রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :41,42

0
1167

রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :41,42
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :41

রিনির বাসার সামনে গাড়ি থামিয়েছে ইনতিয়াজ।
তখনই, ইনতিয়াজ বলেঃ আরেকবার ধন্যবাদ রিনি। সত্যি, তোমার ভালোবাসি কথা টা আমার প্রাণে প্রশান্তি এনে দিয়েছে। এতোদিন যে কেমনে ছিলাম তা আমি এবং আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।জীবনের প্রাপ্তি। সারাজীবন ভালোবেসে যেও এভাবে রিনি।

রিনি বলেঃ স্বাগতম। ইনশাআল্লাহ এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবো সব।

রিনি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তখনই, আবার ইনতিয়াজ বলেঃ পেছনের সিটের দরজা টা খুলো।
রিনি দরজা খুলে দেখে, অনেক গুলো চকলেট এবং আইসক্রিম সাথে ফুচকা ও আছে। রিনি অনেক খুশি হয়ে গেছে।

রিনি বলেঃ ওয়াও।অনেক অনেক ধন্যবাদ। লাভ ও মাই প্রিন্স। বলে চিৎকার দিয়ে ইনতিয়াজ এর কাছে চলে আসে।ইনতিয়াজ এর কাছে এসে, ইনতিয়াজ এর গালে একটা চুমু দিয়ে দেয়।

ইনতিয়াজ বলেঃ তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করে কষ্ট করে এসব নিয়েছি।আমার কষ্ট সার্থক হলো।এটা বলে একটা শয়তানি হাসি দেয়।

রিনি লজ্জা তে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে।রিনি তাড়াতাড়ি জিনিস গুলো বের করে নেই।
রিনি বলেঃ আমি যাচ্ছি।

ইনতিয়াজ বলেঃ আচ্ছা যাও।অতি শীঘ্রই আবার দেখা হবে। ঐশী কখন চলে যাবে?
আজ চলে গেলে, আজ রাতে তোমার সাথে গল্প করবো?
কি বলো?

রিনি বলেঃ একদম ই না।আমি ঘুমাবো।আর আপনি একদম চালাকি করবেন না কিন্তু। দেইখেন!!!

ইনতিয়াজ বলেঃ পালাও যতো পারো পালিয়ে যাও।বিয়ের পর কোন বাহানা কাজে আসবে না।রিনি, ভালোবাসি।

রিনি বলেঃ আমি ও ভালোবাসি।

ইনতিয়াজ বলেঃ আচ্ছা তাহলে যায়।

রিনি বলেঃ জি।

ইনতিয়াজ চলে গেল। রিনির খারাপ লাগছে। রিনির অনেক ভালো লাগে যখন ইনতিয়াজ আশেপাশে থাকে।রিনি বাসার বেল বাজালো।
ঐশী এসে দরজা খুলে দেয়।
ঐশী রিনিকে জড়িয়ে ধরে। রিনিও জড়িয়ে ধরে। বেস্ট ফ্রেন্ড কে জড়িয়ে ধরাতে একটা আলাদা প্রশান্তি পাওয়া যায়। যাদের বেস্ট ফ্রেন্ড আছে তারা ই বুঝতে পারে এটা।

ঐশী বলেঃ এখন কেমন আছিস?অনেক চিন্তা হচ্ছে লো তোর জন্য।

রিনি বলেঃ আলহামদুলিল্লাহ। দেখ কি আনছি?
চল একসাথে খাই।

ঐশী বলেঃ চল।আন্টি রা কখন আসবে?

রিনি বলেঃ জানি না। কখন যে আসে। মনে হচ্ছে কাল, পরশু চলে আসবে।

দুজন মিলে খাচ্ছে। হঠাৎ করে, ঐশী বলেঃ রিনি তোর মুখ দেখতে এতো হাসি খুশি লাগছে কেন?
কি ব্যাপার আমাকে বলবি না?

রিনি কিছু টা থতমত খেয়ে পড়ে। কি বলবে সে এখন।
রিনি বলেঃ কই না তো?
তোর জাস্ট মনে হচ্ছে এমন।

ঐশী বলেঃ মেরি জান।তেরি রাগ রাগছে ওয়াকিফ হো মে।
বলবি না?
যা কথা নাই তোর সাথে।

রিনি বলেঃ আসলে।
তোই কিন্তু মাইন্ড করবি না কিন্তু।

ঐশী বলেঃ আমি আবার মাইন্ড। তোর নেংটা কালের পিক দেখে মাইন্ড করিনি।কথা শুনে মাইন্ড করবো নাকি।

রিনি বলেঃ মাহমুদ স্যার আমাকে প্রপোজ করেছে।
রিনি ইচ্ছে করে, বাকি সব কিছু লুকিয়েছে।কারণ রিনি চাই না।এসব কেউ জানুক।

ঐশী বলেঃ হি হি।মাম্মা। আমি তো জানতাম।

রিনি কিছু টা অবাক হয়ে গেছে। কেমনে কি?
রিনি বলেঃ কেমনে জানলি?

ঐশী বলেঃ স্যার খুব অদ্ভুত ভাবে তোর দিকে তাকিয়ে থাকতো।স্যার এর চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখছি।সবার চোখে ব্যাপারটা ধরা না পড়লে ও ঐশীর চোখে ধরা পড়েছে।এখন তো মনে হচ্ছে, তোরে স্যার ইচ্ছে করে বলেছিলো যে তোই ভার্সিটি তে চান্স পাবি।স্যার এমন বলাতে তোই যে হারে জেদি হয়ে গেছিলি পড়ালেখা নিয়ে। মাহমুদ স্যার তুক্কু মাহমুদ জিজু অনেক চালাক।হি হি

রিনি বলেঃ আমি তো বুঝতে ও পারিনি।হুম এখন বুঝতাছি।তোর স্যার আমার ও স্যার।

ঐশী বলেঃ তোই যে হাদারাম।না বুঝতে পারার ই কথা।ঢঙ্গি স্যার মারাইস না।তোর হবু জামাই সে।আর আমার জিজু।
তা তোই উত্তর কি দিলি?

রিনি বলেঃ আমি ও ভালোবাসি বলছি।

ঐশী বলেঃ বাহ।মিয়া বিবি রাজি আব কিয়া কারে গা কাজী!!!
তো বিয়ে কখন করবি?
বাসায় জানাবি না?

রিনি বলেঃ ধুর এখন না।সামনে জান্নাত কালামনির বিয়ে হবে।ততদিনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবে। তারপর মাহমুদ স্যার ই বলবে।

ঐশী বলেঃ হুম।তো চল একটা মুভি দেখি।

দুজন মুভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লো।

?

?

মুগ্ধের ভালো লাগছে, রাতের দৃশ্য দেখতে।সাথে তো ঝর্ণার জলের শব্দ আছেই।
একটু পর, মুগ্ধ কারোর পদধ্বনির শব্দ শুনতে পেল।

মুগ্ধ পিছনে ফিরে দেখে,সুমি কফি মগ হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে মুগ্ধের দিকে।

সুমি বলেঃ জানতাম।তুমি না ঘুমিয়ে থাকবে!

মুগ্ধ বলেঃ রহমান কি ঘুমিয়ে পড়লো নাকি?

সুমি বলেঃ আরে নাহ।সে তার কফি বানিয়ে আসছে।

মুগ্ধ বলেঃ ওহ আচ্ছা।

সুমি বলেঃ নাও কফি খাও।মন খারাপ নাকি?
দেখতে উদাস মনে হচ্ছে?

মুগ্ধ বলেঃ

“এখন তার ধ্বনি শোনার বায়না মন আর নেইনা।
ইচ্ছে হলে ও সে প্রকাশ করে না।
হৃদয়ে পাথর চাপা দিয়ে আছে সে।
তার,তার অনেক ইচ্ছে করে তার ধ্বনি শুনবে।
কিন্তু সে অনেক দূরে।”
হয়তো হারিয়ে ফেলতে চলেছি?
কেমনে মন ভালো থাকবে বলো?

তখনই, পিছনে থেকে রহমান বলেঃ হার মানলে তো হবে না। মিস্টার ডাক্তার।
সব রোগের চিকিৎসা তো আছে তোমার কাছে। তবে নিজের রোগের চিকিৎসা নিজে করে নিতে পারছো না।

মুগ্ধ বলেঃ চেষ্টা তো অনেক করেছি।কিন্তু সফল হচ্ছিনা।

সুমি বলেঃ মুগ্ধ চিন্তা করিও না।তোমার ই হবে জান্নাত। আমি ও রহমান তোমার সাথে আছি।

রহমান বলেঃ মুগ্ধ, সুমি একদম ঠিক বলেছে।

সুমি বলেঃ মুগ্ধ চলো তাঁবু তে ফিরে যায়।
সকালে ফিরে যেতে হবে।

সবাই ফিরে আসে। মুগ্ধ ও ঘুমিয়ে পড়লো। খুব ভোরে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। রাবেয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে,তার পাশে একটা শাড়ি এবং কিছু গহনা রাখা।
সুমি ও ঘুম থেকে উঠে তাই দেখতে পেল।
জান্নাত ও তাই দেখতে পেল।

মেয়েরা রেডি হয়ে গেছে। সবাই বাইরে এসে দেখে ছেলেরা সবাই পাঞ্জাবি পড়ে আছে। রহমান বলেঃ কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ।

সবাই বলেঃ অনেক ভালো লাগলো।

কামাল বলেঃ চলো সবাই। নৌকা রেডি?

সুমি বলেঃ নৌকা?

রহমান বলেঃ তোমাদের নৌকা ভ্রমণ করানোর পর ফিরে যাবো।

সবাই অনেক খুশি। সবাই নৌকা তে উঠে পড়ে।
সুমি রহমানের সামনে বসেছে।
সুমির পরনে কমলা রঙের শাড়ি, হাতের মধ্যে সবুজ রঙের চুড়ি, চুলের মধ্যে খোপা করেছে।

রহমান সুমির কানে কানে বলেঃ অসম্ভব সুন্দরী লাগছে।

সুমি বলেঃ তাই বুঝি?

রহমান বলেঃ হুম আমার বউ।

সুমি বলেঃ ধন্যবাদ, প্রিয় বর।

জান্নাত বসে আছে। তাকিয়ে আছে। দূরের সেই জল স্রোত। মুগ্ধ ও চুপচাপ বসে আছে।

রাবেয়া ও কামাল একসাথে বসে আছে। রাবেয়া ও অনেক খুশি। কামাল ও অনেক খুশি কারণ রাবেয়া খুশি তাই।

বেশ কিছু সময় পর,সবাই নৌকা থেকে নেমে যাই। কামাল বলেঃ চলো গাড়ি তে উঠে পড়ো।

সবাই গাড়ি তে উঠে পড়ে। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পর সবাই ফিরে আসে। যার যার বাসায় সে সে চলে গেল। রাবেয়া ও কামাল বাসার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে।
অনেক্ক্ষণ ধরে, বেল টিপচে কেউ দরজা খুলে দিচ্ছে না। অবশেষে, কামার বলেঃ চাবি আরেকটা আছে মনে হয় আমার কাছে।

কামাল চাবি পেয়ে যায়। কামার দরজা খুলে। রাবেয়া বলেঃ রিনি কই?

কামাল বলেঃ রুমে গিয়ে দেখো?

রাবেয়া রুমে প্রবেশ করে দেখে,রিনি ও ঐশী ঘুমিয়ে আছে।
রাবেয়া দরজা বন্ধ করে দেয়।

রাবেয়া বলেঃ কামাল ওরা ঘুমিয়ে পড়লো।

কামাল বলেঃ তাহলে আমরা ও রেস্ট নিয়ে নি।

রাবেয়া ও কামাল রেস্ট নিয়ে নেই।
রাতে, রাবেয়া ঐশী ও রিনি কে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। দুজন ই উঠতে চাই ছিলো না।তাও জোর করে উঠিয়েছে।

সবাই রাতের খাবার খেয়ে নিলো।
সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঐশী নিজের বাসায় চলে গেল।
রিনি মায়ের সাথে আড্ডা দেয়।রান্না করে। এভাবে বেশ কিছু দিন চলে গেল। ইনতিয়াজ এর সাথে তেমন কথা হয়নি দেখা ও হয়নি রিনির।কারণ রিনির সাথে সবসময় রাবেয়া থাকে।

কাল শুক্রবার। জান্নাত এর engagement. রিনি ও রাবেয়া যাওয়ার জন্য সব কিছু গুছিয়ে নিলো। কামাল বলেঃ কাল ভোরে রওনা দিবো।

রাবেয়া বলেঃ আচ্ছা।

মাঝ রাতে, মুগ্ধের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কেউ একজন কল দিয়েছে। মুগ্ধ দেখে জান্নাত এর কল।

মুগ্ধ তাড়াতাড়ি রিসিভ করে। মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত টিক আছো?

জান্নাত বলেঃ মুগ্ধ, আমার মা সেন্স লেস হয়ে গেছে। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন প্লিজ।

মুগ্ধ বলেঃআমি আসচি।তুমি চিন্তা করিও না।
মুগ্ধ অল্প কিছু সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেল। জান্নাত এর মা অতিরিক্ত টেনশনের কারণে সেন্স লেস হয়ে গেছে। সুমি এবং রহমান ও আছে। জান্নাত নাকি তাদের বৃহস্পতিবারে আসতে বলছিলো।

সুমি বলেঃ জান্নাত চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে।

মুগ্ধ বলেঃ রহমান ভাই,একটু এই দিকে আসেন।

রহমান বলেঃ জি।

মুগ্ধ বলেঃকি হয়েছিলো ঠিক?
একটু যদি বলতে?

রহমান বলেঃ আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি লাম।জান্নাত ও ছিলো।তো,
জান্নাত এর মার কাছে হঠাৎ করে,একটা কল আসে এর পরপরই এই অবস্থা।

মুগ্ধ বলেঃ ওনার জন্য টেনশন নেয়া ওনার শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

মুগ্ধ চলে গেল। জান্নাত কিছু বলে নি।
জান্নাত এর মা বলেঃ জান্নাত যা ঘুমিয়ে পড়।
সুমি এদিকে আসো। কথা আছে।

জান্নাত চলে গেল। তখন,জান্নাত এর মা বলেঃ

চলবে…

[গল্প কেমন হচ্ছে কমেন্ট করে বলেন প্লিজ ]

রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :42
************
জান্নাত চলে গেল। তখন,জান্নাত এর মা বলেঃসুমি কালকে যার সাথে জান্নাত এর engagement হওয়ার কথা ছিলো তার এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। বেশি কিছু হয়নি।তবে ছেলের মা বলেছে, তারা জান্নাত কে বউ করতে পারবে না।বিয়ের আগে তাদের ছেলের সাথে এমন হয়েছে না জানি বিয়ের পর কি হয়।
তাদের মতে আমার মেয়ে অপয়া। সুমি এখন কি করবো বলো মা!
আমি সবাই কে দাওয়াত দিয়ে দিছি।আর এসব জানলে তো আমার মেয়ে টা কে কেউ বিয়ে ই করবে না।জান্নাত এর বাবা কে ও কিছু বলিনি।তিনি মেয়ের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন। মেয়ের জামাই দেখতে কেমন তাও জানতে চাননি।তিনি ব্যবসায়িক কাজে লন্ডন গিয়েছে। কালকে লন্ডন থেকে সোজা অনুষ্ঠানে আসবেন বলেছে।তার পুরো বিশ্বাস ছিলো আমার পছন্দের উপর।
এতো সব চিন্তা সহ্য করতে না পেরে আমি সেন্স লেস হয়ে যাই।
সুমি কি করবো এখন?
কোন পরামর্শ দাও!!!

সুমি বলেঃ আন্টি কালকে সব ঠিকঠাক হবে।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আমি সব সামলে নিবো। আপনি আমার উপর বিশ্বাস করেন তো?

জান্নাত এর মা বলেঃ বিশ্বাস করি বলে তো কাউকে কিছু বলিনি।শুধু তোমাকে বলেছি।

সুমি বলেঃ আন্টি জান্নাত এর বর কে আত্মীয় রা কেউ কি দেখেছে?

জান্নাত এর মা বলেঃ তেমন কেউ দেখেনি।সবাই কালকে দেখতো আরকি।তারা জানে ছেলে bcs ক্যাডার।

সুমি বলেঃ আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আমি ও রহমান সব সামলে নিবো। আন্টি ব্যাপারটা রহমানের সাথে শেয়ার করতে চাইচি।মাইন্ড করবেন না তো?

জান্নাত এর মা বলেঃ জামাই কে তো তোমার অবশ্যই বলতে হবে। তোমরা আমার মেয়ের জন্য খারাপ করবে না।সবসময় ভালো ই করবে আমি জানি।

সুমি বলেঃ আপনি ঘুমিয়ে পড়েন।আমি সামলে নিবো।

পরদিন সকালে। সারা বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। হাবিব,হাবিবের মা।
অর্ক,লাবু,রাহাত, রেশমি এবং কামাল,রিনি,রাবেয়া আসছে।তাদের আসার একটু পর শাম্মি ও রানী লোভা এবং সাথে রাজা মশাই এসেছে। আত্মীয় স্বজনরা এসে পড়েছে। চার দিকে হইচই করছে সবাই।

জান্নাত এর মা,বাবা মেহমানদের কে আপ্যায়ন করছে। সুমি ও রহমান তাদের সাথে জান্নাত কে পার্লার এ নিয়ে গেল। জান্নাত একদম একটা প্রাণহীন পুতুল এর মতো বসে আছে। আর পার্লার এর মেয়ে গুলো সাজিয়ে দিচ্ছে।

দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর জান্নাত কে রেডি করা হয়েছে। জান্নাত আজ লেহেঙ্গা পড়েছে।গোল্ডেন রঙের লেহেঙ্গা, সবুজ রঙের জুয়েলারি, হাতে লাল রঙের চুড়ি। চুলের মধ্যে খোপা করেছে। কপালে টিকলি।
সুমি বলেঃ বাহ রাজকন্যার মতো লাগছে। আজকে মনে হয় সবাই দেখে ক্রাশ খাবে। জামাই বাবা জি তো বেহুশ হবে।

জান্নাত বলেঃ যাহ বেশি বলিস।আচ্ছা শোন ও তো আমাকে কল দেয় নি।

সুমি মনে মনে বলছেঃ ওতো আর আসছে না।তাই কল দেয় নি।

জান্নাত বলেঃ কিছু বল?

সুমি বলেঃ আরে বেশি চিন্তা করিস।হয়তো বেজি।

জান্নাত বলেঃ সবাই কি এসে পড়েছে?

সুমি বলেঃ হা সবাই আসছে।

জান্নাত বলেঃ সবাই?
আ আ,,,,,আর মুগ্ধ আসছে?

সুমি বলেঃ তোর কি মনে হয় সে আসবে?
যা কষ্ট পাবে সে আজ।তোই কি বুঝবি ভালোবাসার মানুষ টা কে অন্য জনের সাথে দেখলে কতটা যে কষ্ট লাগে। বাদ দে চল।

পার্লার থেকে বেরিয়ে আসে। রহমান জিন বলেঃ বাহ আমার শালি কে তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। ইশ আজ কতো জন যে কান্না করবে।আফটার এল তাদের ক্রাশ আজ অন্য জনের হয়ে যাবে সারাজীবন এর জন্য।

জান্নাত বলেঃ জিজু একটু বেশি হয়ে গেছে না?

সুমি বলেঃ হয়ছে আর ঝগড়া না। চলো এবার।দেরি হয়ে যাবে।

সুমি,জান্নাত, রহমান বাসায় ফিরে আসে। জান্নাত বাসায় প্রবেশ করতেই হইচই শুরু হয়ে গেছে। বউ এসেছে, বউ এসেছে বলে।
জান্নাত কে স্টেজের মধ্যে বসানো হলো।

রহমান এর সাথে ইনতিয়াজ এর মা বাবা ভালো ভাবে কথা বলেছেন। রহমান ও তাদের সম্মান করেছে।তবে রহমান ভুলে ও রিনির সামনে পড়ছে না।

একটু পর, বর এসেছে, বর এসেছে বলে সবাই চিৎকার দিচ্ছে। জান্নাত কে একা রেখে সবাই বর দেখতে গেছে। জান্নাত এর খারাপ লাগছে, মুগ্ধ আসেনি তাই।

জান্নাত বলেঃ এসব ভেবে লাভ নেই।সে হয়তো বেজি তাই আসেনি।হুহ।

সবাই জান্নাত এর দিকে আসছে বর সহ।জান্নাত এতোক্ষণ মাথা নিচু করে বসে ছিলো।জান্নাত চোখ জোড়া তোলে দেখে, যা দেখে নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।

জান্নাত বলেঃ কেমনে সম্ভব?
আমি মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু খাইছি নাকি?
যে ভুল দেখতে পাচ্ছি!!!

জান্নাত আবার বলেঃ মুগ্ধ বর সেজে কেনো?
আমার সাথে আজ কার engagement?

বর এসে জান্নাত এর পাশে বসেছে।জান্নাত বর এর কানে কানে বলেঃ আ,,,,আপনি আজ দেখতে আমার একজন পরিচিত এর মতো লাগছেন?
কিন্তু আমি আপনাকে এর আগে ২,১ বার দেখেছি।আপনি দেখতে তো এমন ছিলেন না?

পাশ ফিরে, কানে কানে বর বলেঃ ঠিক কার মতো লাগছে?

জান্নাত এর পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে। কারণ এর কন্ঠ ও মুগ্ধের।জান্নাত বুঝতে পারছে না,হচ্ছে টা কি।

জান্নাত আবার কানে কানে বলেঃ মু,,,মু,,,মুগ্ধ আ,,,,আপনি?

মুগ্ধ বলেঃ এতো সহজে তো ছাড়চি না।বলেছি না,জান্নাত শুধু আমার। দিন শেষে সে আমারই হবে।আল্লাহ পাক কাউকে ফিরিয়ে দেয় না।তিনি তো দোয়া কবুল করে,তবে সাথে সাথে ফল দেয় না।কিন্তু যখন ফলাফল দেয় তখন সবাই কে তাক লাগিয়ে দেয়।

জান্নাত বলেঃ কেমনে কি?
মনে হচ্ছে, স্বপ্ন দেখছি।

মুগ্ধ বলেঃ চুপ করো যা হচ্ছে তা দেখো।আগে বউ বানিয়ে নি।তারপর সব বুঝিয়ে দিবো।সাথে সব হিসাব ও টোটাল করে নিবো।সুদে আসলে সব ওসোল করবো।
আর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকো।হাসি দাও।না হয় ছবি সুন্দর হবে না। তখন তো আবার আমাকে দোষ দিবে।

জান্নাত যেনো কোন এক গোরের মধ্যে আছে। সবাই ছবি তুলছে।অনেক মেয়ে বলছে, ইস কি কিউট বর?
এতো হ্যান্ডসাম কেন?
তার উপর নাকি ডাক্তার সাহেব?
ইস আমি যদি পারতাম জান্নাত আপুর জায়গায় বসে যেতাম।

জান্নাত এর রাগ হচ্ছে। জান্নাত মনে মনে বলছে, শালী আয় না আয় বস আমার জায়গায়। নে নিয়ে নে আমার জামাই।
গুন্ডি কোথাকার আমার হবু বরের দিকে নজর দিচ্ছিস।চোখ গুলো ওস্টাই দিবো।।।

মুগ্ধ মিটিমিটি হেসে দিচ্ছে মেয়ে দের কথা শুনে। একটু পর,জান্নাত এর মা আংটি নিয়ে আসে।সাথে মুগ্ধের মা ও।

জান্নাত ও মুগ্ধের আংটি বদল হয়ে গেছে। জান্নাত এর মা মুগ্ধের মা কে বলেঃ বেয়াইন, আমার মেয়ে কে আপনার হাতে তোলে দিলাম।একটু দেখে রাখবেন।

মুগ্ধের মা বলেঃ আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আপনার মেয়ে রাজরানি হয়ে থাকবে।আমি তো বউ নিচ্ছি না।আমি একটা মা নিয়ে যাচ্ছি। যে আমারা দুজন বুড়ো বুড়ী কে দেখে রাখবে।

জান্নাত এর বাবা ও মুগ্ধের বাবার হাতে জান্নাত এর হাত দিয়ে বলেঃ আমার কলিজা কে আপনার কাছে দিচ্ছি। কখনো রাগ করে হাত ও তুলিনি। আমার থেকে আমার মেয়ে কে খুব কম দূরে থাকতে দিয়েছি।দেখে রাখবেন আমার পাগল মেয়ে টা কে।

মুগ্ধের বাবা বলেঃআপনি কোন চিন্তা করবেন না। এমন ভালো মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

জান্নাত এর চোখ জোড়া অশ্রুতে টলটল করছে। মুগ্ধ বলেঃ অনেক টাকা দিয়ে মেকাপ করলে।কান্না করলে সব ভেসে যাবে।

জান্নাত কান্না করতে গিয়ে ও কান্না করতে পারে নি।আংটি বদল শেষে সবাই যে যার মতো ছবি তুলছে।জান্নাত ও মুগ্ধ বসে আছে।

রিনি অনেক খুশি হয়েছে।কারণ তার খুব ভালো লাগে মুগ্ধ আঙ্কেল কে।অবশেষে তাদের পরিণতি সুন্দর হয়েছে। তবে একটু মন খারাপ ও।কারণ, ইনতিয়াজ এর সাথে কথা ও দেখা হচ্ছে না অনেক দিন।

তখনই,রিনি দেখে বেশ কিছু মেয়ে, কি জানি দেখছে?

রিনি গিয়ে দেখে ইনতিয়াজ আসছে।আর মেয়ে রা হ্যাংলার মতো তাকিয়ে আছে। রিনি মনে বলছেঃ দরকার কি ছিলো?
এতো গেটআপ নিয়ে আসার?
ওফ মেয়ে গুলো তো এখন পারলে খাই ফেলবে?
আজিব।গুন্ডিরা কি কখনো ছেলে দেখেনি।ফাজিল এর দল।

ইনতিয়াজ প্রবেশ করে, জান্নাত ও মুগ্ধ কে,শুভেচ্ছা জানালো।তারপর, ইনতিয়াজ রানি লোভার কাছে চলে গেল। লোভা বলেঃ তা দেরি করছিস কেন?
আমি মনে করেছি তোই আসবি না.
রিনি ও এসেছে।

ইনতিয়াজ বলেঃ কেনো আসতাম না।তোমরা সবাই আসছো না।
আচ্ছা মা আমি সাইডে আছি।তোমরা গল্প করো।

শাম্মি অনেক কষ্ট করে, রানি লোভার চোখ ফাঁকি দিয়ে হাবিবের কাছে এসেছে। হাবিব ও শাম্মি দাড়িয়ে আছে।
হাবিব বলেঃ আজ মা আমাদের বিষয়ে কথা বলবে।আমার অনেক ভালো লাগছে। তাছাড়া জান্নাত এর জন্য ও অনেক খুশি।

শাম্মি বলেঃ আসলে সত্যি কারে যে যাকে চাই তাকেই পায়।আর আল্লাহ পাক মুগ্ধের দোয়া কবুল করেছে। সত্যি আমি ও অনেক খুশি।

হাবিব লক্ষ্য করছে, একটা ছেলে আড়ালে, আড় চোখে শাম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। হাবিব বারবার ছেলে টা দিক দিয়ে তাকাচ্ছে সে দিকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

হাবিব বলেঃ আচ্ছা শাম্মি এতো সুন্দর করে সেজে আসলে কেন?
অনেকে তো লাইন মারতে চাইবে।

শাম্মি বলেঃ বাহ রে কই বেশি সাজলাম।

এই বলে,শাম্মি তার পার্স এর মধ্যে হাত দেয়। দেখে, ২ টা চকলেট একটা চিরকুট।

হাবিব বলেঃ বাহ আমার কমপেটিটর চলে আসছে।তাই বলছি আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে। এখন কি হবে?

শাম্মি বলেঃ বাহ রে নিজে কি একদম ড্রেস আপ না করে আসছেন নাকি?

হাবিব বলেঃ হয়ছে আর বলতে হবে না।সত্যি হলুদ ড্রেসে তোমাকে অসাধারণ লাগছে। আবার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি কিন্তু।
আচ্ছা চিরকুট এ কি দিয়েছে?

শাম্মি বলেঃ এইটা তো দেখছি একটা নাম্বার আর লিখেছে,
“রাজ্যে সব মায়া আছে এই মুখে।
আপন করতে চাই মায়াবতি কে।
হবে কি আমার???

হাবিব বলেঃ শালা কে পাইলে হবে।জিন্দা কবর দিবো।হুহহহহহহ।
আমার শাম্মির দিকে নজর দেয়। সাহস তো কম না।

শাম্মি বলেঃ হি হি হি,,,,,হি হি।
যাহ।একটু বেশি বলে ফেলছেন।চলেন যায়। কি কথা বলছে আম্মু, আব্বু এবং আপনার আম্মু শুনি গা।

দুজন চলে গেল।

জান্নাত এর মা অনেক খুশি।সবার চোখের আড়ালে, জান্নাত এর মা, সুমি কে ডাক দিলো।

জান্নাত এর মা বলেঃ সুমি এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো ভালো ছেলে এবং পরিবার কই পেলে?

সুমি বলেঃ আন্টি ছেলে টা জান্নাত কে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু জান্নাত আপনাদের পছন্দ কে মূল্যায়র করেছে।তাই ছেলে টার প্রস্তাবে রাজি হয়নি।ছেলে টা জান্নাত বলতে পাগল প্রায়।
তাছাড়া,
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ওনাকে চিনতাম অনেক ভালো মানুষ এবং তাদের পরিবার ও ভালো।
সুমি ইচ্ছে করে, মুগ্ধ যে জিন পরী তা বলেনি
বলার দরকার ই নেই।কারণ মুগ্ধের পরিবার পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত।

জান্নাত এর মা বলেঃ সত্যি আমার মেয়ে প্রতি আমার অহংকার হয়।আমার মেয়ে আমার গর্ব।তাছাড়া, সুমি তুমি ওর সাথে ছায়ার মতো ছিলে।ভালো, খারাপ বুঝাতে। সত্যি আমি খুব লাকি তোমার মতো যে আরেক টা মেয়ে পেয়ে।এমন ভালো বান্ধুবী হয়তো খুঁজে পাওয়া যায় না।

সুমি বলেঃ জান্নাত এর সাথে হয়তো রক্তের সম্পর্ক নেই।তবে আত্মার সম্পর্ক রয়েছে আমাদের। ও আমার বোনের চেয়ে বেশি।

জান্নাত এর মা বলেঃ অনেক ধন্যবাদ মা।আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য।

সুমি বলেঃ হ’য়েছে আন্টি ধন্যবাদ কেনো দিচ্ছেন।আমি আমার বোনের জন্য এমন করেছি।তাছাড়া মা কি কখনো মেয়ে কে ধন্যবাদ দেয়?

জান্নাত এর মা বলেঃ আরে পাগলি।বুকে আই আর ধন্যবাদ দিবো না।

সুমি জান্নাত এর মা কে জড়িয়ে ধরেছে।

সুমি বলেঃ চলেন। ওই দিকে যায়। কার কি লাগে না লাগে দেখি।

রিনি দাঁড়িয়ে আছে জান্নাত এর রুমের বেলকনিতে। রিনির বড্ড রাগ হচ্ছিলো।কারণ মেয়ে গুলো কে না কিছু করতে পারছিলো না কিছু বলতে পারছিলো।

রিনি বলেঃ প্রোগ্রাম বাসায় আয়োজন করে ভালো করেছে।ক্লাবে হলে তো একান্ত কোথাও গিয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে পারতাম না।

হঠাৎ করে, রিনির কোমরে স্পর্শ করছে কেউ।রিনি চমকে উঠে।

রিনি বলেঃ কে?

রিনি পিছনে ফিরে দেখে, ইনতিয়াজ মাহমুদ( প্রিন্স) ।
রিনি বলেঃ স্যার আপনি?
আর স্যার আমার কোমরের মধ্যে হাত দিলেন কেন?

ইনতিয়াজ বলেঃ আমাকে স্যার বলছো কেন?
ভার্সিটি তে বলিও এখানে না?

রিনি বলেঃ তা কি বলবো আপনাকে?
আর আপনি আমার কে হন?

ইনতিয়াজ রিনি টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসে।রিনির চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দিল।
ইনতিয়াজ বলেঃ বাহ রে?
আমি কে জানো না নাকি?

রিনি কি আর বলবে, হঠাৎ ইনতিয়াজ এর এমন কাছে টানা তে শিউরে ওঠেছে রিনি।

রিনি বলেঃ আ,,,,,, আপনি?
আমার স্যার ওকে।আর কিছু না!!!!
চলবে…..

[গল্প কেমন হচ্ছে কমেন্ট করে বলেন প্লিজ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here