#রিস্টার্ট,পার্ট_২৪
#পিকলি_পিকু
জাহিদ অফিসে যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছে। কালকে মার গুলোর জন্য বেচারার গালে লাল কালো দাগ হয়ে গেছে। আজকে ও ফরিদ সাহেব প্রশ্ন করবে। নাদিয়া খেয়াল করলো ওর মন খারাপ। আর ও আয়না তে বারবার চেহারাও দেখছে। তাই নাদিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে ড্রয়ার খুলল। জাহিদ সরে জায়গা দিল। ও চলেই যাচ্ছিল কিন্তু নাদিয়া ওর ডান হাত বাড়িয়ে জাহিদের বাম হাত টেনে ধরল। জাহিদ এটা আশা করেনি। পেছন ফিরে তাকালো। নাদিয়া ওকে ইশারা করে খাটে বসতে বলল।
জাহিদ খাটে বসে আছে, নাদিয়া ওর সামনে দাঁড়িয়ে। নাদিয়া মাথা নিচু করে জাহিদের মুখোমুখি হলো। এরপর হাত দিয়ে ওর চেহারার এপাশ ওপাশ দেখল। জাহিদের কেমন যেন লাগছে। অদ্ভুত না? এভাবে ওর চেহারা দেখার কী আছে? নাদিয়া একটা প্যালেটে ওর ফাউন্ডেশন আর কন্সিলার নিয়ে জাহিদের শেডের কাছাকাছি একটা কিছু বানালো। জাহিদ তো ভয় পাচ্ছে, সাতসকালে ওর মেকাপ করবে নাকি? এ কেমন শখ! এরপর নাদিয়া মেকআপ ব্রাশ দিয়ে জাহিদের মার খাওয়া চেহারার লাল কালো দাগ গুলো আস্তে আস্তে সরিয়ে দিল। ওর বাম হাতের তর্জনী দিয়ে জাহিদের চিবুক ধরে ডান হাতের অনামিকা দিয়ে আলতো আলতো করে চেপে ফিনিশিং টাচ দিচ্ছে। খুব মনোযোগ সহকারে কাজ করছে নাদিয়া। কিন্তু জাহিদ, ও তো তাকিয়ে আছে ওর স্ত্রীর মনোযোগী নয়নে। নাদিয়া চোখের আশেপাশের ছোট চুলগুলো উড়ছে, আর ও ক্ষণে ক্ষণে চোখের পলক ফেলছে। এই সাধারণ দৃশ্য দেখেও বেচারা কপালের আশেপাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।
– ওহ হো! এই ঘামের জন্য ফিনিশিং হচ্ছে না।
– জ্বী?
– ফ্যান কী চলছে?
– হ্যাঁ?
– চলছে তো। আজ এসির বাইরে বের হবেন না। মেকআপ উঠে যাবে।
– হুম।
– শুনছেন?
– হ্যাঁ!
– ওজু ও তো করবেন। আচ্ছা বেশি মাসাজ করে মুখ ধুবেন না। উপরে উপরে ধুবেন। সাবধানে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছবেন। বিশেষ করে ঐ জায়গায় প্রেস করবেন না। আর যদি দেখা যায় তখন বলবেন জানিনা। সকালে তো আর ছিল না।
– ওকে।
– আসলে, আ’ম স্যরি। আপনাকে শুধু শুধু মিথ্যা বলতে হবে। আমার জন্য একদিন হাত কেঁটে, এখন আবার কালো দাগ নিয়ে। আপনার অফিসের লোকেরা কী না কী ভাববে।
– কিছু ভাববে না।
নাদিয়া অজান্তেই ওর হাত দিয়ে জাহিদের মাথার চুল ঠিক করে দিলো। জাহিদ মাথা উঁচু করে হাসি হাসি মুখ নিয়ে ওর দিকে তাকালো, নাদিয়া ও সায় দিয়ে এক গাল হাসি হাসলো। অরনীর আঁকাবাঁকা দাঁতের মায়াবী হাসি। এ হাসি শুধুই ওর জন্য। আহ! সেই স্বপ্ন দেখা সফল হলো। এই হাসি দেখে কয়েক যুগ এভাবেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। এই হাসির জন্য অনায়াসে বরবাদ হয়ে যাওয়া যায়। হাসতে হাসতে নাদিয়া হঠাৎ খেয়াল করলো ও এখনো জাহিদের খুব কাছে। রীতিমতো গায়ের উপর। জিনিসটা বুঝতে পেরে ও নিজেকে সরিয়ে আনলো। জাহিদ ও আস্তে আস্তে উঠলো। দুজনেই খুব লজ্জা পেয়েছে। পরবর্তীতে নাদিয়া কে বিদায় দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে জাহিদ ওর চেহারা ধরে ভাবছে নাদিয়ার কথা। এই চেহারা সে আজ ছুঁয়ে দেখেছে। কালকের মার গুলো সব স্বার্থক।
সকাল দশটার দিকে নাদিয়ার ফোনে ওর মায়ের কল আসতে শুরু করলো। এরপর একে একে বাবা আর মিষ্টি ভাবি। কিছু কী হয়েছে? আবার মায়ের কল আসতেই নাদিয়া এবার রিসিভ করল,
– হ্যালো মা, কেমন আছিস?
– আছি। কেন ফোন করলে? তোমাদের না বললাম আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করবে না।
– না করেও বা কী করবো। রাহুর বিয়ে তো ভেঙে গেল।
– কী! কী করে? মানে আমার আর কিছু আসে যায় না যদিও।
– সপ্তর্ষির বাবা এসেছিল কাল। বলতে লাগলেন বিয়ের ডেট ফাইনাল করবে। এখন এই মুহূর্তে মেয়ে আর মেয়ের জামাই চাই। মানে তোদের ও থাকতে হবে।
– এটা কেমন কথা?
– জানিনা। তবে তোর বাবা বলল তোরা ব্যস্ত। আর এভাবে ডেট ফাইনাল কী করে?
– তারপর?
– উনি বলতে লাগলেন উনি সব জানেন। আজ কেন তোরা নেই। আমরা নাকি আদর্শ পরিবার না। মেয়ে আমাদের জন্য সুই*সাইড,
নাদিয়ার মা থেমে গেল। নাদিয়ার ও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ওরা এই কারণে বিয়ে ভেঙে দিল?
– এখন আমি কী করব? ওনারা বিয়ে ভেঙে দিলে আমার আর কিছু করার নেই।
– ওনারা বিয়ে ভাঙেনি তো। ওনারা তো চলে গেল। এরপর তোর বাবা অংশুকে খুব বকছিল। রাহু এসব নিয়ে রেগে সপ্তর্ষির বাড়ি গিয়ে ওর বাবাকে যা তা বলে এসেছে।
– কী!
– হ্যাঁ। আর এই কারণে এই বিয়ে টা আর হবেনা।
– কিন্তু মা, আমাদের বাড়ির খবর ওখানে গেল কী করে?
– কী জানি।
– চাচ্চু নয় তো? বা ফুফু, মিশান ভাইয়া?
– ওনারা কেউই সপ্তর্ষির বাবাকে চেনে না।
– মিষ্টি ভাবি?
– তুই অনুমান করা বন্ধ কর। মিষ্টি এমন না।
– তো আর কে? তোমার ননদের ছেলে কাল জাহিদকে অনেক মেরেছে। থানা পুলিশ ও করতে হলো।
– কী! মিশান!
– আর কে? বেচারা জাহিদের চশমাও ভেঙে ফেলেছে। তাও ওনার অনুরোধে আমি আর কমপ্লেইন করিনি। আরেকবার এমন কিছু করলে কেস করে দেব।
কথা শেষ করার আগেই নাদিয়ার বাসার বেল বাঁজলো। নাদিয়া দরজা খুলে দেখল ওর চাচ্চু এসেছে। দরজাটা মুখের উপর বন্ধ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু সাথে চাচি ছিল। ওনাদের হাতে নানা ফল মিষ্টি।
” ঘরে ঢুকতে দিবি না মা?”
ওর চাচা ওর কাছে ক্ষমা চাইলো। ব্যাপারটা একদম ভালো দেখাচ্ছে না। এরকম একটা ভেজাল বাঁধিয়ে এখন অনুতপ্ত হচ্ছে। উনি বাসায় ও ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। চাচি থাকায় সহ্য করতে হচ্ছে। চাচ্চু কে ও হাড়ে হাড়ে চেনে। এই ঘটনার পর আবার একই হয়ে যাবে। ওনারা যাওয়ার পর নাদিয়া সপ্তর্ষি কে কল করল। ও বারবার ফোন কেটে দিচ্ছে। কয়েকবার ট্রাই করা পর ফোন ধরেই বলল,
– শান্তি হয়েছে এবার! আমি জানি তুমি কখনো আমাকে পছন্দ করনি। সবসময় তোমার মৃত বান্ধবী কে পছন্দ করতে। যাও, ওর লাশের সাথে বিয়ে দাও তোমার ভাইয়ের।
– আমি কী করলাম?
– তুমি একটা আস্ত অ্যাটেনশন সিকার! কথায় কথায় আত্ম*হ*ত্যার নাটক করো। তোমার জন্য আমার এতদিনে সম্পর্ক টা ভেঙে গেছে। তুমি বিয়ে করছিলে না যাতে আমি না করে দেই। বিয়ে তো করলে, এখন এই নাটক। রাহু কোনোদিন ও আমার কোনো কথায় প্রশ্ন করেনি। আজ কিনা তোমার জন্য আমায় বলল আমার প্রেম মিথ্যা!
– তুমি আমাকে দোষ দিচ্ছ কেন?
– সব তোমার দোষ অরনী! সব নষ্টের গোড়া সেই তুমি!
সপ্তর্ষি ফোনটা কেটে দিলো। নাদিয়া রাহুকে ফোন করলো। ফোনে না পেয়ে ওর হাসপাতালে দেখা করতে গেল। হাসপাতালে নাদিয়াকে দেখে অবাক হয়ে যায় রাহু। ওরা এখন হাসপাতালের বাইরে একসাথে বসে আছে।
– তুই এটা কী করলি?
– ভালো কাজ করেছি। আর এটা আমার সিদ্ধান্ত। আমি কোনো জবাবদিহিতা করতে চাই না।
– সপ্তর্ষি খুব রেগে আছে।
– থাকুক।
– এভাবে শেষ করে দিবি?
– সেটাই উচিত ছিল অনেক আগেই। অনেক আগে যখন শর্ত দিয়েছিল তোর বিয়ে হলেই এই বিয়ে হবে তখনই। ওর বিয়ে আমার সাথে হবে, তোর সাথে না। তুই কোনো ম্যাটার ই না। ঐ বাড়িতে যতটা আমার অধিকার ততটা তোর ও। কিন্তু ওদের প্রথম থেকে সমস্যা। ওরা তোকে বোঝা মনে করত যখন ওদের কোনো অধিকার ছিল না। দোষটা আমার, আমিই ওদের সায় দিয়েছি। এটা সত্যি, সপ্তর্ষি না থাকলে প্রিয়ম কে আমি কখনো ভুলতে পারতাম না। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই কৃতজ্ঞতার খেসারত আজ ও দিয়ে আসছি। ওর প্রতি এই কৃতজ্ঞতা আমাকে আজ ও নিয়ন্ত্রণ করছে। যে ভালোবাসা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে, সে ভালোবাসা কখনো ভালোবাসা ই না।
– আচ্ছা, বাসার কথা ও বাড়িতে কে বলেছে?
রাহু চুপ করে আছে।
– কে বলেছে?
– তোকে এই অবস্থায় দেখে আমি ওকে বলেছি, একটু শান্তির জন্য। একটুখানি স্বস্তির জন্য। সে মানুষটা তো আমার আপন ছিল। আর ও ওর বাবাকে ব্যাপারটা বলল।
– ও ওভাবে বলেনি হয়তো।
– জানি। ওর বাবা বিয়ের আগেই এত শর্ত, এত নিয়ম দিচ্ছে। আর উনি বিয়েটা ভাঙতেন না তখন। একটা হুমকি ছিল। আর আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আমি ওর বাড়ি গিয়েছি ওর থেকে সেই সাপোর্ট পেতে। আমি দেখতে চেয়েছি, ও কী চায়? কিন্তু আমি ওর চোখে সেই সাপোর্ট দেখিনি। দেখেছি কন্ট্রোল। তখনই বুঝলাম, ভালোবাসা টা কন্ট্রোলের পেছনে হারিয়ে গেছে।
নাদিয়া রাহুর পিঠ চাপড়ে ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
– স্যরি রে, আমার জন্য তুই ফেঁসে গেলি।
– কোথায়?
– বিয়ের জালে। তোর হয়তো অন্য প্ল্যান ছিল। আমরা ফোর্স করলাম।
নাদিয়া রাহুর হাত জড়িয়ে ওর কাঁধে মাথা রেখে বলে, ” থ্যাংক ইউ!” রাহু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়।
– থ্যাংকস কেন?
– তোরা ফোর্স না করলে জাহিদ কে পেতামই না।
– সিরিয়াসলি!
– হুম।
নাদিয়া লজ্জা পাচ্ছে। রাহু তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না।
– মানে কী?
– মানে সহজ। আই লাভ হিম! এভাবে বিয়ে না হলে হয়তো হতোই না।
– আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তুই প্রেমে পড়েছিস!
– ইয়েস! ম্যাডলি ইন লাভ!
নাদিয়া বোকার মতো হাসছে। রাহু মেজাজ খারাপ করে তাকিয়ে আছে।
– আমার ব্রেক আপ হয়েছে আর তুই আমাকে তোর প্রেম কাহিনী বলছিস।
– কী করব। প্রথম বার প্রেমে পড়লাম যে। জানি না কী করা উচিত।
– প্রথম বার কেন? ঐ ডিরেক্টর?
– ওকে কখনো ভালোবাসিনি। ও ভালো মানুষ ছিল, ভালো বন্ধু হতে পারতো। তাই ব্রেক আপ তাড়াতাড়ি করলাম। ওর সময় নষ্ট করিনি। কিন্তু জাহিদ!
– গেম ওভার!
নাদিয়া মুখে হাত দিয়ে লজ্জা পায়। রাহুর গা খিতখিত করে উঠছে। একটু পর নাদিয়ার ফোনে মেসেজ আসলো। নাদিয়া লাফিয়ে উঠলো। রাহু জিজ্ঞেস করলো,
– কী হয়েছে?
– আমি ডাক পেয়েছি।
– কীসের?
– ইন্টারভিউয়ের।
– কোথায়?
নাদিয়া চুপ হয়ে যায়। রাহু শুনলে মন খারাপ করবে। এমনিতেই মন ভালো নেই।
– একটা বড় স্কুলের।
– কোন স্কুল?
– পরে বলব। আগে চাকরি হোক।
– তোর সাথে দেখছি সব ভালো ভালোই হচ্ছে। আমি জেলাস।
– তোর সাথে ও তো হলো।
– কী করে?
– এই যে , এই টক্সিক রিলেশনশিপ থেকে বের হয়েছিস।
– হ্যাঁ রে। মনে হচ্ছে প্রাণ খুলে শ্বাস নিচ্ছি।
– তো চল , আইসক্রিম ট্রীট আমার।
নাদিয়া আর রাহু আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটছে। নাদিয়া একটু বেশি হেলে দুলে হাঁটছে, আর রাহু আস্তে আস্তে। যেন নাদিয়ার আত্মা রাহুতে, আর রাহুর আত্মা নাদিয়া তে। স্বভাব অদল বদল। নাদিয়ার চোখে মুখে আনন্দ। এক অনবদ্য প্রেমানুভূতি। অন্যদিকে বেচারা দেবদাস রাহু ,
– তো, ওনাকে বলেছিস, ভালোবাসিস?
– না। এখনো ভালোবাসা যাবে না।
– কেন?
– পিপি স্যার বারণ করেছে।
– কী কারণে! ভালোবাসা বারণ কেন? বাঁধা কোথায়?
নাদিয়া চুপ করে ভাবছে রাহুকে না বলাই ভালো। জাহিদের ব্যাপার টা জাহিদ এখনো ওকে বলেনি। আবার রাহু ও চিন্তা করবে।
– এমনি। আমরা টাস্ক করছি। এখনো ভালোবাসা যাবে না। জানিস, কাল মিশান ভাইয়া জাহিদ কে খুব মেরেছে।
– কী!
নাদিয়ার কাছে সব শুনতে শুনতে রাহুর আইসক্রিম টা পুরোই গলে গেল। নাদিয়া আইসক্রিমের পূর্ণাঙ্গ স্বাদ গ্রহণ করে সেই কাহিনী অতি বিস্তারে তার ছোট ভাই কে বললেন।
– ও মাই গড! ডোন্ট টেল মি উনি তোর জন্য দুটো ঘুষি খেয়েছেন তাই তুই ওনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।
– না। একদম না। আমি তো অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।
রাহু হাসতে থাকে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এইটা ওর সেই রাগী বোন। এত তফাত! মাত্র কয়েকমাস আগেও স্বামী কে ডিভোর্স দিবে বলে সেই কাহিনী করেছিল। ওর হাসি দেখে নাদিয়া ওর হাতে একটা থাপ্পড় মারে।
– আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুই সেই অরনী। জ্বীনে ধরেনি তো?
– আজব!
– কী দেখে প্রেমে পড়লি?
– জানি না। সবই ভালো লাগে। অনেক নরম মানুষ। একটা মানুষ এত শুদ্ধ কী করে হয়?
– কী কী ভালো লাগে?
– তার পার্সোনালিটি, তার কণ্ঠ, তার বুদ্ধিমত্তা, তার বোকামো। মাঝে মাঝে অনেক কিছু ভুলে যায় সেসব ও। তখন আরো কিউট লাগে। অবুঝের মতো তাকিয়ে থাকে।আমাকে কখনোই খারাপ কিছু বলেনি। আমার রাগ নিয়েও তার কোনো কমপ্লেইন নেই।
– বুঝতে পেরেছি।
– একটা মানুষ এমন কী করে হয়? আমি না, আর ডিভোর্স দিতে চাই না।
– ওয়াও!
– কিন্তু, আমি এখনো জানি না উনি কী আমাকে ভালোবাসে কিনা। কেন জানি মনে হয় এইখানে একটা ছ্যাঁকা খাব। আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি এসব কথা তোকে বলছি।
– ওয়েল, কংগ্র্যাটস্! কারণ আপনার স্বামী ও আপনাকে সেই ভালোবাসে। যে চিৎকারটাই করল সেদিন আমার উপর।
– কেন?
– তোর কাউন্সিলিং করিনি কেন। সেই রূপ দেখলাম ওনার। ওনার চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু আমার কী পোড়া কপাল। ভালোবাসার কোনো মানুষ পেলাম না। তবে একটা কথা মনে রাখিস, প্রেমে পড়ে হিতাহিত জ্ঞান হারাবি না। ভালোবাসিস, অতিরিক্ত নির্ভর হবি না।
– ওকে সিনিয়র। থ্যাংকস ফর ইওর অ্যাডভাইস।
রাহুকে সান্ত্বনা দিতে দিতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। জাহিদের ও ফোন চলে এসেছে।
– আপনি কোথায়?
– বাইরে।
– বাইরে কোথায়?
– রাহুর সাথে।
– আপনার না বিশ্রাম নেওয়ার কথা।
– জানি তো। একটু হাঁটতেই বের হয়েছিলাম।
– এখন কোথায়? আমি নিতে আসছি।
– দরকার নেই। আমি কাছাকাছিই আছি।
আসার আগে রাহুকে বাড়ি আসতে বলল নাদিয়া,
– নারে, তুই যা। আমার হাসপাতালে যেতে হবে। আচ্ছা, এভাবে আমরা কত দিন কথা বলি না?
– কত বছর হবে। যাবি একদিন ঘুরতে, আগে যেমন যেতাম।
– তুই না সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলি?
– ওটা তো তুই ছ্যাঁকা খেলি দেখে একটু হেল্প করার জন্য।
– আমি ছ্যাঁকা খাইনি, দিলাম। যা ভাগ!
রাহুকে বিদায় দিয়ে আসার সময় নাদিয়া নীচে জাহিদ কে দেখতে পায়। ও অপেক্ষা করছিল। বেচারা ভয় পেয়েছিল আবার পিপির কাছে চলে গেছে কি না তা ভেবে। দুজন একসাথে ঘরে ঢোকার পর নাদিয়া আগে আগে ভেতরে যাচ্ছিল। জাহিদ দরজা আটকাতে ও আবার ফিরে আসে।
“দেখি দেখি, মেক আপ টা আছে নাকি?”
অপ্রস্তুত জাহিদ হালকা পিছিয়ে যাচ্ছে। নাদিয়া শুধুই ওর দিকে আগাচ্ছে। জাহিদ পেছাতে পেছাতে একদম দরজার সাথে পিঠ ঠেকে গেল ওর। নাদিয়া ও থেমে গেল। এরপর জাহিদ ওর মাথা নিচু করে নাদিয়াকে দেখায়। নাদিয়া হাত দিয়ে ওর চেহারা ভালো করে দেখছে।
– খারাপ দেখাচ্ছে না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেছে?
– না।
– ওকে। ফ্রেশ হয়ে আসুন। আর ফ্রেশ হয়ে ঐ ক্রিম টা লাগাবেন।
– ওকে।
ওরা এখনো একই জায়গায়। নাদিয়া সরে ওকে জায়গা দিল। জাহিদ ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখে নাদিয়া কফি বানিয়ে মিষ্টি সাজিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। জাহিদ ভাবছে এগুলো তো ও আনেনি। তবে কে?
– জানেন, আজকে অনেক কিছু হয়েছে। সকাল থেকেই অনেক কিছু হলো।
– কী?
– অনেক কিছু। আপনার কোনো কাজ না থাকলে এখন শুরু করবো।
– ওকে।
নাদিয়া একে একে সব কাহিনী বলতে শুরু করলো। জাহিদ এত আগ্রহ নিয়ে শুনছে। বলতে বলতে নাদিয়া ক্লান্ত হয়ে গেল। কিন্তু জাহিদের আগ্রহ শেষ হলো না। এভাবে কথা বলতে থাকলে পিপির আর দরকার হবে না। নাদিয়া আর জানতে পারবে না কী হয়েছিল। এভাবেই কাটুক না সময়।
– আজকে এত কিছু হলো!
– হ্যাঁ। বেচারা রাহু!
– আপনি যে সপ্তর্ষির সাথে কথা বললেন তা বলেননি ?
– না। মন খারাপ করবে।
– ওর সাহস কী করে হয় এত রুড ব্যবহার করার! তাও আবার আপনার সাথে।
– ওর মন খারাপ। করতেই পারে। বাই দ্য ওয়ে , আমি ঘুমাব। কাল আবার কাজ আছে।
– কীসের?
– এমনি, ঘরের।
– কোনো কাজ না। শুধুই বিশ্রাম।
– ঐ তো ওটাই।
ইন্টারভিউয়ের কথা না বলাই ভালো। জাহিদ বের হয়ে যেতেই নাদিয়া জলদি জলদি তৈরী হয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য বের হয়। ম্যাগনেফিসেন্ট এমনই। ওরা হুট করে একজন একজন করে ডাকে। সময় ও ভিন্ন হয়। নাদিয়ার ইন্টারভিউ বারোটায়। ও একটি ডার্ক ব্রাউন স্কয়ার প্যান্ট আর ক্রীম কালারের ফুল স্লীভ টপ পরেছে। ফুল স্লীভ এ কারণেই যাতে ওর হাতের কাঁটা দাগ দেখা না যায়। চুল গুলো ও নিচু করেই বেঁধেছে। ওকে ডাকতেই একদম আত্মবিশ্বাসের সাথে ভেতরে ঢুকলো। এই সেই জায়গা। যেখানে আসার জন্য নিজের জীবনের লক্ষ্য বদলে ফেলেছে।
ইন্টারভিউ রুমে ইন্টারভিউয়াররা ছাড়া রুমের বাইরে কাঁচ থেকে ইন্টারভিউ তদারকি করছে কয়েকজন। ওনারা ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। নাদিয়া ওদের দেখতে পারছে না। নাদিয়ার দক্ষতা সম্পর্কে যা রিপোর্ট নেওয়ার ওরা ওর আগের স্কুল থেকে নিয়ে নিয়েছে। এখন শুধু ও সামনাসামনি কতটা স্মার্ট তা দেখার পালা। ম্যাগনেফিসেন্ট এর টিচাররা ম্যাগনেফিসেন্ট কে রিপ্রেজেন্ট করবে। ওর পোষাক আর হেয়ার স্টাইল একদম পারফেক্ট ম্যাগনেফিসেন্ট টিচার। ওর কথা বলার ধরণ অনেক সাবলীল। ইংলিশ এক্সেন্ট অনেক বেটার। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভালো। ভেতর থেকে একজন একটা প্রশ্ন পাঠায়। বাইরের একজন প্রশ্ন করে,
– আর ইউ ম্যারিড?
– ইয়েস।
– দেন হোয়াই ইউ ডিডেন্ট অ্যাড দিস?
নাদিয়ার মনে পড়ে, ও তো ডিভোর্স এর কথা চলাকালীন যে সিভিটা করেছিল তাই দিয়ে দিয়েছে। সেখানে ডিভোর্স হবে কি না তা নিশ্চিত ছিল না। এখন কী বলবে? কোনো ভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না এটা একটা ভুল।
– ইটস কমপ্লিকেটেড।
– আর ইউ ফাইলিং ফর ডিভোর্স?
কোনো ভাবে নার্ভাস হওয়া যাবে না। কনফিডেন্ট থাকতে হবে।
– নট শিওর। স্টিল ডিসকাসিং।
ভেতরের লোক টা মুচকি হেসে মেসেজ পাঠায়, ” গুড লাক। ” বাইরের লোকটা বলল,
– গুড লাক!
– থ্যাংক ইউ।
ভেতরের লোকেরা বলছে,
– আমাদের ওনার ব্যাকগ্রাউন্ড আরো চেক করা উচিত। ওনার হাসবেন্ড কে এসব।
– আই ডোন্ট থিংক সো। আমাদের এইম হচ্ছে কোনো এক্স স্টুডেন্ট অর এক্স স্টুডেন্ট যারা ডেড ওদের কাউকে জব না দেওয়া। ইটস ডেঞ্জারাস! ওনার আশেপাশে কেউ নেই। উনি বাংলা মিডিয়াম ব্যাকগ্রাউন্ড! কিন্তু অনেক স্মার্ট। মনে হয়না উনি ম্যাগনেফিসেন্ট এর হিস্ট্রি জানে। রেকর্ডে কেউ ওনার রিলেটিভ না।
– তাও ঠিক। ওনার পেছনে কাউকে লাগাবো? ফারদার ইনভেস্টিগেশন?
– নো। প্রাইম মিনিস্টার এখানে কী হয় তা জানতে চাচ্ছেন। এরকম জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ড টিচার ভালো হবে। নিউ ফেস, কনফিডেন্ট। এখানে থাকা বাকি টিচারদের মতো ডিপ্রেসড না। ওনাকে নেওয়া যায়।
জাহিদ লাঞ্চ টাইমে বসে একজন ভালো থেরাপিস্ট খুঁজছে। একজন খুব নামকরা সাইকোলজিস্ট। বাইরে কাজ করেছেন। আপাতত দেশে। সুই*সাইড সারভাইভর স্পেশিয়ালিস্ট। পিপির দেওয়া থেরাপিস্ট থেকে বেটার। কিন্তু ওনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট? খুব কষ্ট হবে। তাও চেষ্টা করবে সে। আজ সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে কথা বলবে।
” জ্বী, বেনজির বৃষ্টির অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইছিলাম। আমি জাহিদ আহমেদ।”
(চলবে)