রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :38,39

0
1114

রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :38,39
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :38

বেশ কিছুক্ষণ পর,রিনির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। রিনি আশেপাশে তাকিয়ে দেখে, মাহমুদ আছে কিনা। রিনি লক্ষ্য করে, আশেপাশে কেউ নেই। রিনি বিছানা থেকে উঠে পড়ে। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অন্ধকার অংশে। যেখানে মাহমুদ চাদর দিয়ে রেখেছে ছবি গুলো।

রিনি এখন দাঁড়িয়ে আছে চাদরের সামনে। আজ রিনি দেখবেই কি আছে এই চাদরের আড়ালে।মাহমুদ স্যার কি লুকিয়ে রাখতে চাইছে?
রিনি আস্তে করে বড়ো চাদরটা সরিয়ে দেয়। রিনি সব ছোট চাদর সরিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি। অন্ধকারের জন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে না রিনি।রিনি রুমের মধ্যে একটা টর্চ খুজতে লাগলো। তখনই একটা মোমবাতি পেয়ে যায় ।সাথে একটা দেশলাই ও। রিনি তাড়াতাড়ি আলোর ব্যবস্হা করে।

আলো জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছবির সামনে। রিনি ছবিটা তে দেখে রিনি নিজে দাঁড়িয়ে আছে হাবিবের কাঁদে হাত দিয়ে। রিনির পরনে কালো টপস।চুল গুলো খোলা। চোখে একটা সাদা চশমা,মুখে একটা মিষ্টি হাসি।
হাবিবের পরনে লাল রঙের শার্ট।চোখে রিনির মতো চশমা। রিনির এই ছবি টার কথা একদম ভালো ভাবে মনে আছে।

১ বছর আগে, রিনির বাবা মা একটা পিকনিক এর আয়োজন করে। সেদিন হাবিব ও বিদেশ থেকে একটা কাজ শেষ করে ফিরে।রিনির থেকে জিজ্ঞেস করে ছিলোঃ মামুনি তোমার জন্য কি আনবো।

রিনি বলেছিলোঃ আঙ্কেল একটা টপস একটা চশমা।আর কিছু চকলেট।

তারপর, হাবিব রিনির জন্য যা রিনি বলেছিল সব আনে।হাবিব বলেঃ রিনি মা যাও পরে আসো।আমরা সেলফি তুলবো।তোমার মতো চশমা আমিও নিয়েছি।

রিনি অনেক খুশি হয়ে ছিলো সেদিন। সেবারে সবাই অনেক খুশি ছিলো।

রিনি বলেঃ এই ছবি মাহমুদ স্যারের রুমে এইভাবে গোপন করে রাখা কেনো?
কই পাইলেন তিনি?

রিনির মাথা কাজ করছে না।রিনির এবার মনে পড়েছে ওইদিন রিনি যে মেয়ে টা কে।মানে বাচ্চা মেয়ের ছবি দেখেছিলো সেটা তারই।
রিনি নিজেই নিজেকে চিনতে পারে নি সেদিন ।

রিনি আরেকটু সামনে গেলো।এবং ওইদিন এর ছবিটা পেয়ে গেল ।রিনি ভালো ভাবে দেখছে। হ্যাঁ এটা রিনিই।এটা তার ছবি।তবে এই এসব ছবি এখানে কেনো?

রিনি আরও সামনে আসে। দেখতে পেল রিনি ঘুমন্ত মুখ এর ছবি।আরও সামনে দেখতে পেল রিনির ভেজা চুলে মিষ্টি হাসি মুখে এমন একটা ছবি।রিনি কিছু বুঝতে পারছে না।রিনির মাথা টা রীতিমতো ঝিমঝিম করছে।

রিনির সব প্রশ্নের উত্তর পাবে মাহমুদ এর কাছ থেকে। রিনি হন্য হয়ে খুজতে লাগলো মাহমুদ কে।কিন্তু সারা ঘর খুঁজে ও পাচ্ছে না। রিনির মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। রিনি হঠাৎ করে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেছে।কেন জানি রিনির মনে হলো বেলকনিতে পাওয়া যেতে পারে। ঠিক তাই হলো, রিনি দেখতে পেল, মাহমুদ এর চোখে চশমা নেই।মাহমুদ দোলনাতে আপন মনে ঘুমাচ্ছে। মাহমুদ কে দেখে মনে হচ্ছে, রাজ্যের ঘুম তার চোখে ভর করেছে।

মাহমুদ এর মুখটা বড্ড নিষ্পাপ লাগছে রিনির কাছে ।মাহমুদ এর মুখে রাজ্যের মায়া লুকিয়ে আছে রিনির মনে হচ্ছে। রিনির বুকটা দুপদুপ করছে। কারণ, মাহমুদ কে চশমা ছাড়া একদম অবিকল প্রিন্স এর মতো লাগছে। রিনি একটা জিনিস মনে করছে,মাহমুদ স্যার কখনো চশমা ছাড়া থাকেনি।
কিন্তু কেনো?তাই তো,
মাহমুদ কে রিনি কখনো চশমা ছাড়া দেখে নি।

রিনির মনে হচ্ছে, মাহমুদ তার চশমার আড়ালে প্রিন্স(ইনতিয়াজ) কে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে ।তাই হয়তো চশমা ছাড়া থাকতো না।যদি চশমার সাথে সাথে তার রহস্য খুলে যেতো সে ভয়ে। রিনি কিছু বুঝতে পারছে না।

রিনি বলেঃতাহলে মাহমুদ কি মাহমুদ?
নাকি প্রিন্স?
নাকি এসব আমার মনের ভুল?
যদি সব আমার মনের ভুল হয়,তাহলে আমার ছবি এখানে কি করছে? তাও আবার,
মাহমুদ এর শোয়ার ঘরের মধ্যে?

রিনি আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না। রিনি তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে। পানি গুলো সব মাহমুদ এর মুখে ফেলে দেয়। মাহমুদ ধরপর করে উঠে পড়ে। মাহমুদ তাড়াতাড়ি চশমা টা খুঁজে নেই।সময় নষ্ট না করে চোখে পড়ে পেলে।অতঃপর,

মাহমুদ বলেঃ রিনি,এসব কি অসভ্যতা?
ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার স্যার?
একটু প্রশ্রয় কি দিলাম মাথাতে উঠে গেলে?
আজব।

রিনি বলেঃ আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না।আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।কে আপনি?
কি উদ্দেশ্য আপনার?

মাহমুদ বলেঃ মাথা ঠিক আছে?
নাকি মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু খেয়ে ফেলছো?
আমি কে জানো না?

রিনি বলেঃ আপনি যদি মাহমুদ স্যার হয়ে থাকেন তাহলে আমার এতো গুলো ছবি আপনার শোয়ার ঘরের মধ্যে কি করছে?
আপনি তো বলছেন আপনি আমার স্যার।আপনি যদি আমার স্যার হয়ে থাকেন।তাহলে তো আমার ছবি আমার স্যার এর শোয়ার ঘরের মধ্যে তো দূরের কথা তার ঘরের আনাছে কানাছে জায়গা তে ও আমার ছবি রাখবে না।যদি ছবি রাখে তাহলে আমার পারমিশন চেয়ে তারপর রাখবে।সো মিস্টার বলেন কে আপনি?

মাহমুদ এর মুখে রাগ এর আবাস ফুটে উঠেছে। মাহমুদ রিনির মুখের চোয়াল শক্ত করে ধরে।রিনি ব্যথা পাচ্ছে তাই রিনি পিছনে যাচ্ছে। দূর্ভাগা রিনি,পিছনে যেতে যেতে তার পিট দেয়ালের সাথে লেগে যাই।

মাহমুদ হুংকার দিয়ে বলেঃ তোমাকে না বলছি।ওই দিকে না যায় তে।কোন সাহসে আমার জিনিস ধরলে?
বারবার মানা করছি।বলছিলাম না ওই দিন আমার জিনিস ধরলে তুমি আমার অন্য রুপ দেখবে,কেনো অমান্য করেছো?

রিনির বড্ড ভয় করছে।এই মাহমুদ কে রিনি চিনে না।বড্ড ভয়ংকর রুপ এই মাহমুদ স্যার এর।রিনির বাক শক্তি যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।

রিনি অনেক চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু বারবার চেষ্টা বিফল হচ্ছে।
রিনি এবার চিৎকার দিয়ে বলে উঠেঃ কি হয়ছে দেখছি?
দেখে ভালো ই করছি।
আমার অনুমতি ছাড়া আমার ছবি রাখার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে কে হন আপনি আমার?
কে আপনি?
কি উদ্দেশ্য হাসিল করতে আসছেন?

এই বলে রিনি মাহমুদ কে একটা ধাক্কা দেয়। মাহমুদ কিছু টা দূরে গিয়ে পড়ে। কারণ হঠাৎ এমন ধাক্কা দিবে রিনি সেটা মাহমুদ বুঝতে পারে নি। মাহমুদ লক্ষ্য করে,
রিনির মুখে রাগ,অভিমান, কান্না সব মিলে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

মাহমুদ বলেঃ তোমাকে কেন বলবো?
আমি তোমাকে জবাব দিতে বাধ্য না।আমার জিনিস কেনো ধরলে সেটা বলো?

রিনি বলে উঠেঃ চুপ একদম চুপ।।

রিনি এটা বলে সামনে মাহমুদ এর দিকে এগিয়ে আসতেই, পা টা পিছলে ফ্লোরে পড়ে যায় রিনি। সাথে সাথে হাতে থাকা কাচেঁর গ্লাস টা ভেঙ্গে গেলো। যার ফলে রিনি হাতের থেকে ও প্রচুর রক্ত ঝরে পড়ছে।

মাহমুদ বলেঃ রিনি,সামলে।
রিনি কি হয়েছে দেখি?

রিনি বলেঃ আর এক পা ও এগিয়ে আসবেন না।কেনো কেয়ার করবেন।
আমি বাচি মরি তা দিয়ে আপনার কি?
চোখের সামনে থেকে সরে যান।

মাহমুদ বলেঃ রিনি,এমন করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো।এদিকে আসো।আমি রক্ত টা বন্ধ করে দি।

রিনি বলেঃ একদম দরকার নেই। যদি সত্যি আমার চিন্তা করেন।তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।তাহলে আমি আমার হাত আপনাকে ধরতে দিবো রক্ত বন্ধ করার জন্য। অন্যথায়,না বললে।
থাক রক্ত যা আছে সব বের হয়ে যাক।
আস্তে আস্তে আপনার সামনে আমার দেহ নিস্তেজ হয়ে যাবে
শালার জীবন টা তেজপাতা হয়ে গেছে অনেক আগেই।
এখন না হয় দেহ থেকে রক্ত বের হয়ে প্রাণ যাবে।

মাহমুদ কিছু টা আঁতকে উঠল। রিনি স্পষ্ট দেখতে পেল, মাহমুদ এর চোখে এখন রাগ নেই।এখন রিনি দেখতে পাচ্ছে,মাহমুদ যেনো ভয় পাচ্ছে। আর সেটা হলো,
কিছু একটা হারিয়ে ফেলার ভয় মাহমুদ পাচ্ছে ।

মাহমুদ বলেঃ আমি সব বলবো।প্লিজ আগে রক্ত বন্ধ করি,।।।।

রিনি বলেঃ সত্যি?

মাহমুদ বলেঃ আল্লাহর কসম করে বলছি সব বলবো।আল্লাহ এর নামে কসম টা কসম। আর যে গুলো কসম কাটে সবাই সেগুলো মিথ্যা কসম।বিলিভ মি।

রিনি বলেঃ আচ্ছা, আসেন এদিকে।

মাহমুদ এগিয়ে আসে,রিনি কাছে।মাহমুদ রিনির হাতটা ধরে। হাতের মধ্যে বেশ কিছু কাচের টুকরো ফুটে গেছে।
মাহমুদ আস্তে আস্তে সব তোলছে।রিনি ব্যথার জন্য চিৎকার দিচ্ছে। চাকর গুলো ও পিচ্চি ঘুম তাই কেউ শুনতে পাচ্ছে না রিনির চিৎকার।

রিনির হাত থেকে প্রচুর রক্ত ঝরে পড়ছে। রিনির হাতের থেকে প্রায় সব কাঁচের টুকরো নিয়ে ফেলেছে মাহমুদ।

মাহমুদ, রিনির হাতটা শক্ত করে ধরে। নিজের শরীর এর শার্ট টা এক হাতে আস্তে আস্তে খোলে ফেলে।সেই শার্ট দিয়ে, রিনির হাতের রক্ত গুলো মুছে দেয়। আর হাতের মধ্যে শার্টটা শক্ত করে চেপে ধরে। রিনি আহ ব্যথা বলে উঠে।

মাহমুদ, তাড়াতাড়ি করে রিনির জন্য পানি নিয়ে আসে। বেশি করে পানি খাইয়ে দেয়।রিনির রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

মাহমুদ রিনিকে কোলে করে নিয়ে আসে।মাহমুদ রিনিকে নিজের রুমে বিছানা তে বসিয়ে দেয়। মাহমুদ এর রুম সাউনফ্রোপ।মাহমুদ দরজাটা আটকে দেয়। যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।

মাহমুদ ফাস্ট এইডস বাক্স টা নিয়ে নে ড্রয়ারের থেকে। মাহমুদ চুপচাপ রিনির হাতের মধ্যে ড্রেসিং করে দেয়। তারপর মলম দিয়ে দিলো।অবশেষে হাতে বেন্ডেজ করে দিলো।

রিনি বলেঃ দরজা আটকানোর কারণ কি?

মাহমুদ বলেঃ সমস্যা আছে?
নাকি ভয় পাচ্ছো?

রিনি বলেঃ একটা ও না জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম। কেউ তো রিজন ছাড়া কিচ্ছু করে না।সো বলেন সব।

মাহমুদ বলেঃ রিনি তার আগে আমি কিছু দেখাবো।তারপর সব বলবো?
দেখবে!

রিনি বলেঃ আজ সব জানবো।যা দেখাবেন দেখান।
মাহমুদ রিনি কে বলেঃ আসো এদিকে।
রিনি হাটতে ও পারছে না।রক্ত বেশি বেরিয়ে যাওয়ার ফলে । তাই দুর্বল হয়ে গেছে। মাহমুদ রিনি কে কোলে তুলে নেই।

মাহমুদ এগিয়ে আসে। সেই অন্ধকার অংশে। তারপর………

?

জান্নাত চুপচাপ বসে আছে।জান্নাত এর নিরবতা মেরে ফেলছে মুগ্ধ কে।
মুগ্ধ হাল ছাড়বে না।জান্নাত কে নিজের করে তারপর দম ছাড়বেই।

কামাল বলেঃ চলো সবাই। একটু ঘুমিয়ে নি।কালকে তো বেক করতে হবে।

রাবেয়া বলেঃ কালকে না আমরা পরশু ফিরে যাবো।বেশ লাগছে। তাছাড়া, জান্নাত এর engagement তো শুক্রবার এ।সো সমস্যা হবে না।

সুমি বলেঃ ভাবি,ঠিক বলছেন।তাছাড়া, কেবলা কান্তো bcs বাবুর সাথেই তো হবে।সো দরকার নেই কাল যাওয়ার। তাছাড়া,
কাল গিয়ে দেখা যাবে,জান্নাত এর সাথে কেবলাকান্তো টা দেখা করতে চলে আসবে।জান্নাত ও মা বাবার মন রাখতে দেখা করে নিবে।

রহমান( শয়তান জিন প্রিন্স) বলেঃ আরে আরে।কামাল ভাই কাল যাবো না।অনেক দিন পর প্রকৃতির রূপে বিভোর থাকতে ভালো লাগছে।

মুগ্ধ চুপ হয়ে আছে। কি করবে সে?
কি এমন করবে সে,যে জান্নাত শুধু তারই হবে।
জান্নাত কিছু বলছে না।চুপ হয়ে বসে আছে।একটু পর, সবাই ঘুমাতে চলে গেল।

মাঝ রাতে জান্নাত এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জান্নাত, একটা শব্দ শুনতে পেল। জান্নাত এর মনে হচ্ছে কেউ যেনো কান্না করছে। কিন্তু কে?

জান্নাত তাঁবু থেকে খুব সতর্কতার সাথে হেঁটে বেরিয়ে পড়ে। জান্নাত দেখতে পেল,মুগ্ধ জায়নামাজ বিছিয়ে মোনাজাত ধরেছে।

মুগ্ধ বলেঃ ইয়া আল্লাহ, এই দুনিয়ার মধ্যে তোমার জন্য অসম্ভব কিছু না।আমার একটা ফরিয়াদ তুমি শুন।আমি জান্নাত কে ছাড়া আমার অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারি না।না জানি কি আছে তার মাঝে?
কেনো এতো পাগল হয়ে গেছি?
হে আল্লাহ, প্লিজ এমন কিছু চমৎকার করে দেন।কোণ ও ফায়াকোণ বলে সব ঠিক করে দেন।

কান্না করে এসব বলতে বলতে মুগ্ধ জায়নামাজে লুটিয়ে পড়ছে। জান্নাত আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নি।তাড়াতাড়ি তাঁবু তে ফিরে আসে। জান্নাত এর বাবা মা তাদের পরিচিত bcs ক্যাডারের সাথে বিয়ে টিক করেছে।জান্নাত তার মা-বাবা কে হতাশ করতে চাইনি।তাদের বাধ্য মেয়ের মতো রাজি হয়ে গেছে বিয়েতে। তাছাড়া, মুগ্ধের মিথ্যা বলাতে অনেক কষ্ট পেয়েছিল জান্নাত।

জান্নাত জানে কিছু করার নেই।এখন যদি কিছু করতে পারে,তা পারবে একমাত্র রব্বুল আলামীন। জান্নাত এর চোখে অশ্রু টলটল করছে। জান্নাত কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে, সূর্যের কিরণ এসে পড়েছে জান্নাত এর মুখে। জান্নাত এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সবাই আস্তে আস্তে উঠে পড়ে।

রহমান বলেঃ আজ একটু জঙ্গলে ঘোরে দেখতে চাই।আজ সবাই জোড়ায় জোড়ায় যাবে।
আমি,সুমি।
কামাল ও রাবেয়া।

জান্নাত তোমার বর তো নেই।তাছাড়া মুগ্ধ ভাই ও একা।সো তোমরা দুজন যাও।

সবাই জোড়ায় জোড়ায় বেরিয়ে পড়ে। জান্নাত ও মুগ্ধ হাঁটছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।
হঠাৎ, জান্নাত দেখতে পেল, একটা
……
চলবে…..

রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :39
************
মাহমুদ রিনি কে কোলে তুলে নেই।মাহমুদ এগিয়ে আসে। সেই অন্ধকার অংশে। তারপর,
মাহমুদ রুমের সব
ছবি গুলো সরিয়ে দেয়। ছবিগুলো সরিয়ে দিতেই,
রিনি দেখতে পেল,একটা অদ্ভুত ধরনের দরজা।
রিনি একদম অবাক হয়ে গেছে, কারণ কল্পনা ও করে নি যে,ছবির পিছনে যে একটা দরজা ও থাকতে পারে।

রিনি বলেঃ এটা কি স্যার?
তাছাড়া রুমে ভিতর তো দরজা আছে। তাহলে এটা কিসের দরজা?
এখানে,
দরজা কেন?

মাহমুদ বলেঃ কোন প্রশ্ন না।চুপচাপ থাকো।

মাহমুদ দরজা তে মাহমুদ এর হাত স্পর্শ করতেই দরজা টা খুলে যায়। রিনি দেখে একটা রুম এটা।তবে অন্ধকার।তাই কিছু দেখা যাচ্ছে না।

তাছাড়া, রিনির অন্ধকার দেখলেই ভয় করে। তাই মাহমুদ কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে। মাহমুদ সামান্য হেটে সুইচ অন করে। রিনি দেখে এটা একটা অনেক বড় রুম।অনেক সুন্দর করে গোছানো। রিনি লক্ষ্য করে সারা রুম জোরে তারই ছবি।

রিনি বলেঃ আমাকে নামিয়ে দেন কোল থেকে !

মাহমুদ বিনা বাক্যে রিনি কে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। রিনি প্রত্যেকটা ছবি ভালো ভাবে দেখছে।রিনি একটা ছবির সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো। রিনি প্রথম যখন কক্সবাজার গিয়েছিল। তখন,তার হাবিব আঙ্কেল এর পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে দিয়ে রাস্তা তে বসে একটা ছবি তুলে ছিলো।তবে সেগুলো ৩ বছর আগের কথা। সেই ছবি ও এখানে।
তাছাড়া,এই রুমে রিনির অজস্র ছবি রয়েছে।

রিনি মাহমুদ এর সামনে এসে দাঁড়ায়। মাহমুদ চুপচাপ হয়ে আছে। রিনি মিটমিট করে তাকিয়ে আছে মাহমুদ এর দিকে।

রিনি বলেঃ কে আপনি?
কেনো এতো আয়োজন? কেনো এতো মায়া মমতা মিশিয়ে ছবি গুলো যত্ন করে রেখেছেন?

মাহমুদ চুপ হয়ে আছে। মাহমুদ যেনো কিছু বলার ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না।

নিরবতা ভেঙ্গে মাহমুদ বলেঃরিনি তোমাকে একটা কবিতা বলি শুনো।
” তুমি আসবে বলে,
পথের পানে দাঁড়িয়ে থাকা।
তোমায় দেখবো বলে,
চোখের মাঝে স্বপ্ন আঁকা,
দেখো দূর আকাশে সূর্যটা ও,
আবির মাখা।
তুমি আসবে তো একা একা!!!
(লেখিকাঃ উর্মি)

তোমার পথ চেয়ে আছি এখনো রিনি।জানি না আমার জন্য যে স্বপ্নটা ভুনা আছে তা পূরণ হবে কি না।আমি তোমাকে ভালোবাসতাম,ভালোবাসি, ভালোবেসে যাবো।

মাহমুদ কথা বলতে বলতে চশমা টা খুলে ফেলে।মাহমুদ আলতো করে, রিনির কাঁধের উপর নিজের হাত দুটো রাখে।

মাহমুদ বলেঃ রিনি একটা কথা কি জানো?
কাছে টেনে অবহেলা করার চেয়ে সরাসরি বলে দেওয়া ভালো এই গল্পের শেষ এখানেই।কিন্তু তুমি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলে এই গল্পের সেদিন ই শেষ হয়েছে । তব ও আমার বেহায়া মন মানতে চাইনি।বেহায়া মনটা বলে, তুমিও নাকি আমাকে মনে প্রাণে চাও।
জানি না।এই কথা তুমি আমাকে বলবে নাকি?
তাছাড়া,
রিনি আমি নিজে ও জানি না।কেনো আমি এতো তুমি পাগল!
কেনো পারি না তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে চিন্তা করতে? উত্তর আছে কোন রিনি?
বলো রিনি!

রিনি বলেঃ আ আ আপনি কে!
আমি যাকে অনুমান করছি সে নয়তো!!!!

এরপর,মাহমুদ বলেঃ রিনি,আমি আর কেউ না।আমি জিন রাজ্যের প্রিন্স। তুমি আমার প্রতি বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ দেখাও নি।তাই আমার নামটা ও জানো না?
কিন্তু আমি তোমার ব্যাপারে সব জানি।তোমার সব কিছু যত্ন করে রেখেছি।

তখনই,

রিনি বলেঃ আ আ আপনি ইনতিয়াজ!!!!

মাহমুদ বলেঃ রিনি,আমি শুধু ইনতিয়াজ না।আমার সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে ইনতিয়াজ মাহমুদ। এখানে সবাই জানে আমার নাম মাহমুদ। সেদিন তোমার বলা কথা গুলো বড্ড কষ্ট দিয়েছে। তোমাকে ইচ্ছে করে ভার্সিটিতে, কষ্ট দিতে চাইতাম। কিন্তু পারতাম!রিনি আমাকে কি এখনো ভালোবাসো না!
আমি কি বিন্দু পরিমাণ ও জায়গা করতে পারিনি তোমার মনে?

রিনি বলেঃ তাহলে কেনো আপনি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন আমার থেকে?
আপনি মিথ্যা বলছেন, আপনি আরেক জন কে ভালোবাসেন।আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।
আপনি যে অন্য জনকে মন দিয়েছেন,
আমি তা নিজ চোখে দেখছি।
তাছাড়া, এখন বুঝতে পারছি,
সেদিন আপনি আমাকে খোদাহ হাফেজ না বলে আল্লাহ হাফেজ কেন বলেছেন।আমার মন ঠিক বলছিলো আপনি আমার জীবনে আবার ফিরবেন।
তাছাড়া,
আপনি আমাকে ভক্ষন করেছেন মিস্টার ইনতিয়াজ মাহমুদ!
সব কি ভুলে গেছেন?আমি সব কিছু মনে রেখেছি।

ইনতিয়াজ (জিন রাজ্যের প্রিন্স এবং মাহমুদ স্যার) বলেঃরিনি,সেই ঘটনার জন্য আমিও শাস্তি পাইছি।তার উপর রহমান ও তোমাকে কম কষ্ট দেয় নি।সব কিছুর জন্য আমি অনেক লজ্জিত। তাছাড়া,
যা হওয়ার হয়ে গেছে।
আর আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা ও করি না রিনি।আমার মন প্রাণ জোরে শুধু তোমার আনাগোনা।

রিনি বলেঃ তাহলে,কার সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলতেন?
কার ফুচকা খাওয়া মন দিয়ে দেখতেন?
আমার সাথে কেনো এমন রোড আচরণ করতেন?

ইনতিয়াজ বলেঃ আসলে, ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমি তাকে আমার মনের মাঝে থাকা প্রিয়তমার কথা বলেছি।সে আমার মনের রানীর বিষয়ে সব জানে।
আমি তাকে ভালোবাসতে পারবো না এটা জানার পর সে অনেক আপসেট হয়ে যাই।
তাই সে রিকোয়েস্ট করে ছিলো, আমি যেনো তার খুব ভালো বন্ধু থাকি।
so we Are good friend. Nothing else rini.
আর রিনি কেনো এমন আচরণ করতাম এর উত্তর নিজেই জেনে যাবে তুমি ।

রিনি বলেঃআচ্ছা যাক।আমার মনে যে সন্দেহ ছিলো সেটা দূর হলো।আমি বাসায় ফিরে যাবো।পিচ্চি ও উঠে যাবে। ঐশী ও চিন্তা করবে।মা বাবা ও বেক করবে।

ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি,আমি তোমাকে হারাতে চাইনা রিনি।তাই তো ভার্সিটিতে কেউ তোমাকে চোখ তুলে তাকালে অদৃশ্য হয়ে তাকে শায়েস্তা করতাম। ইসমাইল হোসেন নয়ন স্যার কে ও তাই আমার একদম সহ্য হতো না।
শুধু তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো।
হুহ!!!!
আমি কি চাই জানো রিনি?
আমি চাই রিনি নামক সত্তা টা,
শুধু আমারই থাক।শুধু রিনিকে আমি দেখবো মন ভরে ।
রিনি, বলো ভালোবাসি? আমার ভালোবাসা অভাবে মরুভূমি হয়ে যাওয়া মন কে একটু প্রশান্তি দাও???

রিনি বলেঃ আমার বিশ্বাস নাই ভালোবাসাতে।আমি চাই না এসব ভাবতে। ভালোবাসা বলে কিছু হয় না।আমি ভালোবাসি না।

ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি,এখনো ভালোবাসা আছে। বিশ্বাস করার মতো এমন ব্যাক্তিত্ব আছে। জাস্ট সাহস করে আমার বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধর।তোমার হাতটা বাড়াও।
আর রিনি,আমার হাতটা ধরে স্পর্শ করো।তোমার মন তোমাকে জানিয়ে দিবে যে হ্যাঁ এই হাতটার উপরে বিশ্বাস করা যায়। ভরসা করা যায়। যতই ঝড় আসুক না কেনো,এই ইনতিয়াজ কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবে না।

রিনি একদম চুপ হয়ে আছে।কিছু বলছে না।

ইনতিয়াজ আবার বলেঃ রিনি, আমি আমার মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি।আমার এই মন কে যা বলি সে সেটা শুনে না।
অনেক বলেছি, রিনি কে ভালোবাসা বন্ধ করতে কিন্তু মন যে মানে নি।শুধু ভেতরে ভেতরে তোমার জন্য কান্না করে।
তবে মন কে শাসন করবো।
আর বলবো, এই মনকে পাথর হয়ে যেতে।পাথর হয়ে গেলে আমার,
মনের কান্না গুলো যাতে পাথর খেয়ে পেলে।

রিনি বলেঃ আমি বাসায় যাবো।দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন সুস্থ আছি।

ইনতিয়াজ বলেঃতাহলে কেনো জানতে চাইছিলে সব?
এখন সব জেনে কেনো পালিয়ে যাচ্ছো?
রিনি,তুমি আমার চোখে চোখ রেখে বলো?
তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না!

রিনি কোন উপায় না পেয়ে, তেলাপোকা বলে চিৎকার দেয়। ইনতিয়াজ এর মনযোগ সরতেই রিনি দৌড়ে রুমের থেকে বেরিয়ে পড়ে।ইনতিয়াজ ও রিনির পিছু নিলো।

রিনি যত দ্রুত গতিতে পারে দৌড়ে চলছে। ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি আজ তোমার উত্তর না জেনে তোমাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি না।

ইনতিয়াজ,রিনির চোখের পলক ফেলার আগেই রিনির সামনে হাজির হয়ে যাই। ইনতিয়াজ, রিনি কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিনি কে জড়িয়ে ধরে।

ইনতিয়াজ রিনির কানে কানে বলেঃ রিনি, একদম নড়াচড়া করবে না।তোমার পিছনে তেলাপোকা আসছে।

রিনি একথা শুনে একদম ভিতু হয়ে যাই। রিনি শক্ত করে ইনতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে। ইনতিয়াজ একটা শয়তানি হাসি দেয়। যা রিনির চোখে পড়ে নি।

ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি দেখি ছাড়ো আমাকে। যাও এখন পালিয়ে যাও।দেখি কত দূর যেতে পারো???

রিনি মনে বলছেঃ একি ব্যাপার টা কি?
কি হলো এভাবে সুর পাল্টিয়ে ফেলছে কেন?
কি হলো?

রিনি,ইনতিয়াজ কে ছেড়ে দেয়। রিনি দেখে…..

?

সবাই জোড়ায় জোড়ায় বেরিয়ে পড়ে। জান্নাত ও মুগ্ধ হাঁটছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।
হঠাৎ, জান্নাত দেখতে পেল, একটা খুব সুন্দর ফুলের গাছ।

জান্নাত সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মুগ্ধ বলেঃ দাড়াও আমি আনছি গাছ থেকে ফুল। তোমার যেতে হবে না।

মুগ্ধ অনেক গুলো ফুল নিয়ে আসে। ফুল গুলো জান্নাত এর দিকে এগিয়ে দিয়ে হাটু গেরে বসে আছে। অতপর,

মুগ্ধ বলেঃ আচ্ছা, জান্নাত জানো কি!!!
নাটাই বিহীন ঘুড়িটা আজ উড়ছে আনমনে। চিরকুটে লিখা গল্প টি,দেখো বেওয়ারিশ বিজ্ঞাপনে পড়ে আছে। কেনো পারছো না আমাকে আপন করতে?
কোন দিক দিয়ে আমি তোমার অযোগ্য বলো?
সত্যি জান্নাত , তোমার মাঝে কি যেনো আছে , না হয় আমি এতো তুমি পাগল কেনো?

জান্নাত ফুল গুলো নিয়ে নেই। জান্নাত , তার হাতটা এগিয়ে দেয়। জান্নাত বলেঃ উঠে পড়েন।আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না।
চলেন এগিয়ে যায়।তা না হয় জঙ্গলে ঘুরতে পারবো না।

জান্নাত ও মুগ্ধ চুপচাপ হয়ে গেছে। হঠাৎ জান্নাত কিছু একটার সাথে পা টা পিছলা খেয়ে পড়ে যায় মাটিতে। এটা দেখে, মুগ্ধ হেসে দেয়।

আসলে,যখন আমাদের সামনে কেউ পিছিলা খেয়ে পড়ে যায় তখন কেনো জানি আমরা দুঃখ প্রকাশ করার বদলে হেসে দেয়।

এই লজিক টা মুগ্ধের ক্ষেত্রে ও ব্যাতিক্রম হয়নি।জান্নাত এর গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। মুগ্ধের এমন হাসি দেখে।

জান্নাত নরম স্বরে বলেঃ আপনার হাতটা এগিয়ে দেন?
আমি উঠতে পারছি না.?
পছন্ড ব্যথা পেয়েছি।

মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত, I’m sorry.আসলে আমার ও ভাবে হাসাটা ঠিক হয়নি।আচ্ছা ওয়েট আমি হাত এগিয়ে দিচ্ছি।

জান্নাত মনে মনে বলেঃ চান্নু হাত টা বাড়িয়ে দাও।মজা বুঝতে পারবা।জান্নাত এর উপর হাসা।এখন বুঝবা।

মুগ্ধ হাত এগিয়ে দেয়। জান্নাত উঠতে চেষ্টা করে। তারপর,জান্নাত আবার চেষ্টা করতেই, মুগ্ধের হাত ধরে টান দেয় সামনের দিকে । মুগ্ধ ও টাল সামলাতে না পেরে পিছলা খেয়ে পড়ে যায় মাটিতে । জান্নাত হা হা করে অট্টহাসি দিয়ে উঠে।

মুগ্ধ একদম বেকুব হয়ে গেল। মুগ্ধ কল্পনা ও করেনি।জান্নাত এমন কিছু করে বসবে।জান্নাত এখনও হেসে চলেছে।

মুগ্ধের হঠাৎ করে নজর পড়ে…….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here