। রিনি লক্ষ্য করে, বিছানার পাশে ছোট একটা টর্চ আছে। রিনি তাড়াতাড়ি সেটক হাতে নিয়ে নেই।এগিয়ে গেলো সেই অন্ধকার এর দিকে।

আলো জ্বালিয়ে দেখে। একটা চাদর।
রিনি বলেঃ নিশ্চিত এই ঘরে যে থাকে সে পাগল। একটা চাদর কে কেউ কি এভাবে অন্ধকার করে রাখে নাকি!

রিনি আস্তে করে চাদরটা তে হাত রাখে।টাস করে পড়ে যায় চাদর টা।কিন্তু চাদরটার ভেতর আরও কিছু ছোট ছোট চাদর ছিলো। রিনি আস্তে করে একটা চাদর তোলে নেই। একি রিনি দেখে একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি।বাচ্চা মেয়ে বললে ভুল হবে। মেয়ে টা কিশোরী ছিলো। বয়স বলতে আনুমানিক ১৪,১৫ বছর হবে।মেয়ে টা দেখতে পিচ্চি লাগছিলো তাই বাচ্চা মেয়ে বলা আরকি ।
রিনি আরেক টা চাদরে হাত রাখতেই,
কেউ একজন বলেঃ ভুলে ও চাদর টা সরাবে না রিনি।সরালে আমার অন্য রুপ দেখবে রিনি!!!

রিনি চমকে উঠে।এই কন্ঠ টা খুব পরিচিত। রিনি ভয়ে চুপসে যায়। আস্তে করে,
পিছনে ফিরে দেখে মাহমুদ স্যার। রিনি বলেঃ সা সা স্যার আপনি?
আপনি কেন?
কি করে?
সরি,আপনি এখানে কেমনে?

মাহমুদ বলেঃ আগে ওই দিক থেকে বেরিয়ে আসো।টেবিলে বসো।বলছি সব।

রিনি বাধ্য মেয়ের মতো গুটিগুটি পায়ে হেটে টেবিলে বসে যাই।

মাহমুদ সব কিছু খোলে বলে। রিনি মিটমিট করে তাকিয়ে আছে মাহমুদ এর দিকে। মাহমুদ সব বলেছে তবে লুকিয়েছে কিছু। সব কথা তো বলতে নেই। কিছু টা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়।

মাহমুদ বলেঃ মনে হচ্ছে, তুমি এখন বেটার চলো।বাসায় দিয়ে আসি।

রিনির মন চাইছে, চাদরের আড়ালে কি ছিলো তা জানতে। কথাই আছে না।যেটা করতে নিষেধ করে মানুষ সেটাই করতে বেশি চাই। তাই রিনির ক্ষেত্রে ও ব্যাতিক্রম হচ্ছে না।

তবুও নিজের ইচ্ছে কে কবর দিয়ে রিনি মাহমুদ পিছু পিছু যাচ্ছে। বাসায় যে ফিরে যেতে হবে।
গাড়ি তে বসে আছে। মাহমুদ ও রিনি।মাহমুদ আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে। রিনি নিশ্চুপ হয়ে আছে।

মাহমুদ এর বাসা থেকে রিনির বাসায় যেতে একটা হাইওয়ে পড়ে। সেই রাস্তা টাতে চারপাশে গাছপালা। আর কিছু টা দূরে একটা নদী ও আছে।

রিনি গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে। বেশ লাগছে দেখতে।

কিন্তু,
হঠাৎ করে, রিনি বলেঃ গাড়ি থামান প্লিজ।থামাননননননন।

মাহমুদ বলেঃ কেনো?

রিনি বলেঃ থামান।

গাড়ি টা থামিয়ে দেয়। অতঃপর, রিনি হাত দিয়ে জানালার বাইরে ইঙ্গিত করে।
মাহমুদ দেখতে পেল,…..

?

সবাই অনুসন্ধান করে অবশেষে
দেখে একটা খুব সুন্দর একটা ঝর্ণার দেখা পেলো।
সবাই অনেক আনন্দিত হয়ে গেছে। জান্নাত তো খুশি তে চিৎকার করে দিলো।জান্নাত এর সাথে তাল মিলিয়ে চিৎকার করে দেয় সুমি ও।

সবাই জানে জান্নাত ও সুমি প্রকৃতি প্রেমি।তবে ঝর্ণা দেখে এমন করবে কেউ কল্পনা করেনি।

সুমি অবাক হয়ে ঝর্ণা দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই সবার মতো মজা করছে।এতো ঝামেলার পর সবাই যেনো প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। জান্নাত চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলেছে। লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিচ্ছে।
এমন সময় কে যেনো একটানে জান্নাত কে ঝর্ণার পানির জল প্রপাতের নিচে বসিয়ে দিয়েছে। জান্নাতের চোখ এখনো বন্ধ।ইচ্ছে করে চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেছে। জান্নাত এর শরীরে পানি ঝরে পড়ছে।ঝর্ণার পানি ঠান্ডা ছিলো। তাও জান্নাত ওই ভাবে বসে আছে।
জান্নাত নাক দিয়ে জলের গন্ধ নিচ্ছে। জান্নাত এর মনে হচ্ছে, এই জলের মধ্যে কেমন একটা মৃথিকার সুগন্ধি মিশে আছে।

জান্নাত যেনো কল্পনা তে ডুবে যাচ্ছে। তখনই, কারো শব্দে চোখ জোড়া খোলে জান্নাত।

মুগ্ধ বলেঃ ওহে মহারানি!
আর কতো?
এবার তো উঠো?
আমি মনে করেছি হঠাৎ এমন করে পানিতে বসিয়ে দেয়ার জন্য রাগ করবে তুমি?কিন্তু আমার ধারণা মতো তো কিছুই হলো না?

জান্নাত বলেঃ প্রকৃতির রূপে বিভোর আমি।এখানে এসে রাগ দেখাবো এটা কি করে হয়।
তবে একটু ভয় পেয়ে ছিলাম।

মুগ্ধ বলেঃ সরি জান্নাত।

জান্নাত বলেঃ মাফ করা কি এতো সহজ?
চাইলেই মাফ করা যায় না মিস্টার।একটা ভুল তো না,আরও অনেক ভুল করেছেন।

মুগ্ধ বলেঃ কি করলে মাফি নাফা মঞ্জুর হবে বলো?

জান্নাত বলেঃ যা বলবো তাই করবেন?

মুগ্ধ বলেঃ ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো করার।
জান্নাত বলেঃ তাহলে প্রমাণ করেন যে রহমান( শয়তান প্রিন্স জিন)
ও সুমির মধ্যে ভালোবাসা আছে। তারা ও আর দশটা কাপাল এর মতো একে অপরের কদর করে!
কি পারবেন!

মুগ্ধের মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি।কারণ এটা প্রমাণ করা একদম কঠিন কাজ না।

তাছাড়া, মুগ্ধ ভালো করে জানে রহমান আস্তে আস্তে সুমির প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে। সুমি কে রহমানের একটা মুহূর্ত ও কাছে না পেলে চলে না।সুমিও, রহমান এর পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করে। দুজনের অজান্তেই তারা একে অপরের উপর নির্ভর হয়ে গেছে।বাঁধা পড়েছে মায়ার বাঁধনে।যে বাঁধন কখনো ছিড়ে যাবে না।

মুগ্ধ বলেঃ জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াছ হানি।

জান্নাত বলেঃ অকে মাকারফল।

যে যার মতো মজা করছে। রহমান জিন এর ও মুখ হাস্য উজ্জ্বল দেখা যাচ্ছে। খুশি হবে না কেনো!
সবাই যে আপন করে নিয়েছে রহমান কে।সবাই তার ভুল গুলো মাফ করেছে। তাছাড়া,
আজকাল রিনির কথা মনে হলে, রহমানের মনে হয়। নিছক এসব বোকামি করে ছিলো রিনির সাথে।
প্রেম, ভালোবাসা, জিন হোক বা মানুষ কারো কাছ থেকে জোর করে আদায় করা যায় না। জোর করলর বড়জোর শরীর টা পাওয়া যায়। মন তো পাওয়া যায় না।

সবার হইহট্টগোল এ চিন্তা থেকে বেরিয়ে পড়ে রহমান।
রহমান সাতার কাটছিলো।তাই সাঁতার কাটাতে মনযোগ দিলো।তখনই,হঠাৎ রহমানের মনে হলো,সুমি কে অনেক্ক্ষণ ধরে দেখতে পাচ্ছে না।কোথায় সে!
আজকাল সুমি কে বেশিক্ষণ চোখের সামনে না দেখলে মনটা আনচান কে তার!তাহলে কি নিজের অজান্তেই নিজের মনটা সুমির দখলে চলে গেল। দূর এসব কি চিন্তা করছে। সুমি কই সে দিকে নজর দি!!!

রহমান জিন লক্ষ্য করে,
সবাই উপস্থিত আছে ঝর্ণার আসে পাশে তবে,
সুমি ছাড়া।

রহমান সবার উদ্দেশ্য করে
বলেঃ সবাই আছেন কিন্তু সুমি কই?
কেউ কি কিছু জানেন!

তখনই, রহমান লক্ষ্য করে,…….

?

শাম্মি অনেক চেষ্টা করছে,মা বাবা কে হাবিব এর কথা বলতে। তাও পারছে না।লজ্জা লাগছে শাম্মির বেশি। সে পারছে না নিজ মুখে বলতে।

কিন্তু হাবিব তার মা কে সব খুলে বলেছে।তার মা বিনা বাক্যে রাজি হয়ে গেছে। তার মায়ের বিশ্বাস তার ছেলের পছন্দ সেরা হবে। তাছাড়া, সেরা না হলে জিন কণ্যা কে নিজের মেয়ের মতো করে শিখিয়ে পড়িয়ে নিবে।হাবিব এর মা অনেক খুশি। অবশেষে, ঘরে নতুন সদস্য আসবে।যার চটপট কথা তে মুখরিত থাকবে সম্পূর্ণ ঘর।

শাম্মি নিজের রুমে শোয়ে ছিলো।অনেক চেষ্টা করে ও বলতে পারে নি। হঠাৎ করে, রাজা মশাই ( রশিদ) রুমে প্রবেশ করে।

শাম্মি বলেঃ বাবা তুমি?আমাকে ডাকলে আমি চলে যেতাম।তুমি কেনো কষ্ট করলে!

রাজা মশাই বলেঃনা কোন ব্যাপার না।তা কি করছে মামুনি টা।একটু কি ফ্রী আছিস একটা কথা ছিলো।তাছাড়া,আমি তো তোর মাকে কথা টা বলতে বলে ছিলাম।কিন্তু তিনি আমাকে পাঠালেন।

শাম্মি বলেঃ বাবা বলে পেলো।এতো হেজিটেট করার কি আছে।

রাজা মশাই বলেঃ শাম্মি,তোর কাছে,,, হাবিব কে কেমন লাগে!
শাম্মির বুক দুপদুপ করছে। বাবা হঠাৎ হাবিব এর কথা কেনো বলছে!
শাম্মি নিজেকে সামলে নেই।

শাম্মি বলেঃ বাবা, কেনো?

রাজা মশাই বলেঃ আসলে,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here