রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :45,46

0
1495

রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :45,46
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :45

সামনে মুগ্ধ ও তার পরিবার। তবে তাদের মাঝে একটা পর্দা আছে।হুজুর এসেছে।সামনে রাখা আছে মিষ্টি এবং খেজুর। সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। অতঃপর,

হুজুর সাহেব বলেনঃজান্নাতুল মাওয়া মহুয়া হচ্ছে অমুক এর মেয়ে, ২৫,০০০০০টাকা কাবিনের জন্য ধার্য করা হয়েছে। জনাব মুগ্ধ হচ্ছে অমুকের পুত্র।জান্নাত আপনি যদি এই বিয়ে তে রাজি থাকেন তাহলে কবুল বলেন।।।
বলুন মা কবুল।

জান্নাত বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো।জান্নাত এর মা বলেঃ মা, কবুল বল?
তোর কি কোন সমস্যা হচ্ছে?
তোই কি খুশি না?

এদিকে জান্নাত কবুল বলছে না। মুগ্ধের তো চিন্তা শুরু হয়ে গেছে।
মুগ্ধ মনে মনে বলছেঃ হায় আল্লাহ, এই মেয়ে কি তাহলে বিয়ে করবে না?
নাকি বিয়ে করার যে কথা দিয়েছে তা ভুলে গেছে?
হুহ কি হবে আমার?

মুগ্ধের বুকে ধুকপুক করছে। কি হতে চলছে!!!

জান্নাত এর বাবা পাশ থেকে বলেঃ আমার মামুনির কি হয়েছে?
মা,কবুল বল।সবাই অপেক্ষা করছে তো!!!

জান্নাত বলেঃ বাবা,তোমাকে ছেড়ে কি ভাবে থাকবো?
পারবে তো তুমি ও মা আমাকে ছেড়ে থাকতে?

জান্নাত এর বাবা বলেঃ মা এটা প্রকৃতির নিয়ম। মেয়ে যতই আদরের হুক না কেনো।
মেয়ে কে বিদায় দিতে হয় মা বাবার বুকে পাথর চাপা দিয়ে।

জান্নাত এর মা বলেঃ আমরা চাই তোই সুখে থাক।তাছাড়া, তোর যখন ইচ্ছে হবে চলে আসিস।

মুগ্ধের মা বলেঃ মা,তোমাকে আমার মেয়ের মতো করে রাখবো।আমার একটা মাত্র ছেলে। মেয়ে নেই।মেয়ের সাধ তোমাকে দিয়ে মিটাবো।

জান্নাতের চোখে অশ্রু। একটু পর গড়িয়ে পড়বে গাল বেয়ে। সুমি বলেঃ জান্নাত, এবার তো কবুল বল?

রহমান বলেঃ শালি সাহেবা কি মতামত বদলে ফেলেছে নাকি?

রিনি বলেঃ খালামনি আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি?

তখনই, জান্নাত বলেঃ কবুল।

সবাই বলে উঠেঃ আলহামদুলিল্লাহ।

হুজুর বলেঃ আবার বলেন মা,আলহামদুলিল্লাহ কবুল?

জান্নাত পরপর আরও ২ বার আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলে। মুগ্ধ তো এক মিনিট সময় ও নষ্ট করে নি।হজুর বলার পর পরই আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলে দেয়।

সবাই কে খেজুর খাওয়ানো হলো। তারপর সবাই কে মিষ্টি মুখ করানো হলো।
মুগ্ধের মা বলেঃ তাহলে সবার সাথে রাতে দেখা হবে। আমরা আসি।

সবাই চলে গেল। জান্নাত প্রচুর কান্না করছে। রিনি বলেঃ এতো কান্না করছেন কেনো?
আপনি যে হারে কান্না করছেন।রাতে তো বিয়ের সাজে আপনার কান্নার জলে সমুদ্র হয়ে যাবে।আর আমরা সবাই এতে হাবুডুবু খাবু।

জান্নাত এবার ফিফ করে হেসে দেয়। রহমান বলেঃ জান্নাত আমি মনে করেছি, তুমি এই বুঝি বলবে।আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব না। আমি এই বিয়ে তে রাজি না।হা হা।

সুমি বলেঃবাহ রে আমি জানতাম এমন কিছু হবে না। জান্নাত একটু সময় নিচ্ছিলো আরকি।বিয়ে তো ৩,৪ দিনের বাঁধন না সারাজীবন এর তাই শেষ মূহুর্তে এসে ও একটু চিন্তা করছিলো।

জান্নাত বলেঃ সুমি তোই বুঝতে পারলি।হুহ।

শাম্মি বলেঃ হয়েছে। এই বিষয় বন্ধ করো।সবাই মিলে রাতের জন্য রেডি হয়ে যাই। আগে জান্নাত কে রেডি করি।তারপর এক জন এক জন করে সবাই।

রিনি বলেঃ ঠিক বলেছো।

শাম্মি, সুমি,রিনি নিজ হাতে সাজিয়ে দিচ্ছে জান্নাত কে। জান্নাত এর প্রিয় রঙের মধ্যে একটা হলো লাল রঙ।সবাই বলে, এই রঙে নাকি জান্নাত কে বেশ লাগে।
তবে,যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো,সে আকাশি রঙের লেহেঙ্গা কিনে ছিলো।কিন্তু, মুগ্ধ ভালো ভাবে জানে জান্নাত এর পছন্দ। তাই ইমার্জেন্সি অর্ডার দিয়েছে।লাল রঙের লেহেঙ্গা। তাছাড়া, ওই ছেলের পক্ষ থেকে যা দিয়েছে সব কিছু মুগ্ধ নিজে নিয়ে গিয়ে গরিবদের দিয়ে দিয়েছে। জান্নাত এতে বাঁধা দেয় নি। জান্নাত ও চাই না সেই ছেলের স্মৃতি রাখতে।

জান্নাত কে লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে।
জান্নাত এর শাশুড়ী অনেক গুলো গহনা দিয়ে গেছে। ওনার আদেশ সব কিছু যেনো জান্নাত পড়ে। জান্নাত এর গলা, হাত,কপালে টিকলি। একদম জান্নাত এর গায়ে গহনা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। জান্নাত একদম রেডি।
আস্তে আস্তে বাকিরা রেডি হয়ে গেছে।

জান্নাত এর মা রুমে প্রবেশ করে। জান্নাত এর মা বলেঃ মাশাল্লাহ আমার মেয়ে কে একদম রাজকন্যার মতো লাগছে। নজর যেনো না লাগে।

জান্নাত একটা হাসি দেয়। মাকে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত এর চিৎকার করে কান্না আসতে চাইছে তাও সামলে নিলো।জান্নাত এর মা জান্নাত এর কপালে একটা চুমু দেয়।

জান্নাত এর বাবা রুমে আসে। জান্নাত এর বাবা বলেঃ আমার রাজকুমারী তাহলে, স্বপ্নের রাজকুমার এর সাথে চলে যাবে?

জান্নাত বলেঃ না যাবো না।তোমার কাছে রেখে দাও।

জান্নাত এর বাবা বলেঃ পাগলি মেয়ে আমার। আমি নিজ হাতে, রাজকুমার এর হাতে তোলে দিবো।
জান্নাত, বাবার গালে একটা চুমু দেয়। জান্নাত এর বাবা, জান্নাত এর মাথা তে হাত বুলিয়ে দেয়।

রাতে সব মেহমান চলে এসেছে। মুগ্ধ ও জান্নাত এর অনেক গুলো ছবি তোলা হয়েছে। তাদের কিছু কাপাল পিক ও তোলা হয়েছে।
এখন জান্নাত এর বিদায় এর বেলা।জান্নাত এর হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জান্নাত তার বড় ভাইয়ের গলা জড়িয়ে কান্না করছে। কিন্তু তার ভাই চোখ জোড়া লাল করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার প্রিয় বোন কে গাড়ি তে উঠিয়ে দেয়। জান্নাত এর মা কান্না করছে।

জান্নাত ও কান্না করছে। সুমি ও চোখ, মুখ লাল করে ফেলেছে। শাম্মি, রিনি দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। কিছু সময়ের মধ্যে হাসি খুশি যেনো হারিয়ে গেছে।

জান্নাত বসে আছে মুগ্ধের পাশে। মুগ্ধ গাড়ি চালাচ্ছে। বাকিরা পিছনের গাড়ি তে আছে।

মুগ্ধ বলেঃ তা মহারানী এই ভাবে কান্না করছেন কেন?
আমি কি আপনাকে খেয়ে ফেলবো নাকি?
তোমার সাথে কিছু হিসাব মেটানো বাকী আছে।

জান্নাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মুগ্ধের দিকে। জান্নাত বলেঃ কি করলাম?

মুগ্ধ বলেঃ আগে কান্না বন্ধ করো?
এতো কান্না করতে হবে নাকি?
তোমার মেকাপ সব চোখের জল এ ভেসে যাচ্ছে। বাসর ঘরে একটু মন ভরে তো দেখতে পার বো না।

জান্নাত হাসি দেয়। জান্নাত বলেঃ এবার বলেন।

মুগ্ধ বলেঃ কবুল বলতে দেরি করেছিলে কেনো?
জানো কত টা ভয় পেয়ে গেছিলাম।মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছি।হুহ।

কথা বলতে বলতে মুগ্ধ ও জান্নাত বাসায় পৌঁছে যায়। বাসার সবাই পিছনে রয়ে গেছে। মুগ্ধ, জান্নাত কে কোলে তুলে নেই। আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে গেল তাদের রুমের দিকে। জান্নাত দেখতে পেল, রুম জোড়ে গোলাপ ফুল এ ভর্তি। টেবিলের কোণায় রাখা আছে, রজনীগন্ধা ও শিউলি ফুল। মুগ্ধ ফুলের পাপড়ি ফ্লোরে ও বিছিয়ে দিয়েছে।

জান্নাত কে আস্তে করে বিছানা তে বসিয়ে দেয়। ততক্ষণে বাসার সবাই চলে এসেছে। সবাই জান্নাত কে মেতে উঠেছে। দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার দখল শেষ করে রাত ১ টার সময় জান্নাত ফ্রী হলো।

জান্নাত বসে আছে বিছানার ঠিক মাঝখানে। লম্বা করে ঘুমটা দিয়ে। দরজা তে কারো আগমন এর শব্দ শুনা যাচ্ছে। জান্নাত এর বুকের মধ্যে ধুকধুক শুরু হয়ে গেছে।

মুগ্ধ এসেছে রুমে। মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত,

এটা বলতেই, জান্নাত বিছানা থেকে নেমে সালাম করে। তারপর,
মুগ্ধ বলেঃ ওজু করে নাও।নামাজ পড়তে হবে।

জান্নাত ওজু করে নেই।
দুজনেই নামাজ পড়ে নেই।
মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে নিজের করে পেলাম তোমাকে।

জান্নাত বলেঃ শুকরিয়া। আমি ও আলহামদুলিল্লাহ অনেক খুশি।

মুগ্ধ আস্তে করে দু-হাতে জান্নাত এর মুখ খানি স্পর্শ করে।
মুগ্ধ বলেঃ
” হারিয়ে যেতে চাই,
তোমার এই চোখের গভীরে,
হারিয়ে যেতে চাই
তোমার এই মায়াবি হাসির মাঝে।
হারিয়ে যেতে চাই,
তোমার হাতে হাত রেখে,
পাড়ি দিতে চাই,
কোন এক অজানা পথে।
[কবিতাঃ জান্নাতুল মাওয়া মহুয়া]

জান্নাত বলেঃ আজ থেকে জান্নাত সম্পূর্ণ আপনার।হারিয়ে যেতে নেই কোন বাঁধা। আমি ও হারিয়ে যেতে চাই আপনার এই ভালোবাসার রাজ্যে।

মুগ্ধ আলতো করে একটা চুমু দেয়।
দুজনের জীবন এর নতুন এক সূচনা ঘটেছে। যে জীবন এ আছে শুধু ভালোবাসা। আছে একে অন্যের প্রতি সম্মান,আছে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস।

অন্য দিকে, রিনির মনে ও অনেক খুশি। তাদের সম্পর্ক ও পবিত্র নাম পাবে।রিনির আজ খুশী তে নাচ তে মন চাইছে। রিনি তাড়াতাড়ি ঐশী কে কল দেয়।
ঐশী বলেঃ মনে পড়ছে তাহলে?

রিনি বলেঃ কি বলিস?
তোরে তো সবসময় মনে পড়ে।

ঐশী বলেঃ মাহমুদ স্যার যে আশে পাশে ছিরো।তাই আমাকে ভুলে গেছস।জানি সব।

রিনি বলেঃ যাহ বেশি বলস।

ঐশী বলেঃ এবার বল,জান্নাত খালামনির বিয়ে কেমন কাটলো?
বিসিএস ক্যাডার দেখতে কেমন?
মুগ্ধ আঙ্কেল কি আসছিলো নাকি?

রিনি বলেঃ আরে তোরে তো বলিনি। বিয়ে হয়েছে মুগ্ধ আঙ্কেল এর সাথে। বেশ সানদার বিয়ে হয়েছে। ওফ।

ঐশী বলেঃ অনেক খুশি লাগছে।মেরি জান এবার বলো তোমার টা কখন?

রিনি বলেঃ খুব শীঘ্রই। গুড নিউজ পাবি।

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলছে তাদের আলাপ।জান্নাত এর ঘর থেকে মেহমানরা বিদায় জানিয়ে চলে গেল। রিনি রা ও চলে গেল। যার ঘরে সে সে।

সকালের আলোতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো জান্নাত এর। জান্নাত নিজেকে আবিষ্কার করে মুগ্ধের বুকে। জান্নাত একটা মিষ্টি হাসি দেয়।
জান্নাত একটু নড়াচড়া করার জন্য মুগ্ধের ঘুম ও ভেঙ্গে গেলো। মুগ্ধ সাথে জান্নাত এর কপালে একটা চুমু দেয়।

জান্নাত বলেঃ এটা কেনো?

মুগ্ধ বলেঃ কেউ একজন বলেছে,সকাল বেলা বউ কে চুমু দিলে সারাদিন ভালো ভাবে যায়।

জান্নাত বলেঃ ওমা।তাহলে, আমার দিন ও ভালো যায় মতো আমি ও একটা চুমু দিবো আমার বর কে।

দুজন ই খুব সুখী আছে।তাদের ভালোবাসার যেনো কোন কমতি নেই। জান্নাত এর বিয়ে হয়েছে ৩ দিন হলো।আর, জান্নাত বসে আছে মুগ্ধের জন্য। আজ তাদের বেড়াতে যাওয়ার কথা এক সাথে।
হঠাৎ নাকি,চেম্বারে ইমার্জেন্সি রোগী দেখতে হচ্ছে। তাই নাকি আসতে দেরি হচ্ছে । জান্নাত বসে বসে কি করবে চিন্তা করছে। এমন সময় রিনির কথা মনে পড়ে। তাই,
জান্নাত কল দেয় কামাল কে।তাছাড়া, আজ রিনির ব্যাপারে ও বলবে।তাদের সম্পর্কের পবিত্র একটা পরিণতি হলে বেশ ভালো হবে।

জান্নাত বলেঃ হ্যালো।

কামার বলেঃ কি রে?
কি খবর তোর?
বিয়ে করে ভুলে গেলি নাকি?

জান্নাত বলেঃ

চলবে….

রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :46
************
কামার বলেঃ কি রে?
কি খবর তোর?
বিয়ে করে ভুলে গেলি নাকি?

জান্নাত বলেঃআরে ভুলতে যাবো কেনো!
তোদের আবার ভুলে যাওয়া যায় নাকি।
কি করিস?

কামাল বলেঃ রিনির বাগানে একটু কাজ করছিলাম।রিনির বাগানে হরেক রকমের ফুল গাছ আছে। অনেক ফুল ও ফুটেছে।

জান্নাত বলেঃ বাহ এতো ভালো কাজ। একটা কথা ছিলো।

কামাল বলেঃ বল,কি বলবি?

জান্নাত বলেঃ আসলে,আমি রিনির বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে চাই ছিলাম।

কামাল বলেঃ ভালো পাত্র হলে,দিয়ে দিবো।এতে আর কি।
মেয়ে তো সারাজীবনের জন্য চাইলে ও রেখে দেয়া যায় না।

জান্নাত বলেঃ আসলে,রিনি ও প্রিন্স কে ভালোবাসে।আমার মনে হয়, তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া টা ঠিক হবে।
কি বলিস?

কামাল বলেঃ মাশাল্লাহ, এটা তো ভালো খবর।আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়। তবে আমার দ্বিমত নেই। তাছাড়া, রাবেয়া ও রাজি থাকবে।

জান্নাত বলেঃ আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা রাখছি।

মুগ্ধ এসে পড়েছে। জান্নাত ও মুগ্ধ ঘুরতে চলে গেল। সুমি অনেক্ক্ষণ ধরে কেক বানানোর চেষ্টা করছে। সুমির রান্নার হাত তেমন ভালো না।শুধু চা টা বেশ ভালো ভাবে বানাতে পারে।রহমান আসে রান্না ঘরে।

রহমান বলেঃ রান্না ঘরে কি তোফান আসছিলো নাকি?
একি অবস্থা হায় আল্লাহ। আর নিজের কি হাল বানালে?

সুমি বলেঃ তোফান কেন আসবে।কই ততো বেশি এলোমেলো হয়নি।আমি কেক বানানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।

রহমান বলেঃ আহা রে আমার বউ টা।

রহমান সুমির পিছনে দাড়িয়ে আছে। রহমান আস্তে করে সুমির হাতের উপর নিজের হাত রাখে।দুজন মিলে ময়দা বেকিং করছে।তখনই, সুমির মনে দুষ্টামি খেলে গেল।

সুমি মনে মনে বলেঃ আমার মুখে তো ময়দা পড়ে নিজে কে কেক মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার উনি কতো সুন্দর করে আমার হাত ধরে কাজ করে যাচ্ছে। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।

এই বলে, সুমি কিছু ময়দা রহমানের গালে লাগিয়ে দেয়। রহমান বলেঃ বাহ রে এটা কি হলো।
রহমান ও আরও কিছু ময়দা নিয়ে সুমির দিকে এগিয়ে আসছে। সুমি ভু দৌড় দিল। পিছু নিলো রহমান ও।রান্না ঘরে ভুলে সুমি তেল ফেলে ছিলো।সেই তেলের মধ্যে সুমি পা পিছলা খেয়ে পড়ে যাচ্ছি লো।সাথে সাথে রহমান ধরে টান দেয়। আস্তে করে সুমির গালে সব ময়দা লাগিয়ে দেয়। কিছু টা সুমির কোমরে।

সুমি বলেঃ আমি তাইতো একদম শাড়ি পড়তে চাই না।শাড়ী একটা ঝামেলার জিনিস হুহ।

রহমান বলেঃ শাড়ী আসলেই ঝামেলার।তবে বিয়ের পর, শাড়ী পড়ার এবং খোলাখুলির ঝামেলাতে পড়তে হয়।

সুমি বলেঃ অসভ্য। চলেন বাকী কাজটা সম্পূর্ণ করি।

রিনি ছাদের এক কোণায় বসে আছে। এই জায়গায় ইনতিয়াজ আসে। তাদের দেখা হয় প্রতিদিন কথা ও হয়।ইনতিয়াজ এসেছে।

ইনতিয়াজ বলেঃ কেমন আছো?

রিনি বলেঃ হুম ভালো।

ইনতিয়াজ বলেঃ মন খারাপ নাকি?

রিনি বলেঃ একটু চিন্তিত।

ইনতিয়াজ বলেঃ এতো চিন্তা করে কি হবে বলো তো?
শুধু শুধু চোখের নিচে কালো হয়ে যাবে।তাছাড়া, চিন্তা এমন এক জিনিস চাইলেই বন্ধ করা যায় না।তাই চিন্তা না করাই ভালো।
আর জানো তো,এই চিন্তা না একদম রেলগাড়ীর মতো। ইঞ্জিন বন্ধ করলে ও রেলগাড়ী চলতেই থাকে। তেমনই চিন্তা একবার করা শুরু করলেই চলতেই থাকবে।

রিনি বলেঃ আসলেই, যাক আর চিন্তা করতাম না।তা আজ কি আনলেন?
আমার জন্য ফুল কই?

ইনতিয়াজ বলেঃ ফুল তো আনিনি এখন কি হবে?

রিনি বলেঃ তাহলে কথা ই নাই।চলে যান এব্বে।

ইনতিয়াজ বলেঃ বাব্বাহ মেয়ে দেখি অভিমান ও করে।তোমার জন্য ফুল আনিনি তা ঠিক। একদম ফুল গাছ নিয়ে এসেছি।

রিনি বলেঃ সত্যি কই।

ইনতিয়াজ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। রিনি অনেক খুশি হয়ে গেছে।
এভাবে দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে সবাই যার যার জীবন নিয়ে খুশি।

অনেক দিন পর, সবাই আবার একত্রিত হতে চলছে। কেননা আজ শাম্মি ও হাবিবের গায়ে হলুদ।

হাবিব অনেক খুশি। আজ তার গায়ে হলুদ। জান্নাত, মুগ্ধ, রাবেয়া, কামাল,অর্ক,লাবু,রাহাত, রেশমি,রিনি,সুমি,রহমান সবাই উপস্থিত হয়েছে।ইনতিয়াজ আসে নি।কারণ, তাদের রাজ্যে শাম্মির গায়ে হলুদ হচ্ছে। অনেক কাজ।অবশ্য কাজ হওয়ার ই কথা। রাজা ও রানী লোভার একমাত্র কণ্যা এবং প্রিন্স এর এক মাত্র বোন বলে কথা।

জান্নাত বলেঃ আজ আমরা হাবিব কে হলুদের মাঝে নাকানি চুবানি খাওয়াবো।হি হিিিি।

সুমি বলেঃ আবে বেচারা কে এতো কষ্ট কেন দিবি।

রহমান বলেঃ শাদি কা লাড্ডু যে কত মজা তা বুঝতে হবে তো তার।হা হা হা।

হাবিবের মা বলেঃ তোমাদের যা মন চাই করো।আমার পক্ষ থেকে কোন বাঁধা নিষেধ নেই।তোমরা সবাই খুশি হলে আমি খুশি।

রিনি বলেঃ তাহলে আজ পার্টি হবে।হিপ হিপ হোররে।

রাতে হাবিবের হলুদ লাগিয়ে অবস্থা কাহিল করে দেয়। যে যার মতো ইচ্ছে সুখে হলুদ লাগিয়ে দেয়।

মুগ্ধ বলেঃ দেখি দেখি,হাবিব এদিকে আসো বলে।

পালিয়ে গেলো, হাবিব ও মুগ্ধ । আরও কিছুক্ষণ থাকলে,হাবিব কে হলুদ এর ভিতর চুবিয়ে দিতো সবাই।

মেয়েরা সবাই বসে আছে। ছেলে রা অন্য দিকে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।মেয়েরা বলছে,
কাল তাদের কি জানি প্লেন আছে। তবে,এই প্লেন টা কাজ করলে,হাবিব এর কাছ থেকে টাকা বের করতে পারবে।তবে,যদি শাম্মি সহযোগিতা করে আরকি।

রিনি বলেঃ আমি শাম্মি কে কাল বউ সাজানোর সময় বলে দিবো।কাজ হবে।ইনশাআল্লাহ। কালকে হাবিব মামা কে ফতুর করে ছাড়বো। হা হা হা……হা।

সবাই আড্ডা দিচ্ছে যে যার মতো। খাওয়া, দাওয়া হচ্ছে প্রচুর। এভাবে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। রাত গভীর হতেই সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো। হাবিবের অবস্থা একদম কাহিল।বেচারা অনেক ক্লান্ত। তাছাড়া পাশের বাসার পিচ্চি ও কম প্যারা দেয় নি।

হাবিব ফ্রেশ হয়ে বিছানার কাছে চলে গেল। হাবিব বিছানা তে গাঁ এলিয়ে দেয়। হাবিব গাঁ এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম তার চোখে এসে পড়েছে। হাবিব গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গেছে।

অন্য দিকে, শাম্মি আজ অনেক খুশি। তার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে। আজ তার গায়ে হলুদ।জীন রাজ্যের সব জায়গায় ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। জীনদেন ফুল এর সুঘ্রাণ অনেক পছন্দ।

শাম্মির অনুষ্ঠানের জন্য হরেক রকম ফুল এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শাম্মি কে তার মা রানী লোভা নিজ হাতে সাজিয়ে দিচ্ছে। শাম্মির পরনে কাঁচা হলদে শাড়ি। বাঙালি রমনীদের মতন করে শাড়ী পড়িয়েছে শাম্মিকে।হাতে হরেক রকম ফুল দিয়ে বানানো হাতের চুড়ি। সাথে আছে হাত ভর্তি কাচের চুড়ি। শাম্মির চুল গুলো বিনি করে সামনে এক পাশে এনে দিয়েছে। চুলের মধ্যে ফুল গুজিয়ে দিছে।মাথাতে হালকা হলুদ রঙের একটা ওড়না,
দিয়ে হালকা করে গুমটা দিয়েছে শাম্মি কে।সাথে
গলায় ও কানে সবুজ রঙের হালকা জুয়েলারি।

শাম্মি কে সাজানো শেষ। শাম্মির মা তার সামনে মেয়ে কে দাঁড়িয়ে রাখে।রানী লোভা দু চোখ ভরে মেয়ে কে দেখছে।

রানী লোভা বলেঃ আমার মেয়ে কে এতো টা সুন্দর লাগছে যে বলে বুঝাতে পারবো না।শাম্মি তোর জন্য তারিফ করতে শব্দের সংকট হচ্ছে। আমার মেয়ে টার যেনো নজর না লাগে।

শাম্মি বলেঃ মা,তোমার জন্য আমি ই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। মা আমি একটা কথা বলি?
রাগ করবে না তো?

রানী লোভা বলেঃ আরে রাগ কেনো করবো।আমার মেয়ের উপর কি আমি রাগ করতে পারি নাকি।বল কি কথা?

শাম্মি বলেঃ মা,তোমার রিনি কে কেমন লাগে?

রানী লোভা বলেঃ সত্যি করে বলবো?

শাম্মি বলেঃ সত্যি টাই শুনতে চাই।

রানী লোভা বলেঃ
যখন প্রিন্স কে শাস্তি দেয়া হয়।তখন আমার অনেক রাগ হয়ে ছিলো রিনির উপর। ইচ্ছে করছিলো রিনি কে আমি মেরে ফেলবো।কিন্তু পরে,তোর আর তোর বাবা আমাকে যে কথা গুলো বলেছিলি।আমি নিজের ভুল বুঝতে পারি।
আমার ছেলের ই দোষ ছিলো।তাই সে শাস্তি পেয়েছে।

শাম্মি বলেঃ তাহলে মা এখন কেমন লাগে?

রানী লোভা বলেঃ অসম্ভব ভালো ও মিষ্টি মেয়ে। সবার খেয়াল রাখে।আমার ছেলের পছন্দ আছে। খাঁটি হীরা হচ্ছে রিনি।আমার ছেলে এই রাজ্যের জীন অপসরী ফেলে এমনি এমনি তো আর ওর জন্য পাগল হয়নি।

শাম্মি বলেঃ তাহলে মা,কাল আমার বিদায় এর আগে তাদের দুজন কে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই আমি।
তুমি কি সাহায্য করবে?
ভাই কে একদম বলা যাবে না।

রানী লোভা বলেঃ আমার কোন আপত্তি নেই। তাছাড়া, রাজা রশীদ এর আপত্তি থাকবে না।
আমি সাহায্য করবো।এবার চল তোর অনুষ্ঠানের জন্য দেরি হচ্ছে।

শাম্মি কে জীন রাজ্যের সবাই দেখতে এসেছে। অবশ্য দেখতে আসারই কথা জীন রাজকন্যার অনুষ্ঠান বলে কথা। শাম্মি কে একে একে সবাই হলুদ লাগিয়ে দেয়। শাম্মি অনেক আনন্দ করেছে।

শাম্মির অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে ফজরের আযান এর আগে। শাম্মি তাড়াতাড়ি হাবিবের রুমে চলে গেল চোখের পলকে।
শাম্মি হাবিবের গায়ে হাত স্পর্শ করতেই,হাবিব জেগে ওঠে।

হাবিব বলেঃ বাহ,আমার হানি কে তো ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।ওফ।
মাশাল্লাহ।

শাম্মি বলেঃ তাই।তোমাকে দেখানোর জন্য চলে আসলাম।
এখন উঠ ফ্রেশ হয়ে যাও।দুজন মিলে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবো।

হাবিব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেছে। শাম্মি ও
ফ্রেশ হয়ে গেছে।দুজন মিলে তাহাজ্জুদ নামাজ টা পড়ে নেই।

শাম্মি বলেঃ আজ অনেক খুশি আমি। কাল থেকে এই ঘরে আমরা দুজন থাকবো।

হাবিব বলেঃ ইনশাআল্লাহ।

শাম্মি নামাজ পড়ে নিজের রাজ্যে ফিরে আসে। একটু পর, ফজরের আযান দেয়। শাম্মি নামাজ পড়ে আল্লাহ পাক এর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো। অন্য দিকে, হাবিব ও ফজরের নামাজ পড়ে আল্লাহ পাক এর দরবারে শুকরিয়া জানালো।হাবিব নামাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লো।

শাম্মি নামাজ শেষ করে নিজের রুমে বসে আছে। প্রিন্স প্রবেশ করে।

শাম্মি বলেঃ ভাই নামাজ পড়া হয়েছে?

প্রিন্স বলেঃ হা।

দুজন চুপচাপ হয়ে গেছে।
প্রিন্স বলেঃ তাহলে কাল আমাকে একা করে চলে যাবি?
মিস করবি আমাকে?
তোকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া খুব মিস করবো।
তোর দুষ্টামি গুলো আমার আরও বেশি মনে পড়বে।তোই জন্য ঘরটা আলোকিত থাকতো। তোই সবাই রেখে থাকতে পারবি তো?

শাম্মি বলেঃ ভাই এবাবে বলিও না।তুমি এমন বললে আমি কেমনে থাকতে পারবো।
ভাই তোমার সাথে যদি কোন খারাপ আচরণ করে থাকি মাপ করে দিও।
ভাই তুমি আমার কাছের বন্ধু ছিলে।আমার ও তোমাদের ছাড়া ভালো লাগবে না।

প্রিন্স বলেঃআমার বোন যে কখন এতো বড় হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।
আমার বোনের কাছে অন্যের ঘর আলোকিত করার দায়িত্ব এসে পড়েছে। আমার সাথে এমন কিছু করস নি যে তোর মাপ চাইতে হবে।

শাম্মি বলেঃ ভাই তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাই!

সাথে সাথে প্রিন্স শাম্মি কে জড়িয়ে ধরে। দুজন এর চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।এই যেনো ভাই বোনের কান্নার উৎসব।

প্রিন্স বলেঃ একটু রেস্ট করে নে।সব সময় হাসি মুখে রাখবি।হাবিব যদি কখনো বকা দেয় আমাকে বিচার দিবি।

শাম্মির চোখে অশ্রু, মুখে হাসি।
শাম্মি বলেঃ আচ্ছা ভাই ?

সকাল থেকে আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। শাম্মি ও হাবিব কে জীন রাজ্যের মধ্যে একটা বড় হজুর এর কাছ থেকে বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে। হাবিব কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়।

শাম্মির জন্য দু জায়গায় বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। ১,তাদের জীন রাজ্যে
২,পৃথিবীতে।

কারণ, পৃথিবীর মানুষদের সামনে শাম্মি একজন সাধারণ মানুষ। তাই দু জায়গায় আয়োজন করেছে।

শাম্মি কে শাম্মির শাশুড়ী একটা অনুরোধ করে ছিলো।
তার অনুরোধ ছিলো,তিনি নিজ হাতে নিজের পুত্র বধু কে তৈরি করবেন।শাম্মির মা বাবা বারণ করেন নি।
তাই শাম্মি এখন বসে আছে শাশুড়ির রুমে। অবশ্য, সাথে রিনি,সুমি,জান্নাত ও থাকবে।হাবিবের মা কে সাহায্য করতে। শাম্মি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। কিন্তু,
হঠাৎ করে,

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here