রিস্টার্ট,পার্ট_১৫

0
729

#রিস্টার্ট,পার্ট_১৫
#পিকলি_পিকু

[নিম্নের লেখাগুলো সম্পূর্ণ রূপে কাল্পনিক। বাস্তবে এর সাথে কোনো মিল নেই। গল্পকে গল্প হিসেবে নেওয়ার জন্য অনুরোধ রইলো।]

ম্যাগনেফিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অন্যতম বিশেষ স্কুল। এখানে পড়তে হলে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হতে হয় বা পড়ালেখায় হতে হয় অসাধারণ।

এ লেভেলের ক্লাস শুরু হয়েছিল। জাহিদ কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে ওর ক্লাসে ঢুকতে যাচ্ছে, তখনই ওকে ধাক্কা দেয় সানি। সেই ধাক্কায় জাহিদ ভারসাম্য না সামলাতে পেরে মাটিতে পড়ে যায়। জাহিদ মাটিতে পড়ে শুয়ে আছে। সেই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল সানি, আজফার, ভিরাজ আর অর্ঘ্যদীপ। এরপর আশেপাশের সবাই হাসতে থাকে। মাটি থেকে উঠে দাঁড়াতে ওকে কেউ সাহায্য করছে না। নিজের চশমা ঠিক করে জাহিদ দাঁড়াতে যাবে তখনই দেখল একটা হাত ওর দিকে বাড়ানো। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল সে সেই মানুষটি কে।

” হাই! আমি প্রিয়ম। নতুন এসেছি। কী হলো! উঠে দাঁড়াও।”

জাহিদ ওর হাতটা ধরে উঠে দাঁড়ালো। সানি সহ বাকিরা দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের।

” তোমার নাম কী?”

“লুজার। পুরো নাম, লুজার দি গ্রেট!” সানি এসে বলল। প্রিয়ম হেসে সানির দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার নাম তো জিজ্ঞেস করিনি। জিজ্ঞেস করেছি ওকে, তুমি তোমার নাম বলতে যাচ্ছ কেন?”

আশেপাশের সবাই হা হা করে হেসে উঠল। বিব্রত সানি জাহিদের কাঁধে হাত রেখে চাপ দিয়ে বলল, “তোর নাম বল। ”
জাহিদ ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় চশমা ঠিক করে বলল, ” লুজার। পুরো নাম লুজার দি গ্রেট। ” এবার সানি হেসে প্রিয়মের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, ” হাই প্রিয়ম, আমি সানি। শাহনেওয়াজ খান সানি। পাওয়ার এন্ড এনার্জি মিনিস্টার খান আমার দাদাজান। ”

প্রিয়ম ওর হাত ধরে বলে, “নাইস টু মিট ইউ।” এরপরই ওর হাত ধরে টান দিয়ে ওকে এক আছাড় মারে। সানি মাটিতে পড়া অবস্থায় নিজের ডান কাঁধ ধরে কাতরাতে থাকে। প্রিয়ম মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। জাহিদ প্রিয়মের পেছনে দৌঁড়াতে থাকে। ভিরাজ গিয়ে সানিকে ধরে আর আজফার আর অর্ঘ্যদীপ প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে থাকে। আজফারের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে , ” ইম্প্রেসিভ!” অর্ঘ্যদীপ তার চশমায় হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে, “শি হ্যাস আ স্পার্ক !”

” এই যে ! এই যে! তুমি এমন করলে কেন?” জাহিদ প্রিয়মের পেছনে দৌঁড়াচ্ছে। প্রিয়ম থেমে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

– ও তোমাকে ফেলে দিল কেন?
– ওরা এমনই। ওরা এই স্কুলের রাজা। তুমি যাকে ফেলেছ ওর দাদা মন্ত্রী।
– জানি। ও বলল তো। কিন্তু ও অন্যায় করেছে।
– তোমার ওকে মারা উচিত হয়নি। আর ওকে যে ধরল ও হলো ইন্ডিয়ান ডিপ্লোমেট ভিরেন্দ্র আহলুওয়ালিয়ার একমাত্র ছেলে ভিরাজ আহলুওয়ালিয়া।
– আলুওয়ালা!
– না আহলুওয়ালিয়া!
– আমার কী?
– আমার কী বলো না। আর ঐ আজফার আর অর্ঘ্যদীপ ও বড় বাবার ছেলে।
– জানি। অর্ঘ্যদীপ চৌধুরীর দাদাও ফর্মার মিনিস্টার রহমত চৌধুরী আর নানা মৃদুল সেন। ওরা সেক্যুলার সেক্যুলার গান গায়। আর আজফার তালুকদারদের টাকার খনি। এইসব আমি খবর নিয়েই এসেছি।
– তুমি জানো!!! তোমার তো খবর আছে।
– এই দেখ! যার জন্য করলাম চুরি, সেই বলে চোর! বাই দ্য ওয়ে, তোমার নাম কী?
– জা, জাহিদ।
– তুমি তোতলা?
– না।
– তোতলাচ্ছ কেন?
– এমনি।
– পুরো নাম কী?
– জাহিদ আহমেদ।
– ডাকনাম?
– বলব না।
– এ মা! কেন?
– সবাই মজা করে।
– মজা করার কী আছে? বলো! আমি মজা করি না। আমার নাম নিয়েও মজা হয়।
– শুদ্ধ।
– শুদ্ধ!!! এত সুন্দর নাম! মানুষ মজা করবে কেন?
– ওরা আমায় শূন্য ডাকে। সেই থেকে ডাবল জিরো, তার থেকে লুজার।
– তুমিও কী স্কলারশিপ?
– হুম।
– কত পার্সেন্ট?
– হান্ড্রেড। ফুল স্কলারশিপ।
– ব্রিলিয়ান্ট! তো লুজার কেন?
– আমি যে গরীব।
– ধুর! এসব বাদ আজ থেকে। সোজা হয়ে দাঁড়াও। এখন আমি এসেছি। আমিও স্কলারশিপ। তবে এইটি পার্সেন্ট! তোমাকে কেউ কিছু বলবে না। আমরা দুজন একসাথে থাকব। তাহলে ঐ গুন্ডা গুলো আমাদের কিছু করতে পারবে না। তাই না শুদ্ধ?

এভাবেই শুদ্ধ আর প্রিয়ম বন্ধু হয়ে যায়। প্রিয়মই এই স্কুলে জাহিদের প্রথম বন্ধু। কিন্তু ও এখানে ও লেভেল থেকে পড়ে। প্রিয়ম আর শুদ্ধ, একসাথে থাকায় বিপদে পড়লে একে অপরকে বাঁচাতে পারে। বিশেষ করে শুদ্ধ কে বিরক্ত করতে আসা লোকদের চরম শিক্ষা দেওয়া যেন প্রিয়মের জীবনের লক্ষ্য হয়ে যায়। কিছুদিনেই প্রিয়ম পরিচিতি পেয়ে যায় সেই স্কুলে ‘ফায়ার গার্ল’ হিসেবে। একদিন প্রিয়ম দেখলো শুদ্ধকে কে যেন কতগুলো খাতা দিয়ে গেছে। ও লাইব্রেরিতে বসে সেই খাতায় লিখছে।

– কী লিখছিস?
– হোম ওয়ার্ক।
– ওটা তো বাড়ি গিয়েও করতে পারিস। তাই তো ওটা বাড়ির কাজ।
– আমার না তো।
– কার? ঐ সানির?
– না। সারার।
– সারা মানে ঐ সারা। সবার ক্রাশ।
– হ্যাঁ।
– ও তোকে হোমওয়ার্ক দিবে কেন? তুই ওর প্রেমে পড়ে এসব করছিস নাকি? ছি ছি!
– সেটা না। প্রেমে পড়ে না। বিপদে পড়ে।
– ও কী করেছে বল! আমি ওকে শিক্ষা দেব।
– কিছু করিস না প্লিজ। তুই ওর ব্যাপারে কিছুই জানিস না। ও হচ্ছে লেডি বস।
– লেডি বস!
– হুম। আমি তোকে সব বলছি। তুই কাউকে বলিস না।

সারা আর শুদ্ধের বন্ধুত্ব দেখে সানিরা এটা সারার বাবাকে বলে দেয়। এরপর শুদ্ধের স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যাচ্ছিল। সেদিন শুদ্ধকে ডাকা হয়েছিল প্রিন্সিপাল অফিসে। বাইরে থেকেই সব শুনছিল শুদ্ধ।

” বাবা , ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। আমি ওকে ভালোবাসি না। তুমি জানো আমি শাহানকে ভালোবাসি। কোথায় শাহান আর কোথায় এই শুদ্ধ লুজার। আমি আমার স্ট্যান্ডার্ড জানি। ”
শুদ্ধের মন ভেঙে গেল। ও সেখানে আর ঢুকবে কি না জানে না। তবে কী সারা শুধুই ওর ফিলিংস নিয়ে খেলছে?

– তাহলে তুমি ওর সাথে কেন ঘুরছে? অর্ঘ্যদীপ বলেছে তুমি ওর হাত ধরেছিলে?
– ধরতেই পারি বাবা। উই আর ফ্রেন্ডস। তুমি বুঝবে না। ও আমাকে পড়াশুনায় অনেক হেল্প করে। হি ইস জিনিয়াস। আমি স্কুল থেকে যখন ভার্সিটিতে যাব তখন আমার একটা গ্রেড লাগবে। সব ডোনেশন দিয়ে হয় না। ও আমাকে হেল্প করবে।
– কী বলতে চাও?
– বাবা, সারা কখনো লাভ ছাড়া কিছু করে না। আমার লাভ আছে তাই হাত ধরছি। ওর ভালো লাগছে, তাই ও হেল্প করছে। নাথিং এলস্। এখন তোমরা ওকে বের করে দিলে আমার অনেক লস হবে। শুধু তাই না, স্কুলের লস হবে। ও কিন্তু সব অলিম্পিয়াডে পুরস্কার আনে। ও গেলে কে আনবে? অর্ঘ্যদীপ না আজফার?

সারা অফিস থেকে বের হতেই দেখে শুদ্ধ দাঁড়িয়ে। প্রথমে একটু ভয় পেয়ে গেলেও পরে হেসে ওকে ভেতরে যেতে বলে। সেখানে ওকে দুটো ধমক দিয়ে স্কলারশিপ বহাল রাখা হয়। শুদ্ধ বের হয়ে একটু সামনে যেতেই দেখল সারা দাঁড়িয়ে।

– তুমি আমাকে ভুল বুঝছ না তো?
– না।
– আমি ওগুলো না বললে ওরা তোমাকে বের করে দিত। ওগুলো অভিনয় ছিল।

সারা শুদ্ধের কাছে এসে ওর হাত ধরে ওকে কর্নারে নিয়ে যায়। সেখানে কেউ নেই। শুদ্ধের ভয় লাগতে থাকে, যদি কেউ ওদের দেখে ফেলে?

– আই লাভ ইউ শুদ্ধ! আই কান্ট লুজ ইউ!
– কী!

সারা শুদ্ধ কে জড়িয়ে ধরে। এই প্রথম কোনো মেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছে। ওর হৃদস্পন্দন বেড়েই চলেছে। এমন কেন লাগছে? ও ঘেমে যাচ্ছে। ভালো লাগছে না খারাপ বুঝতেই পারছে না।

– তোমার কী ভালো লাগছে আমাকে জড়িয়ে ধরে? আরেকটু ধরব?
– হ্যাঁ?? কী বলছ তুমি সারা?
– আমার তো খুব ভালো লাগছে।

শুদ্ধের খুব ভয় লাগছে। কী হচ্ছ এসব! কেউ যদি ওকে এভাবে দেখে ফেলে? সারা শুদ্ধের খুব কাছে এসে বলে,

– ক্যান আই কিস ইউ?
– জজজ্বী!!!!
– উইল ইউ কিস মি?
– হোয়াট আর ইউ ডুইং সারা?
– হ্যাভ ইউ কিসড বিফোর?
– নো!
– আই ওয়াজ রাইট। দেন লেট মি টিচ ইউ!

সারা শুদ্ধকে কিস করতে গেলেই কারো পায়ের আওয়াজে ওরা সাবধান হয়ে যায়। সারা শুদ্ধের হাত ধরে রাখে। এরপর সে চলে গেলে সারা বলে,

– শোনো, কাল এক জায়গায় এসো।
– কেন?
– বাকি কাজটা শেষ করতে। আই ডোন্ট লাইক ইনকম্প্লিট থিংস।
– দেখে ফেলবে না? তোমার বাবা কিছু বললে?
– কিচ্ছু বলবে না। সাত তলার এই সাইডে একটা জায়গা আছে। ওখানে কেউ যায় না। এই সময়ে এসো। এখন আসি।

পরদিন শুদ্ধ সেখানে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়। যাওয়ার পথে ওকে সানি আর ভিরাজ ধরে ফেলে।

– কোথায় যাবি? সারার কাছে? কিস শিখতে? (সানি)
– হি ইজ গোয়িং টু লার্ন সে*ক্স। উই উইল টিচ ইউ। লাইভ টিউটোরিয়াল। (ভিরাজ )

ওকে সাত তলার অপর পাশে নিয়ে গেল সানিরা। সেখান থেকে ও যা দেখল তা দেখার পর ওর মন ভেঙে গেল। সারা ওকে যেখানে দেখা করতে বলেছিল সেখানে সারা আর অন্য একটা ছেলের সাথে ছিল। ওরা সেখানে অনেক কিছুই করছিল। এই ছেলেটাই কী শাহান? শুদ্ধের এই বাজে দৃশ্যটা দেখে বমি পেয়ে গেল। ও দৌঁড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে লাগলো।

– কী রে, কেমন লাগলো? (সানি)
– ও কে?
– ও তোর সারা। ও শুধু তোকেই না, আমাকেও শিখিয়েছে কিস করা।
– না , না, ছেলেটা। ও কী শাহান?
– না। শাহান কানাডা থাকে। ও হলো ফাইয়াজ।
– ফাইয়াজ কে?
– মেইন বস। আর সারা লেডি বস। ডার্ক রুমে গিয়েছিলি না? যে তোকে দিয়ে নানা কাজ করালো , সে ই মেইন বস। ওরা দুজনই ডার্ক রুমের মাস্টারমাইন্ড। আমরা ফেইস।
– ওরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড?
– না।
– তো কী করছিল ওরা!
– খেলছিল। এটা সারার কাছে কিছু না। এইটা ওর ফেভারিট গেম। ও এমনই। তোকে দিয়ে হোমওয়ার্ক করানো এক্সাম এ হেল্প নেওয়া , তার বদলে গ্র্যাটিটিউড হিসেবে ও তোকে এটা শিখিয়ে দেবে।

শুদ্ধের খুব কান্না পাচ্ছিল। ভিরাজ আর সানি ওকে নিয়ে হাসছে। সারা তবে শুধু ওর মন নিয়ে খেলেছিল। এরপর থেকে শুদ্ধ আর সারার সাথে এত বেশি কথা বলেনি। সারা কাছে আসতে চাইলেও দূরেই থাকে। কষ্ট লাগে। মিথ্যাবাদী কোথাকার। কিন্তু ওর হোমওয়ার্ক সব করে দিতেই হয়। কারণ ও যদি না বলতো তবে হয়তো শুদ্ধের স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যেত। এতটুকু তো করাই যায়।

” ছি! সারা এমন বাজে!” প্রিয়ম বলল। শুদ্ধ কিছুই বলল না। প্রিয়ম শুদ্ধের কাছ থেকে হোমওয়ার্কের খাতা নিয়ে লিখতে থাকে।

– এই তুই কী করছিস?
– তোর কষ্ট করা লাগবে না। এখন থেকে সারা ম্যাডামের হোমওয়ার্ক আমি করব। কেন না, উনি না থাকলে আমি কী তোর মতো এত ভালো বন্ধু পেতাম? তুই তোর টা কর। তাহলে বাড়ি গিয়ে আন্টির সাথে সময় কাটাতে পারবি।
– কিন্তু তোর হোমওয়ার্ক?
– আমার বাসায় কোনো কাজ নেই। বাসায় গিয়েই করবো।
– থ্যাংক ইউ প্রিয়ম। তুই অনেক ভালো।

প্রিয়ম সারার হোমওয়ার্ক করে দেয়। চারদিন যাবৎ প্রিয়ম ই করছে। পঞ্চম দিন সারা এসে শুদ্ধের মুখে খাতা ছুঁড়ে বলে “এসব কী লেখ তুমি!!! মন কোথায় থাকে তোমার!” শুদ্ধ কিছুই বুঝতে পারছে না।

– কী হয়েছে সারা? আমি কী করেছি?
– প্রথম দিন দুটো ম্যাথ ভুল তাও বুঝলাম। আস্তে আস্তে চারটা পাঁচটা করে ভুল। আর আজকে বায়োলজি তে এটা কী লিখেছ!
– কী?
– দেখ!

বায়োলজি হোমওয়ার্কে লেখা “Ain’t nothing but a heartache. Ain’t nothing but a mistake. I never wanna hear you say, I want it that way”

– এগুলো কী লিখেছ! সারাদিন কী গান শোনো!
– আ’ম স্যরি।
– এইটা কী তুমিই করেছ?
– হ্যাঁ। আমি করেছি। সব আমার ভুল। মনে থাকে না তো।
– আই ডোন্ট বিলিভ ইট। করলেও ঐ নতুন মেয়েটা না? ওর সাথেই সারাদিন গল্প করো। ডাকবো দুজনকে ডার্ক রুম!
– না প্লিজ! ও কিছু জানেনা। আমিই করেছি।
– ওকে দেখে নেব। ঠিক করে করবে এখন থেকে।

প্রিয়ম এসব কী করেছে। পুরো ক্লাসের সবাই নাকি হাসছিল। ওর তো রাগার ই কথা। সেদিন ওয়াশরুমে সারা প্রিয়মকে ধরে,

– হেই নিউগার্ল, হোয়াটস ইউর নেম?
– প্রিয়ম। ইউ?
– সারা। বাট প্রিয়ম কেমন নাম? ছেলেদের নাম না?
– রিয়েলি? তোমার পছন্দ না? আমার দাদিকে বলতে পারতে, উনি তাহলে রাখত না।
– লেইম!

প্রিয়ম চলে আসছিল। সারা ওকে থামিয়ে বলে,

– সো ইউ লাইক দ্যাট লুজার?
– হু? আর ইউ টকিং আবাউট সানি?
– না। শুদ্ধ।
– ও আমার বন্ধু।
– আমার তো মনে হয় তুমি ওকে ভালোবাসো। গার্লফ্রেন্ড ওর।
– না তো।
– ও হ্যাঁ। আই ডোন্ট থিংক হি ক্যান হ্যাভ আ গার্লফ্রেন্ড।
– ইউ আর রং। হি হ্যাস আ গার্লফ্রেন্ড।
– হু?
– এখানে পড়ে না। অন্য স্কুলে পড়ে। ওর নাম অরনী। ও অনেক সুন্দরী আর ব্রিলিয়ান্ট। ও তোমার মতো মানুষ কে দিয়ে হোমওয়ার্ক করায় না। ও আমাকে পাঠিয়েছে শুদ্ধের খেয়াল রাখতে।
– হোয়াট! ইউ আর লায়িং!
– নো। এই জন্যই ও তোমার কাছে যায় না এখন আর। কমিটেড ম্যান।
– আই ডোন্ট বিলিভ ইউ!
– ইউ ক্যান ট্রাই।

সেদিন ক্লাস শেষে সারা শুদ্ধ কে হোমওয়ার্ক দেওয়ার সময় ওর হাত ধরে বসে। শুদ্ধ সেই হাত ছাড়িয়ে নেয়। এরপর শুদ্ধ কে জড়িয়ে ধরতে গেলেই ও হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। সারা হেসে বলে,

– অরনীকে কিছু না বললেই তো হয়।
– মানে?
– ও না জানলে চিটিং হবে না। প্রিয়ম ও তো দেখছে না। তো ও কিছু বলবে না। ইউ ক্যান টাচ মি।
– নো সারা। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু।
– ফা*কিং লুজার! তোমার জন্য অরনীই সব না! দেখবে ঐ অরনী ও অন্য কারো সাথে মজা করছে।
– সবাই তোমার মতো না। বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও যার তার সাথে তাকে চিট করে যাচ্ছ।

শুদ্ধ সেখান থেকে চলে আসে। কিন্তু ওর হঠাৎ মনে হলো এই অরনী কে?

– এই প্রিয়ম, এই অরনী কে রে?
– তোর গার্লফ্রেন্ড।
– আমার কবে থেকে গার্লফ্রেন্ড হলো! আমি নিজেই জানি না।
– হয়েছে কী , ঐ সারা বলল তোর নাকি কোনো গার্লফ্রেন্ড হবে না। তাই বললাম। আজ কী করল?
– কাছে আসতে চাইল।
– তুই কী করলি!
– মানে করে দিলাম।
– লয়েল ম্যান!
– কিন্তু উনি কে?
– ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।
– তো তুই মিথ্যা বললি কেন?
– সত্যি করে নে।
– যাহ! উনি কি আমাকে চেনে নাকি?
– চিনবে। চল দেখা করি একদিন।
– না না। ওনার আমাকে পছন্দ হবে না।
– হবে। অরনী এত কিছু দেখে না। অরনী হচ্ছে একদম পারফেক্ট। পড়াশুনা আর্ট সবকিছুতে। ঐ রাগ একটু বেশি। তাই তো তোকে দরকার।
– উনি আমার উপর রেগে গেলে?
– তোর উপর কেউ রাগবে না।
– কী বলিস!
– তুই তো পুরো মাটির মানুষ। আমি আসার পর থেকেই দেখছি, তুই না আমার অরনীর জন্য পারফেক্ট। ইশ ! অরনী যদি এখানে থাকতো।
– কী করত?
– এদের সবাইকে শিক্ষা দিয়ে দিত।
– উনি এখানে ভর্তি হয়নি কেন?
– বাংলা মিডিয়াম তো।
– তো তোর বন্ধু কী করে হলো?
– ক্লাবে। আমরা যখন নতুন বাড়িতে উঠি তখন এলাকার ক্লাবে যাই। আমি আর আমার ভাই রূপম। প্রিয়ম বলে অনেকে ছেলের নাম বলে বিরক্ত করত। আমি ছিলাম তোর মতো ভিতুর ডিম। একদিন সেখানে আগমন আমার ত্রাণকর্তার, অরনীর।
– messiah?
– হ্যাঁ। ও এসে সবাইকে সেই শিক্ষা দিল। যেমন নাম পছন্দ না হলে আমার দাদিকে গিয়ে বলতে যখন উনি আমার নাম রাখছিলেন। এছাড়া ওর রাগ যা। সবাই ভয় পেয়ে যেত। আমি ওর আশেপাশে থাকতাম। কেউ আমাকে আর বিরক্ত করত না।
– তাই!
– ওরা না তিন ভাই বোন। ওর বড় আর ছোট দুই ভাই। ও মাঝখানে। ওরা তিন ভাইবোন এলাকার বাচ্চাদের কাছে হলো রাহু, কেতু আর শনি।
– মানে?
– মানে, ওর ছোট ভাই রাহু। ওর কী একটা নাম ছিল, কারো মনে নেই। সবাই অরনীর মতো রাহু ডাকে। ওর বড় ভাই অংশু, সে হচ্ছে কেতু। আর ও হচ্ছে সাক্ষাৎ শনি।
– এইটা আবার কেমন কথা!
– ওরা সব কিছুতেই এত ভালো যে সবাই ওদের রাহু কেতু শনি বলে। ওদের সাথে যারা পড়ে তাদের বাবা মা তো সারাদিন ওদের উদাহরণ দিতে থাকে। সবাই তাই ওদের এটাই বলে।
– তো উনি ভালো কী করে?
– উনি উনি বন্ধ কর। তুমি করে বল। ও না অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। অত্যাচারিতদের পাশে দাঁড়ায়। এই বেয়াদপদের শাস্তি দেয়। শুধু তাই না, ও যাকে বিপদ থেকে বাঁচায় তাকেও ওর মতো লড়াই করাও শিখিয়ে দেয়। যাতে পরে লড়তে পারে।
– সত্যি?
– হ্যাঁ। জানিস, অরনী মানে হচ্ছে পাথর, যে পাথর দিয়ে আগুন জ্বালায়। ও আমার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। তোর মধ্যে জ্বালানো বাকি। জানিস, ওর রাগ হলে না ও ওর বারান্দায় যায়। ওর একটা বেল গাছ আছে। বেল গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে আর সেই বাতাসে ও ঠান্ডা হয়ে যায়। তোকে না আমার ঐ বেল গাছের মতোই লাগে। হাহাহাহ!
– কেন?
– জানিনা। ঐ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব আসে। কেন জানি মনে হয় তুই ওকে ঠান্ডা করতে পারবি, ঐ বেল গাছটার মতো। আর ও তোর ভিতরের আগুন জ্বালাতে পারবে।
– তাই বলে প্রেম করতে হবে? (লজ্জা পেয়ে)
– লজ্জা পাচ্ছিস কেন? বিয়ে করবি বিয়ে। আমার অরনীর জন্য আমি এরকম শান্ত আর নিষ্পাপ ছেলেই চাই।
– কেন?
– ব্যালেন্স করতে। ওর যে অবস্থা, ভবিষ্যতে ও হয়তো সিঙ্গেলই থেকে যাবে। রাহু বলে কাউকে না পেলে বেল গাছের সাথেই ওর বিয়ে দিবে। আমি ছেলে হলে আমিই বিয়ে করে নিতাম।

শুদ্ধ কেমন করে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ম হেসে বলে,

– আমি ওরকম না আবার। বলছি আরকি। দেখা গেল আমি বিয়ে করে ফেলেছি, ও তখনো সিঙ্গেল। আমার খারাপ লাগবে তো।
– তাই আমাকেই পেলি।
– তোর সাত কপালের ভাগ্য হবে যদি অরনী তোর বউ হয়।

এরপর থেকে শুদ্ধ কে প্রিয়ম প্রতিদিনই অরনীর কথা বলতে থাকে। অরনী এমন, অরনী তেমন। অরনী এই , অরনী সেই। শুদ্ধের ও অরনীর সম্পর্কে আগ্রহ দিন দিন বাড়তেই থাকে। সেই আগ্রহ যেন একটা সমুদ্র, সেই সমুদ্রে এক বালতি পানি যোগ করলেও বা কী। আস্তে আস্তে শুদ্ধের আর অরনী সম্পর্কে কোনো কিছু জানা বাকি থাকে না। ওর গল্প শুনতে শুনতেই শুদ্ধ ওর প্রেমে পড়ে যায়। তবে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। না জানি অরনী কেমন দেখতে হবে? অরনীর কী ওকে পছন্দ হবে? ওর স্বপ্নের রাজকুমারী অরনী। প্রিয়মও অরনী আর শুদ্ধের দেখা করিয়ে দিতে চায়। একদিন তো প্রিয়মের সাথে ওদের বাসার কাছে গিয়েছিল। বাস স্ট্যান্ডের কাছে অরনী ও অপেক্ষা করছিল প্রিয়মের সাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য। সেদিন প্রায় দেখা হয়েই যাচ্ছিল তবে, শেষ মুহূর্তে শুদ্ধ পালিয়ে যায়। ওর ভয় হচ্ছিল, যদি অরনীর পছন্দ না হয়? তবে লুকিয়ে দূর থেকে অরনীর পেছনের দিকটা দেখেছিল। ওর দুই বেণী আর স্কুল ব্যাগ। দূর থেকে দেখেই মুচকি মুচকি হাসে। মনের মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ লাগে। ভালোবাসা কী এমনই হয়? তাকে দূর থেকে একটু করে দেখতেই কী হৃদস্পন্দন জোরে জোরে চলতে থাকে? তার কথা ভাবতেই কী ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে?

আরেকদিন ও ইউনিফর্ম প্রেস করে ফিটফাট হয়ে এসেছিল। কিন্তু সানিরা ওকে দিয়ে ওদের ডার্ক রুমের ওয়াশরুম সহ ডার্করুম পরিষ্কার করানোর জন্য ওর ইউনিফর্ম আর চুল নষ্ট হয়ে যায়। প্রিয়ম কে একটা বাহানা দিয়ে বাড়ি চলে যায় ও। আরেকদিন ও তৈরি হয়েছিল, কিন্তু আজফারের হোমওয়ার্ক না করায় ওদের মার খেয়ে ওর গালে কাটা দাগ হয়ে যায়। প্রিয়ম কে বলে ও পড়ে গিয়েছিল। এভাবে প্রায় ও দেখা করতে গিয়েও পারত না। দূর থেকে একনজর দেখেই চলে আসতো।

– তুই দেখা করছিস না কেন?
– আমার কী সেই যোগ্যতা আছে? আমি এখন দেখা করতে চাই না।
– তো কখন চাস?
– যেদিন বিদেশে পড়তে যেতে পারব, সেদিন একটা হাসি মুখে যাব অরনীর সামনে। হাতে কিছু টাকাও হবে। আমি জমাচ্ছি তো। এরপর দামি রেস্টুরেন্টে আমি আর অরনী ডেটে যাব। চকলেট কেক খাওয়াবো।
– অরনী মিষ্টি পছন্দ করে না।
– জানি। কিন্তু চকলেট কেক তো অন্যরকম না?
– তাও পছন্দ করে না।
– তো তুই ঠিক করবি সব, ওর পছন্দ অনুযায়ী।
– শুদ্ধ! তুই আমাকে কাঁদাবি! আমি ঠিক ছেলেই পছন্দ করেছি ওর জন্য। তবে ওর দামি রেস্টুরেন্টে ডেট না, শুদ্ধের মতো শুদ্ধ হৃদয়ের ছেলের সাথে বাদাম বা ফুচকা খেয়ে ও ডেটে যাবে। দেখবি একদিন ঠিকই তুই সফল হবি। অরনীও তোর পাশে থাকবে।

প্রিয়মের কথাই সত্যি হলো। আজ শুদ্ধের পাশে অরনী আছে। তবে শুদ্ধ সেটা জানতো না। অনেকগুলো মেয়ে ওকে রিজেক্ট করার পর নাদিয়া নামের মেয়েটা ওকে হ্যাঁ বলল। অরনী ওর সামনেই ছিল, নাদিয়া হয়ে। চিনতেই পারেনি। দুই বেণী যে ছিল না। ওরাও তো বড় হয়ে গেছে এখন। কাউকে আর সতের বছরের বাচ্চা লাগে না।

বিয়ের এতসব অনুষ্ঠান হলো, শুদ্ধ চিনতেই পারল না ওর অরনী কে। একদম কবুল বলার সময় ওর পুরো নাম উচ্চারিত হলো, ” নাদিয়া সামাদ অরনী।” শুদ্ধ ভেবেছিল এই পৃথিবীতে কত অরনী আছে, হবে কোনো অরনী। সেই অরনী তো ডাক্তার হয়ে গেছে এতদিনে। ইনি তো টিচার। তবে বিয়ের আসরে অরনী যখন রাহুকে রাহু বলে ডাক দেয় তখন ওর সন্দেহ হতে থাকে। ও তো ডাক্তার রাহিয়ান! রাহু কী করে? ওর বড় ভাই তো নাহিয়ান, তবে কী,

“অংশু ভাইয়া!!”

অরনী ওর ভাইকে ডাকলো। শুদ্ধের আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না। নাদিয়াই অরনী। বিয়ের রাত ও একটু ও ঘুমাতে পারেনি। পরবর্তীতে শুদ্ধ যখন শ্বশুরবাড়ি যায় তখন সেই বেল গাছটি দেখে। পাতা ঝড়ছে গাছটার। ওকে আর অরনীকে অরনীর ঘরটিতে থাকতে দেওয়া হয়। সেই বারান্দা থেকে সেই বেল গাছটা দেখা যায়, অরনীর প্রিয় বেল গাছ। প্রিয়ম বলেছিল ওকে নাকি বেল গাছটার মতো লাগে। কী মিল আছে ওদের? কোথাও কোনো মিল নেই। এমনিই বলেছিল হয়তো। সেখান থেকে হাঁটতে বেরিয়ে ও প্রিয়মের বাসা ও দেখে আসে। সেখানে এখন অন্য কেউ থাকে।

সকালে শুদ্ধ আবার সেই গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর মনে হতে থাকে জালালুদ্দিন রুমী এর একটি কথা,

“যা কিছু তুমি হারিয়েছো, সেটার জন্য কখনোই শোকাহত হয়োনা, কারণ সেটা কোনো না কোনোভাবে অন্য রূপে ঘুরে আবার চলেই আসবে।”

অরনী নাদিয়া রূপে ওর কাছে চলে এসেছে। এখন ওরা বিবাহিত। ও আজীবন অরনী থেকে পালিয়ে বেরিয়েছে, সেই স্মৃতি থেকে পালিয়ে বেরিয়েছে। ও কখনোই সেসব ভুলতে পারেনি। প্রিয়মের জানাজার দিন ও দেখেনি অরনী দেখতে কেমন। পেছন থেকেই দেখেছে। অরনীর দিকে তাকানোর ওর সেই সাহস ছিল না। সেদিন দৌঁড়ে পালালেও আজ পারবে না।
পেছন থেকে মিষ্টি ভাবি এসে বলে,
– জামাই চেয়ারে বসুন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
– জ্বী বসছি।
– অরনী, দেখো আমার নন্দাই এত লাজুক!

অরনী খুব ক্ষান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিষ্টির দিকে। রাহু এসে বলল,

– জাহিদ ভাই , আপনি না থাকলে না আমাদের অরনীকে এই বেল গাছের সাথেই বিয়ে দেওয়া লাগতো। এই অরনী, তুই জাহিদ ভাইকে বলিসনি তোকে আমরা অরনী ডাকি?
– না।
– জানেন, ওকে শুধু আমরা অরনী ডাকি। বাইরের সবাই আর বাবা নাদিয়া ডাকে। আপনি ও আমাদের টিমে চলে আসুন।
– ওনাকে জোর করিস না। ওনার যা ইচ্ছা তাই ডাকবে।
– বলুন কী ডাকবেন?

মিষ্টি আর রাহু “অরনী অরনী” করছে। জাহিদ নীচে তাকিয়ে থাকে। অরনী ও অপেক্ষা করছে ওর উত্তরের। জাহিদের ওকে অরনী ডাকার অধিকার নেই। তাই,

“নাদিয়া।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here